#তোমাতে_মত্ত_আমি
#লেখনীতে – #Kazi_Meherin_Nesa
#পর্ব – ০৫+০৬
যথারীতি অফিসের জন্যে রেডি হচ্ছিলো ফাহাদ, আলফা আরো আগেই তৈরি হয়ে গেছে। এরই মাঝে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে হাত ঘড়িটা পড়তে পড়তে পড়তে ফাহাদ বলে উঠলো..
“তোমার ফোনে আমি আমার নাম্বার সেইভ করে দিয়েছি, এরপর কোথাও গিয়ে দেরি হলে কল করে জানিয়ে দেবে”
“আপনি আমার ফোন ধরেছিলেন কখন?”
“অভিয়েসলি, তুমি যখন ওয়াশরুমে ছিলে। তুমি নিশ্চয়ই স্বেচ্ছায় তোমার ফোন ধ’র’তে দিতে না”
“তা আমার ফোন কেনো ধ’রে’ছিলেন?”
“তোমার ফোনে আমার নাম্বার সেভ আছে কিনা দেখার জন্যে, ভেবেছিলাম ফোনের ল’ক খোলার জন্যে আমায় অনেক ক’ষ্ট করতে হবে কিন্তু তোমার ফোনে তো ল’ক’ই নেই”
“আমার ফোনে এমন কোনো ব্যক্তিগত জিনিস নেই, তাই কখনো ল’ক করার প্রয়োজন মনে করিনি”
“তুমি আসলেই অ’দ্ভু’ত!”
“কেনো এমন মনে হলো?”
“কেনো মনে হবেনা? আমি আমার জীবনে হয়তো প্রথম এমন কোনো মেয়ে দেখলাম যে ফোন ল’ক করেনা। আ’ন’বি’লি’ভে’ব’ল!”
“আমি যেমনি হই না কেনো, কিন্তু এভাবে না বলে আমার ফোনে হাত দেওয়া উচিত হয়নি আপনার”
“তোমার ফোনে কিছুই চে’ক করিনি আমি! শুধু আমার নাম্বারটা সেইভ করে দিয়েছি”
কিছু বললো না আলফা, পুনরায় ভ্যানিটি ব্যাগে নিজের প্রয়োজনীয় স’র’ঞ্জা’ম নেওয়ার কাজে মনোনিবেশ করলো। একটু পরে আবার ফাহাদ প্রশ্ন করলো..
“তোমার গাড়ির কোনো অ্যা’ক’সি’ডে’ন্ট হয়েছিলো নাকি? ফ্রন্ট লাইট ভা’ঙ্গা দেখলাম”
ফাহাদের দিকে চোখ তুলে তাকালো আলফা, গতকালের ঘটনা মনে পড়তেই বললো..
“ও তেমন কিছুনা। ভুলে একজন ধা’ক্কা দিয়ে দিয়েছে”
“হোয়াট! তো তুমি কিছু বললে না তাকে?”
“বললাম তো ভু’লে হয়েছে। তার দো’ষ ছিলো না তাছাড়া সে আমাকে স’রি বলেছে আর কেনো ধা’ক্কা’টা লেগেছে তার কারণও ব্যাখ্যা করেছে। এরপর আর কি বলবো”
“তোমার চেনা কেউ নাকি?”
“আমার চেনা কেউ কেনো হতে যাবে?”
“যেভাবে ডিফেন্ড করছো তাই মনে হলো হয়তো তোমার চেনা কেউ হবে। যাই হোক, তুমি তাহলে আজ আমার সঙ্গে চলো। আর তোমার গাড়ি আমি রি’পে’য়া’রিং শপে পাঠিয়ে দেবো”
“আমি ট্যা’ক্সি নিয়ে নেবো”
“আলফা, বললাম তো আমার সঙ্গে যাবে তুমি আজ। ব্যস, এই নিয়ে আর একটাও কথা হবেনা। রেডি হয়ে চলে এসো”
“আপনাকে কি আঙ্কেল বলেছে আমায় ড্র’প করে দিতে?”
“তোমার কি মনে হয় আব্বু বললেই আমি শুনবো? আর আব্বু বললেও বা, আমি না চাইলে কোনো কাজ কেউ জোর করে আমায় দিয়ে করাতে পারবে না। আশা করি এ কদিনে আমার সম্পর্কে অন্তত এইটুকু ধারণা হয়েই গেছে তোমার”
রুম থেকে বেরিয়ে এলো ফাহাদ। হ্যাঁ, এই কদিনে ফাহাদকে এইটুকু চেনা হয়ে গেছে আলফার যে তাকে দিয়ে জো’র করে কিছু করানো যায়না কিন্তু ফাহাদের সঙ্গে যেতে যে ওর বড্ড আন কমফোর্ট লাগবে সেটা কিভাবে বোঝাবে? এ কথা বলতে গেলে ফাহাদ হয়তো আবার ঝ’গ’ড়া শুরু করবে, কিন্তু ওর সঙ্গে আর ঝ’গ’ড়া’র ইচ্ছে নেই আলফার। তাই এক প্রকার ঝা’মে’লা এড়াতেই ফাহাদের সঙ্গে যেতে রাজি হয় আলফা..
___________________
একটা ক্লাস শেষে সবে বেরিয়েছে আলফা, তখনই কলেজের এক মহিলা সহচারিকা এসে আলফা কে জানায় কেউ একজন পুরুষ ওর সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। এ সময় কে দেখা করতে এলো তা শুরুতে ভেবে পেলো না আলফা, পরে আবার ভাবলো ফাহাদ আসেনি তো? কিন্তু কলেজের ক্যাম্পাসে দাড়িয়ে অ’প্র’ত্যা’শি’ত কাউকে দেখে অবাক হয় আলফা..
“আপনি?”
আলফাকে দেখামাত্রই স্মিত হাসলো পুরুষটি..
“হেই, হাই!”
“আপনি এখানে..”
“গতকাল আপনিই তো বলছিলেন গাড়ি রি’পে’য়া’র করিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে থাকলে যেনো নিজেই চলে আসি। তাই চলে এলাম”
আলফা বেশ অবাক হলো, লোকটা যে সত্যিই চলে আসবে ও ধা’র’ণা’ই করেনি!
“আমি তো এমনিই বলেছিলাম কিন্তু আপনি যে সত্যিই চলে আসবেন ভাবিনি”
“আমি কিন্তু আপনার কথাটা এমনি এমনি ধরিনি, এবার বলুন কোথায় আপনার গাড়ি আমি রি’পে’য়া’র করাতে নিয়ে যাবো”
“তার প্রয়োজন নেই, আমার গাড়ি অলরেডি আজকে রি’য়ে’পা’র করাতে দিয়ে এসেছি। আপনাকে আর ক’ষ্ট করতে হবে না”
“সে কি? একদিন অপেক্ষা করতে পারলেন না?”
“বললাম তো আপনি সত্যি চলে আসবেন ধারণা করিনি, যাই হোক আসার জন্যে ধন্যবাদ”
“উম্ম! দেখুন, অনেক ব্যস্ত মানুষ আমি তবুও শুধু আপনার কথা রাখার জন্যে এতদূর এসেছি এখন যদি শুধু একটা ধন্যবাদ শুনে ফিরে যেতে হয় সেটা টোটালি আমার টাইম ওয়েস্ট হবে”
“সেক্ষেত্রে আমি কি করতে পারি?”
“আপনি যদি আমার সঙ্গে এক কাপ কফি খান তাহলে আমি ধরে নেবো এখানে আসায় আমার সময় ন’ষ্ট হয়নি”
“কফি অফার করার জন্যে ধন্যবাদ তবে এটা আমার কাজের সময় আর কাজের সময়টা অন্য কাজে ন’ষ্ট করা যায়না সেটা নিশ্চয়ই আপনি ভালোভাবেই জানেন। যেহেতু আপনি নিজেই একজন ব্যস্ত মানুষ”
“দ্যান, হোয়াট অ্যাবাউট অফ ডে? আমরা কি কোনো এক ছুটির দিনে দেখা করতে পারি?”
“আমরা একে অপরের অপরিচিত আর আমি একজন অপরিচিত লোকের সঙ্গে কফি খেতে কেনো যাবো?”
“কারণ আপনার জন্যে আমার মূল্যবান সময় ব্যয় হয়েছে, তার দা’য়’ভা’র গ্রহণ করবেন না? দেখুন আমি ভু’ল করেছিলাম বলে তার দা’য় নিতে এসেছিলাম। নাও ইটস ইউর টা’র্ন।
“আর আমি যদি আপনার অফার রি’জে’ক্ট করি তাহলে?”
“তাহলে আপনাকে অফারটা অ্যা’ক’সে’প্ট করানোর জন্যে মাঝেমধ্যেই আপনার কলেজের ক্যাম্পাসে চলে আসবো আর ক্লাসের ফাঁকে এভাবেই হয়তো আপনার থেকে কিছু মূল্যবান সময় ও’য়ে’স্ট করাবো!”
দ্বিতীয় দেখাতেই কফি খাওয়ানোর জন্যে এতোটা ইন্টারেস্ট দেখাচ্ছে ছেলেটা? বিষয়টা বোধগম্য হলো না আলফার, কিন্তু ছেলেটা যা বলছে সেটা যে করতে দুবার ভাববে না তা গতকাল একবার বলাতেই আজ এখানে এসে প্রমাণ করে দিয়েছে। ছেলেটা যদি সত্যিই মাঝেমধ্যে কলেজে আসে তাহলে সবাই ভুল বুঝতে পারে। ভাবনায় পড়ে যায় আলফা যে কি করবে..
_______________________
আজ ফাহাদের বাবা ও ফারহান বাড়িতে নেই, তাই রাতের খাবারে ফাহাদ, ওর মা এবং আলফা। রাতের রান্নাটা আজ আলফা করেছে। খেতে খেতে এক পর্যায়ে মিসেস খান ছেলেকে প্রশ্ন করলেন..
“কেমন হয়েছে রে আজ রান্নাটা ফাহাদ?”
“হুম, ভালো হয়েছে। কিন্তু আজ টেস্টটা একটু অন্যরকম লাগছে”
“একটু? পুরোটাই তো অন্যরকম লাগার কথা। আজ রান্নার হাত তো তোর বউয়ের”
মায়ের কথায় আলফার দিকে তাকালো ফাহাদ, আলফাও একনজর দেখলো ফাহাদকে..
“কিরে, শুধু তাকিয়েই থাকবি? বলবি না কিছু?”
“কি বলবো?”
“কি বলবি মানে? আজ প্রথমবারের মতো আলফা রান্না করেছে, এখন তোর বাবা আর ফারহান থাকলে দেখতিস কতো প্রশংসা করতো”
হালকা করে গলা ঝা’ড়’লো ফাহাদ, খেতে খেতে বললো..
“বললামই তো, ভালো হয়েছে। আর কি বলবো?”
ছেলের কথা শুনে আলফার দিকে তাকালেন আলফা, নিজের বামহাতটা আলফার হাতের ওপর রেখে বললেন..
“বুঝলে আলফা, ছেলেটা আমার একটু এমনি। এখনও বউয়ের রান্নার প্রশংসা কিভাবে করতে হয় শিখে ওঠেনি। আপাতত একটু মানিয়ে নিও”
মিসেস খানের কথার উত্তরে চুপ থাকাটাই শ্রেয় মনে করলো আলফা..
“ভাবছিলাম একটু বাবার বাড়ি যাবো, ফাহাদের মামারা যেতে বলছে। আলফা, মা তোমার কি দুটো দিন সময় হবে আমার সঙ্গে যাওয়ার জন্যে?”
“আন্টি, আমার তো সময় হবেনা এখন”
“আম্মু, আমারও অনেক কাজ আছে। এখন কোথাও গিয়ে যাওয়া সম্ভব না আমার। তুমি আব্বুকে নিয়ে যাও না”
“তোর আব্বুকে নিয়ে নিজের বাপের গিয়ে আজ অব্দি একদিনের বেশি থাকতে পেরেছি নাকি? লোকটার তো সবকিছুতেই তাড়া। তোকে বা ফারহানকে নিয়ে গেলে তাও কয়েকটা দিন থেকে আসতে পারবো”
“তাহলে আন্টি আপনি ফারহানকে সঙ্গে নিয়ে যান, ওর সেমিস্টার এক্সাম শেষ আর ও এখন ফ্রি আছে”
“হ্যাঁ, তাই করতে হবে মনে হচ্ছে। অনেকদিন হলো ভাইদের সঙ্গে দেখা হয় না। আচ্ছা, আমি গেলে ফাহাদ আর ওর বাবার একটু খেয়াল রেখো কেমন?”
“ওসব নিয়ে আপনি ভাববেন না, আমি সামলে নেবো”
আজ রাতে আগেই ঘুমানোর প্রস্তুতি নিয়েছে আলফা, ভীষন ক্লা’ন্ত লাগছে। বিছানা ঠিক করতেই আলফা আলমারি থেকে দু- তিনটে বালিশ নিয়ে বিছানায় রাখলো। বিছানায় বালিশ থাকা সত্বেও ফাহাদ এক্সট্রা বালিশ নিয়ে আসায় ভ্রু কুঁ’চ’কে আলফা প্রশ্ন করলো..
“এতগুলো বালিশ বের করছেন কেনো?”
“দরকার আছে”
ফাহাদ নিজের সাইডে বসে বিছানার ঠিক মাঝখান বরাবর বালিশগুলো রাখলো..
“এগুলো এখানে রাখছেন কেনো?”
“আই থিঙ্ক আমাদের মাঝে একটা বাউন্ডারি ইউজ করা উচিত, যেহেতু আমরা একে অপরের সঙ্গে কমফোর্ট ফিল করিনা কিন্তু একি বিছানা শেয়ার করতে হবে তার জন্যে আমার মনে হয় এটা পারফেক্ট ওয়ে”
ফাহাদের এহেন কথায় মুখটা শুকিয়ে গেলো আলফার, মেয়েটা যতোবার স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করে ততোবারই ফাহাদ এমনকিছু করে যাতে আলফার মন ভে’ঙে যায়।
“আমার বিছানায় শোয়ায় আপনার সমস্যা হচ্ছে?”
“নাহ! তবে আমাদের জন্যে এভাবে ঘুমানোই বেটার হবে। আশা করি এতে তোমার কোনো সমস্যা নেই”
“আপনার বেড এটা, আপনি যেভাবে চাইবেন সেভাবেই হবে”
অন্যদিকে ফিরে নিজের পাশে শুয়ে পড়লো আলফা, ফাহাদও লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়লো। চোখবন্ধ অবস্থাতেই দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো আলফার চোখের কো’ণ দিয়ে..
___________________
আজ ছুটির দিন। বান্ধবীর বিয়ের শপিংয়ে আলফা সঙ্গে যাবে, তার জন্যেই তৈরি হয়ে নিচ্ছে। ফাহাদও আজ বেরোবে বন্ধুদের সঙ্গে কিন্তু হুট করেই আলফা কোথায় যাচ্ছে তা জানতে ইচ্ছে হলো ফাহাদের..
“কোথায় যাওয়া হচ্ছে?”
“আপনি কোথায় যাচ্ছেন?”
“বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে, আর তুমি?”
“আমিও বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি”
“আমি ড্র’প করে দেবো?”
“দরকার নেই, আপনি আমার গাড়ি কোন রি’পে’য়া’রিং শপে দিয়েছেন বলুন। আমি ওখান থেকে আজ নিয়ে আসবো”
“কিন্তু গাড়ি রি’পে’য়া’র করা তো এখনও শেষ হয়নি, নাহলে আমিই গিয়ে নিয়ে আসতাম”
“মানে? একটা ফ্রন্ট লাইট লাগাতে এতদিন সময় লাগে নাকি? তারা মনে হয় ঠিকঠাক কাজ জানেনা”
“এক্সকিউজ মি, আমাদের গাড়িও ওখান থেকেই রিপেয়ার করানো হয় এন্ড দে আর এ’ক্স’পা’র্ট”
“কেমন এ’ক্স’পা’র্ট তার নমুনা তো দেখতেই পাচ্ছি, এতদিন ধরে একটা গাড়ির ফ্রন্ট লাইট লা’গা’চ্ছে!”
কিছুটা বি’র’ক্ত হয়েই রুম থেকে বেরোলো আলফা, পেছন পেছন ফাহাদও বেরোলো। ড্রইং রুমে ছিলেন মিস্টার খান, আলফা ও ফাহাদকে প্রায় একই সময় আসতে দেখে উনি হেসে বলে উঠলেন..
“বাহ, দুজনে আজ একসঙ্গে কোথাও যাচ্ছো নাকি?”
“নাহ আঙ্কেল, আমরা একসঙ্গে কোথাও যাচ্ছিনা। আমি একাই যাচ্ছি! আসছি”
আলফা দ্রুত পায়ে হেঁটে বেরিয়ে গেলো, ও যেতেই ছেলের দিকে স’ন্দে’হে’র দৃষ্টিতে তাকালেন মিস্টার খান..
“ওর কি হয়েছে ফাহাদ?”
“আমি কিভাবে জানবো?”
“তুমি কিছু বলেছো ওকে?”
“আব্বু, আলফার কিছু হলেই তুমি সবসময় আমাকেই কেনো টা’র্গে’ট করো বুঝিনা। আমাকে কি মনে হয় তোমার?”
“কারণ ওর মন খা’রা’পে’র একমাত্র কারণ তুমি তাই তোমাকে ছাড়া আর কাকেই বা টা’র্গে’ট করবো?”
“আব্বু! বিয়ের পর থেকে তুমি এমন করতে শুরু করেছো যেনো আলফাই তোমার মেয়ে আর আমি বাইরের কেউ!”
“তোমার মতো দা’য়ি’ত্ব’জ্ঞা’ন শূ’ন্য ছেলের থেকে আলফার মতো পুত্রবধূকেই যদি আমি মেয়ে হিসেবে মানি তাহলে তো আমারই লাভ”
“আব্বু তোমাকে আমার জাস্ট কিছু বলার নেই”
বাবার কথা শুনে ফাহাদও হ’ন’হ’ন করে ছুটলো বাইরের দিকে। ইতিমধ্যে বান্ধবী জারার সঙ্গে শপিংমলে পৌঁছে গেছে আলফা, সঙ্গে জারার হবু বরও এসেছে। আলফাকে তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় জারা, এরপর সে জারাকে নিজের পছন্দমতো ড্রেস কেনার জন্যে স্পেস দিয়ে নিজের জন্যে ড্রেস দেখতে যায়। জারা আলফাকে নিয়ে শুরু করে ড্রেস দেখা..
“ভাবছি, তোর বিয়েতে যে লে’হে’ঙ্গা’টা পড়েছিলি অমন সিম্পল একটা নেবো”
“কিন্তু তোকে লে’হে’ঙ্গা’র থেকে বেনারসি শাড়িতে ভালো মানাবে”
“আলফা! এটা তুই বলছিস? তোর মনে নেই কলেজ লাইফে আমরা কি ঠিক করেছিলাম? বিয়েতে আমরা দুজনে একিরকম ড্রেস পড়বো। তো, আমি তোর বিয়ের ড্রেসের মতোই কিছু কিনবো আর হ্যাঁ তোর নু’ড মেকাপটা ও দারুন ছিলো। আমাকে কেমন লাগবে রে ওই সাজে? তাহলে আমিও সন্তান”
“আমার বিয়ের মতো কিছু রি – ক্রি’য়ে’ট করার দরকার নেই রে জারা, তুই তোর মতো করে সাজ। আমার মনে হয় সেটাই ভালো হবে”
“এভাবে কেনো বলছিস আলফা!”
“জানিস তো আমার বিয়ের প’রি’ণ’তি, ছয় মাস আগে অ’নি’চ্ছা’য় বউ সাজতে হয়েছিলো আমায়। সেদিনই যে আমার জীবন এভাবে ত’ছ’ন’ছ হবে কখনো ভাবিনি”
আলফার মন খা’রা’প হয়ে গেছে বুঝতে পেরে জারা বলে ওঠে..
“বান্ধবী, এসব ভেবে এখন মন খা’রা’প করিস না। তুই আমার সঙ্গে এসেছিস, এখন তুই স্যা’ড হলে কিন্তু আমিও স্যা’ড হয়ে যাবো। তুই কি চাস তোর বান্ধবী স্যা’ড হয়ে যাক?”
জারা এমন একটা ফেস বানালো যে আলফা না হেসে পারলো না, মেয়েটা বরাবর মন খা’রা’পে’র সময় আলফাকে খুশি করার চেষ্টা করে। আর আজ তার বিয়ের শপিং, আলফা চায়না ওর জন্যে জারার বিয়ের শপিংটা ভালোমতো না হোক তাই ও যথাসম্ভব নিজের মন ঠিক করে নেওয়ার চেষ্টা করলো। সন্ধ্যাবেলা মিস্টার ও মিসেস খানের মধ্যে হালকা ঝ’গ’ড়া লেগেছে, ফারহান আবার উকি দিয়ে একটু দেখে এসেছে। মুচকি মুচকি হেসে ফারহান এসে ড্রইং রুমে বসলো, ফাহাদ তখন ওখানেই ম্যাগাজিন পড়ছিলো..
“হাসছিস কেনো? অহনার সাথে কথা বলে এলি নাকি”
“আরে নাহ ভাইয়া, দেখে এলাম! আম্মু আব্বু ঝ’গ’ড়া করছে”
“কেনো?”
“আরেহ, আম্মু মামা বাড়ি যেতে চাইছে না? তো আব্বু যেতে দেবেনা। ইশ! এখনও আব্বু আম্মুর মধ্যে কতো প্রেম দেখেছো? একদিন আমি আর অহনাও এভাবে ঝ’গ’ড়া করবো দেখে নিও”
কথাগুলো বলতে বলতেই ফারহান ফাহাদের দিকে তাকালো..
“এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?”
“তোমার জন্যে আমার বড্ড আফসোস হয় ভাইয়া, তুমি যদি ভাবীর প্রতি একটু কেয়ারিং হতে তাহলেই আজ সব স্বাভাবিক হতো আর তোমাদের সম্পর্কও আব্বু আম্মুর মতো হতে পারতো”
“বাচ্চা ছেলে বাচ্চা ছেলের মতো থাক! আমাকে জ্ঞা’ন দিতে আসিস না”
“এসব ব্যাপারে আমার থেকে তোমার জ্ঞা’ন কম ভাইয়া, আর আমি ছোটো তাতে কি? আমি তোমায় ফ্রি পরামর্শ দেবো। সবসময় যে বড় ভাই ছোটো ভাইকে পরামর্শ দেবে তার তো মানে নেই। মাঝে মধ্যে ছোটো ভাইও তো বড় ভাইকে পরামর্শ দিতে পারে। এতে ল’জ্জা’র কিছু”
“তুই মনে হচ্ছে একটু বেশিই বড় হয়ে গেছিস। আমার সঙ্গে বেশি পা’ক’না’মি করলে অহনার সঙ্গে তোর ব্রে’ক’আ’প করিয়ে দিতে একটুও সময় লাগবেনা কিন্তু আমার। কথাটা মাথায় রাখিস”
“ভাইয়া!!”
এরই মাঝে আলফা ফিরলো..
“ঐতো ভাবী এসে গেছে, গুড ইভিনিং ভাবী”
“গুড ইভিনিং ফারহান!”
“তা, আজকের দিনটা কেমন কা’ট’লো তোমার?”
“হুমম! ভালোই কে’টে’ছে। তোমাদের সন্ধ্যার নাস্তা করা শেষ? নাহলে আমি ফ্রেশ হয়ে এসে কিছু..”
“না না ভাবী, হয়ে গেছে। তোমাকে কিছু করতে হবে না। তুমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রে’স্ট নাও”
আলফা একনজর শুধু ফাহাদের দিকে চেয়েই রুমে চলে গেলো, আজ সারাদিন ঘো’রা’ঘু’রি’র ফলে একটু বেশিই ক্লা’ন্ত লাগছে আলফার। অনেকটা সময় পর ফাহাদ ঘরে এলো। ও আসতেই আলফা একটা শপিং ব্যাগ এগিয়ে দিলো। প্যাকেটটা কয়েক সেকেন্ড পর্যবেক্ষণ করে ফাহাদ প্রশ্ন করলো..
“কি আছে এতে?”
“জারার হবু হাসবেন্ডও ছিলো আজ শপিংয়ের সময়, তার ড্রেস সিলেকশনের সময় আমাকেও আপনার জন্যে কিছু কেনার জন্যে জো’র করছিলো। না কিনলে খা’রা’প দেখাবে তাই নিয়েছি”
ব্যাগটা হাতে নিলো ফাহাদ। ও কিছু বলবে তার আগেই আলফা বললো..
“যেহেতু আপনার পছন্দ সম্পর্কে আমার বিশেষ ধারণা নেই, তাই নিজের মতো করেই একটা কিনে এনেছি। যদি পছন্দ না হয় ফে’লে দিতে পারেন”,
“আমি তো এখনও খুলেই দেখলাম না, এখনই ফে’লে দেওয়ার প্রসঙ্গ আসছে কেনো?”
“আমার মনে হয় না আমার পছন্দ আপনার পছন্দ হবে তাই বললাম”
কথাগুলো বলেই আলফা গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল আঁ’চ’ড়া’তে শুরু করলো। আলফা নিজে কিছু কিনে এনেছে শোনার পর প্রথমে ফাহাদের একটু আনন্দই হয়ছিলো কিন্তু এরপর আলফা যা বললো তা কথা শোনার পর এখন আর এই ব্যাগ খুলে দেখতে ফাহাদের ইচ্ছে করছে না আর আলফার সামনে তো একদমই না!
________________
মিসেস খান আজ ছোটো ছেলেকে নিয়ে সকাল সকালই বাপের বাড়ি গেছেন। মোটামুটি চার পাঁচদিনের জন্যে এখন এই বাড়ির সব দায়িত্ব আলফার ওপর। ব্রেকফাস্ট শেষে মিস্টার খানকে তার ওষুধ দিয়ে আসে আলফা..
“আজ কলেজ থেকে ফিরে তোমার রান্নার দরকার নেই বুঝলে আলফা, আমরা বাইরে আনিয়ে নেবো”
“তার দরকার নেই আঙ্কেল, সকালের রান্না আন্টি করে গেছিলো আর দুপুরের রান্না আমি করে দিয়েছি। আপনি দুপুরে বাড়ি এলে ওগুলোই খাবেন, বাইরের খাবার খাওয়া আপনার শরীরের জন্যে ভালো নয়। আর রাতের রান্নাটা আমিই করে নেবো”
“তুমি তো দেখছি একদম ফাহাদের মায়ের মতো কথা বলছো। বুঝলে, তোমার শ্বাশুড়ির জন্যে শান্তিমত কিছুই করতে পারিনা”
“আন্টি আমাকে আপনার দায়িত্ব দিয়ে গেছে আঙ্কেল, তা তো আমায় পালন করতে হবে তাইনা? আমি পুরো চেষ্টা করবো…
শ্বশুরের সঙ্গে কথা শেষে রুম থেকে ব্যাগ নিয়ে আসে আলফা। বাড়ির সব কাজ শেষ, এবার অফিস যাওয়ার পালা। ফাহাদও বেরোচ্ছে অফিসে..
“তুমি তো কলেজ যাবে তাইনা? চলো, আমি ড্র’প করে দিচ্ছি”
“ফাহাদ, আপনি কি আমার গাড়ির কথা ভুলে গেছেন?”
“না তো, মনে আছে। দু একদিনের মধ্যে চলে আসবে তোমার গাড়ি। এতো হা’ই’পা’র কেনো হচ্ছো?”
“কারণ এখন প্রায় রোজ সকালে আমাকে আপনার সঙ্গে যেতে হচ্ছে!”
“কেনো? আমার ফ্রি সার্ভিস ভালো লাগছেনা?”
“ফ্রি’তে পাওয়া কোনো জিনিসই ভালো হয় না। আর আমার আপনার ফ্রি সা’র্ভি’সে’র কোনো দরকার নেই”
আজ আলফাকে নিজের সঙ্গে নিতে পারেনি ফাহাদ, আলফা নিজেই চলে গেছে। ফাহাদেরও বেশ রাগ হলো। মেয়েটার এতো জেদী কেনো নাকি তার সকল রা’গ ও জে’দে’র অংশ শুধু ওর জন্যেই তোলা?
চলবে…