তোমার জন্য সব পর্ব-২৪+২৫

0
18

#তোমার_জন্য_সব -২৪
✍️ #রেহানা_পুতুল
অমনি কলি এমন এক নিষ্ঠুর বাক্য বলে ফেলল মাহমুদের উদ্দেশ্যে। যা শুনে মাহমুদ স্তব্ধ হয়ে গেলো। বিয়ের দ্বিতীয় রাতেই কলি তাকে এমন কিছু বলতে পারে যা তার কাছে অবিশ্বাস্য! অচিন্তনীয়!

“আপনি এই মুহূর্তে যা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তা কোন মানুষের কাজ হতে পারে না। রেপিস্ট এর কাজ। আর একটু বাড়লে আপনাকে ডিভোর্সড দিবো আমি।”

নিমিষেই মাহমুদের শিহরিত অন্তর বিষিয়ে ব্যথায় নীল হয়ে গেলো। সব অনুভূতিরা পালিয়ে গেলো সাত সাগর তেরো নদীর ওপারে। তার সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বরফখন্ডের ন্যায় জমে শীতল হয়ে গেলো। সে আর কোন টু শব্দ করল না। কোন উচ্চবাচ্য করল না কলির সঙ্গে। কলির শরীরের উপর থেকে সরে গেলো। নিচে দাঁড়িয়ে তার দুই হাতের বাঁধন খুলে দিলো।

কলি শাড়ির আঁচল টেনে বুক ঢেকে নিলো। উঠে বিছানায় দেয়াল হেলান দিয়ে বসলো। দৃষ্টি অবনত ও ক্রুদ্ধ!

মাহমুদ একটি টি শার্ট খালি গায়ে পরে নিলো। ওয়ালেটটা ট্রাউজারের পকেটে রাখলো। চোখে চসমা পরে নিলো। মোবাইলটা হাতে নিলো। আয়নায় দাঁড়িয়ে কোনমতে চুল আঁচড়ে নিলো। টেবিলের উপর থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে নিলো। গলা তুলে ঢকঢক করে পুরো গ্লাসের পানি খেয়ে নিলো।

কলির সামনে এসে দাঁড়ালো। গম্ভীর মেঘমুখে বলল,

“খুব সরি হাত বাঁধার জন্য। কেবল নিজের অনুভূতিকে প্রাধান্য দিয়ে এমনটা আর হবে না। আর বাকি যেটা বলছেন আপনি। এনিটাইম করতে পারেন। বাধা নেই কোন। খেয়াকে বিয়ে করবো আমি। ঘুমিয়ে যান।”

কলি বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে গেলো খেয়ার কথা শুনে। নির্বাক চোখে মাহমুদের মুখপানে চাইলো। মাহমুদ আস্তে করে দরজা খুলে নিলো।

“এতরাতে কোথায় যাচ্ছেন আপনি?”

আতংকিত গলায় জানতে চাইলো কলি।

“সেটা আপনাকে বলতে বাধ্য নই আমি।”
বলেই মাহমুদ দাঁড়ালো না। বাসা থেকে বেরিয়ে লিফটের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। কলি মাহমুদের পিছন পিছন বাসার গেটের বাইরে গেলো।

আর্তির স্বরে ডাক দিলো,

“স্যার প্লিজ যাবেন না। আমার কথা ত শুনবেন।”

লিফট এলে মাহমুদ চলে যায় নিচে। বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে। কলি নিজের রুমে এসে দরজা চাপিয়ে দিলো। বিছানায় বসে ঢুকরে কেঁদে উঠলো। অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে যাচ্ছে। মাহমুদের নাম্বারে বারবার ট্রাই করে যাচ্ছে। বাট সুইচড অফ। কলি মহাচিন্তায় পড়ে গেলো।

হায় খোদা! বাসায় গেস্ট। জুলিও আছে। সকালে জানাজানি হলে খুব বাজে হয়ে যাবে। তার নানী হলো আরেক ডেঞ্জারাস পাবলিক। এনিহাউ একে বাসায় আনাতে হবে। কলি পূনরায় ট্রাই করেও ব্যর্থ হলো। পরে একটা মেসেজ দিয়ে রাখলো।

মাহমুদ মহল্লার একটি টি স্টলে গেলো। এটা বহুরাত অবধি খোলা থাকে। সেখানে ঢুকে পাতানো লম্বা কাঠের বেঞ্চটাতে বসলো। চা,সিগারেট খেতে লাগলো একের পর এক। চা দিতে দিতে ছেলেটা মাহমুদের দিকে আড়চোখে চায়। কিন্তু কিছু বলে না। রাত দুটোর দিকে সে দোকান বন্ধ করে ফেলে। মাহমুদ উঠে হাঁটতে থাকে। তিনটার দিকে মাহমুদ মোবাইল অন করলো। দেখলো কলির নাম্বার হতে মেসেজ।

“স্যার প্লিজ ফিরে আসুন। দোহাই আপনার। আমি কিছু বলতে চাই। এরপর আপনি যে পানিশমেন্ট দিবেন মাথা পেতে নিবো। আমার দিব্যি খেয়ে বলছি। আমার কষ্ট হচ্ছে খুব!”

মাহমুদ মেসেজ পড়েই আবার মোবাইল অফ করে ফেলল। যেন কলি ফোন না দিতে পারে। সে আরো কিছুক্ষণ রাস্তায় এদিক সেদিক পায়চারি করতে লাগলো। সাড়ে তিনটার দিকে বাসায় গেলো মাহমুদ ঢুলু ঢুলু চোখে। চাপানো দরজা ঠেলে রুমের ভিতরে গেলো। দরজা অফ করে সোফায় গিয়ে বসল থম মেরে।
কলি নিস্তেজ কন্ঠে ডেকে উঠলো,

“স্যার বেডে এসে ঘুমান। প্লিজ!”

মাহমুদ না পেরে বিছানায় এলো। উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো নিজের বালিশে। শরীর,খারাপ লাগছে বেশ। মনের অবস্থা তার চেয়েও শোচনীয়! কলি নিজ থেকেই অপরাধীর সুরে বলল,

“স্যার আমার সেই কথা আমি ফিরিয়ে নিচ্ছি। আর কোনদিনও অমন কুফা শব্দ উচ্চারণ করব না। আপনি ফোর্স করে সুখ পেতে চেয়েছেন। অথচ আমি আপনার কাছে সময় চেয়েছি। তাইতো আমার রাগকে সংবরণ করতে পারিনি। আপনাকে সবসময় দেখে এসেছি একচোখে। এখন ভিন্নভাবে ভাবতে,দেখতে একটু অসুবিধা হচ্ছে আমার। ঠিক হয়ে যাবে সব। এগেইন সরি স্যার।”

মাহমুদ রুক্ষ স্বরে বলল,

“মাথা ব্যথা করছে। গতরাতের মতো আমার আরামদায়ক ঘুমের ব্যবস্থা করে দিন।”

কলি মুখে আর কিছু বলল না। মাহমুদের চুলে আস্তে করে বিলি কাটতে লাগলো। চুলগুলো টেনে দিলো। কপালে ম্যাসাজ করে দিলো। হাত পা টিপে দিলো। এভাবে বেশ সময় পার হয়ে গেলো। দেখলো মাহমুদ গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো। কলিও পাশে তার বালিশে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

সকালে কলি উঠে ফ্রেস হয়ে নিলো। রুমের এলোমেলো কাপড়চোপড়গুলো গুছিয়ে রাখলো নিদিষ্ট জায়গায়। বের হয়ে আনুশকার রুমে গেলো। নানু পান খাচ্ছে বসে বসে। কলিকে দেখেই হেসে উঠলো। চোখের পাতাকে ছোট করে বলল,

“কাছে আহো,চুল ভিজানি দেহি।”

কলি অপ্রস্তুত কন্ঠে মিথ্যা বলল,

“নানু আমার শারীরিক সমস্যা চলতেছে। তাই অফ।”

নানু মুখ গোঁজ করে বলল,

“ও বুঝলাম। তবে বইন একটা কথা কই। পুরুষ মানুষ হইলো ভ্রমরের জাত। কাছে থাকা ফুলের মধু না পাইলে অন্যফুলে উইড়া যাইবো মধু খাওনের লাইগা। প্রেম, সোহাগ দিয়া স্বামীরে ভুলায়া রাইখো। নইলে নিজেই চোক্ষে আঙ্গুল দিয়া কাঁনবা।”

কলি পূর্ণ মনোযোগে কথাগুলো শ্রবণ করলো এবং বিশ্বাস করতেও দুবার ভাবল না। যার প্রমাণ কয়েক ঘন্টা আগেই পেয়ে গেলো। খেয়াকে বিয়ে করবে, মিথ্যে করে হলেওতো একথা স্যার তাকে শুনিয়ে ফেলল। কলি আনুশকার রুমের বারান্দায় গেলো। এই বারান্দায় আনুশকার কিছু ফুলগাছ রয়েছে।

কলি দেখলো অলকানন্দা, বেলী,নয়নতারা,হাস্নাহেনা ফুল ফুটে আছে। এখন বর্ষাকাল। এগুলো বর্ষাকালের ফুল। কলি সব ফুল ডাঁটাসহ ছিঁড়ে নিলো। আনুশকার থেকে চেয়ে সুতা নিলো। ফুলগুলোর গোড়া এক করে ভালো করে বেঁধে নিলো কলি। সাজিয়ে একটি পুষ্পতোড়া তৈরি করে ফেলল। সেগুলোর ফাঁকে ফাঁকে কিছু পাতা গুঁজে দিলো সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য।

আনুশকা বলল,
“তোমাদের রুমে রাখার জন্য? না ভাইয়াকে গুড় মর্নিং জানানোর জন্য?”

“দুটোই।”

মিষ্টি হেসে বলল কলি।

“বাহ! চমৎকার হয়েছে সাজানো। যাও কন্যা। স্বামীকে তুষ্ট করো পুষ্প সুরভি বিলিয়ে।”

এভাবে কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত হলো। হয়তো মাহমুদ এবার উঠে যাবে। কলি নিজেদের রুমে গেলো। দেখলো মাহমুদ চেয়ারে বসে আছে। তারমানে উঠে ফ্রেস হয়ে হয়ে গিয়েছে। কলি দুহাতে ধরা ফুলের তোড়াটি মাহমুদের দিকে বাড়িয়ে ধরলো।

মাধুর্যভরা কন্ঠে বলল,
“শুভ সকাল স্যার। আপনার জন্য।”

মাহমুদ চমকালো। ফুল হাতে নিলো। নিরস ভঙ্গিতে কলিকে থ্যাংকস জানালো। অতিরিক্ত একটি শব্দও বলল না কলিকে। মনে মনে বলল,

দুধের স্বাধ ঘোলে মেটেনা কলি। এতটা অবুঝ কেন তুমি?

কলি বুঝতে পারলো মাহমুদ তার উপর বেজায় অসন্তুষ্ট। মাহমুদ আজ কলিকে ডাকল না। নিজেই নাস্তা খেতে চলে গেলো। আবদুর রহমান ছেলেকে আদেশ দিয়ে বলল,

“বৌমাকে নিয়ে তাদের বাসায় বিকালে যাস। এটা নিয়ম।”

“বাবা আমার জরুরী কাজ আছে বাইরে। ফিরতে লেট হবে। এক ফ্রেন্ড বাইরে যাবে। রাতে ফ্লাইট। দিনে আমাকে নিয়ে তার বাকি থাকা শপিংগুলো করবে। কলিকে কাল তাদের বাসায় নিয়ে যাবো।”

“আচ্ছা কালই যাস।”

মাহমুদ নাস্তা খেয়ে রুমে এসে রেডি হয়ে নিলো। গায়ে পারফিউম ছড়িয়ে দিলো। কলি চোখ বন্ধ করে পারফিউমের ঘ্রাণ নিলো নিঃস্বাস ভরে। নিজ থেকেই মাহমুদকে জিজ্ঞেস করলো,

“কোথায় যাচ্ছেন? আজ রবিবার। ভার্সিটি যাবেন ত মঙ্গলবার।”

মাহমুদ আগুন ঝরা কন্ঠে বলল,

” কারো অপ্রিয় হয়ে সামনে থাকার চেয়ে আড়ালে থাকা ভালো।”

কলি আর কিছুই বলার সুযোগ পেলনা। মাহমুদ বেরিয়ে গেলো। কলি যেন আকাশ থেকে পড়লো। এত জেদ তার পুরুষটার? এত প্রকট অভিমান? দুপুর, বিকাল,সন্ধ্যা গড়িয়ে গেলো। মাহমুদের আসার নাম নেই। কলির মন খারাপের পাল্লা ভারি হতে লাগলো। বাসায় কারোই মন খারাপ নেই। কারণ মাহমুদ সবাইকে কারণ বলেই বেরিয়েছে। কলি সংকোচে কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারছে না মাহমুদের কথা। ঝিম মেরে প্রহর গুনতে লাগলো। রাত হয়ে গেলো তাও মাহমুদ এলো না। কলি বার বার ফোন দিচ্ছে মাহমুদকে। কিন্তু সুইচড অফ। তার অস্থিরতা আনুপাতিক হারে বেড়েই চলল। কত কু কথা মনে উদয় হতে লাগলো।

ঘড়ির কাঁটা রাত বারোটা ছুঁই ছুঁই। কলি রুমের জানালার গ্লাস সরিয়ে বাইরে চেয়ে আছে। দৃষ্টি ক্লান্ত! অসহায়। অম্বরে মেঘ ডাকছে। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামলো। তুমুল বৃষ্টি। তখনই মাহমুদ টলতে টলতে রুমে প্রবেশ করলো। বাসার গেট বন্ধ ছিল না সে আসবে বলে। নিচে সিকিউরিটি গার্ড রয়েছে একাধিক। তাই বন্ধ না করলেও তেমন অসুবিধা হয় না। কলির কলিজায় পানি এলো মাহমুদকে দেখে। ভিজে জুবুথুবু মাহমুদ। তাওয়েল এগিয়ে দিলো কলি। মাহমুদ ওয়াশরুমে চলে গেলো।

কলি তাকে কিছুই বলল না। কারণ জানে সে,মাহমুদ তার কথার রিপ্লাই দিবে না। গত রাত থেকেই কথা বলেনা মাহমুদ তারসঙ্গে। কলি বিছানায় গিয়ে তার বালিশে শুয়ে পড়লো। মাহমুদ ওয়াশরুম থেকে বের হলো পরনে তাওয়েল পেঁচিয়ে। চশমা,ওয়ালেট,সেলফোন সব টেবিলের উপরে রাখল। মাহমুদ তাওয়েল পরেই বিছানায় শুয়ে পড়ল। কলির লজ্জার বেহাল দশা। ‘নাউজুবিল্লাহি মিন জালিক’। এত বড় একটা শরীরে মাত্র একটা তাওয়েল? আর সব উদাম? এর কি কোন হুঁশ নেই। এত বেশরম পুরুষ সে? মাল খেয়ে টাল হলো নাকি? মাহমুদ চিৎ হয়ে শুয়ে আছে। দৃষ্টি নিবু নিবু।

কলি চোরা চোখে দেখলো মাহমুদকে। চোখ দুটো ভয়ংকর লাল হয়ে আছে। সম্ভবত মাহমুদ স্বল্প পরিমাণে হলেও ড্রিংকস করেছে। কলি পায়ের নিচের কাঁথাটা দিয়ে মাহমুদের শরীর ঢেকে দিলো। উদ্দেশ্যে যেন তার চোখে না পড়ে কিছু। কিন্তু কাঁথা একটা। তারও ঠান্ডা লাগছে। এবার নিজে কি গায়ে দিবে। তবুও ভাঁজ হয়ে শুয়ে রইলো কলি।

রাত আরো গভীরে ডুবে গেলো। বাইরে ঘন বরষা। বৃষ্টির সাথে সাথে আকাশে থেমে থেমে বজ্রধ্বনি হচ্ছে। ভয়ংকর গর্জনে কলি ওহ! বলে মাহমুদের কাছে নিজেকে একটু ভিড়িয়ে নিলো। কাঁথাটা একটু নিজের গায়ের উপরে দেয়ার চেষ্টা করলো। মাহমুদ চোখ বন্ধ রেখেই এক হাত মেলে দিলো। কলিকে নিজের বাহুর উপরে টেনে আনলো। নিজেও কাত হলো। একই কাঁথার ভিতরে কলিকে নিজের শরীরের সঙ্গে পেঁচিয়ে নিলো এক পা দিয়ে। কলির বুক উঠানামা করছে তীব্র গতিতে। নিজের গায়ের সঙ্গে মাহমুদের পুরো উদাম শরীরের স্পর্শ পেতেই এক অচেনা নিবিড় শিহরণ তাকে দোল দিয়ে যাচ্ছে বিরামবিহীনভাবে।

তার ভিতরে এমন লাগছে কেন। এমন স্বর্গীয় অনুভূতি এর আগে কখনো হয়নি তার। এত ভালোলাগছে কেন? উঁহু! এবার কলি নিজেই আদুরে বিড়ালের মতো মাহমুদের খোলা বুকে নাক মুক ঘষতে লাগলো। মাহমুদ প্রায় নেশাগ্রস্ত। কেননা সে সত্যি নেশা করে এসেছে। ঘুম জড়ানো চোখ মেলল না সে। তবে কিছু উপলব্ধি করতে পারলো। কলির নিটোল দেহের সংস্পর্শে সে আরো আগুন হয়ে উঠলো। মোমের মতো কলিকে গলিয়ে দেওয়ার এইতো মোক্ষম সুযোগ।

মাহমুদ নিজের উপর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলল। সীমাহীন উত্তেজনায় কাঁপছে দুজন নব বর বধূ। পরিবেশ যেন স্বর্গীয় কিছু প্রত্যাশা করে দুজনের থেকে। মাহমুদ একটু একটু করে এগোয়। কলির গাল, ঘাড়, বুক অধর, ভিজিয়ে দিলো নিজের দুই ঠোঁটের উষ্ণ আলিঙ্গনে। শাড়ির নিচে দিয়ে কলির মসৃণ পেটে হাত রাখলো। কলি চোখ বন্ধ করে অন্যরকম নবসুখের স্বাদ উপভোগ করছে বৃষ্টিভেজা নিশুতি রাতে। তার যত কষ্ট আর লজ্জাই লাগুক। তবুও মাহমুদকে আজ আর বাধা দিবে না এই রোমাঞ্চকর পরিবেশে। যা ইচ্ছে করুক। লুটেপুটে নিক তার গোপন সব। কলি নিজের দু’হাত দিয়ে লাজরাঙা মুখখানা ঢেকে রাখলো।

শেষ রাতের দিকে দুজনে ক্লান্ত মাঝির মতো নিদ্রা-ঘোরে সপে দিলো দুজনকে। প্রভাতকালেই উঠে কলি গোসল করে নিলো। বিছানায় উঠে আবার শুয়ে পড়লো। টের পাচ্ছে শরীর খুব ব্যথা করছে। রাতেও খায়নি। তাই কলির ক্ষুধার্ত শরীরে ফের অবসাদ নেমে এলো। তার দুচোখ বুঁজে এলো অল্প সময়ের ব্যবধানেই।

নাস্তা তৈরি হয়ে গেলো। কলিকে আজ না দেখে নানু তাদের রুমে গেলো। দেখলো মাহমুদ টেবিলে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে৷ তিনি সোজা বারান্দায় চলে গেলেন। এসে ঘুমন্ত কলির দিকে চাইলেন।

মুচকি হেসে মাহমুদকে বললেন,

“ঘুমাক। থাউক। শরীর ব্যথার ট্যাবলেট আইনা দিস। এইটা পরে গুতাইস। নাস্তা খাইতে আয়। দিলেতো ম্যালা শান্তি আইজ তোর।”

মাহমুদ উঠে গিয়ে নাস্তা খেয়ে এলো। বেশ বেলা হলো তবুও কলির ঘুম ভাঙ্গছে না। মাহমুদ কলিকে প্রেমময় সুরে ডাকলো। কিন্তু কলির কোন সাড়া নেই। অসাড় হয়ে নির্জীবের মতো পড়ে আছে বিছানায়। মাহমুদ কলির পাশে বসে কপালে হাত রাখলো। কলির জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। মাহমুদ দিশেহারা হয়ে ছুটে গেলো রুমের বাইরে। বোনকে জানালো। শুনে মাহফুজাও হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো।

মাহফুজা কলিকে নেড়েচেড়ে দেখেই চিৎকার করে উঠলো,

“ওমা! আল্লাহ রহম করো। কলির তো কোন জ্ঞানই নেই। পুরো শরীর হিম হয়ে আছে। হাসপাতালে নিতে হবে। এম্বুলেন্স ডাক জলদি। হঠাৎ এমন হলো কেন?”

চলবে…২৪

#তোমার_জন্য_সব -২৫
✍️ #রেহানা_পুতুল
মাহফুজা কলিকে নেড়েচেড়ে দেখেই চিৎকার করে উঠলো,

“ওমা! আল্লাহ রহম করো। কলির তো কোন জ্ঞানই নেই। পুরো শরীর হিম হয়ে আছে। হাসপাতালে নিতে হবে। এম্বুলেন্স ডাক জলদি। হঠাৎ এমন হলো কেন?”

তড়িতেই মাহমুদ এপ এ প্রবেশ করে উবার ডাকলো। ডাকা মেডিক্যাল তাদের বাসার নিকটবর্তী। উবার তাদের অ্যাপার্টমেন্টের নিচে গ্যারেজে চলে এলো লোকেশন অনুযায়ী। মাহমুদ ও আনুশকা কলিকে শোয়া অবস্থায় তুলে ধরলো পিঠের নিচে হাত দিয়ে। বাতাসী লিফট ধরলো। ব্যতিব্যস্ত ও উদ্বিগ্নতার মাঝে দিয়ে কলিকে ঢাকা মেডিক্যাল হসপিটালে নেওয়া হলো। মেডিসিন বিভাগের ওয়ার্ডের একটি সিটে ভর্তি করা হলো জরুরীভাবে। বাসার অতিথিরা সকালে চলে যাবে। সেজন্য মাহমুদ মাকে আসতে বারণ করলো। বাবাকেও আনল না কিছু একটা ভেবে। মাকে মানা করে দিলো কলিদের বাসায় যেন না জানানো হয়। নয়তো অহেতুক চিন্তা করবে তারা।

ডাক্তার এলো তৎক্ষনাৎ। ভালো করে কলির নার্ভ শিরা উপশিরা দেখলো। এবং স্যালাইন দেয়া হলো কলিকে। ডাক্তার মাহমুদ ও আনুশকার দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“পেশেন্ট কি হয় আপনাদের?”

“আমার ভাবি। ভাইয়ার ওয়াইফ। আজ বিয়ের চতুর্থ দিন।”

ডাক্তার ভালো করে লক্ষ্য করলো কলির পানে। সত্যি তাই। এই মেয়েটি নবোঢ়া। কলির দুহাত ভর্তি মেহেদি ও বেশভূষায় যা স্পষ্ট।

“উনার শরীর দুর্বল। শেষ খাবার কখন খেয়েছে?”
“কাল দুপুরে। তারপর আর কিছুই খায়নি।” বলল আনুশকা।

“কেন?”

“ভাইয়া বাইরে ছিলো। সে চিন্তায়। ভাইয়া সম্ভবত বলে যায়নি ভাবিকে।”

মাহমুদ অবাক চোখে বোনের দিকে চাইলো।

“উনার কি কোন ঠান্ডার সমস্যা আছে?”

“তাতো জানিনা।”

বলল মাহমুদ ও আনুশকা।

ডাক্তার মাহমুদকে নিজের সঙ্গে ডেকে নিলো চেম্বারে। মাহমুদ চেয়ার টেনে বসলো।

” যে যে কারণে জ্বর এসেছে পেশেন্টের। এক,সম্ভবত উনি বেশসময় পানিতে ভিজেছিলেন। তাই ঠান্ডা লেগে গিয়েছে। দুই, ফিজিক্যাল রিলেশন করেছেন দীর্ঘসময়। যার জন্য উনার শরীর প্রচুর ব্যথা। আর এমন জ্বর আসার জন্য শরীরের যে কোন একটা অঙ্গই ব্যথা হওয়া যথেষ্ট। এরমধ্যে ক্ষুধার্ত শরীর ছিলো উনার। তাই ক্ষুধা, ব্যাথা ও জ্বরের তোড়ে সেন্সলেস হয়েছে। বিয়ের পরে এমন জ্বর প্রায় সব মেয়েরই আসে। আশাকরি জ্ঞান ফিরে আসবে। মেডিসিন লিখে দিচ্ছি। ঠান্ডা হতে উনাকে সতর্ক থাকতে হবে। এখন ভারি খাবার দিবেন না। হালকা নরম খাবার দিবেন। বিকেল বা সন্ধ্যায় বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন।”

শুনে মাহমুদ হহতবুদ্ধি ন্যায় হয়ে গেলো। মেয়েদের এমন সময় জ্বর আসে সে এই প্রথম শুনলো। সে ডাক্তারকে একটা ব্যক্তিগত বিষয় জিজ্ঞেস করলো। ডাক্তার বলল,

“নাম লিখে দিচ্ছি। এটা খেলে আশাকরি কোন অঘটন ঘটে যাবে না। আপনাদের সময় হলে তখন খাওয়া বন্ধ করে দিলেই হবে।”

মাহমুদ ডাক্তারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাইরে চলে গেলো। ফার্মেসি থেকে মেডিসিনগুলো কিনে নিলো। কলির জন্য স্যুপ,সেদ্ব ডিম,কলা,আঙ্গুর কিনে নিলো। সিটের পাশে গিয়ে টুল টেনে বসলো। আনুশকা বলল,

“কিরে ভাইয়া? কি বলল ডাক্তার?”

“বলল পানির ঠান্ডায় জ্বর আসলো। ঠিক হয়ে যাবে।”

“উফফস! থ্যাংকস গড! বাঁচলাম। আম্মু কি যে ভয় পেলো। ফোন করে জানিয়ে দিচ্ছি।”

আনুশকা ফোন করে কলির শারিরীক কন্ডিশন জানিয়ে দিলো মাকে। মাহফুজা স্বস্তির স্বাস ফেলল। আনুশকা কলির মাথা তুলে নিজের হাতে স্যুপ ও ডিম খাইয়ে দিলো। টিস্যু দিয়ে মুখ মুছে দিলো। এভাবে দুপুর হয়ে গেলো। সে বলল,

“ভাইয়া আমার ক্ষুধা লাগছে। বাসায় যাচ্ছি। তুই ভাবিকে নিয়ে আসতে পারবি না?”

“খুব পারবো। তুই বাসায় চলে যা।”

আনুশকা চলে যায়। মাহমুদ বেডের সামনে কলির মাথার নিকট বসলো। কলি চোখ বন্ধ করে আছে৷ মাহমুদ কলির মাথায় একটু হাত বুলিয়ে নিলো। কিছু আঙ্গুর ধুয়ে কলির মুখে একটা একটা করে পুরে দিতে লাগলো। কলি চার,পাঁচটা খেয়ে আর খেলো না। মাহমুদ কলিকে সব ট্যাবলেট খাইয়ে দিলো। আস্তে করে জিজ্ঞেস করলো,

” ব্যথা করছে না? ব্যথা কমে যাবে এবার।”

কলি বিরক্ত ও লজ্জাবোধ করলো মাহমুদের মুখে এহেন বাক্য শুনে। চোখ বন্ধ করে কাত হয়ে গেলো। মাহমুদ মনে মনে বলল,
“পরিশ্রম করলাম আমি। আর ব্যথা পেলো তুমি।”

গতরাতে মাহমুদ মানসিক যন্ত্রণা ভোলার জন্য একটি বারে যায়। ড্রিংকস করে বৃষ্টিতে ভিজে মধ্যরাতে মাতাল হয়ে বাসায় ফিরে। তার কান্ডজ্ঞান ছিলো কিছুটা অস্বাভাবিক। তাই তাওয়েল পরেই শুয়ে গিয়েছিলো। এবং রাতের আঁধারে কলির দেহের ওম পেয়ে বহুদিনের ক্ষুর্ধাত বাঘের ন্যায় বন্য হয়ে উঠেছিলো। হুঁশ ছিল না। সকালে হুঁশ ফিরলে নিজের পরনে তাওয়েল ও কলির পরনে অন্য শাড়ি দেখে বুঝেছিলো রাতে কি ঘটেছে। এজন্যই ত তারকাছে এত রিফ্রেশ লাগছে। এদিকে কলি অভিমানে,রাগে,বাথরুমে গিয়ে ঝর্ণা ছেড়ে ইচ্ছেমতো ভিজেছে ও অশ্রুপাত করেছে। যার ফলশ্রুতিতে ব্যথায় ও ঠান্ডায় জ্বর এসে গিয়েছে। সেই জ্বরের ধকল সামলাতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে।

মাহমুদ বাইরে গিয়ে পাশেই হোটেলে বসে ঝটপট খিচুড়ি দিয়ে লাঞ্চ সেরে নিলো। এসে দেখে কলি ঘুমিয়ে আছে। কলি কপালে পুরুষ হাতের ছোঁয়া পেতেই চোখ মেলে তাকালো। দেখে মাহমুদের চোখজোড়া তার চোখে নিবদ্ধ হয়ে আছে। কলি বিব্রত হয়ে চোখের পাতা বুঁজে ফেলল।

সন্ধ্যায় ডাক্তার এসে কলিকে দেখে রিলিজ দিয়ে দিলো। জ্বর আছে। তবে অল্প। মাহমুদ নিচে গিয়ে একটা রিকসা ঠিক করে এলো। যেন কলিকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে না হয়। সে কলিকে ধরে সিটের নিচে দাঁড় করালো। স্যান্ডেল এগিয়ে দিয়ে পরতে সাহায্য করলো। কলিকে ধরে ধরে নিচে হাসপাতালের নিচে নিয়ে এলো। রিকশায় করে বাসায় চলে গেলো।

বাতাসী উড়ে গিয়ে বাসার দরজা খুলে দিলো ড়োরবেলের আওয়াজ কানে যেতেই। মাহমুদ কলিকে নিয়ে নিজেদের রুমে চলে গেলো। তাদের পিছন পিছন গেলো বাকি সবাই। মাহমুদের নানী ছাড়া বাকি অতিথিরা চলে গিয়েছে গ্রামে। কেউ গেলো ঢাকায় নিজের বাসায়।

স্বল্পভাষী আবদুর রহমান কলির কপাল ধরে দেখলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলেন। মাহফুজাও কলির কপালে হাত রাখলেন। কিন্তু কিছুই বললেন না। কারণটা তিনি জানেন তাই। তিনি বাতাসীকে নির্দেশ দিলেন কড়া করে মসলা চা তৈরি করার জন্য।
বাতাসী চা বানিয়ে রুমে নিয়ে এলো। কলি চায়ের সঙ্গে একটু শুকনো মুড়ি চাইলো। বাতাসী একটি কাঁচের বড় বাটিতে করে এক বাটি মুড়ি নিয়ে দিলো। গল্প কথায় মাহমুদ, আনুশকা,তার নানু মুড়ি খেয়ে বাটি সাবাড় করে ফেলল।

আঃ ভাবির মুড়ি আমরা খেয়ে ফেললাম বলে, বাতাসীকে আবার ডাক দিয়ে মুড়ি চাইলো আনুশকা। মুড়ি এনে দিলো বাতাসী। চায়ে ভিজিয়ে নিয়ে কলি বেশকিছু মুড়ি খেলো। আনুশকা বলল,

“চা দিয়ে মুড়ি খাওয়া নানুরও বেশ পছন্দ।”

কলি দুর্বল স্বরে বলল,

“আমি শুধু চা খেতে পারি না। বিস্কুট, কেক,পাউরুটি, মুড়ি দিয়ে খেতে খুব ভালোলাগে।”

আনুশকা ভাইয়ের দিকে চেয়ে বলল,

“শুনে রাখুন। আপনি ত আবার চায়ের সঙ্গে কিছুই খাওয়া তেমন লাইক করেন না”

তার নানু পাশ থেকে বলল,

“সঙ্গীর লাইগা নিজেরও অনেক কিছু পছন্দ কইরা নিতে হয়। কলির লগে এবার মাহমুদেরও মুড়ি চাবাইতে হইবো। নারে বইন।ঠিক কইছি না?”

কলি শুকনো হাসলো। একদিনেই কেমন হয়ে গিয়েছে কলির শ্যামবরণ
মুখখানি। পুরো পাংশুটে আকার ধারণ করেছে। ভেবে মাহমুদের খারাপ লাগলো কলির জন্য।

মাহফুজা এলো ছেলের রুমে। বলল,

“এই মাহমুদ, কলির মা ফোন দিলো আমাকে। তুই কলিকে নিয়ে কখন যাবি জানার জন্য।”

“সকালে ভার্সিটি যেতে হবে। বলে দাও কাল বিকেলেই যাব।”

মাহফুজা নিজের রুমে গিয়ে বেয়াইনকে সে খবর জানিয়ে দিলো। আনুশকার বর দেশের বাইরে থেকে ভিড়িও কল দিয়েছে। তাই আনুশকা নিজের রুমে চলে গেলো। নানুও বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। নাতির উদ্দেশ্যে বলল,

“কয়দিন ক্ষ্যামা দিস। ব্যথা সারুক।”

“অবশ্যই পরামর্শদাতি আমার।”

রুম খালি হয়ে গেলো। বাতাসী এসে ট্রে নিয়ে চলে গেলো। মাহমুদ দরজা লাগিয়ে দিলো। কলির পাশে গিয়ে বালিশে সোজা হয়ে শুইলো। কলির একহাত টেনে নিজের কোলের উপরে রাখলো। অনুতপ্তের সুরে ভার গলায় বলল,

“এক্সট্রেমলি সরি কলি। আমি বুঝতেই পারিনি আপনার ফিজিক্যাল কন্ডিশন এত বাজে হয়ে যাবে। কাল সারাদিন খাননি কেন? তারমানে আপনিও আমাকে ভালোবাসেন?”

কলি নিরুত্তর।

“ওহ,ভোরে এতসময় ধরে শাওয়ার নেওয়ার কি হেতু ছিলো? আর এত আরলি শাওয়ার নিতে হবে না। এটা মফস্বল নয় যে কেউ দেখে যাবে। তাই ঊষাকালেই পুকুরে গিয়ে গোসল সেরে আসতে হবে। আস্তে ধীরে করবেন। ঠান্ডা লাগলে গিজারের পানি ইউজ করবেন। পরনের পোশাক নিজে ধুতে যাবেন না ভুলেও। বাতাসী আছে। ওয়াশিং মেশিন আছে। সো আপনি কেন ধুবেন।”

কলি বুঝল মাহমুদ ব্যক্তি হিসেবে অসম্ভব ভালো। যথেষ্ট কেয়ারিং ঠিক তার মা বাবার মতো। তবে একরোখা, মুখকাটা ও রোমান্টিক। কলি ক্ষীণস্বরে বলল,

“তো আমি করবটা কি? আমাদের বাসায় ত নিজের পোশাক নিজে ধুই। আম্মুকে অনান্য কাজে হেল্প করি।”

“আপনি পড়াশোনা করবেন। আর বাকি কাজগুলোর পরিবর্তে আমাকে সান্নিধ্য দিবেন। আপনার আদুরে আদুরে স্পর্শ আমাকে দিওয়ানা করে দেয়। পিপাসায় হৃদয় ফেটে যাচ্ছে। গতরাতে অজ্ঞানে কিছু করেছি। সজ্ঞানে কবে যে করবো আর দেখবো,এটা অনিশ্চিত এখন।”

কলি মনে মনে বলল,

“ওহ গড! সেভ মি। এর কণ্ঠনালি অফ হয়ে যাক। ঘুরে ফিরে সেই একই বিষয় নিয়েই কথা বলছে। যেন এক টুকরো অমৃতের সন্ধান পেলো।”

কলি নিজের হাতটা সরিয়ে নিলো মাহমুদের কোলের উপর থেকে। মাহমুদ কাজে বাসার বাইরে গেলো। রাতে সবাই ডিনার সেরে ফেলল। আনুশকা কলিকে রুমে ভাত নিয়ে দিলো। কলি নিজের হাত ভাত খেয়ে নিলো। আনুশকা প্রেসক্রিপশন দেখে কলিকে সব রকমের মেডিসিন নিয়ে দিলে। কলি খেয়ে নিলো। বাতাসী গিয়ে কলিকে মশারি খাটিয়ে দিলো। কলি ঘুমিয়ে গেলো।

মাহমুদ বাসায় ফিরে খেয়ে একবারেই রুমে প্রবেশ করলো। ফ্রেস হয়ে ট্রাউজার পরে খালি গায়ে মশারির ভিতরে ঢুকে পড়লো। কলি টের পেয়ে দেয়ালের দিকে চেপে গেলো। মাহমুদ উচ্চস্বরে বলে উঠলো,

“আহা দেয়াল! তুমি বড়ই সৌভাগ্যবান। জড়বস্তু হয়েও একজন মানবীর কত মধুর স্পর্শ পাও। আর আমি জলজ্যান্ত একজন মানব। পুরুষ মানব। স্রস্টার শ্রেষ্ঠ জীব! তবুও পাই না। চেয়েও পাই না। একেই বলে কপাল। কপালের নাম গোপাল।”

কলি আধোঘুমে। মাহমুদ কলির কপাল ছুঁয়ে দেখলো জ্বর তেমন নেই। তবে হালকা গা গরম এখনো আছে। কলির শরীরের ব্যথাতো চোখে দেখা যায় না। অনুভবও করতে পারছে না সে। তাই সে কলির ঘাড়ের উপর ঝুঁকে জিজ্ঞেস করলো,

“কলিই ব্যথা করছে?”

কলি লজ্জায় বিছানার চাদর খামচে ধরছে। মাহমুদের ভারি উত্তপ্ত নিঃশ্বাস তার ঘাড়ে, বুকে আছড়ে পড়ছে বিরতিহীনভাবে। কলি চোখ বন্ধ করে আছে না শোনার ভান করে। মাহমুদ তার কানের সঙ্গে নিজের ঠোঁটকে ছুঁই ছুঁই করে বলল,

“এক রাত বেশি খাওয়ার জন্য কয়েক রাত উপোস থাকতে হবে,এমন জানলে অল্পই খেতাম। আস্তেই খেতাম। কঠিন শিক্ষা পেলাম। সাথে শাস্তিও। ওকেহ ঘুমান। খারাপ লাগলে জাগাবেন। শুভরাতি।”

কলি ঘুমিয়ে আছে। দুর্বল ও অভুক্ত শরীরে সারাদিন পর ভাত খাওয়ার দরুন শরীর ছেড়ে দিলো আলগোছে। নয়নজুড়ে নেমে এলো অতল ক্লান্তিকর নিদ্রা।

মাহমুদও চোখ বন্ধ করে ফেলল ঘুমানোর নিমিত্তে। তার পূর্বে সনু নিগমের বাংলা গানের প্লে লিস্ট অন করে দিলো ইউটিউবে। বেজে চলল তার অতি প্রিয় একটি গান।

“জানি তুমিও ঘুমাতে পারোনি,
আমিও ঘুমাইনি সেদিন রাতে।

সামান্য কি কথা নিয়ে যে,
অভিমান করেছিলে আমার সাথে।
……..
একটু সহজ হতে ছিলো না তো দোষ,
কি এমন দোষ হতো করলে আপস।
……
যদি দু’জনে ভুলে যেতাম সব অভিমান।
কি এমন ক্ষতি ছিলো বলো তাতে…”

হঠাৎ তার হোয়াটসঅ্যাপে একটা মেসেজ এলো। সে মেসেজটি পড়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেলো। আবার সেই উটকো ঝামেলা?

চলবে…২৫

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে