তোমাতে বিলীন হবো পর্ব-৩২+৩৩

0
491

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_৩২
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

তনন কে নাহিদের বাসায় নিয়ে যাওয়া হলো। তনন মুখ গোমড়া করে রেখেছে। কার ভালো লাগবে অসুস্থ হয়ে আরেক জনের বাসায় পড়ে থাকতে। এছাড়া আর উপায় ও নেই। সেলিনা শেখ তননকে বললে তনন মেনে নিয়েছে শেষ পর্যন্ত। এখানে থাকলে যা একটু পড়াশোনা হওয়ার সম্ভাবনা আছে গ্রামে গেলে তা হবে না। বন্ধুরা এসে নোট দিয়ে যাচ্ছে,সাথে পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছে একটু। গ্রামে গেলে‌ যে নিঃসঙ্গ তা থাকতো, এখানে আর তা নেই। তাহসীকে সবসময় কাছে পাওয়া যাচ্ছে।

সেলিনা শেখ দুই রাত থেকে চলে গেলেন। নাতাশা রহমান, তৌহিদ হোসেন ও চলে গেলেন। সেলিনা শেখ যেদিন চলে গেলেন তাহসী সেদিন নাহিদের বাসায় এসে উঠলো প্রয়োজনীয় সব জিনিস নিয়ে। নাহিদ তিন রুমের বাসা নিয়ে থাকে। রুম বুক হয়ে যাওয়ায় তাহসী তাই ছিল না এই দুইদিন। তৌহিদ হোসেন তননের সাথে থাকতেন। তনু, নাতাশা রহমান, সেলিনা শেখ ওনারা এক রুমে থাকতেন।

তাহসী তননের খেয়াল রাখতে যেয়ে প্রথমে সব তালগোল পাকিয়ে ফেলছে। তননের খাবার আনে তো পানি আনতে ভুলে যায়, পানি আনে তো হাত ধোঁয়ার জিনিস আনতে ভুলে যায়। তনন তাহসীর কাণ্ড দেখে হেসে ফেললো। বললো,
-“আস্তে ধীরে কর এক এক করে। তাড়াহুড়ো নেই কোনো। তোমার অভ্যাস নেই আমি জানি।”

তাহসী বিছানার উপর বসলো। তনন বললো,
-“খেয়েছো?”

-“না, একটু পরে খাবো।”

-“আমার জন্য অপেক্ষা করছো নাকি? এত ভালোবাসা!”

-“জি না, এইসব কাজ আমার মোটেও পছন্দ না। হাজব্যান্ড এর জন্য ক্ষুধা পেটে হা করে বসে থাকবো, ওইসব একদম ফালতু বিষয়। আরে হাজব্যান্ড, ওয়াইফ এক প্লেটে ভাত খাবে এটা সুন্নত। কিন্তু না খেয়ে বসে থাকা এটা কি! নিজেরা না খেয়ে বসে থাকবে, আর হাজব্যান্ড বাইরে থেকে খেয়ে এলে ফ্যাস ফ্যাস করে কেঁদে নিজে ভাত খাবো না, না ওমন ন্যাকা হতে পারবো না। আমি ভাবীদের সাথে খাবো তাই খাইনি এখনো।”

তনন চুপ করে শুনলো। তাহসীর মনমতো একটা কথা না হলেই মাথা গরম হয়ে যায়। এইযে এখন এতো কথা বললো। এমনিতে তো এতো কথা বলবে না, পছন্দসই না হলেই বলবে। তনন কিছু একটা ভেবে নিয়ে ভাত মাখাতে মাখাতে বললো,
-“আমার পাশে বসো ততক্ষণ তাহলে।”

তাহসী উঠে যেয়ে বসলো। কৌতুহল নিয়ে আওড়ালো,
-“কেন?”

তনন তাহসীর মুখে প্রথম লোকমা তুলে দিল। তাহসী বুঝে না উঠেই মুখে নিয়ে নিল। পরক্ষণেই তাড়াতাড়ি করে চিবাতে শুরু করলো কথা বলার উদ্দেশ্যে।
তনন নিজ থেকেই বললো,
-“একসাথে খেলে সওয়াব হবে। সেইটা মিস দিবো কেন?”

তাহসীর মন খুশিতে ভরে উঠল। মুগ্ধময় দৃষ্টিতে তাকালো তননের দিকে। পরক্ষণেই আবার চোখ সরিয়ে নিল। তাহসী আর নিতে না চাইলেও তনন দিল জোর করে। তাহসী ভালো লাগায়, লজ্জায় মেঝের দিকে তাকিয়ে থাকলো।

তনন তিন চার লোকমা তাহসীকে দেওয়ার পর বলে উঠলো,
-“আম্মু আমাকে খাইয়ে দিচ্ছিল এতোদিন। এখন আম্মু চলে যেয়ে উল্টা আরেকজন কে খাওয়াতে হচ্ছে আমার।”

তাহসী উঠে পড়লো। হাত ধুয়ে এসে কাঁপা কাঁপা হাতে তননের মুখে তুলে দিল। তননের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। সে এটাই চাইছিল। তাহসী আর নিজে না খেয়ে পুরোটা তননকে খাওয়ালো। এরপর তাহসী খেতে চলে গেল। ইতিমধ্যে মিথিলা একবার ডেকেছে খাওয়ার জন্য।

দিনকাল মোটামুটি ভালোই চলছে। তনন বন্ধুদের কাছ থেকে প্রতিদিন নোট নিয়ে পড়াশোনা করছে। মাঝে মাঝে তাহসীর কাঁধে ভর দিয়ে বারান্দায় যেয়ে দাঁড়ায়। সবসময় বিছানায় শুয়ে থেকে হাঁপিয়ে উঠে।

আজ তননের দুই বান্ধবী দেখা করতে এসেছে। তননের রুমেই বসতে দিয়েছে তাহসী। তাহসী ভাবীর থেকে নাস্তা নিয়ে রুমে গেল ওদের দেওয়ার উদ্দেশ্যে।
তননের এক ফ্রেন্ড রোশনি বললো,
-“তোদের এত বড় বাসা থাকতে তুই হোস্টেলে থাকতিস! তোর ভাবী,বোন সমস্যা করে?”

তাহসী ভ্রু কুঁচকে তাকালো তননের দিকে। তনন কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে তখনই আরেক টা মেয়ে, রিচি বললো,
-“তনন তোমার এক্সিডেন্ট এর কথা আমাকে জানাওনি কেন? কাল শুনেছি। জানো কত ভয় পেয়েছিলাম! আমি তো আপুর বাসায় সিলেট ছিলাম। তুমি আমাকে কেন জানাওনি?”

-“আলাদা করে জানানোর কিছু দেখছি না তো। আর এমনিতেই জানার কথা। তাছাড়া তোর কথা খেয়াল ছিল না।”

-“তনন বলছি না আমাকে তুমি করে বলবা।”

তনন মনে মনে বিরক্ত হচ্ছে। কিন্তু বলতে পারছে না। ভাইস প্রিন্সিপাল স্যার এর মেয়ে বলে কথা।

রোশনি তাহসীর দিকে তাকিয়ে বললো,
-“আপু বসুন না! দাঁড়িয়ে আছেন যে।”

তাহসী হাসিমুখে বললো,
-“আমাকে তাহসী বলো। আমি তোমাদের বয়সী। আপু বলতে কেমন শোনায়!”

রিচি প্রায় লাফিয়ে উঠে বলে উঠলো,
-“ওয়াও তনন তোমার টুইন আছে। তোমার তো দেখছি কিছুই জানি না!”

তনন বিরক্তি নিয়ে বললো,
-“ও আমার টুইন না। আমার ফ্রেন্ড। আমার ওয়াইফ।”

-“মজা করবে না এসব নিয়ে একদম!”

তনন বলে উঠলো,
-“মজা না! এইটা আমার শ্যালকের বাসা। তাহসীর ভাইয়ের বাসা। সি ইজ মাই ওয়াইফ।”

রোশনি ও অবাক হয়ে গেছে। সিনক্রিয়েট হবে দেখে দাঁড়িয়ে গেল ও। রিচির হাত টেনে ধরে বললো,
-“চল এখন যাই।”

রিচি আঙ্গুল উঁচিয়ে বললো,
-“আমার সাথে তুমি এমন করতে পারো না!”

রোশনি রিচির হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে চাইছে। তনন বললো,
-“রোশনি দুই মিনিট দাঁড়া। আর রিচি আমি কি করেছি তোর সাথে? তোর সাথে আমার কথা দেওয়া নেওয়া ছিল? না, তো।”

-“তোমাকে দেখে নিবো।”
তাহসীর দিকে তাকিয়ে এই কথা বলে রিচি রোশনি কে নিয়ে চলে গেল। রোশনি তাহসীর দিকে তাকিয়ে ইশারায় স্যরি জানালো। তাহসী মাথা নাড়িয়ে তননের দিকে তাকালো। তনন বললো,
-“ওরা চলে গেছে। ফ্ল্যাটের দরজা দিয়ে আমার কাছে এসো।”

তাহসী দরজা দিতে যেতেই মিথিলার সামনে পড়লো। মিথিলা বলে উঠলো,
-“তোমার কাছেই যাচ্ছিলাম। আমি এখন বাইরে যাচ্ছি। ফ্রেন্ড দের সাথে মিট করবো‌ তোমার ভাইকে জানিয়েছি। আমার আসতে দেরি হলে একটু কষ্ট করে ডাইনিং থেকে খাবার নিয়ে খেয়ে নিল।”

তাহসী বললো,
-“কোনো কষ্ট হবে না ভাবী। তোমার যতক্ষণ ইচ্ছা আড্ডা দিয়ে এসো।”

তাহসী দরজা আটকে তননের কাছে আসতেই তনন তার পাশে বসতে বলল।তাহসীর বসার পর তনন বললো,
-“আমার সাথে পড়ে। অন্য ডিপার্টমেন্ট। ভাইস প্রিন্সিপাল এর মেয়ে।”

-“ওহ।”

তাহসীর স্বাভাবিক ভাব ভঙ্গি দেখে তনন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো,
-“ওমা জেলাসি ফিল হয় না?”

-“না, বিশ্বাস আছে। তবে মেয়েটাকে পছন্দ হয়নি।”

তননের মন ভরে গেল এই কথায়। তবুও দুষ্টুমি করার উদ্দেশ্যে বললো,
-“পছন্দ হলে কি বিয়ে করিয়ে দিতে নাকি?”

তাহসী‌ ভ্রু কুঁচকে বলল,
-“তোমার তো তাই করতে মন চাচ্ছে,তাই না? আসলেই অতিরিক্ত বিশ্বাস করা ভালো না।”

তনন মুখ বাকাতেই তাহসী হেসে ফেললো। তনন ও বুঝলো তাহসীও মজা করেছে। তনন এক হাত দিয়ে তাহসীকে নিজের খুব কাছে নিয়ে আসলো। তাহসী সরিয়ে দেওয়ার জন্য তননের বুকে হাত রাখতেই সেই হাত তনন আরেক হাত দিয়ে ধরে ফেললো। তাহসী ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দিল তনন।

তাহসী ছাড়া পেতেই তননের জন্য বড় বাটিতে পানি আর টাওয়েল নিয়ে আসলো। শরীর মুছিয়ে দিতে হবে। গোসল তো করতে পারছে না। তনন অস্বস্তি নিয়ে বললো,
-“মাথায় শ্যাম্পু নেওয়ার দরকার। চুলে চুলকাচ্ছে।”

-“কিভাবে দিবো?”

-“ওয়াশরুমে একটা চেয়ার দাও।”

-“অবশ্যই নয়। পানি একদম লাগানো যাবে না।”

-“আমি আর থাকতে পারছি না এইভাবে।”

তাহসী একটু চুপ থেকে বললো,
-“জ্বর আসলে মাথায় পানি ঢালে সেইভাবে শুয়ে পড়ো। যেটুকু শ্যাম্পু করা যায়, সেটুকু হবে। কিন্তু পলি কাগজ কোথায় পাবো? ভাবী ও তো নেই।”

তাহসী এদিক ওদিক খুঁজে রান্নাঘরে ফ্রেশ পলিথিন পেয়ে তিন চারটা নিয়ে আসলো। এগুলো ফ্রিজে মাস, মাংস রাখার কাজে ব্যবহৃত হয়।

চলবে ইনশাআল্লাহ;

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_৩৩
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

বিশদিন পেরিয়েছে। আল্লাহ তায়ালার রহমতে তননের উন্নতি হচ্ছে। তাহসী পড়াশোনা মিলিয়ে সব গুছিয়ে উঠতে পারছে না। ভার্সিটি, টিউশন মিলিয়ে তননকে তেমন সময় ই দিতে পারছে না। তবুও যতক্ষণ বাসায় থাকে তননের খেয়াল রাখার চেষ্টা করে।

বিকালে তনন ফেসবুক স্ক্রল করছে। তাহসী‌ তখন ভার্সিটি শেষ করে একটা টিউশন করিয়ে ফিরলো। তাহসী ফ্রেশ হয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই তনন বললো,
-“এদিকে এসো।”

তননের পাশে এসে ধপ করে বসে পড়লো তাহসী। ক্লান্ত কন্ঠে জানতে চাইলো,
-“বলো।”

-“তোমাকে অনেক ঝামেলায় ফেলে দিয়েছি না? টিউশন ছেড়ে দিতে পারতা! ভাইয়াও তো রাগ করে।”

-“টিউশন কি আমি তোমার জন্য করি? ভাইয়া জানে আমি আমার ডিসিশন পাল্টাইনা অকারণে। আর এটা আমার ভালো লাগে করি।”

-“আমার ওষুধের টাকা কে দেয়!”

-“ওহ্ আচ্ছা আচ্ছা! এইবার বুঝেছি। ওকে, মামুনি কে বলো টাকা পাঠাতে।”

-“আমার কাছে আছে টাকা।”

-“ভালো। আমি আমার টাকা দিয়ে কাল বই কিনে নিয়ে আসবো।”

-“এসো। নিষেধ করেছি? ওই টাকা দিয়ে ওষুধ খাওয়ার জন্য মরে যাচ্ছি।”

তাহসী কিছু বলার আগেই মিথিলা দরজার সামনে এসে বললো,
-“ঝগড়া না করে খেতে এসো তাহসী। পরে ঝগড়া করো।”
এটা বলেই হেসে মিথিলা চলে গেল।

তাহসী উঠে দাঁড়ালো। তনন অবাক হয়ে বললো,
-“দুপুরে খাওনি?”

তাহসী উত্তর না দিয়েই মুখ ফুলিয়ে চলে গেল। তনন পারলো না উঠে তাহসী কে ধরতে মনে মনে বেশ রাগ হলো তার।

🍁🍁🍁
দিন পনেরো অতিবাহিত হয়েছে। তননের পায়ের ব্যান্ডেজ খোলা হবে আর দিন তিনেক বাদে। মনে মনে প্রচুর এক্সাইটেড তনন। মনে মনে আল্লাহ তায়ালা কে ডেকে যাচ্ছে। বিছানায় শুয়েই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে সে।

মিথিলার বড় বোন, দুলাভাই ঘুরতে এসেছেন বাসায়। তাহসী,তনন কে দেখে বিরক্ত। তাহসী ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আজকাল রুমেই বেশি থাকে। তাহসী যতটুকু পারে মিথিলা কে সাহায্য করে প্রথম থেকেই। রান্না টা মিথিলায় করে। তাও যেন তাহসীর ভুল ধরা লাগবে‌।

তাহসী তনন কে নিয়ে বারান্দায় যেয়ে দাঁড়িয়েছে। তনন তাহসীর দিকে তাকিয়ে বললো,
-“মুখ ভার কেন? এইজন্যই বলেছিলাম এখানে না আসি।”

তননের কথার মানে বুঝতে পেরে তাহসী বললো,
-“আমার ভাই, ভাবী কিছু বলেছে?”

-“না,তা না।”

-“তাহলে?”

-“কিছু না, বাদ দাও।”

-“আচ্ছা ব্যাণ্ডেজ খোলার পর আমি মেসে চলে যাই! তুমি আর জোর করো না।”

তাহসী চোখ বড় বড় করার অভিনয় করে বললো,
-“লাইক সিরিয়াসলি! আমার জোর কথাতে তুমি আছো? আমার জোর করাতে কারো কিছু আসে যায়?”

তনন হেসে বারান্দার গ্রিলে হেলান দিয়ে তাহসীর কোমর জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নিল।‌ বললো,
-“আসে যায়।”

তাহসী অন্য দিকে দৃষ্টি দিয়ে বললো,
-“জানতাম না।”

ঠোঁটে শব্দ করে চুম্বন করে তনন বললো,
-“জেনে নাও।”

🍂🍂🍂
পরেরদিন তনন কে খাইয়ে দিয়ে তাহসী ভার্সিটি গেল। তনন নিজেই খায় কিন্তু মাঝে মাঝে তাহসী কে বলে।
তাহসী বের হতেই তননের ফোনে সেলিনা শেখের কল আসলো। ওনাদের কুশল বিনিময় শেষ হতেই সেলিনা শেখ বললেন,
-“আমি কি আসবো ঢাকা তে? তোর ব্যান্ডেজ খোলা হবে।”

তনন চুপ থাকলো কয়েক সেকেন্ড। তারপর ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বললো,
-“আম্মু তুমি আবার কষ্ট করে আসবা! তনুর ও স্কুল।”

-“ও সমস্যা হবে না। তোর টাই আসল এখন।”

-“আম্মু ভাবীর বোনেরা এসেছে।”

-“ওহ্ আচ্ছা। তাহলে পরে যেয়ে না হয় দেখে আসবো।”

তনন মন খারাপ করে‌ বললো,
-“হুম। ইনশাআল্লাহ।”

বই পড়েই ঘন্টা দুয়েক কেটে গেল তননের। পানি পিপাসা লাগাতে পাশে তাকালো পানির উদ্দেশ্যে। বেড সাইড ছোট টেবিলে সবসময় পানি রেখে দেয় তাহসী। যেন তনন সহজে পানি নিয়ে খেতে পারে। কিন্তু আজ পানির জগ খালি। তনন বুঝলো তাড়াহুড়ো তে পানি রাখতে ভুলে গেছে।
উপায় না পেয়ে মিথিলা কে ডাক দিল,
-“ভাবী! ভাবী একটু পানি দিয়ে যাবেন?”

এমনিতে মিথিলা আর তননের কথা হয় না তেমন। কাজের কথাতেই কথা হয়। মিথিলা বললো,
-“আসছি।”

মিথিলা জগ নিয়ে চলে যেয়ে পানি ভরে নিয়ে আসলো। পানির জগ রেখে জিজ্ঞেস করলো,
-“তোমাকে কি আর কিছু দিবো?”

মিথিলার পিছু পিছু মিথিলার দুলাভাই ও এসেছেন দেখলো তনন। উনি হাসি দিয়ে বলে উঠলেন,
-“আর কি দিবে শালিকা? তাহসী চলে গেলে তুমিই কি প্রতিদিন পানি দাও?”

দুলাভাই কি ইঙ্গিত করলেন বুঝতে এতটুকু ও কষ্ট হলো না তননের। তনন রাগে দাঁতে দাঁত চেপে তাকালো ওনার দিকে।
মিথিলা লজ্জা তে কথায় বলতে পারছে না। তাকে কথা বলতে হবে দেখে মিথিলা বললো,
-“মুখ সামলে কথা বলবেন দুলাভাই! তাহসী সম্ভবত ভুলে গেছে পানি দিতে।”

মিথিলার বড় বোন ও আসলো। বললেন,
-“কি হয়েছে রে?”

দুলাভাই আপুকে সব বললেন। আপু চোখ রাঙিয়ে মিথিলার দিকে তাকিয়ে বললো,
-“সত্যি কথা শুনলে নাকি মানুষ রেগে যায়! তোর দুলাভাই তো মজায় করছে। এখন ননদের দরদ বেশি হয়ে গেল!”

-“আপু বাজে কথা বলবে না একদম। প্লিজ চুপ থাকো‌।”

-“তাই নাকি মিথিলা! আমরা বাজে কথা বলছি? এতদিন ভাইয়ের বাসায় পড়ে থাকে কোন মেয়ে? প্রেমের বিয়ে তাই না! সমবয়সী না?”
দুলাভাই বলে উঠলেন।

তনন আর চুপ থাকতে পারলো না। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
-“আপনি বয়সে আমার বড় না হলে ফালতু কথা বলার সময় জন্য…”

তননের কথা শেষ করতে না দিয়েই মিথিলার দুলাভাই বললেন,
-“কি করবি রে তুই? পড়ে আছিস তো বিছানায় প*ঙ্গু হয়ে। বিছানা থেকে এক পা ফেলতে পারবি?”

তনন ক্ষেপে গেল। বিছানা থেকে নামতে নিলে মিথিলা ওর দিকে তাকিয়ে বললো,
-“তনন প্লিজ এদের কথাতে কান দিও না। তুমি নেমো না।”

-“আহা! দরদ উঠলে উঠছে।”

-“আপু আমার বাসা থেকে চলে যাও। তোমার মন মানসিকতা এত নিচে নেমে গেছে!”

-“তুই বের করে দিচ্ছিস আমাকে?”

-“দিচ্ছি!”
অজানা ভয়ে, লজ্জায় কাঁপছে মিথিলা। তনন তো প্রথম থেকেই থাকতে চাইনি কারো বাসায়। এখন নিশ্চিত ঝামেলা বাধবে! নাহিদ জানলে তো বকা দিবে।

দুলাভাই বলে উঠলেন,
-“বুঝো না! আমার না থাকলে সুবিধা হবে যে।”

-“থাপ্পড় না খেতে চাইলে বের হন আমার বাসা থেকে।”
হুংকার দিয়ে বলে উঠলো মিথিলা।

সেই সময় কলিং বেল বেজে উঠলো। মিথিলা কেঁপে উঠলো শব্দ শুনে। দুলাভাই মনের মধ্যে কথা সাজিয়ে নিয়ে দরজা খুলতে গেলেন। যেয়ে দেখেন নাহিদ দাড়িয়ে।
নাহিদ ওনাকে সরিয়ে তাড়াহুড়ো করে বাসার মধ্যে ঢুকলো। গলা উঁচিয়ে বললো,
-“কি হয়েছে মিথিলা? তোমার গলার আওয়াজ শুনলাম।”

নিজেদের রুমে যেতে তাহসীর রুম পরে আগে। সেখানে মিথিলা কে দেখে নাহিদ ওখানে গেল।

দুলাভাই আগে আগে বলে উঠলেন,
-“তোমার বোনের হাজব্যান্ড এর সাথে তোমার বউয়ের কি সম্পর্ক জানো কিছু?”

-“একদম বাজে কথা বলবেন না। প্রথম থেকেই দেখছি আমার বোনের সাথে খারাপ ব্যবহার করছেন, খোঁচা দিয়ে বাজে কথাও বলছেন! আমার বোনের সাথে ফ্লার্ট করতে না পেরে এই কাহিনী শুরু করেছেন? মিথিলার জন্য আমি কিছু বলিনি। এখন ভালো ভাবে বলছি বের হয়ে চলে যান। ওরা কি সম্পর্ক আমি জানি।”

উনি পুনরায় কিছু বলতে গেলে নাহিদ হাত উঁচু করে থামিয়ে দিল। ততক্ষণে মিথিলার বড় বোন ব্যাগ গুছিয়ে ফেলেছে। আরো দুয়েক কথা বলে উনারা বের হয়ে গেলেন।

মিথিলা নাহিদ কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। নাহিদ ওকে আগলে নিয়ে বললো,
-“তনন কি হয়েছে বলবে! এ তো কাঁদতে শুরু করলো।”

তনন কিছু বললো না। ফোন দিয়ে ডায়াল করলো তাহসীর নাম্বারে।

চলবে ইনশাআল্লাহ;

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে