তোমাতে বিভোর পর্ব-২+৩

0
1867

#তোমাতে_বিভোর
#পর্ব_২_৩
#Sapna_Farin

–“আমার সবটা জুড়ে যে তোমার বসবাস।তুমি ছাড়া অধরা যে নিঃস্ব। তুমি কেন বুঝতে পারোনা আমার মনের কথা।আকুল হৃদয়ের কথা!শয়নে স্বপ্নে শুধু যে তোমার নাম।যে তোমাকে ছাড়া নিজের জীবনে অন্য কারো ছায়া সহ্য করতে পারেনা।সেখানে তুমি নিজের ফ্রেন্ড আহানের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করলে কিভাবে?এখন তার সাথে আমার বিয়ের তোরজোর শুরু করে দিয়েছো।এসব করার আগে তুমি ভেবে দেখলে না অধরার মনের কথা।আচ্ছা রুদ্র ভাইয়া তোমার কি আমার জন্য সামান্য মায়া হলো না।যে অধরা তোমাকে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসে নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসে।সে কিভাবে অন্য মানুষের সাথে সংসার সাজাবে।আমিতো তোমাকে নিয়ে আমার মনের মাঝে জল্পনা কল্পনার সংসার সাজিয়েছি তার কি হবে।তুমি কেন এতো নির্দয়?তোমার বুকের বাম পাশে কি কখনো আমার জন্য সামান্য ব্যাথা অনুভব হয় না।কিন্তু বিশ্বাস করো রুদ্র আমার বুকের বাম পাশে যেখানে হৃদয় আছে সেখানে শুধু তোমার নাম।তাহলে তোমার বুকের বাম পাশে কি অন্য কারো নাম?”

–কথা গুলো বলতে অধরার গলার আওয়াজ ভারী হয়ে আসে।তার চোখ দিয়ে শুধু অশ্রু ঝড়ছে।সে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে,রুদ্রর ছবির ফ্রেম বুকের মাঝে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে।ছুটে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ভালো করে ক্ষুতিয়ে ক্ষুতিয়ে দেখছে আয়ানার মধ্যে।আজকে আয়নার মধ্যে যেন অন্য কোন অধরা কে দেখতে পাচ্ছে সে।সাজানো গোছানো শ্যাম কন্যা।এসব দেখে অধরার মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠে কিন্তু মুহূর্তের মাঝে রুদ্রের বলা করা কথা গুলো মনে পড়তে।নিজের গায়ের রঙ দেখে মূহুর্তের মাঝে অধরার চেহারারটা মলিন হয়ে যায়।সে রুদ্রের ছবির ফ্রেম ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে।রেগে গিয়ে অস্থির হয়ে চোখের কাজল গুলো মুছে ফেলে,ঠোঁটের লিপিস্টিক মুছে,চুল গুলো এলোমেলো করে।মুখে অদ্ভুত হাসির রেখা টেনে অধরা বিড়বিড় করে বলে।

–“যার জন্য এতো কিছু সে রুদ্র ভালো করে দেখলো না অধরা কে।তাহলে এসব সাজগোজ কিসের জন্য রাখবো আমি।সবকিছু মুছে ফেলবো!সবকিছু শেষ করে ফেলবো।”

–কথা গুলো বলতে,অধরার ভেতরটা জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছিলো।চোখের কাজল গুলো লেপ্টে আছে তার।ঠোঁটের লিপিস্টিক ছড়িয়ে আছে।চুল গুলো কেমন এলোমেলো হয়ে আছে।নিজেকে এমন অবস্থায় দেখে অধরা।নিজেকে সামলে নিয়ে অট্টহাসি দিয়ে আয়নার মধ্যে নিজের প্রতিবিম্ব কে রুদ্র ভেবে বলে।

–“রুদ্র ভাইয়া আমাকে এমন অবস্থায় দেখে তোমার নিশ্চয়ই খুব ভালো লাগছে।তুমি আমাকে দেখে মিটমিট করে হাসছো।কিন্তু তুমি বুঝতে পারছো না।আজকে আমার এমন অবস্থার জন্য তুমি দ্বায়ী।যখন তুমি আমার হতে পারবে না?তখন আমার মনে নিজের জন্য কেন এতো ভালোবাসা জন্মালে!কেন রুদ্র ভাইয়া কেন?আচ্ছা রুদ্র ভাইয়া গায়ের রঙ কি সব?আজকে সাদাকালোর মাঝে তুমি আমাকে হারিয়ে ফেলেছো।আজকে আমার গায়ের রঙ কালো বলে তুমি আমাকে এতোটা দূরে তাড়িয়ে দিচ্ছো।ভালোবাসা কি গায়ের রঙ দেখে হয় রুদ্র ভাইয়া।তুমি শুধু গায়ের রঙ দেখলা মনের রঙের খবর কি রেখেছো কখনো।তোমাতে বিভোর হলো অধরা।”

–কথা গুলো বলে অধরা রুদ্রের ছবির ফ্রেমটা বুকে জড়িয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে।তখন আচমকা পিছনে থেকে কে যেন অধরা কে জড়িয়ে ধরে বলে।

–“কি অধরা?এখন থেকে নিজের হবু বরের ভাবনার মাঝখানে ডুবে আছো।দরজায় নক করলাম তবু তোমার সারা শব্দ পেলাম।রুমে এসে দেখি আমার আদরের ননদিনী ভাবনার মাঝখানে ডুবে আছে।ভাবলাম চমকে দিলে কেমন হয়।এখন বলো এতো কি ভাবা হচ্ছে?হুম।”

–তিশার কন্ঠ শুনে অধরা ভাবনা থেকে বাস্তবে ফিরে আসে।এভাবে এখানে তিশা কে দেখে সে চমকে যায়।সে কোন রকম শাড়ির আঁচলের নিচে রুদ্রের ছবির ফ্রেমটা লুকিয়ে।তিশার দিকে ঘুরে।তোতলাতে তোতলাতে বলে।

–“ভা বি তু মি এ খা নে।”

–অধরা কে দেখে তিশা চমকে যায়।সে অধরা কে ছেড়ে দিয়ে।অধরার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে উত্তেজিত হয়ে বলে।

–“অধরা নিজের কি অবস্থা করে রেখেছো।আহানের সাথে কোন ঝামেলা হয়েছে কি?আর শাড়ির আঁচলের মধ্যে কি লুকিয়ে রেখেছো হচ্ছে কি এসব ?”

–তিশার প্রশ্ন শুনে অধরা ঘাবড়ে গিয়ে বলে।

–“ভাবি প্লিজ থামো আস্তে কথা বলো”

–তিশা অধরা কে ধাক্কা মেরে ঝাকিয়ে বলে।

–“আস্তে কেন কথা বলবো অধরা?নিজের কি অবস্থা করে রেখেছো।খেয়াল করেছো?কিছুক্ষণ আগে তো সবকিছু ঠিক ছিল সেজেগুজে শাড়ি পড়ে সারা বাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছিলে কিছুক্ষণের মধ্যে কি হলো।তোমার এমন রুপ।”

–তিশার কথা শুনে অধরা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তার চোখ দিয়ে শুধু অশ্রু ঝড়ছে।মুখ দিয়ে কোন শব্দ বেড় করতে পারছেনা।ইচ্ছে করছে সবকিছু তিশাকে খুলে বলতে।কিন্তু অজানা কোন দ্বিধা, কোন অজান বাধা যেন তাকে আটকে দিচ্ছে।

–অধরার নীরবতা দেখে তিশা আবার বলে উঠে।

–“অধরা তুমি কি সবকিছু খুলে বলবে আমাকে।না আমার জোর করে দেখতে হবে শাড়ির নিচে কি লোকাচ্ছ তুমি?”

–অধরা তিশার কথা শুনে তার দিকে তাকিয়ে অস্ফুটস্বরে বলে।

–“ভাবি।”

–“দেখো অধরা তোমার এমন অবস্থা যে তিশা দেখতে পারবেনা।আমাকে মাফ করো”

–কথাটা বলে তিশা,আচমকা অধারর শাড়ির আঁচলের নিচে লুকানো ছবির ফ্রেম টার দিকে হাত বাড়েতে।অধরা ছবির ফ্রেমটা শক্ত করে আঁকড়ে ধরে।তখন তিশা এবং অধরার দুজনের টানাটানি এবং জোরাজুরি জন্য শেষ পর্যন্ত রুদ্রের ছবির ফ্রেমটা ফ্লোরে পড়ে ভেঙে যায়।তখন অধরা ফ্লোরে ধপাস করে বসে অস্থির হয়ে রুদ্রের ছবির ফ্রেমটা ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে বলে।

–“ভাবি তুমি এটা কি করলে।আমার রুদ্র।”

–রুদ্রের ভাঙা ছবির ফ্রেমটা অধরা তাড়াহুড়ো করে স্পর্শ করতে গিয়ে তার হাত কেটে যায়।সে দিকে অধরার কোন ভ্রুক্ষেপ হচ্ছে না।সে অস্থির হয়ে রুদ্রের ছবি আঁকড়ে ধরেছে।অধরার অবস্থা দেখে তিশার পৃথিবীটা যেন উল্টো পাল্টা হয়ে গেলো।সে কোন অজানা ঝড়ের আবাস পাচ্ছে।সে ধপাস করে ফ্লোরে অধরার পাশে বসে।অধরার কে স্পর্শ করে অশ্রু ভেজা চোখে বলে।

–“অধরা এসব কি?”

–অধরা তিশাকে আঁকড়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে।অধরার এমন অবস্থা দেখে তিশার বুকের ভেতর টা কেঁপে উঠে।

–তিশা অধরার ভাবি।তার বড় ভাইয়া অভ্রের স্ত্রী।আজকে ছয় মাস হলো অভ্রের সাথে তিশার বিয়ে হয়েছে।তিন বছরের ভালোবাসার ইতি টেনে ছয় মাস আগে ফ্যামিলির মাধ্যমে অভ্র আর তিশার বিয়ে হয়।তিশা মেয়েটা খুব মিশুক সময়ের সাথে সকল কে খুব আপন করে নিয়েছে।তিশার আর অধরার রিলেশন
বোনের মতো বেস্ট ফ্রেন্ডের মতো।সবকিছু তিশার সাথে শেয়ার করে অধরা কিন্তু রুদ্রর বিষয় গুলো শেয়ার করতে পারেনি ভেবেছিল রুদ্র কে সবকিছু খুলে বলে তারপর অন্য কে বলবে।কিন্তু রুদ্র কে কিছু বলার আগে সবকিছু কেমন উল্টো পাল্টা হয়ে গেলো।

–অধরা তিশাকে ছেড়ে দিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে।

–“ভাবি আমি যে রুদ্র ভাইয়া কে খুব ভালোবাসি।তাকে ছাড়া নিজেকে অন্য কারো সাথে কল্পনা করতে পারিনা।কিন্তু কিছু দিন পড়ে আহানের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে এখন আমি কি করবো তুমি বলো?আমি যে রুদ্র কে খুব ভালোবাসি।”

–অধরার কথা শুনে তিশা ছলছল নয়নে অধরার দিকে তাকিয়ে বলে।

–“আর রুদ্র?”

–তিশার কথা শুনে অধরা স্তব্ধ হয়ে যায়।হয়তো এমন প্রশ্নের উত্তর অধরার অজানা।

_____________________

–আহান অধরার ভাবনার মাঝখানে মগ্ন হয়ে আছে।সে ফোনের স্ক্রিনে অধরার ছবি গুলো দেখছে।ব্যাকগাউন্ডে মিউজিক বাজছে।অধরার কথা গুলো ভাবতে তার মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে।তখন আহানের দরজায় দাঁড়িয়ে দূর থেকে দুটো চোখ আহান কে দেখে মুগ্ধ হচ্ছে।আহানার ভাবনার মাঝখানে ডুবে যাচ্ছে।তার ইচ্ছে করছে মুখ ফুটে বলতে।আহান আমি যে তোমাকে খুব ভালোবাসি। প্রিয় তুমি কি আমার হবে।কিন্তু কিভাবে সে এমন কথা বলবে।যার কিছু দিন পড়ে তার কাজিন অধরার সাথে বিয়ে তাকে এমন কথা বলা বড্ড বেমানান।নিজের অনুভূতি গুলো নিজের মধ্যে পুষে ফেলে।আহানারের রুমের দরজায় ঠকঠক শব্দ করে।হালকে কেশে রুশা আসে আহানের রুমের মধ্যে।রুশা কে দেখে আহান তাড়াহুড়ো করে বিছানা থেকে উঠে বসে।নিজে ভাবনা থেকে বাস্তবে এসে বলে।

–“রুশা কিছু বলবে।”

–রুশা মুখে মিথ্যা হাসির রেখা টেনে বলে।

–“হুম।আহান ভাইয়া দেখতে আসলাম আপনার বিয়ের প্রস্তুতি কেমন চলছে।তো বিয়ের সময় কি এমন শর্ট প্যান্ট আর ট্রি শার্ট পাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নাকি।”

–কথা গুলো বলে হেসে উঠে রুশা।

–রুশার কথা শুনে।আহান লাজ্জা পেয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে।

–“কি যে বলোনা রুশা।তুমি তোমার ভাইয়া রুদ্রের মতো হয়েছে সব সময় আমাকে নিয়ে মজা করো।”

–রুশা মুখ টিপে হেসে বলে।

–“কি যে বলেন না আহান ভাইয়া?আপনার এমন বোকা বোকা চেহারা দেখলে তো সব মেয়েরা আপনার প্রেমে পড়ে যাবে।”

–রুশার কথা শুনে।আহান অট্টহাসি দিয়ে বলে।

–“রুশা তুমি আবার আমার সাথে মজা নিচ্ছো।দাঁড়িয়ে থাকো তোমার মজা দেখাচ্ছি।”

–রুশা মুখ ভেংচি কেটে বলে।

–“দেখান কি মজা দেখাবেন।”

–কথাটি বলে রুশা ছুটে চলে যায়।আহান বিছানা থেকে উঠে রুশার পিছনে ছুটে যায়।

#চলবে…

(হ্যাপি রিডিং)

#তোমাতে_বিভোর
#পর্ব_৩
#Sapna_Farin

–রুশা ছুটে যাচ্ছে তার পিছনে ছুটে যাচ্ছে আহান।আহান রুশার পিছনে ছুটতে গিয়ে।চিৎকার করে বলছে।

–“রুশা এভাবে ছুটে কোন লাভ হবেনা আজকে তোমার মজা দেখেবো।আহানের সাথে মজা নিতে আসো।দাঁড়িয়ে থাকো তুমি।”

–আহানের কথা শুনে রুশা দৌড়াতে দৌড়াতে মুখে ভেংচি কেটে বলে।

–“আমাকে ধরতে পারবেন না আহান ভাইয়া।পারলে আমাকে ধরে দেখান।”

–কথা গুলো বলে,রুশা ছুটে সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পড়ে যাচ্ছিলো।তখন আহান রুশাকে আঁকড়ে ধরে।রুশার চোখের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়া বলে।

–“কি ধরে ফেললাম তো আমার থেকে কোথায় পালানো হচ্ছে হুম।”

–রুশা আহান কে আঁকড়ে ধরে।তার দিকে ফেলফেল করে তাকিয়ে থেকে।বিড়বিড় করে বলে।

–“আহান ভাইয়া আমাকে এভাবে সারাজীবন আঁকড়ে রেখো।রুশা যে এভাবে সারাজীবন তোমার মায়াতে নিজেকে জড়িয়ে রাখার স্বপ্ন দেখেছিল।কিন্তু সে স্বপ্ন গুলো মূহুর্তের মাঝে তুমি শেষ করে দিলে।আচ্ছা আমার মাঝে কি কম ছিলো?যে তুমি অধরা কে বিয়ে করার জন্য এতোটা দূরে থেকে দেশে ফিরে আসলে।”

–কথা গুলো বলতে রুশার চোখ অশ্রু ভেজা হয়ে যায়।সে আহান কে ছেড়ে দিয়ে ছুটে চলে যায়।আহান রুশার অবস্থা দেখে কিছু বুঝতে পারেনা সে বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছে।তখন আহানের ফোন বেজে উঠলো।আহান ফোন রিসিভ করে আড়ালে চলে যায়।

–তারপর মুখে বাকা হাসির রেখা টেনে বলে।

–“হ্যালো মম।গেম ইজ অন।আমরা আমাদের প্লেনে খুব তাড়াতাড়ি সফল হবো।তুমি কোন চিন্তা করোনা।আমাদের পুরো প্লেন সফল করতে অধরা আমার কাজে আসবে তারজন্য তো এতো প্লেন করে রুদ্র কে নিজের জ্বালে ফাঁসানো।অধরা কে ভালোবাসার মিথ্যা ন্যাকামি সব লোক দেখানো।অধরার সাথে আমার বিয়টা হয়ে গেলে সকলে আমার আসল রুপ ধীরে ধীরে দেখতে পারবে।”

–আহান ফোনে কথা বলতে বলতে বাহিরে চলে যায়।
___________________

–রশা ছুটে ছাদে চলে আসে।ছাদের কোনায় বসে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে।কিছু দিন পড়ে আহানের সাথে অধরার বিয়ে।আহান কিছু দিন পড়ে পুরোপুরি অন্য কারো হয়ে যাবে।কথা গুলো মনে পড়তে রুশার বুকের ভেতর টা কেঁপে উঠে।
রুদ্রের সাপেক্ষে সে আহান কে চিনে।আহানের সাথে তার খুব ভালো সম্পর্ক।সে সম্পর্ক গুলো কখন ভালোবাসার রুপ নিয়েছে রুশা নিজে জানানে।আজকে সে ভালোবাসা অন্য কারো হতে চলেছে।এসব ভাবতে তার মাঝে মধ্যে অধরা কে খুব হিংসে হয়।তবু নিজেকে সামলে নিয়ে চোখের অশ্রু মুছে মুখে হাসির রেখা টেনে বলে।

–“সামনে অধরার বিয়ে অনেক কাজ বাকী এখানে এভাবে বসে থাকলে চলে।”

–তখন রুশা নিজের অনুভূতি গুলো কে আড়াল করে চলে যায়।নিজেকে সব কাজের মধ্যে ব্যাস্ত রাখে।
_____________________

–অধরার নীরবতা দেখে তিশা আবার বলে উঠে।

–“অধরা তুমিতো রুদ্র কে ভালোবাসো।আর রুদ্র সে কি তোমাকে ভালোবাসে।সে কি সবকিছু জানে?কি হলো অধরা বলো।এভাবে নীরবে বসে থাকলে কোন সম্যসার সমাধান হবেনা।”

–অধরা স্তব্ধতা কাটিয়ে শান্ত কন্ঠে বলে।

–“রুদ্র ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে না ভাবি।আর সে তো জানানে না আমি তাকে ভালোবাসি।আমার গায়ের কালো রঙ আমাদের ভালোবাসার মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।বলো এখানে আমার কি করার আছে।এখন পর্যন্ত আমার গায়ের রঙের জন্য রুদ্র ভাইয়া সহ্য করতে পারেনা আমাকে।আর ভালোবাসা তো দূরের কথা।”

–কথা গুলো বলে অধরা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে।

–অধরার কথা শুনে তিশা অধরার গালে হাত রেখে করুন কন্ঠে বলে।

–“অধরা বোঝার চেষ্টা করো।আমার লক্ষী বোন সোনা বোন।ভালোবাসা কখনো গায়ের রঙ দেখে হয় না!ভালোবাসা তো মনের ব্যাপার।তুমি ভুল মানুষ কে ভালোবেসে নিজেকে কেন এতো কষ্ট দিচ্ছো।দেখো সামনে তোমার আহানের সাথে বিয়ে।আহান তোমাকে খুব ভালো রাখবে।খুব ভালোবাসবে সে তোমাকে।এসব ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এসে
তুমি আহান কে বিয়ে করো।”

–অধরা তিশার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলে।

–“ভাবি।তুমি কি পারতে ভাইয়া কে ভালোবেসে অন্য কারো সাথে সংসার সাজাতে।তুমি তো বললে ভালোবাসা মনের ব্যাপার তাহলে কিভাবে রুদ্র কে ভুলে আহানের সাথে সংসার করবো।”

–অধরার কথা শুনে সে কিছু বলতে পারলো না।সে সেখান থেকে উঠে ছুটে নিজের রুমে চলে যায়।আজকে আকাশ সমান ভাবনার মাঝখানে ডুবে গেছে সে।বিয়ে বাড়ি কতো আনন্দ কতো ছুটো ছুটি কতো কাজ বাকী সবকিছু যেন মূহুর্তের মাঝে উল্টো পাল্টা হয়ে গেলো।অধরার কথা ভেবে তিশা বিছানার মাঝখানে ধপাস করে শুয়ে পড়ে।
____________________

–অধরার রুদ্রের ছবির ফ্রেম টা কোন রকম জোরা লাগিয়ে।ছবিটি লুকিয়ে রেখে।শাওয়ার নিতে চলে যায়।শাওয়ার শেষ করে রুমে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে তৈরি করেছিল।তখন দরজায় করা নেড়ে আহান রুমে আসে।

–আহান কে দেখে অধরা ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে।

–“কিছু বলবেন আহান ভাইয়া”

–“ওহ্ অধরা মনে হয় ভুল সময় চলে আসলাম।তুমি থাকো পড়ে কথা হবে।”

–কথা গুলো বলে আহান চলে যাচ্ছিলো।তখন অধরা তাকে পিছু ডেকে বলে।

–“আহান ভাইয়া বলেন।কি বলতে এসেছেন।”

–আহান করুন কন্ঠে বলে।

–“কালকে আমরা শপিংয়ে যাচ্ছি।তোমার কোন সম্যসা না থাকলে।কিছুদিন পড়ে আমাদের বিয়ে। আমার কে আছে বলো।সবকিছু তো আমাকে করতে হবে।তারজন্য সবকিছু গুছিয়ে রাখতে চাচ্ছিলাম।আজকে মম ডেড থাকলে হয়তো আমাকে এতো কিছু করতে হতো না।সবকিছু তারা করতো আজকে অনাথ বলে সবকিছু আমাকে দেখতে হচ্ছে।”

–কথা গুলো বলে আহান চলে যায়।অধরার রুম থেকে বেড়িয়ে আহান মুখে বাকা হাসির রেখা টেনে বলে।

–“অধরা তুমি নিজে ধীরে ধীরে আমার মায়া জালে জড়িয়ে যাবে।তুমি বুঝতে পারবে না কখনো।এমন বোকা চেহারার পিছনে কোন মুখ লুকিয়ে আছে।অধরা অল দ্যা বেস্ট।আর কিছুদিন তারপর তুমি হবে আমার ত্রুপের তাশ।”

–কথা গুলো বলে আহান।নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

–আহানের কথা শুনে অধরার বড্ড মায়া হয়।অধরা বলে।

–“আসলে সত্যি কি আহান এমন!না আমাদের আড়ালে আহানের অন্য কোন চেহারা লুকিয়ে আছে।সব সময় এমন বোকা সেজে কেন থাকে সে।সব সময় অতিরিক্ত ভালো সাজার চেষ্টা করো।”

–কথা গুলো বলতে অধরা নিজে নিজেকে প্রশ্ন করে।

–“অধরা তুমি গোয়েন্দা হয়ে যাচ্ছো।আহান কে দিয়ে তোমার কি?তুমি শুধু রুদ্র কে নিয়ে ভাবো।আর আহানের সাথে নিজের বিয়েটা কিভাবে ব্যাস্তে দিবে সে চিন্তা করো।হুম।”

–কথাটা বলতে অধরার মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠে।

_____________________

–অভ্র অফিস থেকে ফিরে এসে।তিশা কে শুয়ে থাকতে দেখে বলে।

–“তিশা অসময় শুয়ে আছো কেন?কি হয়েছে কোন সম্যসা।”

–তিশা অভ্র কে দেখে উঠে বসে বলে।

–“কি হবে তুমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।”

–অভ্র তিশার কাছে গিয়ে তার সামনে হাটু গেরে বসে বলে।

–“কি হয়েছে আমার সোনা বউয়ের।মন খারাপ কেন?।

–তিশা অভ্র কে টেনে তুলে বলে।

–“তুমি আগে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।তোমার শরীর থেকে ঘামের গন্ধ আসছে।”

–তিশার কথা শুনে অভ্র ভেবাচেকা খেয়ে বলে।

–“কি ঘামের গন্ধ।কোথায়?আজকে তোমার কি হয়েছে বলতো তিশা।”

–“এতো প্রশ্ন করো কেন ফ্রেশ হয়ে আসো।”

–“আচ্ছা যাচ্ছি বাবা।তুমিতো নাছোড়বান্দা।”

–অভ্র ফ্রেশ হতে চলে যায়।তিশার চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।সে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে।

–“অভ্র কে সবকিছু খুলে বলতে হবে।”

–অভ্র ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে বলে।

–“আজকে তোমার আদরের ননদিনি কে দেখতে পাচ্ছিনা কেন?অফিস থেকে ফিরে আসলে।সে তো সবার আগে ছুটে এসে বলে ভাইয়া আমার জন্য কি নিয়ে এসেছ।অধরা কোথায়?তাকে যে দেখতে পাচ্ছিনা।”

–অধরার নামটা শুনে তিশার বুকের ভেতর টা কেমন কেঁপে উঠে।সে অভ্র কে কিছু বলতে গেলে।তখন কোথায় থেকে অধরা ছুটে এসে বলে।

–“ভাইয়া আমার জন্য কি নিয়ে এসেছ।”

–বোন কে দেখে অভ্র হু হু করে হেসে উঠে বলে।

–“দেখেছো তিশা নাম নেয়া মাত্র সে এসে হাজির।”

–অভ্রের কথা শুনে অধরা গোমড়া মুখ করে বলে।

–“ভাইয়া তুমি এখানে দাঁড়িয়ে ভাবির সাথে কথা না বলে।আমার জন্য কি নিয়ে এসেছ তাড়াতাড়ি দিবে।”

–“তোমার জন্য আইসক্রিম নিয়ে এসেছি।দেখো ফ্রিজ রাখা আছে।”

–“ভাইয়া তুমি গিয়ে নিয়ে আসো তাড়াতাড়ি।”

–“আচ্ছা যাচ্ছি অফিসে অনেক কাজ আবার বাসায় ফিরে তোমাদের হুকুম শুনতে হয়।”

–কথা গুলো অভ্র তিশার দিকে তাকিয়ে বলে।মিটমিট করে হেসে চলে যায়।

–তিশা অবাক হয়ে অধরার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে।

–“অধরা তুমি ঠিক আছো।এতোটা স্বাভাবিক আছো কিভাবে।সবকিছু সময় থাকতে অভ্র কে জানাতে হবে।”

–অধরা তিশার হাত দুটি ধরে বলে।

–“ভাবি প্লিজ তুমি ভাইয়া কে কিছু বলোনা।সবকিছু সকলে জানলে অনেক ঝামেলা হয়ে যাবে।”

–“ঝামেলা হলে হোক।এখানে তোমার জীবনের প্রশ্ন অধরা।”

–“ভাবি প্লিজ কোন ঝামেলা করোনা।”

–তখন অভ্র পিছনে থেকে আচমকা বলে উঠে।

–“কি ঝামেলা হবে শুনি।আমার কাছে কি লুকানো হচ্ছে?হু।”

–অধরা ভেবাচেকা খেয়ে হেসে দিয়ে বলে।

–“আসলে ভাইয়া আমার আইসক্রিম নিলে ঝামেলা হয়ে যাবে।”

–অভ্র অধরার কথা শুনে অট্টহাসি দিয়ে বলে।

–“ঝামেলা করতে হবেনা।সবার জন্য আলাদা করে আইসক্রিম নিয়ে এসেছি।এটা তোমার আমার মিষ্টি বোনের।”

–অধরা অভ্রের থেকে আইসক্রিমের বাক্স টা নিয়ে ছুটে চলে।অভ্র অধরার অবস্থা দেখে হেসে উঠে।তিশা তাদের দেখে বিড়বিড় করে বলে।

–“অভ্রের মুখে এমন হাসি যেন সব সময় থাকে।তারজন্য অধরার কথা তো আমাকে শুনতে হবে।সামান্য কথা যে বাড়ির মধ্যে ঝর নিয়ে আসবে।”

________________________

–রুদ্রের ফ্রেন্ডরা,নাইট ক্লাবে রুদ্র কে নিয়ে পার্টি করছে।তখন রুদ্রের ফ্রেন্ড ইশান রুদ্র কে বলে,দোস্ত মেয়েটা কে দেখো।

–“পুরো পার্টি যেন তাকে নিয়ে ব্যাস্ত।”

–রুদ্র মেয়েটির দিকে তাকাতে তার চোখ আটকে গেলো।

#চলবে…

(ভুল ক্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।হ্যাপি রিডিং)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে