#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_৭
তনন কথা বলে উঠলো,
-“তো বলো বাসর রাত নিয়ে তোমার স্বপ্ন কি ছিল? ছাদে উঠে চাঁদ দেখা নাকি অন্য কিছু…!”
তনন অন্য কিছু শব্দ দুইটা এমন ভাবে টেনে বললো যে তাহসী সহজেই এইটার মানে বুঝতে পারলো। লজ্জায় জমে গেল তাহসী। কথাটাকে অন্যদিকে ঘুরানোর জন্য কিছু পেল না। এখন যদি সে বলে সাইন্সের স্টুডেন্ট হয়ে চাঁদ দেখার কথা বলছে তাহলে তনন বলে বসতে পারে তাহলে কি সে অন্যকিছু চাচ্ছে?
তাহসী মৃদু স্বরে বললো,
-“কিছুই না। আপাতত ঘুমাতে চাই।”
তাহসী আর কিছু না বলে বিছানার কাছে এগিয়ে গেল। বিছানায় যেয়ে সোজা শুয়ে পড়লো তাহসী। তনন যা খুশি ভাবুক।
তনন মুচকি হেসে আলমারি খুলে কিছু বের করলো। লাইট অফ করে বিছানায় চলে আসলো। তাহসী কিছু একটা ভেবে মনে মনে আঁতকে উঠলো।
তাহসীর ভাবনা কে ভুল প্রমাণিত করে তাহসীর হাতে পাঁচ পিসের একসেট ব্রেসলেট পরিয়ে দিল তনন। তাহসী হাতে ছোঁয়া পেয়ে কেঁপে উঠলো। তনন মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে তাহসীর হাতের উপর ধরে বললো,
-“পছন্দ হয়েছে?”
তাহসী উঠে বসলো। মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,
-“আরে এটা তো….”
এই সেট টা অনলাইনে দেখেছিল তাহসী। কিন্তু স্টক আউট হওয়ায় কিনতে পারিনি। পরে অফলাইনে দোকান দোকান জিজ্ঞেস করেও পায়নি তাহসী। এটা সম্পর্কে আগেই জানতো তনন। তবে তনন এটা কোথায় পেল তাহসী বুঝতে পারলো না।
অভ্যাস বসত প্রশ্ন করে বসলো,
-“কোথায় পেয়েছিস এটা?”
-“তুই? এতকিছুর পরে তুই?”
ভ্রু কুঁচকে পাল্টা প্রশ্ন করলো তনন।
তাহসী আমতা আমতা করে বলল,
-“কোথায় পেয়ে..ছো?”
-“সেদিন যেখান থেকে কসমেটিকস কিনলাম সেই শপে ছিল।”
-“কখন কিন..”
-“এতকিছু বলা যাবে না।”
তাহসীর কথা শেষ হওয়ার আগেই তনন উত্তর দিল।তাহসী বুঝলো কেনাকাটা শেষে তনন তাকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে ওই শপে আবার ঢুকেছিল তখনই হয়তো কিনেছে এইগুলো।
-“অনেক অনেক ধন্যবাদ।”
তনন তাহসীর খুশি হওয়া দেখে খুশি হলো। আলতো হেসে বলল,
-“আদেও মন থেকে বিয়ে করেছো তুমি?”
-“কেন?”
চমকে উত্তর দিল তাহসী।
-“এইযে এমন ব্যবহার! বারবার চমকে উঠছো। জড়তা নিয়ে কথা বলছো।”
তাহসী উত্তর দিল না। তনন কি তাকে বুঝে নিতে পারে না? তনন পুনরায় বললো,
-“একটু অস্বস্তি কাটানোর চেষ্টা তো করবে! আমার গিফটাও পাইনি। এটা থেকে বোঝা যায়…”
তননের ইচ্ছে ছিল না চেয়ে নেওয়ার। কিন্তু তাহসী কে চেক করে নিতে চায় সে।
তননকে থামিয়ে দিয়ে তাহসী বললো,
-“আমি আসলে ভুলে গেছি। যখন মনে হয়েছে তখন লাগেজে ঢোকানোর সুযোগ পাইনি। স্যরি! ইনশাআল্লাহ কালকে তো ওই বাড়ি যাচ্ছিই। ইনশাআল্লাহ কাল রাতে দিবো।”
তনন শুয়ে পড়তে পড়তে বললো,
-“তাহলে আর হচ্ছে না মিসেস! আমি কাল থাকছি না।”
-“মানে?”
অবাক হয়ে প্রশ্ন করল তাহসী।
-“রবিবারে পরীক্ষা আছে। কাল তো রওনা দেওয়ায় লাগবে। পরীক্ষার মধ্যে কেউ বিয়ে করে!”
তাহসী কিছু বললো না। হাত থেকে ব্রেসলেট খুলে বিছানার পাশে থাকা ছোট টেবিলে রাখলো। এরপর তননের থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে শুয়ে পড়লো। তাহসী তননের বিপরীত পাশ হয়ে চোখ বুজতেই তননের ছোঁয়া পেল। সারাদিনের ক্লান্তিতে তাহসীর যেটুকু ঘুম ঘুম ভাব এসেছিল, এই ছোঁয়াতে তা পুরোপুরি কেটে গেল।
তননের স্পর্শ হালকা থেকে গাঢ় হলো। তাহসীর কোমর জড়িয়ে কাছে নিয়ে আসলো। তাহসীর শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুততর হলো। তনন তাহসীকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে তাহসীর কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। তাহসী আবেশে চোখ বুজে নিল।
এরপর তনন তাহসীর দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। তননের স্পর্শ না পেয়ে তাহসী আস্তে আস্তে চোখ খুললো। তার শরীর তখনো মৃদু কাঁপছে। তনন তাহসীর ঠোঁটের দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল। তাহসী তননের স্পর্শের এই অনুভূতি সহ্য করতে পারছে না আবার এড়িয়ে যেতেও পারছে না। তনন তাহসীর ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল। তাহসী তননের শার্ট মুঠো করে আকড়ে ধরলো। তাহসীর শ্বাস প্রশ্বাসের গতি অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেল। কেঁপে উঠলো বার কয়েক। তনন কিছুক্ষণ বাদেই তাহসী কে ছেড়ে দিল। তাহসীর দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে মলিন হাসি দিয়ে বলল,
-“শুভ রাত্রি।”
তনন তাহসীর উল্টো পাশ হয়ে ঘুরে যেতেই তাহসী ঘনঘন শ্বাস ফেলে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো। তননের কাছে আসলেই যে কি হয় তার! তননের মলিন হাসি তাহসীর চোখ এড়ালো না। কয়েক মিনিট পেরোতেই তাহসী নিজেকে সামলে নিল। প্রায় আধা ঘন্টা পর ঘুমের রাজ্যে প্রবেশ করলো তাহসী।
🍁🍁🍁
পরদিন তাহসীর যখন ঘুম ভেঙ্গে গেল তখন সকাল সাতটা বাজে। এই সময়ের আগেই সাধারণত ঘুম থেকে উঠে তাহসী। উঠে ফজরের নামাজ পড়ে, হয়তো কাল বেশি ক্লান্ত থাকার জন্যই ঘুম দেরিতে ভাঙ্গলো। ঘুম ভেঙ্গে পাশে তনন কে চোখে পড়লো তাহসীর। তনন তখনো ঘুমে, তাহসীর দিকে মুখ করেই ঘুমিয়ে আছে। তননের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হাই তুলতে তুলতে তাহসী ওয়াশরুমে গেল। সাথে সাথে আবার বের হয়ে আসলো। লাগেজ থেকে ব্রাশ বের করতে ভুলে গেছে।
সকাল সাড়ে আটটার দিকে সেলিনা শেখ হাতে নাস্তার প্লেট নিয়ে রুম আসলেন। তাহসী তখন ফোন ঘাটছে। তনন রুমে নেই। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বাইরে চলে গেছে। তার আর দেখা পায়নি তাহসী। তাহসী রুমে বসে থেকেই ফোন ঘাটছে সেই তখন থেকে।
সেলিনা শেখের হাতে থাকা প্লেটে খিচুড়ি দেখে তাহসী চোখ মুখ কুঁচকালো। সাধারণত সকালে খিচুড়ি খায় না সে। গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা থাকায় সব ধরণের খাবার সকালে খায় না, ইচ্ছা অনুযায়ী না খেলে বমি পায়।
সেলিনা শেখ প্লেট নিয়ে বিছানায় যেয়ে বসলেন। ভাত মাখতে মাখতে বললেন,
-“দ্রুত খেয়ে নাও তো। ঘুম কেমন হয়েছে? নতুন জায়গা!”
-“ভালো। কোলবালিশ, কাঁথা ছাড়া আমার ঘুম আসে না। এইগুলো ছিল বলে সমস্যা হয়নি।”
অকপটে স্বীকার করলো তাহসী। এইটার যে অন্য কি মানে হবে, সেসব সে খেয়ালই করলো না। সেলিনা শেখ ও কিছু বললেন না।
মুখে ভাত নিয়ে কোনোরকমে চিবাতে শুরু করলো তাহসী। মাংস দিয়ে খেতে মোটামুটি ভালোই লাগছে। এখন তার বমি না পেলেই হয়। তাহসী সিদ্ধান্ত নিল খাওয়ার পরেই একটা এন্টাসিড এর ট্যাবলেট খেয়ে নিবে। লেডিস সাইড ব্যাগে আছে।
সেলিনা শেখ খাওয়াতে খাওয়াতে বললেন,
-“তুমি কি বিরক্ত হচ্ছো তাহসী? তোমাকে আমি খাইয়ে দিচ্ছি। তোমার হয়তো বাবা,মা নিজের পরিবার ছেড়ে এসে থাকতে ভালো লাগছে না, খেতে মন চাইবে না। তাই খাইয়ে দিচ্ছি।”
মুখের খাবার শেষ করে তাহসী বললো,
-“না না, আন্টি। আমার আরো ভালো লাগছে। মিথ্যা বলবো না আমি আসলে একটু অলস। খাইয়ে দিচ্ছেন, আমার অনেক ভালো লাগছে। বাসায় থাকলে আম্মু ও দেয়। আমার অনেক ভালো লাগছে আপনি কাজ ফেলে রেখে আমাকে খাইয়ে দিচ্ছেন।”
-“তাহলে আমাকেও আম্মু ডাকা শুরু করতে হবে। নাহলে এসব কিছুই পাবে না।”
এই কথা বলে সেলিনা শেখ হেসে উঠলেন। তাহসীও হাসলো। একটু ভেবে লজ্জা নিয়ে তাহসী বললো,
-“তাহলে আমি মামুনি ডাকবো।”
সেলিনা মাথা নাড়ালেন।
কিছুক্ষণ পর একটু খাওয়ার পরেই তাহসী বললো আর সে খাবে না। সেলিনা শেখ বললেন,
-“এতো অল্প কেন? আবার কখন কি হয় না হয়। আজ তো বউভাত। এখন খেয়ে নাও, দুপুরে কখন খাবার পাবে ঠিক নেই।”
-“আমি সকালে এমনিতেই কম খাই। আপনি ব্যস্ত হবেন না।”
-“আর একটু নাও।”
-“না, প্লিজ আন্টি স্যরি মামুনি। আমি সকালে তেমন খাই না। আর খিচুড়ি একদমই না।”
-“তো তুমি আগে বললে না কেন? রুটি খাও সকালে?”
-“না, রুটি ও খাই না। সমস্যা নেই। একদিনই তো।”
-“সাদা ভাত না করতে পারি তনন কে বললেই পরাটা এনে দিত।”
-“সমস্যা নেই মামুনি। আমি আর খাবো না এখন।”
-“এমন করে নাকি পাগল মেয়ে? এতো ছেড়ে দিতে নেই বুঝেছো? এইযে তোমাকে রাতে,সকালে খাইয়ে দিচ্ছি। বাইরে মানুষে কথা বলছে! বউ কে মাথায় তুলে পরে নাকি আমি পস্তাবো! কিন্তু আমার সামনে কেন বলছে না জানো? ওতো সাহস নেই। আমার এমন শক্ত অবস্থান এমনি এমনি তৈরি হইনি। আমি খারাপ ব্যবহার করিনি কিন্তু আমি ছেড়েও দিইনি। বুঝেছো এত ছাড় দিতে নেই!”
তাহসী বড় বড় চোখ করে সেলিনা শেখ এর কথা শুনলো। এত ভালো শাশুড়ি পাবে এটা তো কখনোই ভাবেনি। তননের আম্মু ভালো এটা জানে তাহসী কিন্তু শাশুড়ি হিসেবে এত ভালো কখনোই ভাবেনি।
চলবে ইনশাআল্লাহ;