তোমাতেই সীমাবদ্ধ আমি পর্ব-১৪ এবং শেষ পর্ব

0
3769

#তোমাতেই সীমাবদ্ধ আমি
#লেখনীতে:মাইশা চৌধুরী
অন্তিম পর্ব

আনিশা যাকে বারি মে//রে/ছে সে আর কেউ নয় রিশাদ সাহেব।আনিশা কি করবে ভেবে পায়না।রিশাদ সাহেব ওকে দেখার আগেই দৌড়ে রুমে চলে যায়।
এদিকে রিশাদ সাহেবের মাথায় আলু উঠে গেছে।

কিছুক্ষণ পর,,
রাহিমা বেগম দেখেই সন্দেহ গলায় বলেছেন,,

“কাকে টিজ করতে গিয়ে গ/ণ/ধো/লা/ই খেয়ে এসেছো?”

রিশাদ সাহেবের মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে।মাথায় বরফ ধরে বসে আছেন।চুপ করে আছেন।এখন কথা বলে কথা বাড়াতে উনি চান না।

ইয়াশ এসেছো একটু পরে।।
আনিশা হল রুমে আসতেই রাহিমা বেগম বলে উঠেন,,

“দেখো বউমা এই বয়সে বধহয় আমার কপাল পুড়বে।কিছু বুঝতে পারছিনা এই লোক কি চায়।অসভ্য। ”

রিশাদ সাহেব দাঁত কিড়িমিড়ি করে বলেন,,

“একদম বাজে কথা বলবে না রাহিমা। ”

“অন্যায় করে আমার আমাকেই ধমকাচ্ছেো!”

রাহিমা বেগম বকবক শুরু করলেন।আনিশা শস্তির শ্বাস নিলো যাক কেউ ওকে দেখেনি।পড়ে শশুর মশাইয়ের থেকে মাফ চেয়ে নিবে।

২মাস পর,,

ইয়সশ এখন পুরোপুরি সুস্থ সবাই চিনতে পেরেছে কিন্তু আনিশাকে চেনেনা। আনিশাকে আপু বলে।আর আনিশা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।

এমনি একদিন।আনিশা ড্রইং রুমে বসে রাহিমা বেগলের সাথে গল্প করছিলেন তখনই কলিং বেল বাজে।আনিশা দরজা খুলে দিতেই একটি মাঝ বয়সি মেয়ে দৌড়ে গিয়ে ইয়াশকে জড়িয়ে ধরে।আনিশা থ হয়ে তাকিয়ে আছে।ইয়াশও অবাক হয়েছে। মেয়েটি ইয়াশকে বলে,,

“মিস ইউ রে কতদিন দেখি না তোকে হুম।ভাব নিস বেশি।আগে কল দিতি এখন তাও দিস না।ঢং।”

ইয়াশ কিছু বলতে যাবে তার আগেই একটা ঝাড়ু এসে সামনে পড়ে ওর।ইয়াশ সহ মেয়েটি তাকিয়ে দেখে আনিশা হাতে আরো ২ টা ঝাড়ু নিয়ে দাড়িয়ে আছে।

“আমার জামাইয়ের থেকে সরে যাও পে/ত্নী। সাহস কিভাবে হয় ওর সাথে চিপকে যাওয়ার? ও আমাকে চেনেনা বলে যা ইচ্ছা তাই করবে তুমি?সর।”

বলে ঝাড়ু নিয়ে তেরে গেলে মেয়েটি ইয়াশের পিছে লুকিয়ে পড়ে।রাহিমা বেগম থামতে বলেছেন কিন্তু আনিশা শুনছে না।আনিশা মেয়েটির পিছু ঝাড়ু নিয়ে ছুটতে লাগলো একসময়।পুরো হল রুম দৌড়ে চলেছে তারা। মেয়েটির পিছে ঝাড়ু হাতে আনিশাও সমান তলে দৌড়।

আনিশা দৌড়াতে দৌড়োতে হঠাৎ এক টান অনুভব করল।ইয়াশ ওকে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়েছে।

“রিলাক্স। কিভাবে ছুটছো পড়ে যাবা।”

“গেলে কার কি হ্যা।ওই পে/ত্নী/কে আমি মে/রে ফেলবো।”

বলে আনিশা ইয়াশকে ছাড়িয়ে আবারো দৌড়।মেয়েটি ইয়াশের পিছে গিয়ে লুকিয়ে পড়ে। আনিশা ওর মাথায় ঝাড়ু দিয়ে বারি দিতে গেলেই মেয়েটি ইয়াশের পিছের থেকে সরে যায় আর বারি লাগে ইয়াশের মাথায়।

আনিশা নিজেও হা হয়ে যায়।এটা কি করে ফেলল ও।ইয়াশ ততক্ষণে জ্ঞান হারিয়েছে।রাহিমা বেগম ইয়াশের দিকে ছুটে গেলো।মেয়েটি যেতে নিলে আনিশা বাধা দিলো। আনিশা পানি নিয়ে গিয়ে ইয়াশের মুখে দিলো ইয়াশের জ্ঞান ফিরল।জ্ঞান ফিরতেই ও বলল,,

“আনিশা তুমি এভাবে ঝাড়ু হাতে দাড়িয়ে আছো কেনো?”

আনিশা কি বলবে ভেবে পায়না।হাত থেকে ঝাড়ু ফেলে ইয়াশকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে।

“আপনি ঠিক হয়ে গেছেন?আমি কত আপেক্ষা করতাম আপনি কবে আমায় চিনতে পারবেন তার জন্য।আমি ভাবিনি আপনি আমায় আবার চিনতে পারবেন।”

রাহিমা বেগম মেয়েটির হাত ধরে ওখান থেকে চলে যান।

ইয়াশ আনিশাকে বলে,,

“আমি তো তোমায় রোজ আনিশা বলে ডাকতাম তুমি ঘুমিয়ে যাওয়ার পর।”

আনিশা অবাক চোখে ইয়াশের দিকে তাকিয়ে বলে,,

“তার মানে আপনি ঠিক হয়ে গিয়েছেন আগেই!”

“হুম আগের মাসে ডক্টর দেখিয়ে ফেরার সময় একটা কার এ/ক্সি/ডে/ন্ট হতে দেখায় ওইখানেই সব মনে পড়ে যায় আমার।কিন্তু প্রকাশ করিনা।আমি দেখতে চেয়েছিলাম তুমি আমার কতটুকু ভালেবাসো?”

“আপনি খুব খারাপ।”

বলে ইয়াশের বুকে মুখ লুকিয়ে ফেলে আনিশা।

ইয়াশ বলে,,

“যাকে তুমি ঝাড়ু দিয়ে পিটাতে চাইছিলে সে তোমার ননদ। আব্বুর ছোট ভাইয়ের মেয়ে নাফিসা।”

একথা শুনে আনিশা জিভে কামড় দেয়।ইস কি কান্ডটাই না করল সে।রাহিমা বেগম অবশ্য রাগ করেননি আনিশার উপর। নিজের স্বামীর সথে কাউকে এমন ভাবে দেখলে এমনটাই করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।

_______________________________

২বছর পর,,,

এখন সব বদলে গেছে।ইয়াশ এখন ফ্যামিলি বিজনেসে জয়েন করেছে।ইরফান আর বিয়ে করেনি।রাহিমা বেগম এখন কাঁথা সেলাই করেন অবসর সময়ে।কারণ সামনেই তার নাতিনাতনি আসতে চলেছে।হুম আনিশা প্রেগনান্ট।

আনিশা তো সারাদিন বসে বসে বোর হয়।ইয়াশকে ফোন দিয়ে বকে ইয়াশ হাসে। তাতে আনিশার আরও রাগ উঠে।

ক দিন আগেই একদিন রাতে আনিশার ঘুম আসছিলোনা।পা জ্বালা করছিলো।ইয়াশ ঘুমে ছিলো।আনিশা এক চিৎকার দিয়ে কেদে উঠে।ইয়াশ লাফিয়ে উঠে বলে।

“কি হয়েছে বউ?কাদছো কেনো?”

“আনিশা কেদেই চলেছে।

ইয়াশ আর কয়েকবার জিজ্ঞেস করতেই আনিশা বলে ,,

” আমি যদি ম/রে যাই তাহলে খবরদার আর বিয়ে করবে না।আমি অতো মহান না যে আপনাকে শেয়ার করবো।”

বলে আবারো কান্না করে।এদিকে ইয়াশ বেক্কলের মতো তাকিয়ে আছে ওর দিকে।

“তুমি এই জন্য এতো রাতে কাদছো? ওরে পাগলি আমি শুধু তোমাকেই ভালেবাসি।কেনো তুমি এমন ভাবছো যে তোমার কিছু হবে?আমি আছি তো।আমি থাকতে তোমার কিছু হতে দিবো না।কাদে না।আসো বুকে এসে শুয়ে পড়ো।”

আনিশা ইয়াশের বুকে মাথা রাখতেই ইয়াশ আনিশার সামনে ১টি চকলেটের বক্স ধরে।

“নাও খাও।তোমার তো খিদেও পেয়েছে। তাই এসব ভুলভাল ভাবছো।”

“তুমি জানলে কিভাবে?”

“আমি জানবো না? আমার বউয়ের সব কিছু আমি জানি বুঝলে।”

আনিশা মিষ্টি হাসি দিয়ে চকলেট খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।

কেটে গেলো ৯টি মাস। সময় খুব দ্রুত চলে যায়।আনিশার ডেলিভারির ডেট আজ।ও.টির সামনে পাইচারি করছে ইয়াশ।আনিশার বাবা, মা, রাহিমা বেগম, রিশাদ সাহেব, ইরফান সবাই হসপিটালে উপস্থিত। ইয়াশকে ও.টির ভিতরে যেতে বলা হয়েছিলো। গিয়েছিলে ও কিন্তু ও.টির চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিতেই জ্ঞান হারিয়েছে ইয়াশ।তাই ওকে আর ভিতরে যেতে দেওয়া হয়নি।১ঘন্টা হয়েছে এখনো ডক্টর রা কিছু বলেনি।ইয়াশ টেনশনে ঘেমে গেছে।

ইয়াশ আর না পেরে বলে উঠে,,

“আমাকে এভাবে দাড় করিযে রাখার মানে আছে?আমি ভিতরে যাবো।বউকে দেখবো।টেনশনে পাগল হয়ে যাচ্ছি। ”

রিশাদ সাহেব বলেন,,

“মায়ের মতো মূর্ছা গিয়েছো একবার।আবার যেতে চাও? চুপচাপ বসো। ডক্টর বের হলে কথা বলবা।”

ইয়াশ তবুও নিজের মনকে শান্ত করতে পারলো না।
কিছুক্ষণ পর নার্স তোয়ালে দিয়ে পেচিয়ে দু’টো ফুটফুটে বাচ্চা নিয়ে এলো।আনিশার টুইন বেবি হয়েছে।একটা ছেলে একটা মেয়ে।নার্সটি ইয়াশের কোলে দিলো দু’জনকে।ইয়াশ অবাক হয়ে দুজনকে দেখছে।তার বিশ্বাস হচ্ছে না সে বাবা হয়েছে।এ যেনো এক অন্যরকম সুখানুভব।

রাহিমা বেগম ইয়াশের কাছে গিয়ে একজনকে কোলে নেয়।

রিশাদ সাহেব নাতি নাতনির মুখ দেখে বলেন,,
“মাশাল্লাহ। ”

ইয়াশ দু’জনের কানে আজান দেয়। আনিশার কথা এ নিয়ে ১৫ বার জিজ্ঞেস করেছে নার্সকে বাবু দেওয়ার পর। ২বার বের হয়েছে নার্স আর ২বারই জিজ্ঞেস করেছে।নার্স একই কথা বলেছে “আপনার ওয়াইফ ভালো আছেন।কিছুক্ষণ পর বেডে দেওয়া হবে তখন কথা বলতে পারবেন।”

আনিশাকে বেডে দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই জ্ঞান ফেরে ওর।আনিশার পাশে বাবুদের রেখে সবাই বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে।ইয়াশ থেকে যায়।

ইয়াশ আনিশার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে বলে,,

“ধন্যবাদ ওয়াইফি আমাকে পূর্ন করে দেওয়ার জন্য।”

আনিশা উত্তরে মিষ্টি হাসে। বলে,,

“আজ যদি আমার কিছু হয়ে যেতো তাহলে ওদের আপনার একা মানুষ করতে হতো।”

“হুসস এসব বলবে না।কিছু হবে না।অনেক বাধা পেরিয়ে এক হয়েছি আমরা।আল্লাহ আমাদের আলাদা করবেন না। #তোমাতেই_সীমাবদ্ধ_আমি। তোমার কিছু হতেই পারে না। এমন কথা আর বলবে না।”

আনিশা কিছু বলেনা।ইয়াশ বাবুদের সাথে খেলছেে।
আনিশা মন ভরে দেখছে।এ যেন নতুন এক ইয়াশ।
এখন থেকে হেসে খেলে আনন্দে কাটবে ওদের জীবন। অনেক বাধা পেরিয়ে এক হয়েছে ওরা।আবারো হয়তো কোনো গল্পে ওদের দেখা মিলবে নতুন রুপে।
ততদিন সবাই ভালো থাকবেন।
ওদের জন্য দোয়া করবেন।

_______________সমাপ্ত_________________

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে