#তোমাতে_বিভোর
#পর্ব_৬
#Sapna_Farin
–নিশান কথা গুলো বলে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে।রুদ্রের দিকে তাকালো।রুদ্র গাড়িতে সাজারো গুসি মেরে।নিশান এবং ইশানের থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে।ধপাস করে মাটিতে হাটু গেরে বসে ডুকরে কেঁদে উঠে।রুদ্রের এমন অবস্থা দেখে ইশান নিশান ছুটে রুদ্রের কাছে গেলো।তখন ইশান রুদ্র কে শান্তনা দেবার জন্য রুদ্রের কাধের উপরে হাত রাখতে।সে ধাক্কা মেরে ইশানের হাত সড়িয়ে দিয়ে।তাদের দিকে রক্ত বর্ন চোখে তাকিয়ে।হাত মুষ্টি বদ্ধ করে চিৎকার করে বলে।
–“হ্যাঁ হ্যাঁ সবকিছুর জন্য অধরা দ্বায়ী।আজকে জানুক পুরো পৃথিবী এবং পুরো পৃথিবীর মানুষ।অধরা আমার জীবনটা কেমন এলোমেলো করে দিয়েছে।কেন রুদ্র এতো ঘেন্না করে অধরা কে?কেন তাকে সহ্য করতে পারেনা।”
–কথা গুলো বলে রুদ্র নিশানের দিকে তাকিয়ে বলে।
–“তুমি কতোটা জানো নিশান অধরার ব্যাপারে?সবকিছু না জেনে আমাকে ভিলেন বানিয়ে দিচ্ছো।মানুষ কে না জেনে তার বিষয়ে মন্তব্য করা।অনেক সহজ!আগে পুরো বিষয় জানবে তারপর বিবেচনা করবে।”
–কথা গুলো বলে রুদ্র দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে।রুদ্রের অবস্থা দেখে ইশান করুন কন্ঠে বলে।
–“রুদ্র।”
–রুদ্র ইশান কে থামিয়ে দিয়ে বলে।
–“তাহলে শুনো।
অধরা আমার কাজিন আমার সামনে তার বেড়ে উঠা।তাকে আমার থেকে কে ভালো করে কে চিনতে পারবে।তার যখন বাড়ন্ত বয়স।সে তখন সারাক্ষণ আমার পিছনে আঠার মতো লেগে থাকতো।এতো বারন করা স্বত্তেও সে আমাকে লুকিয়ে ফ্লো করতো।তারজন্য কোন মেয়ের সাথে আমার কথা বলা পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।আমার পাশে অন্য কোন মেয়েকে সহ্য করতে পারতো না অধরা।সবকিছু আব্বুর কাছে এসে বলে।আমার নামে নালিশ করতো।কোথায় যাচ্ছি কি করছি কোন মেয়ের সাথে কথা বলি।এসব নিয়ে আব্বু আমাকে অনেক কথা শোনায়।
তারজন্য রেগে গিয়ে অধরা কে কয়েক টা চড় মেরে ছিলাম বকাবকি করেছিলাম।এসব নিয়ে অভ্রের সাথে খুব ঝগড়া হয়।অনেক কথা কাটাকাটি হয়।অভ্র ছিলো অধরার বড় ভাই।তারপর অভ্র অধরা সাথে আমার সম্পর্ক খুব খারাপ হতে থাকে।আমরা কাছে থেকে বহুদূরে ছিলাম।কিছুদিন পড়ে বাহিরে চলে যায় স্টাডি শেষ করতে।সময়ের সাথে দূরত্ব গুলো বাড়ে।এতো বছর পড়ে দেশে ফিরে এসেছি।এখনো আমার প্রাণের বন্ধু আমার কাজিন অভ্র। এতো বছর হলো এখনো আমার সাথে কথা বলেনা।আমাদের সম্পর্কের মাঝখানে এতো টানাপোড়া অধরার জন্য সৃষ্টি হয়েছে।”
–রুদ্রের কথা শুনে ইশান মুখ টিপে হাসছে।নিশান তো শব্দ করে হেসে উঠে।রুদ্র তাদের অবস্থা দেখে তাদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতে।ইশান নিশান নিজেদের কে সামলে রাখতে পারলো না।তারা শব্দ করে হেসে দিলো।তাদের এমন হাসি দেখে রুদ্রের ভিতরটা জ্বলে যায় রুদ্র বিড়বিড় করে বলে।
–“এসব বন্ধু না কি?সব আহানের মতো।বিশ্বাস ঘাতক এক একটা।”
–রুদ্র রাগে কটমট করতে করতে উঠে আসে।রুদ্র গাড়িতে উঠে বসে গাড়ি স্টার দিতে।ইশান নিশান ছুটে গিয়ে গাড়িতে বসে।তারা জানে রুদ্রের যে মেজাজ এখন তাদের এখানে ফেলে রেখে যেতে রুদ্র দ্বিতীয় বার ভাববে না।রুদ্র গম্ভীর মুখে ড্রাইভিং করছে।ইশান নিশান মুখ টিপে হেসে যাচ্ছে।রুদ্র মাঝেমধ্যে লুকিং গ্লাসে তাদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে।রুদ্রের এমন অবস্থা দেখে ইশান বোকার মতো বলে ফেললো।
–“রুদ্র কতো বছর আগে কি হয়েছিল তুমি এখনো সেটা নিয়ে পড়ে আছো।এসব রাগ অভিমান মূহুর্তের মাঝে ঝেড়ে ফেলে দিলে দেখবে মূহুর্তের মাঝে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।আর অধরা তোমাকে ভালোবাসে বোকা ছেলে।বিষয়টা বুঝতে তোমার এতো বছর লেগে গেলো।যাকে তুমি এতো ঘেন্না করো তার মনে তোমার জন্য জমানো ভালোবাসা আছে।চোখ মেলে দেখো সব বুঝতে পারবে।”
–ইশানের কথা শুনে রুদ্র অনেক জোরে গাড়ি স্টার দিলো।ইশান তো ভয়ে শেষ।সে বলে উঠে।
–“রুদ্র আস্তে সামনে দেখে!লেগে যাবেতো?আমাদের উপরে পাঠানোর চিন্তা ভাবনা করে এসেছ।”
–কে শুনে কার কথা রুদ্র নিজের মতো গাড়ি ড্রাইভিং করে যাচ্ছে।
______________________
–“আভা নামো এসে পড়েছি।”
–আহানের কথা শুনে আভা জেগে যায়।আসার সময় কখন যে চোখ দুটো লেগে গিয়েছিল সে খেয়াল করেনি।তখন সে মিটমিট চোখে আহানের দিকে তাকিয়ে।আহানের হাত শক্ত করে আঁকড়ে ধরে।মুখে বাকা হাসির রেখা টেনে ঘুম জড়ানো কন্ঠে
বলে।
–“তোমাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না আহান।তুমিতো আমাকে সময় দিচ্ছোনা।আর কিছুক্ষণ থাকো তোমাকে ছাড়া থাকতে আমার ভালো লাগেনা।এতো দিন না হয় অনেক দূরে ছিলে।কিন্তু এখন কাছে থেকে কেন এতো দূরে?শোন তাড়াতাড়ি আমাকে তোমার কাছে সারাজীবনের জন্য নেয়ার ব্যবস্থা করো।ড্যাডের কাছে আমাদের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসো।”
–আহান আভার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে।
–“দেখো আভা অনেক রাত হয়ে গেছে।আমাকে ফিরতে হবে।তুমি তাড়াতাড়ি বাসায় যাবে।”
–আহানের কথা শুনে আভা মুখ গোমড়া করে বলে।
–“আচ্ছা যাচ্ছি।কালকে তুমি আমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসছো।উম্মা।কালকে দেখা হচ্ছে।”
–আভার কথা শুনে আহান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে।আভা বাসার ভিতরে যেতে।আহান গাড়ি স্টার দেয় নিজের গন্তব্যে যেতে।
_____________________
–রুদ্র গাড়ি থামাতে ইশান তাড়াতাড়ি করে গাড়িতে থেকে নেমে যায়।সে নেমে গিয়ে বলে।
–“আজকের জন্য বেঁচে গেলাম।”
–নিশান গাড়িতে থেকে নামতে নামতে ইশানের কথা শুনে হেসে দিয়ে বলে।
–“রুদ্র সব ভুলে আগামী নিয়ে চিন্তা করো।আহানের ব্যাপার গুলো ভেবে দেখো।অধরা আর অভ্রের সাথে সবকিছু ঠিক করে নিতে পারো।এখন তোমার ইচ্ছে।আর অধরা সত্যি তোমাকে ভালোবাসে।”
–রুদ্র কিছু বলেনা।সে উত্তেজিত হয়ে ওয়াইনের বোতলে চুমুক দিয়ে।গাড়ি স্টার দেয়।
__________________
–মাঝ রাতে রুদ্র বাসায় ফিরে।সে হেলে দুলে ওয়াইনের বোতলে চুমুক দিয়ে সিড়ি দিয়ে উঠছে।আর বিড়বিড় করে অধরার নাম নিচ্ছে।
–“অধরা আজকে তোর সাথে অনেক বড় বোঝাপড়া আছে।আর ভালোবাসা কিসের ভালোবাসা?”
–কথা গুলো বলে রুদ্র।করিডোর দিয়ে যাচ্ছিলো। তখন কি মনে করে অধরার রুমের দরজায় গিয়ে ঠকঠক করতে থাকে।
–অধরা কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গিয়েছিল।মাঝ রাতে দরজায় কারো করা নাড়ার শব্দ শুনে অধরা জেগে যায়।সে হকচকিয়ে বিছানা থেকে উঠে বসে ঘুম জড়ানো কন্ঠ বলে।
–“কে।”
–রুদ্র বাহির থেকে দরজায় কড়া নেরে বলে।
–“অধরা দরজা খোল তোর সাথে কথা আছে।”
–এতো রাতে রুদ্রের কন্ঠ শুনে অধরা ভেবাচেকা খেয়ে যায়।সে স্তব্ধ হয়ে ভাবতে থাকে।
–“এতো রাতে রুদ্র ভাইয়া এখানে।কেন কিসের জন্য।আমাকে এতো কথা শুনিয়ে তার ইচ্ছে মেটেনি। এখন আবার কি বলতে এসেছে?।”
–রুদ্র আবার চিৎকার করে বলে।
–“অধরা।”
–রুদ্রের কথা শুনে অধরা কোন রকম ওড়না টা গায়ে জড়িয়ে।ছুটে গিয়ে দরজা খুলে। উঁকি দিয়ে বলে।
–“কি হয়েছে রুদ্র ভাইয়া?এতো রাতে এভাবে চেচামেচি করে যাচ্ছো কেন?কি সম্যসা।”
–রুদ্র অধরার কথায় পাত্তা না দিয়ে।দরজা ঠেলে ভিতরে আসে।
–অধরা রুদ্রের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে।
–“রুদ্র ভাইয়া তুমি এভাবে ভিতরে কেন এলে?তোমার সম্যসা কি?কি হলো এভাবে তাকিয়ে কি দেখো।”
–রুদ্র ওয়াইনের বোতলে চুমুক দিয়ে।বোতলটা ফ্লোরে ফেলে দিয়ে মুখে বাকা হাসির রেখা টেনে বলে।
–“অধরা তোর সাথে যে অনেক বোঝা পড়া বাকী আছে।সবকিছুর হিসাব যে তোকে দিতে হবে।”
–রুদ্রের কথা শুনে অধরা তোতলাতে তোতলাতে বলে।
–“কি… কিসের হি…হিসেব?”
–রুদ্র অধরার কথা কানে না নিয়ে।মুখে বাকা হাসির রেখা টেনে অধরার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
–রুদ্র কে দেখে অধরা বুঝতে পারে সে ড্রিংক করে এসেছে।তার এমন অবস্থা দেখে অধরা পিছিয়ে যায়।রুদ্র ধীরে গতিতে অধরার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।অধরা ভয়ে ভয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে।অধরা পিছিয়ে গিয়ে ধপাস করে বিছানার মাঝে পড়ে যায়।তখন রুদ্র টাল সামলাতে না পেড়ে অধরার উপরে পড়ে যায়।অধরা রুদ্রের সাথে নিজেকে এমন অবস্থায় দেখে বেহুশ হবার মতো অবস্থা।তবু নিজেকে সামলে নিয়ে রুদ্র কে কিছু বলতে যাবে।তখন রুদ্রের দিকে তাকিয়ে দেখে।রুদ্র অদ্ভুত ভাবে তার দিকে তাকিয়ে আছে।রুদ্রের চোখের দিকে তাকাতে কোন নেশার ঘোরে হারিয়ে যায় অধরা।
–রুদ্র অধরা কে কিছু বলতে যাবে।তখন তার মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে কোন নেশার ঘোরে হারিয়ে যায় রুদ্র।সে বিড়বিড় করে বলে।
–“কালো মেয়েরা এতো মায়াবী হয়।আমার জানা ছিলোনা অধরা আগে।নিজের চোখ যেন তোর থেকে সড়াতে পারছিনা।আচ্ছা তুই এতো সুন্দর কেন?কালো রঙের আড়ালে তোর আসল রুপ লক্ষ্য করেনি কখনো।হাজারো সৌন্দর্য আমাদের অধরার কাছে হার মানবে।ইচ্ছে করছে এভাবে সারাজীবন তোর দিকে তাকিয়ে থাকতে।এসেছিলাম তোকে কথা শোনাতে।এখন দেখছি তোর মায়াবী মুখ দেখে মূহুর্তের মাঝে আমার এতো বছরের জমানো রাগ অভিমান সবকিছু শেষ হয়ে গেলো।অধরা রুদ্র যে তোমাতে বিভোর হলো।”
____________________
–আহান বাসায় ফিরে করিডোর দিয়ে যাচ্ছিলো।তখন অধরার রুমের দরজা খোলা দেখে উঁকি দিতে।আহানার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো রুদ্র আর অধরা কে দেখে।রুমটা জুড়ে সামান্য আলো সে আলোতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে রুদ্র আর অধরা কে।এসব দেখে আহান দ্রুত গতিতে নিজের রুমে দিকে চলে যায়।রুমে গিয়ে দরজাটা সাজারো লাগিয়ে দিয়ে রাগে উত্তেজিত হয়ে বলে।
–“যে অধরার জন্য এতো কিছু।এতো প্লেন!
নিজের ভালোবাসা আভা কে ত্যাগ করলাম।নিজের প্রতিশোধের আগুনে জ্বলে পুড়ে শেষ আহান।সেখানে আমার হবু স্ত্রী অধরা রুদ্রের সাথে।”
–কথা গুলো বলে।আহান সাজারে আঘাত করে দেয়ালে।
___________________
–রুদ্র কথা গুলো বলতে।তার চোখ দুটো অধরার ঠোঁটের দিকে যায়।রুদ্র যেন কিছু ভাবতে পারছেনা।সে আচমকা নিজের ঠোঁট জোড়া অধরার ঠোঁটে ডুবিয়ে দিতে।
#চলবে…