তোমাতে বিলীন হবো পর্ব-০৫

0
558

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_৫

তনন প্রশ্ন করলো তাহসীকে,
-“ঢাকা থেকে কখনো শপিং করেছিস? মানে জানতে চাইছি পরিচিত ভালো শপ আছে? তাহলে সেখানেই যায়।”

তাহসী মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো। তনন নিজের মতো ভেবে তাহসী কে নিয়ে সামনে হাঁটতে লাগলো। তনন এক শপিংমলের কাছেই বসেছিল রেস্টুরেন্টে। তাহসী আসার আগে এক কাপ কফি নিয়ে খাচ্ছিল আর বই দেখছিল। মিনিট দুয়েক হাঁটার পরেই তারা একটা শপিং মলে পৌঁছে গেল। দোতলায় যেয়ে তনন শাড়ি দেখতে শুরু করলো। তাহসী কে বললো,
-“পছন্দ কর নিজ ইচ্ছানুযায়ী।”

তাহসীর সাথে সকালেই সেলিনা শেখের কথা হয়েছে। উনি ভালোভাবে বলে দিয়েছেন তাহসীর ইচ্ছে মতো শপিং করতে। এই একটা দিন মেয়েদের জীবনে একবারই আসে। সেই দিন যদি পছন্দ মতো সাজতেই না পারলো তাহলে আর কবে সাজবে।

তননের কথায় তাহসী উত্তর দিল না। মৌন রইলো। তনন দাঁতে দাঁত চেপে উঠে পড়লো দোকান থেকে। দোকানিকে দেখি বলে বের হলো। তাহসীও পিছু পিছু আসলো। দোকানের বাইরে আসতেই তনন হাঁটতে হাঁটতে নিচু স্বরে বললো,
-“তোকে কি কেউ চেপে ধরে বিয়ে দিচ্ছে? আমাকে বল, ভেঙ্গে দিই বিয়ে। খারাপ বলে, অপমান করে করুক।”

তাহসী চমকালো। কিছু বলতে উদ্যত হলেই তনন পুনরায় বললো,
-“কাউকে লাভ করিস? আমার জানামতে তো কেউ ছিল না। এখন মনে হচ্ছে আছে হয়তো। নির্ভয়ে বলতে পারিস।”

তাহসী মৃদু স্বরে বললো,
-“এমন কিছুই না।”

-“তাহলে? সেই তখন থেকে দেখছি বোবার মতো পরে আছিস। অসুস্থ তুই? তাহলে আসলি কেন? কাল আসতাম।”

-“অসুস্থ না।”

-“তাহলে এমন ব্যবহারের মানে? কাল আমার পরীক্ষা আছে। এমন সময় নষ্ট তো করতে পারবো না। আমি ভেবেছিলাম আম্মু যশোর থেকেই কিনবে। কিন্তু আম্মু জোর দিয়ে বলেছে এখান থেকে কিনে নিয়ে যেতে। আমার সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা রে ভাই! একটু তো বোঝ!”
তনন,তাহসীর বাড়ি যশোরের শহরের কাছাকাছি এক গ্রামে।

তাহসী এবার বুঝলো। এইজন্যই বই হাতে নিয়ে ঘুরছে! তাহসীর যে লজ্জা করছে সাথে অস্বস্তি লাগছে এখন সেইটা কিভাবে বুঝাবে। তননও বোধ হয় বুঝলো কিছুটা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে আস্তে করে বললো,
-“সামনের শপে যায়। প্লিজ এইটুকু ইজি হ।”

তনন দোকানিকে শাড়ি দেখাতে বললে দোকানি অনেকগুলো শাড়ি মেলে ধরলো। তনন তাহসীর দিকে তাকালো। তাহসী ইশারায় দুটো শাড়ি দেখালো। তননেরও কিছুটা ভালো লাগলো। মৃদু স্বরে বললো,
-“কোনটা দুইটার মধ্যে?”

-“ইচ্ছা।”

-“তাহলে তোকে নিয়ে আসছি কেন?”

-“দুটোই ভালো।”
তনন খেয়াল করে দেখলো তাহসী দুটো লালরঙা শাড়ি দেখালেও তাহসীর চোখ একটি গোলাপি সাদা শাড়ির দিকে। তনন সবটা বুঝে গেল। দোকানির কাছে তিনটা শাড়ির দাম জানতে চাইলো তনন।
সাদা শাড়িটার দাম জানতে চাওয়ায় তাহসী অবাক হলো। তননের সাথে তার চোখাচোখি ও হলো।

দোকানি দাম বললে চোখ কপালে উঠে গেল তননের। এত দাম! সাদাটার দাম তুলনামূলক বেশি। সে কখনো এর আগে কিছু কিনেনি। সবসময় বাবা অথবা মা-ই কিনতো। বাবা যাওয়ার পর থেকে তননের জীবন থেকে সব আভিজাত্য ও চলে গেছে। বাবার কথা মনে পড়েই তননের মন খারাপ হলো। তনন তাহসীকে বললো মন থেকে যেইটা সে চায় সেইটা নিতে। তাহসী মুচকি হেসে সাদাটা দেখালো।
তনন কিছু বলার আগেই তাহসী একটা দাম বললো দোকানিকে। তননের চোখ কপালে উঠে গেল। অপমান হতে হবে নাকি।

দোকানির মধ্যে একটা ছেলে বললো,
-“আপু বারো হাজার টাকার শাড়ি আপনাকে পাঁচ হাজার টাকায় কে দিবে? একটা মানসম্মত দাম বলুন।”

-“আমার যেইটা মনে হয়েছে বলেছি। দেখুন কি‌ করবেন।”
তাহসী তনন কে ইশারায় চুপ থাকতে বললো।

বাক-বিতণ্ডা শেষে শাড়িটা আট হাজার দিয়ে কিনলো। দোকান থেকে বেরিয়ে বিশ্ব জয়ের হাসি দিল তাহসী। তনন অবাক হয়ে বললো,
-“দিয়ে দিল! হাউ! আমি তো দশ হাজার বলবো ভেবেছিলাম। আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না!”

তাহসী কিছুই বললো না। শুধু লাজুক হাসলো। তনন পুনরায় বললো,
-“ভালোই শপিং করার অভিজ্ঞতা আছে তোর দেখছি। ভবিষ্যতে অনেকগুলো টাকায় বেঁচে যাবে মনে হচ্ছে।”

তাহসী মৃদু স্বরে বললো,
-“এই শাড়ি আমি দেখেছি যশোরে। দাম চাইছিল আট হাজার টাকা। আর বাবাকে দেখেছি প্রতিটি জিনিসের দাম করতে। সেখান থেকেই শেখা।”

তনন তাহসীকে নিয়ে বাদবাকি জিনিস ও কিনে ফেললো। সেলিনা শেখ কিছু টাকা পাঠিয়ে ছিল। কিছু টাকা তননের টিউশনি করে জমানো টাকা থেকে এনেছিল তনন‌। এখন মনে হচ্ছে কোনো বন্ধু কে সাথে আনার থেকে তাহসী এনেই লাভ হয়েছে। কিছু টাকা বেঁচে গেছে। শপিং করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। তনন তাহসীকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে যাওয়ার কথা বললে তাহসী গেল না। তনন অবশ্য মন থেকে বলেনি, কাল তার পরীক্ষা। আবার এইসব রেস্টুরেন্টে যাওয়া সে ছেড়েছে এক বছরের বেশি হয়ে গেল।

তনন ফুটপাতে ঝালমুড়ি দেখতে পেয়ে তাহসীকে এনে দিল এক ঠোঙা। তাহসী ইতস্তত করে তননের দিকে বাড়িয়ে দিলে তনন নিল না। হঠাৎ তাহসীর চোখ পড়লো রাস্তার ওইপাশে থাকা এক ছেলের দিকে। তাহসী রাস্তা পার হওয়ার জন্য উদ্যত হতেই তনন উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,
-“কোথায় যাচ্ছিস? এইপাশ থেকেই রিকশা নিবো।”

-“আরে সামনে ভাইয়া।”

তনন সামনে তাকিয়ে দেখে নাহিদ দাঁড়িয়ে আছে একটা মেয়ের সাথে। তার একটু দূরেই একটা ফুসকার স্টল। তনন বুঝলো ব্যাপারটা।

তাহসী ফোন বের করে ফটো তুললো। রাস্তার ওইপাশে যেয়ে নাহিদের পিছন থেকে শার্টের কলার টেনে ধরলো।

নাহিদ চমকে পিছনে ঘুরতেই দেখলো তনন আর তাহসী। ধমক দিয়ে বললো,
-“এইভাবে কেউ আসে?”

-“ইশ্! তখন না বললে বিকালে আমার সাথে আসতে পারবে না। এখন তোমার কত ইম্পর্ট্যান্ট কাজ দেখতে পাচ্ছি। ফেইক আইডি দিয়ে বাবার কাছে পাঠিয়ে দিই পিক?”

-“চুপচাপ এখান থেকে যা তুই।”

নাহিদের কর্কশ কন্ঠে তাহসীর মন খারাপ হলো সাথে রাগ ও হলো। মিথিলা মেয়েটাও আছে এখানে। আবার তননও আছে এখানে। নাহিদ কখনোই তার সাথে এমন ব্যবহার করেনি। আজ পাবলিক প্লেসে এই দুইজনের সামনে এমন ব্যবহার করছে।
তাহসী হাসিমুখে নাহিদের কাছে আরেকটু এগিয়ে যেয়ে বললো,
-“উহু, এভাবে যাওয়া যাবে না। পরিচয় করিয়েই তো দিচ্ছ না।”

নাহিদ নিজেকে সামলে কোনোরকমে বললো,
-“পাবলিক প্লেসে থাপ্পড় না খেতে চাইলে সর সামনে থেকে।”

তাহসীর মন খারাপ হয়ে গেল। তবুও কান্না আটকে বললো,
-“এমন ব্যবহার কেন করছো তুমি?”

নাহিদ কিছু না বলে তাহসীর সামনে থেকে সরে গেল। রিকশা পেতেই চলে গেল নাহিদ।
তনন মিথিলার দিকে এগিয়ে যেয়ে বললো,
-“হয়তো পার্সোনাল। তবুও বলবেন প্লিজ কি হয়েছে?”

মিথিলা চোখের পানি মুছে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে বললো,
-“আপনারা কারা?”

-“ওইটা নাহিদ ভাইয়ার বোন। আর আমি তার ফ্রেন্ড।”
সংকোচ নিয়ে উত্তর দিল তনন।
তাহসী তখনও ভাইয়ের যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে আছে।

মিথিলা পুনরায় বললো,
-“আমার বাড়ি থেকে বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। এইটা বলতেই রেগে গেল। আমি কেন বলিনি এটা নিয়েই ধমকালো আমাকে। এখন চলে গেল।”

-“ভাইয়ার কথা ঠিক আছে। আপনি বাড়িতে জানান।”
তনন কে কথা বলতে দেখে তাহসী এগিয়ে আসলো।

-“আসলে এটা সত্য নয়। বান্ধবীরা ডেয়ার দিয়েছিল আমাকে। আর বিয়ের কথাটা বলার পরে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বকাবকি করে চলে গেল। শুনলোই না।”

তাহসী রেগে গেল ডেয়ারের কথা শুনে। এই খেলা তার কাছে জঘন্য লাগে। আর এই জন্যই ঝামেলা হয়েছে শুনে রাগ বেড়ে গেল। তাহসী দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
-“আপনাকে ডেয়ার দিলাম যদি আপনার সাথে আমার ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হয় তাহলে আপনি সেইদিন পালাবেন। এটা মানতে না পারলে আমাদের বাড়িতে ঢুকতে দিবো না।”

তাহসী তননকে ইশারায় ডেকে চলে গেল। তননও চলে গেল। হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো মিথিলা। কি বলে গেল মেয়েটা! পালিয়ে গেলে তো এমনিতেই বাড়িতে ঢুকতে দিবে না। তাহলে? নাহ, এবার মনে হচ্ছে সে পাগল-ই হয়ে যাবে। এইসব ভাবছে মিথিলা। ভাইয়ের থেকে বোনও কম যায় না। না জানি এদের পুরো পরিবার কেমন।

চলবে ইনশাআল্লাহ;

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে