#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_৪৪ (শেষ পর্ব – প্রথম অংশ)
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)
রাতে তননের উশখুশ করা দেখে তাহসী ফিসফিস করে বলে উঠলো,
-“কি হয়েছে?”
অন্ধকারের মধ্যেই তাহসীর চোখের দিকে তাকিয়ে তনন বললো,
-“বুঝো না!”
তাহসী চোখ নামিয়ে নিল। তনন তাহসীকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। তাহসীর ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দিল। তাহসী চোখ বন্ধ করে তননের কাঁধ আকড়ে ধরলো।
কিছুক্ষণ পর পায়ে হাঁটার শব্দ পেয়ে তনন তাহসীকে ছেড়ে দিল। সম্ভবত সেলিনা শেখ বা তনু ঘুম থেকে উঠেছে ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য। ওনারা রুমে আর তাহসী,তনন ডাইনিং রুমে ঘুমিয়েছে।
তাহসী তননের দিকে তাকালো। তনন তাহসীর দিকে তাকিয়ে ছিল। কিছুক্ষণ পর তাহসী ফিসফিস করে বললো,
-“ঘুমিয়ে পড়ো।”
-“হু।”
তাহসীর বুকে মাথা রেখে তাহসীকে জড়িয়ে ধরলো তনন। তাহসী তননের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।
🍁🍁🍁🍁
কেটে গেছে দুই বছর। দুই বছরে অনেক কিছু পাল্টিয়েছে। তনন, তাহসী পড়াশোনার দিক থেকে এক ধাপ এগিয়ে গেছে। তাহসী মাস্টার্স এ ভর্তি হয়েছে। তনন আপাতত একটা কম্পানি তে জয়েন করেছে। দুইটা টিউশনি করায় আর বিসিএস এর প্রস্তুতি নিচ্ছে। সরকারি চাকরির জন্য পরীক্ষা ও দিচ্ছে।
নাহিদ আর মিথিলার ছোট্ট এক ছেলে বাচ্চা হয়েছে যার বয়স মাত্র চার মাস। নাঈম আর শশীর মেয়ে বয়স এক বছর নয় মাস। ডাক নাম বিনি। অল্প অল্প কথা বলতে পারে আর হাঁটতেও পারে।
শশী এইচএসসি পরীক্ষা দিবে। আর নাঈম দ্বিতীয় বর্ষে ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়ছে।
ঈদ উপলক্ষে ছুটি পেয়েছে তনন পাঁচদিন। তাহসী মুখ ফুলিয়ে বারান্দায় যেয়ে বসে আছে। আগের বাসাতেই থাকে তারা। ভাড়া আগের চেয়ে দুই হাজার বেড়েছে। বেড়েছে বলতে চাকরি পাওয়ার পর তনন নিজ থেকেই দুই হাজার টাকা বেশি দেয়।
তনন কফি বানিয়ে নিয়ে যেয়ে তাহসীর পাশে দাঁড়ালো। তাহসী সেদিকে তাকালো না। তনন কফিতে চুমুক দিয়ে বললো,
-“কি করবো বলো? ছুটি কি আমার হাতে?”
-“ছয়মাস বাসায় যাই না তনন! এত কম ছুটি! ঈদের জন্য অপেক্ষা করে আছি। স্কুল লাইফ ই ভালো ছিল। রোজার এক মাস ছুটি।”
তনন হাসলো। বললো,
-“তা তো ভালো ছিলই। এত এত দায়িত্ব ছিল না। কি আর করার! আমি যাই দেখি বাসে দুপুরের টিকিট কেটে আসি। ব্যাগ গুছিয়ে ফেলো। এখন নয়টা বাজে।”
-“আমি পারবো না এত তাড়াতাড়ি আসতে।”
-“আমিও একা থাকতে পারবো না।”
-“ভীতু!”
-“কে বলেছে হ্যা? তোমাকে ছাড়া একা থাকতে পারবো না।”
এক হাতে তাহসীর কোমর জড়িয়ে ধরে বললো তনন।
তাহসী তননের দিকে তাকালো। এই দুই বছরে তননের সৌন্দর্য আরো বেড়েছে।
-“তাহলে ছুটি বাড়িয়ে দিতে বলতে হবে। না দিলে ছুটি নিয়ে নাও।”
কফির মগ পাশে রেখে তাহসীর গালে হাত রেখে তনন বললো,
-“এটা বেসরকারি কোম্পানি বেবি! এত সহজ না। ঘুষ ছাড়া চাকরি পেয়েছি এটাই তো কত।”
-“কি জন্য আবার! আল্লাহ ভাগ্যে রেখেছিলেন তাই বন্ধুর বাবার কম্পানি তে জব হয়ে গেল। ঘুষ লাগলো না।”
-“যাইহোক বাদ দাও। একটু হেসে ব্যাগ গোছাও প্লিজ। দেরি হয়ে যাবে।”
তাহসীর কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে তনন বেরিয়ে গেল। তাহসী দরজা আটকে ব্যাগ গোছাতে গেল।
কতদিন পর বাসায় যাবে তাহসীর আর ভালো লাগছে না অপেক্ষা করতে। সেই কবে থেকে তনন কে জ্বালিয়ে মারছে বাসায় যাওয়ার জন্য। শশীর পিচ্চি টা কে খুব কাছ থেকে দেখতে মন চাচ্ছে।
সন্ধ্যার দিকে গ্রামে পৌঁছে গেল তনন, তাহসী। তাহসীকে তার বাড়ি নামিয়ে দিয়ে তনন নিজের বাড়ি যাবে। এটা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। দুজন দুজনের বাড়ি যাবে। ঈদের দিন তাহসী তননের বাড়িতে যাবে। তনন কিছু বলিনি। মেনে নিয়েছে। তাহসী অনেকদিন থেকে আসার কথা বলছে। তার জন্যেই আসতে পারে না। বাসাতে তাহসীকে ছাড়া ভালো লাগে না তননের। আড়াই বছর একসাথে থাকতে থাকতে দুজন দুজনের অভ্যেসে পরিণত হয়েছে। ভালোবাসা বেড়েছে কয়েক গুণ।
তাহসী বিনি সোনা বলে ডাক দিতেই বিনি দাঁত বের করে হাসতে হাসতে মূল দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। ভিডিও কলে কথা বলায় চিনতে কোনো অসুবিধা হয়নি। বিনি তাহসীদের বাড়িতেই ছিল। নাঈম বাড়িতে থাকলে শশী এই বাড়িতে থাকে। চলে গেলে আবার নিজের বাড়িতে চলে যায়। আবার নাঈম ও মাঝে মাঝে যায় ওখানে। কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। এখন বেশ সুখেই আছে শশী। শিমুল রহমান আগের মতো খারাপ ব্যবহার করে না। এই কয় বছরে সবাই ভুলেই গেছে ওদের ঘটনা।
বিনি নানী,দাদি দুজনের কাছেই থাকে। শশী নিজের মতো পড়াশোনাতে ব্যস্ত। বিনি মাকে জ্বালায় না তেমন।
তাহসী কোলে তুলে নিল বিনিকে। নাতাশা রহমান শুধু তাহসী কে দেখে বললেন,
-“তনন কোথায়?”
-“চলে গেছে।”
-“চলে গেছে মানে!”
তাহসী কে বাড়ির কাছে দিয়েই তনন আগেভাগে চলে গেছে। ভালো করে জানে তাকে দেখলে এখন আর যেতে দিবে না এই বাড়ির মানুষ।
তাহসী ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,
-“ওর বাড়ি যাচ্ছে। ভিতরে আসলো না। রাতে যেতে দিবানা তাই।”
-“তো তুই ওকে আনবি না?”
-“ঢাকা থেকে ঠিক করে আসা ও ওর বাড়িতে যাবে, আমি আমার বাড়িতে আসবো।”
নাতাশা রহমান আর কিছু বললেন না। হাজব্যান্ড ওয়াইফ এর ব্যাপারে নাক গলাতে চান না। একে একে ড্রয়িং রুম থেকে সবাই এগিয়ে আসলো। নাহিদ ও গ্রামে এসেছে। তাহসী মিথিলা কে দেখলো না। নাহিদ জানালো মিথিলা রুমে বাচ্চা কে ঘুম পাড়াচ্ছে। তাহসী বললো ঘরে যেয়ে দেখা করে নিবে।
তাহসী বিনিকে নিয়ে রুমে গেল। প্রশ্ন করলো,
-“আমাকে মনে আছে তোমার? বলোতো কে?”
-“ফোনে কথা বল। ফুপিইইই।”
-“এইতো সোনা বাবুটা আমাকে মনে রেখেছে।”
তাহসী ব্যাগ খুলে খেলনা এগিয়ে দিল ওর দিকে।
বিনি নতুন খেলনার দিকে চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে বললো,
-“আমাল জননো (জন্য)?
-“হ্যা।”
-“বাবা লাগ (রাগ) কলবে না!”
ভ্রু কুঁচকে বললো ছোট্ট বিনি।
-“না, তো। আমি তো ফুপি তোমার।”
-“তুমি জানো পাশেল (পাশের) গলে(ঘরে) একটা বাবু আছে, ওল (ওর) সাথে কেলবো এটা নিয়ে?”
-“যা খুশি তাই করতে পারবে। তবে ও তো এখনো ছোট। খেলতে পারবে না। ওর জন্য অন্য খেলনা এনেছি।”
শশী ও রুমে এসেছে। শশী কে দেখে তাহসী বললো,
-“তুমি মামুনির সাথে থাকো। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।”
বিনি চোখ তুলে তাকালো। শশীকে দেখে ওর কোলে উঠে পড়লো। গলা জড়িয়ে ধরে বললো,
-“এটা তো আম্মু!”
-“আচ্ছা, আম্মুর কাছে থাকো।”
তাহসী শশীর সাথে হাসি বিনিময় করে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। শশী বিনিকে নিয়ে বিছানার উপর বসলো। বিনি মাকে নতুন খেলনা দেখাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
চলবে ইনশাআল্লাহ;
#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_৪৫(শেষ পর্ব- শেষ অংশ)
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)
তাহসী ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে টাওয়েল দিয়ে হাত মুখ মুছতে মুছতে শশীর সামনে বসলো। বিনি তখন মায়ের কাছে বসে নতুন খেলনা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে ব্যস্ত।
তাহসী হেসে শশীর উদ্দেশ্যে বললো,
-“কেমন যাচ্ছে দিনকাল?”
বিনির চুল নেড়ে দিতে দিতে শশী বললো,
-“এই তো বেশ যাচ্ছে। আলহামদুলিল্লাহ।”
দুজনে আরো কথা বললো। শশী কথার ঝুলি নিয়ে বসলো। তাহসীর ভালো লাগলো মেয়েটা এতকিছুর পরও পাল্টায়নি দেখে।
🍁🍁🍁
অনেকদিন পর এই কয়দিন পরিবারের সাথে অনেক ভালো সময় কাটলো তাহসীর।
তননের সাথে বাড়ি এসে দেখা নেই। শুধু মেসেজে কথা হয়েছে।
তনন,তাহসীর দেখা হলো একবারে ঈদের দিন সকালে। ঈদের দিন তননের পরিবারকে তৌহিদ হোসেন দাওয়াত দিয়েছেন। তনন মা-বোনকে সকাল এগারোটার দিকে এসেছে এখানে। তবে এখনো তাহসীর দেখা পাইনি।
তাহসী তখন গোসল করতে ব্যস্ত। ঈদের দিন সকালেই গোসল করতো। কিন্তু শীতের কারণে হয়নি। তুলনামূলক শীত বেশি ঈদের দিন।
তাহসী ওয়াশরুম থেকে বের হতেই চোখ পড়লো বারান্দার দিকে। দেখে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। ভ্রু কুঁচকে একটু কাছে যেয়ে উঁকি দিয়ে দেখলো তনন দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছে।
তনন ও এদিকে আসলো ওয়াশরুমের ছিটকিনির আওয়াজ পেয়ে।
-“আসসালামু আলাইকুম।”
-“ওয়া আলাইকুমুস সালাম। কি ব্যাপার? ঈদের দিন সকালে পায়েস বাদ দিয়ে কফি!”
তাহসী আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বললো।
বিছানায় বসে তনন উত্তর করলো,
-“পায়েস খেয়ে নামাজ পড়তে গেছিলাম। এখানে এসে আম্মা অফার করলো, তাই না আর করিনি।”
-“আচ্ছা!”
-“নিউজ আছে একটা!”
কফির মগ ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে বললো তনন।
তাহসী চুল মুছে টাওয়েল রাখতে গেলে তনন তাহসীকে টেনে বিছানার উপর বসালো। মাথার নিচের দিকের চুল মুছে দিতে দিতে বললো,
-“চুল ভেজা এখনো! ঠান্ডা লাগবে না?”
তাহসী টাওয়েল মাথায় পেঁচিয়ে রাখে। কিছুক্ষণ থাকার পর খুলে ফেলে। এতে পানি পরে না আর। চুল না মুছে এমনিতেই যখন চুলের পানি চলে যাচ্ছে, তাহসীর কাছে এটাই বেটার অপশন মনে হয়। আজ ঈদের কারণে সাথে সাথে খুলে ফেলেছে। মাথায় টাওয়েল পেঁচিয়ে রাখতে মন চাচ্ছে না আজ।
তাহসী সেই কথায় গেল না। বললো,
-“কি নিউজ এই দুই আড়াই ঘন্টায়? সকালেও তো কথা বললাম।”
-“নিউজ টা অবশ্য এক দিনের পুরোনো। ভাবলাম সামনাসামনি বলি!”
তাহসী কিছু বলার আগেই শশী দরজায় টোকা দিয়ে বললো,
-“আসবো কি?”
-“আয়।”
তাহসী বললো।
তনন চুল মোছা শেষ করে টাওয়েল বারান্দায় দিয়ে আসতে গেল। শশী তাহসীর কাছে যেয়ে বললো,
-“হাউ রোমান্টিক! তোমাদের নিচে ডাকছে।”
-“চল যাচ্ছি।”
বলে উঠে দাঁড়িয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে তাহসী চিরুনি তুলে নিল।
তনন চলে গেল ওদের রেখে। তননের চলে যাওয়া দেখে শশী আর গেল না। তাহসীর চুল আঁচড়ানো শেষে দু’জন একসাথে নামলো।
__________
সন্ধ্যার সময় তননের বাড়িতে ফিরলো তনু, তাহসী আর তনন। সেলিনা শেখ আগেই চলে আসছিলেন। ওরা ঘোরাঘুরি শেষে এসেছে।
সেলিনা শেখ মাংস আর লুচি রাখলেন ওদের সামনে। তনু ও তননের রুমেই কথা বলছিল। তনন বিছানার উপরেই বসে গেল খাবার নিয়ে। ডাইনিং টেবিল যেহেতু বারান্দায়। শীতের রাতে বারান্দায় খাওয়া হয় না।
তাহসী এসব দেখে বললো,
-“এসবের কি দরকার ছিল মামুনি! বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি।”
সেলিনা শেখ মুচকি হেসে বললেন,
-“পিছনে তাকিয়ে দেখো। কি দরকার!”
তনন মুখের খাবার গিলে বললো,
-“এখন আমাকে খাবারের খোঁটা দেওয়া হচ্ছে!”
তনু, তাহসী ঠোঁট চেপে হাসলো। সেলিনা শেখ ও ওদের সাথে বসে নাস্তা করলেন।
সেলিনা শেখ সবার খাওয়া শেষে প্লেট গুছিয়ে নিয়ে চলে গেলেন। তাহসী ও পিছু পিছু গেল সাহায্য করতে।
রাতে তনু তাহসী, তননের সাথেই গল্প করছিল। তনু প্রচুর খুশি এবার। তনন মোবাইল ফোন নিয়ে এসেছে তার জন্য।
এগারোটার দিকে ঘুমানোর জন্য তনু গুড নাইট বলে চলে গেল ওদের রুম থেকে। তনন যেয়ে দরজা দিয়ে আসলো। তাহসী ও ঘুমানোর জন্য ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হলো।
তনন তাহসীর কাছে এগিয়ে যেয়ে জড়িয়ে ধরলো ওকে। তাহসী অবাক হয়ে তননের পিঠে হাত রেখে বললো,
-“হঠাৎ!”
-“কোথায় হঠাৎ? তিন চারদিন কোনো দেখা যায়।”
তাহসীর কাঁধের উপর মাথা রেখে বললো তনন।
তাহসী ও চুপ থাকলো। কিছুক্ষণ পর তনন ই সরে আসলো। বিছানায় তাহসীকে নিজের পাশে বসিয়ে বললো,
-“সুযোগ-ই পাই না আমি তোমার সাথে কথা বলার!”
তাহসী মুচকি হাসলো। তাহসীর গালে হাত রেখে তনন বললো,
-“খুব হাসি পাচ্ছে না? কিছুদিন পর আমাকে প্রচন্ড মিস করবে, তখন বুঝবে!”
তাহসী তননের হাতের উপর হাত রেখে ভ্রু কুঁচকে বলল,
-“কি বলো এসব!”
-“ইয়েস, জব হয়ে গেছে! সরকারি চাকরি হয়ে গেছে। তাও আইটি অফিসার পদে!”
বিছানার উপর শুয়ে পড়ে বললো তনন।
তাহসী ওর দিকে তাকিয়ে বললো,
-“কঙগ্রেটস!”
-“বাদ দাও!”
-“হোয়াই? খুশি নও? ওই রবির কম্পানি তে চাকরি করতে ভালো লাগে?”
-“আমি কি শখে ঢুকছিলাম? একটু এক্সপেরিয়েন্স হলো। তারপর বেকার বসে থাকার চেয়ে এটাই ভালো ছিল।”
তাহসী ও তননের পাশে শুয়ে পড়লো।
-“তাহলে খুশি না কেন?”
তনন একটু উঁচু হয়ে তাহসীর দিকে ঝুঁকলো। তাহসীর গালে ঠোট স্পর্শ করে বললো,
-“নারায়ণগঞ্জ পোস্টিং!”
-“সিরিয়াসলি?”
একটু মন খারাপ করে বললো তাহসী।
-“হুম।”
দুজনেই নীরবতা পালন করলো কিছুক্ষণ। তনন তাহসীর হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,
-“কি দিয়ে কি করবো বুঝছি না কিছু! তোমার সাথে থাকতে একটুও ভালো লাগবে না।”
তাহসী অন্য হাত দিয়ে তননের চুল এলোমেলো করে দিল।
-” কাল জেনেছো এইটা?”
-“হ্যা, মেইল আসলো। ভাবলাম সামনাসামনি বলি। তাই আর কাল জানাইনি।”
-“তো কি করতে চাচ্ছো এখন?”
-“বুঝছি না। একবার মনে হচ্ছে বিসিএস প্রিপারেশন বাদ দিয়ে এদিকে চলে আসি। আবার মনে হচ্ছে। ঢাকায় হলে ভালো হতো। ওখানে কি করবো একা একা!”
তনন তাহসীর হাতের পিঠে চুমু খেয়ে পুনরায় বললো,
-“তুমি কি বলো?”
-“তোমার ইচ্ছে তনন। মামুনি কি বলছে?”
-“তোমার মতোই আমার উপর ছেড়ে দিছে।”
-“তাহলে আল্লাহ তায়ালার কাছে নামাজ পড়ে সাহায্য চাও। তোমার ইচ্ছে যেখানে,সেখানে করো।”
তনন মৌন রইলো। তাহসী তননকে পর্যবেক্ষণ করে বলল,
-“এখন চাচ্ছো কি? বিসিএস নাকি এই জব?”
-“জব যেহেতু হয়ে গেছে তাই বিসিএস আর দিতে চাচ্ছি না। ইঞ্জিনিয়ারিং ই তো উদ্দেশ্য ছিল আমার। কিন্তু আমি ভাবিনি ঢাকার বাইরেও হতে পারে। ব্যাপারটা মাথাতেই আসেনি।”
-“জায়গা নিয়ে সমস্যা?”
-“হুম।”
তাহসীর চোখের দিকে তাকিয়ে উত্তর করলো তনন।
-“তাহলে জয়েন করে ফেলো। আপাতত ছয়মাস কন্টিনিউ করে ঢাকায় আসার চেষ্টা করো।”
-“হু। এমনটাই ভাবছিলাম। মিস করবো অনেক। এভাবে থাকা যায়?”
তাহসীর গলায় মুখ গুজে বললো তনন।
প্রথমবারের মতো তাহসী ও ফিসফিস করে বললো,
-“আমিও মিস করবো।”
-“সত্যি?”
তনন মাথা তুলে তাহসীর দিকে তাকালো।
-“তো? করবো না? ওয়েট! আমি একা থাকবো বাসায়? নাকি আবার আঁখির ওখানে?”
-“তুমি একা থাকতে পারবে? আর আঁখির ওখানে থাকলে আমি মিট করবো কিভাবে? ছুটি পেলেই টাকা চলে যাবো।”
তনন ঘনিষ্ঠ হতে চাইলো।
তাহসী তননের বাহু ধরে বাঁধা দিয়ে বললো,
-“তাহলে?”
-“জানিনা। এত ভাবতে ভালো লাগছে না।”
-“বাচ্চাদের মতো কথা বলছো তুমি তনন!”
-“যখন কাছে থাকবো না, তখন বুঝো!”
-“নিজে তো ঠিক করে নিলে! আমি একা থাকবো ফ্ল্যাটে?”
-“বলছি তো জানিনা। আর আমি কি ঠিক করেছি? নারায়ণগঞ্জ কেমন জায়গা সেইটাই তো জানা নেই।”
-“হু। সবারই সমস্যা!”
-“তা তো বটেই।”
-“এখন যেইটা করছো, বাদ দিয়েছো?”
-“ঢাকা যাই আগে। কথা বলি এদের সাথে। তারপর। তবে কিছুদিন গ্রামে থাকছি। আমার ফ্রেন্ড কে জানিয়েছি এই ব্যাপারে।”
-“ভালো হলো।”
তনন তাহসীর ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দিল। তাহসী এবার আর বাঁধা দিল না। সে-ও সায় জানালো।
————————— সমাপ্ত ————————-