#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_৩৪
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)
তনন কিছু বললো না। ফোন দিয়ে ডায়াল করলো তাহসীর নাম্বারে।
তাহসী তখন ক্যান্টিনে বসে বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দিছে আর দুপুরের নাস্তা করছে। তননের কল পেয়ে সালাম দিয়ে ফোন নিয়ে একটু দূরে উঠে গেল। তননের থমথমে কন্ঠে সালামের উত্তর পেয়ে তাহসী শুধালো,
-“কি হয়েছে?”
-“কি করছো?”
-“লান্স করছি। তুমি করেছো?”
-“কুইকলি বাসায় আসো। কথা আছে। অন্তত আজ ক্লাস মিস দাও। প্লিজ এসো।”
-“কি হয়েছে?”
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো তাহসী।
-“বাসায় এসে জানতে পারবে। এসো।”
কিছুক্ষণ থেমে তনন পুনরায় বললো,
-“টেনশনের কিছু নেই। সাবধানে এসো।”
তাহসী কে টেনশন দিতে চাই না তনন। দেখা গেল তাড়াহুড়ো করে বাসায় আসতে যেয়ে কোন বিপদে পড়লো।
তাহসী ভ্রু কুঁচকালো। কি হয়েছে ভেবে পেল না। মনে আশংকা জন্মালো ভাবীর বোন, দুলাভাই এর সাথে কথা কাটাকাটি হয়নি তো। পরক্ষণেই ভাবলো ওনারা তো তননের সামনে কিছু বলে না। দেখা গেল ভাবী এসে কিছু বলছে তখন খোঁচা মেরে কথা বলে। আর তনন তো ওদের সাথে লাগতে যাবে না। তাহসী বাকি খাবার দ্রুত খেয়ে ওদের বাই বলে রওনা দিল।
ফোন কাটতেই নাহিদ গম্ভীর কন্ঠে বললো,
-“মিথিলা কান্না থামিয়ে বলো কি হয়েছে?”
মিথিলা ভয়ে ভয়ে এক এক করে খুলে বললো। নাহিদ মিথিলা কে রেখেই চলে গেল রুমে। এটা দেখে মিথিলার আরো ভয় পেয়ে গেল। তননের দিকে একপলক তাকিয়ে নাহিদের পিছে পিছে গেল সে।
_____________
তাহসী কাঁধের ব্যাগ নামিয়ে রেখে তননের কাছে এগিয়ে গেল।
-“কি হয়েছে?”
তনন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-“আমার তো কাল বাদে পরশু ব্যান্ডেজ খোলা হবে। তাহলে আমি বরং আজ মেসে চলে যায়। আশা করি এখন সব নিজেই করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।”
-“কি হয়েছে কি? দরজা খুলছে ভাবী। মনে হলো কান্না করেছে। ঘটনা কি?”
-“সেসব শুনে নাওআ। আমাকে মেসে দিয়ে আসার ব্যবস্থা করো।”
-“কেন? এইটা নিয়ে কাল ও তোমার সাথে কথা হয়েছে তনন।”
চোখ মুখ কুঁচকে বললো তাহসী।
তনন দাঁতে দাঁত চেপে চাপা স্বরে বললো,
-“প*ঙ্গু কে কতদিন বইবে? আমি থাকবো না এখানে!”
-“তনন!”
হতভম্ব হয়ে কথা বললো তাহসী।
-“আমি যাবো মানে যাবো। ওকে,ফাইন। তুমি দিয়ে আসবে না, আমি আমার বন্ধুর কাছে ফোন দিচ্ছি।”
তননের হাত থেকে ফোন কেড়ে নিল তাহসী।
-“বাচ্চাদের মতো বিহেভ কেন করছো? আমাকে বলবে তো কি হয়েছে!”
-“তুমি কোন সাহসে আমার ফোন কেড়ে নিচ্ছো? স্পিক আউট!”
তননের এসব কথা শুনে তাহসী ও রেগে গেল।
-“ওহ আচ্ছা! এই নাও ফোন। যা খুশি করো। আমার অনুমতি লাগবে এখন ফোন ধরার!”
তননের পাশে ফোন ছুড়ে দিল তাহসী।
তনন আচমকা তাহসী কে কাছে টেনে নিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দিল নিজেকে শান্ত করার জন্য। কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে তাহসী কে জড়িয়ে ধরে এক এক করে সব বললো।
তাহসী তননের কাঁধের উপর মাথা রেখে বললো,
-“ওদের সাথে না পেরে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করছো!”
-“স্যরি। আমি থাকবো না এখানে।”
কাঁধের উপর থেকে মাথা তুলে তননের পাশে বসে বললো,
-“ভাইয়ার কি দোষ? ভাইয়া কি বলবো আমি? যা বলার নিজে বলো। আমি বুঝতে পারছি না এখন কি করা ঠিক হবে।”
-“ডিসিশন ফাইনাল তাহসী। আমি যাচ্ছি।”
নাহিদ নক করে আসলো ওদের রুমে। অনেক কথা বলার পর তনন বললো,
-“ভাইয়া ক্ষমা করবেন। আমি থাকতে পারবো না।”
-“আচ্ছা! যারা বাজে কথা বলেছে , তারা তো চলে গেছে না? এখন যদি ওই কথা ধরে তুমি চলে যাও তাহলে তো ওরা জিতে গেল তাই না?”
-“ভাইয়া প্লিজ। জোর করবেন না। আর আমার তো ব্যান্ডেজ খোলা হয়ে যাচ্ছে। এখানে তিন মাস থাকা তো হতো না এমনিতেও।”
-“তুমি কি ভাবছো ব্যান্ডেজ খুলতে পারলেই সব হলো? হাঁটার অভ্যেস করতে হবে, আরো অনেক কাজ আছে।”
-“হয়ে যাবে…..”
-“বলা সহজ। আচ্ছা বলো তুমি ঠিক কোন কারণে যেতে চাচ্ছো?”
তনন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
-“এমনিতেও তো যেতাম। আর আমি কতদিন থাকবো এখানে? মেসে থাকলে স্টাডি ভালো হয়। আর ভাবীর বাড়িতে কি কিছু বলেনি ওনার বোন? আমি চাইছি না ঝামেলা বাড়ুক।”
-“তুমি এই লেইম এক্সিউজ নিয়ে পড়ে আছো? তোমার ভাবীর বাড়িতে কি হবে এটা ভেবে তোমার কি কাজ?”
তনন মৌন রইলো। নাহিদ মুচকি হেসে মিথিলা কে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“দেখেছো তোমার বোন, দুলাভাই এর কাজ?”
মিথিলা ডান হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেল। নাহিদ তার সাথে ভালো ভাবে কথায় বলছে না।
-“আর কি বলবো আমি! আমি শেষ পর্যন্ত বলবো থেকে যেতে। আমার বাসায় যদি তোমার একটুও সহ্য না হয় তাহলে যাও।”
নাহিদ বলে উঠলো। এরপর রুম থেকে বের হওয়ার পথ ধরলো।
তাহসী এগিয়ে যেয়ে বললো,
-“ভাবীর সাথে খারাপ ব্যবহার করো না। সে ভালো মানুষ। ভাবী তো কিছু করেনি।”
________
দুপুরে খাওয়ার পর তনন বিছানায় শুয়ে আছে। তার বুকের উপর মাথা দিয়ে তাহসী শুয়ে আছে।
-“তাহসী?”
-“হু।”
-“আমাদের এক রুমের বাসা নিলে হয় না? এতেও মাইন্ড করবে? আমি সত্যিই এক ফোঁটা ইচ্ছা নেই থাকার। বুঝো প্লিজ।”
তাহসী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
-“এক মাসের জন্য? অনেক ঝামেলা না? অনেক কিছু লাগবে!”
-“আমরা চাইলে এক মাস নয়। এখন থেকেই এক সাথে থাকা শুরু করতে পারি। আস্তে আস্তে সব হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। আমাদের ফাইনাল এক্সাম এর আর ধরো এক বছর মতো বাকি। অবশ্য সেশন পিছিয়ে দিলে সমস্যা! তারপর একটা চাকরি পেয়ে গেলে আলহামদুলিল্লাহ।”
-“রান্না, ঘর পরিষ্কার, বাজার করা, আরো অনেক কিছু। পড়ালেখা টা একটু টাফ হয়ে যায়।”
-“এটা অবশ্য ঠিক।”
তাহসী বালিশে মাথা রাখলো। তনন পাশে তাকালো জিজ্ঞাসা সূচক চাহনিতে।
তাহসী হাই তুলে উত্তর করলো,
-“ঘুম পাচ্ছে।”
তনন কিছু বললো না। মুচকি হেসে সায় জানালো।
______________
-“ওই ছেলের মধ্যে কি পেয়েছো তুমি যে তোমার ওকেই চাই!”
মেয়ের কথায় বিরক্ত হয়ে বলে উঠলেন ভাইস প্রিন্সিপাল সেলিম চৌধুরী।
রিচি নাছোড়বান্দা।
-“বাবা আমি ওকেই চাই। ওই মেয়ের মধ্যে কি এমন আছে!”
-“সেইটা কথা না, কথা হচ্ছে ওই ছেলের মধ্যে কি এমন আছে যে তোমার ওকেই চাই? আমি কোনো ঝামেলা চাই না। সাথে ওই ছেলের নাম ও শুনতে চাই না এরপর কখনো!”
-“কেন বাবা!”
-“কারণ তার কি আছে? তার উপর ম্যারিড। আমার মেয়েকে নিশ্চয় ওসব লেভেলের ফ্যামিলি তে আমি বিয়ে দিতে পারি না। তোমার জেদ বাদ দাও। অতি দ্রুত আমি তোমার বিয়ে ঠিক করবো। এসব মাথা থেকে নেমে যাবে।”
রিচি রাগতে রাগতে বাবার রুম থেকে বের হয়ে গেল।
চলবে ইনশাআল্লাহ;
#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_৩৫
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)
তননের ব্যান্ডেজ খোলা হয়েছে। ডাক্তার দুই মাস রেস্টে থাকতে বলেছেন। এখনই হাঁটতে পারবে না। অল্প অল্প করে হাঁটার অভ্যাস করতে হবে।
তনন ক্লাস করতে পারবে কি-না জিজ্ঞেস করায় জানিয়েছেন সপ্তাহে তিন চারদিন এক দুইটা করে করতে পারে।
রাতে তননের বুকের সাথে মাথা ঠেকিয়ে বই পড়ছে তাহসী। তনন বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে। তননের এক হাত তাহসী কে ধরে আছে,আরেক হাত দিয়ে মোবাইল স্ক্রল করছে।
-“কাল আমার সাথে এক জায়গায় যাবে?”
হঠাৎ তনন বলে উঠলো।
তাহসী পড়া থামিয়ে অবাক হয়ে বললো,
-“এক জায়গায় যাবো মানে? আর আজ মাত্র ব্যান্ডেজ খোলা হয়েছে, কাল কোথাও যাওয়া হবে না।”
-“আরে যাবো আর আসবো। তুমি তো থাকবা।”
-“কাল ভার্সিটি আছে। তুমি বাসায় থাকবা। অন্তত এক সপ্তাহ পর থেকে ক্লাসে যেও।”
-“কাল একটা কাজ আছে। ঘন্টা দুয়েক এর মধ্যেই কমপ্লিট হয়ে যাবে আশা করি। আমরা যাচ্ছি এইটাই ফাইনাল।”
বিরক্তি নিয়ে বললো তনন।
তাহসী সোজা হয়ে বসে পুনরায় পড়া শুরু করলো। তনন তাহসীর হাত থেকে বই পাশে রেখে দিয়ে তাকে নিজের কাছে টেনে নিল।
-“আমি দুইবার বলার পর সেইটা নিয়ে ঝামেলা পাকাবা না প্লিজ! কাজ আছে, আমার নিজেরও ইচ্ছা নেই কারো উপর নির্ভরশীল হয়ে বাইরে বের হওয়ার। এতদিন ডাক্তারের কাছে গিয়েছে। ক্লাসে বন্ধুদের উপর নির্ভরশীল হতে হবে। কিছুদিন যাক,তারপর যাবো।”
-“ইচ্ছে।”
মৃদু স্বরে উত্তর করলো তাহসী।
তাহসী মুখে দুই হাত রেখে তাহসীর মুখ উঁচু করে নিজে মুখ নামিয়ে আনলো তনন। ঠোঁটে শব্দ করে চুম্বন করে বললো,
-“রেডি থেকো বিকেলে। ভার্সিটির কিছু হবে না।”
তাহসী কিছু বললো না। তনন এক এক ধাপ করে এগিয়ে গেল। বহুদিনের তৃষ্ণা মেটানোর পালা যেন আজ।
🍁🍁🍁
পরদিন বিকেলে তনন তাহসীকে নিয়ে হাজির হলো ভার্সিটির কাছাকাছি এক বাড়িতে। তাহসী অবাক হয়ে বললো,
-“এখানে কে থাকে?”
তনন তাহসীর চোখে চোখ রেখে বলল,
-“আল্লাহ ভাগ্যে রাখলে আমরা থাকবো ইনশাআল্লাহ।”
বিস্ময়ে তাহসী হতবাক হয়ে গেল। কিছুক্ষণ বাদ বললো,
-“সিরায়াসলি!”
-“হু।”
-“তোমার এই ডিসিশনের মানে কি?”
-“বাসায় যেয়ে কথা বলবো এই ব্যাপারে।”
তাহসী পুরোটা সময় চুপ করে থাকলো। বাড়িওয়ালার সাথে তননের বিস্তারিত কথা হলো। তননের এক বন্ধু এই বাড়ির খোঁজ দিয়েছে। এক রুম ভাড়া দিবে। এক রুমের ছোট ফ্ল্যাট দেখে তননের ভালোই লাগলো। একটা বেডরুম, একটা রান্নাঘর, একটা ওয়াশরুম আর একটা ছোট ডাইনিং রুম।কেউ আসলে ওখানে থাকার মতো ব্যবস্থা করা যাবে। দশ হাজার টাকাতে তনন রাজি হয়ে গেছে। বারো হাজার টাকার জায়গায় তননের বন্ধুর ফুফু হওয়ায় দুই হাজার টাকা কম। তাহসীর কাছে তনন জিজ্ঞেস করলো,
-“পছন্দ হয়েছে?”
তাহসী কাটকাট জবাব দিল,
-“ভালো।”
তনন আগেই কথা বলে রেখেছে তাহসী ভালোই বুঝলো।
পাকাপাকি কথা বলে তনন এডভান্সড দিয়ে দিল। মাসের আজ দুই তারিখ। তনন বললো দুই তিন এর মধ্যেই উঠে পড়বে। তাহসী রাগে একটা কথাও বললো না।
বাসায় আসতেই তনন জিজ্ঞেস করলো,
-“কেমন লাগলো?”
-“আমাকে বলার প্রয়োজন বোধ করলে না? আমার ভাই ভাবীর দোষ টা কোথায়?”
-“তাদের দোষ দিচ্ছি না আমি তাহসী। এভাবে আর কতদিন?”
-“থাক,আর কিছু বলতে হবে না।”
-“বললে এমন চিল্লাচিল্লি করতা বলেই বলিনি,এখন সেই কাজ ই করতেছো!”
তাহসী কিছু না বলে চেঞ্জ করতে চলে গেল।
তননের অনেক খুশি লাগছে। অবশেষে নিজেদের মতো থাকতে পারবে। যদিও কষ্ট হবে অনেকটা। তার গোছানো টাকা থেকে আজ টাকা দিয়ে আসলো। কিন্তু অন্যান্য খরচ তো রয়েছে। এখন সব টিউশনি অফ। এইটা যে ভাবেনি তা নয়, আগেই ভেবেছে। তবে বাসা তো নিতেই হতো, এভাবে আর কতদিন। আর পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত মেসে থাকলে যে আবার অসুস্থ হয়ে পড়বে। এটা ভালো করেই জানে তনন। তবে দুই মাস একটু কষ্ট করতে পারলেই হলো।
তনন ভাবলো একটা টিউশন করানোর কথা। সাথে ভাবলো কাল সবার কাছে ফোন করে খোঁজ নিবে তাকে আর রাখবে কিনা ওনারা। না হলে আবার টিউশন খুঁজতে হবে।
রাতে তননের পায়ের ব্যথা বাড়লো। না পারছে তাহসী কে বলতে,না পারছে সহ্য করতে। বিকালে তখন জোর করে হাঁটার চেষ্টা করেছিল। মানুষ দেখলে খোড়া ভাববে এটা সে চাইনি। তাহসী অনেক বার বারণ করেছে, কিন্তু তনন শুনেনি।
তাহসী পড়া শেষ করে বই গুছিয়ে রাখলো। তনন সেইটা লক্ষ্য করে চোখ মুখ কুঁচকে বললো,
-“এইদিকে আসো তো একটু।”
তাহসী কাজ শেষে তননের কাছে এসে তার দিকে জিজ্ঞাসা সূচক চাহনিতে তাকালো। তনন শ্বাস ফেলে বললো,
-“পা ব্যথা করছে!”
-“কি করবো? গরম পানিতে চুবাবো?”
-“সিরিয়াসলি ব্যথা করে।”
-“তাহলে মামুনির কাছে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করি কি করতে হবে।”
-“মজা নাও!”
তাহসী বিছানার উপর বসে বললো,
-“কি করবো বলো? আমি কিছু জানিনা। ব্যথার ওষুধ দিবো? কে বলেছিল বাসা নিতে?”
-“উফ, কিছু করো। ডাক্তারের থেকে না শুনে কিভাবে ওষুধ খাবো? আচ্ছা আম্মু কে ফোন দিই।”
তনন সেলিনা শেখ কে সব খুলে বললো। উনি রাগ করলেন তননের এমন কাজের জন্য। তনন বাসার কথাটা এড়িয়ে গেল। তনন ফোন রেখে বললো,
-“তেল মালিশ করে দেখতে বললো। ডাক্তার ও তো বলছিল নিয়মিত এটা করার কথা!”
-“হ্যা,জানি।”
-“যাও আনো।”
তাহসী হাই তুলতে তুলতে উঠে দাঁড়ালো। পা মালিশ করে দিবে ভাবতেই কেমন লজ্জা লাগছে তার।
তাহসী তেল, রসুন হালকা গরম করে নিয়ে আসলো। তননের পরনে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট। এক্সিডেন্ট এর পর থেকে এই প্যান্ট ই পরছে। আজ শুধু জিন্স এর ফুল প্যান্ট পরে বাইরে গিয়েছিল।
তাহসী লজ্জা নিয়ে তননের পায়ে হাত রাখলো। তনন ফোন দেখছিল। খেয়াল করে বললো,
-“পারবে?”
-“তাহলে নিজে করো।”
তনন তাহসীর কোমর জড়িয়ে ধরে কাধের উপর থুতনি রেখে বললো,
-“হু, দেখিয়ে দিচ্ছি করো। নিজে চাপ দিবো কিভাবে?”
-“সরো তো।”
-“উহু।”
তাহসীর পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয় এভাবে। সে বিরক্তি দেখালে তনন ছেড়ে দিবে এটা ভেবে তাহসী বিরক্তি নিয়ে বললো,
-“আমি পারবো না এভাবে।”
তনন ছেড়ে দিয়ে বললো,
-“করাই লাগবে না। ওষুধ দাও।”
তাহসী কুসুম গরম তেল হাতে নিয়ে আস্তে আস্তে ডলে দিতে লাগলো। তনন কিছু বললো না। মুখ গোমড়া করে রাখলো।
-“কমেছে?”
তননের উত্তর না পেয়ে তাহসী পিছনে ঘুরে তাকালো। একমনে ফোনে ব্যস্ত, সম্ভবত মেসেঞ্জারে। কারণ অনেকক্ষণ ধরে টুংটাং আওয়াজ শুনতে পারছে তাহসী।
-“আমি কাজ করছি আর তুমি চ্যাট করতেছো!”
-“তো?”
-“কমেছে ব্যথা?”
-“একটু।”
তেল ঠান্ডা হয়ে যাওয়ায় তাহসী উঠে গেল। তেলের বাটি রেখে এসে হ্যান্ডওয়াস দিয়ে হাত ধুয়ে আসলো। লাইট অফ করে তননের পাশে এসে শুয়ে পড়লো।
-“ভাইয়া কে বলেছো বাসার কথা?”
তনন তাহসীর দিকে ঘুরে প্রশ্ন করলো।
-“আমি কিছু বলতে পারবো না কাউকে। তুমি বলো!”
তনন উত্তর করলো না কোনো। এদিকে টাকার চিন্তা মাথা থেকে যাচ্ছে, ওদিকে রিচি মেসেজ দিয়েই যাচ্ছে। ভাইস প্রিন্সিপাল এর মেয়ে না পারছে কিছু বলতে, না পারছে কিছু সহ্য করতে।
চলবে ইনশাআল্লাহ;