তোমাতে বিলীন হবো পর্ব-৩০+৩১

0
511

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_৩০
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

শনিবারের দিন সকালবেলা তাহসী আর তনন রওনা দিল ঢাকার উদ্দেশ্যে।
ট্রেনে উঠে তাহসীর শুকনো মুখ দেখে তনন বললো,
-“কি হয়েছে?”

তাহসী অন্যমনস্ক হয়ে ছিল। তননের কথায় সম্বিত ফিরে পেয়ে বললো,
-“কিছু না।”

-“অবশ্যই কিছু! বলো।”

তননের হাত থেকে পানির বোতল নিয়ে তাহসী একটু পানি খেয়ে বললো,
-“বাড়িতে কি শান্তি। আম্মু সব করে দিবে। আর ঢাকায় যেয়ে সব নিজে! তাছাড়াও একা একা ভালো লাগে না ওখানে থাকতে। এটাই। বাদ দাও।”

-“পড়াশোনা শেষে গ্রামে থাকতে চাও নাকি?”

-“এমন কোনো প্লান নেই। আর দূরে থাকলে একটা আলাদা টান থাকে। কাছে থাকলে তা বোঝা যায় না।”

তনন সিটে গা এলিয়ে দিয়ে বলল,
-“আমরা কবে একসাথে থাকবো বলোতো?”

একটু চুপ থেকে তাহসী উত্তর দিল,
-“আল্লাহ যেদিন ভাগ্যে রেখেছেন।”

তনন তাহসীর হাত নিজের মুঠোয় নিল। স্লাইড করতে করতে বললো,
-“আনুমানিক?”

-“তুমিই বলো।”

কিছুক্ষণ চুপ থেকে তনন তাহসীর দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-“আমরা চাইলে এখন থেকেই থাকতে পারি।”

তাহসী তননের দৃষ্টি দেখে অন্যদিকে তাকালো। বললো,
-“কিভাবে শুনি? বাসা ভাড়া জানো?”

তনন তাহসীর হাত ছেড়ে দিল।
-“তুমি কি আমাকে অপমান করতেছো?”

তাহসী হকচকিয়ে উঠে বললো,
-“আরে না না। আমি তো এমনিতেই সাধারণ কথা বলেছি।”

-“এক রুম খুঁজলে পাওয়া যেতেই পারে। তবে আমাদের পড়াশোনার ই ক্ষতি।”

তাহসী কোনো উত্তর করলো না। তনন পুনরায় বললো,
-“তুমি কি থাকতে চাও না?”

-“এমন বিষয় না। তবে পড়াশোনার ক্ষতি এটা ঠিক। রান্না,বাজার করা, ফ্রিজ আরো কত কি!”

-“ওয়েট এ সেকেন্ড! আমি মাত্র বললাম আর তুমি এত সব ভেবে ফেলেছো? নাকি আগেই ভেবেছিলে?”
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো তনন।

তাহসী থতমত খেয়ে গেল। এভাবে ধরা পরে যাবে ভাবতে পারিনি। এগুলো সে কবেই ভেবে রেখেছে‌। দু’জনের সংসার হলে কি কি করবে, কি হবে। তননের কথায় কি উত্তর দিবে বুঝতে পারলো না। কোনোরকমে বললো,
-“এত সব ভেবে ফেলেছি মানে? আমি তো সাধারণ কথায় বললাম।”

তনন আর কথা বাড়ালো না। তাহসী তননের কাঁধের উপর মাথা রাখলে তনন তাহসীকে নিজের সাথে ভালো করে জড়িয়ে নিল।
-“ইনশাআল্লাহ শিঘ্রই একসাথে থাকতে পারবো‌। তবে হ্যা এমন ভালোই লাগে। প্রেম করছি আরকি।”
হাসতে হাসতে বলল তনন।

তাহসী ফিসফিস করে বললো,
-“বৈধ প্রেম।”

🍁🍁🍁
সেদিনের পর দুই মাস কেটে গেছে। তাহসী,তনন দুজনের পড়ার ব্যস্ত তায় বেড়েছে। দুইজনেই এখন ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট। যার ফলে পড়ার চাপ তুলনামূলক বেশি।

তাহসী আজ সকাল এগারোটা থেকে কল দিয়ে দিয়ে তনন কে পাচ্ছে না। যার ফলে তাহসীর মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। তাই বলে কি মানুষ একবারও ফোন চেক করে না! এসব ভেবে আরো রাগ হচ্ছে তাহসীর। অপমানিত লাগছে। এদিকে দুপুরের রান্না করা বিরিয়ানী ও ঠান্ডার পথে।
দুপুর দুইটা নাগাদ ফোন আসলো তাহসীর ফোনে। ভার্সিটি অফ হওয়ায় তাহসী আজ বাসাতেই। সাধারণত এই সময়ে কল দিবে না। তননের কল ভেবেই তাহসী ফোন হাতে নিল।

তননের দুইটা ফোন। ভালো ফোন টা সে মেসে রেখে দেয়। আর একটা কম দামী ফোন সেইটা নিজের কাছে রাখে বাইরে থাকলে। যেন চুরি হয়ে গেলে বা হারিয়ে গেলে বেশি টাকা নষ্ট না হয়। তাহসী ও অবশ্য এই কাজ করে। তাহসী দুই নাম্বারেই ফোন দিয়েছিল। একটিতেও পায়নি। এখন ফোন হাতে নিয়ে দেখে তননের বাইরের জন্য ফোনে রাখা নাম্বার থেকেই কল এসেছে।
তাহসী নিজের মনে কথা সাজিয়ে নিয়ে কল রিসিভ করলো। তনন নিশ্চয় ফোন ধরেই বলতে শুরু করবে তাহসী তাকে ছাড়া একটুও থাকতে পারে না।

তাহসী সালাম দিতেই অন্য একটা কন্ঠ আসলো। তাহসী ভ্রু কুঁচকালো। ফোন চুরি টুরি হয়ে গেল নাকি!

তাহসী কে অবাক করে দিয়ে ওপাশের মানুষ টি তাকে হাসপাতালে যেতে বললো। সাথে হাসপাতালের ঠিকানা ও দিল। তাহসীর বুক কেঁপে উঠলো। এক্সিডেন্ট হয়েছে!
আঁখি আজ বাসায় নেই যে তাকে নিয়ে যাবে। সে বাড়িতে বেড়াতে গেছে। তাহসীর মাথা কাজ করলো না হঠাৎ। পরক্ষণেই তাড়াহুড়ো করে তাহসী রেডি হয়ে নিল। রিকশা তে উঠে মেসেঞ্জারে গেল। তননের বেস্ট ফ্রেন্ড এর সাথে তার এড আছে। কখনো কথা হয়নি অনলাইনে। এমনিতেই শুধু এড আছে।
তাহসী দেখলো সে এক্টিভ আছে। সে আর কিছু না ভেবে রিয়ান কে নক দিল। ঘটনা জানানোর পর অনলাইন থেকে বের হয়ে নাহিদ কে কল দিল। যা ভেবেছিল তাই নাহিদ কল ধরলো না। এইজন্যই রিয়ান কে জানানো।

__________
এক সিএনজির সাথে বাইক নিয়ে এক্সিডেন্ট করেছে তনন। দোষ সিএনজি চালকের। বিশ মিনিট মতো হয়েছে তনন হাসপাতালে। পুলিশের ঝামেলায় ডাক্তার রা চিকিৎসা শুরু করেননি এখনো। তাহসী পৌঁছানোর আগেই রিয়ান এসে পৌঁছেছে।

তাহসী চার তলায় যেতেই রিয়ানের দেখা পেল। রিয়ান এর সাথে তননের আরো দুই বন্ধু রয়েছে। তাহসী কে দেখে রিয়ান একটু এগিয়ে গেল।

তাহসী তননের কথা জিজ্ঞেস করলো রিয়ান বললো,
-“চিন্তা করো না। ওটি তে নিয়ে গেছে। পায়ে ভালোই আঘাত পেয়েছে। ডাক্তার ট্রিটমেন্ট করাতে চাচ্ছিল না। পুলিশের ঝামেলা সিহান সামলে নিয়েছে। ওর বাবা এখানকার এসআই।”
পাশের একটি ছেলেকে দেখিয়ে বললো রিয়ান।

সিহান নামক ছেলেটির দিকে তাকিয়ে তাহসী বললো,
-“ধন্যবাদ।”

-“ধন্যবাদের কিছু নেই। তনন আমার ফ্রেন্ড। কিন্তু তোমাকে চিনলাম না। ডোন্ট মাইন্ড তুমি আমার ছোট হবে আই থিংক তাই তুমি বললাম।”

তাহসী কিছু বলার আগেই রিয়ান বললো,
-“পরে শুনিস। বাদ দে এখন এসব। তননের জন্য দোয়া কর।”

তাহসী সিহান কে এর আগে দেখেনি। হয়তো সামনে পড়েনি। তাহসী এদিকে খেয়াল না করে রিয়ান কে বললো,
-“টাকা কত লেগেছে? দিলো কে? টাকা না নিয়ে ডাক্তার অপারেশন শুরু করবে না নিশ্চয়ই!”

-“সিহান কোনোরকমে মেনেজ করেছে। যত তাড়াতাড়ি দিয়ে দেওয়ার কথা।”

রিয়ান তাহসীর হাতে সিম কার্ড দিয়ে বললো,
-“তননের ফোন ভেঙ্গে গেছে। ওখানকার মানুষ রা ফোন থেকে সিম নিয়ে কল দিয়েছিল তোমার নাম্বারে।”

রিয়ান তাহসী কে খরচ বুঝিয়ে দিল। তাহসীর এখন মনে হচ্ছে তননের কথা গুলো। এভাবে মনের ইচ্ছা মতো টাকা খরচ করা উচিত নয়। কখন কোন কাজে লাগে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। তাহসী পুনরায় নাহিদের নাম্বারে ফোন দিল। এবার নাহিদ কল ধরলো।

ফোন ধরেই বললো,
-“কেমন আছিস? মিটিং এ ছিলাম।”

-“তনন এক্সিডেন্ট করেছে।”
একে একে সব খুলে বললো তাহসী। নাহিদ আশ্বস্ত করলো সে এখনো আসছে।

নাহিদ আসতেই তাহসী হাফ ছেড়ে বাঁচলো। এখনো সেলিনা শেখ কে বলার সাহস পায়নি তাহসী। এখান থেকে কত দূরে সে। মা হয়ে কিভাবে সহ্য করবে। নাহিদ আসতেই বললো এই কথা।
নাহিদ তাহসীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
-“বলে ফেল। মায়ের দোয়া বেশি কাজে লাগে। আন্টিকে কান্নাকাটি না করে দোয়া করতে বল।”

তাহসী কল দিয়ে নাহিদের কাছে ফোন দিয়ে বললো,
-“তুমি কথা বলো। আমি পারবো না বলতে। আমার দ্বারা পসিবল না।”

নাহিদ জানাতেই সেলিনা শেখ কান্না করে উঠলেন। নাহিদ তাকে বললো দোয়া করতে আর তার বাবা কে জানাচ্ছে, সেলিনা শেখ ওনাদের সাথে ঢাকা আস্তে পারবেন।

ঘন্টা দুয়েক পর ডাক্তার বের হলো। তাহসী এগিয়ে গেল। জিজ্ঞেস করতেই ডাক্তার জানালেন ভয়ের কিছু নেই। প্রথমে ওনারা আশংকা করেছিলেন কেটে ফেলা লাগে কি-না। কিন্তু আল্লাহর রহমতে তেমন গুরুতর কিছু হয়নি। প্লাস্টার করে দিছেন। ফুল বেড রেস্টে থাকতে হবে পুরো তিন মাস।

তাহসী আলহামদুলিল্লাহ বলে আল্লাহ তায়ালার কাছে শুকরিয়া জানালো। এরপর ফোন করে সেলিনা শেখ কে জানিয়ে দিল।

চলবে ইনশাআল্লাহ;

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_৩১
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

তননকে কেবিনে শিফট করা হয়েছে। তাহসী একবার যেয়ে দেখে আসছে। তননের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে আছে।

নাহিদ রায়ান,সিহান এর সাথে এক্সিডেন্ট স্পট এ যেয়ে বাইক নিয়ে নাহিদের বাসার গ্যারেজে রেখে দিয়েছে। পুলিশের ঝামেলা সিহান ই সব সামলেছে বাবাকে বলে।

ঘন্টা পেরোতেই তননের জ্ঞান ফিরলো। তাহসী দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে তননের দিকে তাকাচ্ছে আর নাহিদের সাথে কথা বলছে। ডাক্তার এর সাথে কথা বলতে নাহিদ আর তাহসী গিয়েছিল।

তনন কে নড়তে দেখে তাহসী কথা থামিয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো। দরজা অল্প খোলা ছিল, সেই ফাঁক দিয়েই তননের উপর নজর রাখছিল তাহসী।

তনন চোখ খুলেই তাহসী কে তার দিকে আসতে দেখলো। এঁকে এঁকে সব ঘটনা মনে পড়তে লাগলো। পায়ের দিকে তাকাতেই দেখলো ডান পা হাঁটুর খানিক নিচ থেকে ব্যান্ডেজ করা।

তাহসী কাছে যেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-” কেমন ফিল করছো?”

তনন তখন পা নাড়াতে চাচ্ছিল। পা নড়ছে না দেখে অস্থির অস্থির লাগছে তার। তাহসী তননের কাঁধে হাত রাখতেই তনন আহ শব্দ করে উঠলো। তাহসী তৎক্ষণাৎ হাত সরিয়ে নিল।

ততক্ষণে নাহিদ ডাক্তার ডেকে এনেছে। ডাক্তার এসে দেখে বললো,
-“ভালো, জ্ঞান ফিরেছে। পা ছাড়াও বুকে, কাঁধে চোট পেয়েছে, ওগুলো ব্যথার ওষুধ খেলে সেরে যাবে।”

ডাক্তার আরো কিছু বলে বেরিয়ে গেলেন। নাহিদ ও ডাক্তার এর পিছু পিছু চলে গেল।

তাহসী তননের দিকে তাকালো। কথা বলার মতোন কোনো কথা পেল না। তনন দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাহসীর দিকে তাকালো। উষ্ক শুষ্ক চেহারা তার।
-“তিন মাস! অনেকটা সময় তাই না তাহসী!”
তাহসীর দিক থেকে চোখ সরিয়ে তনন জানালার বাইরের দিকে তাকিয়ে বললো।

-“ইনশাআল্লাহ সুস্থ হয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা রাখো।”

-“রাখি।”

তনন তাহসীর দিকে তাকিয়ে পুনরায় বললো,
-“আমাকে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিতে পারবে?”

-“হু।”

তাহসী তননকে ধরে বালিশ বেডের সাথে লম্বা করে রেখে তননকে ঠিক করে বসিয়ে দিল। তনন তাহসীর হাত জড়িয়ে ধরে চুপ করে থাকলো কিছুক্ষণ। প্রচন্ড পরিমানে খারাপ লাগছে তার।
-“তিন মাস আমি স্বাভাবিক ভাবে থাকতে পারবো না তাহসী। চলাফেরা করতে পারবো না। আরো কত কত সমস্যা। ভাবতেই দম বন্ধ হয়ে আসতেছে। ফাইনাল ইয়ার! কয়মাস বাদে সেমিস্টার ফাইনাল!”

তাহসী তননের মাথায় আরেক হাত দিয়ে বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
-“এত ভেবো না। ধৈর্য রাখো।”

-“আমি…. আমি একটুও বুঝতে পারিনি। সিএনজি টা সামনে চলে আসলো। কিভাবে যে কি হলো!… আচ্ছা বাইকের কি অবস্থা?”

-“ভাইয়া বাসার গ্যারেজে রেখে আসছে। এসব বাদ দাও। একটু ঘুমানোর চেষ্টা করো। এসব মনে আসবে না।”

তননের বন্ধুরা ভিতরে ঢুকতেই তাহসী একটু সরে গেল। তনন তাহসীর হাত ছাড়লো না।

রায়ান অবস্থা জিজ্ঞেস করতেই বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে জোর করে হাসি টেনে তনন বললো,
-“ভালো।”

-“টেনশন নিস না। ঠিক হয়ে যাবে।”

তনন কিছু বললো না। মিথ্যা আশা দেখানো কথা ভালো লাগে না তার। তিন মাস তার পড়াশোনার ক্ষতি। পাশাপাশি আরও অনেক ক্ষতি। তিন মাস পরে কি হবে তাও জানে না সে। আল্লাহ তায়ালা যদি তাকে সুস্থ করে দেয় ও দৌড়াতে তো আর পারবে না।

তননের বন্ধুরা বিদায় নিয়ে চলে গেল। আবার পরে আসবে। ওরা বের হতেই তাহসী বললো,
-“আকাশ কুসুম চিন্তা বাদ দিয়ে শুয়ে পড়ো। এরপর ঘুমানোর চেষ্টা করো।”

-“তুমি বুঝতে পারছো না!”

-“খুব বুঝেছি। কি চিন্তা করছো তাও বুঝতে পারছি। ক্লাস করতে যেতে পারবে না, টিউশন যেতে পারবে না, নিজের কাজ সব নিজে করতে পারবে না, চিকিৎসার খরচ, থাকবে কোথায় ইত্যাদি ইত্যাদি।”

-“ওয়েট এ সেকেন্ড! চিকিৎসার খরচ তো মাথাতেই ছিল না। টাকা দিল কে? আম্মু কোথায়? আসেনি?”

-“সবাই পথে। টাকা আমি দিয়েছে। আর এটা নিয়ে আমি একটা কথাও শুনতে পারবো না। আগে সুস্থতা তারপর সব।”

তনন কিছু বলতে নিলে তাহসী নিজের হাত ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
-“শুনবো না মানে না! ভাইয়া অফিস থেকে আসছে একবারে। ভাইয়াকে বলি এখন বাসায় যেতে আবার সবার সাথে আসবে। তুমি থাকো।”

-“তুমি যাবে?”

-“না, আমি এখানেই আছি। আসছি দাঁড়াও।”

নাহিদ যেতে না চাইলেও বুঝিয়ে সুঝিয়ে তাহসী পাঠালো। তননের আছে এসে দেখলো তনন গভীর চিন্তায় মগ্ন।

-“এত না ভেবে ঘুমাও। ব্রেন কে রিল্যাক্স দাও।”

-“তুমি কি বুঝো হাঁটতে না পারার কষ্ট?”
তননের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো।

তাহসী আচমকা তননের চোখের নিচে হাত রাখলো। তাহসী নিজেই নিজের কাজে চমকে গেল। হাত সরিয়ে নিয়ে বললো,
-“আমি এভাবে বুঝাইনি!”

তনন কিছু বললো না। তাহসী তননকে শুইয়ে দিল। তনন চোখ বুজে বললো,
-“ঘুম আসবে না। ভালো লাগছে না। তুমি ভাইয়ার সাথে যেয়ে রেস্ট নিতে।”

-“কেন?”

-“কেন‌ আবার! শুধু শুধু হসপিটালে থাকা।”

-“ওহ্ আচ্ছা। মানে তুমি বোঝাচ্ছো আমি অসুস্থ হলে তুমি এটাই করতে, মানে আমি যদি কখনো অসুস্থ হই তাহলে তোমার যেন হসপিটালে থাকা না লাগে। মানে আমি বলতে পারবো না তোমার সম। আমি ছিলাম।”

চোখ খুলে তাহসীর দিকে তাকিয়ে তনন বললো,
-“কথা পেচাচ্ছো!”
তাহসী যে এইভাবে কথা ঘুরিয়ে দিবে সে ভাবতেই পারিনি।

তাহসী ঠোঁট চেপে হাসছে। তনন পুনরায় চোখ বুজে বললো,
-“চুল টেনে দাও।”

তাহসী হাসি থামিয়ে তননের মাথায় হাত রাখলো। তাহসীর ও অনেক কষ্ট লাগছে তনন কে এইভাবে দেখে। কিন্তু প্রকাশ করতে চায় না তাহসী। তননের এই অবস্থায় যদি তাহসী তার হ্যা তে হ্যা মেলায় তননের কষ্ট বাড়বে বৈ কমবে না।

______________
তননকে দুইদিন হসপিটালে থাকা লাগলো। তননের পাশে একদিন রাতে তাহসী আর সেলিনা শেখ ছিল। কিন্তু পরেরদিন রাতে তাহসী কে জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছিল তনন। হসপিটালে থেকে তাহসী অসুস্থ হয়ে গেলে ঝামেলা বাড়বে,এইসব বুঝিয়ে তাহসী কে পাঠিয়ে দিয়েছিল। পরে তার নিজেরই খারাপ লাগছিল। তাহসী আশেপাশে থাকলে ভালোই লাগে তার। নাতাশা রহমান, তৌহিদ হোসেন, তনু নাহিদের বাসাতে ছিল।

আজকে দুপুরে তননকে ছেড়ে দেওয়ার কথা। সবার মাঝে কথা হচ্ছিলো তনন কে এখন কোথায় রাখা হবে তাই নিয়ে।
তনন ফিসফিস করে তাহসী কে বললো,
-“আমি কিন্তু নাহিদ ভাইয়ার বাসায় থাকতে পারবো না তাহসী। তিন মাস কারো বাসায় এইভাবে থাকা যায় না! আবার আমি অসুস্থ।”

-“অসুস্থ বলেই তো। এখন প্লিজ ইগো কে ইগনোর কর।”

-“ইগোর বিষয় না তাহসী। তুই মেনেজ কর। আমি গ্রামে চলে যাই। এখানে থাকা পসিবল না। বোঝার চেষ্টা কর। ওখানে আম্মু খেয়াল রাখতে পারবে। এখানে বাসা নিয়ে থাক পসিবল না। তার উপর আমার টিউশন বাদ, তনুর স্কুল।”

সেলিনা শেখ ও চাইছেন তনন কে নিয়ে গ্রামে যেতে। তাহসীর বাবা,মা, ভাই এটা মানতে নারাজ। শেষ চেকআপ এর সময় ডাক্তার বলে গেলেন এখানে থাকার জায়গা থাকলে এখানেই থেকে যাওয়ার কথা। পনেরো থেকে বিশ দিন পর চেকআপ করাতে হবে আবার। সবার কথা মেনে তননকে নাহিদের বাসাতেই যেতে হলো।

-“এমন ঝামেলার মানে হয়!”
তনন বললো।

তাহসী শুনেও কিছু বললো না। একটু আগেই তারা নাহিদের বাসায় এসে পৌঁছেছে।

-“ইসলামে যে স্বামীর কথা শুনে চলতে হয়, এটা জানো তাহসী? আমি বলেছিলাম তোমাকে মেনেজ করতে।”

-“জানি। আমি বলেছিলাম একবার। সবাই কথা বলেই এনেছে। মামুনি কে বলবো এই ব্যাপারে তোমার সাথে কথা বলতে।”

-“একবার বলছিলে কিভাবে জানিনা আমি! সে তো আমার সামনেই। কোনোরকম বলছিলে। আর আমি বলছি মেনেজ করতে।”

-“একটু চিন্তা করো এখানে থাকলে স্টাডি ভালোভাবে করতে পারবে। তোমার ফ্রেন্ড দের বলবে নোট পাঠাতে।”

-“যতই ভালো হোক তাহসী। এইভাবে একজনের বাসায় থাকা যায় না। যাই হোক তোমার তো নিজের ভাইয়ের বাসা, তাই কিছু মনে হবে না।”

-“তোমার বোনকে যদি আমি বোনের চোখে দেখতে পারি। আমার ভাইকে তুমি ভাইয়ের চোখে দেখতে পারবে না?”

-“বিষয় টা এমন নয়।”

-“আচ্ছা বাদ দাও। তোমার সব ফ্রেন্ড আমার ব্যাপারে জানে না, রাইট?”

-“হুম। রায়ান জানে শুধু। আর হাসপাতালে যারা এসেছিল তারা দুই একজন জেনেছে। আসলে আমি ইচ্ছা করে জানাইনি। মাইন্ড করেছেন নাকি ম্যাম?”

-“না, এমনিতেই ইন্টারেস্ট হলো!”

-“আচ্ছা!”

চলবে ইনশাআল্লাহ;

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে