#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_৮
নিয়ম অনুযায়ী বিয়ের পরেরদিন তনন আর তাহসী তাহসীর বাড়িতে গেল। তাহসীর পরিবারের লোকেরা এসেছিল ওদের নিতে। গ্রামে ছেলেমেয়েদের মায়ের যাওয়া আসার প্রচলন না থাকলেও নাতাশা রহমান এসেছিলেন। দেখে গেলেন তার মেয়ে কেমন পরিবেশে থাকছে।
তননের বাস রাত দশটার সময়। সন্ধ্যার দিকে একটু ঘুমিয়ে নিল তনন। এখন একটু না ঘুমালে সারারাত জার্নি করে সকালে ক্লান্তিতে পরীক্ষায় দিতে পারবে না।
তাহসীর বাড়িতে তার নানু বাড়ির প্রায় সবাই এসেছে। দোতলা বাড়িটা আগে ফাঁকা ফাঁকা লাগলেও এখন পরিপূর্ণ মনে হচ্ছে। তাহসীর নানুবাড়ির লোক এসে ভরে গেছে। তাহসীর নানা-নানু, দুই মামা আর এক খালার পরিবার।
এই পুরো বাড়িটা তাহসীর বাবার। তাহসীর চাচাদের আলাদা বাড়ি। তবে দূরে নয়। তৌহিদ হোসেন এর বাড়ির সামনে তৌফিক হোসেন এর বাড়ি। তৌফিক হোসেন এর বাড়ির পাশে তাহসীর ছোট চাচা মনির এর বাড়ি। তিনজনের বাড়ির একটাই উঠান। এক কথায় বলতে গেলে গোল বৃত্তের চারিদিকে ওনাদের বাড়ি। বাড়ি তিনটা হলেও বাইরের একটা রান্নাঘরেই সবার রান্নার আয়োজন একসাথে করা হয়। সবাই একসাথেই খাওয়া দাওয়া করে। এই রান্নাঘর তাহসীর দাদার করা। আলাদা রান্নাঘর, আলাদা বাড়ি থাকলেও একসাথে থাকার এই শর্ত তাহসীর দাদার করা। তাহসীর দাদার এক কথা আলাদা বাড়ি বানাও বা না বানাও, সবাইকে একসাথে থাকতে হবে।
রাত আটটার সময় ছাদে বসে কাজিন দের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিল তাহসী। নাঈম নিচেই ছিল। ছাদে উঠে এসে তাহসী কে বললো আম্মু ডাকছে।
তাহসী নিচতলায় নাতাশা রহমান এর কাছে আসলো। ডাইনিং রুমে নাতাশা রহমান কে দেখে তাহসী সেদিকে এগিয়ে গেল। কাছে যেয়ে বললো,
-“ডেকেছো?”
-“ছাদে যেয়ে বসে আছিস যে বরং। তনন কে উঠিয়ে নিয়ে আয়। দশটায় না বাস! আমি খাবার রেডি করছি।”
-“আচ্ছা।”
তাহসী রুমে যেয়ে তনন বলে দুইবার ডাকলো। তনন নড়েচড়ে পুনরায় চুপ হয়ে গেল। তিনবারের সময় বেশ জোরে ডাকতেই তনন চোখ মেলে তাকালো। তাহসী কে দেখে উঠে বসলো। আড়মোড়া ভেঙ্গে বলল,
-“ক’টা বাজে?”
-“আটটা বেজে নয় মিনিট। আম্মু খাবার রেডি করেছে। ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়।”
-“ওকে।”
তাহসী তননের ফ্রেশ হয়ে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করলো। তনন আসতেই তাহসী রুম থেকে বের হলো।
তনন ডাইনিং টেবিলে বসতেই নাতাশা রহমান তনন কে সব এগিয়ে দিলেন। তনন মনে মনে ঢোক গিলল। সে বাসে ওঠার আগে তেমন ভারী খাবার খায় না। বমি হয় না, তবুও তনন নিজ ইচ্ছাতেই খায় না।
তনন ইতস্তত করে বললো,
-“এত খেতে পারবো না।”
-“তা বললে তো চলবে না। সব কিছুই একটু একটু করে টেস্ট করে দেখো।”
এরপর তাহসী কে উদ্দেশ্য করে নাতাশা রহমান বললেন,
-“তুই ও তননের পাশে বসে পড়। আর সবাই কোথায় গেল? একটু এগিয়ে যেয়ে দেখ তো।”
নাতাশা রহমান বলতে বলতেই তাহসীর সব কাজিন হইহই করতে করতে ছাদ থেকে নেমে আসলো। তাহসী দের ডুপ্লেক্স বাড়ি। তাই ছাদে ওঠার জন্য আলাদা সিঁড়ি। এটা বাড়ির মূল গেটের পাশেই। তবে এটা দিয়ে দোতলায় যাওয়া যায় না, সরাসরি ছাদে।
তাহসীর বাড়িতে সবাই তিনবেলার খাবার খায়। যার ফলে তাদের ডাইনিং টেবিল বড় আর টেবিল দুইটা।যদিও তাহসীর মেজো চাচির এতে দ্বিরুক্তি রয়েছে তবুও তাহসীর দাদার কথার উপরে কিছু বলতে পারবে না।
সবাই এসে বেসিনে হাত ধুয়ে টেবিলে বসলো। অগত্যা তাহসী কেও বসতে হলো। নাতাশা রহমান সবাইকে খাবার এগিয়ে দিলেন। সবাই খাওয়া থেকে কথা বললো বেশি। প্রথমে তাহসীর মামাতো বোন সামিয়া কথা বলে উঠলো,
-“ভাইয়া কে তো পাওয়ায় যাচ্ছে না! কোথায় একটু শালিকাদের টাইম দিবেন, তা না!”
তনন খাবার চিবানো বন্ধ করে যেদিক থেকে কথা হচ্ছে সেদিকে তাকালো। তনন তো এদের কাউকে ভালো করে চিনেই না, তার উত্তর কি দিবে!
নাঈম তননের অবস্থা আন্দাজ করে বললো,
-“ভাইয়া তোমাদের চিনেই না আপু। হা হা হা!”
তাহসীর খালাতো বোন স্বর্ণালী জবাব দিল,
-“এটা কি ঠিক তাহসী আপু?”
নাতাশা রহমান সবাইকে তননের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তনন মাথা নাড়ালো। নাহিদ কথা বলে উঠলো,
-“এই চুপচাপ খা সবাই। তননের সাথে পরে কথা হবে।”
সামিয়া হেসে বললো,
-“তোমার তো সব কিছুতেই নিষেধ। ভদ্র ভাই আমাদের অথচ ডুবেডুবে জল খায়!”
সামিয়ার কথা শুনে দুই টেবিলের সবাই হেসে উঠলো। তৌহিদ হোসেন এর উপস্থিতি বুঝেই পেরেই সবাই আবার থেমে গেল।
তনন হাসি থামিয়ে নাতাশা রহমান কে উদ্দেশ্য করে আস্তে করে বললো,
-“আমি আর খাবো না।”
তৌহিদ হোসেন এর সাথে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও এসে হাজির হয়েছেন। তারা ড্রয়িং রুমে বিয়ে নিয়ে আলোচনা করছিলেন। ছেলেমেয়েদের কথা শুনে এখানে এসেছেন।
তাহসীর খালা এগিয়ে এসে তননের প্লেটে মাংস তুলে দিতে দিতে বললেন,
-“জামাই আদর করার আগেই তো তুমি পালাচ্ছো দেখছি। এখন আবার বলছো খাবে না। এসব চলবে না। এগুলো শেষ করো। আরো আছে। দেখি আপা ইলিশের বাটিটা এদিকে দাও।”
শেষ কথাটা নাতাশা রহমান কে উদ্দেশ্য করে বললেন।
তনন অসহায় চোখে তাহসীর দিকে তাকালো। তাহসী নিজ খাওয়ায় ব্যস্ত। তনন লক্ষ্য করে দেখলো মিটিমিটি হাসছে তাহসী। তাহসী তননের দিকে তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হলো। টেবিলের দুই একজন খেয়াল করলেও বড়’রা আছে বলে কেউ কিছু বললো না।
তনন আগের মতো করেই বললো,
-“আমি বাসে ওঠার আগে তেমন কিছু খাই না। খারাপ লাগে একটু।”
এতো মানুষের সামনে কথা বলতে তার লজ্জা লাগছে।
নাতাশা রহমান বললেন,
-“তননের এক্সাম শেষ হলে তোরা এসে জামাই আদর করিস। আজ ছেড়ে দে। তনন যাও তৈরি হয়ে নাও।”
তনন ইতস্তত করলো প্লেটের খাবার রেখে উঠতে। নাতাশা রহমান বললেন,
-“আরে উঠে পড়ো না পারলে। সমস্যা নেই।”
তনন এবার উঠে পড়লো। বেসিন থেকে হাত ধুয়ে তাহসীর রুমে চলে গেল।
শিরিন তাহসী কে ঠেস দিয়ে বললেন,
-“আরে তাহসী খেয়েই যাচ্ছো! তনন উঠে গেল আর তুমি বসে আছো!”
-“কেন আমার উঠে যাওয়ার কথা ছিল নাকি?”
তাহসী খেতে খেতে উত্তর দিল।
শিরিন কিছু বলতে যেতেই তাহসীর দাদি নিষেধ করলো ইশারায়। শিরিন তাহসীর দিকে তাকিয়ে মুখ বাকালো।
তাহসীর খাওয়া শেষ হলো দশ মিনিট বাদে। খাওয়া শেষে সে-ও রুমে চলে গেল। তাহসীর ইচ্ছা ছিল না, নাতাশা রহমান এর ইশারা দেখে যেতে হলো।
তনন ততক্ষণে তার ব্যাগ ঠিক গুছিয়ে নিয়েছে। গোছানো-ই ছিল, তবুও দেখলো সব ঠিকঠাক আছে কি-না। এতকিছুর মাঝেও সেলিনা শেখ শুকনো কেক বানিয়ে দিয়েছেন।
তাহসী দরজার সামনে যেয়ে দাঁড়ালো। তননের সাথে কবে যে সহজ হতে পারবে যে সে!
চলবে না;