#তোমাতে_আমি_মুগ্ধ (৪)
#ফারহানা_জান্নাত
“রুমাইশা, দেখে শুনে কাজ করতে পারো না? তুমি না বললে তরকারি কাটতে পারো। এখন তো ভালো করছো তাই না! তোমার ভাই দেখলে বলবে, আহনাফ আমার বোনের থেকে তুই কাজ করে নেস?”
–রুমাইশা নাক টেনে কাঁদতে থাকে, ডান হাতের বুড়ো আঙুল অনেক’টা কেটে গেছে। সে কখনো এসব করছে নাকি? তার উপর আহনাফ এমন বকাঝকা করছে। আহনাফ তাড়াতাড়ি উঠে রুমাইশা’কে রুমে নিয়ে যায়। হাতটা ভালো করে ড্রেসিং করে বেঁধে দেয়।
“আমি ইচ্ছে করে এমন করছি নাকি। তুমি এমন আমাকে কথা শুনিয়ে দিচ্ছো কেনো! মা-বাবা যেমনি হোক তারাই ভালো। আমি বাসায় যাবো, ওখানে আমার কোনো কাজ করতে হয় না।”
“সরি, কিন্তু তুমি কাজ পারো না এটা বললেই হয়। মিথ্যা বলছো কেনো? কতো’টা কেটে গেছো দেখছো তো।”
“সে জন্য এই ভাবে কেউ বকাঝকা করে না। ভালো মানুষের ও কাজ করতে গিয়ে ক্ষতি হয়। আর আমি তো কাজ করি নাই, সে জন্য হাত কেটে গেলো। কিন্তু তুমি, সেই কখন থেকে বকর বকর করছো।”
“মাফ চাই, আসলে মেয়ে মানুষ মানেই পেঁচাল শুরু। একটা কথা টেনে টেনে বড় করে দেয়। আরে এটা’কে কেয়ারিং বলে গাঁধি বুঝতে শেখো।”
“কেয়ারিং বুঝি এই রকম বলে বলে হয়! জানতাম না সরি।”
“মাফ চাই বুইন, বসে থাকো আমি রান্না করে মুখে তুলে দিবো। নিজ হাতে আর খেতে ও হবে না কেমন?”
“আচ্ছা”
–আহনাফ রান্না করার জনয় রান্না ঘরে যায়। রুমাইশা বিছানায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলো। হুট করে বুঝতে পারে কোমড়ে কেও নখ দিয়ে চাপ দিচ্ছে। তাড়াতাড়ি চোখ খুলে দেখে আহনাফ কোমড়ে হাত দিয়ে তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রুমাইশা ভয়ে ঢোক গিলে তুতলিয়ে বলে,
“আহ-আহনাফ কি করছো! এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো। প্লিজ সরো আমার অসহ্য লাগছে প্লিজ সরো।”
“হুস চুপ, তুমি যখন আমার সামনে থাকো, তখন এক অন্য রকম মাদকতা গ্রাস করে। তোমাকে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে খুব।”
“কি-কি বলছো এসব তুমি। পাগল হয়ে গেছো নাকি? হা-হাত সরাও আমার পেট থেকে। আমি কিন্তু চিল্লাতে শুরু করবো।”
“তুমি আমার ওয়াইফ, তোমার উপর আমার সম্পূর্ন অধিকার আছে। তাই চিৎকার দিয়ে ও কোনো লাভ হবে না।”
–আহনাফ কোমড় থেকে হাত সরিয়ে রুমাইশার পাশে চিত হয়ে শুয়ে পড়ে। তারপর আহনাফ রুমাইশার কপালে একটা কিস করে ঠোঁটের দিকে যায়। ঠোঁটে হালকা স্পর্শ পেতেই রুমাইশা চোখ বন্ধ করে চিল্লিয়ে উঠে। কিছুক্ষণ পর চোখ খোলে, কারো অস্তিত্ব নাই বুঝতে পেরে ভরকে যায়। দেখে আহনাফ হাত মুছতে মুছতে তার দিকে এগিয়ে আসছে।
“কি হয়ছে এভাবে চিৎকার দিলে কেনো? এই সময়ের মধ্যে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছো!”
“তু-তুমি আমার কাছে আসছিলা তাই না? আ-আমার পেটে হাত দিছো। আমার ঠোঁ ঠোঁট..”
“কিহ! তোমার ঠোঁটে কি হয়ছে শুনি। দেখি দেখি ঠোঁট কাটছো নাকি।”
–রুমাইশা হাত দিয়ে নিজের ঠোঁট চেপে ধরে। সে কি তাহলে এতোক্ষণ স্বপ্ন দেখছে? কিন্তু কেমনে সে তো ঘুমায় নি। তাছাড়া আহনাফ কে দেখে মনে হচ্ছে কিছু হয়নি এখানে।
“তুমি কখন রুমে আসছো ভাইয়া?”
“চুপ আবার ভাইয়া বলো কেনো? জামাই’কে ভাইয়া বলতে নেই জানো না। আর আমি মাত্র রুমে আসছি, চলো খাবা।”
“আজব তো, পেটে তো নখের দাগ আছে তাহলে! এটা কি আমি নিজে করছি? উফ আমি তো পাগল হয়ে যাবো।”
–আহনাফ একবার রুমাইশার দিকে তাকায়। পেট থেকে গেঞ্জি উঠিয়ে দেখছে। আহনাফ ঠোঁট বাঁকিয়ে হালকা হেঁসে দেয়। তারপর রুমাইশা’কে নিয়ে খাওয়া দাওয়া করে হসপিটালে যায়। আহনাফ রাহুলের সাথে দেখা করে নিজ কাজে চলে যায়। রাহুল রুমাইশার হাতের দিকে তাকিয়ে অবাক কন্ঠে বলে,
“হাতে কি হয়ছে! এভাবে বেন্ডেজ করা কেনো?”
“কেনো আবার, তোমার কথা শুনে তো আহনাফ’কে হেল্প করতে গেছিলাম। সাথে এখন ফ্রী হাত কাটছে, আর ফ্রী কথা শুনিয়ে দিছে।”
“ও, আমার খুধা লাগছে খাইয়ে দে আগে। আর কাজ করার জন্য কি কাউকে রাখবি?”
“না, তুমি ঠিক হলে আমি বাসায় যাবো ভাইয়া। এখানে আহনাফ ভাইয়ার সাথে থাকবো না আমি। উনি আমার কতো সিনিয়র, আমি তো ৪-৫ বছরের বড় কাউকে বিয়ে করতাম”
“কি বলিস! বিয়ে ছেলে খেলা না রুমাইশা। মেনে নে সব, আমি তো ভাবছি তুই আহনাফ কে ভালোবাসিস। এখন দেখি সব উল্টো, ব্যাপার কি?”
“কিছু না, আমি এই সম্পর্ক রাখবো না। তাছাড়া এখানে শাক সবজি খাওয়াবে তোমার বন্ধু। এসব মুখে যাবে না আমার।”
“সমস্যা নাই আমি সুস্থ হই, তারপর বাড়ি থেকে কিভাবে সবাইকে তাড়িয়ে দিতে হয় তা জানা আছে। আমাদের অফিস সম্পূর্ণ তোর নামে। তুই চাইলে এখন সবাই’কে বের করে দিতে পারিস। ডেড কিন্তু আমার নামে শুধু বাড়িটা করছে। বাকি সব তোর নামে।”
“আচ্ছা ভাইয়া এটা বলো, আমাকে বিয়ের দেওয়ার কারণ কি ছিলো! মা তো এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়ার মানুষ না। যতই খারাপ হোক কখনো বিয়ের কথা বলে নাই।”
“ছেলের নাম কি ছিলো! চিনিস তাকে?”
“হ্যা রকি”
“ঐটা মায়ের বান্ধবীর ছেলে, তোর বিয়ের পর অর্ধেক সম্পত্তি তোর জামাইয়ের নামে হবে। সে জন্য মা বিয়ে দিয়ে নিজের নামে সব করতে চাইছিলো।”
“মানে! তার মানে আহনাফ ভাইয়া আমার সম্পত্তির জন্য আমাকে বিয়ে করছে?”
“পাগলের মতো কি বলিস! ও তোকে ওখান থেকে বাঁচাতে বিয়ে করছে। ওকে ভুল বুঝিস না, ও জানে ও না সম্পত্তি কার নামে।”
–রাহুল রেগে কথাটা বলে। রুমাইশা পাত্তা দেয় না সে দিকে। তার এখন একটা লক্ষ্য পড়াশোনা করে বড় হতে হবে। ১৮ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত সম্পত্তি তার বাবার নামেই থাকবে। আর এর আগে বাবা মারা গেলে মা ভোগ করতে পারবে। আর ১৮ বছর পূর্ণ হলে সব রুমাইশার নামে হবে।
“ভাইয়া আমাদের বাবা’কে এখানে নিয়ে আসতে হবে। বাবা অসুস্থ, মা যদি বাবা’কে মেরে ফেলে? দেখো মা সম্পত্তি জন্য তোমাকে মারার চেষ্টা করছে। বাবা’কে মেরে ফেলতে দু’বার ভাববে না।”
“ওহ নো, আমার মাথায় ছিলো না এই কথা’টা। আমি তো যেতে পারবো না, আহনাফ কাজের জন্য ব্যাস্হ তুই একা যাবি?”
“হ্যা একা ঘোরার অভ্যেস আমার আছে। তুই তাহলে থাক, আমার এটিএম কার্ডে লাখ দুয়েক টাকা আছে। এটা দিয়ে আমি চলবো, তোর কার্ড তো নাই টাকা লাগলে বল। আমি আজ বাড়ি ফিরবো।”
“আমার ভয় হচ্ছে তোর কিছু না হয়ে যায়।”
“কিছু হবে না। টাকা নিবি নাকি বল”
“হসপিটালের বিল দেওয়া হয়নি। সব হয়তো আহনাফ দিসে, টাকা ওরে দেস।”
“ওকে, রাতে আমি বাসায় যাবো। এখন একটু বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে নেই।”
“আচ্ছা”
–বাসায় এসে রুমাইশা শুয়ে পড়ে। ঠিক একই ভাবে বুঝতে পারে কেউ গলায় কিস করছে। হালকা কেঁপে ওঠে অন্য পাশ হয়ে ঘুমিয়ে যায়। কিন্তু না স্পর্শ গভীর হতে থাকে। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে কেউ নাই। নিজেই নিজের মাথার চুল টেনে বলে,
“বা’ল হচ্ছে কি আমার সাথে? আমি কি আহনাফ কে নিয়ে বেশি বেশি ভাবছি। এই ছেলেটা তো আমাকে শান্তিতে ঘুমাতে ও দিচ্ছে না।”
“কি হয়েছে দরজা খোলো কতবার ফোন করছি ফোন রিসিভ করো না কেনো? মরার মতো ঘুমিয়ে আছো নাকি!”
“সরি আসছি আমি”
–রুমাইশা ফোন’টা কান থেকে নামিয়ে উঠে পড়ে। আহনাফ অনেক কয়বার ফোন করছে। কিন্তু ফোন সাইলেন্ট থাকায় বুঝতে পারে নাই।
“তুমি এই সময় বাসায়? সকালে না বললে আজ দুপুরে বাসায় আসবে না। কয়টা বাজে?”
–রুমাইশা মুখে হাত দিয়ে ঘুম ভাঙ্গার চেষ্টা করে। আহনাফ একবার রুমাইশার দিকে তাকিয়ে টান দিয়ে নিজের সাথে চেপে ধরে। তারপর চোখ মেরে বলে,
“এই ভাবে কখনো আমার সামনে এসো না বউ। বউ তুমি, আমার পবিত্রতা, আমার আসক্তি হতে পারে। ভুল কিছু করে ফেলবো, তাই আমার সামনে আসার আগে নিজেকে পরিপাটি করে নিও।”
“মা-মানে? ছাড়ো আমাকে। এভাবে জড়িয়ে ধরার কি আছে! আমি নেশা না যে আমার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়বে।”
“এভাবে একটা ছেলের সামনে আসলে, ছেলেটা তো জড়িয়ে নিবেই। অন্য ছেলে হলে গোসল করিয়ে নিতো।”
“হোয়াট!”
–রুমাইশা চোখ বড় বড় করে কথাটা বলে। আহনাফ হালকা হেসে কপালে একটা কিস করে। তারপর কমড়ে চাপ দিয়ে ছেড়ে দেয়। রুমাইশা নিজের দিকে তাকিয়ে ভড়কে যায়। গায়ে ওড়না নেই, বিরবির করে বলে,
“তো কি হয়ছে! এখানে তো কেউ নাই। গায়ে ওড়না দিয়ে থাকতে হবে কেনো? বাসায় আমি তো এভাবেই থাকি। টিভিতে দেখায় কেমন ড্রেস পড়ে থাকে নায়িকা’রা। আর আমি ওড়না পড়ি নাই সে জন্য এতো কিছু?”
“আগে অবিবাহিত ছিলে, কিন্তু এখন তুমি বিবাহিত। তখন বাসায় তোমার ভাই আর বাবা ছাড়া কেউ থাকতো না। কাজের লোক’রা সব মেয়ে মানুষ। আর এখানে তুমি ছাড়া একটা পুরুষ মানুষ আছে।”
“তো!”
“আসলেই তো? জামাই হই কিন্তু সেই অধিকার তো পাইনি। যদি পেতাম তাহলে জামা না পড়ে থাকলে ও কিছু বলতাম না।”
“অসভ্য”
“অসভ্য কাকে বলে বুঝিয়ে দিবো নাকি? এতো কথা না বলে যাও। গোসল করে রেডি হও, আমি তোমাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে হসপিটাল যাবো।”
“যাচ্ছি এখানে থাকার ইচ্ছে নাই আমার, বাসায় যাওয়ার পর আর আসবো না যাও।”
“মেয়ে মানুষের এতো রক্ত গরম কেনো? মেয়ে মানুষ কে সব সময় ঠান্ডা থাকতে হয় বুঝলে। না হলে তারা সংসার করতে পারে না।”
“মেয়েরা সব সময় কেনো চুপ থাকবে বলবা? ভুল না করে ও ক্ষমা চাইতে হয়। আমরা মেয়েরা কি এতো সস্তা?”
“জানি না”
–আহনাফ বিরক্ত হয়ে আর কিছু বলে না। রুমাইশা গোসল সেরে খাবার খায়। তারপর আহনাফে’র দিকে তাকিয়ে থাকে। আহনাফ বুঝতে পারে রুমাইশা কিছু বলবে। সে জন্য বলে,
“কি বলবা বলো, আমাকে এতো দেখতে হবে না। চোখ দিয়ে কি গিলে খাবা? এই ভাবে নজর লাগালে আর কেউ তাকাবে না।”
“সব সময় তোমার এসব না বললে হয় না! ভাইয়ার চিকিৎসা করার জন্য কতো টাকা খরচ হয়ছে?”
“কেনো?’
” বলো কতো।”
“বর্তমান সব মিলিয়ে ৩০ হাজার খরচ হয়ছে। আরো থাকবে খরচ হবে, কারন বেড ভাড়া তো দিবে হবে। তাছাড়া ডাক্তার দেখছে রক্ত দিতে হচ্ছে, রক্ত ফ্রি দেয় না কেও। এক টা প্যাক ১৫০০ টাকা নিচ্ছে।”
“খুব তো বলছিলে, ভাইয়া নাকি গুরুতর আঘাত পায় নি। এখন ১৫ দিনে ও তো বেড থেকে উঠতে পারবে না। সব মিলিয়ে কতো টাকা লাগতে পারে?”
“৫০ হাজারের মতো লাগবে, ৭দিন পর বাসায় নিয়ে আসবো ওকে।”
“আচ্ছা”
–রুমাইশা রেডি হয়ে নেয়, বাহিরে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সেটা দেখে আহনাফ বলে,
“ট্রেনে যাবা নাকি বাসে?”
“গাড়ি’তে যাবো। এতোখানি রাস্তা আমি বাস ট্রেন কিছু দিয়ে যেতে পারবো না। এই তো গাড়ি আসছে, ভাইয়ার খেয়াল রেখো আসি আমি।”
“সাবধানে কিছুর প্রয়োজন হলে ফোন দিও। আর পৌঁছে জানিয়ে দিও। কি হয় না হয় সবটা জানিও।”
“আহনাফ আমাকে একটা কিস করবা?”
–রুমাইশার কথা শুনে আহনাফ কেশে উঠে। মেয়েটা কি আবদার করছে ওর থেকে? মানে রুমাইশা কি ঠিক আছে! আহনাফ অবাক হয়ে বলে,
“কি বললে আবার বলতো”
“বললাম, আহনাফ আমাকে কি একটা কিস করবা? কিস বোঝো না! চুমু দিবে কি একটা?”
“কোথায়!”
–আহনাফে’র এমন কথায় রুমাইশা রেগে যায়। কোথায় সেটা ও বলতে হবে নাকি? রুমাইশা রেগে চিল্লায়ে বলে,
“আমার মাথায়”
“আজব তো, কোথায় সেটা বলতে হবে না নাকি? নয়তো আমি আবার ঠোঁটে ও দিতে..।”
“অসভ্য আমি গেলাম, ভালো থাকো বেঁচে থাকলে কথা হবে।”
–রুমাইশা যেতে চাইলে আহনাফ নিজের দিকে টেনে আনে। তারপর কানে ফিসফিস করে বলে,
চলব?…………..….