#তোমাতে_বিভোর
#Season_2
#পর্ব_২
#Sapna_Farin
–অবশেষে রুদ্র এবং অধরার পুনরায় বিয়ে হয়ে যায়।তাদের ফ্যামিলির সকলে বেশ খুশি শুধু অভ্র ছাড়া।অভ্র মুখ গোমড়া করে দূরে দাঁড়িয়ে আছে।আহান বেচারা ভেবাচেকা খেয়ে বিয়ের সাক্ষী হলো।নিজে বিয়ে করতে এসে।নিজের হবু স্ত্রীর বিয়ে খেতে হচ্ছে তার ভাবা যায়?এসব দেখার বাকী ছিলো বেচারার।ভেবেছিল বিয়ের পড়ে অধরার সাথে প্রেম চুটিয়ে প্রেম করবে।প্রেম তো দূরের কথা তার সামনে রুদ্র তাকে বিয়ে করে ফেললো।তার অনুভূতি গুলো রোবটের মতো হয়ে গেছে এখন।মনের মধ্যে জমানো অনেক অনুভূতি কিন্তু সবার সামনে দেখাতে পারছেনা সে।তখন ছোট করে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে।আহান বিড়বিড় করে বলে।
–“আসলে সবকিছু ভাগ্য থাকেনা।অধরা আমার ভাগ্য ছিলোনা তারজন্য সে আজকে রুদ্রের।সবকিছু বিয়ের আগে জেনেছি এটা অনেক।”
–নিজেকে শান্তনা দিয়ে আহান এবং আলেয়া চলে আসে বিয়ে বাড়িতে থেকে।আহানের আজকে নিজের মায়ের জন্য গর্ব অনুভব হচ্ছে এবং আলেয়ার আহানের জন্য।তার শুধু চাচ্ছে সবকিছু যেন ভালো ভাবে মিটে যায়।
_________________________
–বিয়ে বাড়ির চেহারা পুরো পাল্টে গেছে।অভ্রের অবস্থা দেখে তিশা তার কাছে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলে।
–“অধরার বিয়ে হয়ে গেছে দু’বছর আগে।এমন কথা রুদ্রের কাছে থেকে শুনতে হলো।আমাদের বিয়ের দেড় বছর হতে চললো।আমার সাথে এতো লুকোচুরি কেন অভ্র?নিজের স্ত্রীর কাছে এসব লুকানোর কি ছিলো।তোমার মনে কখন কি চলে কে জানে।কিন্তু অধরা সে আমার বোন এবং বন্ধুর মতো সে কেন বললো না তাদের বিয়ের কথা?”
–অভ্র দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিস করে তিশা কে বলে।
–“তোমার কিসের এতো আদ্যিক্ষেতা আমার ফ্যামিলির ব্যাপারে।এসব তুমি জানানো।সো এসব থেকে দূরে থাকো তিশা।সবকিছু তে তোমার কেন এতো বাড়াবাড়ি করতে হবে?”
–তিশা ভেবাচেকা খেয়ে বলে।
–“বাড়াবাড়ি মানে?অভ্র বাড়াবাড়ি তুমি করছো!তোমার ফ্যামিলি মানে আমার ফ্যামিলি।তুমি ভুলে যাচ্ছো তিশা তোমার বিবাহিত স্ত্রী।বিয়ের বছর ঘুরতে না ঘুরতে তোমার এমন রূপ।কিন্তু যখন আমার সাথে প্রেম করতে তখন খুব মিষ্টি করে বলতে।তিশা আমার সবকিছু তোমার।তাহলে এখানে তোমার ফ্যামিলি আমার না?এখানে অবশ্যই কথা বলার অধিকার আমার আছে।তুমি এখানে নাক গলাতে আসবে না।”
–“হয়েছে বাবা আমার ভুল হয়ে গেছে।এবার থামো আমার অনেক শিক্ষা হয়ে গেছে।আমি ভুলে গিয়েছিলাম তোমার সাথে কথা বলে এবং তর্ক করে কখনো অভ্র পেরে উঠবে না।”
–“কি আমি তর্ক করি?এভাবে তুমি বলতে পারলে অভ্র।”
–অভ্র কি বলবে বুঝতে পারছেনা।তখন তাদের পাশে থেকে রুশা বলে উঠে।
–“অভ্র ভাইয়া এবং তিশা ভাবি তোমাদের সম্যসা কি বলবে?তোমরা যখন তখন এমন ড্রামা কেন করো।যেখানে সেখানে তোমাদের ঝগড়া লেগে যায়।”
–তিশা ন্যাকামি করে বলে।
–“আমার কি দোষ বলো রুশা?সব তোমার অভ্র ভাইয়ার দোষ।তাকে বিয়ে করা আমার ভুল হয়েছে।রুদ্রের মতো মানুষ আগে পেলে।কে এমন বোকা চেহারার মিচকে শয়তান কে বিয়ে করতো।কি ভুল করে ফেলেছি এখন আমার কি হবে।”
–“তিশা ভাবি হয়েছে তোমার ন্যাকামি ড্রামা বন্ধ করো।সিরিয়াস বিষয় চলছে বুঝতে পারছোনা?
–“ওহ্ তুমি দেখি তোমার অভ্র ভাইয়ার মতো।খুব বেশি কথা বলো।তোমাকে তো পড়ে দেখে নিবো।”
–তখন অভ্র তিশা কে থামিয়ে দিয়ে উত্তেজিত হয়ে বলে।
–“তিশা কথা পাল্টাবে না। রুদ্রের মতো মানুষ পেলে কি হ্যাঁ!কি করতে তুমি?”
–“তোমাকে কেন বলবো হ্যাঁ?সব কথা কি মুখে বলতে হবে বুঝে নিতে পারোনা।”
–“তিশা তুমি কিন্তু খুব বেশি বাড়াবাড়ি করছো।খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু।”
–“আচ্ছা দেখি কি খারাপ হয়।রুদ্রের কাছে যাচ্ছি কেমন।তুমি এখানে দাঁড়িয়ে থেকে দেখো।ওকে বেবি।”
–তিশা শাড়ির আঁচল দিয়ে অভ্রের মুখ ঝাপটা মেরে চলে যায়।অভ্র রাগে কটমট করে বলে।
–“তিশা।”
–তখন রুশা বলে।
–“অভ্র ভাইয়া তুমি এতো বোকা কেন?তুমি বুঝতে পারছোনা তিশা ভাবি তোমাকে ক্ষেপাচ্ছে।”
–অভ্র রুশার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
–“কি হলো অভ্র ভাইয়া তুমি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন।আমার দোষ কি?”
–“সব তোমার ভাইয়া রুদ্রের দোষ।আমার বোন কে বিয়ে করে।এখন আমার স্ত্রী কে নিয়ে টানাটানি করা।দেখো কেমন দাঁত কেলিয়ে হেসে যাচ্ছে তিশার সাথে।ইচ্ছে করছে কয়েকটা গুসি মেরে নাক ফাটিয়ে দেয়।”
–রুশা জেরে কেশে বলে।
–“অভ্র ভাইয়া তুমি কাকে নিয়ে কি বলো?ভুলে যাচ্ছো তার বোন তোমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।”
–“তো কি হয়েছে হ্যাঁ।অভ্র ভয় দেখাতে জানে।সে ভয় পেতে জানেনা কেমন!”
–“আচ্ছা।”
–“চলো রুশা বিয়ে করে ফেলি।”
–রুশা ভেবাচেকা খেয়ে অভ্রের দিকে তাকিয়ে বলে।
–“মানে?”
–“আমরা বিয়ে করে ফেলি।রুদ্র আমার বোন কে নিয়ে নিছে।এখন আমার স্ত্রী কে নিয়ে টানাটানি করছে।এখন প্রতিশোধ নেবার জন্য তোমাকে বিয়ে করবো।”
–“অভ্র ভাইয়া এমন দাঁত কেলিয়ে হাসা বন্ধ করো।খুব খারাপ লাগছে দেখতে।তিশা ভাবি ভুল করে এমন কথা শুনলে তোমাকে খুন করে ফেলবে।”
–অভ্র সামান্য ভাব নিয়ে বলে।
–“কে তিশা?তিশা কে দেখে অভ্র ভয় পাবে!তিশা অভ্রের ইশারায় চলে বুঝতে পেরেছো।”
–“হ্যাঁ দেখতে পাচ্ছিতো কে কার ইশারায় চলছে।তাহলে তোমার দেয়া প্রস্তাব তিশা ভাবির সামনে রাখলে কেমন হয়।অবশ্য সতীন বলে কথা।”
–অভ্র ভেবাচেকা খেয়ে বলে।
–“মানে?মজা করছিলাম সামান্য এখানে তিশাকে কেন টেনে নিয়ে আসতে হবে।”
–“হয়েছে অভ্র ভাইয়া তোমার ড্রামা রাখো।বলো কবে ট্রিট দিচ্ছো।ট্রিট না দিলে কিন্তু আমার মুখ বন্ধ থাকবে না।আগে থেকে বলে দিচ্ছি পড়ে তুমি আমাকে দোষ দিতে পারবে না!”
–“আচ্ছা!তাহলে এমন ব্যাপার ট্রিট তো দিবো কিন্তু আমার মনে মাঝেমধ্যে একটা প্রশ্ন জাগে মনে হয় তুমি আমার সতীন।সব সময় আমার সংসার ভাঙার চেষ্টা করো।”
–রুশা শব্দ করে হেসে উঠে।তখন তার মা মিসেস রিমিঝিম আড়চোখে তার দিকে তাকাতে সে নীরব হয়ে।রাগী লুকে অভ্রের দিকে তাকিয়ে আছে।অভ্র কোন রকম সেখান থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছিলো তখন দেখে তিশা রুদ্রের সাথে কেমন হেসে যাচ্ছে।এসব দেখে তার রাগ হয়।যে রুদ্র কে সে সহ্য করতে পারেনা।সেখানে তিশার কেন রুদ্রের সাথে এতো কথা বলতে হবে।সে কথা ভেবে পাচ্ছেনা অভ্র।সে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে।
–“আচ্ছা রুদ্র ভাইয়া আপনার সাথে কথা বলে ভালো লাগলো।”
–“তিশা তুমি আমাকে তুমি করে বলতে পারো।আসলে অনেক সরি তোমাদের বিয়েতে ছিলাম না তারজন্য।কি করবো বলো সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল।আশাকরি এখন সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।”
–“ঠিক বলেছেন রুদ্র ভাইয়া সবকিছু ঠিক হলে ভালো।অধরা খুব ভালো মেয়ে আশা করি সে ভালো থাকবে আপনার সাথে।”
–“অবশ্যই তুমি কোন চিন্তা করোনা।এখন থেকে তার সব দ্বায়িত্ব আমার।দ্বায়িত্ব নিতে এখন রুদ্র চলে এসেছে।এখন কিসের চিন্তা।”
–“হুম।”
–তিশা চলে যায়।রুদ্রের মুখে বাকা হাসির রেখা ফুটে উঠে এবং অধরার মুখে চিন্তার ছাপ।তার কপালে জমে বিন্দু বিন্দু ঘামের রেখা।অজানা কোন ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে সে।তার এমন অবস্থা দেখে রুদ্র আড়চোখে অধরার দিকে তাকাতে অধরা বেশ ঘাবড়ে যায়।সে বুঝতে পারছেনা সামনে তারজন্য কি অপেক্ষা করছে।তার সামান্য মিথ্যা কথার জন্য তাকে যে কি কি সহ্য করতে হচ্ছে।এসব ভাবনার বাহিরে ছিলো অধরার।দিব্যি তো ভালো ছিল নিজের জীবনে।সেদিন কেন যে রাগের মাথায় রুদ্র কে শায়েস্তা করতে গিয়ে নিজের নামের সাথে রুদ্রের নাম জড়িয়ে ছিল ভেবে পাচ্ছেনা অধরা।তারজন্য মিথ্যা কথা বলা বারন।মিথ্যা মানুষকে এমন অবস্থায় নিয়ে যায়।যেখান থেকে ইচ্ছে করলে কি ফিরে আসা যায়?”
______________________
–অধরা বধূ বেশে সাজানো গোছানো ফুলসজ্জা ঘরে বসে আছে।তখন দড়জায় খট করে শব্দ করে রুদ্র রুমে আসে।তখন অধরা ঘোমটাটা টেনে নড়েচড়ে বসে।তার বুকের ভেতরটা অজানা কোন ভয়ে কেঁপে উঠে।রুদ্র রুমে এসে ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিজের রুম দেখতে থাকে।তখন তার চোখ পড়ে তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রী অধরার দিকে।অধরা বিছানা জুড়ে ঘোমটাটার আড়ালে বসে আছে।তাকে এমন অবস্থায় দেখে রুদ্র নিজেকে কন্টোল করতে পারেনা।রাগে ক্ষোভে নিজের মধ্যে শেষ হয়ে যাচ্ছিলো সে।কতো দিনের জমানো রাগ ক্ষোভ গুলো সবকিছু যেন মূহুর্তে বেড়িয়ে আসতে চাচ্ছে তার ভেতর থেকে।তখন রুদ্র বিছানার মধ্যে বসে অধরার ঘোমটা নামাতে অধরা রুদ্রের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে।তখন আচমকা রুদ্র অধরার চোয়াল শক্ত করে ধরে।অধরার মুখোমুখি বসে,রক্ত বর্ন চোখে দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিস করে বলে।
–“কি খুব কষ্ট হচ্ছে অধরা।এটা তো ট্রেলার মুভি এখনো বাকী।তুমি কি মনে করেছিলে তুমি আমার জীবন নষ্ট করে দিয়ে ভালো থাকবে অন্য কারো সাথে।এতো সহজ?আমার জীবন তুমি শেষ করে দিয়েছো এখন তোমার জীবন রুদ্র শেষ করে দিবে হিসাব বরাবর!”
–অধরা রুদ্রের কাছে থেকে ছোটার জন্য ছটফট করে বলে।
–“কি করছো রুদ্র ভাইয়া ছাড়ো আমাকে।লাগছে তো আমার।”
–“কি লাগছে লাগুক আমার কি?তুমি ব্যাথা অনুভব করলে রুদ্রের হালকা লাগে।”
–“এসব কেন করছো তুমি?কেন ফিরে এসেছো আমার জীবনে?”
–রুদ্র রেগেমেগে আগুন হয়ে অধরা কে ছেড়ে দিয়ে।তাকে ধাক্কা মেরে বিছানার মধ্যে ফেলে দিয়ে বলে।
–“এসব কেন করছি বুঝতে পারছো না?কেন ফিরে এসেছি বুঝতে পারছো না।কেন এতো ন্যাকামি করছো?আজকে তোমার জন্য আমার এমন অবস্থা।
তুমি সবকিছু শুরু করেছিলে শেষ করতে রুদ্র ফিরে এসেছে।”
–“রুদ্র ভাইয়া।”
–“অধরা চিৎকার করবে না।দেয়ালের কান আছে।তোমার সব সত্যি সকলে জেনে যাবে।তখন কিভাবে মুখ দেখাবে হুম।”
–অধরা ডুকরে কেঁদে উঠে।রুদ্র মুখে বাকা হাসির রেখা টেনে নিজের বেল্ট খুলে আচমকা অধরা কে মারতে থাকে।রুদ্রের এমন আঘাত গুলো নেবার জন্য অধরা প্রস্তুত ছিলো না।কিন্তু মনে ভয় ছিলো সে ভয় যেন সত্যি হলো।রুদ্র তাকে মেরে বিছানার মধ্যে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে বেল্টা ছুড়ে মেরে।দূরে দাঁড়িয়ে ওয়াইনের বোতলে চুমুক দিয়ে এবং সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে অধরার অবস্থা দেখে বারান্দায় চলে গিয়েছিল।
________________________
–রুদ্র যখন রুমে আসে তখন ছিলো মাঝরাত।রুদ্র রুমে আসতে সে স্তব্ধ হয়ে।
#চলবে…