#তোমাতে_বিভোর
#পর্ব_৭
#Sapna_Farin
–অধরা কল্পনা থেকে বাস্তবে ফিরে আসে।রুদ্রের ব্যবহার দেখে সে এতোটা শকড হয়ে যায়।যে তার আঁখিদুটি গোলগোল হয়ে যায়।রুদ্রের কান্ড দেখে সে আচমকা তার চোখ জোরা বন্ধ করে বিছানার চাঁদর খামছে ধরে।রুদ্রের সাথে তাল মিলিয়ে যেতে থাকে।কিছুক্ষণ পড়ে রুদ্র তার ঠোঁট জোড়া ছেড়ে দিয়ে।তাকে আঁকড়ে ধরে তার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিতে।অধরা বাস্তবে ফিরে আসে।সে রুদ্র কে নিজের এতো কাছে দেখে নিজেকে সামলে নিয়ে।সে ভাবতে থাকে।
–“এটা কি করতে যাচ্ছি আমি?এটা ঠিক না।কিছুদিন পড়ে রুদ্র ভাইয়ার সাথে অন্য কারো বিয়ে এবং আমার সাথে অন্য কারো।আমি রুদ্র ভাইয়ার সাথে এখন এভাবে মেলামেশা করে নিজের ভালোবাসার অপমান করতে পারবো না।রুদ্র ভাইয়া না হয় ড্রিংক করে এসেছি।তারমধ্যে হয়তো এখন কোন সেন্স নেই।কিন্তু আমি তো জ্ঞানে আছি।না এটা ঠিক না!কোন মতে।রুদ্র ভাইয়া কে আটকাতে হবে।”
–কথা গুলো ভেবে অধরা।রুদ্র কে নিজের কাছে থেকে ধাক্কা মেরে সড়িয়ে দিতে গেলে।রুদ্র মুখ তুলে অধরার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে।তার এমন তাকিয়ে থাকা দেখে।অধরা খুব ভালো করে বুঝতে পারছে রুদ্র কি চাচ্ছে।কিন্তু সেটা এখন কোন মতে সম্ভব না।সে এখন নেশায় মাতাল হয়ে আছে।তার এমন অবস্থা দেখে অধরা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে।
–“রুদ্র ভাইয়া এটা ঠিক না।তুমি কি করতে চাচ্ছো?”
–অধরার কথা শুনে রুদ্র মুখে বাকা হাসির রেখা টেনে।তার কপালে গালে চুম্মো একে দিয়ে।অধারার গায়ের ওড়না টান দিতে।অধরা রুদ্রের হাত ধরে।নিজের মাথা দু’দিকে নাড়িয়ে না সম্মতি জানালো।কিন্তু রুদ্র যেন নিজের নেশায় মাতাল হয়ে গেছে।সে অধরার কোন কথায় পাত্তা না দিয়ে।হেঁচকা টানে অধরার ওড়নাটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে।অধরার হাত দুটো বিছানার সাথে চেপে ধরে।অধরার উপরে ঝাপিয়ে পড়ে।অধরা রুদ্রের কাছে থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করছে।কিন্তু তার শক্তির সাথে পেরে উঠছে না।রুদ্রের প্রতিটি স্পর্শ যেন অধরার কাছে বিষের মতো লাগছে।রুদ্র মাঝে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে হিংস্র তার ছাপ।সে তার নিজের চাহিদা মেটাতে ব্যাস্ত।অন্যদিকে অধরা সে নীরবে চোখের অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।
__________________
–কিছুক্ষন পড়ে।অধরার ফুপিয়ে কেঁদে উঠার শব্দ শুনে রুদ্রের ঘোর কাটে।সে তাড়াহুড়ো করে বিছানা থেকে উঠে বসতে।অধরা কোন রকম বিছানার চাঁদর টা শরীরে জড়িয়ে নিয়ে বিছানার কোনায় বসে নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে।রুদ্র বিছানা বসে স্তব্ধ হয়ে ভাবতে থাকে।
–“কি করতে যাচ্ছিলো সে!তার মনুষ্যত্ব এতোটা লোভ পেয়ে গেছে।যে অধরার সাথে এসব।ছিঃ রুদ্র ধিক্কার জানা নিজেকে।এসব ছায় পাস খেয়ে যখন নিজের মধ্যে থাকতে পারিস না।তবে এসব খেতে হবে কেন?এবার কিভাবে মুখ দেখাবি অধরা কে।”
–রুদ্র রেগেমেগে আগুন হয়ে মাথা নত করে নিজের চুল খামছে ধরে।
অধরা ভয়ে রীতিমতো ঘামছে।তার পুরো শরীর বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে।তার ঠোঁট দুটি এখনো ভয়ে কেপে যাচ্ছে।তখন সে বিড়বিড় করে বলে।
–“সামান্যর জন্য শেষ রক্ষা হলো।নয়তো নিজের ভালোবাসার মানুষের কাছে নিজের সতীত্ব বিলিয়ে দিতে হতো।”
–কথা গুলো বলতে অধরা হাটুতে মাথা রেখে শব্দ করে কেঁদে উঠে।
–রুদ্র অধরার কান্নার শব্দ শুনে তার দিকে তাকাতে। তার বুকের ভিতরটা কেমন কেঁপে উঠে।সে অধরার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে।তার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তখন অধরা চোখ তুলে রুদ্র কে দেখে।তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে।এক ঝটকায় রুদ্রের হাত নিজের মাথায় থেকে সড়িয়ে দিয়ে।দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
–“কাটা গায়ে এখন মলম দিতে লাগাতে এসেছো রুদ্র ভাইয়া।তোমার দয়া করুণা আমার লাগবে না।তোমার ঐ হাতে আমাকে স্পর্শ করবে না।দূরে থাকো আমার কাছে থেকে।তুমিতো তোমার আসল রুপ দেখিয়ে দিলে।কি হলো এভাবে তাকিয়ে কি দেখো।এক্ষুনি আমার রুম থেকে বেড়িয়ে যাও তুমি।জাস্ট গেট আউট।”
–কথা গুলো বলে অধরা ডুকরে কেঁদে উঠে।
–অধরার কথা গুলো শুনে।রুদ্র করুণ কন্ঠে বলে।
–“অধরা।”
–অধরা রক্ত বর্ন চোখে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে।
–“তোমার ঐ মুখে আমার নাম নিবেনা রুদ্র ভাইয়া।তোমার লজ্জা করছে না,এখনো তুমি এখানে বসে আছো।”
–অধরার কথা শুনে।রুদ্র দ্রুত গতিতে সেখান থেকে বেড়িয়ে আসে।অধরা ডুকরে কেঁদে উঠে বিছানার মাঝে শুয়ে বালিশটাকে আঁকড়ে ধরে বলে।
–“রুদ্র ভাইয়া আমার জীবনে।আমার শরীরে প্রথম কোন পুরুষের স্পর্শ।প্রথম ভালোবাসার মানুষের স্পর্শ।কিন্তু সে স্পর্শ গুলো কোথায় ভালোবাসার হতে পারলো।কিন্তু তুমিতো নিজের লালসা পূরণ করতে গিয়ে সে স্পর্শ গুলো তে হিংস্রতার দাগ বসিয়ে দিলে।”
–কথা গেল বলে অধরা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ঘুমের দেশে হারিয়ে যায়।
____________________
–রুদ্র নিজের রুমে এসে সাজারো দরজা লাগিয়ে।ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখা জিনিস গুলো ফেলে দিয়ে।ফ্লোরে হাটু গেরে বসে।চিৎকার করে বলে।
–“কেন রুদ্র কেন?”
–কিছুক্ষণ পড়ে সে নিজেকে সামলে নিয়ে।বিছানার মাঝে ধপাস করে উবু হয়ে শুয়ে ভাবতে থাকে।
–“রুদ্র তুমি এটা কি করলে?অধরার কাছে নিজের চরিত্রের দাগ লাগিয়ে দিলে।তুমি কিভাবে অধরার মুখোমুখি হবে।তোমার নিজের মধ্যে অপরাধ বোধ কাজ করছে না?ছিঃ রুদ্র ছিঃ।কিভাবে করলে তুমি এসব।”
–কথা গুলো ভাবতে রুদ্র রাগে ক্ষোভে নিজের চুলগুলো খামছে ধরে।বিড়বিড় করে বলে।
–“আমার কি হয়েছিল যে মূহুর্তের মাঝে অধরার মাঝে বিভোর হয়ে গেলাম।কিন্তু অধরা সে তো চিৎকার চেচামেচি করে সকলে কে জানাতে পারতো।সে কেন নীরব ছিলো?হয়তো আমার চরিত্রে দাগ লেগে যাবে বলে।কিন্তু মেয়েটা আমার কথা এতো ভাবে কেন?তাহলে কি ইশান নিশানের কথা সত্যি অধরা আমাকে ভালোবাসো।তারজন আমার অত্যাচার গুলো নীরবে মেনে নিচ্ছোলো।আমিতো অধরা কে ভালোবাসি না।অধরা কে নিয়ে এমন চিন্তা আমার মাথায় আসেনি আগে।আচমকা আজকে আমার কি হয়েছিল কে জানে।হ্যাঁ মূহুর্তের মাঝে অধরা কে আমার ভালো লাগে।তার সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করে।তার মাঝে বিভোর হতে ইচ্ছে করে।কিন্তু এসবের মাঝখানে ভালোবাসা কি আছে।অধরা আমাকে নিয়ে যেভাবে ভাবে সেভাবে অধরা কে নিয়ে আমার কখনো ভাবা হয়নি।তাহলে কি আমার মনের মধ্যে অধরার জন্য ভালোবাসা আছে?”
–কথা গুলো বলে রুদ্র বলে।
–“আরে এসব কি ভাবছিলাম।কিছুদিন পড়ে অধরার আহানের সাথে বিয়ে।ওহ্ বিয়ে!ভুলে তো গিয়েছিলাম।যেভাবে হোক ঐ ধোকা বাজারে সাথে কিছুতে অধরার বিয়ে হতে দেয়া যাবেনা।শুধু মুখ্য সময়ের অপেক্ষা আহানের আসল চেহারা সকলের সামনে তুলে ধরতে হবে।তারজন যতো দ্রুত সম্ভব আভার সাথে দেখা করতে হবে।তার কাছে থেকে যেভাবে হোক সকল বিষয় গুলো জানতে হবে।তারপর রুদ্র তোমার সকল প্লেন কিভাবে ব্যস্তে দেয়।দেখবে আহান।আর ভুল করে অধরা কে বিয়ে করার চিন্তা মাথায় নিয়ে আসবে না আহান।এখানে অধরার জীবনের প্রশ্ন।তোমার মতো ধোকা বাজারে সাথে কখনো অধরার বিয়ে হতে দিবেনা রুদ্র।তারজন্য আমাকে যা কিছু করতে হয় সবকিছু করার জন্য প্রস্তুত রুদ্র।”
–কথা গুলো বলে রুদ্র আড়ামোড়া হয়ে ঘুমের দেশে হারিয়ে যায়।
__________________
–সকাল বেলা।
–অধরা শাওয়ার নিয়ে।ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে তার ভেজা চুল গুলো হেয়ার ড্রাইভ দিয়ে শুকাচ্ছে।তখন তার দরাজায় করা নেড়ে তিশা এসে ব্যস্ততাময় কন্ঠে বলে।
–“কি ব্যাপার অধরা।আজকে নাস্তা করতে আসছো না কেন?এতো দেরি হচ্ছে কেন?কি করো তুমি রুমের মধ্যে।”
–অধরা নিজেকে গোছাতে গোছাতে বললো।
–“হুম হয়ে গেছে চলো।”
–তিশা অধরার দিকে ভালো করে তাকিয়ে দুষ্ট মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে।
–“অধরা আজকে সকালে শাওয়ার নিয়ে।এতো তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে কোথায় যাওয়া হচ্ছে।হুম।”
–অধরা কোন ভ্রুক্ষেপ ছাড়া বলে উঠলো।
–“আহানের সাথে শপিং করতে যাবো।সামনে বিয়ে অনেক কাজ বাকী।সবকিছু আহান কে সামাল দিতে গিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে।”
–অধরার কথা শুনে তিশার উজ্জ্বল মুখখান মূহুর্তের মাঝে মলিন হয়ে গেলো।অধরা তার চুল গুল গারের বাম পাশে রেখে বললো।
–“চলো ভাবি।”
–তিশা অধরার সাথে যাচ্ছিলো তখন কিছু একটা দেখে তিশা অধরার হাতটা ধরে তাকে থামিয়ে দিতে।অধরা হেঁচকা টানে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে
বলে।
–“ভাবি লাগছে তো।চলো খুব ক্ষিধে পেয়েছে নাস্তা করবো।”
–অধরা চলে যাচ্ছিলো।তখন তিশা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আচমকা শীতল কন্ঠে অধরা কে বলে উঠে।
–“অধরা কোথায় যাচ্ছো।আগে নিজের লাভ বাইট টা ডাকো।না সকল কে দেখানোর ইচ্ছে আছে।”
–তিশার কথা শুনে অধরা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে যায়।সে তার শরীরে ভালো করে ওড়না জড়িয়ে।তিশার কাছে এসে বলে।
–“ভাবি সকাল সকালে মজা করোনা।চলো ক্ষিধে পেয়েছে।”
–তিশা অধরার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে।তার রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে।অধরা টেনে নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড় করিয়ে।দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
–“এসব কি অধরা।তোমার আর রুদ্রের কথা ভেবে আমার রাতের ঘুম হারাম হচ্ছে।আর তুমি আহান কে নিয়ে বিয়ের আগে রাত কাটাচ্ছো।ছিঃ।”
–কথা গুলো বলে তিশা মুখ গুড়িয়ে নেয়।তখন অধরা করুণ কন্ঠে বলে।
–“ভাবি।”
–“নিজে দেখো অধরা তোমার ঘাড়ের কাছে কি স্পষ্ট ফুটে উঠেছে তোমার লাভ বাইটের দাগ।কিছু দাগ না ইচ্ছে করলে আড়াল করা যায়না।এসব আমাকে বুঝাতে এসোনা।”
–কথা গুলো বলে তিশা রাগে কটমট করে চলে যাচ্ছিলো।তখন অধরা তার রাস্তা আটকে দিয়ে বলে।
–“ভাবি তুমি সত্যি বলেছ কিছু দাগ আড়াল করা যায়না।তারজন্য সব দাগ হয়তো আড়াল করতে পারেনি।”
–অধরার কথা শুনে তিশা বলে।
–“তোমার লজ্জা করছে না বিয়ের আগে আহানের সাথে রাত কাটিয়ে এসব বলছো।”
–“ভাবি তুমি সত্যিটা না জেনে আমাকে ভুল বুঝতে পারছো।কালকে রাতে আহান না!রুদ্র এসেছিল আমার রুমে।রুদ্রের ভালোবাসার দাগ গুলো এতো মজবুত ছিল যে।ইচ্ছে করে শরীর থেকে মুছে ফেলতে পারলাম না।”
#চলবে….