তোমার আঁচলের উঠোনে পর্ব ১৩

0
2397

তোমার আঁচলের উঠোনে পর্ব ১৩

বিভাবরী বাড়ি ফিরেই জানতে পারে রুশার বিয়ের ডেট ফিক্সড হয়ে গেছে। সব রকমের প্লানিং ও শুরু হয়ে গেছে। বিভাবরী দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। ভেতরটা বড্ড শূন্য শূন্য লাগছে তার। চাপা কষ্ট টা বেরিয়ে আসতে চাইছে কান্না হয়ে। যতই সে ভুলে থাকার চেষ্টা করুক, তার প্রথম প্রেম। চাইলেই তো আর ভুলে থাকা যায় না। ধ্রুবর সাথে তার পরিচয়ের চার বছর। বাবার বিজনেসের খাতিরে তার সাথে পরিচয়। সেদিনের সেই বিয়ের ঘটনার পর থেকে যতবার তার সাথে দেখা হয়েছে, সে ততবারই ফ্যালফ্যাল করে তার দিকে তাকিয়ে ছিল। তখন তো দেখে তার একবারও মনে হয়নি, ছেলেটা তাকে পছন্দ করে না। আতঙ্ক, উত্তেজনায় সারারাত ঘুম হয়নি তার। এক অসহ্য অনুভূতি তে সারারাত পার করেছে। শেষরাতে চোখ লেগেছিল যার দরুন, সকালে উঠতে দেরি হয়ে যায়। একবার ভাবলো ভার্সিটি যাবে না। আবার ভাবলো, সারাদিন বাড়িতে বসে কি করবে? তার চেয়ে ভালো তো যাওয়াই।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



বিভাবরী ভার্সিটি যাওয়ার জন্য নিচে নামতেই মিসেস নাজনীন তাকে আটকে দেয়। গম্ভীর মুখে বলে,
— তোমাকে কিছু কথা বলবো, বিভাবরী। তুমি সোজাসাপটা উত্তর দেবে। বুঝেছো?
বিভাবরী চোখ-মুখ শুকিয়ে গেছে উনার কথায়। কি এমন কথা বলবেন উনি, যে এত সিরিয়াস হয়ে আছেন।
— শুনো বিভাবরী, আমার ছেলের জন্য একটা লাল টুকটুকে বউ চাই। তুমি কি লাল টুকটুকে বউ হবে?
মিসেস নাজনীনের মুখে কথাটা শোনামাত্র বিভাবরীর শরীরের লোমগুলো দাঁড়াতে শুরু করলো। বিভাবরী ডোক গিলে কিছু বলার আগেই তিনি বলে উঠেন,
— হ্যাঁ অথবা না তে উত্তর দাও।
উনি সিরিয়াস মুডে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হো হো করে হেসে ফেলেন। বিভাবরীর মাথয়ার হাত বুলিয়ে বলেন,
— খুব ভালো মানিয়েছে তোমাদের। এমন একটা মেয়েই তো চেয়েছিলাম আমার রিশুর জন্য।
বিভাবরী একছুটে বাইরে চলে আসে। কি ভিষণ লজ্জা লাগছে তার! সারাটা রাস্তা এসব ভাবতে ভাবতে যায়। রিশাদের সাথেই নতুন করে সব শুরু করবে সে। ধ্রুব নামের কেউ তার জীবনে ছিল, সে এটা মনে করবে না। একদম করবে না। মানুষ চাইলে সব পারে। তাকেও পারতে হবে। অবশ্যই পারতে হবে।

রিক্সা ভাড়া মিটিয়ে গেটের কাছে আসতেই তার চোখদুটো থমকে যায়, একটা পরিচিত মুখ দেখে। ধ্রুবর হুট করে ভার্সিটি আসার কারণটা সে বুঝতে পারছে না।
ধ্রুবকে দেখে পুরোপুরি ঘাবড়ে যায় বিভাবরী। সে কেমন উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ঝাঁকড়া চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কপালের উপর ছিটিয়ে আছে। দীর্ঘদিন কাটা হয়নি বোধ হয়। বিভাবরী কে দেখে সে দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে বলে,
— কোনো কথা নয়, প্লিজ! দশটা মিনিট সময় দেবে আমাকে।
বিভাবরী নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করলো। সে অত্যন্ত কঠিন ভাবে তাকে রিফিউজ করবে। কিন্তু তার আগেই ধ্রুব তার হাতটা ধরে বলে,
— প্লিজ, বিভাবরী! চলো না!
ছেলেটা এমন করুন সুরে বললে সে কিভাবে তাকে না করবে? বিভাবরী খেয়াল করলো ধ্রুবর বিষন্ন দৃষ্টিটা। সে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। ছেলেটা আবার কেন তার সামনে এলো? বিভাবরী লম্বা শ্বাস টেনে বললো,
— দশ মিনিটের এক সেকেন্ডও বেশি না।
ধ্রুব বিভাবরীর হাত না ছেড়ে তাকে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসায়। ড্রাইভ করার ধ্রুব বারবার ঠোঁট কামড়ে ধরছে। তার গলাটা কি শুকিয়ে যাচ্ছে? দিশেহারা দৃষ্টি খুন ঘন ঘন পরিবর্তন হচ্ছে। বিভাবরীর জানতে ইচ্ছে হলো, তার কি হয়েছে? সে এমন আতঙ্কে আছে কেন? কিন্তু জিজ্ঞেস করেনি। কেন করবে? তার কি সেই অধিকার আর আছে?
ধ্রুব তাকে নিয়ে একটা ছোট-খাটো আইসক্রিম পার্লারে যায়। তাকে বসিয়ে দিয়ে সে ক্রমাগত হাত মুচড়ে যাচ্ছে। আবার কখনো ডগডগ করে পানি খাচ্ছে। বিভাবরী বিরক্ত হয়ে বলে,
— আপনি কি কাইন্ডলি বলবেন, আমরা এখানে কেন এসেছি?
ধ্রুব করুন দৃষ্টিতে তাকায় বিভাবরীর দিকে। কিছুক্ষণ পর চোখ সরিয়ে বললো,
— আমি একটা সিগারেট ধরাব, বিভাবরী। এটা শেষ হতে যতক্ষণ সময়, ততক্ষণ তুমি অপেক্ষা করবে।
ধ্রুব বসা থেকে উঠে সিগারেট ধরায়। সিগারেট টানার মাঝে সে আরও একটা কাজ করছে। মাথার চুল টেনে ধরছে। বিভাবরীর বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠে। কি হয়েছে ছেলেটার? মনটা আকুপাকু করছে জানার জন্য।
ধ্রুব সিগারেট শেষ করে আবার এসে নিজের সিটে বসে। দুহাত মাথায় চেপে ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করে,
— আমি চেষ্টা করেছি, বিভাবরী। অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমার পক্ষে সম্ভব না তোমার থেকে দূরে থাকা।
বিভাবরী বিস্ফোরিত চোখে তার দিকে তাকায়। অনেক কথা বলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু বলবে না। সে চোয়াল শক্ত করে বলে,
— রুশা আপুর সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার পরও আপনি কি করে এই কথাটা বলতে পারলেন??
ধ্রুব মাথা তুলে মুখ কুঁচকে বলে,
— আমার সাথে রুশার বিয়ে ঠিক হয়নি। রুশার বিয়ে তার বয়ফ্রেন্ড নুহাশের সাথে ঠিক হয়েছে। আমি তার সাথে গিয়েছিলাম তোমাকে একটিবার দেখার জন্য। কিন্তু আফসোস! তুমি এক বারের জন্যও নিচে নামলে না।
ধ্রুবর কথা শুনে তার পায়ের নিচের মাটি সরে যেতে শুরু করছে। বিভাবরীর ভেতরটা হু হু করে উঠে।

চলবে…

#তোমার_আঁচলের_উঠোনে
– আবরিয়ার জান্নাত

[রাতে আরেক পার্ট পাবেন। পাক্কা প্রমিস। বকা দেবেন না তবুও। ওকে??]

#ঘরে_বসে_গল্প_পড়ুন ?

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে