#তোমারে_মত্ত_আমি
#লেখনীতে – #Kazi_Meherin_Nesa
#সূচনা_পর্ব
কলেজের সকল কার্যক্রম শেষে মাত্রই বেরিয়েছে আলফা, পেশায় সে একজন অধ্যাপিকা। আজ তার কলেজে পরীক্ষা ছিলো, দুপুরের পরীক্ষায় গার্ড থাকায় বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। ট্র্যাফিক জ্যামে আ’ট’কে থাকা অবস্থায়ই দূরের এক মসজিদ হতে আজানের শব্দ ভেসে এলো, আলফার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে এখানেই মাগরিবের আযান পড়লো, মানে আজ বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে যাবে…
“হ্যাঁ, আম্মু। আমি জ্যামে আ’ট’কা পড়েছি, ফিরতে একটু সময় লাগবে। চিন্তা করো না”
“সে ঠিক আছে কিন্তু তোর ফোন নাকি বন্ধ ছিলো? ও বাড়ি থেকে কতবার ফোন করেছে বললো। তোকে না পেয়ে আবার তোর বাবাকে ফোন করেছে”
“কি বলেছে?”
“তোকে যেতে বললো, আলফা। তুই তো রাস্তায়ই আছিস। আমি বলি কি আজ তুই ও বাড়ি চলে যা। তোর শ্বশুর অনেকবার বলেছে। তোর জিনিসপত্র আমি পাঠিয়ে দেবো”
“জিনিসপত্র পাঠানোর কি আছে? সেই তো যাবো একবেলার জন্যে”
“একবেলার জন্যে নয়, এবার তোকে পার্মানেন্টলি যেতে বলেছে”
“পার্মানেন্টলি? আম্মু, তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো পার্মানেন্টলি ওই বাড়ি যাওয়ার মতো কোনো ইচ্ছে আমার নেই। আব্বু যা করতে চেয়েছে সেটা তো করেছেই, তাহলে কেনো আরো জো’র করছে আমায়?”
আলফার মা মেয়ের কথা উত্তর দিয়ে উঠতে পারেনি, তার আগেই আলফার বাবা এসে ফোনটা নিজের হাতে নেয়। ক’র্ক’শ কন্ঠে বলে ওঠে…
“এতো কথার কিছুই নেই আলফা, আজ তুমি ঐ বাড়িতে যাবে। মিস্টার খানের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে আর বাকি কথা তোমার আম্মুই বলে দিয়েছে”
বাবার গুরুগম্ভীর এই কণ্ঠস্বর বরাবরই আলফাকে খা’নিকটা ভীত করে দেয়, আজও ব্যতিক্রম হয়নি। তবুও আলফা উত্তর দিলো..
“আব্বু, আমার যাওয়ার ইচ্ছে নেই ওখানে”
“তোমার ইচ্ছা অ’নি’চ্ছায় তো কাজ হবেনা আলফা, ভুলে যেও না তুমি এখন বিবাহিতা আর এখন বিবাহিতা মেয়ের ঠিকানা তার হাসবেন্ডের বাড়িতে। বাবার বাড়িতে নয়”
“আব্বু আমি..”
“বিয়ের পর ৬ মাস বাবার বাড়িতে কোনো মেয়েকে থাকতে দেখেছো তুমি আলফা? শুধু আমার সঙ্গে জে’দ করে তুমি এই বাড়িতে বসে রয়েছো। কিন্তু আর না, তুমি ওই বাড়ি যাবে। এরপর থেকে এই বাড়িতে তুমি বেড়াতে আসতে পারবে কিন্তু সবসময় থাকার জন্যে নয়। আশা করি বোঝাতে পেরেছি”
আর কিছু বলার সুযোগ পেলো না আলফা, কারণ ওপাশ থেকে ফোন কে’টে দিয়েছে। নিজের ফোনটা রেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললো আলফা, গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে চোখটা বন্ধ করে নিলো। যেখানে যাওয়ার ইচ্ছে নেই সেখানে অনিচ্ছায় যেতে হবে ভেবেই বি-র-ক্ত লাগছে ওর। কিন্তু এই মুহূর্তে নিজের বাড়ি গেলে বাবা ঝামেলা করবে বিধায় ওখানেও যাওয়ার ইচ্ছে নেই। অনেক ভেবেচিন্তে পড়ে আলফা সিদ্ধান্ত নিলো, আজ তার গন্তব্য হবে “খান ম্যানশন”
____________________
“খান ম্যানশন” এর সামনে এসে গাড়ি পার্ক করলো আলফা, বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আরেকবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভেতরে পা বাড়ালো। রাতের খাবারের প্রস্তুতি চলছে, মিসেস খান সেসব নিয়েই ব্যস্ত। এরই মাঝে আলফাকে হাসিমুখে এগিয়ে এলেন তিনি। উভয়পক্ষের সালাম বিনিময় শেষে মিসেস খান বলে উঠলেন..
“কি ব্যাপার আলফা? তোমাকে তোমার আংকেল কতবার ফোন করেছিলো। ধরলে না কেনো?”
“আসলে আন্টি, কলেজে পরীক্ষা চলছিলো। গার্ড ছিলো আমার। তখন আমাদের ফোন হলে নেওয়ার অনুমতি নেই”
“ওহ আচ্ছা, জানা ছিলো না আমার। যাই হোক, সেই যে গেলে আর একবারও এলে না আমাদের সঙ্গে দেখা করতে”
“আসলে, ব্যস্ত ছিলাম অনেক। সারাদিন তো কলেজেই..”
“বেশ, বুঝলাম ব্যস্ততা আছে তাই বলে এটা ভুলে গেলে তো চলবে না যে তোমারও একটা সংসারটা আছে তাইনা?”
স্মিত হাসলো আলফা, এরপর মিসেস খান ওকে ফ্রেশ হয়ে আসতে বললেন। যেতে যেতে আলফার নজরে পড়লো যে আজ বিশেষ কিছু খাবার বানানো হয়েছে, যেনো বিশেষ কারো জন্যে এতো আয়োজন। পরমুহূর্তেই এসব ভাবনা বাদ দিয়ে নিজের ঘরের দিকে এগোলো। ছয় মাস আগে দুই একবার এই বাড়িতে এসেছিলো আলফা, তখন নিজের ঘরে দশ মিনিটের জন্যেও বসেনি। আজ সেখানেই যাচ্ছে। রুমের সামনে যেতেই আলফা দেখলো রুমের দরজা খোলা, এসি চালু। আশ্চর্য ব্যাপার, এই ঘরে তো কেউ থাকেনা এখন তাহলে এগুলো কি? ভেতরে পা বাড়িয়েই কাবার্ডের সামনে শুধু ট্রাউজার পরিহিত একজনকে দেখে চোর ভেবে চি’ৎ’কা’র করে বসে আলফা, তৎক্ষণাৎ দ্রুত গতিতে ছুটে এসে ওর মুখটা চেপে ধরলো পুরুষটি। কন্ঠে একরাশ বি’র’ক্তি নিয়ে বললো..
“এই মেয়ে, এভাবে চি’ৎ’কা’র করে কেউ? ভূ’ত দেখেছো নাকি!”
ভালোভাবে তাকিয়ে এবার সম্মুখে দাড়ানো পুরুষটির দিকে দেখলো আলফা, নিরব হয়ে গেলো। চ’ম’কে গেছে হয়তো তাই এই নিরবতা। অবশ্য হবে নাই বা কেনো, বিয়ের ছয় মাস পর আজ “স্বামী” নামক পুরুষটিকে সশরীরে চোখের সামনে দেখলে হয়তো এভাবেই বাকরুদ্ধ হতে হয়..
“ফাহাদ!”
টি – শার্টটা পড়ে ভ্রু কুঁচকে তাকালো ফাহাদ..
“বাহ! আমার নামটা দেখছি মনে আছে এখনও। আমি তো ভেবেছিলাম আমাকে আবার নিজের পরিচয় দিতে হবে তোমার সামনে”
উত্তর দিলো না আলফা, স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে ফাহাদকে..
“আমার ঘরে আমাকে দেখে এতো চমকানোর কোনো কারণ আছে বলে তো মনে হয় না, ওহ সরি। আমাদের ঘর”
“তুমি..”
“হ্যাঁ, আমিই! জ্যা’ন্ত এখন মানুষ, কোনো ভু’ত নই। এরপরও যদি সন্দেহ থাকে তাহলে ছু’য়ে দেখতে পারো”
“আমি সেটা বলতে চাইনি”
কিংকর্ত্যবিমূঢ় আলফা কি বলবে বা কি বলা উচিত বুঝে উঠতে পারছে না, তবে এইটুকু এতক্ষণে বুঝলো যে ফাহাদ ফিরেছে তাই হয়তো এই বাড়িতে ওকে ফেরানোর জন্যে আজ এতো জো’রা’জু’রি করা হয়েছে। আলফার নিরবতা দেখে ওর দিকে সেকেন্ড কয়েক তাকিয়েই চার্জ থেকে ফোনটা খুললো, এরপর ফোনেই কিছু একটা দেখতে দেখতে ফাহাদ বলে উঠলো..
“তোমায় দেখে মনে হচ্ছে আমাকে এখানে এক্সপেক্ট করছিলে না, আর খালি হাতে এসেছো মানে এখানে থাকার মন মানসিকতা নিয়ে আসোনি। যাই হোক, রুমে আমার কাজ শেষ। এবার তুমি যা ইচ্ছে করতে পারো”
রুম থেকে বেরোনোর জন্যে পা বাড়াতেই আলফার প্রশ্ন..
“কখন ফিরলেন?”
“ঘণ্টা দুয়েক আগে, কেনো? আব্বু তোমায় কিছু বলেনি? তুমি তো আব্বুর ফোন পেয়েই এখানে এসেছো তাইনা?”
“আমায় কেউ কিছু জানায়নি”
“রিয়েলী? আমি তো ভেবেছিলাম তুমি জানতে। যাই হোক, এখানে এসে তো আমাকে দেখলেই। এখানে আর জানানোর কি আছে!”
ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে ফাহাদ শুধু নিজের কথাই বলে গেলো, আলফার কথা না জানতে চেয়েছে আর না কিছু বলার সুযোগ দিয়েছে। অবশ্য আলফাও এই লোকটার থেকে বেশিকিছু আশা করেনা। শুধু ফাহাদ নয়, বরং এই সম্পর্ক থেকেই কিছু পাওয়ার আশা হারিয়ে ফেলেছে মেয়েটা। কারণ ফাহাদ আর আলফার বিয়েটা শুধুই বিজনেসের একটা অংশ ছিলো, আর যে সম্পর্কের শুরুটাই এমন তার থেকে কিছু আশা করাটা নিতান্তই বো’কা’মি..
_________________________
আজ প্রথমবারের মতো শ্বশুরবাড়ির পুরো পরিবারের সঙ্গে খেতে বসেছে আলফা, আসলে পুরো বললে ভুল হবে কারণ ফাহাদের ছোটো ভাই বাসায় নেই। তবুও আলফার সঙ্গে সম্পর্কের দিক দিয়ে “ফাহাদ” যেহেতু মূল ব্যক্তি, তাই ও থাকলেই আপাতত আলফার কাছে পরিবার সম্পূর্ন। খেতে খেতে মিস্টার খান আলফার সঙ্গে টুকটাক কথা বলছিলেন, এরই মাঝে প্রশ্ন করলেন..
“আলফা, ফাহাদ তোমায় ফোন করেছিলো?”
খেতে খেতে আলফা না সূচক মাথা নাড়তেই রা’গী চোখে ছেলের দিকে তাকালেন মিস্টার খান..
“এসবের মানে কি! এই ফাহাদ, তুমি ওকে ফোন করে জানাওনি? আমি যে তোমায় বারবার বললাম যে এয়ারপোর্টে এসে বা প্লেনে ওঠার আগেই আলফাকে তোমার আসার কথা জানাবে”
“আব্বু, আমি তো বলেছিলাম তোমায় যে তুমি জানিয়ে দিও”
“হ’ত’চ্ছা’ড়া! তোর বউকে তুই ফোন করে জানাবি, আমি কেনো জানাতে যাবো? বয়স বাড়ছে, বিজনেসের এতো কঠিন বিষয় হ্যান্ডেল করতে পারছো কিন্তু এইটুকু বোঝার বোধ হয়নি!”
“এইটুকু একটা বিষয় নিয়ে এতো রিয়েক্ট করার কি আছে আব্বু? আমি জানাই বা তুমি জানাও। একই তো হলো, আমার আসার খবর পেলেই তো হতো। তার থেকে আমায় সরাসরি এসে দেখেছে এটাই কি ভালো হয়নি?”
ছেলের কথাবার্তা শুনে মিস্টার ও মিসেস খান উভয়ই হতাশ, আলফা এসবের দিকে কান না দিয়ে চুপচাপ নিজের খাবার খাচ্ছে। ওর দিকে একনজর তাকিয়ে মিসেস খান ছেলের উদ্দেশ্যে বললেন..
“আলফা তোর স্ত্রী, তুই এতদিন পর বাড়ি ফিরছিস এটা ওকে যদি তুই জানাতিস তাহলে ও একটু বেশি খুশি হতো। তোর আব্বু সেটাই বলতে চাইছে”
“আম্মু প্লিজ! আমি কি চিড়িয়াখানায় আসা নতুন প্রা’ণী যার খবর আমার অন্যদের ফোন করে জানাতে হবে? সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে তুমি আর আব্বু কি যে শুরু করলে..”
“ভালো কথাই বলা হচ্ছে তোমাকে, যেটা জানোনা বোঝো না সেগুলো জানাবোঝার চেষ্টা করো”
“আব্বু, এতদিন পর ফিরলাম আমি বাড়িতে নিশ্চয়ই এসব কথা শোনার জন্যে নয়!”
ফাহাদের কথায় বি’র’ক্তি’র ছাপ, আলফার কথা ভেবেই আর কথা বাড়ালেন না মিসেস ও মিস্টার খান কিন্তু ছেলের এই ধরনের উদাসীন কথাবার্তা তাদের মোটেও পছন্দ হলো না তাদের
.
.
ডিনার শেষে শ্বশুরের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথাবার্তা বলেছে আলফা, মিস্টার খান আলফাকে একদম নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসেন। আলফাও তাকে বাবার মতোই সম্মান করে। ঘড়ির কাঁ’টা যখন এগারোটায়, তখন আলফা ঘরে আসে। বারান্দা থেকে ফাহাদের কথার শব্দ ভেসে এলো আলফার কানে, ও কিছু না বলেই ঘরের চারদিকটা একবার দেখে নেয়, নিজের জিনিস কোথায় কিভাবে কি রাখবে তার জন্যে। বাড়ি থেকে ওর জামাকাপড় এসে গেছে, সেগুলো গুছিয়ে রাখতে হবে। আলমারি খুলতেই ফাহাদ বলে উঠলো…
“আমার আলমারিতে রাখবেন না!”
“কেনো?”
“আমি আমার জিনিস শেয়ার করাটা পছন্দ করিনা, সবসময় একা থেকেছি তাই শেয়ার করার অভ্যাস নেই। বুঝতেই পারছো আশা করি”
“নিজের জিনিস কেউই কারো সাথে শেয়ার করতে চায়না, কিন্তু পরিস্থিতির জন্যে করতে হয়। দেখুন না, আমার আবার কারো সাথে রুম শেয়ার করতে ভালো লাগেনা কিন্তু আপনার সঙ্গে করতে হচ্ছে। আমরা দুজনেই পরিস্থিতির শি’কা’র”
“এক্সকিউজ মি! কি বোঝাতে চাইছো তুমি আমায় এসব বলে?”
“আমার আপনাকে বোঝানোর কিছুই নেই, কিন্তু আমার জিনিস কোথায় রাখবো? যেহেতু আমায় এই ঘরেই থাকতে হবে তো এখানেই রাখতে হবে। অন্য কোথাও তো রাখতে পারবো না”
“আপাতত যেভাবে আছে থাক, কালকে আমি একটা ব্যবস্থা করে দেবো কিন্তু আমার আলমারিতে তোমার ড্রেসের জন্যে জায়গা দিতে পারবো না। সরি”
“ফাইন! আপনার রুম, আপনার আসবাবপত্র তাই যা আপনি বলবেন তাই হবে”
“রা’গ দেখাচ্ছ নাকি?”
উত্তর দিলো না আলফা, ড্রেসের ব্যাগটা একপাশে গুছিয়ে রেখে বাকি জিনিস গুছিয়ে রাখতে শুরু করলো। এরই মাঝে ফাহাদের তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চোখ আ’ট’কে গেলো আলফার। একনজর তাকিয়ে আবারো নিজের কাজে মন দিয়ে বললো..
“এভাবে দেখছেন কেনো আমায়? কিছু বলার থাকলে বলুন”
“আজ যা বুঝলাম, আমি হয়তো ঠিকঠাক মানুষ চিনতে পারিনা। লোকে নাকি দেখেই বিচার করতে পারে কে কেমন, আমিও আজ চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু..”
“কাকে বি’চা’র করতে গেছিলেন?”
“তোমাকে..”
“আমাকে?”
“হুমম! আমি তোমাকে ভালো ভেবেছিলাম আলফা, কিন্তু তুমি দেখছি বেশ স্বা’র্থ’প’র”
“কি করেছি আমি?”
“একটু আগে যেটা হলো, সেটা চাইলেই তুমি ফেরাতে পারতে”
“কিসের কথা বলছেন?”
“আব্বুর সামনে তুমি চাইলেই আমাকে বাঁচাতে পারতে। না কেনো করলে? বলতে পারতে হ্যাঁ আমি তোমায় ফোন করেছিলাম”
“কিন্তু আপনি তো করেননি”
“তো? ছোট্ট একটা মিথ্যে বলতে পারতে না? তাহলে এভাবে আব্বু অন্তত আমায় বকতো না। আজ সবে বাড়ি এলাম আর আজকেই আব্বু এতগুলো কথা শোনালো জাস্ট বিকজ অফ ইউ”
“এখানে আমার দোষ কোথায় ছিলো আর আমি কেনোই বা মি’থ্যে বলতে যাবো? আপনি আপনার বাবার কথা না শুনে অ’ন্যা’য় করেছেন। তাছাড়া এটা আপনাদের বাবা ছেলের ব্যাপার, আমি তার মাঝে কেনো কিছু বলবো”
“কিন্তু মূল প্রসঙ্গে তোমাকে নিয়ে ছিলো”
“ফাহাদ, আমার মনে হয় না এটা তেমন গু’রু’ত’র কোনো ব্যাপার ছিলো যেমন ভাবে আপনি বলছেন”
“ইয়াহ রাইট! তোমার কাছে তো গু’রু’ত’র নয়। ৬ মাস পর বাড়ি ফিরেই বাবার থেকে কথা শুনতে কেমন লাগে সেটা তুমি বুঝবে না ”
“সে নাই বুঝতে পারি কিন্তু ফাহাদ, স্বা’র্থ’প’র হয়তো আমি নই আপনি। আর আজ আমি যদি জানতাম আপনি এই বাড়িতে আছেন তাহলে কখনোই আসতাম না”
“তুমি আমায় সে’ল’ফি’শ বলছো? ভুলে যেও না আমরা দুজনেই একটা পরিস্থিতির শি’কা’র ছিলাম”
“হুমম, তা তো ছিলাম বটেই। কিন্তু আপনাকে দেখে তো মনে হচ্ছে দিব্যি আছেন। হয়তো আমিই একটু বেশি আশা করে বসেছিলাম”
“মানে?”
“কিছুনা”
সে রাতে ফাহাদের সঙ্গে আরেকটা কথা বলেনি আলফা, ফাহাদেরও মনমে’জা’জ ভালো না থাকায় কিছু জিজ্ঞাসা করেনি। এইতো, ফাহাদের এই একটা স্বভাবই আলফাকে ভীষন পো’ড়া’য়। ফাহাদ যে কখনোই আলফার ব্যাপারে কোনো ইন্টারেস্ট দেখায়নি। ফাহাদ অনেকক্ষণ আগেই ঘুমিয়ে গেছে কিন্তু আলফা নিজের প্রয়োজনীয় কিছু কাজে ব্যস্ত ছিলো বিধায় এখনও ঘুমোতে যায়নি, এরই মাঝে নিজের বেস্টফ্রেন্ডের ফোন আসে। ফোন স্ক্রিনে “জারা” নামটা দেখেই হাসি ফুটে ওঠে ঠোঁটের কোণে। বারান্দায় গিয়ে আলফা কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে উঠলো..
“কিরে বান্ধবী ভুলেই তো গেছিস দেখছি!”
“তুই আমায় এটা বলতে পারলি? তুই হলি আমার একমাত্র বান্ধবী, তাকে কি আমি ভুলতে পারি?”
“থাক থাক আর আমার মন গ’লা’তে হবেনা। আচ্ছা আলফা, চল একদিন দেখা করি”
“এ মাসে অনেক ব্যস্ত রে আমি, সবে চাকরিতে জয়েন করেছি। অনেককিছু শেখা বাকি আছে আমার এখনও তার ওপর কলেজে পরীক্ষা চলছে”
“তাহলে আমি তোর বাসায় চলে আসি?”
“আমি বাসায় নেই”
“আহা, কাল নেই তো কি। আসবি তো”
দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো আলফা…
“জানিনা রে কি করবো। আমার জীবনের সাথে কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। সব কেমন তা’ল’গো’ল পা’কি’য়ে যাচ্ছে”
“কি হয়েছে আলফা? তুই এভাবে কথা বলছিস কেনো? ইজ এভরিথিং ওকে?”
“হুমম, অল ওকে!”
বান্ধবীর সঙ্গে কথা শেষে বারান্দায় আরো কিছু সময় দাড়িয়ে রইলো, এতদিন অনেক ক’ষ্টে মন কিছুটা হালকা করেছিলো তা যেনো আজ আবার ভা’রী হয়ে গেছে। মনের কথাগুলো বলে মন হালকা করার মতো একটা মানুষ এই মুহূর্তে যে ভীষন প্রয়োজন, কিন্তু দু’র্ভা’গ্য’ব’শ’ত আজ আলফার পাশে কেউই নেই..
_________________________
আলফা ও ফাহাদের বিয়ের মূল কারণ ছিলো উভয়ের বাবা। তারা বহু বছর যাবত একে অপরের বিজনেস পার্টনার ছিলেন, তাদের মধ্যকার সম্পর্কও বেশ ভালো। আলফার বাবাকে বড় অঙ্কের অর্থ দিয়ে সাহায্য করে ফাহাদের বাবা, কিন্তু এতে শর্ত ছিলো আলফা কে তিনি নিজের পুত্রবধূ হিসেবে চান। মিস্টার খানের এই প্রস্তাবে রাজি হতে আলফার বাবার একটুও সময় লাগেনি। এতো বছরের পার্টনারশিপের সম্পর্ককে আত্মীয়তার সম্পর্কে বাঁ’ধা এবং মিস্টার খানের উপকারের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ আলফাকে ফাহাদের হাতে তুলে দেন আলফার বাবা। ফাহাদ এই বিয়েটাকে একটা দিল হিসেবেই দেখেছে তাই ওকে রাজি করতে সমস্যা না হলেও আলফাকে রাজি করাতে অনেক ঝ’ক্কি পোহাতে হয়েছে। একপ্রকার জো’র করেই রাজি করানো হয়েছিলো ওকে। কখনোই আলফা বা ফাহাদের অফিসিয়ালভাবে দেখা বা কথার সুযোগ হয়নি। আসলে ফাহাদ আগ্রহ দেখায়নি, আর আলফা কথা বলার সুযোগ খুঁজেও পায়নি। বিয়ের ঠিক ৪-৫ দিন পরই বিজনেসের কাজে দেশের বাইরে চলে যায় ফাহাদ। ফাহাদের যাওয়ার খবরটাও আলফা পেয়েছিলো ফাহাদের মায়ের কাছে, ফাহাদ ওকে জানায়নি। সদ্য বিবাহিতা মেয়েটির মনে তখন খুব অ’ভি’মা’ন, এমন একটা পুরুষই কেনো এলো ওর জীবনে। যদিও আলফা জানে বিয়েটা ছিলো একটা চুক্তিমাত্র যা উভয়পক্ষের ব্যবসায়িক লাভের জন্যে তবুও নিজের মনকে মানিয়ে অপেক্ষা করেছে আলফা, সম্পর্কটা মেনে নেওয়ার পুরো চেষ্টা করেছে কিন্তু একপাক্ষিক তো আর কোনো সম্পর্ক এগোতে পারে না। এক মাস, দু মাস এভাবে ছয় মাস যাওয়ার পরও ফাহাদ যখন আলফার সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ করেনি তখন আলফার মন ভে’ঙে যায়, ফাহাদের কাছে যে এই সম্পর্কের কোনো দাম নেই তা আর বুঝতে বেশি সময় লাগেনি। ধীরে ধীরে আলফার মনে জমে থাকা ক্ষুদ্র অ’ভি’মা’ন পাহাড়সমান আকার ধারন করে। মেয়েটা তখন থেকে শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবতে শুরু করে, মাস তিনেক আগে একটা প্রাইভেট কলেজে চাকরি পেয়েছে। সেখানেই কাজের মাঝে ব্যস্ত করে ফেলে নিজেকে, “ফাহাদ” নামে যে ওর জীবনে কোনো পুরুষ আছে তা আলফা প্রায় ভুলতেই বসেছিলো
____________________
কলেজে যাওয়ার জন্যে তৈরী হয়েছে আলফা, নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস গুছিয়ে নিচ্ছিলো এরই মাঝে ফাহাদ ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছে ওয়াশরুম থেকে। এসেই নিজের ভেজা তোয়ালে বিছানায় ছুঁ’ড়ে দিলো যা দেখে মেজাজ গরম হয়ে গেলো আলফার!
“এটা কি করলেন?”
“কোনো স’ম’স্যা?”
“অবশ্যই স’ম’স্যা, ভেজা জিনিস এভাবে রাখে কেউ?”
“আমি আমার বেডের ওপর রেখেছি, এতে তোমার স’ম’স্যা’র তো কোনো কারন দেখছি না”
তোয়ালে সরিয়ে বেডের ওপর থাকা কয়েকটা পেপারস হাতে তুলে নিলো আলফা..
“স’ম’স্যা আমারই, কারণ আপনি আমার দরকারি পেপারস এর ওপর ফেলেছেন আপনার ভেজা তোয়ালে!
“বিছানা তো পেপারস রাখার জায়গা নয়!”
“তাহলে কি আপনার মতে বিছানাটা ভেজা তোয়ালে ছো’ড়া’র জায়গা?”
উত্তর দিতে পারলো না ফাহাদ, ক’ট’ম’ট করে শুধু চেয়ে দেখলো আলফাকে আর মনে মনে ভাবলো “সি ইজ লাইক অ্যা হেড’এ্যা’ক!”
চলবে।