তোমাতে বিভোর পর্ব-০৪

0
1599

#তোমাতে_বিভোর
#পর্ব_৪
#Sapna_Farin

–ওয়াইনের গ্লাস হাতে নিয়ে অদ্ভুত ভাবে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে রুদ্র।সে অচেনা মেয়েটির দিকে থেকে নিজের চোখ সড়াতে পারছেনা সে।মনে হচ্ছে কতো জন্মের চেনাজানা কতোকাল অপেক্ষার পড়ে পেলো তার দেখা।সে কোন অজানা মায়ার মাঝে নিজেকে আটকে ফেলছে সে নিজে জানেনা।
একগুচ্ছ আলোর রেখে আবছে পড়ছে অচেনা মেয়েটির মুখে।পুরো পার্টি যেন তাকে নিয়ে জমে উঠেছে।সে দিকে মেয়েটির কোন ভ্রুক্ষেপ হচ্ছে না।সে নিজের মতো ড্যান্স করে যাচ্ছে।রুদ্রের মনে মেয়েটির জন্য অন্য রকমের অনুভূতি হচ্ছে।তার হৃদয়ের মাঝে টংটাং করে রোমান্টিক মিউজিক বাজছে।মূহুর্তের জন্য রুদ্র যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে।

–সে মেয়েটি যেমন দেখতে তেমন গায়ের রঙ।রুদ্রের যেমন পছন্দ সবটা যেন তারমধ্য আছে।এসব দেখে রুদ্র যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে তার মাঝে।রুদ্রের স্তব্ধতা দেখে রুদ্রের ফ্রেন্ড নিশান বলে উঠলো।

–“কি দোস্ত এভাবে কি দেখো?মেয়েটি কে পছন্দ হয়েছে না কি!তোমার চোখ দেখছি তার দিকে থেকে সড়াতে পারছোনা।”

–রুদ্র তার ভাবনার মাঝখানে ডুবে আছে।

–রুদ্রের এমন অবস্থা দেখে রুদ্রের ফ্রেন্ড ইশান নিশান নিজেদের দিকে চোখাচোখি করে।জেরে কেশে রুদ্র কে ঝাকিয়ে বলে।

–“কি দোস্ত তুমি কোন ভাবনার মাঝখানে ডুবে আছো।মেয়েটি কে কি পছন্দ হয়েছে না কি?”

–তাদের কথা শুনে রুদ্র বাস্তবে ফিরে আসে।তখন রুদ্র লজ্জা মাখা মুখে বলে।

–“আরে না!এসব প্রেমটেমে রুদ্র বিশ্বাস করেনা।এসব করার সময় কোথায়।”

–রুদ্রের কথা শুন রুদ্রের ফ্রেন্ড ইশান নিশান নিজেদের দিকে চোখাচোখি করে।হু হু শব্দে হেসে উঠে।নিশান বলে।

–“আরে দোস্ত তোমার মনে দেখছি লাড্ডু ফুটছে।আমি তো বললাম মেয়েটি কে পছন্দ হয়েছে নাকি।তুমি তো দেখছি এতো ফাস্ট প্রেমেটেমে চলে গেছো।তো বিলাতে ম্যাম রেখে এখানে এসে কি চান্স নিচ্ছো।”

–তখন ইশান বলে।

–“হুম নিতে পারে পুরো জাতির ক্রাশ রুদ্র।তাকে কোন মেয়ে পাত্তা দিবেনা।আলবার্ট দিবে।দোস্ত তুমি চিন্তা করোনা চালিয়ে যেতে থাকো আমরা তোমার পাশে থাকবো।”

–কথা গুলো বলে রুদ্রের ফ্রেন্ডরা হেসে উঠে।রুদ্র নিজেকে সামলে নিয়ে।ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলে।

–“ওয়ান মোর প্লিজ।”

–রুদ্রের ফ্রেন্ড ইশান নিশান রুদ্র কে নিয়ে হাসি মজা করছিল।কিন্তু রুদ্র তাদের কথা কানে না নিয়ে।নিজের মতো আছে।সে ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে।আর মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে।মূহুর্তের মাঝে যেন অচেনা মেয়েটি হারিয়ে গেলো কোথায় ভিড়ের মাঝে।রুদ্রের চোখ শুধু তাকে খুঁজে যাচ্ছে।
___________________

–তখন আচমকা কোন মেয়ে কন্ঠ শুনে রুদ্র পিছনে
ফিরে তাকাতে দেখে সে মেয়েটি।

–মেয়েটি এখানে বসে ওয়াইনের গ্লাস চুমুক দিয়ে বলছে।

–“ওয়ান মোর প্লিজ।”

–রুদ্র এতো কাছে থেকে মেয়েটি কে দেখে খুশিতে আত্নহারা হয়ে গেলো।সে মেয়েটির সাথে কথা বলতে যাবে তখন তার চেনাজানা কোন চেহারা মেয়েটির সামনে দাঁড়িয়ে বলে।

–“আভা তুমি এখানে।তোমাকে সারা পার্টি খুঁজে যাচ্ছিলাম।চলো আজকে অনেক হয়েছে।”

–“আহান তুমি এতো দেরি করলে কেন?কখন থেকে তোমার অপেক্ষা করছিলাম।চলো আমার সাথে ড্যান্স করবে।”

–আহান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে।

–“আভা অনেক হয়েছে চলো।”

— আহান কে জড়িয়ে ধরে আভা বলে।

–“জান আর কিছু সময় এখানে থাকলে কি হবে।চলো তুমি আমার সাথে ড্যান্স করবে।”

–আভা আহান কে টেনে নিজের সাথে নিয়ে গেলো। এসব দেখে রুদ্রের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।সে ওয়াইনের গ্লাস চুমুক দিয়ে।হাতে শক্ত করে গ্লাস চেপে ধরে।তারজন্য তার হাতে কেটে রক্ত ঝড়ছে।সে দিকে তার কোন ভ্রুক্ষেপ হচ্ছে না।সে সেখান থেকে বেড়িয়ে আসে।

–রুদ্রের ফ্রেন্ডরা তার এমন অবস্থা দেখে তার পিছনে বেড়িয়ে এসে তাকে জিজ্ঞেস করে।

–“কি হয়েছে দোস্ত এমন করছো কেন?সবকিছু ঠিক আছে।”

–রুদ্রের চোখ গুলো রক্ত বর্ন ধারাণ করেছে।সে চোয়াল শক্ত করে।ইশানের কলার ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে।

–“না সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে গেলো।শেষ পর্যন্ত আহান আমাকে ধোকা দিলো।এতো দিনের ফ্রেন্ডশিপ এতো দিনের ভরসা।সবকিছু মূহুর্তের মাঝে শেষ করে ফেললো।কি দোষ করেছিলাম যারজন্য আমার পুরো ফ্যামিলি কে ধোকা দিলো।আভা থাকতে আবার অধরা?আহানার প্লেন কি।কিসের জন্য এসব নাটক করছে আমাদের সাথে।
সবকিছু অধরার জন্য হয়েছে।আজকে অধরা কে দেখে সে আমাদের সুযোগ নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসেছে।আজকে অধরার জন্য আহান আমার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করলো।আজ অধরার জন্য আভা কে আহানের সাথে দেখতে হলো।আজ অধরার জন্য আমার ভালোবাসা আভা এতো দূরে।আজ অধরার জন্যে আমার সব রিলেশন গুলো শেষ হয়ে গেলো।
অধরা সব হিসাব তোলা থাকবে।রুদ্র ইজ ব্যাক।”

–কথা গুলো বলে রুদ্র রাগে ফুঁসছে।

–নিশান রুদ্রের এমন অবস্থা থেকে তাকে ইশানের কাছে থেকে সড়িয়ে নিয়ে এসে বললো।

–“রুদ্র নিজেকে কন্ট্রোল করে।মাথা ঠান্ডা করো।এভাবে উত্তেজিত হয়ে ভুলভাল বলে যাচ্ছো।”

–রুদ্র নিশানের কথা শুনে।নিজেকে সামলে নিয়ে।নিশান কে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠে বলে।

–“দোস্ত আমাকে এখান থেকে দূর বহুদূরে নিয়ে যাবে যেখানে অধরার ছায়া থাকবে না।অধরা নামটা কোন অস্তিত্ব থাকবে না আমার জীবনে।”

–রুদ্রের এমন অবস্থা দেখে নিশান ইশান কে।ইশারা করে বলে তাড়াতাড়ি করে গাড়ি স্টার দিতে।ইশান তাড়াতাড়ি করে গাড়ি স্টার দেয়।আর নিশান রুদ্র কে নিয়ে ব্যাক ছিটে বসে।
তারা বুঝতে পারছেনা রুদ্রের কি হলো সবকিছু তো ঠিক ছিলো।তাহলে রুদ্র কেন এমন করছে।তাহলে কি ক্লাবে তাদের আড়ালে কিছু হয়েছে।তারজন্য রুদ্র এমন করছে।কথা গুলো ভাবতেতাদের মুখে চিন্তার ছাপ ফুটে উঠে।
__________________

–বাড়ির সকলে ড্রিনার করছে।শুধু আহান আর রুদ্র অনুউপস্থিত।তখন রুদ্রের বাব মি.রায়মান সাহেব সকলের উদ্দেশ্য করে বলে উঠে।

–“তোমাদের সকলের সাথে আমার কথা আছে।আমি চাচ্ছিলাম অধরার বিয়ের সাথে রুদ্রের বিয়েটা সেরে ফেলবো।মেয়ে আমার ঠিক করা আছে আমার বন্ধুর মেয়ে আভা।তোমাদের কারো কোন মতামত থাকলে আমাকে জানাতে পারো।”

–তার কথা শুনে সকলের নিস্তব্ধতা।সকলে খাওয়া বন্ধ করে একে অপরের দিকে চোখাচোখি করছে।কারণ সকলে জানে রায়মান সাহেবের কথা মানে শেষ কথা।তারা সকলে খাওয়া বন্ধ করে প্লেটে হাত নাড়াচাড়া করছে।

–অভ্র,তিশা,অধরা রুশা।অভ্রের বাবা মি. আয়মান সাহেব।অভ্রর মা মিসেস মানহা।রুদ্রের মা মিসেস রিমিঝিম।তাদের নীরবতা দেখে মি.রায়মান সাহেব বলে উঠে।

–“কি হলো তোমরা কিছু বলবে।ভয় পেতে হবেনা।তোমরা নিজেদের মতামত দিতে পারো তবে আমার কথা শেষ কথা।সামনে অধরার বিয়ে তার সাথে রুদ্রের বিয়েটা সেরে ফেলবো।ছেলে এখন বড় হয়েছে আমার বয়স হচ্ছে তাকে তো এখন সব দ্বায়িত্ব নিতে হবে।কতো দিন আর বাহিরে পারি জামাবে নিজের সবকিছু ছেড়ে।”

–তার কথা শুনে রুদ্রের মা মিসেসে রিমঝিম নীরবতা কাটিয়ে বলে উঠে।

–“রুদ্রের মতামত নেয়া উচিৎ ছিলোনা।”

–মি. রায়মান সাহেবে তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে।

–“আমার কথা শেষ কথা।এতো স্বাধীনতা দিয়ে কি লাভ হলো।রুদ্র এখন ফ্যামিলির দ্বায়িত্ব নিতে শিখুক সব সময় আমি তো আর বেঁচে থাকবো না।তোমরা বিয়ের প্রস্তুতি নিতে থাকো।”

–কথা গুলো বলে মি. রায়মান সাহেবে চেয়ার থেকে উঠে চলে যায়।তার কথা শুনে সকলের নীরবতা।কিন্তু অধরার বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠে।তবু নিজেকে সামলে নিয়ে মুখে হাসির রেখা টেনে বলে।

–“খুব ভালো বড় আব্বু ঠিক সীধান্ত নিয়েছে।এবার কোথায় পালিয়ে যাবে রুদ্র ভাইয়া।বিয়েটা তাহলে হয়ে যাচ্ছে।”

–অধরার কথা শুনে তিশা অধরার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে।সেখান থেকে উঠে চলে যায়।অভ্র তিশার পিছনে চলে যায়।

–মি. আয়মান এবং মিসেস মানহা চলে যায়।মিসেস ঝিমঝিম এর মুখে চিন্তার ছাপ।সে চলে যায়।ডাইনিং টেবিলে শুধু অধরা আর রুশা বসে আছে।

–তখন রুশা বলে।

–“অধরা আপু তোমাদের কি মিল দেখো।তোমাদের বিয়ে স্যাম দিনে হচ্ছে ভাবা যায়!আচ্ছা ভাইয়ার সাথে তোমার এতো মিল কিসের।ভাইয়ার সব পছন্দের জিনিস গুলো তোমার পছন্দের।”

–“হুম।”

–অধরা নিজেকে সামলে নিয়ে নিজের চোখের অশ্রু আড়াল করে।ছুটে নিজের রুমে চলে যায়।তখন রুশা বসে ভাবতে থাকে।

–“অধরার আপুর আবার কি হলো।আসলে সবার আড়ালে কারো কিছু গল্প থাকে।যে গল্প গুলো সে সবার আড়ালে লুকিয়ে রাখে।এতো কিছু ভেবে কি হবে।সবকিছু ভালো ভাবে মিটে গেলে ভালো।”

–কথা গুলো বলে রুশা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে নিজের রুমে চলে যায়।
_________________

–অধরা নিজের রুমে এসে বিছানার কোনে উবু হয়ে শুয়ে।নিঃশব্দে কেঁদে বিছানার বালিশের একপাশে ভিজিয়ে ফেলে।বিড়বিড় করে বলে।

–“যে আমার না তারজন্য এতো কষ্ট কেন হচ্ছে আমার?আজ থেকে তুমি মুক্ত রুদ্র ভাইয়া।আমার ভালোবাসা না হয় আমার মনের ভেতর থাকুক।তুমি তোমার মতো থাকো অধরা তোমার জীবনে বাধা হয়ে আসবেনা।রুদ্র তুমি মুক্ত।”

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে