তোমার জন্য সব পর্ব-১০

0
27

#তোমার_জন্য_সব (১০)
✍️ #রেহানা_পুতুল
কলি পা ঘুরিয়ে চলে যেতে উদ্যত হলে পিছন হতে ডাক পড়লো।
” এই কলি শুনুন। এদিকে আসুন।”

কলি দৃষ্টি আড়াল করে মাহমুদের টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
“কেন এলেন?”

“এমনিই স্যার।”
মিনমিনে স্বরে বলল কলি।

“কারণ ছাড়া আপনি আসেন নি। বলুন বলছি।”

” স্যার দুটো কোর্সেই আমি সর্বোচ্চ মার্ক পেলাম কিভাবে? সিমপ্যাথি দেখালেন নাকি?”

মাহমুদ দুর্বোধ্য হাসলো। বলল,

“অদ্ভুত! একজন এলো নাম্বার কম পেলো কেন সেই অভিযোগ নিয়ে। আপনি এলেন বেশি পেলেন কেন সে অভিযোগ নিয়ে। আপনি, খেয়া পেয়েছেনটা কি আমাকে? নাকি আমি আপনাদের টিচার, এটা ভুলে যান। হুঁ? কোন সিমপ্যাথি নয় কলি। যা পেয়েছেন তাই দিয়েছি। জাস্ট ইট। সিমপ্যাথির প্রশ্ন আসবে কেন?”

“আচ্ছা বুঝলাম স্যার। আসি।”

কলি চলে গেলো ম্লান মুখে। মাহমুদ তাকে আর কিছু বলল না। খেয়াকেও সে জিজ্ঞেস করলো না সেদিন কার বাইকে চড়েছিলো সে। কারণ খেয়া তার চিন্তাভাবনা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। সুতরাং তাতে তার বিন্দুমাত্র কৌতুহলবোধও কাজ করছে না।

আজ খেয়ার মন ভালো নেই। ব্লেড দিয়ে হাত কেটে ফেলেছে। হাত নিশপিশ করছে তার। স্থির থাকতে পারছে না একদন্ডও।
কাউকে মে*রে ফেলতে পারলে ভালো হতো। সেটাতো পসিবেল না। কিছু একটা ভাঙ্গতে পারলে মনের কিছুটা দহন কমতো। সে টেবিল থেকে একটা গ্লাস নিয়ে সজোরে তার রুমের মেঝেতে ছুঁড়ে মারলো। নিমিষেই অজস্র কাঁচের গুঁড়িতে মেঝে মাখামাখি হয়ে গেলো। বাসার সবাই ছুটে এলো।

তনিমা জিজ্ঞেস করলো,
“কিরে কিভাবে ভাঙ্গলো গ্লাস?”

“ভাবি আমি ভেঙ্গেছি ইচ্ছে করেই। মাহমুদ স্যার আমাকে ভিন্নচোখে দেখে না। বিয়ে ক্যান্সেল। ”

“কি বলিস? কিভাবে বুঝলি?”

খেয়া তার দেখা কারণগুলো বলল তনিমাকে।
“স্যার কি অন্য কোন ছাত্রী বা মেয়েকে ভালোবাসে?”

“তা মনে হয়না। সে যে টাইপের পারসন।”

“তাহলে ফাইনালি স্যারের সঙ্গে কথা বল।”

“নো নিড ভাবি। যা বোঝার বুঝে গেছি। আমিও স্টপ হয়ে গেলাম। আব্বুকে বলো অন্য ছেলে দেখতে।”

“অন্যছেলে দেখবে কেন? ফাহিম না তোকে ভালোবাসে?”

“আচ্ছা তার কথা ভেবে দেখবো।”

খেয়া কাটাহাত এতক্ষণ লুকিয়ে রাখলো। এবার ওয়ান টাইম ব্যাণ্ডেজ় লাগিয়ে দিলো তুলো দিয়ে ব্লাড মুছে ফেলে। উদভ্রান্তের মতো হয়ে সে বালিশে মাথাগুঁজে আছে উপুড় হয়ে। অশ্রু বিসর্জন দিয়ে যাচ্ছে বিরামহীনভাবে। কি করবে বা কি করা উচিত কিছুই বুঝে উঠছে না। তনিমা তার কাছে এসে মাথায় হাত রাখলো,

” একমাত্র ভালোবাসার জন্য পৃথিবীতে কারোই নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তুই নিদোর্ষ। নানাভাবে চেষ্টা করেছিস। শেষবারের মতো করে যা আরো দু চারদিন। আমার কথাটা রাখ।”

“হুঁ” বলে খেয়া ওভাবেই পড়ে রইলো আগের মতো।”

আজ শুক্রবার। রেবেকা, সন্ধ্যায় স্বামী ও দুই মেয়ের সামনে গরম গরম নাস্তা নিয়ে রাখলেন। ডালপুরি, পেঁপে,আলু, ডিম দিয়ে ম্যাগী নুডলস রান্না ও দুধ চা। শাড়ির আঁচল দিয়ে ঘাড়,মুখ মুছতে মুছতে একপাশে বেতের মোড়াটা টেনে বসলেন। অনেক আগের এই মোড়াটা তার খুব শখের। বহুবছর ব্যবহারে মোড়াটি সৌন্দর্য হারিয়েছে। পুরোনো হয়ে গিয়েছে। বাসায় কিছু দূরাত্মীয়রা এলেই বলে উঠে,

” এই মোড়াটা আপনার পুরান ঢাকার বাসায় থাকতে না? মাশাল্লাহ জিনিস টেকে আপনার হাতে। হিসাব না করলে খরচের শহরে টেকা মুশকিল। রাস্তায় নামার দশা হয়। ”

রেবেকার বুঝতে অসুবিধা হয়না তাদের তুচ্ছ করে বলা কথাগুলো। রেবেকা জবাব দেয় অধৈর্যমাখা কন্ঠে।

“পুরান ঢাকা কি আবার? এখনো তো পুরান ঢাকায় আছি। স্থান বদল হয়েছে মাত্র। ”

“নাহ, আগের গিঞ্জি বাসার চেয়ে এই বাসার পরিবেশ উন্নত। বাসায় কিছু ফার্নিচার আপডেট করেছেন দেখলাম।”

“আশ্চর্য! স্থান বদল হলে, কিছু নতুন ফার্নিচার আপডেট হলে পুরান ঢাকা নতুন ঢাকা হয়ে যায় নাকি? আগে ছিলাম চকবাজার। এখন আজিমপুর আছি। নিউমার্কেটের কাছাকাছি। দুটো লোকেশনই পুরোনো ঢাকায় পড়েছে। ”

চনচনে গলায় বললল রেবেকা।

ঘরে উপযুক্ত মেয়ে রেবেকার। তাই আজিমপুর থেকেই সেকেন্ড হ্যান্ড কিছু ফার্নিচার আপডেট করতে হলো। একটু ভালো বাসায় উঠলো। নয়তো তাও করত না। সেই আদি আসবাবপত্র দিয়েই পোড়াজনম কাটিয়ে দিতো সে। কি করবে না কাটিয়ে। সে নিরুপায়। অসহায়।

তবুও রেবেকা এই মোড়াটি ফেলে দেয়না। এই মোড়ায় বসে অনেকদিন ঝগড়া করেছে সে স্বামীর সঙ্গে। ঝগড়া করার জন্য মনে খুব জোর পায় সে এই মোড়ায় বসলে। রেবেকার মুখ সারাক্ষণ ভার হয়ে থাকে। এখনো ভার। যেনো এই বাসায় এইমাত্র কয়েকটা বিরাট কোন গণ্ডগোল হয়ে গিয়েছে। তবে এর সঠিক কারণটা নুরুল হক,তার তিন মেয়ে অবগত। কিন্তু বাইরের মানুষ ত জানেনা। বুঝবেও না।
তাই গরম পুরিতে কামড় বসিয়ে নুরুল হক ধীর কন্ঠে বললেন,

“রেবেকা তুমি যে সারাক্ষণ এমন গোমড়া মুখ করে থাকো। কারণটা আমরা জানি। কিন্তু বাইরের কেউ দেখলে কি ভাববে? ভাববে এদের দাম্পত্যকলহ লেগেই থাকে হরদম। এতে কলির বিয়েতেও প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। ধরো পাশের বাসায়,বা নিচে কেয়ারটেকারের কাছে কেউ এলো। জিজ্ঞেস করলো, নুরুল হকের পত্নী কেমন? পাত্রপক্ষ পাত্রী খুঁজতে গেলে আগে পাত্রীর মায়ের স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে খোঁজ নেয়। কারণ মায়ের অনেককিছুই মেয়েরা ধারণ করে। নেগেটিভ পজেটিভ দুটোই।”

নুরুল হক আর কিছু বলতে পারলেন না। এমনিতেই অনেক বলে ফেলছেন। রেবেকা তার মুখে ঝামটি মেরে গজগজ সুরে বলল,

” কিইই? আমার স্বভাব, চরিত্র খারাপ?এই মেয়েরা কিছু বলিস না কেন?”

নুরুল হলো নিরীহ চাহনি ফেললেন দুই মেয়ের উপরে। তার চোখের ভাষা জুলি পড়ে ফেলল।
“কিছুই ত বলা যায়না তারে। চব্বিশ ঘন্টাই বোম হয়ে থাকে। ভালো কথা বললেও ফোটে উঠে।”

জুলি তার নুডলস, পুরি, চা খেয়ে শেষ করে ফেলল। একটু বুদ্ধি খাটালে কেমন হয় দেখি। সে আয়েসী ঢংয়ে বলল,
“আম্মু নাস্তাগুলো জোস হইছে। হেব্বি মজা লাগছে।”

কিসের ভিতর কি পান্তা ভাতে ঘি। রেবেকা দাঁত কিড়মিড়িয়ে জুলিকে নির্দেশ দিলো।
“উঠে গিয়ে সোজা পড়ার টেবিলে বসবি। একঘন্টার আগে উঠলে তোর পায়ের নলি খুলে ফেলবো আমি। নাস্তা খাওয়ার আছে। খাবি। এত মজা শুনতে চাইছি আমি? বদের হাড্ডি হইছিস।”

জুলি এক সেকেন্ড সময়ও আর মায়ের সামনে রইল না। উঠে চলে গেলো। কলির নাস্তা খাওয়াও শেষ। কন্ঠকে নিচু করে মমতার সুরে বলল,

“আম্মু তুমি খাবে না নাস্তা?”

“খেতেই ত এলাম। দিলো খেতে? দেখলি তো তার কথার ধরণ। আরো নরম করে সহজ করে বলা যেতনা? মেয়ে কি তার একার? আমার নয়? আমার দায় নেই মেয়ে নিয়ে? আমি বুঝি না কিছু? খাব না আমি।”

মাকে এখন কিছু বলায় বোকামি। কলি নাস্তার ট্রে নিয়ে কিচেনে রেখে দিলো। জুলির রুমে গেলো। বিছানায় কাত হয়ে শুয়ে পড়লো। জুলি পড়া বন্ধ করে দিলো। বলল,

“আপা টম এণ্ড জেরি চলে আমাদের বাসায় প্রতিদিন একবার হলেও। তাইনা?”
“হুম।”

নুরুল হক দীর্ঘস্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। হ্যাংগার থেকে ঝুলানো শার্টটা গায়ে জড়িয়ে বের হয়ে গেলেন।

কলির মোবাইল বেজে উঠলো। সে দেখলো স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে মাহমুদ স্যার। স্যার কেন আবার ফোন দিলো। আজব। উনিতো অকারণে হুটহাট ফোন কখনোই দেয়নি। কলি রিসিভ করেই নিজের রুমে চলে এলো। সালাম দিলো মরা কন্ঠে।

“কলি সেমিস্টার ফাইনাল শেষ। এখন দু’চার দিন পড়াশোনার চাপ নেই। মা আবারও আপনার কথা বলল। কবে আসবেন বলেন? এজন্যই ফোন দিলাম।”

“রবিবার স্যার।” একব্যাকে জানিয়ে দিলো কলি। যেহেতু যেতেই হবে। রক্ষা নেই।

ধন্যবাদ জানিয়ে ফোন রেখে দিলো মাহমুদ।

তার এই দিকটা কলির ভালোলাগে। প্রয়োজন শেষ করেই ফোন রেখে দিবে। সাহিত্যের স্যার হিসেবেও অতিরিক্ত একটি বাক্যও বলার চেষ্টা করে নি কখনো। কি সামনে কি মোবাইলে। খুবই পারসোনালিটিসম্পন্ন ও গাম্ভীর্যপূর্ণ মানুষ। পুরুষ মানুষের গর্ব ও আকর্ষণই তো এসব। শুধু টাকা থাকলেই চলে না। চ্যাঁছড়া ছেলে মেয়েদের কলি দুইচোখে দেখতে পারে না।

রবিবারে মাহমুদ ক্লাসে কলিকে দেখেই চমক খেলো। কলি যখন অন্যদিকে চায় তখন সে কলিকে দেখে। চোখ ফেরাবার উপায় নেই। আজ কলিকে বেশ সুন্দর লাগছে। সে যে আহামারি সেজেছে। তা কিন্তু নয়। অন্যদিন সে এত ছিমছামভাবে আসে। তার আসল রূপটাই লুকানো ছিল। কলির পরনে নতুন একটু পিংক কালারের সুতি ড্রেস। হাতে নতুন একটি ঘড়ি। যেটা আগে চোখে পড়েনি মাহমুদের। ঠোঁটে মেরুন কালারের হালকা লিপিষ্টিক। চোখে টানা কাজল। চোখ দুটো অসম্ভব মায়াবতী লাগছে। নজর কাড়ার মতো। কপালের মাঝখানে ছোট্র একটি কালো টিপ দেওয়া। কালো টিপে এমনিতেই মেয়েদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। আর গোলাপি রঙটাই মেয়েদের জন্য তৈরি হয়েছে। রূপ লাবণ্যে এনে দেয় স্নিগ্ধতা। শ্যাম্পু করা কৃষ্ণকায় সিল্কি কেশগুলো পিছনে পাঞ্চ ক্লিপ দিয়ে বাঁধা। মাহমুদ বুঝলো তাদের বাসায় যাবে বলেই এই পরিপাটি শৈল্পিক সাজ। ক্লাস শেষ করে দ্রুতপায়ে বেরিয়ে যায় সে।

সে বাস স্টপেজের গলির মুখে বাইক নিয়ে অপেক্ষা করছে কলির জন্য। ভার্সিটির সামনে থেকে উঠলে দু’জনেরই সমস্যা হতে পারে। তাই সে কলিকে একটু আগেই ফোনে জানিয়েছে কোথায় থাকবে। কলি গিয়ে দাঁড়ালো মাহমুদের সামনে। মাহমুদ দেখলো কলি ওড়না গলায় এক প্যাঁচ দিয়ে মাথায় দিয়েছে। এখন আরো সুন্দর লাগছে। হৃদয় হরণ করা রূপে দাঁড়িয়ে আছে সদ্য কলি নামের যুবতী মেয়েটি।

মাহমুদের খুব ইচ্ছে করছে কলিকে সুন্দর লাগছে এটা বলার জন্য। কিন্তু ইচ্ছেকে মাটিচাপা দিতে হলো নিজের ব্যক্তিত্বের কাছে। এই কথা বলে সে যতটুকু আনন্দ পাবে। তার বিনিময়ে তার যতটুকু ব্যক্তিত্ব ক্ষুন্ন হবে। সেটা তার কাছে ইম্পর্ট্যান্ট।

মাহমুদ তাকে বলল,
“সাপোর্ট নিয়ে বসুন।”

“স্যার আমি বাসে আসি। ঠিকানা বলুন।আপনি চলে যান।”

মাহমুদের ভ্রুযুগল কুঞ্চিত হলো। বিরক্তও হলো। এই কথা শোনার জন্যতো সে এতক্ষন অপেক্ষা করেনি।

“বাইকে প্রবলেম?”

“স্যার পড়ে যাওয়ার জন্য ভয় করে।”

“আপনি বাসে করে আজ যেতে পারবেন না। আমার বাসা বকশীবাজার। দূর আছে৷ ঘেমে একাকার হয়ে যাবেন। বাইকে বসুন কলি। যেভাবে বসলে ভীতি থাকবে না মনে হবে। ঠিক সেভাবেই বসবেন কেবল নিজের সুবিধার জন্য। ব্যাস।”

কলি ম্লানমুখে মাহমুদের পিছনে বসলো। কিন্তু তাকে ধরল না। বাইকের সাপোর্ট নিয়েই বসলো সে। পুরো পথ দুজন কোন কথা বলল না। চুপচাপ রইলো। কলিকে নামিয়ে বাইকে তালা মেরে বাড়ির নিচে রাখলো মাহমুদ। লিফট দিয়ে ছয়তলায় চলে গেলো। লিফটের আয়নায় কলিকে মাহমুদ ভালো করে দেখে নিলো। আজ কেন জানি কলিকে পলকহীন চোখে দেখতে ভালোলাগছে তার কাছে।

কলিংবেলের আওয়াজ শুনেই বাতাসী এসে গেট খুলে দিলো। ভিতরে চলে গেলো ব্যস্ত পায়ে। মাহমুদ কলিকে ড্রয়িংরুমে বসতে বলল। সে মাকে সকালেই জানিয়েছে আজ কলিকে নিয়ে আসবে।

“কই মা, তোমার অভিমানীনিকে নিয়ে আসলাম ধরে।”

মাহফুজা বেগম ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে এলেন হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিতে। কলি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলো। বিনয়ের সঙ্গে,
“আন্টি আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন আপনি?”

“আরেহ দাঁড়াতে হবে কেন মেয়ে? বসো বসো। আমি তোমার কড়া মাহমুদ স্যার নাকি?”

কলি মৃদু হাসলো। পরক্ষনে মাহফুজা ও কলি পাশাপাশি এক সোফায় বসলো।
বাতাসী তার নির্দেশমতে হালকা নাস্তা এনে দিলো কলিকে। পেঁপের জুস ও কেক। মাহফুজার অনুরোধে কলি সামান্য মুখে নিলো। মাথায় ওড়না দিয়ে কলি নম্রভাবে বসে আছে। মাহফুজা খুঁটে খুঁটে অনেক প্রশ্ন করলেন তার পরিবার ও গ্রাম সম্পর্কে। কলি একে একে নমনীয় স্বরে তার সব জিজ্ঞাসার জবাব দিলো। চোখেমুখে বিরক্তিভাব এলো না তার। কারণ তারও বেশ পছন্দ হয়েছে মাহফুজাকে। নিজের মা সারাক্ষণ চড়া মেজাজে কথা বলে বাসার সবার সঙ্গেই। এমন মধুর স্বরে শীতল গলায় যেন কথা বলতেই পারে না রেবেকা।

মাহমুদ নিজের রুমে চলে গেলো। ফ্রেস হয়ে বেছে নিয়ে একটি টিশার্ট ও নতুন টাউজার পরে নিলো। ড্রয়িংরুমে এসে বসলো মায়ের পাশে। মাহফুজা উঠে দাঁড়ালো। বলল,

“বেলা হয়ে গেলো। লাঞ্চ করে নে আগে। এই কলি মা আসো টেবিলে। একসঙ্গে খাবে।”

“আন্টি আমি খাবনা। বাসায় গিয়ে খাবো।”

মাহমুজা বিহ্বলিত স্বরে,

” ওমা! কি কথা এসব। বাসায় অতিথি এলে না খেয়ে চলে যায়? আসো বলছি। তোমার স্যার বাইকে করে তোমাকে পৌঁছে দিবে। লেট হবে না। আর বাসায় ত বলেই আসছ আজ আমাদের বাসায় আসবে। এত বিব্রত হও কেন খালি খালি?”

মাহফুজ নরম হেসে বলল,
“কলি আসেন।”

মাহফুজা গোপনে উল্লসিত! আপ্লুত! রান্নাঘরে গিয়ে বাতাসীকে ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করে,

“এই বাতাসী, তোর মাষ্টার সাবের সঙ্গে এই মেয়েটাকে মানাবে বউ হিসেবে?”

চলবে…১০

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে