Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"তোমায় ছোঁয়ার ইচ্ছেতোমায় ছোঁয়ার ইচ্ছে পর্ব-২৩+২৪

তোমায় ছোঁয়ার ইচ্ছে পর্ব-২৩+২৪

#তোমায়_ছোঁয়ার_ইচ্ছে
#পর্ব_২৩
#সুমাইয়া_মনি

অস্বস্তি, অসহ্য লাগছে ইসানার। রাদের বলা প্রতিটা কথা কর্ণকুহরে এসে ঝনঝন শব্দ তুলে বাজছে। ভিন্ন ধরনের এক অনুভূত দৃষ্টি হচ্ছে হৃদয়ে। এর থেকে রেহাই পাবার উপায়ন্তর খুঁজছে সে। তার উত্তেজিত ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটে ফোনের রিংটোনে। সোহানা কল দিয়েছে মনে করে দ্রুত ফোন হাতে নিলে স্ক্রিনে মামিমা নামটি দেখে স্বাভাবিক হয়ে রিসিভ করে,
‘বলো মামি।’
‘তুই কবে আসবি? বিয়ের কতো তোড়জোড় রয়েছে। আগে থেকে না সারলে কি হবে বল?’
‘আসলে রাদ এখনো অসুস্থ। সুস্থ হলেই চলে আসবো।’
‘জ্বর কি একটুও কমেনি?’
‘হালকা কমেছে।’
‘ভালোভাবে চিকিৎসা করা। এখনকার জ্বর মোটেও ভালো না রে।’
‘হ্যাঁ, চিকিৎসা চলছে।’
‘পাশাপাশি তুইও ওর যত্ন নিস।’
‘জি মামি।’
‘রাখছি। আর দ্রুত রাদকে নিয়ে চলে আসিস।’
‘আচ্ছা।’
অপর পাশ থেকে লাইন কেটে যায়। সুরভী খাতুন রাদকে নিয়ে যেভাবে চলে আসতে বলল, তাতে মনে হচ্ছে রাদ তার ভাগ্নিজামাই। কথাটা ভাবতেই ইসানার শরীর ঝাঁপটা দিয়ে উঠলো। বিছানায় বসে মুখের ওপর দু হাত রেখে আশ্চর্যান্বিত হয়ে নিচুস্বরে বলল,
‘একি বললাম আমি। শেষে মিথ্যে কথা বললাম মামিকে। রাদ এখন সুস্থই আছে। তবে আমি কেন…।
তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। অকপটে বলা মিথ্যে বাক্য তাকে নিরাশায় ভোগাচ্ছে। রাদকে নিয়ে ভাবতে বাধ্য করছে তার মস্তিষ্ক। কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলো। ফোন হাতে নিয়ে সোহানাকে পুরো বিষয়টি বলতে উদ্যত হলো। একে একে দু’দিনের সম্পূর্ণ ঘটনাদি খুলে বলল। মনোযোগ সহকারে ইসানার সব কথাগুলো শুনে ভাবুকতা দেখিয়ে বলল,
‘যা বুঝলাম, মনে হচ্ছে রাদ তোকে ভালোবাসে।’
‘ঐ কথা একদমই মুখে তুলবি না। এমনটা যদি হয় আমি….’
বাকিটা বলার পূর্বে সোহানা থামিয়ে দিয়ে বলল,
‘রিলাক্স! আগে রাদকে প্রপোজ করতে দে। তারপরই না বুঝবো আমার কথায় কতটা সত্যতা রয়েছে।’
‘এটা যেন না হয়।’
‘হতেই হবে!’
‘কী?’
‘না বলছিলাম যে তুই মামা বাড়ি কবে যাবি?’
‘জানি না।’
‘ওহ! আর কিছু বলবি?’
‘নাহ!’
‘তাহলে রাখছি।’
‘হুম।’
__
এখানের একটি কোম্পানিতে ইভান জবের জন্য এপ্লাই করেছিল। ইভাবের আগে থেকেই কাজের দক্ষতা ভালো ছিল। তাই অসুবিধা হয় না জব পেতে। প্রথম দিন কাজের মাধ্যমে ম্যানেজারের মন জয় করতে সক্ষম হয় ইভান। আজ দ্বিতীয় দিন। সে এবার মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৎ পথে সম্মান অর্জন করবে এবং হালাল ভাবে টাকা রোজগার করবে। পিছনের অতীত সব ভুলে যাবে, সব! শুধু মনে রাখবে তার প্রাক্তন স্ত্রী’কে। মনের এক কোঠরে সযত্নে রেখে দিবে। ইসানার কথা ভাবতেই বুক থেকে চিঁড়েফুঁড়ে দীর্ঘ শ্বাস বেড়িয়ে আসে। বিড়বিড় করে আওড়ায়,
‘জানি না আমাকে ক্ষমা করবে কি-না। তবুও ক্ষমা চাইবো তোমার কাছে ইসানা।’
লাঞ্চ টাইমে ইভান ক্যান্টিনে যাওয়ার পথে ম্যানেজারকে ফোনে মালিকের সঙ্গে কথা বলতে শুনতে পায়। তাদের ফ্যাক্টরি থেকে শুধু সাদা রঙের কাপড় তৈরি করা হয়। এই কাপড়গুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন বড়ো বড়ো কোম্পানিতে ডেলিভারি করা হয়। যে কোম্পানিতে কাপড় ডেলিভারির কথা ছিল তারা মাঝপথে ডিল ক্যান্সেল করে দেয়। এজন্য ম্যানেজারকে মালিক দু দিনের মধ্যে নতুন কোনো ফ্যাক্টরিতে কাপড় ডেলিভারির জন্য তাড়া দেয়। সম্পূর্ণ কথা ইভান বাহিরে দাঁড়িয়ে শোনার পর তার মাথায় দুরন্ত বুদ্ধি আসে। ম্যানেজারের কথা শেষ হবার পরপরই কেবিনে প্রবেশ করে নিজের আইডিয়া তুলে ধরে। ম্যানেজার ইভানের আইডিয়ায় সম্মতি জানায়। ইভান ম্যানেজারের ল্যাপটপ থেকে ইমেইল পাঠায় রাদ টেক্সটাইল কোম্পানির লিঃ ফ্যাক্টরিতে। সঙ্গে কাপড়ের কিছু স্যাম্পলের ছবি পাঠায়। ম্যানেজার আশাহত ছিলেন। কেননা রাদ কোম্পানি ছিল বাংলাদেশের দ্বিতীয়তম স্থানে। এত বড়ো কোম্পানি কি তাদের মতো ছোট ফ্যাক্টরির কাপড় পছন্দ করবে? ভেবে তিনি আরো হতাশ হলেন। কিন্তু ইভান জানে রাদ ছোট-বড় কোম্পানি পরোয়া করে না। শুধু কাপড়ের মান ভালো দেখেশুনে বিবেচনা করে। এখন শুধু অপেক্ষার পালা।
.
‘সানা, সানা। কোথায় আপনি?’ চেঁচিয়ে ডাকল দুয়েকবার রাদ।
ইসানা রুম থেকে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে এসে কপাট কণ্ঠে বলল,
‘কত বার বলেছি আমাকে সানা বলে ডাকবেন না…’
‘স্টপ!’ দু হাত তুলে মাঝপথে ইসানাকে থামিয়ে দিয়ে পুনরায় শুধালো,
‘কাল থেকে আপনি আমার সঙ্গেই ফ্যাক্টরিতে যাবেন। পরশুদিন আপনার পুরোপুরি পাঁচদিনের ছুটি।’
তার কথার মাঝে কথা ঘুরিয়ে বলাতে ক্রোধ হয়ে তাকিয়ে রইলো। রাদ ইসানাকে আরো অবাক করে দিয়ে বলল,
‘আপনার আগের জরিমানা মওকুফ করে দিলাম। এখন থেকে কোনো জরিমানা নেওয়া হবে না।’
ইসানা বিরক্ত বোধ নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘কারণ?’
রাদ লজ্জার ভঙ্গিমায় আস্তেধীরে অস্পষ্ট কণ্ঠে বলল,
‘হবু বউ…!’
ইসানা তেজঃপূর্ণ কণ্ঠে জানতে চাইলো,
‘কী! শুনিনি?’
‘বলিনি কিছু শুনবেন কীভাবে। বাই দ্যা ওয়ে, আপনাকে আমি সানা বলেই ডাকবো। জানি না আর কত বার বলতে এবং বোঝাতে হবে আপনাকে।’
ইসানা নিজের রাগ সংবরণ করতে না পেরে উচ্চস্বরে বলল,
‘অতিরিক্ত কোনো কিছুই টেকসই হয় না।’
‘আমার বেলায় আঁটকে রাখব জোরপূর্বক!’ ইসানার ওপর আলতোভাবে ঝুঁকে বলল। দু পা পিছিয়ে ক্রোধ নিয়ে চলে গেল সে। রাদের সঙ্গে তর্কে জড়াতে চায় না ইসানা। প্রেমে পড়লে নাকি মানুষ আধপাগল হয়। কিন্তু রাদের বেলায় উল্টো। যেমন বাঁচাল, তেমনি খরখরে বেশরম হয়ে গেছে সে।
.
রাতের বেলায় ইসানা সে-ই সিল্কের ওড়নাটি হাতে নিয়ে দেখছিল। পরমুহূর্তে ভাজ করে রেখে দেয় আলমারিতে।
দরজা লাগিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখে টাইসন দাঁড়িয়ে আছে। ইসানা হাঁটু গেড়ে বসে ভ্রুকুটি করে জিজ্ঞেস করে,
‘কী ব্যাপার, আজ আমার রুমে হঠাৎ? নিশ্চয় পা’দ পাঠিয়েছে।’ লাস্টেরটুকু আস্তেধীরে বলল।
টাইসন পিছনে ঘুরে তাকায়৷ ইসানা ওঁকে অনুসরণ করে পিছনে তাকিয়ে দেখে রাদ দরজার সামনে দু হাত পকেটে পুরে দাঁড়িয়ে আছে। চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে কিছু একটা বলার জন্য এসেছে। উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
‘কিছু বলবেন?’
‘টাইসন আপনার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চায়।’
‘টাইসন এই বাক্য মুখে বলেছে?’ এক ভ্রু উঁচু করে পাল্টা প্রশ্ন করে ইসানা।
রাদ অপ্রস্তুত হয়ে বলল,
‘নাহ! ইশারায় বলেছে।’
‘তো আমাকে ইশারায় বলতে বলুন।’
‘টাইসন..’ বলে ডাক তুলতেই এক পা সামনের দিকে উঁচু করে বাড়িয়ে দেয়। ইসানা সবিস্ময় হয়ে তাকাল টাইসনের দিকে।
‘হ্যান্ডশেক করুন সানা।’
ইসানা পুনরায় বসে টাইসনের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করল। ঝাপিয়ে পড়ল ইসানার কোলে। ইসানা কোলে তুলে নিয়ে মাথায় হাত বুলাতে লাগলো। রাদ মুচকি হেসে প্রস্থান করল। দরজা বিড়িয়ে টাইসন সহ বিছানায় বসে এটা-সেটা জিজ্ঞেস করতে লাগলো।
‘অবশেষে বন্ধুত্ব করেই নিলি। আগে করলে কি হতো হ্যাঁ? এক্সট্রা কেয়ার বেশি পেতি তখন। যাক, এখন তোকে কম যত্ন করব না। আর খবরদার রাদের কাছে কম কম যাবি। আমার সঙ্গে বেশি থাকবি। বুঝেছিস?’ টাইসন নিরীহ পশুর ন্যায় মাথা নিচের দিকে ঝুঁকিয়ে হ্যাঁ সম্মতি জানাল।
পাশের রুম থেকে রাদ ইসানার বলা প্রত্যেকটি কথা শুনেছে। ওষ্ঠদ্বয় তার মুচকি মুচকি হাসি। টাইসনের গলায় মাইক্রোফোন নামের এক যন্ত্র লাগিয়ে দিয়েছে। যার দরুণ ইসানার প্রত্যেকটা কথা সে ব্লুটুথের মাধ্যমে শুনতে পাচ্ছে। পরবর্তী কথাগুলোও সে শুনতে পাবে ভেবে খুশিতে বিমোহিত!
___
সকালে রাদের সঙ্গে ফ্যাক্টরিতে পৌঁছায় ইসানা। ওপরে উঠার সময় ইমরানের সঙ্গে চোখাচোখি হয়। মৃদু হাসি প্রধান করে ইমরান পাশ কাঁটিয়ে চলে যায়। ইসানার খেয়াল করে আমেরিকা থেকে আসার পর ইমরানের মধ্যে অনেকটা পরিবর্তন এসেছে। আগের মতো কল, মেসেজ একদমই দেয় না। ইমরানের এরূপ পরিবর্তনে সে এক প্রকার খুশিই হয়েছে। সরাসরি কথা বলে নিজেদের মধ্যে বন্ধুত্বটা ঠিক রাখবে ভেবে নেয় ইসানা।
লাঞ্চ টাইমে ইসানা ক্যান্টিনে এসে ইমরানের অপজিট সিটে বসল। ইমরান স্মিত হেসে বলল,
‘কী ব্যাপার? আজ হঠাৎ মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি হাজির।’
‘আমি বৃষ্টি নই, ইসানা৷’
‘তা জানি। তারপর বলো কেমন আছো?’
‘আলহামদুলিল্লাহ! আপনি?’
‘আলহামদুলিল্লাহ! কেমন চলছে দিনকাল। ইভান আবার ডিস্টার্ব করছে না তো?’
‘নাহ! সামনের সপ্তাহে আমার মামাতো বোনের বিয়ে। আপনার দাওয়াত রইলো।’
‘অবশ্যই! আসবো।’
‘আসতে হবে। বন্ধুত্বের খাতিরে!’
‘আমরা বন্ধু?’ ইমরান ভ্রু উঁচু করে জিজ্ঞেস করল।
‘ইয়াপ!’ বলে হেসে ফেলে ইসানা। ইমরানও হাসে।
তাদের হাসি দীর্ঘস্থায়ী হয় না। রাদ ও মুরাদকে দেখে মিলিয়ে যায়। রাদ ইমরানের পাশাপাশি সিটে বসে। মুরাদ বসে ইসানার পাশে। তাদের দেখে বিব্রতবোধ করে ইমরান উঠে দাঁড়ায়। রাদ মৃদু হাসি ফুটিয়ে ইমরানকে বসতে বললে ইমরান বসে যায়। ইসানা খেয়াল করে ক্যান্টিকে তারা ব্যতীত আর কোনো স্টাফ নেই। এই প্রথম রাদ ক্যান্টিনে এসেছে। তাকে দেখা মাত্রই সকলে একত্রে প্রস্থান করেছে।
কিছুক্ষণ আগে সিসিটিভি ক্যামেরায় তাদের এক সঙ্গে দেখে রাদের চোখমুখ শক্ত হয়ে যায়। মুরাদ তখন সেখানে উপস্থিত ছিল। আমেরিকায় থাকাকালীন ইমরানকে সতর্ক করতে চেয়েছিল রাদ। কিন্তু সেদিনের ঘটনার পর ইমরান নিজ থেকে ইসানাকে বিরক্ত করা থেকে বিরত থাকে। আর আজ আগ বাড়িয়ে ইসানাকে যেতে দেখে মুরাদ ব্যাঙ্গ করে বলে,
‘ইমরান, ইভান, ইসানা নাম তিনটার সাথে কত মিল, আহ!’
রাদ মুরাদের পানে বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে উঠে ক্যান্টিনের নিকট হাঁটা ধরলো। ভোজ্য গরম তেলে পানির ছিটা দিতে পেরে মুরাদ নিজেকে বাহবা জানায়, এবং রাদের সঙ্গে এগোয় ক্যান্টিনের উদ্দেশ্যে।
আপাতত রাদ ইমরানের দিকে ত্যারচা নয়নে তাকিয়ে রয়েছে। রাদের আঁখিযুগল দেখে ইমরান ধারণা করে নিশ্চয় তিনি কোথায় ভুলত্রুটি করেছে৷ ইসানা রাদকে উপেক্ষা করে মুরাদের নিকট গমগমে আওয়াজ তুলে বলল,
‘আমাদের সঙ্গেই কেন আপনাদের বসতে হলো?চেয়ার-টেবিলে কি অভাব পড়েছে?’
‘এই উত্তর রাদ ভালো দিতে পারবে।’ মুরাদ রাদকে দেখিয়ে বলল৷ রাদ কণ্ঠে মৃদু তেজ এনে বলল,
‘মুরাদ তাকে মনে করিয়ে দে ফ্যাক্টরির নামটি। তিনি নিশ্চয় ভুলে গিয়েছেন।’
‘ভুলিনি, ওনার বলে এখানেই যে বসতে হবে এটা কোন লজিক? জিজ্ঞেস করুন তাকে মুরাদ ভাইয়া।’ গলার আওয়াজ বাড়িয়ে বলল ইসানা৷
‘মুরাদ তাকে বল, টেবিলের ওপর নামটি পড়ে নিতে। তাহলে লজিক বুঝতে পারবে।’ ইমরানের পানে চেয়ে ফের বলল রাদ। ইমরান অসহায়ের মতো বাকহারা হয়ে দৃষ্টি নত রেখে বসে রয়েছে। ইসানা টেবিলের ওপর সিলমোহরে রাদের নাম লিখা দেখতে পেয়ে তেড়েফুঁড়ে উঠে ক্যান্টিন ত্যাগ করল।
রাদ ইসানার যাওয়া শেষ অব্ধি দেখে ইমরাদের কাঁধে হাত রেখে স্নান হেসে জিজ্ঞেস করে,
‘গুড মর্নিং ইমরান সাহেব। আপনি ভালো আছেন?’
ইমরান ভীতিকর চোখে রাদের পানে চেয়ে ঠোঁটে হাসি প্রধান করে ওপর, নিচ মাথা দুলায়। যার উত্তর হ্যাঁ!
ইমরানের করুন অবস্থা দেখে মুখ টিপে হাসে মুরাদ। বেচারার ওপর বড্ড মায়া হচ্ছে তার। অজান্তেই সব ঘটনা তার সামনেই ঘটছে৷ এসব না বোঝা অবুঝ সে! তবে ইসানার সঙ্গে তার একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সেটা অনুমান করতে পেরেছে ইমরান।
.
.
.
#চলবে?

#তোমায়_ছোঁয়ার_ইচ্ছে
#পর্ব_২৪
#সুমাইয়া_মনি

আকাশে নানা ধরনের পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে। সূর্যের রং লাল থেকে কমলা রং ধারণ করেছে। কিছুক্ষণ বাদে সূর্য ডুবলো বলে। ঘনিয়ে আসছে রাত। দু বান্ধবী বেঞ্চের দু প্রান্তে বসে গালে হাত রেখে গভীর ভাবনায় মসগুল। কী করা যায় কী করা যায়! ভাবতে ভাবতে সন্ধ্যা হয়ে এলো। পরিশেষে ইসানা বলল,
‘গেলাম। আর ভাবতে হবে না।’
‘তাহলে কি করবি ভাবলি?’
‘কি করব? সহ্য করতে হবে।’
‘তাই কর। চল উঠি এলা।’
‘আয়।’
পার্ক থেকে বেরিয়ে মেইন রাস্তায় এসে রিকশায় চড়ে দু’জনে। পাঁচটার দিকে দু বান্ধবী দেখা করতে রমনাপার্কে এসেছে।
এখন ফিরে যাচ্ছে নিজ নিজ নিড়ে। প্রথমে সোহানাকে নামিয়ে তবেই বাড়িতে ফিরে সে। রাদ এখনো ফ্যাক্টরিতে। তিনদিন বন্ধ দেওয়ায় কাজের চাপ অনেকটা বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই আসতেও লেট হবে। ইসানা বাড়ি ফিরে টাইসনকে খাবার দিয়ে রান্নার কাজ শেষ করে। তখন ঘড়িয়ে দশটা বেজে পয়ত্রিশ মিনিট। খাবার খেয়ে রাদের জন্য খাবার টেবিলে রেখে দেয়। সঙ্গে ছোট্ট চিরকুটও রাখল। টাইসনের সঙ্গে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে যায়। বারোটা নাগাদ রাদ বাড়ি ফিরে। ডুবলিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করল। ইসানার রুমের দিকে একবার তাকিয়ে নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হলো।
ফ্রেস হয়ে ড্রইংরুমে এসে টেবিলের ওপর নজর পড়ে।
চিরকুটটি তুলে নিয়ে পড়ল,’খাবার বেড়ে রেখেছি। নিজ দায়িত্বে খেয়ে নিবেন।’
‘তার মানে আপনার সঙ্গে এখন আর দেখা হচ্ছে না।’ বিড়বিড় করে আওড়াল রাদ।
_
সকালে ইসানাকে সঙ্গে নিয়ে ডংবং নামের একটি ফ্যাক্টরিতে আসে রাদ। দূরে দাঁড়িয়ে গাড়ি থেকে রাদ ও ইসানাকে নামতে দেখে ইভান মুখে মাস্ক পড়ে নেয়। কাল ইভানের ইমেইল পেয়ে রাদ কাপড় সচক্ষে দেখতে এসেছে। পুরো ফ্যাক্টরি ইসানাকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরেফিরে দেখে। ছোটখাটোর মধ্যে হলেও ফ্যাক্টরির পরিবেশ রাদের মনে ধরে। কাপড়ের মানও যথেষ্ট ভালো ছিল। তাই রাদ ডিল কনফার্ম করে সেখান থেকে বিদায় নেয়। ম্যানেজার ইভানের ওপর খুশি হয়ে সহকারী এসিস্ট্যান্ট বানায়। স্যালারিও বাড়িয়ে ধরেন। ইভান এতে খুশি হয়। এবং কাপড় ডেলিভারি হওয়ার আগ পর্যন্ত নিজেকে লুকিয়ে রাখবেন বলে সিদ্ধান্ত নেয়। ফ্যাক্টরিতে ফিরার পথে মাঝ রাস্তায় রেড সিগনালের জন্য গাড়ি থামে। ফুটপাতে একটি ছোট্ট ছেলেকে গোলাপ ফুল বিক্রি করতে দেখে রাদ ইশারায় ডাক দেয়। ছেলেটি রাদের গাড়ির কাছে আসতেই হাতের সব গোলাপ গুলো কিনে নেয়। পুরো দৃশ্য ইসানা আড়চোখে দেখেছে। রাদ গোলাপের সুগন্ধ নিয়ে ইসানার দিকে এগিয়ে ধরে বলল,
‘ফর ইউ!’
ইসানা সরু চোখে তাকিয়ে বলল,
‘নো নিড!’
‘তাহলে আর কি করার লিসাকে দিয়ে দেবো।’ দু কাঁধ নাচিয়ে বলল রাদ। ইসানা তার কথায় পাত্তা দেয় না। ফ্যাক্টরিতে এসে ইসানার সামনেই লিসাকে ফুলগুলো দেয়। লিসা খুশি হয়ে নেয়। তবে টেরা চোখে তাকিয়ে বলে,
‘মনে হচ্ছে কারো রিজেক্ট করা ফুল আমাকে দিয়েছো, রাইট?’
রাদ আহাম্মক হয়ে যায়। ইসানা ঠোঁট উল্টে হেসে ফেলে।
রাদ সেটা দেখে রাগান্বিত স্বরে বলল,
‘রিজেক্ট করা জিনিসের মূল্য অনেক। আর সেটা আমি কেঁড়ে নিতে একটু বেশিই পছন্দ করি।’
‘নিও! তবে দেখিও। কাঁটা যেন না লাগে হাতে।’
‘বলার জন্য থ্যাংকস!’
লিসা প্রতিত্তোরে মৃদু হাসি প্রধান করে চলে যায়। পাশ থেকে ইসানাও চলে যেতে নিলে রাদ ভাবলেশহীন কণ্ঠে বলে উঠে,
‘মিস.সানা, সত্যিই আমি রিজেক্ট করা জিনিস কেঁড়ে নিতে অনেক বেশি পছন্দ করি।’
ইসানা পিছনে ফিরে কাঠ কণ্ঠে বলল,
‘রিজেক্ট করা জিনিস সব সময় ভালো হয় না।’
‘ভালো-খারাপ দুইটাই আমার পছন্দ। নজর যখন পড়েছে তখন সেটাই চাই আমার।’
তর্কবিতর্ক পছন্দ নয় দেখে ইসানা পাল্টা কথা বলল না। প্রস্থান করল। নিজের কেবিনে এসে দু’হাত দিয়ে কপাল চেপে ধরে। রাদ চেয়ার দুলিয়ে মনিটরে ইসানাকে দেখছে। ক্ষণে ক্ষণে তাকে পাবার আক্ষেপ তীব্রভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তার। জিদ্দি হয়ে উঠছে হৃদয়ে।
__
পরদিন…
‘কি ব্যাপার হঠাৎ জরুরি তলব দিলে যে।’ চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল মুরাদ।
‘কী হচ্ছে এসব? তোমরা কি শুরু করলে?’ সোহানা বিরক্ত হয়ে মুরাদকে প্রশ্ন করল।
‘আমি কি করেছি? সব তো রাদেই করছে।’
‘এমন ফালতু কাজ করা বন্ধ করতে বলো তাকে।’
‘কী করা যায় বলো তো?’
‘আমি তোমার বিষয়টি সহজে মেনে নেইনি। তেমনি ইসানাও মানবে না। ওঁকে বাঁধ্য করতে হবে।’
‘মানে বলতে চাইছো জো’র’জ’ব’র’দ’স্তি?’
‘তেমনই বলা যায়। কেননা ইসানা রাদের চালচলন, ব্যবহারে বুঝতে পেরেছে সব। ও কিছুতেই মেনে নিবে না রাদকে।’
‘হেই! কি বলছো? ও তো আজ ইসানাকে প্রপোজ করবে ভাবছে।’
‘হোয়াট?’ অবাক হয়ে যায় সোহানা।
‘হ্যাঁ! বুফে কিনেছে গোলাপের।’
‘দ্রুত কল দিয়ে না করো মুরাদ। ইসানা এবার সত্যি সত্যি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে একেবারের জন্য।’ উত্তেজিত হয়ে বলল। মুরাদ ফোন পকেট থেকে বের করে রাদকে কল দেয়। কিন্তু ফোন পীক করে না। আরো দু’বার দেয়। এবারও ফোন রিসিভ করে না। সোহানা উত্তেজিত হয়ে জানতে চাইলো,
‘কোথায় প্রপোজ করবে?’
‘ফ্যাক্টরির ছাদে ডেকোরেশন করা হয়েছে।’
‘কখন করবে?’
‘লাঞ্চ টাইমে।’
‘চলো তাড়াতাড়ি ফ্যাক্টরিতে।’
‘করুক না প্রপোজ। কতদিন আর চাপিয়ে রাখবে।’
‘তুমি বুঝতে পারছো না কেন মুরাদ। ইসানা মেনে নিবে না ওঁকে বাঁধ্য করাতে হবে।’
‘সেটা কীভাবে?’
‘আগে তুমি চলো।’ ঠেলতে ঠেলতে মুরাদকে গাড়িয়ে উঠায় সোহানা। একত্রে ফ্যাক্টরিতে পৌঁছে লিফট বেয়ে উপরে উঠতে আরম্ভ করে।

হঠাৎ রাদ ইসানাকে ছাদে ডাকার কারণে সে বেশ বিরক্ত হয়। পা রাখতেই চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। এত সুন্দর ডেকোরেশন দেখে মুগ্ধ হয় ইসানা। তবে সে অবাকও হয়। বলাকওয়া বিহীন এত সুন্দর করে কেনোই বা ডেকোরেশন করা হলো? আশেপাশে ফুলের সুভাষ এতটাই তীব্র ছিল যেন মনে হচ্ছে সে কোনো ফুলের বাগানে ভ্রমণ করতে এসেছে। আরো কয়েক পা এগোতেই মুখোমুখি হলো প্রত্যাশিত এক মুখশ্রীর।
কপালে ভাজ এলো কিঞ্চিৎ। রাদের ভাবভঙ্গি স্বাভাবিক থেকেও অনেক বেশি অস্বাভাবিক লাগছে। চেহারা দেখে সুবিধাজনক ঠেকছে না। দু’হাত পিছনে রাখা। নিশ্চয় হাতে কিছু রয়েছে তীব্র অনুমান ইসানার। রাদ দু’কদম সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসে পিছন থেকে বুফে ও আংটির রিং এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘আমি কবি নই, নই কোনো পূরানো প্রেমিক। ভূমিকা করে বলার যোগ্যতাও আমার নেই। শুধু ছোট্ট তিনটি শব্দ বলব, আই লাভ ইউ! আই লাভ ইউ এ লট! ইউ লাভ মি?’
ইসানার হৃদয় জুড়ে এক তীব্র কাঁপুনি অনুভব হয়। আকস্মিকতায় সে বিস্ময় কিঃকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেছে। আংটি ও বুফের দিকে তাকাল। পরপরই নজর রাদের চোখের পানে নিক্ষেপ করে। নিজেকে স্বাভাবিক করে তেজি স্বরে বলল,
‘অসম্ভব! আমি আপনাকে ভালোবাসি না। না কক্ষণো ভালোবাসবো! নেক্সট টাইম ভালোবাসা প্রকাশ করলে জব ছাড়তে বাঁধ্য হবো।’ চলে যাওয়া ধরলে রাদ উঠে দাঁড়িয়ে কণ্ঠে প্রখরতা এনে বলল,
‘দাঁড়ান! আপনাকে আমি কাল বলেছি রিজেক্ট করা জিনিসের ওপর ঝোঁক আমার তীব্র! আপনাকে পাওয়ার আক্ষেপ আরো দশগুণ বেড়ে গেলো। প্রস্তুত থাকবেন আমার হবার জন্য।’ লাস্টের বাক্যাটুকু মুরাদ ও সোহানা এসে শুনতে পায়। ইসানা ওদের দেখে এক প্রকার ছাদ থেকে ছুটে পালায়। সোহানা ইসানার পিছু নেয়। মুরাদ রাদের নিকট এগিয়ে আসতে নিলে রাদ বুকে ফেলে তীব্র ক্রোধে শক্ত হাতে আংটির বাক্স মুঠোবন্দি করে হাঁটা ধরে। মুরাদ থেমে যায়।
.
.
.
#চলবে?

কার্টেসী ছাড়া কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ