তোমাতে বিভোর ২ পর্ব-০৩

0
1256

#তোমাতে_বিভোর
#Season_2
#পর্ব_৩
#Sapna_Farin

–অধরার অবস্থা দেখে।সে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে অপলক ভাবে অধরার দিকে তাকিয়ে আছে এবং তার চোখ বেয়ে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। নিজের মনের অজান্তে বুকের ভেতর কেমন তোড়পাড় শুরু হয় তার।সে বুঝতে পারছেনা যে মেয়েটি তার জীবন এমন এলোমেলো করে দিলো। তারজন্য কিসের এতো টান,কিসের এতো মায়া, কিসের এতো ভালোবাসা,তারজন্য উঁকি দিচ্ছে মনের মাঝখানে?তার কষ্ট দেখে তার কেন কষ্ট হচ্ছে।নিজেকে কেন তার থেকে দূরে রাখতে পারছেনা সে।রুদ্র তো এসবের জন্য তার জীবনে ফিরে এসেছে। তাকে শাস্তি দেবার জন্য।তাকে কষ্ট দেবার জন্য।তার জীবন নরক বানিয়ে দেবার জন্য।তাহলে কেন অধরা কে এমন অবস্থায় দেখে সে অনুতপ্ত হচ্ছে।কেন নিজের উপর নিজের রাগ হচ্ছে।কেন নিজেকে অমানুষ মনে হচ্ছে তার।তখন হাজারো প্রশ্ন দ্বারা জর্জরিত হচ্ছে রুদ্র।কিন্তু সে প্রশ্নের উত্তর গুলো রুদ্রের অজানা।সে যেন কিছু ভাবতে পারছেনা না এখন।তখন সে শার্টের হাতা দিয়ে চোখের অশ্রু মুছে।গুটিগুটি পায়ে অধরার কাছে যেতে থেমে যায়। এখন যেন নড়েচড়ে উঠতে পারছেনা সে।সময় যেন এখানে থেমে আছে।অদ্ভুত ভাবে অধরার দিকে তাকিয়ে আছে সে।

–সামান্য আলো এবং অন্ধকারে মধ্যে স্পষ্ট অধরা কে দেখা যাচ্ছে।সে বিছানার মধ্যে উবু হয়ে শুয়ে আছে।তার খোলা চুল গুলো এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে আছে পিঠের উপরে।ফ্যানের বাতাসে এলোমেলো চুল গুলো উড়ে সড়ে যেতে।স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে রুদ্রের দেয়া আঘাত গুলোর চিহ্ন ।তার শ্যামলা শরীরে ছোপ ছোপ লাল দাগ গুলো স্পষ্ট ফুটে উঠেছে এবং বিছানার মধ্যে সাদা চাঁদের স্পষ্ট ফুটে উঠেছে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ গুলো।এসব দেখে রুদ্র ধপাস করে ফ্লোরে হাটু গেরে বসে পড়ে।নিজের মস্তিষ্ক এবং মনের সাথে রীতিমতো লড়াই করে যাচ্ছে সে।তার মস্তিষ্ক বলছে সে ঠিক করেছে কিন্তু মন বলছে সে ভুল করছে।প্রতিশোধের আগুনে নিজের বিবেক বুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছে সে।কোন সুস্থ মানুষ কিভাবে একটা মানুষ কে এভাবে অত্যাচার করতে পারে?যে মেয়েটি সবার আদরের সোনামণি। আজকে রুদ্র তার এমন অবস্থা করেছে!ভাবতে রুদ্রের হৃদয় কেঁপে উঠে।তখন রুদ্র নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে।ঝুঁকে আলতো করে অধরার পিঠে স্পর্শ করতে।

–অধরা ঝটকা মেড়ে রুদ্রের হাত সড়িয়ে দিয়ে।মাথা ঘুরিয়ে রক্ত বর্ন চোখে দাঁতে দাঁত চেপে বলে।

–“ডোন্ট টার্চ মি রুদ্র ভাইয়া।কাটা গায়ে মলম দিতে এসেছো।নিজে আঘাত করে এখন নিজে মলম লাগাতে এসেছো।ভুল করে আমার প্রতি মিথ্যা মায়া দেখাতে আসবেনা না।তুমি কোন মানুষ না?মানুষ হলে এভাবে আমাকে!”

–অধরার গলার আওয়াজ ভারী হয়ে এলো।সে ডুকরে কেঁদে উঠে বলে।

–“আমার ভাবতে ঘেন্না লাগছে তোমার মতো অমানুষ সাইকো লোক আমার স্বামী।দূরে থাকো আমার কাছে থেকে।কি হলো এভাবে তাকিয়ে কি দেখো?মারবে আমাকে আবার মারো।তোমার মতো কাপুরষ তাছাড়া কি করতে পারে।কাপুরষ কোথাকার।”

–অধরার কথা শুনে রুদ্র ভেবাচেকা খেয়ে যায়।সে ভেবেছিল অধরা ঘুমিয়ে আছে।তারজন্য নিজেকে কন্টোল না করতে পেড়ে নিজের দেয়া আঘাত গুলো তে মলত লাগিয়ে দিতে চেয়েছিল।কিন্তু তার আগে এসব হয়ে গেলো।তখন রুদ্র নিজেকে সামলে নিয়ে চিৎকার বলে।

–“অধরা?খুব বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।তোমার মুখ কিভাবে বন্ধ করতে হয় আমার ভালো করে জানা আছে।”

–অধরা নিজেকে সামলে নিয়ে বিছানা থেকে উঠে বসে বলে।

–“চিৎকার করবেনা রুদ্র ভাইয়া?তোমার চিৎকার চেচামেচি শুনে অধরা ভয় পায়না।তখন নীরব ছিলাম কারণ আমি চাচ্ছিলাম না।আমার ভুল গুলোর জন্য তোমার মতো অমানুষের চেহারা সবার সামনে আসুক।আমার ভুলের মাশুল আমার ফ্যামিলি কে দিতে হোক।হয়তো তারা সহ্য করতে পারবেনা।তারজন্য আমাদের চারদেয়ালের কথা আমাদের চারদেয়ালের মধ্যে রাখতে চেয়েছিলাম।আমার নীরবতা কে তুমি অন্য কিছু মনে করোনা।”

–“তাহলে আমাকে দয়া দেখানো হচ্ছে?”

–অধরা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে।

–“দয়া তোমাকে ভাবলে কি করে?”

–রুদ্র চোয়াল শক্ত করে উত্তেজিত হয়ে বলে।

–“তোমার সাহস কি করে হয়,আমার সাথে এমন তর্ক করার?তুমি খুব বাড়াবাড়ি করছো।তার ফল ভালো হবেনা।”

–অধরা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে।বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠে বলে।

–“আহ্।”

–রুদ্র তখন নিজের ক্ষোভ গুলো কে দূরে রেখে।
অধরা কে ধরতে গেলে।অধরা তাকে থামিয়ে দিয়ে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলে।

–“ওহ্ রুদ্র ভাইয়া আমাকে আমার মতো ছেড়ে দিতে পারো।তোমার এমন মিথ্যা ড্রামা করতে হবেনা আমার সাথে।এখন তোমার এবং আমার হিসাব বরাবর।আমার সামান্য ভুল তোমার জীবন শেষ করে দিয়েছিল।কিন্তু তুমি জেনে বুঝে আমার জীবন শেষ করে দিয়েছো।কিন্তু অধরা এতো সহজে তোমার কাছে হেরে যাবেনা।তোমার মতো মানুষ কে অধরা স্বামী হিসেবে কখনো স্বীকার করবে না।তোমাকে ডির্ভোস দিয়ে তোমার চোখের সামনে আহান কে বিয়ে করে তার সাথে সংসার করবো।বুঝতে পেরেছো শুধু সামান্য সুযোগের অপেক্ষা।”

–“সে সুযোগ কখনো তোমার জীবনে আসবে না।রুদ্র বেঁচে থাকতে না।তোমার সাহস কি করে হয় এসব কথা বলার?”

–“কেন কি হয়েছে?সত্যি কথা শুনতে খারাপ লাগছে।নিজেকে কি মনে করো তুমি হিরো।তুমি ভুলে যাচ্ছো অধরা এখন তোমার স্ত্রী।তুমি সকল কে সাক্ষী রেখে নিজের স্ত্রী হিসাবে মেনে নিয়েছো আমাকে।এখন তোমার কথার উত্তর দেবার সাহস তুমি আমাকে দিয়েছো।নিজের শত্রু নিজের জীবনে ডেকে নিয়ে এসেছো তুমি।তারপর তোমার জীবনে কি হবে সবকিছুর জন্য তুমি দ্বায়ী থাকবে।বুঝতে পেরেছো।”

–রুদ্র চোখ গুলো লাল করে করা গলায় বলে।

–“তুমি খুব বেশি লাফালাফি করতেছো অধরা?ঠিক মতো দাঁড়িয়ে থাকতে পারছোনা।কিন্তু বকবক করে যাচ্ছো।আগে নিজের অবস্থা দেখো ভালো করে।তোমার আয়না দেখা প্রয়োজন।তাহলে বুঝতে পারবে তুমি কি?বিষাক্ত নাগিনীর থেকে বেশি বিষাক্ত তুমি।তুমি বুঝতে পারছো না রুদ্র ইজ ব্যাক।রুদ্র যথেষ্ট তোমার জীবন কে নরক বানিয়ে দেবার জন্য।ঐ আহান কে তোমার আশেপাশে দেখলে খুব খারাপ হবে।”

–অধরা মুচকি হেসে বলে।

–“আচ্ছা দেখা যাবে।”

–তখন রুদ্র মুখে বাকা হাসির রেখা টেনে
হেঁচকা টানে অধরা কে নিজের কাছে টেনে নিয়ে এসে।তার কোমড় আঁকড়ে ধরে,তার খোলা চুলগুলো কানের কাছে গুজে দিয়ে ফিসফিস করে বলে।

–“অধরা তুমি আমার স্ত্রী ভুলে যাচ্ছো।আজকে আমাদের পুনরায় বিয়ে হয়েছে।আজকে আমাদের ফাস্ট নাইট।এভাবে রাগ,ক্ষোভ,ঝগড়া এবং শত্রুতা করে নষ্ট করে ফেলবো?”

–অধরার কাছে মূহুর্তটা ছিলো আন একচ্ছেপ্টটেড।
রুদ্রের আচমকা এমন ব্যবহার দেখে বেশ ঘাবড়ে যায় সে।তখন নিজেকে সামলে নিয়ে রুদ্র কে ধাক্কা মেরে সড়িয়ে দিয়ে।অন্য দিকে মুখ গুড়িয়ে
কাঁপা কাঁপা গলায় বলে।

–“রুদ্র ভাইয়া কি বলতে চাচ্ছো তুমি?”

–রুদ্র পিছনে থেকে অধরা কে আঁকড়ে ধরে।তার খোলা চুলে মুখ ডুবিয়ে বলে।

–“কি বলতে চাচ্ছি তুমি বুঝতে পারছোনা না?এতো ন্যাকামি কেন করো।তোমার জীবনে আমার এবং আহানের জায়গা বোঝাতে চাচ্ছি।এখন অবশ্যই ভালো করে বুঝতে পেরেছো আশা করি।”

–অধরা নিজেকে রুদ্রের কাছে থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে।দূরে দাঁড়িয়ে বলে।

–“আমার এতো বুঝতে হবেনা।নিজের লিমিটের মধ্যে থাকবে।”

–রুদ্র মুখে বাকা হাসির রেখা টেনে ফিসফিস করে বলে।

–“অধরা তোমাকে আঘাত করে অনুতপ্ত রুদ্র।কিন্তু এখন তোমাকে জ্বালানো এবং পুড়ানোর রাস্তা তুমি খুঁজে দিয়েছো।এখন রুদ্রের কাছে থেকে কিভাবে পালাবে।”

–রুদ্র গুটিগুটি পায়ে অধরার কাছে গিয়ে হুট করে তার হাত আঁকড়ে ধরে বলে।

–“চলো।”

–অধরা ভেবাচেকা খেয়ে বলে।

–“কোথায়?”

–“বিছানায়।”

–“মানে?”

–“হুস।চলো আমার সাথে কোন কথা বলবে না।”

–অধরা রুদ্রের কাছে থেকে ছোটার জন্য ছটফট করছে।কিন্তু রুদ্র তাকে টেনে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে বলে।

–“ফাস্টেড বক্সে কোথায়।”

–অধরা চোখ গোলগোল করে বলে।

–“মানে?তুমি কি করতে চাচ্ছো বলোতো।তোমার উদ্দেশ্য ঠিক লাগছেনা আমার।”

–“তোমাকে খুন করবো তারজন্য লাগবে।এখন বলবে কোথায়?”

–“খুন তো করে ফেলেছো।তোমার মিথ্যা ড্রামাটিক সিনেমার মাঝখানে আমাকে ফাঁসিয়ে।”

–“তোমার লেকচার বন্ধ করবে?গলা টিপে কিন্তু তোমাকে মেরে ফেলবো।তাড়াতাড়ি বলো কোথায় আছে?

–“আমার রুমে আছে।”

–“আচ্ছা।”

–রুদ্র চলে যাচ্ছিলো।তখন অধরা বলে উঠে।

–“দু’বছর যে বাড়িতে ছিলোনা।সে কি করে জানবে কোন রুমে কোথায় কি আছে?”

–রুদ্র দ্রুত রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।অধরা ছোট করে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে।
________________________

–মাঝরাতে আহান অধরা কে নিয়ে স্বপ্ন দেখে হকচকিয়ে বিছানা থেকে উঠে বসে।তার মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে চিন্তার ছাপ।রীতিমতো ঘামছে সে।ঘেমে পুরো শরীর ভিজে গেছে তার।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।তখন সে তাড়াহুড়ো করে বেডের পাশে রাখা পানির গ্লাসটা নিয়ে ডগডগ করে পানি খেয়ে ফেলে।বুক ফুলিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে বলে।

–“অধরা ঠিক আছেতো!তাকে নিয়ে এমন ভংকর স্বপ্ন দেখার মানে কি?কিসের জন্য সবকিছু এমন এলোমেলো হয়ে গেলো,কি দোষ ছিলো আমার।কোন অজানা ঝড়ে সবকিছু উল্টো পাল্টা হয়ে গেলো।আমার ভুল হয়েছে অধরা কে মাঝ রাস্তায় ফেলে আসা।কিন্তু কি করবো সে যে অন্য কারো স্ত্রী।এখানে আমার কি করার ছিলো।অধরার প্রতি সবসময় আমার ভালো লাগা গুলো কাজ করতো।তাকে আমার ভালো লাগে তারজন্য মনের ভেতর একটা স্ফোট কোর্নার ছিলো।কিন্তু সাহস করে মনের কথা গুলো অধরা কে বলতে পারতাম না।সে যদি আমার প্রোপোজাল রিজেক্ট করে দেয় তারজন্য।কিন্তু অবশেষে আমাদের বিয়ে ঠিক হলো। ভেবেছিলাম বিয়ের পড়ে তাকে মনের কথা গুলো খুলে বলবে।কিন্তু সবকিছু মুহূর্তে শেষ হয়ে গেলো।সে ঠিক আছেতো একটা ফোন করবো।না এতো রাতে ফোন করা ঠিক হবেনা।কালকে গিয়ে অধরার সাথে দেখা করে আসবো।”

–আহান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে আড়মোড়া হয়ে শুয়ে পড়ে।
_____________________

–রুদ্র ফাস্টেড বক্সে নিয়ে এসে অধরার আঘাত গুলোর মধ্যে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে।অধরা অবশ্য বারন করেছিল।কিন্তু রুদ্রের সাথে পেরে না উঠে।সে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে।

–রুদ্র অধরার খোলা চুলগুলো পিঠের উপর থেকে সড়িয়ে।তার পিঠে আলতো করে স্পর্শ করতে।অধরা হালকা কেঁপে উঠে।জীবনে প্রথম কোন পুরষের স্পর্শ।তার মনে শীতল অনুভূতি জাগে।সে নিজেকে সামলে নিয়ে নীরবে কয়েক ফোটা অশ্রু ফেলে।রুদ্র বিষয়টা বুঝতে পেরে।নিজের হাত সড়িয়ে নিয়ে বলে।

–“হয়ে গেছে শুয়ে পড়ো।তুমি ভেবোনা তোমার জন্য এসব করে যাচ্ছি!এসব করে যাচ্ছি আমাদের চারদেয়ালের কথা যেন এখানে থাকে তারজন্য।আশা করি বুঝতে পেরেছো।”

–অধরা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে আড়মোড়া হয়ে শুয়ে পড়ে।রুদ্র অধরা বিপরীত পাশে শুয়ে পড়ে।দুজন দু’দিকে মুখ করে শুয়ে আছে।তারা এতো কাছে।
কিন্তু তাদের মধ্যে আকাশ সমান দূরত্ব।
_____________________

–অন্ধকার পেরিয়ে তাদের জীবনে আলোকিত ভোর আসে।কিন্তু কে জানতে।তাদের জীবনের আলোকিত ভোর আলোকিত সকাল।জীবন অন্য কোন মোড়ে নিয়ে আসবে।

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে