#তোমাতে_বিভোর
#পর্ব_৫
#Sapna_Farin
–“অধরার ছায়া তোমাকে সহ্য করতে হবেনা।আজকে থেকে তুমি অধরার কাছে থেকে মুক্ত।যে অধরা তোমাকে মনে প্রাণে ভালোবেসেছিল।সে অধরা তোমাকে মুক্ত করে দিলো।কি অদ্ভুত ব্যাপার না রুদ্র ভাইয়া?কি করবো বলো ভালোবাসা তো আর জোর করে হয়না।জোর করে কারো মনে জায়গা করে নেয়া যায়না।ভালোবাসা তো মনের ব্যাপার।মন থেকে হয়ে যায়।যে অনুভূতি গুলো আমার মনে তোমার জন্য রয়েছে।সে অনুভূতি গুলো তোমার মনে আমার জন্য যে নেই।তোমার মনে আমার জন্য শুধু ঘেন্না রয়েছে।যে ঘেন্না গুলো তোমার মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠে।তোমার পিছনে ছুটতে গিয়ে নিজের ভালোবাসা গুলো প্রমাণ করতে গিয়ে।নিজের ভালোবাসা কে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে পারবো না।
তুমি তোমার মতো ভালো থাকো।আমি না হয় আমার অনুভূতি গুলোর মাঝে তোমাতে বিভোর হয়ে ভালো থাকবো।তোমার জন্য আমার ভালোবাসা আমার মনের মাঝে থাকবে।নিজেকে এটা বলে শান্তনা দিবো কিছু ভালোবাসা হয়তো পূর্ণতা পেয়ে থাকেনা।যেমন তোমার জন্য আমার ভালোবাসা।কিছু ভালোবাসার জন্ম হয়ে হয়ে থাকে অপূর্ণহীন ভাবে।যার পূর্ণতা কখনো পেয়ে থাকেনা।তবে মনের মধ্যে নিজের অনুভূতি গুলো লুকিয়ে রাখতে যে বড্ড কষ্ট হয় রুদ্র ভাইয়া।তুমি বলতে পারো কেন আমার সাথে এমন হলো।সে প্রশ্নের উত্তর আমার অজানা।শুধু কি গায়ের কালো রঙ না অন্য কিছু।কি অদ্ভুত আমার ভালোবাসা রুদ্র ভাইয়া তোমাতে বিভোর হলো অধরা।তুমি হয়তো বিভোর হলে অন্যতে।”
–কথা গুলো বলে অধরা ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে।
–আজকে যেন তার মনে পাহাড় সমান কষ্ট।যে রুদ্রের জন্য এতো ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছিল।সে যে অন্য কারো হতে চলেছে।সামনে রুদ্রের সাথে অন্য কারো বিয়ে এবং অধরার সাথে অন্য কারো।খুব শীঘ্রই তাদের পথ আলাদা হয়ে যাচ্ছে।এটা মেনে নিতে অধরার খুব কষ্ট হচ্ছে।কিন্তু সে খুব ভালো করে বুঝতে পারছে।যতো তাড়াতাড়ি সবকিছু মেনে নিতে পারবে।ততো তাড়াতাড়ি সকলের জন্য ভালো।কিন্তু নিজের মন যে কথা শুনে না।মাঝেমধ্যে বুকের ভেতর টা কেঁপে উঠে।অধরা ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে।বালিশে মুখ লুকিয়ে।
–তখন পিছনে থেকে তিশা অধরার মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে।ছলছল নয়নে বলে।
–“অধরা কেঁদে নিজেকে হালকা করো।নিজের কষ্ট গুলো লুকিয়ে রাখলে যে তুমি ভিতরে ভিতরে শেষ হয়ে যাবে।তোমার যে এমন কষ্ট আমার আর সহ্য হচ্ছেনা।কার জন্য এতো কষ্ট পাচ্ছো যে তোমার মনের কথা গুলো বুঝতে পারলো না।সে রুদ্রের জন্য।”
–তিশার কথা শুনে অধরা নিজের চোখের অশ্রু মুছে।নিজেকে সামলে নিয়ে তিশার দিকে ঘুরে বলে।
–“ভাবি তুমি কি সব যা-তা বলে যাচ্ছো?রুদ্র!রুদ্রের জন্য কেন কষ্ট পাবো।সে আমার কে?আমার কষ্ট হচ্ছিল তোমাদের সবার জন্য।কিছুদিন পড়ে আহানের সাথে বিয়ে।বিয়ের পড়ে তো সকল কে ছেড়ে চলে যেতে হবে তারজন্য।তুমি যে না ভাবি সব সময় ভুলভাল চিন্তা করো।এসব রুদ্র ফুদ্র আমার মাথা থেকে বেড় করে ফেলেছি।এখন শুধু আহান।আমার হবু স্বামী আহানের কথা ভাবতে হবে আমাকে।”
–তিশা অধরার দিকে ফেলফেল করে তাকিয়ে থেকে বলে।
–“অধরা তুমি অনেক বড় হয়ে গেছো।নিজের কষ্ট গুলো আড়াল করতে শিখে গেছো।যে অধরা আমাকে সারাদিন জ্বালাতো।বলতো ভাবি এটা লাগবে সেটা লাগবে।সে অধরার মাঝে আজকে এতো পরির্বতন।সব তাহলে রুদ্রের জন্য।”
–তিশার কথা শুনে অধরা চোখ নামিয়ে নিলো।সে বিছানা থেকে উঠে বসে।তিশা কে বলে।
–“ভাবি অনেক রাত হয়েছে ঘুমাবো।সামনে বিয়ে এখন রাত জাগলে।চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে যাবে।”
–অধরার কথা শুনে তিশা অধরার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থেকে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে।তখন তিশা ছুটে গিয়ে দরজা বন্ধ করে।বিছানায় উবু হয়ে শুয়ে নিঃশব্দে কাঁদতে থাকে।
_____________________
–অভ্র আধাশোয়া হয়ে বিছানায় বই পড়ছিল।তিশা রুমে যেতে অভ্র বলে।
–“এতো রাতে কোথায় গিয়েছিল?”
–“অধরার রুমে।অভ্র আমার ঘুম পাচ্ছে।তোমার বই পড়া শেষ হলে।তাড়াতাড়ি আলোটা বন্ধ করে দিয়ো।
–কথাগুলো বলে তিশা ফ্রেশ হতে চলে যায়।অভ্র বইটা রেখে তিশার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে।
–“আজকে তিশার কি হয়েছে।সে তখন অফিস থেকে ফিরে এসে লক্ষ্য করে যাচ্ছি কেমন অদ্ভুত ব্যবহার করছে।”
–তিশা রুমে আসতে অভ্র বলে।
–“তিশা কি হয়েছে বলোতো?আজকে তোমার ব্যবহার কিছু ঠিক লাগছে না।”
–তিশা মুখে বাকা হাসির রেখা টেনে বলে।
–“কি হবো!চলো ঘুমাবে কালকে তোমার অফিস আছেনা?প্রতিদিন তোমাকে ডেকে তুলতে হয়।”
–অভ্র ভেবাচেকা খেয়ে তিশার দিকে তাকিয়ে থাকে।সে খুব ভালো করে বুঝতে পারছে তিশার মনে কিছু একটা চলছে।কিন্তু তিশা তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে দেখে সে আর জোর করলো না।
–তিশা অভ্রের বুকে মাথা রেখে তাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।অভ্র তিশার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে।তখন তিশা বলে উঠে।
–“আচ্ছা অভ্র তুমি রুদ্রের সাথে কথা কেন বলোনা?এতো দিন পড়ে সে দেশে ফিরেছে তারপর তোমাদের মধ্যে এতো দূরত্ব কেন?”
–“অভ্র তিশার কথা শুনে।তিশার কাছে থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে।আড়মোড়া হয়ে শুয়ে পড়ে বলে।
–“তিশা অনেক রাত হয়েছে।কালকে আমার মিটিং আছে।ঘুমিয়ে পড়ো।”
–অভ্রের এমন অদ্ভুত ব্যবহারের কারণ সে বুঝতে পারেনা।সে আড়মোড়া হয়ে ভাবতে থাকে।
–“অভ্রের সাথে রুদ্রের কথা না বলা।রুদ্র অধরা কে সহ্য করতে পারেনা।তাদের এমন অদ্ভুত ব্যবহারের পিছনে অবশ্যই কোন কারণ আছে।সে কারণ গুলো খুঁজে বেড় করতে হবে।”
_____________________
–আহান আভা কে টেনে নিয়ে ক্লাব থেকে বেড়িয়ে আসে।আভা নিজেকে সামলে রাখতে পারছেনা সে পড়ে যাচ্ছিলো।তখন আহান আভা কে ধরে ফেলে। তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে।
–“আভা দেখছো নিজেকে সামলে রাখতে পারছোনা।তোমাকে এতো ড্রিংক করতে কে বলেছে।নিজের কি অবস্থা হয়েছে দেখছো।”
–আভা আহানের গলা আঁকড়ে ধরে।মুখে বাকা হাসির রেখা টেনে বলে।
–“তুমিতো আছো আভা কে সামলে নেবার জন্য।আভার ভালোবাসার মানুষ আহান।তুমি থাকতে আভার চিন্তা কিসের।”
–আভার কথা শুনে আহান হেসে দিয়ে বলে।
–“আমি থাকতে চিন্তা কিসের না?সব সময় কি থাকবো আমি।নিজেকে তো নিজের সামলে নিতে হবে।”
–আহানের কথা শুন আভা আহানের ঠোঁটের উপরে আঙুল রেখে অভিমানী কন্ঠে বলে।
–“হুশ।এমন কথা আর কখনো বলবে না।তুমি জানোনা আভা তোমাকে কতোটা ভালোবাসা।এখন তো তুমি দেশে এসেছে বিজনেসের কাজে।তাহলে ড্যাডের সাথে আমাদের বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে কবে আসবে।আচ্ছা কালকে এসো।”
–কথা গুলো বলে আভা আহান কে জড়িয়ে ধরে।আহান বিড়বিড় করে বলে।
–“বিয়ে?আমাকে ক্ষমা করো আভা।আমার পক্ষে তোমাকে বিয়ে করা সম্ভব না।নিজের ভালোবাসা যে হেরে গেলো নিজের দ্বায়িত্ব বোধের কাছে।সামনে অধরার সাথে আমার বিয়ে।নিজের প্রতিশোধ গুলো নেবার জন্য যে আমার নিজের ভালোবাসা কে ত্যাগ করতে হবে।তবে বিশ্বাস করো আহান তোমার সাথে ভালোবাসা নিয়ে কোন প্রতারণা করেনি।সে সত্যি তোমাকে খুব ভালোবাসে।পারলে আমাকে ক্ষমা করো।”
–কথা গুলো বলতে তার চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।আহানের নীরবতা দেখে আভা বলে।
–“কি হলো এতো কি ভাবো।বিয়ে করবে না আমাকে?কালকে আসছো তো বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।”
–আহান আভার কথা কাটিয়ে বলে।
–“চলো অনেক রাত হয়েছে আভা।তোমাকে ড্রপ করে দেয়।”
–আভা আহানের হাত আঁকড়ে ধরে বলে।
–“হুম চলো”
_________________
–রুদ্র,ইশান,নিশান নির্জন জায়গায় গাড়ি থামিয়ে।গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।চারদিকে নীরবতা এসে ভর করেছে।জ্যোৎস্নার আলো আবছে পড়ছে তাদের মুখে।সকলের নীরবতা কাটিয়ে ইশান বলে।
–“রুদ্র কি হয়েছিল?এভাবে চলে আসলে কেন?এভাবে স্তব্ধ হয়ে থাকলে কিভাবে বুঝতে পারবো।তোমার কি হয়েছে আমাদের তো বলবে।আচমকা কি হলো তোমার? ”
–রুদ্র নীরবতা কাটিয়ে বলে।
–“আভা।”
–ইশান নিশান রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে।
–“আভা কে?”
–রুদ্র বলে।
–“আভা ঐ মেয়েটা।”
–তারা বুঝতে পারে রুদ্র কোন মেয়েটার কথা বলছে।কিন্তু তারা বুঝতে পারছে না।আভার সাথে কি হয়েছে।তারা পার্টিতে ব্যাস্ত ছিলো তারজন্য বিষয়টা খেয়াল করেনি।তখন ইশান বলে।
–“হুম আভার সাথে কি হয়েছে।”
–“তাহলে শোন।”
–তারপর রুদ্র তাদের সবকিছু খুলে বলে।আহানের বিষয় গুলো শুনে তারা চমকে যায়।তখন নিশান বলে রুদ্র কে বলে।
–“তোমার সব কথা শুনে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।এখানে ম্যান ক্রালপিট আহান।সে তোমাকে তোমার ফ্যামিলিকে ধোকা দিয়েছে।এসবের মাঝে তুমি অধরা কে টেনে নিয়ে আসছো কেন?তোমার সাথে অধরার কি কোন ব্যাক্তিগত সম্যসা আছে।
যার কারণে তুমি ম্যান ভিলেন কে দেখতে পাচ্ছোনা।সব দোষ গুলো অধরা কে দিচ্ছো।সে তো আহানের জ্বালে ধোকা খাচ্ছে।অহান এখানে আভা অন্যদিকে অধরা।বুঝতে পারছো রুদ্র কতো বড় বিশ্বাস ঘাতকতা করছে আহান।আর আভার কথা বলতে।সে এমন মেয়ে সকলের ভালো লাগবে তাকে।তারজন্য প্রথম দেখায় সে কি করে তোমার হয়ে গেলো।সে তো আহান কে পছন্দ করে।হয়তো তাদের মধ্যে রিলেশন আছে।রুদ্র তুমি অন্ধ হয়ে গেছো মরিচীকার পিছনে ছুটে।নিজের ইগো কে বড় করে দেখে।ভালো করে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখো।সবকিছু বুঝতে পারবে।সবকিছু তোমার সামনে কিন্তু তুমি দেখতে পাচ্ছোনা”।
#চলবে…
(হ্যাপি রিডিং)