#তোমাতেই সীমাবদ্ধ আমি
#লেখনীতে:মাইশা চৌধুরী
(১৩)
পরেরদিন সকালে,,
ইয়াশ এখন আগের থেকে অনেকটা ভালো আছে।ইরফান ইয়াশের সাথে আছে।ইয়াশের জ্ঞান ফিরলে ঘুমের মেডিসিন দেওয়া হয় তাই ও এখনো কাউকে দেখেনি।
আনিশা বসে আছে পাশে ওর আম্মু। ইয়াশের মা এবারো মূর্ছা গিয়েছেন আদরের ছোট ছেলেকে এই অবস্থায় দেখে।তার পাশেই রিশাদ সাহেব নাক মুখ কুঁচকে বসে আছেন।ইরফান মায়ের কেবিনে এসে বাবাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে বিচলিত কন্ঠ বলে,
“কি হয়েছে বাবা? কোনো অসুবিধা?এভাবে মন খারাপ করে বসে আছো যে?”
রিশাদ সাহেব ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলেন।ঝাঁঝালো কন্ঠে বললেন,,
“তোমরা আমাকে শান্তি দিবে না বলে ঠিক করেছো হ/ত/চ্ছা/ড়া গুলো।।তুমি হারিয়ে গেলে, তারপর তোমার ভাই এমন করল,এখন তোমার মা মূর্ছা গিয়েছে।আমি কেনো এখনো সুস্থ আছি বুঝতে পারছিনা?”
ইরফান বুঝলো আবহাওয়া ভালোনা।কিছু করতে হবে।ইরফান বাবাকে তেল দিতে বলল,,
“আব্বু তুমি হলে ইয়াং। তুমি আমাদের থেকেও শক্তিশালি।আর তাই এখনো ভালো আছো।।”
“হ/ত/চ্ছা/ড়া বের হ এখান থেকে।আর তোর ভাইয়ের জ্ঞান ফিরলে ডাকবি আমায় একটা থা/প্প/ড় দেবো।আমার হার্টের প্রবলেম বাধানোর জন্য কাহিনী শুরু করেছে সব।”
ইরফান চুপিসারে বেরিয়ে এলো।বাবার মেজাজ সেই লেভেলের খারাপ।কিছু বললেই ছ্যাত করে উঠছেন।কাল অবদি চুপসে ছিলো।যেই ভোর রাতে শুনেছে ইয়াশ ভালো আছে।ব্যাস আগের ফর্মে ফিরেছেন।
এদিকে মুখ কাঁদো কাঁদো করে ইয়াশের পাশে বসে আছে আনিশা।ইয়সশের জ্ঞান ফিরতেই চোখ পিটপিট করে তাকায়।আনিশাকে দেখে কপাল কুচকে তাকিয়ে আছে।আনিশা ইয়াশের জ্ঞান ফিরতে দেখে ডক্টরকে ডাকে।
ডক্টর ইয়াশকে চেকআপ করে চলে যায়।ইরফান,আনিশা,আনিশার বাবা, রিশাদ সাহেব এখন ইয়াশের কেবিনে উপস্থিত। আনিশা ইয়াশের মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করল,,
“কেমন লাগছে এখন তোমার?”
“কে আপনি?”
ইয়াশের প্রশ্নে সকলের কপালে ভাজ পড়লো।
” তুমি আমায় চিনতে পারছো না?”
“আব্বু দেখো এই মহিলা আমায় তুমি করে বলছে।”
আনিশার মুখ কাঁদো কাঁদো হয়ে গেছে।
রিশাদ সাহেব বুঝতে পারছেন না তার ছেলে কেনো নিজের বউকে চিনতে পারছে না তাজ্জব ব্যাপার!
ইরফান ডক্টরকে ডেকে আনলো।ডক্টর জানালো,,
“ওনার মাথায় আঘাত লেগেছে। আর তাই মেমোরি লস হয়েছে।যাকে বলে শর্ট টাইম মেমোরি লস।রিসেন্ট হওয়া বিষয়গুলো উনি ভুলে গেছেন।”
বলে ডক্টর রুম থেকে বেরিয়ে যায়।রিশাদ হাসেব মাথায় হাত দিয়ে কেবিনে থাকা সোফায় বসে পড়েন।
ইরফান কি বলবে ভাবছে।কারন তার মা এ কথা শুনলে আবারো জ্ঞান হারাবেন।
আনিশা আর পারলো না শব্দ করে কেঁদে উঠলো।রিফাত সাহেব মেয়েকে শান্তনা দিচ্ছেন।আর ইয়াশ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
আনিশা কাঁদতে কাঁদতে বলছে,,
“এটা কেমন কথা বাবা! বিয়ের পর ৬ মাস সংসারই করতে পারলাম না।এখন সবটা ঠিক হলো আর উনি এভাবে সব ভুলে গেলো!।”
ইয়াশ রিশাদ সাহেবের দিলে তাকিয়ে বলে,,
“বাবা এই মহিলাকে যেতে বলো ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদছে শুধু।আমার রাগ লাগে মেয়েদের ন্যাকা কান্না দেখলে।”
আনিশা কান্না থামিয়ে বলল,,
“আপনি আমায় মহিলা বলছেন কেনো? আমি এখনো মহিলা হইনি।আর নিজের বউকে চিনেন না! আর কি দেখতে হবে আমায়?এই জন্য বিয়ে করতে চাইনি।”
ইয়াশ ভাবুক ভঙ্গিতে বলল,,
“আমি আপনাকে বিয়ে করিনি তো।”
আনিশা এবারো জোড়েই কেঁদে উঠলো।ইরফান কি করবে ভাবছে।কারণ এর মধ্যে নার্স এসে বলে গেছে রাহিমা বেগমের জ্ঞান ফিরেছে এবং সে ইয়াশের সাথে দেখা করতে চায়।
রিশাদ সাহেবের পাশে গিয়ে ইরফান বলল,,
“বাবা আম্মুর জ্ঞান ফিরেছে।”
রিশাদ সাহেব অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালেন ছেলের দিকে।যেনো সে এক অদ্ভুত কথা বলেছে।হঠাৎ ই ইয়াশ বলল,,
“আম্মু। ”
সকলের দৃষ্টি এখন রাহিমা বেগমের দিকে।
রাহিমা বেগম ইয়াশের কাছে এসে ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন।ইয়াশ ও মাকে জড়িয়ে ধরে।রাহিমা বেহম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন,,
“আমাকে মাফ করে দে বাবা অনেক কথা বলেছি।আমি ভুলেই গিয়েছিলাম তোরা ২জনই যে আমার কলিজার টুকলো।তোদের কারোর কিছু হলে যে আমার বুকে এসে লাগে।”
“আম্মু এমনভাবে বলছো কেনো?”
ইয়াশ আর রাহিমা বেগম কথা বলছেন। রিশাদ সাহেব ইরফানের হাত ধরে নিচু করে কানে কানে বলেন,,
“একটা চেয়ারের ব্যবস্থা করো তোমার মায়ের বসার জন্য।”
“কেনো আব্বু?আম্মুতো ভাইয়ার বেডের পাশেই বসে আছে।পড়ে এখানে এসে বসবে।চেয়ার লাগবে না।”
“ওরে হ/ত/চ্ছা/ড়া…”
আর বলতে পারলেন না তার আগেই সোরগোল শুরু হলো রাহিমা বেগম আবারো মূর্ছা গেছেন।ছেলে তার বউকে চিনতে পারছে না।এমনকি তাকেও সন্দেহ করছে।সে নাকি আগের থেকে শুকিয়ে গেছে।তাই সে তার মা কি না এটা নিয়ে ইয়াশ সন্দেহ করছে।
রাহিমা বেগম এই শক নিতে পারেননি তাই আবারো মূর্ছা গেলো।
ইরফান অসহায় ভাবে বাবার দিকে তাকালো।রিশাদ সাহেব ঝাঁজালো কন্ঠে বলেন,,
“বলে ছিলাম না আমি।”
_______________________________
১৫ দিন পর।
আজ ইয়াশকে বাসায় আনা হয়েছে।সবই ঠিকঠাক। তবে রাহিমা বেগম মুখ ভার করে আনিশাকে নিয়ে ড্রইং রুমে বসে আছেন।আনিশাও ভাবছে এ কেমন জামাই হলো তার! নিজের বউকে ভুলে গেলো কি সাঙ্ঘাতিক কথা!
ইয়াশ এসে রুমে গিয়ে দরজা দিয়েছে।রিশাদ সাহেব মনোযোগ দিয়ে পেপার পড়ছেন।ইরফান কফির মগ হাতে নিয়ে গার্ডেনের দিক থেকে আসতেই সবাই এভাবে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে ফে/লে।
“আম্মু!ভাবী?”
কেউ কোনো জবাব দেয় না।রিশাদ সাহেব বলেন,,
“বাড়িটা সার্কাস হয়ে গেছে।এখন আরও কি কি দেখবো কে জানে?”
ইরফানের হাসি পেলো তবুও কন্ট্রোল করল।রাহিমা বেগম বললেন,,
“তুমি এসব রাখো। আমার কথা হলো ডক্টরটকে কেনো কিছু বললে না?ওই ডক্টর কিছু করেছে।নাহলে আমার ওমন ভোলাভালা ছেলে এভাবে বউ আর মাকে কেনো ভুলবে?”
“তোমার কি মনে হয় ইয়াশের মা আমি কোনো ষ/ড়/য/ন্ত্র করেছি? ”
“করতেই পারো।ছেলে মা পাগল কি না তোমার তো সহ্য হয়না।তাই বলে এই মাসুম বউমাটার কথা ভাব্বে না?”
ইরফান কপাল চাপড়ালো।কেনো এসে কথা বলল? এখন এরা ঝগড়া শুরু করে দিয়েছে।
যদিও ভালই লাগছে বাড়িটা আগের মতো হয়ে গেছে।
বিকেল ৫টা।
ইয়াশ ঘুম থেকে উঠে এসে দেখে সবাই ঘুম।আনিশা সোফায় বসে মুভি দেখছে।ইয়াশ এসে ওকে বলে,,
“এই যে আপু আমায় খাবার বেড়ে দিন তো।”
আনিশা একবার ইয়াশের দিকে তাকালো।তারপর পাশে রাখা নিজের ফোন স্ক্রিনে নিজেকে একবার দেখে
নিলো। নাহ তাকে তো আপু বা মহিলা এমনটা লাগছে না।তাহলে কেনো ইয়াশ তাকে বার বার এমন করে বলছে?দুঃখি দুঃখি মুখ নিয়ে গেলো খাবার গরম করতে।
ইয়াশ খাচ্ছে আনিশা পাশে বসে আছে।একটু পর পর নাক টেনে কান্না করছে।ইয়াশ খাওয়া রেখে আনিশার দিকে তাকিয়ে বলল,,
“আপনি কি ছ্যা/কা খেয়েছেন আপু?আপনার বয়ফ্রেন্ড আপনাকে ছেড়ে গেছে?তাই এভাবে কাঁদছেন?”
আনিশা ছ্যাত করে উঠলো ইয়াশের কথায়।
“লজ্জা লাগে না হ্যা?নিজের বউকে চিনেন না?”
“আমি বিয়ে করিনি তো।আর যদি আপনি আমার বউ হতেন তুমি করে বলতেন আপনি না তাই না।”
“কি খা/চ্ছোর আপনি🙂।হসপিটালে তুমি বলেছিলাম বলে কম কথা শোনান নি।আমি বুঝে গেছি আমাকে দিয়ে সংসার হবে না।”
আনিশা উঠে চলে গেলো।ইয়াশ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,,
“নারী মানেই এক অদ্ভুত চরিত্র। আমি ভালো কথা বলেছিলাম আর আমাকেই ঝাড়ি দিলো! ভালো মানুষের দাম নেই সমাজে।”
বলে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো ইয়াশ।
______________________
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে যে যার রুমে ঘুমাতে গেছে।আনিশাও ইয়াশের রুমে এসে কাবাড থেকে একটা গোলাপি রঙের ২পিস নিয়ে চেঞ্জ করতে গেলো।ইয়াশ বারান্দায় তখন।
চেঞ্জ করে এসে দেখে ইয়াশ সুয়ে পরেছে।আনিশা লাইট অফ করে ইয়াশের পাশে গিয়ে সুয়ে পরে।
রাত প্রায় সাড়ে তিনটের কাছাকাছি তখন এক চিৎকারে লাফিয়ে উঠে আনিশা।ইয়াশ অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।আনিশা জিজ্ঞেস করে,,
“কি হয়েছে?চেচাচ্ছেন কেনো এতো রাতে?”
“আপনি তো আপু সুবিধার না! এতো রাতে আমার রুমে কেন?আমার সব কেড়ে নিতে এসেছেন?ছি ছি পুরুষ নির্যাতন আইন নেই বলে এভাবে আপনি আমার রুমে আসবেন!”
আনিশা তবদা খেয়ে গেছে ইয়াশের কথা শুনে।এটা কি বলল এই লোক।আনিশা বলে,,
“আপনি তো আচ্ছা ব/দ লেক হ্যা।বউ আমি আপনার এসব আপবাদ একদম দিবেন না।আর যদি একটা আওয়াজ ও করেছেন তো সত্যি আপনার সব কেড়ে নিবো ব/দ লেক একটা।ঘুমান।”
আনিশা কথা গুলো বলে পাশ ফিরে সুয়ে পড়ে।ইয়াশ মনে মনে বলে,,
“মেয়ে মানুষ ভালোনা কথায় কথায় ছ্যাত করে উঠে হুহ।”
ঘুমিয়ে পড়ে ও।
পরেরদিন সকাল ৯টা বাজে।আনিশা দরজার পাশে ওয়েট করছে কখন ইয়াশ বাসায় ঢুকবে আর ও হাতে থাকা লাঠি দিয়ে ওর মাথায় বারি দিবে।আনিশা শুনেছে আঘাত লাগা স্থানে আবারো আঘাত পেলে সৃতি ফিরে আসার সম্ভবনা আছে।ইয়াশ ৭টায় উঠে জগিং করতে গিয়েছে।ফেয়রার সময় প্রায় হয়ে গেলো।
আনিশা দরজার বাহিরে উকি গিয়ে দেখলো একটা ছায়া এদিকেই আসছে।আনিশা বিসমিল্লাহ বলে দিলো এক বারি।তারপর যা দেখলো তাতে ওর মাথা ঘুরে উঠলো 🙂🙂।
চলবে…!!