#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#সূচনা_পর্ব(১)
দুপুরবেলা উঠানের মাঝখানে চেয়ারে বসে চুল শুকাচ্ছে তাহসী। সাথে হাতে ফোন নিয়ে স্ক্রল করছে। হঠাৎ মূল গেট দিয়ে কারো প্রবেশের উপস্থিতি বুঝতে পেরে চোখ তুলে তাকালো সেদিকে। তাহসী অনেকটাই চমকালো। অবাক হলো মাত্রারিক্ত। মনে মনে প্রশ্নে’রা উঁকি দিল, ‘এই ছেলে এখানে কেন? কোথায় তার আসার কথা তো সে শুনেনি।’
ছেলেটি কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে অফ হোয়াইট কালারের শার্ট আর জিন্স প্যান্ট। এতেই যেন অনেক সুন্দর লাগছে তাহসীর কাছে। ছেলেটাও তার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে, এটা বেশ বুঝতে পারছে তাহসী।
তহসী সেদিক থেকে নিজের মুগ্ধ দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। ঘরের দিকে চোখ যেতেই দেখলো বারান্দার গ্রিলে তালা দেওয়া। তহসী নিজেই বলেছে তার শাশুড়ি কে বারান্দায় তালা দিয়ে যেতে। এখন মনে হচ্ছে বলেই ভুল করেছে।
গ্রামের বাড়ি সাধারণত যেমন হয় মোটেও তেমনটা নয় এই বাড়িটা। চাররুম বিশিষ্ট এক তলা বাড়িটার সামনে বারান্দা দেওয়া। বারান্দা পুরো গ্রিল দিয়ে ঘেরা। বাথরুম ও ভিতরেই; বারান্দায় একটা, আর একটা ঘরের ভিতরে। বারান্দার একপাশে ডাইনিং টেবিল পাতা। আর ঘরের পাশেই রান্নাঘর।
তাহসী কিছু না বলে পুকুরের দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। দুই পা ফেলেই হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়লো। হাতে থাকা ফোনে কন্ট্যাক্ট নাম্বার বের করে ডায়াল করলো। কিছুক্ষণ বাদেই বাড়ির পিছনের গেট দিয়ে তাহসী এর শাশুড়ি আসলো মেয়েকে সাথে নিয়ে।
তাহসী এর শাশুড়ি সেলিনা শেখ চাবি দিয়ে তালা খুলতে খুলতে বললেন,
-“তুমি না একটু আগে বললে তালা মেরে যান মামুনি। এখন কি হলো?”
তাহসী কে ডাইনিং টেবিলে থাকা খাবার দেখতে বলায় তাহসী বলেছে তালা মেরে যেতে। এমনিতে পাশের বাড়ি গেলেও সেলিনা শেখ তালা দিয়ে যায় বাড়িতে। হুটহাট তালা দেওয়া দেখে তাহসী ও সেই কথায় বলেছে। বিড়ালের উৎপাত আছে এই বাড়িতে। তাহসী বরাবরই বড্ড অলস। ডাইনিং পাহারা দেওয়ার থেকে তালা মেরে দেওয়ায় ভালো। এতে সেলিনা শেখ ও কিছু বলেননি।
শাশুড়ির কথায় তাহসী প্রতিত্তর করলো না। ছেলেটি এগিয়ে এসে বললো,
-“আম্মু আমাকে কি তোমার চোখে পড়ে না?”
সেলিনা শেখ পিছনে তাকিয়ে বললো,
-“কখন আসলি, তনন? পথে সমস্যা হয়নি তো?”
-“না, আম্মু। আমি কিছুক্ষণ আগেই এসেছি। তোমার চোখ তো আজকাল আমার উপর পড়ছে না।”
এতক্ষণ চুপ করে ছিল তননের বোন তনু। এবার সে কথা বলে উঠলো,
-“তুমি কি ভাবীকে হিংসে করছো ভাইয়া?”
তাহসীর মুখে লাজুকতা ছড়িয়ে পড়লো। সে আবার পুনরায় চেয়ারে বসলো। তনন কোনো উত্তর না দিয়ে বোনের মাথায় টোকা দিয়ে নিজের রুমে চলে গেল।
আজ ঢাকা থেকে ফিরলো সে। সেই সকালে রওনা দিয়ে অবশেষে পৌঁছালো। সারাদিন বাস জার্নি করার ফলে শরীরে ঘাম শুকিয়ে বসে গেছে। এখন তার উদ্দেশ্য গোসল করা। তা নাহলে শান্তি লাগবে না।
তাহসী বসতেই সেলিনা শেখ বললেন,
-“এই তাহসী এখানে না বসে রুমে যাও তো। তননের খাবার টা দাও কষ্ট করে। আমি পাশের বাড়ি তোমার চাচি শাশুড়ির কাছে যাচ্ছি।”
এই বলেই তিনি চলে গেলেন। তনু ও মায়ের পিছু পিছু চলে গেল।
তাহসী পড়লো বিপাকে। সেলিনা শেখ পরশু ফোন দিয়ে কাল তাকে এখানে নিয়ে এসেছে। তনন আসবে জানলে কখনোই আসতো না সে। তাহসী চোখ মুখ কুঁচকে ঘরের দিকে পা বাড়ালো। আজ গোসলের পর শাশুড়ি তাকে শাড়ি পড়িয়েছে। তাহসীর জীবনে আজ দিয়ে তিনদিন হচ্ছে শাড়ি পড়া। সে এতে মোটেও সাচ্ছন্দ্য বোধ করছে না। তাহসী আস্তে আস্তে হেটে রুমে যেয়ে উঁকি দিল।
তননকে দেখলো না রুমে। ওয়াশরুমে পানির পড়ার শব্দে বুঝলো ভিতরে। তাহসী এখানে বসবে নাকি বাইরে যাবে কিছুই বুঝতে পারছে না। আর কিছু না ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানার এক কোণে যেয়ে বসলো তাহসী। চুপ করে বসে থেকে শাড়ির আঁচলের এক কোনা আঙ্গুল দিয়ে পেঁচাতে লাগলো। সেইটা ফেলে রেখে আবার ফোন হাত নিল।
কিছুক্ষণ বাদেই তনন বের হলো গোসল সেরে। তাহসী কে দেখে অবাক হলো। মোটেও এখানে থাকার মানুষ নয় তাহসী; বোধহয় মা পাঠিয়েছে এটা ভেবেই তনন মুচকি হাসলো। বলে উঠলো,
-“কি ব্যাপার? এখানে তুই?”
তাহসী সেদিকে আড়চোখে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল। আমতা আমতা করে বললো,
-“এখানে বলতে এই রুমে নাকি এই বাড়িতে?”
-“দুইটাই। তা আমার জন্যে এসেছিস বুঝি?”
তাহসী উঠে দাঁড়ালো। বললো,
-“মোটেও না। আমি জানতামই না আসার কথা। মামুনি এনেছে ফোন দিয়ে। আচ্ছা এখন কি খাবার দিবো? মামুনি সিমি’দের বাড়ি গেছে। আমাকে খাবার দিতে বলেছে।”
সিমি তননের চাচাতো বোনের নাম। তনন নিঃশব্দে এগিয়ে আসতে আসতে বলে উঠলো,
-“বাব্বাহ! যে নিজে খাবার নিয়ে খায় না, সে আমাকে খাবার দিবে? আমার ভাগ্য আছে বলতে হবে!”
তাহসী কিছুই বললো না। সবসময় তার আম্মুই খাবার বেড়ে দেয়। অবশ্য এখন যেখানে থেকে পড়াশোনা করে সেখানে নিজেরই নিয়ে খাওয়া লাগে।
তনন হাতে থাকা টাওয়েল বিছানার উপর ছুড়ে ফেলে তাহসীর দুই পাশে হাত রেখে তাহসী কে বন্দি করলো। হঠাৎ এমন হওয়াতে তাহসী চমকে উঠলো। সে আর তাকায়নি তননের দিকে। ফলে বুঝতেও পারিনি তনন কখন তার কাছে এসেছে। তাহসী পিছনে কিছুটা হেলতে যেয়ে সোজা বিছানায় পড়ে গেল। তনন আরো ঝুঁকে গেল তাহসীর দিকে। তাহসীর কাঁপাকাঁপি বেড়ে গেল দ্বিগুণ।
-“কি-ইই হচ..ছে?”
তনন মুচকি হেসে তাহসীর ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল। তাহসী ঠান্ডা ঠোঁটের ছোঁয়ায় পুনরায় কেঁপে উঠলো। মনে হলো এই কাঁপাকাঁপি তে জান টাই না বের হয়ে যায়!
তনন এবার তাহসীর গলায় মুখ গুজলো। হাত চলে গেল তাহসীর পেটে। তাহসী চোখ খিঁচে বন্ধ করলো। একে তো সে শাড়ি সামলাতে পারে না। তারপর এই অনুভূতি! তা সহ্য করার মতো নয় তাহসীর কাছে।
উঠান থেকে কেউ তননের নাম ধরে ডেকে উঠলো। তনন ছেড়ে দিল তাহসী কে। তাহসীর পাশে উঠে বসে তাহসী কেও টেনে তুললো।
তনন গলা উঁচিয়ে বাইরের মানুষটির উদ্দেশ্যে বললো,
-“আসছি।”
এবার তাহসীর দিকে তাকালো তনন। মুখে হাসি ঝুলিয়ে বললো,
-“জায়ানের জন্য ছাড়া পেলে। আমি নিজেই খাবার নিচ্ছি। তুমি শাড়ি পরে কোনো ছেলের সামনে যাবে না। যেহেতু আমার জন্য শাড়ি পরেছিলে তাই শাড়ি পরার কারণ পরিপূর্ণ করে দিয়ে গেলাম।”
তনন আর তাহসী দুজনে বন্ধু। দুজনে তুই সম্বোধন করেই কথা বলতো। বিয়ের পর তনন মাঝে মাঝে তুই বলে আবার তুমি বলে। তাহসী তার সাথে মিল রেখে কথা বলে। তুমি বললে তুমি, তুই বললে তুই।
তাহসী চাইলেও মুখ খুলে বলতে পারলো না সে নিজ ইচ্ছায় শাড়ি পরেনি। আর সে তো জানতোই না তননের আসার কথা।
তনন উঠে চলে গেল বারান্দায়। গ্রিল খুলে জায়ান কে বারান্দায় এসে বসতে বললো। জায়ান তনন আর তাহসী দুজনের বন্ধু। তনন ডাইনিং টেবিলের কাছে যেয়ে চেয়ার টেনে বসে জায়ান কেও বসতে বললো সাথে তার সাথে লাঞ্চ করার প্রস্তাব দিল। জায়ান বসলেও খাওয়ার প্রস্তাব নাকচ করে দিল। তনন খেতে খেতে কথা বলতে লাগলো। তননের আসার খবর শুনেই সে এসেছে।
তাহসী শাড়ি ঠিক করে শুয়ে পড়লো বিছানায়। শাড়ি পড়ে মোটেও শুতে ইচ্ছা করছে না, তবুও পরিবর্তন করলো না। সেলিনা শেখ এসে দেখার পর কি ভাববে এই ভেবে। তাহসীর মন থেকে তননের শীতল স্পর্শের অনুভূতি যাচ্ছেই না। তাহসীর কাছে পুরো অপ্রত্যাশিত ছিল ঘটনাটা। বিয়ের রাতেও তনন তাকে এতোটা ছুঁয় নি। তাদের বিয়েও হয়েছে মাত্র তিন মাস। তবুও তাহসী এখনো তননের সাথে ফ্রি হতে পারিনি।
চলবে ইনশাআল্লাহ;