তোমাতে বিলীন হবো পর্ব-৪০+৪১

0
516

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_৪০
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

তনন নিজেকে শান্ত করে ফিরে আসলো। তাহসীকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বললো,
-“পানি খেয়ে পড়াতে মনোযোগ দাও। এভাবে বলার জন্য স্যরি। আমি বুঝতে পেরেছি কেন বলেছো।”

তাহসী চুপ করে পানি পান করলো। তনন বিছানার উপর বসে পা সোজা করে রেখে বললো,
-“তোমার কথাটাই হয়তো ঠিক তাহসী। এখানে এসে সময় নষ্ট হচ্ছে বা হবে। তবে তখন আমি অন্যকিছু ভেবেছিলাম। থাক,বাদ দাও।”

-“ওহ্।”

কিছুক্ষণ বাদেই তনন বলে উঠলো,
-“চলো খেতে যাই। পড়া হয়েছে?”

তাহসী নড়েচড়ে বসলো। সে এতক্ষণ ভেবেই যাচ্ছে। পড়া আর হয়নি।‌ তননের কথা তে উঠে বসলো। খাবার নিয়ে এসে তাহসীর পড়ার টেবিলেই রাখলো। তাহসীর বইগুলো সরিয়ে রাখলো এক পাশে। তননের পড়ার চেয়ার টেনে এনে তনন কে ডাকলো। খাবারের প্যাকেট থেকে প্লেটে ঢেলে দিল তাহসী।
-“আমার পছন্দের বিরিয়ানি আনার জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু তোমার টেবিলের উপর অন্য একটা প্যাকেট ছিল…..”

তাহসী কথা শেষ করার আগেই তনন বলে উঠলো,
-“দেখেছো?”

-“না। না জিজ্ঞেস করে কারো জিনিস দেখার বাজে স্বভাব আমার নেই।”

তনন এগিয়ে এসে ঠোঁট কামড়ে বললো,
-“আমাকে মিন করলে?”

-“তোমাকে মানে? তুমি তো কিছু করোনি এমন।”

-“এইযে তোমার ডায়েরি দেখেছি।”

-“ওহ্। বইগুলো পেয়ে অনেক অনেক খুশি হয়েছি তনন। আর আমি এইটা মিন করিনি তো। ইভেন মনেই ছিল না। কিছু সামনে পেলে অনেকেই না বলে অন্য কারো জিনিস খুলে দেখে,তাই বললাম এই স্বভাব আমার নেই।”

-“ওহ্, আচ্ছা। খুবই ভালো ব্যাপার। তবে দেখাচ্ছি ওটা খাওয়ার পরে।”
চেয়ারে বসে বললো তনন।

তাহসী ও ঠিক আছে বলে খাওয়া শুরু করলো।

খাওয়া শেষে তাহসীর পিছু পিছু তনন-ও গেল। দুজনেই নিজেদের প্লেট ধুয়ে রাখলো। তাহসী ও খুশি হলো, তনন তার উপর কখনোই কাজ চাপিয়ে দেয় না। ফ্রেন্ড দের সাথে থাকতে এসব কাজ বুয়া এসে করে দিয়ে যেত।

তননের আরো ভালো ভালো দিক আছে। সে সিগারেট খায় না, খারাপ বন্ধুদের সাথে মিশে না, মেয়েদের সাথে যতটুকু দরকার তার বেশি মিশে না। এসবই রুমে এসে ভাবছিল তাহসী মনে মনে।
তনন তাকে স্পর্শ করতেই ভাবনার জগত থেকে বেড়িয়ে আসলো তাহসী।

-“কি হয়েছে?”

-“এই নাও খুলো এবার প্যাকেট টা।”

তাহসী সময় নিয়ে খুললো। বের করে দেখে আসমানী রঙের নেটের শাড়ি একটা, সাথে আর একটা হালকা গোলাপি রঙের জামদানি শাড়ি। সাথে মেলানো ক্রপ টপ, ছায়া-ও আছে।

তাহসী অবাক হয়ে গেছে। শাড়ি দেখতে দেখতে তাহসী বিস্ময় নিয়ে বললো,
-“তোমার চয়েস এত সুন্দর। আগে জানতাম না। কিন্তু আমি তো তেমন শাড়ি ই পরি না।”

-“প্রতিদিন পরতে বলছে কে? মাঝে মাঝে পরো। রাতের বেলা।”
বলেই তাহসীর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিল তনন।

তাহসী লজ্জায় মাথা নত করলো। তনন সেদিকে তাকিয়ে গাল টিপে দিয়ে বললো,
-“লজ্জা না পেয়ে এখন পরে আসেন।”

-“এখন!”

-“তো? এই আকাশী রঙের টা পরো। যাও।”

-“ব্লাউজ আছে আমার এই রঙের? না! ক্রপ টপ একটুও ভালো লাগে না। আমি পরি না এইগুলো।”

-“আমি কি করবো। শাড়ি তো পচ্ছন্দ করেছি। বাকিগুলো শপার দিয়ে দিছে। একদিন ই তো। পরে বানিয়ে নিও।”

-“ওকে।রুম থেকে বের হও। ওয়াশরুমে পারবো না।”

-“চোখ বুজে আছি।”

-“না,যাও। বারান্দায় অথবা ডাইনিং এ।”

তনন এক পলক তাকিয়ে বিড়বিড় করতে করতে চলে গেল। তাহসী ঠিক শুনলো। বলতে বলতে গেল,
-“আমি দেখিনি কিছু মনে হয়!”

তাহসী পাত্তা দিল না। এসব কথা না বাড়ানোই ভালো। কোনোরকমে শাড়ি পরে ফেললো ধীরে ধীরে। এমনিতে পারে না শাড়ি পরতে। শেষ যেদিন শাড়ি পরেছে, সেলিনা শেখ শাড়ি পরিয়ে দিয়েছিল তাও ছয়,সাত মাস আগে। তাহসী কখনো একা একা শাড়ি পরে দেখেনি। সেলিনা শেখ কে যেভাবে দেখছিল এখন ওইরকম করার চেষ্টা করছে। কিন্তু পিছলা হওয়াতে বারবার কুঁচি এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত চারবারের সময় ঠিক হলো। আঁচল ঠিক করে তাহসী গলা উঁচিয়ে বললো,
-“এবার আসতে পারো।”

তনন বারান্দা থেকে এগিয়ে আসলো। তাহসী তার ছোট আয়না বের করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে শাড়ি দেখতে ব্যস্ত।তনন এগিয়ে এসে ফোনের ক্যামেরা অন করে সেলফি স্টাইল করে নিয়ে তাহসীর দিকে ধরলো। বললো,
-“নাও এবার ঠিকমতো দেখো।”

তাহসী হালকা চোখ তুলে ঠিকমতো দেখে নিল। তনন তাহসীকে বারান্দায় যেয়ে দাঁড়াতে বলে নতুন শার্ট, প্যান্ট গায়ে জড়িয়ে নিল। তাহসী এই সেট ভার্সিটি শেষে কিনে এনেছিল।

তনন বারান্দায় যেয়ে তাহসীর পিছনে দাঁড়াল। আড়চোখে তননকে দেখে নিল। তনন তাহলে ড্রেস ম্যাচিং করে এই রঙের শাড়ি এনেছে। জিন্সের প্যান্টের সাথে আসমানী রঙের শার্ট টা দারুন মানিয়েছে তননের গায়ে। শার্টের হাতা অর্ধেক গুটিয়ে রাখার কারণে তননকে দেখতে আরো সুন্দর লাগছে।

তাহসী মুচকি হেসে চোখ সরিয়ে নিল। একবার মনে হয় দুজনে একসাথে থেকে ভালোই করছে। আবার মনে হয় স্টাডি তে খারাপ প্রভাব ফেলছে।
তনন তাহসীর পিঠ ঘেষে দাঁড়ালো। পরপর ক্লিক করে কয়েকটা সেলফি তুলে নিল।
তাহসী চোখ উঁচিয়ে তননের দিকে তাকালো।
-“এটা কি হলো! আমাকে বলবা তো পিক তুলবে।”

তনন ফটো গুলো চেক করতে করতে হেসে বলল,
-“এমন করে হাসি দিতা আবার?”

-“ফাজিল।”
তাহসী মিটমিট করে গোপনে হাসছে এটা ছবি তে ঠিক বোঝা যাচ্ছে।

এই সুন্দর মুহূর্ত তনন আরো কয়েকটা সেলফি তে বন্দি করে নিল। এরপর বারান্দার ফ্লোরে বসে পড়লো। তাহসী শাড়ি সামলিয়ে পাশে বসলো। তনন ফটো গুলো দেখতে ব্যস্ত।
ফটো দেখতে দেখতে তনন তাহসীর দিকে না তাকিয়েই বলল,
-“শাড়ি পরা কবে শেখা হলো?”

-“আজ ফার্স্ট ট্রাই করলাম।”

-“ভালোই হয়েছে। সুন্দর লাগছে।”

তাহসী মৌন রইলো। তনন ফটো গুলো এডিট করে ঠিক করতে ব্যস্ত। তাহসী বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। তনন এক হাত দিয়ে তাহসীকে জড়িয়ে ধরে আরো কাছে নিয়ে আসলো।
-“পরিবেশ টা সুন্দর না?”
তনন বলে উঠলো।

-“সুন্দর।”

তনন একটা মুভি চালু করলো। তাহসী উশখুশ করে বললো,
-“এখন মুভি দেখবে?”

তনন তাহসীর দিকে তাকিয়ে বললো,
-“হ্যা। কোনো সমস্যা?”

-“না, তবে এখানে তো অন্ধকারের মতোই। রুমে চলো।”

-“আচ্ছা।”

তনন তাহসীর হাতে ফোন দিয়ে ওকে কোলে তুলতে গেলে তাহসী বাঁধা দিল। দূরে সরে যেয়ে বললো,
-“পায়ের উপর চাপ পড়বে না? চুপচাপ হাঁট।”

অগত্যা তনন তাহসীকে না নিয়ে একাই বিছানার উপর যেয়ে বসলো। তাহসী পাশে বসে মিনমিন করে বললো,
-“শাড়ি পরে কতক্ষণ থাকবো আর?”

-“থাকো কিছুক্ষণ।”

মুভি কখনো দেখা হয় না তাহসীর। এই ব্যাপারে আগ্রহ-ও নেই। মুভি দেখার চেয়ে বই পড়তেই বেশি ভালো লাগে। অনেক বছর পর একটা মুভি দেখতে বসলো‌। তাও আবার হরর। তনন আবার এসব দেখে।

-“হরর?”

-“হু। কেন? রোমা’ন্টিক চাই?”
ভ্রু উঁচিয়ে জানতে চাইলো তনন।

-“তোমার মাথায় এসব ঘোরে। আমার মাথায় না। ভয় লাগে।”

-“আমি তো আছি পাশে। নাকি?”

-“আমি পারছি না এসব দেখতে।”

-“তাহলে কি দেখবে দাও।”
ফোন এগিয়ে দিয়ে বললো তনন।

-“আমার আইডিয়া নেই।”

-“রোমা’ন্টিক ই দিতাম!”

-“জি না।”

দুজনে পাশাপাশি হেলান দিয়ে বসে আছে। তনন তাহসীকে ছেড়ে শরীর এলিয়ে দিয়ে বললো,
-“যেকোনো একটা চয়েস করো।”

-“না, অন্যকিছু।”

তনন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে অনেক খুঁজে একটা মুভি দিয়ে বললো,
-“দেখো, মিস্ট্রি টাইপ। এই টাইপের বই পড় না তুমি?”

-“এটাও খেয়াল করেছো?”
অবাক হয়ে বললো তাহসী।

-“করেছি।”

সেই নয়টার সময় মুভি দেখতে বসেছিল। শেষ হতে হতে রাত বারোটার বেশি বেজে গেল। তাহসী ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,
-“দেখেছো কত সময় চলে গেল! কাল সকালে আর ওঠা হবে না।”

-“ওতো টাও সময় যায়নি।”
ফোন বন্ধ করে একপাশে রেখে তাহসীকে নিজের উপর নিয়ে আসলো তনন।

-“কি করছো?”

তাহসীর ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে তনন বললো,
-“চুপ। কোনো কথা নয়।”

তননের উদ্দেশ্য ভালো করেই বুঝলো তাহসী। চুপ করে গেল‌। পেটে তননের হাতের ছোঁয়া পেয়ে শিউরে উঠলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ;

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_৪১
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

সকালে তাহসীর ঘুম ভাঙ্গল বেশ বেলা করে। চোখ খুলে ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলো আটটা বাজে। তাহসীর নড়াচড়া তে তননের ঘুম ভেঙ্গে গেল।
তনন তাহসীকে নিজের সাথে আরো জড়িয়ে নিয়ে ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো,
-“নড়ছো কেন? ঘুমাও।

তাহসী তননের হাত সরিয়ে দিয়ে বললো,
-“সকাল আটটা বাজে। আজ একটুও টের পাইনি। ফজরের নামাজ মিস গেল।”

তনন ও চোখ ডলে তাকালো। হাই তুলে বললো,
-“কি বলো!”

তাহসী উঠতে যেয়ে বুঝতে পারলো শরীরের উপর কম্বল ছাড়া আর কিছু নেই। তাড়াতাড়ি করে কম্বলের মধ্যে ঢুকে যেয়ে পাশে তাকালো। শাড়ি দেখতে পেয়ে কোনোরকমে পেঁচিয়ে নিতে গেলে তনন টান দিয়ে ধরলো। তাহসী চোখ পাকিয়ে তাকালো,
-“মজা করো!”

-“মাত্র ঘুম ভাঙ্গল। কিছুক্ষণ থাকো।”

-“ক্লাস আছে। তার উপর তোমার জন্য ফজরের নামাজ পড়া হলো না। রাতে কখন ঘুমালাম মনেই পরছে না।”

-“তুমি ঘুমাও এগারোটার দিকে। সেখানে ঘুমাতে‌ ঘুমাতে রাত একটা। এইজন্যই ঘুমিয়ে পড়েছিলে। তখন আমি আর ডাকিনি।সকালে আমিও টের পাইনি।”

-“তাই বলে ডাকবে না! এটলিস্ট গোসল করে তো ঘুমাতাম!”

-“এখন করো যাও। নাকি আমি আগে যাবো শাওয়ার নিতে?”

তাহসী শাড়ি তননের থেকে টেনে নিয়ে পেঁচিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো। আজ নিশ্চিত ভার্সিটির প্রথম দুই ক্লাস মিস যাবে।

তাহসী রেডি হয়ে ব্যাগ গুছাতে গুছাতে বললো,
-“ক্লাস করবা কবে থেকে?”

-“চেয়েছিলাম তো আজ থেকেই। কিন্তু সময় চলে গেছে,আজ হচ্ছে না। আর আজ আম্মু আসবে। দুই একদিন পরেই যাবো।”

-“আচ্ছা। আমি রেডি। শার্ট পরে আমার সাথে নিচে চলো। পাউরুটি,কলা নিয়ে এসে ব্রেকফাস্ট সেরে নাও।”

তনন শার্ট পরে নিল। তাহসীর সাথে নিচে নামলো। তাহসী বলে গেল দুপুরের পর পর ই চলে আসবে। তারপর তননকে নিয়ে লাঞ্চ করে একটা খাট কিনতে যাবে। তনন তাড়াহুড়ো না করতে বলে উপরে উঠে গেল।

___________
বিকেলবেলা তনন রেল স্টেশন এ যেয়ে সেলিনা শেখ আর তনু কে নিয়ে আসলো। সেলিনা শেখ রাগ করলেন তনন যাওয়ার জন্য। কিন্তু তনন গায়ে মাখলো না। শুধু বলেছে সারপ্রাইজ আছে।

বাসায় যেয়ে তনন কলিং বেল বাজানোর পর তনু বললো,
-“আম্মু আগের থেকে অন্য রকম লাগছে না?”

তাহসী দরজা খুলে সালাম দিল। কুশল বিনিময় করে সেলিনা শেখ আর তনু কে ভিতরে নিয়ে গেল। সেলিনা শেখ বললেন,
-“তনন এটা কোন বাসা?”

-“কি ব্যাপার! মামুনি আপনাকে তনন কিছু বলেনি?”
তাহসী অবাক হয়ে বলে উঠলো।

তনন মাথা চুলকে উত্তর দিল,
-“এটাই সারপ্রাইজ। এটা আমাদের দুজনের বাসা আম্মু।”

সেলিনা শেখ তননের কান টেনে ধরলো।
-“এতো পাকনামো কে করতে বলেছে?”

তাহসী আর তনু হেসে উঠলো। ঠোঁট কামড়ে হেসে তাহসী ওদের ফ্রেশ হতে বলে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল শরবত আনতে।

-“আম্মু কি করো!”
চোখ মুখ কুঁচকে তনন বলে উঠলো।

সেলিনা শেখ কান ছেড়ে দিয়ে বললেন,
-“হঠাৎ বাসা নিয়েছিস যে?”

-“কেন? ভুল করেছি? আর কতদিন থাকতাম নাহিদ ভাইয়ার বাসায়?”

-“তা ঠিক‌ ভুল করেছিস, আবার করিস ও নি।”

তাহসী সেলিনা শেখ,তনুর হাতে শরবতের গ্লাস দুটি দিয়ে বললো,
-“শরবত খেয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।”

তনন বলে উঠলো,
-“সব কথা পরে হবে। আগে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নাও।”

তাহসী রুমে চলে গেল। তনন তাহসীর পিছু পিছু যেয়ে বললো,
-“শীতকালে মানুষ বাসায় আসলে শরবত কে দেয়!”

-“চা দিতাম ?”
একটু ভেবে বললো তাহসী।

-“হ্যা।”

-“আমি তো শরবত পেলেই বেশি খুশি হবো।”

-“কারণ চা আপনি খান না! যাইহোক রান্না কেমন কি? আমি মাংস রান্না করতে জানিনা। আম্মুকে বলতাম রান্নার জন্য?”

-“মামুনির থেকে শুনে শুনে মশলা পাতি মেশানো যাবে। এটা ম্যাটার না। ম্যাটার হচ্ছে আমরা রুমে থাকবো, আর ওদের ডাইনিং রুমে শুতে দিবো?”

-“উল্টো টাও হতে পারে যদি তুমি চাও।আর শোনো আম্মু কে রেখে দিবো কিছুদিন। তুমি চাইলে কাল যেতে পারো গ্রামে। কাল কিন্তু ফ্রাইডে!”

-“সিরিয়াসলি?”
খুশিতে তননের গলা জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো তাহসী।
পরক্ষণেই কি করেছে বুঝতে পেরে জিহ্বা কেটে হাত সরিয়ে নিতে গেলে তনন বাঁধা দিল। তনন তাহসীর হাত নিজের কাঁধে রেখে তাহসীর কোমড় আঁকড়ে ধরলো।
তাহসী লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকালো।
-“ছাড়ো। ওদিকে যাই।”

তনন ঠোঁট এগিয়ে দিয়ে তনুর ডাকে তাহসী কে ছেড়ে দিল। তাহসী মৃদু হেসে বেরিয়ে গেল।

-“একটাই রুম?”
সেলিনা শেখ বলে উঠলেন।

-“হ্যা।”

রেস্ট নেওয়ার পরিবর্তে সেলিনা শেখ ঘুরে ঘুরে সব দেখলেন।
সেলিনা শেখ বললেন,
-“সুন্দর আছে। তোমাদের থাকার জন্য পারফেক্ট। ফ্ল্যাট ও তো ভালোই সাজিয়েছো।”

-“ওই টুকটাক।”

সেলিনা শেখ প্রশ্ন করতে চাচ্ছেন যে সবকিছু কে কিনেছে। কিন্তু সরাসরি প্রশ্ন করতে পারছেন না। এটা অবশ্যই ভালো দেখায় না। শেষ পর্যন্ত বললেন,
-“ফ্রিজ কত নিছে?”

-“ভাইয়া কিনছে এইটা। তাই জানিনা।”
বিব্রত বোধ করে উত্তর দিল তাহসী।

-“ওহ্ আচ্ছা।”

তারপর দুজনেই চুপ। তনু ছাদের কথা বলাতে তনন ওকে নিয়ে ছাদে গিয়েছে। সেলিনা শেখ পুনরায় বললেন,
-“আচ্ছা বাসা কবে নিলে বলোতো? আমাকে বলবা না একবার। তুমি কি তোমার ফ্ল্যাট ছেড়ে দিয়েছো? মানে ফ্রেন্ড দের সাথে থাকতে যেখানে।”

-“এই মাসের শুরুতে উঠেছে। তনন আপনাকে জানায়নি আমি জানতাম না। আর আমি ছেড়ে দিয়েছি ফ্ল্যাট। সব এখানে নিয়ে এসেছি।”

-“আচ্ছা। তাই বলো। আমি ভাবছি পড়ার টেবিল,আলমারি,খাট এসব কিনেছিল বুঝি।”

-“রুমের গুলো আমার। আর এখানের এই টেবিল তননের। আর এখন যে বিছানায় বসে আছি। এটা আজ কিনে আনছি। ভাইয়া শুধু ফ্রিজ ই দিয়েছে। সব আমার কেনা।”
দ্বিধা নিয়ে বললো তাহসী। তার মনে হচ্ছে শুধু ফ্রিজ দিয়েছে শুনে মাইন্ড করে কিনা। এদিকে তার তো ফ্রিজ নেওয়ার ইচ্ছাও ছিল না। নাহিদ নিয়ে এসেছিল তাই নেওয়া।

-“বুঝলাম। তবে তনন নিছে তোমার ভাইয়ার দেওয়া গিফট, এটা বিশ্বাস হচ্ছিল না। কিছু মনে করো না। তবে তোমার ভাইয়ার কি দরকার ছিল এসব আনার। যাইহোক ভালোই গুছিয়েছো, সুন্দর লাগছে।”

তাহসী হাসলো একটু। হঠাৎ মনে পড়ার ভঙ্গিতে সেলিনা শেখ বলে উঠলো,
-“তননের জন্য রান্না করে নিয়ে এসেছিলাম একটু। দেখেছো ভুলে গেছি একদম। অবশ্য শীতের সময় নষ্ট হবে না হয়তো। তবুও ফ্রিজে রাখো।”

সেলিনা শেখ মাছ, মাংস রান্না করে নিয়ে এসেছেন। দুধ,ডিম ও নিয়ে এসেছেন সাথে করে। তাহসী মনে মনে ভাবলো আজ রান্না করতে হবে না। পরক্ষণেই ভাবলো তারপরেও কিছু একটা রান্না করবে।

চলবে ইনশাআল্লাহ;

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে