#তোমার_জন্য_সব (৮)
✍️ #রেহানা_পুতুল
মাহমুদ ক্রোধান্বিত হয়ে উঠলো। চোয়াল শক্ত করেও শান্ত সুরে বলল,
“ঠিক আছে ভাবি। বুঝলাম খেয়ার প্রবলেমটা। আচ্ছা দেখি কি করা যায়। আপনি বাইরে গিয়ে খেয়াকে পাঠান। সমস্যা নেই। আগে কথা বলি খেয়ার সঙ্গে।”
তনিমা আশাবাদী মনে ক্যাফের বাইরে গিয়ে খেয়াকে পাঠালো। সে নিজে গেল না আর। খেয়া ভীরু ভীরু চিত্তে নববধূর মতো লজ্জাবনত মুখে মাহমুদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। মাহমুদ খেয়ার সামনে উত্তেজিত হলনা। তিরিক্ষি মেজাজ দেখাল না। কিছু কিছু সময়ে কাউকে শায়েস্তা করতে হয় শান্ত থেকেই। চট করে তেতে গেলে নিজেরই ক্ষতির সম্ভাবনা প্রকট হয়ে উঠে।
“বসুন খেয়া।”
স্মিত হেসে স্বাভাবিক কন্ঠেই বলল মাহমুদ। সে খেয়ার আপাদমস্তকে নজর বুলিয়ে নিলো একবার। বাহ্যিক গড়নের দিক দিয়ে বিবেচনা করলে খেয়াও সুন্দর। পছন্দ করার মতো মেয়ে! কিন্তু সব সুন্দর সবাইকে টানেনা। এটাও নির্জলা সত্যি। কফি ও ফ্রেঞ্চফ্রাই অর্ডার দিলো মাহমুদ। খেয়া দিলো চিকেন ললিপপ মাহমুদের জন্য। খেয়া কিছু বলছে না। চুপচাপ খাচ্ছে। মাহমুদ খেতে খেতে খেয়াকে বলল,
“আপনার ভাবির মুখে ডিটেইলস শুনলাম। এক পাক্ষিক প্রণয়ে পূর্ণতা আসে খেয়া?”
“স্যার..”
খেয়াকে থামিয়ে দিলো মাহমুদ।
“নোওও। প্রশ্ন করেছি আমি।”
“স্যার সাধনায় কিনা হয়। আপনি যেভাবে বলবেন আমি সেভাবেই চলবো। নয়তো মরে যাবো আমি।”
নিচু মাথায় নিচু স্বরে বলল খেয়া।
“আপনার ভাবিকে আপনার ছদ্মনামের মাহি সাজিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলার কোন প্রয়োজন ছিলো কি?”
“স্যার আমিতো সেদিন ভার্সিটিতে আপনার কাছে গিয়েছিলাম এই কথাগুলো বলার জন্যই। কিন্তু আপনিতো বলার কোন স্কোপই দেননি আমাকে। না শুনেই বেরিয়ে গেলেন। তখন আমি বাসায় গিয়ে জানাই। আর ভাবিকে মাহি সাজাই। কারণ আপনি যদি আমার কন্ঠ শুনে,নাম শুনে রেগে যান। তাই লুকোচুরি করতে বাধ্য হয়েছি স্যার। প্লিজ ফরগিভ মি স্যার।”
“তো আমি যদি এখন রেগে যাই?”
“সেজন্যই ত ভাবিকে নিয়ে আসা আপনাকে বুঝানোর জন্য।”
অসহায় সুরে বলল খেয়া।
মাহমুদ বুঝল তনিমার কথা সত্যি নয়। খেয়া কিছুটা সাইকো কিংবা মনোব্যাধীতে ভুগছে, এটা মিথ্যা। যেটা চায় সেটা না পেলে নিজেকে আঘাত করে বসে। এটাও ভুল। সে থোড়াই কেয়ার করা টাইপ মেয়ে। তাইতো আকারে ইঙ্গিতে নিলজ্জের মতো বিয়ের কথা বলতে পারলো ছাত্রী হয়ে স্যারকে। কলি মরে গেলেও একথা বলতে পারবে না। এখানেই কলি ও খেয়ার পার্থক্য। কি বিপাকে পড়লো সে। চাকরিটাই ছেড়ে দেওয়ার উপক্রম। নাহ। বর্তমানে চাকরি পাওয়া সোনার হরিণ। এটা করা যাবে না। বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করতে হবে।
“মরতে চাইলেই মরা যায়না খেয়া। পৃথিবীটা অনেক সুন্দর। এখানে বেঁচে থাকতে পারাটাই সবচেয়ে আনন্দের বিষয়।”
“কিন্তু স্যার, যে যেভাবে বাঁচতে চায়,তার ব্যতিক্রম হলে লাইফটা দূর্বিষহ হয়ে উঠে।”
“তা অবশ্যই রাইট। আগে একাডেমিক লাইফ শেষ হোক। পরে বিয়ের কথা ভাবুন।”
“স্যার আমরা এখন না হয় বন্ধু হই। পরে অন্য রিলেশনে এগোবো? আপনাকে কোনভাবেই পাচ্ছিনা বলে বাসায় জানাতে বাধ্য হলাম।”
“সমস্যা নেই। ভালো করেছেন। শুনুন কি বলি, ভার্সিটিতে, ক্লাসে বেশি ক্লোজ হওয়ার চেষ্টা করবেন না। মিসেস হেড টের পেলে আমার জব চলে যেতে পারে। এত ভালো একটা মর্যাদার জব আমি হারাতে চাইনা। আপনি আগের মতই স্টুডেন্ট হিসেবে চলবেন।”
“স্যার তাহলে কি আমি আপনাকে ফ্রেন্ড ভাবতে পারি?”
“সিউর। তবে বন্ধুত্বের সংজ্ঞাটা ভালো করে জেনে নিবেন। এবার আসতে পারেন।”
খেয়া উঠে গিয়ে বিল দিয়ে দিলো। মাহমুদকে দেয়ার সুযোগই দিল না।
মাহমুদ বিদঘুটে মনে বাসায় গেলো। পরিবারের সবাইকে সব জানালো। এবং বলল,
“এবার বলো, এমন শেইমলেস টাইপের একটা মেয়েকে একমাত্র ছেলের বউ বানাবেন? নিজেই পছন্দ করলো আমাকে। নিজেই ভালোবাসলো। নিজেই পরিবার ম্যানেজ করে বিয়ের প্রপোজাল পাঠালো। আমার নূন্যতম রেসপন্সের তোয়াক্কা না করেই। একমাত্র মেয়ে বলে তারাও ধেই ধেই করে নেচে উঠলো মেয়ের কথায়। আশ্চর্য! চকচক করলেই সোনা হয়না।”
তার বাবা চড়া সুরে বললেন,
“আমি এক্ষুনি ফোন দিচ্ছি তার বাবাকে। ইয়ার্কি? ”
“বাবা, আপনার কিছুই করতে হবে না। আমি যেহেতু খোলাখুলি তার সঙ্গে কথা বলেছি। আমাকে হ্যাণ্ডেল করতে দিন।”
“ওকে। যা ভালো বুঝিস।”
তার মা বলল,
“তাহলে কথা বললি যে, কন্ঠ চিনিসনাই?”
“না মা। সে কথা বলেনি। তার ভাবি কথা বলেছে মাহি সেজে।”
“তবে আন্দাজে পরিবারকে ব্লেইম দেয়া ঠিক হবে না। মাহি রূপী খেয়া মেয়েটা হয়তো বাসায় বলেছে তুইও তাকে পছন্দ করিস। ব্যক্ত্বিত্বের জন্য প্রকাশ করতে পারছিস না তার কাছে। ”
“রাইট বলছো মা। মে বি। ”
সহমত জানিয়ে বলল মাহমুদ।
“আচ্ছা শোন,ওই কলি মেয়েটাকে একদিন বাসায় নিয়ে আয়না। একটু গল্প করবো। সেদিন ত চিনতে না পারায় ভালো করে গল্প হয়নি ওর সঙ্গে।”
মাহমুদের চওড়া কপালে ভাঁজ পড়লো। মুচকি হেসে বলল,
“কেন? ও ছাত্রী হয়ে স্যারের বাসায় আসবে নাকি?”
“কি এমন বুইড়া স্যার বুইড়া স্টুডেন্টরে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে স্টুডেন্টদের ফ্রেন্ডলি রিলেশন। আমার ছোটবোন, তোর খালা মারজিয়ার স্বামী তার হাউজ টিচার ছিলো। পরে প্রেম করে বিয়ে করলো। আর তুই একটা ছাত্রীকে বাসায় আনার মুরোদ নেই। ওরে আমাকে ফোনে ধরিয়ে দিস। আমার ফোনে ত নাম্বার এখন নেই।”
মাহমুদ মায়ের বাচ্চামোপানা দেখে অট্রহাসিতে ফেটে পড়লো। মাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
” আই উইল ট্রাই মাই বেস্ট, মাই ডিয়ার মম।”
সেই রাতে মাহমুদ খেয়াকে নিয়ে চিন্তা করলো প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে। বিছানায় শুয়ে শুয়ে শব্দ করেই বলল,
খেয়া, মিথ্যা,ছলনার আশ্রয় নিয়ে কেউ কখনো কারো মনে আসন গাঁড়তে পারে না৷ সফল হতে পারে না। প্রথমত তুমি ব্যক্তি হিসেবে ট্রিকি, দ্বিতীয়ত মিথ্যাবাদী, তৃতীয়ত নিলজ্জ্ব,বেহায়া একটা মেয়ে। অতএব তোমার ভরাডুবি দেখতে পাচ্ছি আমি। ফাইনালি যেটা করলে তুমি,তোমার ভাবিকে দিয়ে তোমাকে যে রূপে প্রেজেন্ট করলে আজ আমার কাছে,এটা খুব বাজে কাজ করে ফেলেছো। খুব বাজে। তুমি ভেবেছ কি? আমি ধরতে পারব না তোমার চালাকি,কৌশলগিরি। তুমি ধনীর দুলালি। এভাবেই আমাকে পেয়ে যাবে? যেভাবে কলিকে নাস্তানাবুদ করে সফল হয়েছো তোমার সেই ক্ষুদ্র ইচ্ছায়। কিন্তু একজন মানুষকে জয় করা এত সহজ? তাও মিথ্যা,চালাকি,শঠতা করে? ইমপসিবল।
আমি তোমার সঙ্গে ফ্রেন্ডলি চলব না। আবার আমি তোমাকে এটাও বুঝাব না যে,আমি তোমাকে ডিজলাইক করি। বিয়ে করব না। আমি তোমার সঙ্গে আগের মতই স্বাভাবিক আচরণ করবো। যেমনটি করি ক্লাসের অন্য সব স্টুডেন্টদের সঙ্গে। তবে এর কারণটা খুব গোপন থাকবে। খুব লুকানো থাকবে। জাস্ট আই হেইট ইউ খেয়া।
কয়েকদিন পর আজই প্রথম মাহমুদ ক্যাম্পাসে গেলো। সেমিস্টার ফাইনাল শুরু হলো বলে। নয়তো সে আজও আসত না ভার্সিটিতে। ক্লাসে হেঁটে হেঁটে সে পরিক্ষা নিচ্ছে। খেয়া তাকে দেখে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলো। মাহমুদ স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই তাকালো। খেয়া একটা গোপন সুখানুভূতি নিয়ে পরিক্ষা দিতে লাগলো। মাহমুদ খেয়ার সামনে গেল না ইচ্ছে করেই। কারণ ক্লাসের অনেকেই জানে খেয়া তাকে পছন্দ করে। খেয়া সেটা স্পষ্টতই বুঝিয়েছে সবাইকে। মাহমুদ কয়েকজনের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। পরে কলির পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। কলি আড়চোখে তাকে দেখে নিলো। একবারও মুখ তুলে চাইল না মাহমুদের দিকে। আপন মনে হাত চালিয়ে লিখে যেতে লাগলো।
মাহমুদও তাকে কিছু বলল না। সামনে টেবিলে গিয়ে পায়ের উপর পা তুলে বসলো। ইউটিউবে খেলা দেখতে লাগলো সাইলেন্স করে। তবে সুক্ষ্ম দৃষ্টি রয়েছে স্টুডেন্টদের উপরে। স্যারের নিরবতায় পিছনে ফিসফাস শুরু হলো। এ ওর থেকে হেল্প চাচ্ছে। মাহমুদ সজোরে ডাস্টার দিয়ে টেবিলে আঘাত করলো ক্ষুব্ধ চাহনিতে। সবাই আবার চুপ হয়ে গেলো। মাহমুদ দেখলো খেয়া নকল করছে। খেয়ার ধারণাকে সত্যি করে দিয়ে মাহমুদ না দেখার ভান করে রইলো আজ। পরিক্ষার সময়সূচি শেষ হলে স্যার খাতা জমা দিতে আদেশ দিলো সবাইকে। সবাই গিয়ে স্যারের সামনে টেবিলে খাতা জমা দিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলো। খেয়া ও কলি সবার শেষে গেলো রিভিশন দিয়ে৷
কলি খাতা রাখতে গেলে মাহমুদ বলল,
“আপনি খাতা হাতে রাখুন। নিচ্ছি। খেয়ারটা আগে নিই।”
এতে খেয়া উৎফুল্ল হলো মনে মনে। বুঝলো স্যার তাকে পছন্দ করেছে বলেই তার খাতা আগে নিয়ে নিচ্ছে। খেয়াকে কষ্ট দিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখছে। মাহমুদ তার খাতা নেড়েচেড়ে গম্ভীর স্বরে বলল,
“হুম পিলাফ করেছেন সব। ঠিকাছে খেয়া। আপনি আসুন।”
খেয়া চলে গেলো। কলি নম্রভাবে স্যারের সামনে নিজের খাতা রাখলো। মাহমুদ কলির খাতাও নেড়েচেড়ে দেখলো। দরজার বাইরে এক পলক দেখে নিলো। এবং কলিকে আস্তে করে বলল,
” আসলে টিচার হয়ে এভাবে বলতে সংকোচ হচ্ছে৷ না বলেও পারছি না। ইয়ে, কলি আপনার সঙ্গে আমার জরুরী কথা আছে। একটু সময় হবে কি?”
“হ্যাঁ স্যার বলেন?”
“এখানে ত প্রবলেম। বাইরে কোন রেস্টুরেন্টে আসুন।”
ভারি মুডে বলল মাহমুদ। কলি আজ আর আপত্তি করল না। বিনাবাক্যব্যয়ে রাজী হলো। এমনিতেই ছাত্রী হয়ে বেশি করে ফেলেছে। যথেষ্ট হয়েছে।
“কোন রেস্টুরেন্ট বলেন স্যার? আমি রিকশা নিয়ে যাচ্ছি।”
মাহমুদ খুশি হলো কলির উপর।
” ‘আয়োজন’ এ চলে আসুন। আমি বাইক নিয়ে চলে আসছি। চিনেন ত? এইতো পাশেই।”
“চিনি স্যার। আসছি।”
মাহমুদ, কলি রেস্টুরেন্টে বসলো। পাশাপাশি নয়। মুখোমুখি চেয়ারে। মেন্যুলিস্ট এগিয়ে দিয়ে মাহমুদ অনুরোধের ঢংয়ে বলল,
“লাঞ্চ করবো। অর্ডার দিন। সবই থাকে ওদের আয়োজনে।”
কলি দোনোমোনো শুরু করলো।
” স্যার আমি বাসায় গিয়ে লাঞ্চ করবো।”
“স্যারের ইচ্ছার অবমাননা করবেন?”
কলি মৌন রইলো। মাহমুদ নিজেই অর্ডার দিয়ে দিলো। কলি জিজ্ঞেস করলো,
“আপনার পা এখন সম্পূর্ণ ভালো হয়েছে স্যার?”
মাহমুদের মুখটা ভার হয়ে গেলো। একটা অব্যক্ত অভিমানের নীল প্রলেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে তার সারা মুখজুড়ে। বিলম্ব না করেই বলে ফেলল,
“যদি বলি আমার এক্সিডেন্ট আপনার জন্যই হয়েছে। বিলিভ হবে?”
কলি নির্বাক হয়ে মাহমুদের দিকে তাকালো। মাহমুদও কলির চোখের দিকে চাইলো মুখের পাংশুটেভাব দূর করে করে। কলি দৃষ্টি আড়াল করার চেষ্টা করলো। এবং বিস্মিত ও ব্যথিত কন্ঠে বলল,
” আমার জন্য?”
“ওহ হো! আপনি অন্যভাবে নিবেন না। সেদিন আপনার না খেয়ে চলে যাওয়া,হার্ট করে কথা বলা একজন মানুষ ও টিচার হিসেবে নিতে পারিনি। এটা তখন আপনার স্থানে যে কেউ হলেও এমন হতো। ইভেন কোন ছেলে হলেও সেইম ঘটনা ঘটতো। ক্লিয়ার? বুঝাতে পেরেছি কলি।”
” তা না হয় বুঝলাম স্যার। কিন্তু এখন তো আমার জন্য হয়েছেন। ভীষণ কুন্ঠাবোধ হচ্ছে নিজের কাছে। এটা আমি কল্পনাই করতে পারিনি।”
অনুতপ্তর সুরে নিচু মাথায় বলল কলি। কলির গলা ধরে এলো। বলল,
” আপনার মিস বিহেভিয়ারের জন্য যতটা আঘাত আমি পেয়েছি। তারপর আমার চালচলনে আপনি যতটা মনঃক্ষুণ্ন হয়েছেন। ফাইনালি এতবড় এক্সিডেন্ট। সব মিলিয়ে এখন আমিই আপনার কাছে ঋণী হয়ে গেলাম। এ ঋণ শোধ করার এবিলিটি আমার নেই স্যার।”
মাহমুদ হতচকিত হয়ে গেলো। তার ভীষণ ইচ্ছে করছে কলির আঁখিকোণে জমে থাকা শিশিরবিন্দুর ন্যায় অশ্রুকণাটুকু আঙ্গুলের ডগা দিয়ে মুছে দিতে। কিন্তু এটা করা হয়তো অশোভনীয় হয়ে যাবে। ভেবেই হাত প্রসারিত করতে গিয়েও গুটিয়ে নিলো মাহমুদ।কলির ছলছল চোখের দিকে চেয়ে বলল,
“কলি এনি প্রবলেম? আপনার আঁখিতে অশ্রু টলমল করছে কেন?”
কলি দার্শনিকের মত করে বলল,
“কুঠার গাছকে আঘাত করে চলে যায়। কিন্তু গাছ ঠিকই মনে রাখে।”
“কলিইই..”
“হ্যাঁ স্যার। তবে এখন আপনার জন্যই খারাপ লাগছে। অতিরিক্ত টাকাওতো ব্যয় হয়ে গেলো আমার জন্য।”
“এভাবে নিজেকে দায়ী করবেন না। এটা হয়তো আমার জন্য বরাদ্দ ছিলো। আমি মরেও তো যেতে পারতাম।”
“এভাবে বলবেন না স্যার প্লিজ। আপনার জরুরী কথাগুলো?”
কলির কথার জবাব দিতে যাবে মাহমুদ। অমনি তার শানিত দৃষ্টি আকস্মিক আটকে গেলো রেস্টুরেন্টের কাঁচের দেয়াল ভেদ করে রাস্তার উপরে। দেখলো খেয়া একটি যুবক ছেলের মোটর বাইকের পিছনে উঠে বসলো দুই পা দুই পাশে দিয়ে। সে ছেলেটাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো খুশি খুশি মনে।
মাহমুদ অবাক চোখে দেখল আর ভাবল,
“খেয়ার ক্লোজলি বসার ভঙ্গিতে মনে হলো বয়ফ্রেন্ড। কিন্তু তাহলে তাকে যে বিয়ে করতে চায়,এটা কেন?”
“স্যার কি হয়েছে?”
বলে কলি চেয়ার থেকে উঠে ঘাড় ঝুঁকিয়ে বাইরে তাকালো। দেখলো ব্যতিক্রমী কিছুই না। রোজকার মতো সেই নানা বর্ণের,নানা শ্রেণির ও নানান বয়েসী মানুষের জটলা। সেই ইট, কাঠের যান্ত্রিকতা। সেই যানবাহনের বিষাক্ত কালো ধোঁয়া উড়িয়ে ঘেঁষাঘেঁষি করা ভীড়।
কলি আবার বসে গেলো। মাহমুদ আফসোস করে বলল,
“চলে গেলো। আপনি দেখতে পেলে আমার বেশ উপকার হতো।”
কলি নির্বোধ চাহনি নিক্ষেপ করে মাহমুদ স্যারের দিকে চাইলো।
চলবে…৮