তোমার আঁচলের উঠোনে পর্ব ০৪

0
2002

তোমার আঁচলের উঠোনে পর্ব ০৪

ঘড়িতে সময় ১১টা। তবে সকাল নয়, রাত। বিভাবরী চেয়েছিল আজ দ্রুত ঘুমুতে। কারণ কাল ভার্সিটিতে তার ১ম দিন। কিন্তু তা হয়নি। সব গুছিয়ে নিতে গিয়ে ১১ টা বেজে গেছে। এখন সকালে উঠতে পারলেই চলে। কিন্তু সকাল হওয়ার আগেই বিভাবরীর ঘুম ভেঙে যায়….
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



বিভাবরীর ঘুমানোর সময় ঘরের মধ্যে কারো হাঁটার শব্দ হচ্ছিলো। প্রথমে সে ভেবেছিল হয়তো ঘরের বাইরে। কিন্তু না। ঘরের বাইরে না, ভেতরেই হচ্ছিল। শুধু শব্দই হলো না, কেউ তাকে ডাকলোও। সে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিল “বিভাবরী.. এই বিভাবরী!” বলে কেউ তাকে ডাকছে। নিজের নাম শুনে বিভাবরী হুড়মুড় করে উঠে পড়ে। চোখ খুলে আবছা আলোতে দেখার চেষ্টা করে কে ঘরে। কিন্তু না, কাউকে দেখতে পায়নি। চোখ বন্ধ করে একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে আবার শুয়ে পড়ে। কিন্তু চোখ বন্ধ করার সাথে সাথেই আবার কেউ তাকে ডেকে উঠে…
বিভাবরী অনুভব করলো আসলেই কেউ তার রুমে আছে। কন্ঠস্বরটা তার চেনা। এমনকি নিঃশ্বাস টার সাথেও তার পরিচয় আছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো সে ধরতে পারছে না কে এটা। বিভাবরী রুমের আশপাশে চোখ বুলাল। তার রুমের রাস্তার পাশে একটা জানালা আছে, যেখানে তার চোখ দুটো আটকে যায়। কারণ, সে জানলার পাশে কারো অস্পষ্ট অবয়ট দেখেছে। বিভাবরী দ্রুত উঠে বসে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
— কে আপনি? আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন? আপনি কি ভেবেছেব, আমি ভয় পাবো? কক্ষনো না। আমি বিভাবরী, কাউকে ভয় পাই…
অস্পষ্ট অবয়বটা তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
— আমি ভয় পেতে বলেছি নাকি? আশ্চর্য!
বিভাবরী বসন্ত বাতাসের মত শান্ত গলার স্বর শুনেও কেঁপে উঠল। আর কিচ্ছু বলার সাহস পাচ্ছে না সে। এতক্ষণ চিনতে না পারলেও কন্ঠ শুনে মানুষটাকে চিনতে একদমই কষ্ট হয়নি বিভাবরীর। এমনিতেই সারাক্ষণ তার কান এবং মস্তিষ্কে ধ্রুবর কথা ভেসে বেড়ায়। তাই অস্পষ্ট অবয়বের মানুষটা যে ধ্রুব, এ বিষয়ে সে নিশ্চিত।
— তুমি তো জানো, সিগারেট না খেয়ে শুলে আমার ঘুম হয় না। তার পরেও ওগুলো নিয়ে চলে এলে! তোমার বাবা তোমাকে সিগারেট কেনার টাকা দেয় না?
বিভাবরী তার কথায় আৎকে উঠে। এতক্ষণ না দেখতে পেলেও এখন আবছা আলোতেও ধ্রুবর মুখখানা কেমন জ্বলমল করছে। তেলতেলে মুখটায় দাঁড়ি দেখে মনে হচ্ছে, দীর্ঘদিন সাইজ করা হয়নি। বিভাবরী মিনমিন করে বললো,
— আপনার কি ধারণা, আমি সিগারেট খাই?
— খাও না বুঝি??
কথাটা শুনে বিভাবরী বিড়বিড় করে বললো,
— এখন খাই না তো কি হয়েছে? বিয়ের পর খাবো। দুজনে মিলে.. তখন দেখবো, আপনি কি করে না ছাড়েন এটা! হুহ্!

— বুঝলে বিভাবরী, এই জিনিসটার মজাই আলাদা। একদিম ট্রাই করে দেখতে পারো কিন্তু!
বিভাবরী অবাক দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে। ছেলেটা এত খামখেয়ালী কেন! ভালো লাগছে না তার এই খেয়ালীপনা।
— এভাবে তাকিয়ে আছো কেন, বিভাবরী… এখনো চোখ সরাচ্ছো না যে! গেলে দেবো কিন্তু।
— দিন না!
— আমি কিন্তু সিরিয়াসলি বলছি।
— আমিও!
ধ্রুব সত্যি সত্যিই বিভাবরীর দিকে এগিয়ে গেলো। কিন্তু বিভাবরীর ভাবলেশ হলো না। সে পূর্বের মতোই তাকিয়ে আছে। ধ্রুব তার সামনে এসে তার দিকে কিছুটা ঝুঁকে মুখের উপর ফুঁ দিয়ে কপালে ছড়িয়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দেয়। ধ্রুব কাছে আসতেই সে একটা গন্ধ পায়। সিগারেটের গন্ধ। কিন্তু গন্ধটা কেমন অপরিচিত মনে হচ্ছে। সিগারেটের গন্ধ বলে মনেই হচ্ছে না। তার মনে হচ্ছে ক্লোরোফর্ম। ধ্রুব এক্ষুণি মুখ থেকে সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে দেবে তার উপর। আর সে গন্ধ শুঁকে হুঁশ হারিয়ে ধ্রুবর উপর ঢলে পড়বে…
ধ্রুব বিভাবরীর দিকে আরেকটু ঝুঁকে যায়। বিভাবরী চোখ বন্ধ করে ধ্রুবর নিঃশ্বাস গুণতে ব্যস্ত। হটাৎ নিঃশ্বাসের শব্দ না পেয়ে চোখ খুলে। আর সাথে সাথেই তার কানের কাছে ঠাস করে একটা শব্দ হয়। বিভাবরী ছলছল চোখে তাকায় ধ্রুবর দিকে। বুক ফেটে কান্না আসছে তার। ইচ্ছ করছে চিৎকার করে কাঁদতে। এত জোরে চিৎকার করতে যেন, ধ্রুবর কানের পর্দা ভেদ করে মস্তিষ্কের ভেতর সব ছুটতে থাকে। এত জোরে থাপ্পড় খাওয়ার দরুন বিভাবরীর ঘুম ভেঙে যায়।

কি ভয়াবহ রকমের স্বপ্ন সে দেখল। গালে হাত দিয়ে দেখে এখনো গরম হয়ে আছে।
কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে। গলা শুকিয়ে গেছে। পুরোনো অসুখটাও জেগে উঠেছে। অর্থাৎ মাথা ঘুরছে…

বিভাবরী এডজাস্ট টেবিল থেকে পানির গ্লাস হাতে নেয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, গ্লাসে পানি নেই! সে প্রতিদিনই পানি আনিয়ে রাখে। আজই কেন আনলো না? এখন পানি খাওয়া খুব দরকার তার। অথচ বিছানা থেকে উঠতে পারছে না। মনে হচ্ছে, সে নড়তে গেলেই ধ্রুবর সাথে ধাক্কা খাবে, ধ্রুব বুঝি এখনো তার দিকে ঝুঁকে আছে। ধাক্কা লাগলেই ঠাস করেই একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দেবে। এই ভয়ে সে নড়তেও পারছে না।

চলবে…

#তোমার_আঁচলের_উঠোনে
– আবরিয়ার জান্নাত

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে