তোমার ছায়া পর্ব-২১

0
1733

#তোমার ছায়া (পর্ব ২১)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

হাত পা হাওয়ার মধ্যে অনুভব করে কিছুক্ষনের জন্য নিজের তাল হারিয়ে চোখ বন্ধ করে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করলো আয়রিন। আসার সময় তো কাউকেই দেখেনি। তাছারা এতো রাতে সবাই ঘুমের দেশে। এমন তো হওয়ার কথা ছিলো না।
ফারদিন তাকে সামনে দাড় করানোর কিছুক্ষন পর ভয়ে ধিরে ধিরে চোখ খোলে সে। কারণ সুই সাইড করতে গিয়ে ধরা খেয়ে বেচে গেলে বিপদ টা আরো বড় হয়ে আসে। কারণ মা’রা গেলে তো গেলোই। আর বেচে থাকলে আরো বেশি ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়। আবার কখনো সাক্ষাত উত্তম মাধ্যম যেন ফ্রিতে উড়ে গায়ের উপর এসে বসে।
আয়রিন ছল ছল চোখে তাকিয়ে সামনে ফারদিনকে দেখে কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে,
– কেন বাচাতে এলেন? চলে গেলে তো দুঃখ কষ্ট সব শেষ হয়ে যেত। সারা জীবন ধুকে ধুকে ম’রার চেয়ে একবারে ম’রে যাওয়া ভালো নয় কি?
ফারদিন তার দিকে দৃষ্টি স্থির করে বললো,
– মা’রা যাওয়াই কি সব কিছু সমাধান হয়ে যাবে? এই একটু কষ্ট সহ্য করতে না পেরে তুমি যেই রাস্তায় ঝাপ দিচ্ছো, ওখানে তো আরো হাজার মাত্রার কষ্ট। অল্প থেকে বাচার জন্য জেনে শুনে কঠিনে ঝাপ দেওয়া কি বোকামি নয়?
আয়রিন এবার কেঁদে দিয়ে বলে,
– কেন বেচে থাকবো আমি? কোন চোখে বেচে থাকবো? আজ এমনটা হয়েছে। কাল রাস্তায় বের বের হলে সবাই বলবে, এই মেয়েটার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। আর এতো ভালোবেসে ফেলেছিলাম তাকে, কই তার থেকে তো বিন্দু মাত্রও ভালোবাসা পাইনি? কেন বেচে তাকবো আমি।
ফারদিন এবার আয়রিনের দুই বাহু দরে ঝাকি দিয়ে বলে,
– এভাবে নিজের কাছে হেরে গেলে তুমি কিভাবে অন্যের কাছে জিতবে? আর একজন ভালোবাসেনা দেখে বিষয়টা এমন নয় যে, কেউ তোমাকে ভালোবাসে না। নিজেকে শক্ত করো, নতুন করে নিজেকে গুছিয়ে নাও। দেখবে তোমার আশে পাশে এমন অনেক মানুষের ভালোবাসা পাবে। তুমি নিজের কাছে জিততে পারলে কারো কাছে হেরে যাবে না তুমি। তুমি আজ চলে গেলে, কষ্ট দেওয়া মানুষ গুলো কাল তোমাকে ভুলে যাবে। তারা দিব্যি সুখে থাকবে। আর তুমি? তুমি কেন নিজের জীবনটা নষ্ট করবে?
আয়রিন এবার চোখের পানি মুছে বলে,
– তাহলে আপনিই বলুন আমার কি করা উচিৎ?
– তোমাকে আগে নিজের সাথে জিততে হবে। নিজের বেপরোয়া মনের সাথে যুদ্ধ করে হলেও তোমাকে উইন হতে হবে। তাদেরকে দেখিয়ে দিবে তুমিও অনেক সুখে আছো। তাদের দেখিয়ে দিবে যে তুমি কোনো সস্থা বস্তু নয়। তোমারও মুল্য আছে। আর সে ঠকিয়েছে দেখে, তোমার ভালোবাসা গুলো হারিয়ে যায় নি। হয়তো এমন কেও আসবে তোমার লাইফে যে তোমাকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসবে।
– কিন্তু আমার লাইফে এমন মানুষ কখনো ছিলো না। আর এখনও নেই, কারণ এতো কিছুর পর কেওই আমাকে ভালোবাসবে না। হলেও প্রয়োজন হতে পারবো, কারো প্রিয়জন না।
ফারদিন হাত দিয়ে আয়রিনের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
– তোমার এখন এসব ভাবার সময় না। এসব পরেও ভাবতে পারবে। তোমার এখন নিজেকে নিয়ে ভাবার সময়।

আয়রিন এবার চুপ করে রইলো। ফারদিন তাকে নিয়ে ছাদের কিনারায় দাড়িয়ে বললো,
– এবার নিচের দিকে তাকাও তো আয়রিন।
আয়রিন নিচের দিকে তাকিয়ে বললো,
– কই কিছু তো দেখছি না।
ফারদিন হেসে বললো,
– আমি তো নিজ চোখে তোমার বোকামি গুলো দেখতে পাচ্ছি।
আয়রিন তার দিকে চেয়ে বলে,
– কিভাবে?
ফারদিন এবার হেসে দিয়ে বলে,
– এক তলার উপর থেকে লাফ দিলে কি কেও ম’রে? বরং এখন লাফ দিলে হাত পা ভে’ঙে তোমাকে অনেক দিন হসপিটালে পরে থাকতে হতো। হয়তো এমনও হতে পারে যে, আর কখনো ঠিক ভাবে হাটতে পারতে না, তখন কি করতে?
আয়রিন এবার শান্ত ভাবে বললো,
– বাসায় কাউকে কিছু বলবেন না প্লিজ।
– বলবো না একটা শর্তে, তুমি একন আমার সামনে দাড়িয়ে প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে, আর কখনো উল্টা পাল্টা চিন্তা মাথায় আনবে না।
– আচ্ছা আনবো না।
,
,
– সেই পরশু রাতে যে বের হলি তখন থেকে কোথায় ছিলি তুই?
– আবরারদের বাড়িতে ছিলাম মা। এর পর আজ সকালে ওখান থেকেই অফিসে চলে গিয়েছিলাম। আর এখন ডিরেক্ট এখানে।
মা খাবার দিতে গিয়ে থেমে গিয়ে বললো,
– তোকে বললাম না ওদের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখবি না। তোর বাবা জানলে কি করবে বুঝছিস?
ফারদিন সোজা হয়ে মায়ের দিকে চেয়ে বলে,
– আর কতো মা? সে কি তোমার মেয়ে না? আর আমার বোনের সাথে আমি যোগাযোগ রাখবোনা কেন? তোমাদের চোখে সে অপরাধি, আমার চোখে তো না। তোমরা বাবা মা হয়ে কিভাবে সন্তানদেরকে বুঝতে পারো না মা? কেমন বাবা মা, যে সন্তানের ভুল ক্ষমা করতে পারো না। কষ্ট তো ঠিকই পাচ্ছো। এক সময় মেনেও নিবে। তাহলে কেন এখন নিজেরাও কষ্ট পাচ্ছো আর অন্যকেও কষ্ট দিচ্ছো। আর আবরার ছেলেটা কেমন তা তোমরা ভালোই জানো। ছোট বেলা থেকেই আমার মতো সেও তোমাদের নিজের সন্তানের মতো ছিলো। তাহলে এখন কেন এতো সুন্দর সম্পর্কে মরিচিকা ধরাচ্ছো? হাসি মুখে সন্তানের ভুল গুলো ক্ষমা করে মেনে নিয়ে দেখো না। সবাই কতো সুখি হয়।
ফারদিনের কথায় মা একটা দির্ঘশ্বাস নিয়ে কিছুক্ষন চুপ কারে রইলো। যার দ্বারা কিছুই বুঝা গেলো না। মা এবার শান্ত ভাবে বললো,
– শুনলাম আয়রিনের নাকি ডিবোর্সের কথা বার্তা চলছে?
ফারদিন এবার অবাক হয়ে মায়ের দিকে চেয়ে বলে,
– তুমি কিভাবে জানো? তার মানে ভেতর ভেতর ওই বাড়ির সব খবরই রাখো। আর বাহিরে কঠোরতা প্রকাশ করছো।
– খবর রাখার কি আছে? আর এসব কথা কি চাপা থাকে? এই কান থেকে ওই কান হতেই সর্বত্রে ছড়িয়ে যায়। ডিবোর্স কেন হচ্ছে?
– ওর হাসবেন্টের কারণে। বিয়ে করেই দেশের বাইরে চলে গেলো, আর ফিরে এসেই পূর্বের প্রেমিকাকে বিয়ে করে বাসায় ঢুকলো। ভেবে দেখো তো, আয়রিনের জায়গায় ফারহাকে। তাহলে কেমন হতো? সেই হিসেবে কি ফারহা সুখে নেই?
মা একটু বিরক্তি প্রকাশ করে বললো,
– আমি তোর সাথে ভিন্ন টপিক নিয়ে কথা বলছি। আর সব টপিকেই তুই বার বার ফারহাকে টেনে আনিস।
ফারদিন খেতে খেতে বলে,
– মরিয়ম খালা কোথায় আজ। আসার পর থেকে দেখিনি যে?
– সে গত কাল ওর বাড়িতে চলে গেছে। তার বড় মেয়েকে নাকি স্বামী আবার মার’ধর করেছে। তাই বাড়িতে চলে গেলো। সেখান থেকে মেয়ের শশুর বাড়ি যাবে।
ফারদিন মায়ের দিকে চেয়ে আবার বলে,
– দেখলে মা, সব মেয়ে কিন্তু বিয়ে করে সুখি হতে পারে না। আর পায় না ভালো মনের একজন জীবন সঙ্গি। তো সেই হিসেবে কি ফারহা সুখি হবে না মা?
মা এবার বিরক্তিকর দৃষ্টিতে ফারদিনের দিকে তাকায়। এই ছেলের সাথে যতোক্ষন কথা বলবে, ততোক্ষনই ফারহা ফারহা বলে মাথা খারাপ করে ফেলবে। তাই বিরক্ত হয়ে সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়ে বলে,
– কিছু প্রয়োজন হলে ডাক দিস। নয়তো কিচেন থেকে নিয়ে আসিস।
,
,
কয়েকদিন সব ঠিক ঠাকই চলছিলো। সব শেষে বিকেলে বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলো। তখন সামনে একটি গাড়ি এসে দাড়ায়। গ্লাস নামালে দেখে তার বাবার বন্ধুর ছেলে সাদাফ। আবরারকে বললো,
– গাড়িতে উঠো, আমি ওদিক দিয়েই যাচ্ছি। সাথে একটু গল্পও করা হবে। অনেক দিন তো কথা হয় না। উঠে পরো।
পরিচিত দেখে আবরারও আর না করলো না। সাদাফের সাথে কথাও বলা হলো এই ফাকে। মন্দ কি?

সাদাফ ড্রাইবিং করছে আর পাশে আবরারের সাথে কথা বলছে। কথার ফাকে সাদাফ বললো,
– শুনলাম ফারহাকে নাকি বিয়ে করে নিয়েছো?
আবরার একটু অবাক হয়ে বললো,
– ফারহাকে তুমি কিভাবে চিনো? মানে নাম সহ এতো কনফিডেন্স নিয়ে চেনার তো কথা না।
আবরারের কথায় হা হা করে হেসে উঠলো সাদাফ।
তারপর হাসতে হাসতে বললো,
– আমার গার্লফ্রেন্ডকে আমি চিনবো না?
মুহুর্তেই যেন সারা শরির জুড়ে একটা গরম ঢেউ বয়ে গেলো আবরারের। সাদাফের দিকে চেয়ে বললো,
– মানে?
সাদাফ একটু হেসে বললো,
– বিশ্বাস হচ্ছে না তাই তো? বিশ্বাস না হওয়ারই কথা। কারণ তোমার মতো সহজ সরল একটা ছেলে কখনোই ফারহার মতো একটা সিক্রেট প্লেয়ারের খেল গুলো ধরতে পারবে না।
আবরার একটু রেগে বললো,
– দেখো সাদাফ বাজে বকো না। আমি ফারহাকে খুব ভালো ভাবেই চিনি। খুব ভালো একটা মেয়ে সে।
সাদাফ আবারও হেসে উঠলো। কিছুক্ষন হেসে তারপর বললো,
– আচ্ছা, ফারহা কখনো তোমাকে বলেছে, যে ওর বয়ফ্রেন্ড আছে?
– না, এমনটা সে আমাকে কখনোই বলেনি। আর তুমি আমার সাথে মজা করছো না তো সাদাফ। দেখো সাদাফ যদি মজা করে থাকো তাহলে আগেই বলে রাখি, ফারহাকে নিয়ে এমন কোনো মজা আমি সহ্য করবো না।
সাদাফ নিজের ফোন টা বের করে বলে,
– জানতাম, তোমার কাছে মজাই মনে হবে। প্রমান সহ দেখলে তো আর অবিশ্বাস করতে পারবে না তাই না? একজনের সাথে চলে ফিরে সুজুগ বুঝে আরেকজনের ঘাড়ে চেপে বসে খুব সুন্দর খেল দেখিয়েছে সে। এখন নিজ চোখে দেখো তোমার প্রো-প্লেয়ারের খেল গুলো। কেমন করে ঠান্ডা মাথায় খেলতে পারে সে।

To be continue…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে