তোমাতেই সীমাবদ্ধ আমি পর্ব-৪

0
2593

#তোমাতেই সীমাবদ্ধ আমি
#লেখনীতে:মাইশা চৌধুরী
(৪)

ইয়াশের সাথে মুখোমুখি হওয়ার ভয়ে আনিশা ফাস্ট ক্লাসের পর,, বাকি ক্লাসগুলো করেনি যদি ইয়াশের ক্লাস থাকে এই ভয়ে।তবে লাস্ট ক্লাস করবে বলে ক্লাস রুমে এলো।আনিশা আর ওর ফ্রেন্ড রাইসা এক সাথে বসেছে।কিছুক্ষণের মধ্যে ক্লাসে ইয়াশ আসে।আর ওকে দেখে আনিশার মুখ হা হয়ে যায়।

ইয়াশ সবাইকে বসতে বলে ক্লাস নিতে শুরু করে।আনিশা বই দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছে।

ইয়াশ পড়াতে পড়াতে হঠাৎ খেয়াল করে কেউ বই দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছে। ইয়াশ তার সামনে গিয়ে বলে,,

“হেই তুমি কি নতুন?জানোনা কি ক্লাস হচ্ছে?”

রাইসা আনিশাকে হাতে গুতা দিচ্ছে।স্যারের সামনে কিছু বলতেও পারছে না ও আনিশাকে।এদিকে ইয়াশের মেজাজ খারাপ হচ্ছে।ও এবার ধমকের সুরে বলল,,
“এই মেয়ে কানে শুনো না তুমি? সেই কখন থেকে কথা বলছি কোনো রেসপন্স নেই আজব!”

এবারো আনিশা চুপ।রাইসা বলল,,

“স্যার আসলে ওর ঠান্ডা লেগেছে তো তাই কানে শুনছে না।”

“কিহ!ঠান্ডা লাগলে কেউ কানে শুনে না এমনটা তো আগে শুনিনি।”

“এটা একমাত্র ওর ই হয়। আপনি বুঝবেন না।”

“স্ট্রেইনজ।”

রাইসা একটা বলদ মার্কা হাসি দিলো।ইয়াশ আবারো পড়ানোতে মনযোগ দিলো।

আগের ক্লাসের দেওয়া পড়া সবাইকে ধরছে।এবার আনিশার পালা।ও আগের মতোই বই মুখের সামনে ধরে আছে যার জন্য ওর মুখ এখনো দেখেনি ইয়াশ।

এবার কোন উপায় না পেয়ে আনিশা বইটা মুখের সামনে থেকে সড়িয়ে ভ্যা ভ্যা করে কান্না করে দিলো।

এতে ইয়াশ সহ সবাই শকড।ইয়াশ অবাক হলেও সেটা প্রকাশ না করে জিজ্ঞেস করল,,

“কি হলো তুমি কাদছো কেন?”

আনিশা কেঁদে ই চলেছে।

“তুমি কি পড়া করে আসোনি?কাদছো কেন?”

“করেছি তো স্যার।আমি পড়া কমপ্লিট করেছি বাট…”

“বাট কি?”

“আমার খালামনি মারা গেছে স্যার। শেষ দেখা টাও দেখতে পারলাম না স্যার।”

“সেকি কেনো?”

“এই যে আপনার ক্লাস।”

“মানে?”

“মানে হলো ক্লাস মিস হয়ে যেত তাই আম্মু নিয়ে গেলো না।”

বলে কান্না করতে থাকে।এটা দেখে ইয়াশের খারাপ লাগে ও বলে,,

“আচ্ছা তুমি বসো কান্না করো না।বাকিরা এক এক করে পড়া বলো।”

আনিশা বসে পড়ে।আর তখনই রাইসা জিজ্ঞেস করে৷,,

“তোর খালামনি মা/রা গেছে আগে বলিস নি তো!”

“ম/র/লে না বলবো। ”

“তারমানে…”

“হুম। দেখ আমি আগের ক্লাসটা করতে পারিনাই ওইদিন খালামনির ছেলের বার্থ ডে ছিলো বলে আসিনাই।তাই পড়াও পাইনি তোর থেকে নিবো মনে ছিলো না আর তাই এইটা করলাম নাহলে আবার বকা খেতাম।”

“আল্লাহ তাই বলে তুই এটা বলবি স্যার যদি জেনে যায় সত্যি টা?”

“জানবে না চুপ কর।”

________________________________
কলেজ শেষে বাসায় আসতেই আনিশা দেখে তার খালামনিরা এসেছে।

আনিশা তার খালামনিকে দেখেই ঢোক গিলল।

“ও নো এখন কি হবে।এই মহিলা এসেছে মানেই আমার মাথা খাবে সারাদিন।আআআ আগেই রুমে চলে যাই।”

আনিশা পা টিপে টিপে রুমে যেতে নিলেই আনিশার খালামনি মিসেস লাবণ্য আনিশার সামনে দাড়ায়।

আনিশা একটা মেকি হাসি দিল,,

“আরেহ খালামনি কখন এলে?”

“একটু আগেই। সামনে তো তোর এনগেজমেন্ট তাই চলে এলাম।”

“ওহ।”

“হুম।তুই কিন্তু আমার দেওরের ছেলেকে বিয়ে করলেই পারতিস।কতো সুন্দর দেখতে শুধু একটু মেয়ে বাতিক আছে তাই বলে কি ও ভালো মেয়ে ডিজার্ভ করে না। ”

“নাও শুরু হয়ে গেছে।পালাই” (মনে মনে)

“কি রে কি ভাবিস।?”

“কিছুনা খালামনি। আমি ফ্রেস হয়ে আসি।”

বলে আনিশা দৌড়ে রুমে চলে যায়।

বিকাল ৩:৫৪,,

আনিশা ঘুম।হঠাৎ হাসাহাসির আওয়াজে ঘুম ভাঙে ওর।উঠে ওরনা গলায় পেচিয়ে বাহিরে আসে।

এসে দেখে এক দাঁতওয়ালি মহিলা পান খেয়ে বিকট ভাবে হাসছে।আনিশা এই মহিলাকে রাক্ষসের থেকে কম কিছু মনে হচ্ছে না এই মুহুর্তে কেননা এই মহিলাই ওর জন্য সমন্ধ এনেছিলো।

বেশ কয়েকবার এই মহিলাকে আনিশা ভাগিয়েছে।তবে এবার ইয়াশের জন্য আনিশাকে দেখতে আসার পিছে এই মহিলারই হাত আছে তাতে নিশ্চিত আনিশা।

ও ঘটক মহিলার সামনে যায়।ওকে দেখেই ভয় পেয়ে যায় লাভলি বেগম।কেননা আগের বার যখন পাত্রর ছবি নিয়ে এসেছিলো আনিশা ওনাকে মরিচের শরবত খাইয়েছিলো।

আনিশা ওনাকে সালাম দেয়।

” আসসালামু আলাইকুম। ”

“ওয়ালাইকুম আসসালাম।”

“আপনি আবার এসেছেন আপনার ওইদিনের শরবত মনে হয় বেশি ভালো লেগেছিলো তাই আবার খাওয়ার শখ হয়েছে।”

“আরেহ না মা কি বল।আমি আইসিলাম তোমার খালার সাথে দেখা করতে।”

“মিথ্যা বলবেন না একদম। ”

“কই মিথ্যা কইসি।আইচ্ছা আমি আসি। ”

বলে লাভলি বেগম কোনোরকম জান হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন।

এনার সভাব খুবই খারাপ ১৮ বছরের কোনো মেয়েকে দেখলেই হয়েছে, বিয়ের জন্য পাত্রপক্ষের ডালি নিয়ে আজির হয়।

লাভলি বেগম যাওয়ার পর আনিশা দরজা লাগাতে যায়।

কিন্তু কপাল খারাপ থাকলে যা হয়।
আনিশা দরজা লাগাবে এমন সময় ২টো গাড়ি এসে থামে ওদের বাসার সামনে।

কে এসেছে দেখার জন্য আনিশা ওয়েট করে। তখনই গাড়ি থেকে ডার্ক ব্লু পাঞ্জাবি পাজামা পড়ে ইয়াশ নামে,তারপর একে একে সবাই নামে।

“এ কি এনারা এখন আমাদের বাসায় কেন?”

আনিশা তারাতাড়ি দরজা লাগিয়ে আসতেই দেখে ওর আম্মু দাড়িয়ে আছে।

“ওভাবে হাঁপাচ্ছিস কেনো?আর দরজা খুলে দে এখুনি ইয়াশরা আসবে।”

“কেনো আম্মু?”

“তোর খালামনিদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো আর Engagement এর জন্য শপিং এ যাবো। তুই আর ইয়াশ ও যাবি তোদের হাতের মাপ টা লাগবে। ”

বলতে বলতেই বেল বেজে উঠে। আনিশার আম্মু দরজা খুলতে গেলেন।আনিশার মুখ দিয়ে আপনা আপনি বেরিয়ে এলো,,

“বাঁশ।”

চলবে…!!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে