#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_৩৮
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)
নাঈম ধরতে গেলেই শশী ফোন বিছানার উপর ছুড়ে ফেলে দৌড়ে পালাতে গেল। নাঈম দাঁড়িয়ে যেয়ে বললো,
-“থাম শশী। ধরছি না।”
শশী উল্টা ঘুরে দেখতে যেয়ে বেঁধে গেল নিজের মায়ের সাথে। শিমুল রহমান শশীকে কাঁধ ধরে দাঁড় করিয়ে বললেন,
-“থাপ্পড় দিই দুইটা?”
শশী ভয়ে চুপ করে গেল। নাঈম এগিয়ে এসে বললো,
-“দাও চাচী। তাহলে যদি এর ছোটাছুটি বন্ধ হয়!”
শিমুল রহমান শশীর দিকে তাকিয়ে বললেন,
-“পরে গেলে কি হতো? বাচ্চার চিন্তা আছে? না আছে পড়াশোনার চিন্তা,না আছে বাচ্চার চান। কোন কাজ করিস, বলবি?”
এবার সত্যি সত্যিই শশীর মন খারাপ হয় গেল। সবাই তাকে বকছে। তার মা তো ভালো ব্যবহার ই করে না তার সাথে। নাঈম ও বললো মা*রের কথা! এটা ভেবে অভিমান হলো শশীর।
শিমুল রহমান নাঈমের উদ্দেশ্যে বললো,
-“নাঈম রাতে আমাদের বাসায় খাবি আজ।”
এই বলে শিমুল রহমান চলে গেলেন।
শশী ও আস্তে আস্তে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেল। নাঈম যেয়ে হাত টেনে ধরে রুমে নিয়ে আসলো। বিছানার উপর বসিয়া শশীর গালে দুই হাত রেখে বললো,
-“স্যরি।”
-“লাগবে না।”
অভিমানী স্বরে বলে উঠলো শশী।
নাঈম হেসে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“বাড়িতে এসে থাকি দুই তিন দিন। সেখানে যদি রাগ করতে করতেই অর্ধেক সময় চলে যায়। তাহলে হবে?”
নাঈম বর্তমানে এডমিশনের কোচিং করছে। ইচ্ছা ছিল ঢাকায় করার। কিন্তু শশীর কারণে খুলনা তে করে। প্রতি সপ্তাহে এসে দুইদিন থেকে যায়।
শশী কিছু বললো না, নাঈমের বুকে মাথা ঠেকিয়ে রাখলো। নাঈম আবারও বলে উঠলো,
-“চাচীর কথায় কষ্ট পাবি না, বুঝেছিস? আর এইরকম দৌড়াদৌড়ি করবি না প্লিজ। আর দুইমাস আছে আমার এডমিশনের। আমাকে কোনো টেনশন দিবি না প্লিজ।”
-“হু।”
দু’জনের মধ্যে আরো কথা চলতে থাকলো।
_________
নাহিদ আর মিথিলা চলে গেছে রাতে ডিনার করে। মিথিলা চারজনের জন্য রান্না করে নিয়ে আসছিল। সেই খাবার ই খেয়েছে সবাই।
ওরা চলে যেতেই তনন বই নিয়ে বসলো। এই কয়েকদিন কিছু্ই পড়া হচ্ছে না। তৌহিদ হোসেন ফোন দিয়ে তাহসী,তননকে যেতে বললেন। এটাও বললেন তননের যদি সমস্যা হয়, তাহলে আসার দরকার নেই। কিন্তু তাহসীর মন চাচ্ছে যেতে। কতদিন দেখা হয় না। এখানে সব কাজ নিজে করে নিতে হবে ভাবতেই কষ্ট লাগছে।
তনন পড়ার মাঝে আড়চোখে তাহসীর দিকে তাকিয়ে বললো,
-“কি ভাবছো? পড়াশোনা করো যাও। সেমিস্টার ফাইনাল কবে?”
তাহসী ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে এলো। খোলা চুল বাঁধতে বাঁধতে বলল,
-“ডেট দিইনি। এমনিতে মাস তিনেক পরে হতে পারে।”
তনন বলল,
-” ও তাহলে তো টেনশন নেই। একটু আগে সিহান মেসেঞ্জারে বললো দেড় মাস মত পরেই আমাদের এক্সাম”
-“ওহ্।”
-“টেনশনে মাথা যাচ্ছে। আমি কাল থেকে দুইটা করে ক্লাস করবো।”
-“কিন্তু পা ব্যথা করলে চলে আসতে হবে।”
-“জানি আমি। এক্সামের আগে সুস্থ হয়ে যেতে পারলে আলহামদুলিল্লাহ। তার জন্য মেনে চলতে হবে। আর মানুষ আসলে নাস্তা দিতে হয়,জানো না?”
-“রিলেটিভ আসলে! আপন ভাই তো আর পর না। আর এসব মনে থাকে না আমার।”
-“তোমাকে নিয়ে আর পারবো না। আস্তে আস্তে হয়ে যাবে।”
তাহসী কিছু বললো না। তার তো তননের সাথে মেসেজে কথা বলতে ভালো লাগে, প্রতিদিন বিকেলে ঘুরতে যেতে ভালো লাগে, মাঝে মাঝে তননের আ’দর পেতে ভালো লাগে। কিন্তু এইসব সংসার ভালো লাগে না। মনে হয় একঘেঁয়েমিতা চলে আসবে। তার আর প্রেম করা হলো না বুঝি!
তনন ও পড়াই মন দিল। তাহসী ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে গেল। ভিডিও কল দিল শশীর ফোনে।
শাফিন তখন গেইম খেলছে শশীর ফোন নিয়ে। শশী ফোন কেড়ে নিয়ে বললো,
-“তাহসী আপু ফোন দিছে। এখন ফোন দিতে পারবো না।”
শাফিন কান্না শুরু করে দিলেই বকা শুনবে শশী।
-“তাহলে নাঈম ভাইয়ার ফোন দাও।”
নাঈম ও শাফিনের পাশেই বসে ছিল। ফোন এগিয়ে দিল ওর দিকে। শাফিন গেইম না পেয়ে ঝামেলা শুরু করলো। শশীর রাগ হয়ে গেল।
-“আম্মুর ফোন নে, যা।”
-“আম্মু ফোনে কথা বলছে।”
-“আব্বু ও বাসায় নাই। ধুর! যত ঝামেলা আমার।”
শশী তাহসীর ফোন কেটে দিয়ে নাঈমের ফোন দিয়ে কল দিল।
তাহসী ফোন ধরলে বললো,
-“আমার ফোন শাফিনের কাছে আপু।”
-“সমস্যা নেই। কিন্তু এত শুকিয়ে গেছিস যে!”
নাঈম পাশের থেকে বললো,
-“কিছুই খায় না।”
শশী রেগে গেল। টোকা দিয়ে বললো,
-“মিথ্যা বলবা না একদম।”
তাহসী দুজনের খুনসুটি দেখে হাসলো।
শশী বললো,
-“তোমাকেও ক্লান্ত দেখাচ্ছে আপু। আর আসবে তো কাল?”
-“কাল হবে না। তবে শীঘ্রই আসবো ইনশাআল্লাহ।”
-“কাল তো বুধবার। শুক্রবারে আসো। তনন ভাইয়া কি আসবে?”
-“এই ব্যাপারে পরে জানাবো। যাওয়া হবে না সম্ভবত। এখন কত মাস চলে? ছয়?”
-“হ্যা,সাড়ে ছয়। কিন্তু এমনিতে পাঁচ মানে সবাই জানে আরকি। তাই আর আল্টাসনোগ্রাম করতে পারছি না।”
তাহসীর মনে পড়লো তখনকার কথা। যখন জানালো হলো শশীর প্রেগন্যান্সির কথা, সবাই বাঁকা চোখে তাকাচ্ছিল। অনেকে অনেক কথায় বলেছিল। সেই ছোট মেয়েটা যে ছোটবেলায় তাহসীর পিছন পিছন ঘুরে বেড়াত, সে কিনা এখন মা হবে ভাবতেই তাহসীর বিস্ময় লাগলো। দিন এত তাড়াতাড়ি যায়। কবে আমাদের মৃত্যু ঘনিয়ে আসবে, আর আমরা চিন্তাও করি না মৃত্যুর পরবর্তী জীবন সম্পর্কে।
নাঈমের কথায় তাহসী আবার বাস্তব জগতে ফিরে আসলো।
-“আপু ভাইয়া কে নিয়ে চলে আসো ট্রেনে। এটা সেইফ হবে।”
-“দেখি। ইচ্ছা তো ছিল। ওর আবার এক্সামের ডেইট দিছে।”
আস্তে করে বললো তাহসী যেন তনন শুনতে না পায়। কিন্তু তনন শুনতে পেয়ে গেছে, তাহসী যাবে কি না এইটা জিজ্ঞেস করার জন্য এদিকে আসছিল সে। পরক্ষণেই আবার বিছানায় যেয়ে বসলো। তাহসী আসলেই জিজ্ঞেস করা যাবে।
তাহসী প্রশ্ন করলো,
-“পড়াশোনা কেমন চলছে দুইজনের?”
-“আমার তো ভালোই চলছে। কিন্তু শশীর তেমন হয় না।”
তাহসী আরো অনেক কথা বললো। কথা শেষ করে রুমে এসে দেখে তনন শুয়ে পড়েছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে এগারোটা বাজে।
-“কি ব্যপার? আর পড়বে না।”
-“পায়ে একটু মালিশ করে দিবে?”
তাহসী ফোন রেখে তেল গরম করে নিয়ে এসে তননের পায়ের কাছে বসে বললো,
-“এবার একটু খেয়াল রাখো।”
-“তুমি এত কিছু গোছাতে পারতে একা? আমি এমন বসে বসে দেখতে পারি না।”
-“আমার ক্ষমতা নেই বলছো?”
-“তা না। বসে বসে দেখতে পারি না আমি। আমার কথা বাদ দাও। তুমি কি যাবে বাড়িতে?”
তাহসী উত্তর দেওয়ার মতো কিছু পেল না। তনন পুনরায় বললো,
-“আমাকে প্লিজ যেতে বলবা না।”
তাহসী মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো।
তাহসী বই দেখে রাত এগারোটা পঞ্চান্ন এর দিকে ঘুমাতে গেল। তনন কে তাকিয়ে থাকতে দেখে তাহসী বললো,
-“ঘুম আসছে না! এইজন্যই বলি পায়ের উপর চাপ দিয়ে কিছু না করতে। ভালো করে হাঁটা শিখলো না,কাজ করতে চায়!”
তনন মুচকি হেসে তাহসীর দিকে তাকালো। কোনো প্রতিত্তর করলো না। বারোটা বাজতেই তনন তাহসীর কানে কানে বললো,
চলবে ইনশাআল্লাহ;
#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_৩৯
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)
তনন মুচকি হেসে তাহসীর দিকে তাকালো। কোনো প্রতিত্তর করলো না। বারোটা বাজতেই তনন তাহসীর কানে কানে বললো,
-“হ্যাপি অ্যানিভার্সেরি টু মাই সুইটহার্ট!”
তননের এরূপ সম্বোধনে তাহসী লজ্জা পেল। এই প্রথম তনন বললো এভাবে।
তাহসী মৃদু স্বরে বললো,
-“হ্যাপি অ্যানিভার্সেরি! মনে আছে দেখছি!”
-“ভুলবো কেন?”
-“না,কিছু না।”
-“কাল আমাদের কোথাও ঘুরতে যাওনা উচিত,তাই না?”
-“তুলে রাখো। কাল যাওয়া লাগবে না।”
-“বললেই হলো?”
-“তো?”
তাহসী চুপ করেই থাকলো। তনন পুনরায় বললো,
-“বিয়ের মধ্যে পরীক্ষা ছিল। আর এইবার দেখো অসুস্থ!”
-“বাদ দাও। অন্য আরেক দিন সারাটা দিন ঘোরাঘুরি করা যাবে। এখন ঘুমাও।”
হাই তুলতে তুলতে বললো তাহসী।
তনন তাহসীর পিঠের নিচে হাত দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসলো।
তাহসীর গালে স্লাইড করতে করতে বললো,
-“এখন ঘুমানো হবে না! ফার্স্ট নাইট ছেড়ে দিছি। কিন্তু আজ কোনো ছা’ড়া’ছা’ড়ি নাই।”
তনন তাহসীকে সুরসুরি দিলে তাহসী হাসতে হাসতে নিজেকে ছাড়াতে চাইলো। তাহসী তননকে থামাতে না পেরে নিজেই তনন কে সুরসুরি দিতে লাগলো। তনন হেসে ছেড়ে দিল। তাহসীর কপালে চুমু খেয়ে তাহসীর কপালে নিজের কপাল ঠেকালো।
-“ভালোবাসি।”
তাহসীর ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো।
🍁🍁🍁
পরেরদিন তাহসীর খুশি বেড়ে গেল। বিকালে কুরিয়ারের লোক এসে প্যাকেট দিয়ে গেল । প্যাকেট খুলে দেখে বই। তাহসী ভেবেছে ড্রেস হবে, বই দেখে মন ভরে গেল। তাহসী টাকা দেখে পেমেন্ট করে দিল। তনন তার জন্য বই অর্ডার দিয়েছে ভাবতেই ভালো লাগলো। যেখানে তাহসীকে এসব গল্প, উপন্যাসের বই পড়া দেখে তনন সময় নষ্ট বলে সেখান থেকে সরে যায়,সেখানে তনন তাকে দশ দশটা টা বই কিনে দিয়েছে। বুঝতে পারলো ক্যাশ অন এ নিয়েছিল, কিন্তু তনন তো বাইরে এখন। কিন্তু উইশলিস্টের বইগুলো তনন জানতে পারলো কিভাবে! ফোন এর গ্যালারি তে সেভ করা,আর নোটবুক এ লিখে রাখা। তাহসী বুঝলো না তনন কোনটা থেকে দেখেছে।
তনন বিকেলে জোর করেই বাইরে গিয়েছে। উদ্দেশ্য খাবার কিনে আনা। তাহসী বলেছিল কি কি লাগবে বলতে সে ভার্সিটি থেকে ফেরার সময় নিয়ে আসবে, তনন বলেনি।
তনন ফিরতেই তাহসী বললো,
-“এত টাকা নষ্টের প্রয়োজন ছিল না।”
-“কেন? রান্না করতে? বেশি কিছু আনিনি। রাতে এতো রিচ ফুড খেয়ে কাজ নেই।”
-“বই এর কথা বলেছি!”
তননের হঠাৎ মনে পড়লো। বিছানার উপর বসে তাহসীর দেওয়া পানি শেষ করে বললো,
-“একদম ভুলে গেছি।”
কিছুক্ষণ বাদেই বললো,
-“টাকা তুমি দিছো? ওয়েট। এ কেমন গিফট!”
নিজে বলে নিজেই হেসে ফেললো তনন। তাহসী ও হাসলো। যার গিফট সেই টাকা পেই করছে।
তনন টাকা বের করে তাহসীকে দিতে গেলে তাহসী বললো,
-“আলমারি থেকে বের করে সেই আলমারি তেই তো আবার ঢুকবে।”
-“দেখো তাহসী! এটা গিফট। যদিও তোমার মতো ওতো টাকা খরচ করতে পারলাম না।”
-“মানে?”
টাকা নিয়ে আলমারি তে নিজের জায়গায় রাখতে রাখতে বললো তাহসী।
-“বাইক!”
বিছানার উপর শাট হয়ে শুয়ে পড়ে বললো তনন।
-“এখনো ওইটা নিয়ে পরে আছো? একটা কথা বলার ছিল। বাইক টা না হয় সেল দিয়ে দাও। তোমার আর কাজ নেই বাইক চালিয়ে।”
-“উহু। সেদিন তো তাড়াহুড়া করছিলাম…”
-“তাড়াহুড়ো আবার করবে না এটার কি কোনো গ্যারান্টি আছে?”
-“অন্য গাড়িতেও এটা হতে পারে। যদি কারো ভাগ্যে থাকে। তোমার কাছ থেকে এমন করা আশা করা যায় না তাহসী।”
-“সেরকম কিছু বিষয় না। আমি এইটা নিজেও জানি যে ভাগ্যে থাকলে হবে কিন্তু তোমার এক্সিডেন্ট এর দিন মামুনি তো বলেছিল বাইক কেন চালাও এত বড় শহরে,বাইক চালানোর কি দরকার।”
বলতে বলতে তাহসী বিছানার উপর যেয়ে বসলো। তনন উঠে এসে তাহসীর কোলে মাথা রাখলো। তাহসী অবাক হয়ে তাকালো। সাধারণত তনন এমন করেনা। এটা অপ্রত্যাশিত ছিল!
তাহসীর হাত নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে তনন উত্তর করলো,
-“মায়েরা একটু বলবেই ওমন। বাদ দাও। আর শোনো আম্মু ফোন দিয়েছিল, আমি বাইরে থাকতে। আম্মু বলছে যে তনুর কিছুদিন স্কুল ছুটি তাই আসতে চাচ্ছে। আমি বলেছি আসার কথা।”
তাহসী কে চুপ করে বসে থাকতে দেখে তনন চোখ বন্ধ করে বললো,
-“উফ্,চুল তো টেনে দিতে পারো!”
তাহসী তননের মাথায় হাত রাখলো।
-“মাথা ব্যথা করছে?”
-“না, শান্তি লাগে।”
-“ভালো করেছো আসার কথা বলে। কিন্তু থাকবে কোথায়?”
-“কথাটা আমি ভাবিনি যে তা না! আমি ভাবছিলাম তোমার যে তোশক টা আছে সেইটা ডাইনিং স্পেসে পারার কথা।”
-“ওভাবে থাকতে দেওয়া যায় কাউকে! মাথা গেছে পুরা।”
শেষ কথাটা বলার সময় তাহসী জোরে চুল টেনে দিল।
-“ব্যথা লাগে তো নাকি! তোমাকেও বলতে পারি না, ওখানে যায়। মাকেও বলতে পারবো না ওখানে থাকো।”
-“তোমাকে বললাম যে আমার খাট টা বড়। ওখানে আমাদের হয়ে যাবে। তা না কথা শুনলে না!”
-“তুমি যে বিছানায় একা ঘুমাও। তার মধ্যে আমি থাকলে অস্বস্তি বোধ করবে না?”
এসব ভাবনা শুনে তাহসীর খুবই ভালো লাগলো। ভালোবাসার দিক দিয়ে জীবন টা স্বার্থক হলো তনন কে পেয়ে। পরকালেও দুজনে একসাথে থাকতে চাই তাহসী।
তননের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
-“ওতো টাও আমার খাট ছোট না যে তুমি আটবে না! নাকি নিজেকে মোটা মনে করো?”
বলেই ঠোঁট চেপে হাসলো তাহসী।
তনন চোখ খুলে দেখে তাহসীর হাঁসি মুখ।
-“ইনডিরেক্টলি আমাকে মোটা বললা!”
-“তোমার কথা ধরে বলেছি!”
মুখ বাঁকিয়ে বললো তাহসী।
-“হিসেব টা তোলা থাকলো। আচ্ছা এখানে শুধু তোমার বেড রাখবো। কিন্তু আমার বেড এ তো আর তনু আর আম্মুর হবে না।”
-“সেল দিয়ে একটা নতুন বেড আনায় যায়!”
-“তা তো যায়-ই।”
তননকে চুপ মেরে যেতে দেখে তাহসী বললো,
-“আমি কিনতেই পারি,তাই না?”
-“পারো। কিন্তু এটা আমার ধার!”
-“ওকে।”
বলে হাসলো তাহসী। মনে মনে ভাবলো দুজন যে কবে সহজ হবে সম্পূর্ণ ভাবে।
সন্ধ্যাবেলা মাগরিবের নামাজ পড়ার পর তনন তাহসী কে টেনে এনে বারান্দায় দাড় করালো। তাহসী বলে উঠলো,
-“কি হয়েছে?”
-“দেখো রাতের শহর। সব ঠিক থাকলে তোমাকে বাইকে নিয়ে বের হতাম।”
-“বাইক চালাবে অন্তত এক বছর পর। রাতে তো নয় ই।”
তনন হাসলো। বললো,
-“আমার নিয়ে এতো চিন্তা?”
তাহসীর মুখ লজ্জায় নত হলো। কিছুক্ষণ বাদে প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য বললো,
-“বই সম্পর্কে জানলে কিভাবে? আমার ফোন নাকি ডায়েরি থেকে? আমাকে না বলেই পার্সোনাল জিনিসে হাত দিলে?”
-“তুমি কবে যেন ফোন দেখে ডায়েরি তে বইয়ের নাম লিখছিলে সেদিন তোমার পিছন থেকে একটা ফটো তুলে নিয়েছিলাম।”
-“অনেক দিন ধরেই প্লান করছিলে নাকি!”
আরও দুই একটা কথা বলে তাহসী এসে পড়তে বসলো। পড়ার ফাঁকে তননকে না পড়তে দেখে বললো,
-“কি ভাবছো এতো? পড়াতে মন দাও। সেমিস্টার ফাইনাল তো চলে এলো।”
-“সুযোগ পেয়ে আমার বলতে এসেছো? পড়তে মন চাচ্ছে না আজ।”
তনন প্রায়ই তাহসী কে পড়তে বসার কথা বলে। তাহসী সময় নষ্ট করে অনেকটা। গল্প উপন্যাসের বই,ফোন নিয়ে অনেকটা সময় কেটে যায় তার।
-“এইজন্যই এখনই একসাথে থাকতে চাইনি। সেমিস্টার ফাইনাল টা শেষ হলে….”
তনন এমনিতেই টিউশন পড়া নিয়ে চিন্তিত। আজ সকালের দিকে আগের টিউশন গুলোতে ফোন দিয়েছিল। সবাই না করে দিয়েছে। তারা নতুন টিচার নিয়ে নিছে। শুধু একজন বলেছে তনন গেলে যেতে পারে। পরীক্ষার সময় নতুন টিউশন নিবে কিনা বুঝতে পারছে না। এতো এতো টেনশনের মধ্যে তাহসীর এই কথা শোনাতে তননের আজ রাগ উঠে গেল। বলেই বসলো,
-“একসাথে থাকা নিয়ে এত সমস্যা…। একদিন দেখবে আলাদা হয়ে গেছি!”
তাহসী এভাবে বলতে চায়নি কথাটা। তননের এমন কথাতে মন খারাপ হয়ে গেছে। এইযে পড়ছে না। এখন তো তননের ক্ষতি হচ্ছে। তারও আগের মতো পড়া হয়না। অথচ এই ইয়ার টাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
-“স্যরি। আমি এভাবে বলতে চাইনি।”
তনন কিছু বললো না, বারান্দায় চলে গেল। তাহসী বইয়ের পাতা উল্টাতে লাগলো। তার আর পড়ায় মন বসলো না।
তনন নিজেকে শান্ত করে ফিরে আসলো। তাহসীকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বললো,
-“পানি খেয়ে পড়াতে মনোযোগ দাও। এভাবে বলার জন্য স্যরি। আমি বুঝতে পেরেছি কেন বলেছো।”
চলবে ইনশাআল্লাহ;