তোমার আঁচলের উঠোনে পর্ব ০৬

0
1905

তোমার আঁচলের উঠোনে পর্ব ০৬

বিভাবরীর চোয়াল শক্ত হয়ে আছে। সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। সে রাগ আর হাসি কখনোই চেপে রাখতে পারে না। চাইলেও পারে না। এমনকি, সিরিয়াস মোমেন্টেও হেসে ফেলার অভ্যেস আছে।
কলেজে পড়ার সময় একবার ক্লাসে ইংলিশ টিচার রেগে বললেন, আজ থেকে আমি তোমাদের ক্লাস নেবো না।
বলেই তিনি বেরিয়ে গেলেন। ছাত্র-ছাত্রীরা ভয়ে কুপোকাত। কারণ ইংলিশ টিচার ছিলেন প্রিন্সিপালের ছেলে। তার উপর ভিষণ বদরাগী। অল্প বয়সে ক্ষমতা পেলে যা হয়। পরদিন যখন তিনি ক্লাসে ঢুকেন, সবাই চুপচাপ। হুট করে বিভাবরী হো হো করে হেসে ফেললো। ব্যস! পরদিন তার বাবার কাছে নালিশ যায়…
কিন্তু এখন বিভাবরী কিছুতেই হাসবে না। হেসে ইমেজ খারাপ করার কোনো ইচ্ছে তার নেই। কিন্তু না চাওয়া সত্ত্বেও সে ফিক করে হেসেই ফেললো। ছেলেটা হয়তো তার হাসিটা মেনে নিতে পারেনি। সে কেমন হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। বিভাবরীর হাসি কিছুতেই থামছে না। ছেলেটা থমথম গলায় বলে,
— হাসছো কেন? আমি হাসির কি বলেছি?
— স্যরি, স্যরি! এক্সট্রিমলি সরি!
ছেলেটা কপাল কুঁচকে তাকায় বিভাবরীর দিকে। কিছুক্ষণ পর বিড়বিড় করতে করতে চলে যায়।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



সকাল সকাল মেজাজ খারাপ থাকলেও বাকি সময়টুকু ভালোই কাটল তার। বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে একটা লম্বা-চওড়া ঘুম দেয়। ঘুম থেকে উঠে বিকেলে ছাদে বসে গল্প করে রুশার সাথে। তাদের বাড়িতে রুশাই একমাত্র মেয়ে, যে একটু স্বাভাবিক। রুশা আজমাইন চৌধুরীর বড় মেয়ে। মাস্টার্স পড়ছে। মেয়েটা কে বিভাবরীর ভালো লাগে। ভালো লাগার একটা কারণ হলো, সে সরল স্বভাবের মেয়ে। কোনো কথা লুকিয়ে রাখতে পারে না। তার সাথে বিভাবরীর পরিচয় কয়েকদিনের। অথচ সে হরবর করে সব বলে দেয়। একান্ত ব্যক্তিগত কথাগুলোও বলে ফেলে।
তার মন খারাপ দেখে বিভাবরী জিজ্ঞেস করে,
— কি হয়েছে, রুশা আপু? মন খারাপ??
মেয়েটা গাল ফুলিয়ে, মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয়,
— হুঁ!
— কেন? মন খারাপ কেন?
— জানো, “ও” আজ ফোন করে বললো রুশো, একটা চুমু দাও তো!
— তুমি দাওনি?
— উহু। সেজন্যই তো রাগ করেছে। আমি কি করে দেই বলো তো! আমার বুঝি লজ্জা করে না! ও তো বুঝে না। রেগেমেগে ফোন অফ করে দিয়েছে। বলেছে, আমার সাথে তার নাকি কোনো কথা নেই। এক্কেবারে বিয়ের পর বাসর রাতে আমার খবর করে ছাড়বে।
কথাগুলো রুশার আটকে আটকে গেছে। রুশা যখন খুব খুশি থাকে তখন তার কথা জড়িয়ে যায়। বিভাবরী লক্ষ্য করছে রুশা গাল ফুলিয়ে কথা বলছে অথচ তার চোখ খুশিতে ঝকঝক করছে।
রুশা চলে গেলে বিভাবরী নিজের “ও” র স্বপ্নে ডুবে যায়…

ধ্রুবর সাথে প্রথম দেখা হয়েছিল বিভাবরীর বড় ভাই বিভানের বিয়েতে। বিভাবরী তখন সবে ক্লাস নাইনে উঠে। সেদিন সে একটা হলুদ শাড়িতে সেজেছিল। কিন্তু প্রথমবার শাড়ি পড়ার কারণে ঠিকমত সামলাতে পারেনি। কুঁচি হালকা হয়ে খুলে খুলে যাচ্ছে। আঁচলের পিন খুলে গেছে। এদিকে বাড়ি ভর্তি মেহমান। যদি সবার সামনে শাড়ি খুলে যায়, তাহলে ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটবে। বিভাবরী শাড়ি আটকে ধরে সিঁড়িঘরে যায়। কারণ, সব রুমেই কোনো না কোনো অতিথি আছেই। বিভাবরী সস্থির নিঃশ্বাস ফেলে শাড়ির আঁচল খুলে ফেলে। কুঁচি ছাড়তেই হরহর করে সেগুলো মাটিতে গড়াগড়ি খায়। বিভাবরী নতুন করে কুঁচি তোলার চেষ্টা করে। বারবার চেষ্টা করেও আগের মতো তুলতে পারছে না। তখনই পেছন কেউ তাকে বলে উঠে,
— আমি হেল্প করবো??
বিভাবরী মুখে হাসি ঝুলিয়ে বলে,
— হ্যাঁ, হ্যাঁ! অবশ্যই।
একটা হাত যখন তার শাড়িটা ধরতে যায়, তখন সে চমকে উঠে। আরে, হাতটা ছেলেদের হাতের মতো! বিভাবরীর হুঁশ ফিরে। কন্ঠটাও ছেলেদের মতো শোনা গেল।
বিভাবরী শাড়ি ছেড়ে সামনে তাকায়। এ যে আসলেই একটা ছেলে! বিভাবরী চোখ বন্ধ করে চিৎকার করার আগেই সেই হাতটা তার মুখ চেপে ধরে। মুখ দিয়ে চিৎকারের শব্দ বের হয়নি, বের হচ্ছে তার গোঙানির শব্দ। সে চোখ খুলে সামনের ছেলেটা কে দেখার চেষ্টা করে। ছেলেটা ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে তার অন্য হাতটা দিয়ে বিভাবরী কে ইশারা করে চুপ থাকতে। তারপর বিভাবরীর মুখের উপর থেকে হাত সড়িয়ে নেয়। বিভাবরী মিনমিন জিজ্ঞেস করে,
— কে আপনি??
— ধ্রুব!
বিভাবরী ছেলেটার আপাদমস্তক তাকিয়ে দেখে। ধ্রুবও তার আপাদমস্তক দেখে মুচকি হাসি দেয়। বিভাবরী মুচকি হাসির কারণ বুঝতে না পেরে নিজের দিকে তাকায়। সাথে সাথে বড়সড় একটা চিৎকার শোনা যায়। নিজের অবস্থা বুঝতে পেরে সে দু’হাত মেলে দিয়ে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করে।
ধ্রুব ঠোঁটে হাসি রেখেই নিচে থেকে শাড়িটা তুলে বিভাবরীর গায়ে দেয়। বিভাবরী অবাক চোখে তার হাসির দিকে তাকিয়ে থাকে। এত সুন্দর করে কেউ যে হাসতে পারে তা ধ্রুব কে না দেখলে সে জানতেই পারত না। বিভাবরী এক দৃষ্টিতে তার হাসির দিকে তাকিয়ে থাকে।
তার ধ্যান ভাঙে ধ্রুবর আঙুলের চুটকির শব্দে। বিভাবরীর হুঁশ এলে ধ্রুব হেসে বলে,
— ভাববে না তোমাকে ফলো করতে করতে এখানে এসেছি। আমি কিন্তু আগে থেকেই এখানে ছিলাম। তুমি দেখতে পাওনি। বুঝলে?? আর শাড়িটা পড়িয়ে দিয়েছি, আশা করছি তোমার হয়ে যাবে।
কথাটা বলে সে চলে যায়। আর বিভাবরী হতভম্ব হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে। কিছুক্ষণ আগের কথা মনে হতেই সে কেঁপে ওঠে। তার হৃৎপিণ্ড টা খুব জোরে লাফাচ্ছে। বিভাবরী তার হাতদুটো বুকের মাঝে চেপে ধরে। মনে হচ্ছে হৃদয়টা এক্ষুণি পাঁজর চিরে বেরিয়ে যাবে…

চলবে…

#তোমার_আঁচলের_উঠোনে
– আবরিয়ার জান্নাত
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে