#তোমার_জন্য_সব (১১)
✍️ #রেহানা_পুতুল
মাহমুদ নরম হেসে বলল,
“কলি আসেন।”
মাহফুজা গোপনে উল্লসিত! আপ্লুত! রান্নাঘরে গিয়ে বাতাসীকে ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“এই বাতাসী, তোর মাষ্টার সাবের সঙ্গে এই মেয়েটাকে মানাবে বউ হিসেবে?”
বাতাসী বেকুবের মতো চাইলো গৃহকত্রীর মুখপানে। একটু দম ফেলে বলল,
“মাশাল্লাহ। ভালই মানাইবো। খালাম্মা, উনি কি মাস্টার ভাইয়ার বিয়ার পাত্রী? লাইন মারে উনার লগে? ”
“আরেহ নাহ। উনি পাত্রী নয়। মাষ্টার সাবের ছাত্রী।”
রসপূর্ণ কন্ঠে বললেন মাহফুজা। তিনি সরে গেলে বাতাসী ঠোঁট বাঁকিয়ে আহ্লাদী স্বরে মনে মনে উচ্চারণ করলো,
“উঁহু! পাত্রী না ছাত্রী। বড়লোকের রঙের শ্যাষ নাই।”
টেবিলে খেতে বসলো মাহমুদ, কলি ও মাহফুজা। আতিথেয়তায় কলি মুগ্ধ হলো। কাঁচুমাচু হয়ে একটু একটু করে খাচ্ছে।
“এই মেয়ে সংকোচ কিসের? ধরে নাও আমি তোমার মায়ের বোন খালা। মায়ের চেয়েও ভালা।”
মমতা জড়ানো সুরে মধুর হেসে বলল মাহফুজা।
কলি সহাস্য হেসে,
” খাচ্ছিতো আন্টি। কষ্ট করে এত রেসিপি কেন করতে গেলেন?”
“কই কতো। খাওতো।”
“মা এটা ভালো বলছ। লাইক কমেন্ট দুটোই দিলাম।”
সুখী সুখী গলায় বলল মাহমুদ।
“তোর লাইক,কমেন্ট চাইনা। আমার এমনিতেই পপুলারিটি আছে। ”
“ওরেব্বাস! বলে কি। আমি, আনুশকা, বাবা, তোমার পিছনে আছি তাহলে?”
“আবার জিগায়।”
মজা করে বলল মাহমুদা।
কলির এত ভালো লাগছে মাহফুজাকে বলার মতো নয়। কি প্রাণোচ্ছল! কি দিপ্তীময় উদ্দীপনা! দেখে মনে হচ্ছে বিশাল রাজ্যজয় করা রাজার মতো পৃথিবীর সব সুখ শান্তি উনি একজনই দখল করে বসে আছেন। খাবার শেষ করে মাহমুদ বেসিনে গিয়ে হাত ধুয়ে নিলো। ফের এসে মায়ের পাশে বসলো। টেবিলের মাঝখানে থাকা কাচের ছোট্ট বৈয়ামটা টেনে আনলো নিজের দিকে। ঢাকনা খুলে এক চিমটি মৌরি তুলে নিলো আঙ্গুলের ডগায়।
তখনই মাহফুজা বলে উঠলো,
“এটা মুখে দিস না এখন। ডেজার্ট আছে। অরজিনাল স্বাদের তারতম্য ঘটবে পরে।”.
” ওফ হো। আগে বলবে না ডিয়ার মম। কি ডেজার্ট? ”
বাতাসী তিন বাটি ফালুদা এনে তিনজনের সামনে রাখলো।
“নে। তোর ফেবারিট ।”
মাহমুদ ঝটপট খেয়ে নিলো।
“হেব্বি হয়েছে জননী। জাস্ট ফাটাফাটি!”
“কলি খেয়ো কিন্তু তোমার আন্টির হাতের ঠান্ডা ঠান্ডা স্পেশাল ফালুদা। ”
মাহমুদ নিজের রুমে গিয়ে দরজা ভিড়িয়ে বিছানায় গা ছেড়ে দিলো। ভরপুর ভোজনের পর রেস্ট না দিলে অস্বস্তি লাগে।
কলিও, মাহফুজার রান্নার প্রশংসা করলো হৃদ্যতাপূর্ণ কন্ঠে। মাহফুজা সারাবাসা ঘুরে ঘুরে দেখালেন কলিকে। আবার এসে ড্রয়িংরুমে বসলেন। তখন আবদুর রহমান বাসায় এলেন বাইরে থেকে। মাহফুজা কলিকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তিনি কলির সঙ্গে ড্রয়িংরুমে বসে খানিকক্ষণ আলাপ করলেন। পরে নিজেদের বেডরুমে চলে গেলেন ফ্রেস হওয়ার জন্য। বাতাসী তার জন্য দুপুরের খাবার এনে রাখলো টেবিলে। তিনি খেয়ে খাওয়া শেষে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লেন।
কলি নিজ থেকে যেচে আগ্রহ নিয়ে কোন কিছুই জানতে চাইলো না মাহফুজা বা বাতাসীর কাছে। এই উৎসাহটুকুও তার মাঝে অনুপুস্থিত। যা তারজন্য জানা অনাবশ্যক। তা সে কখনোই জানতে চায়না। এমনিতেই সে এসেছে টিচারের কথার মান রাখতে। যদিও আসার পর তার ভালোলেগেছে বাসা ও মাহফুজাকে। খোলামেলা মনোরম পরিবেশ বাসার। ব্যালকনিতে রয়েছে নানান রঙের ফুলগাছ। লতায় পাতায় গলাগলি হয়ে আছে বারান্দার প্রতিটি গ্রীল।
কলি বিনয়াবনত স্বরে বলল,
“আন্টি আমি আসি। এমনিতেই গল্প কথায় লেট হয়ে গেলো। আমার টিউশনি থাকে সন্ধ্যায়।”
“ওহ হো! তোমার স্যার ত মনে হয় ঘুমিয়ে গেলো। দাঁড়াও দেখি। তার রুমতো তোমার দেখাও হয়নি।”
“আন্টি, লাগবে না। আমার আপনাকে দেখতেই ভালোলাগছে কেবল।”
মাহফুজা ভুবনমোহিনী হাসি ছড়িয়ে ছেলের রুমে গেলো। দরজা ফাঁক করে,
“এই মাহমুদ, ঘুমাচ্ছিস? কলি চলে যাচ্ছে। তোর রুম দেখবে না সে?”
মাহমুদ হাই দিতে দিতে ঘুম জড়ানো স্বরে বলল,
“আমি দিয়ে আসছি। আসতে বলো এদিকে।”
মাহফুজা পা ঘুরিয়ে কলির সামনে এলো। কলি দেখতে চাইল না মাহমুদের রুম। গাঁইগুঁই শুরু করলো। মাহফুজা তার হাত ধরে ছেলের রুমের ভিতরে নিয়ে গেলো।
“এটা তোমার স্যারের রুম। ও দিয়ে আসবে তোমাকে। রোড ফ্রি থাকলে বিশ মিনিট ও লাগবে না।”
কলি এক ঝলক নজর বুলিয়ে দেখে নিলো। ভদ্রতার খাতিরে বলল,
” হুম। সুন্দর। স্যার আপনি ঘুমান। আমিই চলে যেতে পারবো।”
মাহমুদ প্রত্যুত্তরে কিছু বলল না কলিকে। টেবিল থেকে মেরুন কালারের বড় সানগ্লাসটা চোখে দিয়ে নিলো। ট্রাউজারের দুই পকেটে হাত গুঁজে বেরিয়ে গেলো কলি ও তার মায়ের পাশ কাটিয়ে। সোজা নিচে চলে গেলো লিফটে করে। বাইকের তালা খুলে বসে রইলো। মাহমুদা কলিকে এগিয়ে দিতে চাইলো নিচে গিয়ে। কলি অনুরোধ করে তাকে আসতে দিলো না। একাই লিফট দিয়ে নিচে চলে গেলো।
মাহমুদের কাছে গিয়ে বলল,
“স্যার আসি।”
“আমি ঘুম নষ্ট করে উঠে এলাম কেন?পিছনে উঠে বসুন।”
গম্ভীর স্বরে বলল মাহমুদ।
কলি দাঁড়িয়ে রইলো।
“কলিই আমি অপেক্ষা করছি। আপনাকে পৌঁছে দিয়ে এসে ঘুমাবো। বাসার এড্রেস বলেন।”
কলি বিরস মুখে উঠে বসলো মাহমুদের পিছনে। কিছুদূর যাওয়ার পর স্প্রীড বেকারে ধাক্কা খেলো বাইক। কলি তাল সামলাতে না পেরে মাহমুদের গায়ে ঝুঁকে পড়লো অনিচ্ছাকৃতভাবে। দুজনেই ভারি অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। যদিও এক অপ্রত্যাশিত নবসুখে মাহমুদের ভিতরে ভূমিকম্প হয়ে গেলো। যে সুখের কথা আবার গোপনও রাখতে হচ্ছে তাকে।
কলির নাকমুখ রাগে জ্বলে উঠলো। কলিকে তাদের বাসার নিচে নামিয়ে দিলো মাহমুদ। কলি সৌজন্যতা দেখিয়ে কোন কথা বলল না মাহমুদের সঙ্গে। এমনকি তাদের বাসায়ও যেতে বলল না। থমথমে মুখে সিঁড়ি ডিঙিয়ে উপরে উঠে গেলো। তার ধারণা মাহমুদ ইচ্ছে করে দেয়নি। তা সত্যি। বাট সে আরেকটু কেয়ারফুল্লি থাকলে এমন হতো না।
মাহমুদ বুঝলো বিষয়টা। তাই সেও কলিকে পিছু ডাকল না। কারণ গেটে গেয়ারটেকার বসা। পাছে আবার কি ভেবে বসে সেইলোক কলি সম্পর্কে। মাহমুদ বাড়ির উপরে তাকালো। ভালো করে চিনে নিলো কলিদের বাসা।
কলি বাসায় গিয়ে মনে মনে,
আজব পুরুষ। মায়ের সঙ্গে দেখলাম কি সুন্দর ফ্রেন্ডলি দুষ্টমিষ্ট স্বরে কথা বলে। আর এখন কি ভাব তার কন্ঠে ও কথায়। এডপ্ট নাকি স্যার। না তা হবে কেন। মায়ের সঙ্গে চেহারার মিল আছে। তার মা এত প্রাণবন্ত সে এমন কেন। হুম। স্যারের বাবাকে এমন দেখলাম। ভারি মেজাজের। বাবার স্বভাবটাই বোধহয় পেয়েছে।
মাহমুদ বাসায় চলে গেলো। বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো। প্রচন্ড মুড অফ। কেন যে ওই ধাক্কাটা খেলো। যেখানে নিজেই এত সংযত হয়ে চলে এবং কথা বলে কলির সঙ্গে। সেখানে রাস্তাটা করলো কি। বেশি কিছু ভাবতে পারল না। দু’চোখে রাজ্যের ঘুম হামলে পড়লো।
সন্ধ্যার পর মাহফুজা বাড়ন্ত কিশোরীর মতো ছটপট করতে লাগলো। চোখেমুখে অস্থিরতার ঝাঁপি। স্বামীর পাশ ঘেঁষে বসলো আদুরে বিড়ালছানার ন্যায়।
“কিছু বলবে মনে হয় তুমি?”
ভরাট কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন আবদুর রহমান।
মাহফুজা তাকে কলি সম্পর্কে সব বলল নিজের মতো করে। শুনে আবদুর রহমান বললেন কপাল চুলকে বললেন,
“আমার কোন আপত্তি নেই। লাইফ যার তার যদি পছন্দ হয় কলিকে। তাহলে প্রস্তাব দিতে পারো তার পরিবারকে। আর তারা মিডেল ক্লাস। এটা ম্যাটারনা। মেয়ের পৈত্রিক সম্পত্তি,অর্থবিত্ত এসব দিয়ে আমরা কি করবো? এসব তো খোঁজে তারা। যারা ক্ষুদ্র মনের। আমাদের কম আছে নাকি।”
মাহফুজা খুশীতে বাক-বাকুম হয়ে উঠলো। আনুশকাকে ফোন দিলো।
“হ্যাঁ আম্মু,কেমন আছো?”
“ভালো আছি। শোন আম্মু,কলিকে তোর ভাবি হিসেবে কেমন লাগবে?”
হঠাৎ করে এমন কিছু শোনায় আনুশকার কাশি উঠে গেলো। সে সামান্য পানি খেয়ে নিলো। কৌতুহলপূর্ণ স্বরে,
“ঝেড়ে কাশো ত আম্মু। তুমি ঝেড়ে না কাশাতে আমার কাশি উঠে গেলো।”
মাহমুদা বিস্তারিত মেয়েকে বলল। শুনে তার মেয়ে বলল,
“লাইফ ভাইয়ার। সো ডিসিশনও ভাইয়ার। সে যদি কলিকে নিয়ে হ্যাপি থাকে। আমাদেরতো আপত্তি থাকার কথা নয়। তোমার নিজের পছন্দ হয়েছে কলিকে। আব্বুর ও আমার অপিনিয়ন শুনলে। তোমার পক্ষেই গেলো। মেইন মানুষটার অপিনিয়ন শুনে নাও এবার।”
মাহমুদা মোবাইল রেখে দিলো। তার আনন্দ আর ধরে না। শিশু নতুন খেলনা পেলে যেমন খলবল করা উচ্ছ্বাসে মেতে উঠে। সারাবাড়ি ঘুরে বেড়ায়। ঠিক তেমনিই মাহফুজা এদিক ওদিক পায়চারি করছে। অপেক্ষা মাহমুদ ঘুম থেকে উঠার। আর তর সয়না তার।
“হ্যাঁ বাবা উঠছিস। একটু দরকার ছিলো। ”
“কি মা? বসো এবং বলো।”
“বাবা কলিকে আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। ভালো মনের মেয়ে। হাজারো মন্দের ভীড়ে এমন একটা চরিত্রবান, নম্রভাষী, মিশুক,বন্ধুবৎসল মেয়ে পাওয়া সোনার হরিণের মতো। একে হাতছাড়া করা যাবে না কিছুতেই। তোর বাবা বোনেরও অমত নেই।”
মাহমুদ দেখলো যেখানে তার মা নিজেই কলিজে চুজ করে ফেলেছে। সেখানে সে একটু শক্ত অবস্থান থাকলে ফলাফল সুনিশ্চিত। সে বিস্ময়ভরা কন্ঠে বলল,
“আরেব্বাস! দ্বিপাক্ষিক আলোচনাও ইতিমধ্যে চূড়ান্ত করে ফেললে? মা এই মেয়ের সঙ্গে আমার না ফ্রেন্ডশিপ রিলেশন আছে, না ভালো সখ্যতা আছে। বরং ভার্সিটির অন্য ছাত্রীদের সঙ্গে আরো সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। এরমধ্যে তুমি তাকে পুত্রবধূ ভেবে বসে আছো। এটা ঠিক হলো? এসব ত আমিও কল্পনাও করিনি মা।”
মাহফুজার মুখ বেজার হয়ে গেলো। মুখে ভর করলো তিমির আঁধার।
মাহমুদ মায়ের পিঠে হাত দিয়ে বলল,
“ছেলেমানুষী করো না। আমাকে কয়দিন সময় দাও। দেখি ওর সঙ্গে এমনিতে কথা বলে বলে সখ্যতা করা যায় কিনা। হুট করে এমন কিছু বললে ও নিতেই পারবে না। ভার্সিটি সত্যিই ছেড়ে দিবে। ছাত্রী হিসেবে ওকে ত আমি চিনি।”
“তা তুই ঠিক বলেছিস। আচ্ছা তাহলে মেশার চেষ্টা করো। ওর নাম্বার টা আমার মোবাইলে সেভ করে দে কলি লিখে।”
মাহমুদ মায়ের মোবাইলে কলির নাম্বার সেভ করে দিলো।
“এই যে দিলাম। নাও।”
ছেলের মুখে আশাবাদী কথা শুনে মাহমুদার মুখার্কৃতি পরিবর্তন হলো। কোমল হেসে চলে গেলো।
অডিটোরিয়ামে আজ বাংলা বিভাগের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সামনের সব ম্যাডাম,স্যাররা উপস্থিত। আজ সবাই ফ্রেন্ডলি মজা করছে। নাচ,গান,অভিনয়,আবৃত্তি, কৌতুক একে একে সবই হলো। সবাই নতুন ড্রেস পরে সেজেগুজে এসেছে যার যার মতো করে। বাদ যায়নি খেয়া, কলিও। কলি আজ আরেকটা নতুন ড্রেস পরে এসেছে। অসম্ভব মায়াবি ও আকর্ষণীয় লাগছে তাকে। সে বরাবরের মতো পিছনের বেঞ্চে বসে আছে। মাহমুদ লুকানো চোখে অনবরত দেখে যাচ্ছে কলিকে।
মিসেস হেড বলল,
” একটা সারপ্রাইজ দিবো। এখন মাইক্রোফোনে তোমাদের গান গেয়ে শোনাবে মাহমুদ স্যার। সে অল্পস্বল্প গাইতে পারে। আমাদের জন্য ওই অল্পস্বল্পই যথেষ্ট। নাকি বলো?”
হুররে! বলে সবাই হাততালি দিয়ে স্যারকে উৎসাহ দিলো মঞ্চে মাইক্রোফোনের সামনে যাওয়ার জন্য।
স্যার মিসেস হেডের দিকে নৈরাশ্যপূর্ণ দৃষ্টিতে চাইলেন। ম্যাডাম মুচকি হাসলেন।
রিমি বলল,
“গানের মডেল লাগবে না। খেয়া আসুক।”
“নাহ। মডেল উঠে আসতে হবে না। আপনাদের মাঝথেকে আমি পছন্দ করে নিব একজনকে মনে মনে।”
“ইয়াহু! কে সেই ললনা স্যার। পরে জানাবেন কিন্তু। ”
“ওহ সিউর। প্রমিজ। তবে আজ নয়। সময় হলেই।”
খেয়া ধরে নিলো তাকেই মিন করে বলছে।
মাহমুদ ভরাট কন্ঠে গাইতে লাগলো ভারতের প্রয়াত শিল্পী শ্যামল মিত্রের সেই বিখ্যাত প্রেমের গান।
“কি নামে ডেকে বলবো তোমাকে,
মন্দ করেছে আমাকে ওই দুটি চোখে।
আমি যে মাতাল হাওয়ার ই মতো হয়ে,
যেতে যতে পায়ে পায়ে গেছি জড়িয়ে।
কি করি ভেবে যে মরি/ বলবে কি লোকে,
মন্দ করেছে আমাকে ঐ দুটি চোখে।
পালাতে পারি নি আমি যে দিশাহারা
দু’টি চোখ যেন আমায় দিচ্ছে পাহারা।
ধরা পড়ে গেছি আমি নিজেরই কাছে
জানি না তোমার মনেও কি এত প্রেম আছে।
সত্যি যদি হয় বলুক যা বলছে নিন্দুকে
মন্দ করেছে আমাকে ঐ দুটি চোখে।
কি নামে ডেকে বলবো তোমাকে
মন্দ করেছে আমাকে ওই দুটি চোখে।”
মুখরিত করতালিতে হল কলরবপূর্ণ হয়ে উঠলো। রিমি ও অনান্যরা বলল,
“স্যার হিন্টস দেন প্লিজ। সে কি খুব মর্ডাণ গার্ল? কিংবা…?”
“নোওও। সে অতি সাধারণ। এই গানের সঙ্গে কেমন মডেল যায় আপনারাই মিলিয়ে নেন।”
ক্লাসের সবাই এ ওর দিকে চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো। পেলনা। অনুষ্ঠান শেষে সবাই চলে যায় হাসাহাসি করতে করতে। কলিও চলে গেলো। সেও বুঝল না স্যার কাকে মিন করে গাইলো।
খেয়া উদভ্রান্তের মতো বের হয়ে গেলো বিক্ষিপ্ত পায়ে। সে নিশ্চিত হলো সে নয়। তবে কে তাও বুঝল না। কারণ স্যার নিদিষ্ট কারো দিকেই বেশিসময় চেয়ে থাকেনি। সবার দিকেই চেয়ে চেয়েই গান গেয়েছে।
সেদিন রাত নয়টার দিকে মাহমুদের ফোন বেজে উঠলো উচ্চস্বরে। ফোন রিসিভ হলো। ওপাশের কথা শোনার পরেই মাহমুদ উদ্বিগ্ন স্বরে,
“ওহ মাই গড! এড্রেস বলুন। আমি এক্ষুনি আসছি আপনাদের বাসায়।”
মাহমুদ দ্রুতবেগে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। বাসার কাউকে কিছু বলার সময়টুকুও নেই তারহাতে।
চলবে…১১