তোমাতে বিলীন হবো পর্ব-৩৬+৩৭

0
509

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_৩৬
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

তাহসী তননের জোড়াজুড়ি তে নতুন বাসা তে উঠেছে। নাহিদ শেষে কিছু বলেনি। ভাইয়ার মন খারাপ এটা তাহসী ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে। ভাবী ও তাকে অনুরোধ করেছিল থাকার জন্য। তার দুলাভাই এসে এমন করবে সে বুঝতে পারেনি।
তনন চলে এসেছে শেষ পর্যন্ত। নাহিদ কে বাসা দেখে যেতে বলেছিল নাহিদ আসেনি। শুধু এসে তননের বাইক রেখে গেছে। উপরে আসেনি। তখন থেকে আরো বেশি খারাপ লাগছে তাহসীর। বাইকের যে সমস্যা হয়েছিল, আগেই ঠিক করে রেখেছিল নাহিদ।

তননের আপাতত এসব নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। সকালের দিকে বাসায় এসেছে। নাহিদ চলে যাওয়ার সময় রিকশা নিয়েছিল। তননের বাইক নিয়ে এসেছিল আসার সময়। তাহসী ও দৌড়ে যেয়ে ভাইয়ের সাথে রিকশা তে করে চলে গেছে ভার্সিটি তে। নাহিদ নামিয়ে দিয়ে গেছে। বাসা ভার্সিটির কাছে হওয়ায় সুবিধা হয়েছে।
তাহসী নেমে যাওয়ার সময় নাহিদ হেসে বলেছিল,
-“সুবিধা হলো তোর। হেঁটেও আসা যাওয়া করতে পারবি।আসি। আল্লাহ হাফেজ।”

তাহসী মাথা নিচু করে চলে গেছে। কিছুই বলতে পারেনি তখন। এত খারাপ লাগছিল তার। ভাই ভাবীর তো দোষ নেই। আশপাশে এমন মানুষ থাকেই অকারণে মানুষ কে খোচানো। যেমন মিথিলার বোন, দুলাভাই।

তনন বাসায় একা। পুরো ফ্ল্যাট ফাঁকা। কোনো জিনিস পত্র নেই। তনন দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তাহসী রাগ করে চলে গেছে। তনন লিফটে করে নিচ তলায় নামলো। তিনতলায় বাসা নিয়েছে। পুরো নিচতলা গ্যারেজ, শুধু দারোয়ান এর জন্য ছোট এক রুমের ফ্ল্যাট। গ্যারেজের মধ্যে দিয়ে আসার সময় বাইকের দিকে নজর গেল। তনন আলতো করে ছুয়ে দিল। ডাক্তার অন্তত ছয় মাস বাইক চালাতে নিষেধ করেছে।

তনন বের হয়ে রাস্তার উপরেই দাঁড়ালো। জোর করে হেঁটে তারই সমস্যা হবে। রিকশা আসতেই উঠে বসলো। ফ্রেন্ডস গ্রুপে হেল্প চাইলো, গ্রুপে মেসেজ দেওয়া এইজন্যই সবাই তো ক্লাসে থাকবে। যদি কেউ ক্লাসে না থাকে, তাহলে সঙ্গী বানানো তাকে।
অবশেষে একজন কে পাওয়া গেল।

তনন ওকে সাথে নিয়ে রান্নাঘরের কিছু জিনিসপত্র, তরকারি, বিস্কিট, কয়েক কেজি চাল কিনলো। এরপর আরো কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনলো। এরপর মেস এ যেয়ে দুইটা রিকশা ভাড়া করে তার জিনিসপত্র নিয়ে বাসায় রাখলো। এরপর তননের বন্ধু তাকে রেখে চলে গেল।

মেসে তননের সিঙ্গেল বেড ছিল সেইটা লম্বা করে দেয়ালের সাথে রেখে দিল তনন। এই বেডে তাদের দুজনের হবে না। তোশকের দিকে তাকিয়ে তনন ভাবনায় পড়ে গেল। বেডে যদি না হয় এই তোশকের উপর তো তাদের হবে না। এখন মনে হলো তোশক টা দোকানে দিয়ে নতুন বড় তোশক আনা উচিত ছিল।
ভাবলো কাল আবার যাবে। এখন আর বের হওয়া যাবে না। পায়ের ব্যথা যদি প্রতিদিন এমন বেড়ে যায় তাহলে পায়ের অবস্থা আরো খারাপ হবে। তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পারবে না। ভাবছে যদি কোনোরকম একটু সুস্থ হতে পারে তাহলে অন্তত একটা টিউশন নিয়ে নিবে। আজকের জিনিস গুলো কিনেছে তার অল্প অল্প করে জমানো টাকা থেকে।
বাসা ভাড়া তো এই মাসের টা হয়ে গেছে। কিন্তু আগামী মাসের টা তো দিতে হবে। তাহসীর উপর ফেলে রাখতে পারবে না এইসব। শুধু কি বাসা ভাড়া! খাওয়া, লেখাপড়ার খরচ আরো কত কি। তননের মনে হচ্ছে এটা বোকামি হয়ে গেল কি-না।

দুপুরে তখন কিনে আনা বিরিয়ানি খেল তনন। আসার পথে দুই প্যাকেট বিরিয়ানি কিনে এনেছিল। এক প্যাকেট ফ্রেন্ড কে জোর করে দিয়েছে। এক প্যাকেট দিয়ে এখন খেল। বিরিয়ানি খাওয়া শেষে মনে পড়লো বাসায় পানি নেই। মাথায় হাত পড়লো তননের। ব্যাগ থেকে পানির পট বের করে নিয়ে নিচে গেল আবার। এই বাসার পাশে একটা টিউবওয়েল আছে, সেদিন বাড়িওয়ালার কাছ থেকে শুনেছিল পানি খাওয়া যায়। আশেপাশের মানুষ এখান থেকে পানি নিয়ে খায়।

তনন পানি ভরে পিছনে তাকাতেই দেখলো তাহসী কাঁধে ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে তার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে। তনন হাসতে হাসতে এগিয়ে গেল,
-“ওমা,এতো তাড়াতাড়ি শেষ আজ।”

তাহসী হাসি মিলিয়ে একটু মুখ ভাঙালো।
-“রাতে দেখবো এই হাসি কয় যায়!”

তনন চুপ করে গেল। দুজন একসাথে লিফটে করে বাসায় ঢুকলো। তাহসী রুমে যেয়ে বললো,
-“তোশক কার? বাইরে গেছিলা?”

তোশকের উপর বসে তনন বললো,
-“গেছিলাম। মেস থেকে সব নিয়ে আসছি।”

-“মানে কি? পরে সিট পাবা মেসে?”

-“মেসে যাবো কোন দুঃখে?”
পানি খেয়ে জিজ্ঞেস করলো তনন।

-“মানে এখানে পার্মানেন্ট!!”
অবাক হয়ে বললো তাহসী।

-“তো? তুমি চাও না?”
তনন ভ্রু কুঁচকে বলল।

-“আমি ভেবেছি দুই মাস।”
ব্যাগ থেকে খাবারের প্যাকেট বের করলো তাহসী। সেও বসলো তোশকের উপর। তননের দিকে প্যাকেট এগিয়ে দিল।

-“বাব্বাহ! খাবার এনেছো? আমি তো আবার ভাবলাম রেগেমেগে তোমার ফ্ল্যাটে ফিরে যাও কি-না!’

তাহসী আড়চোখে তাকালো সেদিকে। ব্যাগ মেঝের ওপর রেখে তার ছোট্ট আয়না বের করে ব্যাগের উপর হেলান দিয়ে রাখলো। এরপর হেজাবের পিন খুলতে লাগলো।

তাহসীকে দেখতে দেখতে তনন বললো,
-“বিরিয়ানি নিয়ে এসেছিলাম। খেয়ে নিয়েছি। পানি নিতে নিচে গেছিলাম।”

তাহসী এবারেও কিছু বললো না। হেজাব খোলা শেষে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসলো। তননের জন্য ক্লাস মিস দিয়ে চলে আসলো। ভাবলো না খেয়ে থাকবে। অথচ দেখো আরামে আছে এখানে।
তোশকের উপর বসে তাহসী বললো,
-“রাতে কি খাবো? খাবার ও তো এক প্যাকেট আনছি। বাইরের খাবার দিয়ে কতদিন চলবে?”

-“টুকটাক বাজার করেছি।চাল, ডিম, আলু আর দুই একটা সবজি, মরিচ, পেঁয়াজ,রসুন, জিরা আর তেল।”

-“রান্না হবে কিসে? আমি কিন্তু রান্না করতে জানি না।”

নিজের কাছে তাহসী কে টেনে নিল তনন। জড়িয়ে ধরে বললো,
-“এত ভেবে কাজ নেই। টুকটাক করে নিবো। পাতিল,কড়াই এনেছি । তবে প্লিজ আমাকে পার্মানেন্ট রাঁধুনি ভেবো না আর বানিয়ে নিও না!”

তাহসী হেসে উঠলো তননের কথায়।
-“তাহলে মেনে নিচ্ছো?”

তননের কথায় তাহসী থেমে গেল। কেমন যেন লাগছে তার। তার ইচ্ছা ছিল অন্তত অনার্স শেষ করে একসাথে থাকার। কিন্তু তনন আগেই করে নিল সব। রান্না, ঘরের কাজ মিলিয়ে কি আদেও পরিপূর্ণ ভাবে পড়াশোনা করে ওঠা সম্ভব?

_________
পরদিন তাহসী আর ভার্সিটি গেল না। তনন অবশ্য চলে যেতে বলেছিল। অনেক ক্লাস মিস যাচ্ছে তাহসীর। তাহসীর এক স্যার কাল সন্ধ্যায় ফোন দিয়েছিল। তাহসীর মন খারাপ। এই শেষ ইয়ারে এসে মনে হয় এবার আর প্রথম তিনজনের মধ্যে থাকা হবে না? তনন তো একবার বলেই ফেললো বাসা ছেড়ে দেওয়ার কথা।

তাহসী আজ জোর করে যায়নি। তননের উপর এভাবে একা ফেলানো যাচ্ছে না। তোশকের কেনার সাথে সাথে তাহসী নিজের ফ্ল্যাটের সব জিনিস নিয়ে এসেছে। তনন আর তাফসীর বেড পাশাপাশি একসাথে রেখে বড় বেড বানিয়ে নিয়েছে।
তাহসীর ছোট আলমিরা তে দুজনের কাপড় গুছিয়ে নিয়েছে। আঁখি আজ তাহসীর সঙ্গ দিয়েছে। সে ও ক্লাস মিস দিছে আজ। দুপুরে সেই রান্না করলো তিনজনের জন্য। সকালে পাউরুটি,জেলি এনে খেয়েছিল তাহসী।

তাহসীর পড়ার টেবিল রেখেছে রুমের মধ্যে। আর তননের পড়ার টেবিল ডাইনিং রুমে রেখেছে। যেন দুজনের পড়ার কোনো সমস্যা নেই।
আঁখি বলেই ফেললো,
-“তোদের দেখে আমার এখন মনে চাচ্ছে আমিও একটা বিয়ে করে ফেলি।”

দু’জনেই হেসে উঠলো। তাহসী বললো,
-“আপাতত অনার্স টা কমপ্লিট করে নে।”

কথাটার মানে বুঝতে পেরে ও তনন কিছু বললো না। সত্য কথার পিঠে আর কি বলার থাকে। দুপুরে খাওয়ার পরে আঁখি চলে গেল।

চলবে ইনশাআল্লাহ;

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_৩৭
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

বিকেলবেলা নাহিদ আসলো মিথিলা কে নিয়ে। তাহসী ওদের দেখে খুশি হয়েছে। সাথে মনে মনে হাফ ছেড়ে বাঁচলো। অন্তত থাকার মতো রুমটা করতে পেরেছে। নাহিদ যদি দেখে ফেলতো ফ্লোরে বিছানা! সেদিক দিয়ে বেঁচে গেছে।

নাহিদ কে ভিতরে ঢুকতে বললে উল্টো নাহিদ আরেকজন কে ভিতরে ঢুকতে বললো। মিথিলা আগেই ভিতরে ঢুকেছে। তাহসী তাই জিজ্ঞেস করলো,
-“কে এসেছে আর?”

ফ্রিজ নিয়ে এক জনকে ভিতরে ঢুকতে দেখে তনন বিস্ময় নিয়ে বলে উঠলো,
-“ভাইয়া এসব কি?”

-“গিফট! তোমার কথা মেনে এখানে থাকতে দিয়েছি। এটা নিতেই হবে।”

কিছু না বলে মিথিলা কে নিয়ে সোজা বারান্দায় চলে গেল তাহসী। মিথিলা হেসে বলল,
-“বাব্বাহ! বারান্দাও আছে দেখছি।”

-“হ্যা। বারান্দা ছাড়া বাসা ভাল্লাগে না।”

-“হুম। গ্রামে তোমার রুম দেখেই বুঝেছি। ওহ শোনো কাল গ্রামে যাচ্ছি।”

-“হঠাৎ? ভাইয়ার ছুটি পড়েছে নাকি এমনিতেই?”

-“অনেকদিন যাওয়া হয় না। ছুটি নিতে চাচ্ছিল কিছুদিন ধরে। তো বাবা বললেন…”

তাহসী কথা শেষ না করতে দিয়েই বললো,
-“ওহ্, আচ্ছা! বাবা বলেছে। দেখেছো ভাইয়া কে বলছে। আমাকে বলেনি!”

-“তাহলে বলবে হয়তো। আমরা তো ভাবলাম একসাথে যাবো তোমাদের নিয়ে। বাবা বললেন সবাই আসবে।”
চিন্তিত হয়ে বললো মিথিলা।

তাহসী হেসে বলল,
-“আমি এমনিতেই ওভাবে বললাম। মজা করেছি।”

তনন দরজা থেকে ইশারা করলো তাহসী কে। তাহসী বুঝতে না পেরে বললো,
-“কি?”

মিথিলাও পিছু ঘুরে তাকালো। তনন হাসি দিয়ে চলে গেল। নাহিদের সাথে রুমে কথা বলছিল এতক্ষণ তনন। তাহসী বুঝলো না ব্যাপারটা।

নাহিদকে বসতে বলে তনন চলে গেল রুম থেকে। নাহিদ সেদিকে খেয়াল করেনি। সে তাহসীর কাছে চলে গেছে। তাহসীর পিছনে দাঁড়িয়ে বললো,
-“এতক্ষণে তো মনে হয় তোর ভাবী গুড নিউজ গুলো দিয়ে দিছে।”

-“কিসের গুড নিউজ? একটাই শুনিনি আবার গুলো!”
অবাক হয়ে বললো তাহসী।

-“তোমার ভাইয়া এইবার বিসিএসে টিকে গেছে। আর নাঈম…..”
মিথিলা কে থামিয়ে দিয়ে নাহিদ বলল,
-“নাঈমের টা নাঈম ই বলবে।”

তাহসী হাসিমুখে বললো,
-“আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ। নাঈমের আবার কি?”

-“আলহামদুলিল্লাহ। এইবার লাস্ট বার ছিল আমার বিসিএস। হয়ে গেছে আলহামদুলিল্লাহ।”
নাহিদ বললো।
পুনরায় বলে উঠলো,
-“নাঈমের সাথে নাকি তোর কথা বন্ধ? ফোন দিলে ধরিস না!”

-“ওই আরকি।”
তাহসী এই ব্যাপারে কথা বলতে না চেয়ে অন্য কথায় চলে গেল।

নাহিদ বলে উঠলো,
-“বাসা তো ভালোই গুছিয়েছিস! আমি তো ভাবছিলাম দুই মাসের জন্য বোধ হয় বাসা। কিন্তু তোর সব নিয়ে এসেছিস মানে ফ্ল্যাট ছেড়ে দিয়েছিস তুই! বাবা জানলে রাগারাগী করবে, এটা ভেবেছিস?”

তাহসীর মুখ চুপসে গেল। আরো কথা হলো ওদের মধ্যে। তনন রুম থেকে ডাক দেওয়ায় তিনজন ওখানে গেল। তনন বললো,
-“হালকা নাস্তা করেন। এর থেকে বেশি কিছু করতে পারলাম না।”

নাহিদ এগিয়ে যেয়ে বললো,
-“এইসব করতে গেছো কেন? আমরা কি তোমাদের আত্মীয়? নিজের ভাই ভাবো না দেখছি এখন!”

-“ভাইয়া এমন কিছু না। একটু চেক করে দেখেন। ভালো করে করতে পারিনি।”
তাহসীর দিকে তাকিয়ে বললো তনন।

নাহিদ ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বললো,
-“তাহসী এসব বুঝে না তনন। ওর হচ্ছে বাচ্চাদের মতো মন। আর এগুলো করার কোনো প্রয়োজন ছিল না। বরং তুমি নাস্তা বানিয়ে এনেছো বলে মাইন্ড করলাম।”

তনন মিথিলার দিকে বাটি এগিয়ে দিয়ে বললো,
-“ভাবী আপনি নিন তো। তারপর বলেন নুডলস্ টা কেমন হয়েছে।”

তাহসী মুখ ফুলিয়ে রাখলো। নাহিদ এগিয়ে নিয়ে দুই চামচ মুখে দিয়ে বললো,
-“অনেক ভালো হয়েছে। এত ঝটপট বানালে কিভাবে তাই ভাবছি! আর শোনো, জার্নি করতে পারবে?”

-“কেন ভাইয়া? পারবো মেইবি। ভাবছি আগামী সপ্তাহের মধ্যেই ক্লাস শুরু করবো এক দুইটা।”

-“আমরা কালকেই বাড়িতে যাচ্ছি। তুমি সুস্থ যেতে পারবে কি-না তাই বাবা এখনো তোমাদের বলেনি। এমনিতে একদিন ভালো রান্নাবান্নার আয়োজন করবে বাবা এই আরকি।”

-“কি উপলক্ষে?”

সবার কথাবার্তার মাঝেই তাহসীর ফোনে কল আসলো। তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। নাঈমের কল দেখে তাহসী ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলো। তনন পাশেই বসে ছিল। আড়চোখে তাকিয়ে বললো,
-“এবার অন্তত মেনে নাও।”

তাহসী ফোন দিয়ে উঠে গেল। তনন নাহিদ আর মিথিলার দিকে তাকিয়ে বললো,
-“নাঈম ফোন দিয়েছে।”

কল রিসিভ করে তাহসী চুপ করে থাকলো। ওপাশে থেকে ভেসে এলো নাঈমের কন্ঠস্বর,
-“আপু!”

-“হু।”

-“কথা বলবে না?”

-“কল রিসিভ করেছি তো।”
এতদিন পর কি কথা বলবে ভেবে পেল না তাহসী। নাঈমের কি গুড নিউজ এটা জানার জন্য তাহসীর মন কৌতুহলী হয়ে উঠলো। ব্যাপারটা সে ভুলেই গিয়েছিল।

নাঈমের কাছে থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে শশী বললো,
-“কেমন আছো আপু? তুমি আমাদের উপর এতো রাগ করেছো? একটু কথা বললে কি হয়? কাল তুমি আসবে আপু? জানো তোমার ভাই তোমার কথা ভেবে চোখের পানি ফেলে কত? আজকে তার রেজাল্ট বেরিয়েছে….”
এক নাগাড়ে অনেক কথা বলে থামলো শশী। নাঈম তাকে ধমক দিয়েছে এই পাশ থেকে তাহসী শুনতে পেল।

শশীর বকবকানিতে তাহসীর মন থেকে সমস্ত রাগ চলে গেল। হেসে উঠলো সে। এতদিন নাঈম,শশী কল দিলেও তাহসী ফোন ধরতো না। বাড়ির সবাই স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিলেও ব্যাপারটা কি আসলেও স্বাভাবিক ছিল? একটু শিক্ষা দেওয়ার জন্যই এমন করেছে তাহসী। অবশ্য দুই মাস বাড়িতে যাওয়া হয় না তননের এক্সিডেন্ট এর জন্য। যে সপ্তাহে বাড়ি যেতে চেয়েছিল,সে সপ্তাহেই তননের এক্সিডেন্ট।
ওই পাশ চুপ করে গেলে তাহসী বললো,
-“আহ নাঈম। ভালো লাগছে শুনতে।”

শশী আবারও কথা বলতে শুরু করল। আবদার করে বলল উঠলো,
-“আপু তুমি আসবে তো কাল? আমাকে সব কিছুতেই বকা দেয়। তুমি আসো প্লিজ!”

-“কাল কি? এটাই তো জানলাম না। আজ এইচএসসি রেজাল্ট ছিল একদম ভুলে গেছি। কাল ও মনে ছিল। আজ ভুলে গেছি। নাঈমের রেজাল্ট কি?”

-“উপজেলাতে ফার্স্ট হয়েছে। কাল নাহিদ ভাইয়া আর ওর জন্য বড় চাচু একটু খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করেছে বাড়িতে। এই আরকি। নাঈম বলেছে সে নিজে তোমাকে রেজাল্ট বলতে চাই। তাই চাচু এখনো ফোন দেয়নি। কিন্তু আমি বলে দিয়েছি। হিহিহি।”

-“এই, রাতে ভিডিও কল দিবো হ্যা? এখন রাখি? প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড।”

-“ওকে, নো প্রবলেম। তবে ভুলে যেও না।”

তাহসী সায় জানিয়ে মিষ্টি হেসে কল কাটলো। নাহিদ আর মিথিলার সাথে কথা বলা যাক এখন‌।

নাঈম মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকলো। ধমক দিয়ে বললো,
-“নিজের বাড়ি যান আপনি। সবকিছুতে পাকনামো! এখানে কি?”

শশী পেটে হাত রেখে অসহায় মুখ করে বললো,
-“দেখ আমার অসহায় দিন। তোর ফুফি যা-ও একটু ফোন ধরলো আবার কেটে দিল। আর তোর বাবা আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছে!”

নাঈম ধরতে গেলেই শশী ফোন বিছানার উপর ছুড়ে মেলে দৌড়ে পালাতে গেল। নাঈম দাঁড়িয়ে যেয়ে বললো,
-“থাম শশী। ধরছি না।”

শশী উল্টা ঘুরে দেখতে যেয়ে বেঁধে গেল……

চলবে ইনশাআল্লাহ;

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে