#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_৪২
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)
তাহসী পরের দিনের বাসের টিকিট কেটে রওনা দিল খুলনার উদ্দেশ্যে। সেলিনা শেখ ও বললেন ঘুরে আসতে। তাহসী ও খুশি হয়ে রাজি হয়ে গেল।
তবে তাহসী কাউকে বলেনি যাওয়ার কথা।
গ্রামের বাড়িতে পৌঁছাতেই বাবা দিলেন এক ধমক। সে কেন একা একা আসতে গেছে। আগের থেকে জানালে বাইক নিয়ে যেতেন।
নাতাশা রহমান তৌহিদ হোসেন এর গলা শুনে বাইরে এসে তাহসী কে দেখে অনেক খুশি হলেন। তৌহিদ হোসেন আর কিছু না বলে ভিতরে চলে গেলেন। তাহসী হাসিমুখে মায়ের সাথে ভিতরে গেল।
তখন দুপুর তিনটা বাজে। সবাই নিজেদের ঘরে রেস্ট নিচ্ছে। নাতাশা রহমান তাহসী কে ফ্রেশ হয়ে আসতে বললেন। এরপর তাহসী ফ্রেশ হয়ে আসলে নাতাশা রহমান খাবার দিলেন।
-“তনন আসলো না?”
তাহসীর পাশের চেয়ারে বসে প্রশ্ন করলেন নাতাশা রহমান।
-“তননের এক্সাম সামনে। আর মামুনি গেছে। তাই সুযোগ পেয়ে চলে আসলাম।”
খেতে খেতে উত্তর দিল তাহসী।
-“আলাদা বাসা নিয়েছিস নাহিদ বললো। তোর বাবা শুনে রাগ করেছে।”
খাওয়া থামিয়ে তাহসী মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“আমি কোনদিকে যাবো বলো?”
-“এসব এখন থাক। খেয়ে নে। পরে আর কিছু বলিনি। খেয়ে রুমে যেয়ে রেস্ট কর।”
তাহসী কিছু না বলে খাওয়া শেষ করে রুমে চলে আসলো। ফোন দিয়ে তননকে ফোন দিল। আসার সময় তনন অলরেডি দুইবার ফোন দিয়েছে।
তনন ফোন ধরেই বললো,
-“পৌঁছিয়েছো?”
-“হ্যা, বেশ আগেই। লাঞ্চ করে আসলাম।”
-“ভালো করেছো। মিস করবো।”
শেষের কথাটা ফিসফিস করে বললো তনন।
তাহসী লাজুক হাসলো। কিছু না বলে চুপ থাকলো। তনন পুনরায় বললো,
-“রেস্ট করো। রাতে কথা হবে।”
-“টেক কেয়ার। আল্লাহ হাফেজ।”
-“আল্লাহ হাফেজ।”
তাহসী শুয়ে শুয়ে তননের কথা ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুমিয়ে পড়লো।
কিন্তু ঘুম বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। আধঘন্টার মাঝেই ভেঙ্গে গেল শব্দে।
-“এটা আমি ঠিক দেখছি! নাঈম!”
শশী অবাক হয়ে বলে উঠলো। শেষ টাই নাঈমের নাম ধরে উচ্চস্বরে ডাকলো।
নাঈম প্রায় ছুটে এসে বললো,
-“কি হয়েছে?”
সামনের দিকে চোখ যেতেই পুনরায় বললো,
-“আপু কখন আসলো!”
তাহসী চোখ ডলে উঠে বসলো। হাই তুলে বললো,
-“এক ঘন্টা আগে। ভাবলাম বিকালেই কথা বলি একবারে। ঘুমিয়ে পড়েছিলাম দেখছি।”
শশী তাহসীর পাশে বসে বললো,
-“আমি তোমার রুমের দরজা খোলা দেখে এসেছি ভিতরে। ইশ্ ঘুমটা ভেঙ্গে দিলাম। শুয়ে পড়ো আবার। তুমি তো আছোই, পরে কথা বলতে পারবো।”
-“না,ঘুমাবো না। থাক এখানে।”
শশীর গাল টেনে দিল তাহসী।
নাঈম চলে গেল রুম থেকে। তাহসী,শশীর কথা চলতে থাকলো।
-“বেশ মোটা হয়ে গেছিস দেখছি।”
-“বাজে লাগছে দেখতে তাই না?”
মুখ শুকনো করে বললো শশী।
-“না, তবে অন্যরকম লাগছে এই যা। অন্যরকম সুন্দর আরকি।”
-“এখনো সনো করেই দেখতে পারলাম না!”
দুঃখ করে বললো শশী।
-“তাহলে কাল আমার সাথে চল। দেখিয়ে আনবো।”
-“সিরিয়াসলি আপু?”
-“হ্যা। চিন্তা করতে হবে না। মেনেজ করে নিবো।”
-“মেজো চাচী শুধু বাজে বাজে কথা বলে।”
-“ওসব কানে নেওয়া যাবে না।”
-“স্কুলের ফ্রেন্ড রা মিশে না।”
মনখারাপ করে বললো শশী।
তাহসী কঠিন কথা বলতে যেয়েও থেমে গেল। এখন আর কি দরকার মেয়েটার মন খারাপ বাড়িয়ে দেওয়া। তাহসী বললো,
-“চল বাইরে যাই।”
শশী হাসি মুখ করে তাহসীর পিছু পিছু গেল।
_______________
সন্ধ্যার পরে মাগরিবের নামাজ পড়ে নাঈম পড়তে বসেছে। শশী রুমে ছিল না। হঠাৎ রুমে নাঈমের কাছে যেয়ে বিছানায় বসলো। বিছানার পাশেই নাঈমের রিডিং টেবিল। নাঈম পড়া থামিয়ে শশীর দিকে তাকালো। বললো,
-“খুশি খুশি লাগছে যে!”
-“আপু বলেছে কাল ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে।”
-“মানে আপু একদিন বাড়িতে এসেছে আর তাকে নিয়ে যাওয়া লাগবে? কেন আমি নিয়ে যেতে পারি না?”
নাঈম ভ্রু কুঁচকে বললো।
শশীর মন খারাপ হলো এমন ব্যবহারে। আর মন খারাপ হবে নাই বা কার!
তবুও মুখ ফুটে শশী উত্তর করলো,
-“তোমার ব্যস্ততায় তো শেষ হয় না। তুমি তো কাল ই চলে যাবে। বাড়ি থাকো কয়দিন?আমি বলিনি এর আগে?”
-“কেন! আমি তোমার থেকে শুনিনি যে আমি বাইরে থেকে পড়বো কি-না। এখন কেন বলো এমন। এর আগে বলেছিলে তখন নিয়ে যাওয়া যায়? সবাই কত মাস জানতো তখন? আর টাকা লাগে তুমি বুঝো না?”
শশীর হাসি মুখ শুকনো হয়ে গেল। ছলছল করা চোখ নিচের দিকে নামিয়ে নিল। কোনোরকমে বললো,
-“স্যরি।”
-“আর দুইমাস আছে এডমিশন এর। অন্তত কোথাও চান্স পেলে তখন একটা টিউশনি তো করতে পারবো। বাবার কাছে তো হাত পেতে চাইতে পারিনা।”
শশী চুপ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো। নাঈম বই বন্ধ করে বারান্দায় যেয়ে দাঁড়ালো।
নিচে তাকিয়ে দেখলো তাহসী,মিথিলা দোলনায় বসে আছে। পিছন থেকে নাহিদ দোল দিচ্ছে। বাড়ি তৈরির সময় তাদের বাড়ির একপাশে দোলনা বানিয়ে নিয়েছিল তাহসী।
নাঈম দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমের ভিতরে এসে দরজা চাপিয়ে দিল। ঠান্ডা বাতাস আসছে। শশীর পাশে বসে চুলের গোড়ায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
-“আচ্ছা বেশ। কাল যাবো। এভাবে বলার জন্য স্যরি। বাবা আমাকে মাসে মাসে বেশি করেই টাকা দেয়। আমার খরচ বাদ দিয়ে বেচে থাকে। গুছিয়ে রেখেছিলাম। ভেবেছিলাম এবার নিয়ে যাবো, কিন্তু কথাটা কিভাবে তুলবো সবার সামনে বুঝতে পারিনি। আপু যদি কাল কথাটা তোলে, ভালোই হবে।”
শশী মুখ না ঘুরিয়ে বললো,
-“কথাটা ভালোভাবেও বলা যেত।”
-“আপু বললো রাজি হয়ে গেলে এইজন্য রাগ লাগছিল। আর আমাকে আবার বলতে পারতে এইটা। স্যরি। যাও নিচে যাও। দেখো দোলনায় সব।”
-“ওখান থেকেই এসেছি। ভালো লাগছে না তাই চলে এসেছি।”
-“ভালো লাগছে না কেন? এখানে আসার পর তো হাসিখুশি দেখলাম।”
-“আমি কি দোলনায় চড়তে পারবো? চলে এসেছি তাই।”
-“আচ্ছা। তাহলে শুয়ে রেস্ট করো। আমি পড়তে বসলাম।”
-“আচ্ছা।”
______________
রাত এগারোটার দিকে তননের কল আসলো। তাহসী তখনও ভাই বোনের সাথে গল্প করছে। তননের কল দেখে শশী বলে উঠলো,
-“আহা! ভাইয়া তোমাকে মিস করছে আপু।”
তাহসী চোখ রাঙিয়ে কল রিসিভ করলো। পরে কথা বলবে বলে রেখে দিল। তনন এত তাড়াতাড়ি ঘুমাবে না। পরে কথা বলা যাবে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই শশী শুয়ে পড়লো বিছানায়। ওরা সবাই নাঈমের রুমেই ছিল।
-“তোমরা গল্প করো। আমি শুনি। ক্লান্ত লাগছে, শুয়ে পড়লাম।”
-” সমস্যা নেই। শুয়ে থাকো।”
মিথিলা বলে উঠলো।
তাহসী হাই তুলতে তুলতে বললো,
-“ঘুম পাচ্ছে। আমিও যাই।”
-“আপু থাকো আমার সমস্যা হচ্ছে না।”
শশী বলে উঠলো।
-“আরে তোর জন্য না। আসলেই ঘুম পাচ্ছে।”
একে একে ওরা চলে গেলে নাঈম দরজা আটকে আসলো।
-“ঘুম পেলে ঘুমিয়ে পড়ো শশী। আমার জন্য জাগবে না। শেষে তোমার ঘুম আসে না। তখন কষ্ট টা তোমার ই হয়।”
নাঈম বাড়িতে থাকলে রাত জেগে পড়ে। এদিকে শশী একসাথে ঘুমানোর জন্য জেগে থাকে নাঈমের অপেক্ষায়। শেষে যেয়ে তার ঘুমের ভাব কেটে যেয়ে ঘুম আসতে চাই না। তখন এপাশ ওপাশ করা লাগে।
শশী বললো,
-“কল ই তো চলে যাবে। কাল থেকে ঘুমিয়ে পড়বো।”
নাঈম বই গুছিয়ে রাখলো। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে লাইট অফ করে দিল। শশী বললো,
-“কি হলো?”
-“ঘুমাবো।”
শশীর পাশে শুয়ে বললো নাঈম।
শশী নাঈমের গলা জড়িয়ে ধরলো। নাঈম শশীর গাল টিপে বললো,
-“ভালোবাসি।”
-“আমিও।”
-“কাল তো চলেই যাবো। তাই আজ বরং তোমার দিকটা ভাবি।”
শশী অনেক খুশি হলো নাঈমের কাজে। বাচ্চা নিয়ে গল্প করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে পড়লো। নাঈমের তখনও ঘুম আসেনি। এখন পড়তে বসতে চাইলে পড়তে পারে। তবুও সে আর উঠলো না। শশীকে জড়িয়ে নিয়ে শুয়ে থাকলো।
চলবে ইনশাআল্লাহ;
#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_৪৩
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)
তাহসী বিছানায় যেয়ে শুয়ে পড়ে কল দিল তননের নাম্বারে। তনন প্রায় সাথে সাথেই রিসিভ করলো।
-“কেমন যাচ্ছে সময়?”
তনন প্রশ্ন করলো।
-“আলহামদুলিল্লাহ। তোমার?”
-“ভালো। তবে মিস করছি তোমাকে।”
তাহসী ও মিস করছে তননকে। এই কয়দিন আলাদা রুটিন হয়ে গেছিল তননের সাথে। তবে মুখে বললো না। লজ্জা চেপে কথা ঘোরানোর জন্য বললো,
-“খেয়েছো?”
-“হুম। তুমি?”
-“আমিও।”
-“তখন কি করছিলে?”
-“নাঈমের রুমে ছিলাম। গল্প করছিলাম।”
দুজনে মিলে আরো বকবক করলো কিছুক্ষণ ধরে। তনন গুড নাইট বলে রেখে দিল।
তাহসী ঘুমানোর চেষ্টা করলো। তননের সাথে ঘুমাতে ঘুমাতে এতদিন অভ্যেস হয়ে গেছে একটা।
__________
পরেরদিন টা অনেক ভালো কাটলো তাহসীর। এবার বাড়ি এসে আর যেতে মন চাচ্ছে না।
সকালে খাওয়ার পর শশীকে ডাক্তার দেখানোর কথা তুললো তাহসী। তৌহিদ হোসেন অনুমতি দিলেন। কথা হলো তাহসী,নাঈম আর শশী যাবে। তৌহিদ হোসেন যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু তার হঠাৎ একটা কাজ পড়ে গেছে। তাহসী বললো কারো যাওয়া লাগবে না। আর শশীর বাবা তো চাকরিতে ব্যস্ত। তৌহিদ হোসেন একটা অটো ঠিক করে দিলেন। এই অটো তে করে ওরা খুলনা যাবে,আবার ফিরেও আসবে।
আল্ট্রাসনো করার সময় শশী ভয়ে ভয়ে তাহসীর হাত চেপে ধরলো। তাহসী আশ্বস্ত করে বললো,
-“ভয় নেই। ভিতরে যা।”
নাঈম তখন ওদের জন্য হালকা নাস্তা আনতে গেছে। শশী আল্লাহ তায়ালার নাম নিয়ে ভিতরে গেল।
সবশেষ হলে নাঈম বললো,
-“রক্তের রিপোর্ট তো বিকালে দিতে চেয়েছে। আমি বরং নিয়ে নিবো। এখন বাসায় চলো। ওয়েট করে কাজ নেই। তারপর সব রিপোর্ট একবারে ডাক্তারকে দেখিয়ে নিবো।”
তাহসী সায় দিল। ডাক্তার বলেছে মেয়ে হবে। সেই থেকে শশীর খুশি আর ধরছে না। নাঈম আর শশী মিলে অনেক আগেই ছেলে মেয়ের নাম ঠিক করে রেখেছে। তাহসী বললো,
-“তাহলে তুই মেসে চলে যা। আমরা বাড়ি যাচ্ছি।”
-“তোমাদের বাড়ি দিয়ে আসি।”
-“তার কোনো দরকার নেই। শশীকে ধরে নিয়ে যাবো। নো টেনশন।”
শশী ও আস্তে করে বললো,
-“তুমি থাকো। বারবার আশা যাওয়া কষ্ট হবে।”
নাঈম কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
-“আচ্ছা। সাবধানে যেও আর সাবধানে থেকো। নিজের যত্ন……”
আরো বেশ কথা বললো দুজনে। তাহসী দূরে সরে যেয়ে দাঁড়ানোর জন্য শুনতে পেল না। মোট কথা কিছু সময়ের জন্য ওদের আলাদা ছেড়ে দিল।
বাড়ি এসেই শশীর সময় যাচ্ছে না। নাঈম থাকলে নাঈমের পিছু পিছু ঘুরে বেড়াতো। নতুন কলেজে ওঠার কারণে ক্লাস করছে না। ভালোই হয়েছে তার এদিক দিয়ে। এখন মিস গেলে তেমন কোনো সমস্যা হবে না।
তাহসী দুপুরে খাওয়ার পর শুয়ে ছিল নিজের রুমে। ঢাকার তুলনায় এখানে বেশ ভালোই শীত। কম্বলের মধ্যে শুয়ে থাকতে ভালো লাগে তাহসীর।
শশী এসে তাহসীর পাশে বসলো। তাহসী মুখ ঘুরিয়ে শশীর দিকে তাকালো। শশী বললো,
-“আপু তেঁতুল খাবে? তোমার না পছন্দের। তাই নিয়ে আসলাম।”
তাহসী উঠে বসলো। শশীর হাতে কাঁচা তেঁতুল বেশ অনেক গুলো।
-“কোথায় পেয়েছিস?”
-“নাঈম দিয়ে গেছে ওর বন্ধুর বাড়ি থেকে এনে।”
-“তাহলে নিজে না খেয়ে এখানে নিয়ে এসেছিস যে?”
-“আমি কি এতো খেতে পারবো? তুমি নাও।”
-“কয়েকদিন মিলে শেষ করবি।”
-“উফ, আপু তুমি নাও তো। আরো কিছু আছে। একা একা খেতে ভালো লাগছে না। এর আগে তোমার সাথেই তো খেতাম।”
তাহসী হেসে তেঁতুল হাতে নিল। বললো,
-“পোড়াতে পারলে ভালো হতো।”
-“চলো। দুপুরে মাটির চুলাতে না রান্না হলো! এখনো আগুন আছে মনে হয়।”
মিথিলা রুমে প্রবেশ করতে করতে বললো,
-“দু’জনের কোথায় যাওয়া হচ্ছে?”
শশী উত্তর দিল,
-“তেঁতুল পুড়াতে যাবো ভাবী। চাইলে তুমিও আসতে পারো।”
তাহসী আর শশী নিচে নেমে গেল। মিথিলাও তাদের পিছু পিছু চললো।
🍁🍁🍁
মোট তিনদিন গ্রামে থেকে তাহসী ঢাকায় চলে আসলো। বাসায় যেয়ে তননের সাথে দেখা হলো না। তনুর থেকে জানতে পারলো তনন ক্লাসে গেছে। এখনো আসেনি। সেলিনা শেখ দুইবার কল দিয়েছে, রিসিভ করেনি।
তাহসী গোসল করে নিল। সকালে রওনা দেওয়ার কারণে দুপুরের মধ্যেই পৌঁছে গেছে। মিথিলা আর নাহিদ ও ঢাকায় আসলো আজ। তাহসী ওদের সাথেই এসেছে।
তাহসী গোসল করে বের হতেই তননের দেখান পেল। তাহসীকে দেখে হেসে তনন ওয়াশরুমে চলে গেল। হাতে টাওয়েল দেখে তাহসী বুঝলো তনন ও গোসল করবে। একটা ওয়াশরুম হওয়ার কারণে মোটামুটি অসুবিধায় হয় বাসায় কেউ আসলে। তাহসী নামাজ পড়ে নিল।
সেলিনা শেখ ওদের খাবার গুছিয়ে দিলেন। তননকে বললেন,
-“ফোন ধরলি না কেন?”
-“ক্লাসে ছিলাম আম্মু। পরে দেখে ভাবলাম একবারে বাসায় যেয়েই কথা বলি।”
তনু বললো,
-“ভাবী তোমাকে মিস করেছি। তুমি থাকলে ঘুরতে বের হতে পারতাম। ভাইয়া কে আম্মু বের হতে দেয় না। শুধু একদিন গিয়েছি।”
সেলিনা শেখ তনুর দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙালেন। তাহসী কতদিন পর বাড়িতে যেতে পেরেছিল, তনু এভাবে বলাটা খারাপ দেখায়।
তাহসী মুখের ভাত শেষ করে বললো,
-“আজ নিয়ে যাবো তোমাকে। বলো কোথায় যেতে চাও।”
সেলিনা শেখ বলে উঠলেন ,
-“ওর কথায় কান দিও না তাহসী।”
এরপর তনুর দিকে তাকিয়ে ধমকের সুরে বললেন,
-“তাহসী আজ এতো জার্নি করে আসলো। আর তুই!”
-“মামুনি ওকে রাগ করো না। আমার জার্নিতে কোনো সমস্যা হয় না।আর বের হবো।”
সেলিনা শেখ কিছু বললেন না আর। তনু হাসলো তাহসীর দিকে তাকিয়ে।
বিকালের দিকে তাহসী আর তনু ই বের হলো বাইরে। সেলিনা শেখ কে তাহসী বললো যাওয়ার জন্য কিন্তু তিনি গেলেন না। তননকেও যেতে দিলেন না।
তনু প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে চাইলো। তাহসী ওকে নিয়ে টিএসসির ওখানে গেল। এরপর জাদুঘরে নিয়ে গেল। সবশেষে রমনার পার্ক দেখে বাসায় ফিরলো ওরা।
তাহসী সর্বক্ষণ তনুর হাত ধরে রেখেছিল।
রাতে সেলিনা শেখ তাহসী, তননের সামনে বললেন,
-“তনন টিকিট কেটে ফেল। আমাদের এবার যাওয়া উচিত।”
তনুর মন খারাপ হয়ে গেল এটা শুনে। তবে যেতে তো হবে। তাহসী বললো,
-“এত তাড়াতাড়ি ছাড়ছি না।”
-“বাড়ি একা ফেলে আসছি অনেকদিন হলো। আবার এসে থাকবো।”
-“আরও দুই একদিন থাকতে হবে।”
তনন ও সায় জানালো তাহসীর কথায়।
-“আর দুইদিন থাকো আম্মু।”
তনু ও ভয়ে ভয়ে বললো,
-“দুইটা দিন ই তো। কলেজ শুরু হলে কি আবার আসতে পারবো?”
সেলিনা শেখ চোখ রাঙিয়ে তাকালেন ওর দিকে। কিছুক্ষণ পর বললেন,
-“দুই দিনের বেশি না। আর কেউ জোর করতে পারবে না কিন্তু।”
তনু মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“থ্যাঙ্ক ইউ আম্মু।”
ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলে সেলিনা শেখ বললেন,
-“তনন তোরা ইজ রুমে থাক। আমরা এখানে থাকি।”
তননের আগেই তাহসী উত্তর দিল,
-“আপনারা ভিতরে থাকেন। আমার সমস্যা হবে না।”
এতদিন ওনারা বেড রুমেই ঘুমাচ্ছিলেন। তনন ডাইনাং রুমে ঘুমাতো। তাহসী আসার কারণে নতুন করে কথা উঠেছে এটা ভালো মতোই বুঝলো তাহসী।
সেলিনা শেখ রাজি হলেন না। তাহসী ও শুনলো না তার কথা।
-“মামুনি খাট প্রায় সমান ই। আর দুই রাত কোনো ব্যাপার হলো? আপনারা রুমে ঘুমান তো।”
শেষে তাহসীর কথা মেনে নিল সেলিনা শেখ।
চলবে ইনশাআল্লাহ;