তোমাকে_চাই(Season_3)পার্ট:-৭+৮
#আরবি_আরভী
#Part_7
খুব খুশি ছিলাম ঐদিন।।সপ্ন যেন বাস্তব হয়ে গেলো আমার।।
বিয়ের কিছুদিন পর আমাদের সব আত্মীয় রেহানের বন্ধু সবাইকে দাওয়াত দেয়া হলো,,, চাচী জানেন যে আমি রান্না করতে পারি না তাই ইচ্ছা করেই রান্নার ভারটা আমার উপর দিলেন,,,,।।
কি আর করার বাধ্য হয়ে রান্না ঘরে ঢুকে আছি।।আমি কিছুই পারি না কি করবো মাথায় আসছে না।। কান্না পাচ্ছে অনেক এত্তগুলো মানুষ আসবে আমি কিভাবে কি করবো,,।। সায়মা খালা (কাজের লোক) অন্যসব কাজ করছে চাচী উনাকে আমার কাজে কোনো সাহায্য করতে নিষেধ করেছেন,,, তাই উনিও নেই।।
আমি জানালার ধারে এসে দাড়িয়ে মুখে নখ কাটিয়ে ভাবছি কি করা যায় এমন সময় রেহান এসে কানের কাছে বিস্তর এক শব্দ করলেন যেন আমি ভয় পেয়ে যাই।। আমি আতকে উঠে পেছনে ফিরে উনাকে দেখে কেদেই ফেললাম,,,
-কি হয়েছে নিসা কাদছিস কেন,,,
-আমি রান্না করতে পারি না আআআহা,,,,
-আহারে,,,
-প্লিজ হেল্প তা না হলে চাচী অনেক বকা দিবে,,
-আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে আমি সাহায্য করছি প্লিজ কান্না অফ কর,, আর আমি তো অনেকবার রান্না করেছি।। সবাই অনেক প্রসংশাও করেছে।। যদি একবার আমার হাতের রান্না খেয়ে নাও তাহলে সারাজীবন হাত চাটতে থাকবি বুঝেছিস,,
-সত্যি,
-হুম
তারপর দুজন মিলে কাজ শুরু করলাম,, উনি গ্যাসের কাছে গিয়ে এদিক সেদিক দেখছেন মনে হচ্ছে উনি এটা পর্যবেক্ষণ করছেন,,,, অনেকক্ষন পর উনি বিরক্ত হয়ে রেগে আমাকে জিজ্ঞাসা করেই ফেললেন,,
-ধুর এটা কিভাবে অন হয় জানিস তুই,,
মাথায় আকাশটা ভেঙে পরলো।। যিনি গ্যাস কিভাবে অন হয় এটাই জানেন না উনি আবার রান্নায় বেশ পারদর্শী।। আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি,,,
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
-আসলে নিসা না মানে,,,,i am sorry আমি পারি না,,
-এখন কি হবে?
-রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার নিয়ে আসলে কেমন হয়,,
-চাচী যদি একবার জানতে পারে,,,
-জানতে পারবে না তুই জাস্ট এখানেই থাকবি কোথাও যাবি না আমি আসছি,,,,
তারপর ম্যানেজ হয়ে গেলো সব সমস্যা।। রেহান রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার এনে সবার মুখে আমার প্রসংশার মালা গেঁথে দিলেন।। ভাগ্য ভালো কেউ কিছু বুঝতে পারেন নি।। কিন্তু রেহান আমাকে জানিয়ে দিলেন আমি যেন খুব তাড়াতাড়ি রান্নাটা শিখে নেই।।
কেটে গেলো একটি মাস রেহান ফাইনার পরীক্ষা শেষ করে উনাদের কম্পানিতে যোগ দেন।। আর রোজ অফিস থেকে আসার সময় আমার৷ জন্য কিছু না কিছু নিয়ে আসেন যেমন আইস্ক্রিম, চকলেট, ফুল, এগুলো।।। এদিকে চাচীও জানিয়ে দিলেন উনার একজন সাহায্যকারী প্রয়োজন।। ছেলে তো আর বউকে সারাজীবন পড়াশোনার জন্য করানোর জন্য বিয়ে করেনি।। বউয়ের কিছু দায়িত্ব কর্তব্য থাকে,,।। ইদানিং ভার্সিটি থেকে এসেই কথাগুলো শুনতে হতো আমায়।। বিষয়টা রেহানকে জানালে,,,,
-আম্মুর কথায় কান দেয়ার দরকার নেই ঠিকভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যা,,,
বলাটা সহজ কিন্তু করাটা খুব কঠিন।। আর সহ্য হচ্ছিলো না তাই নিজের সপ্নটাকে দাফন করলাম,, ভার্সিটি যাওয়া বন্ধ করে দিলাম,,,,,ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছি হঠাৎ দেখলাম নিচের ফ্লেটের ভাবীর এক আত্মীয় এসেছে,,,, অনেক মালপত্র নিয়ে এসেছে দেখছি অনেক দিন থাকবেন হয়তো মেয়েটাও দেখতে নায়িকাদের মতো আর ঢংগীও বটে ,,,, যাইহোক নিচ থেকে ভাবী আমাকে দেখে ডাক দিয়ে বললেন,,,
-নিসা কেমন আছ,,
-ভালো আপনি কেমন আছেন সিমি কোথায়,,,
-স্কুলে,,,,, আজকে আমাদের বাড়িতে এসো আমার বোন এসেছে,,,
-আচ্ছা,,
রাত দশটা বাজে রেহান এখনও আসছেন না।।ফোনটাও ধরছেন না।। লজ্জায় চাচ্চুকেও কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারছি না।। তাই আমিই নিচে গিয়ে উনার জন্য অপেক্ষা করছি।। কিছুক্ষন পর রেহানের গাড়িটা দেখে খুব রাগ হলো,,, রেহান গাড়ি পার্কিং করে হাতে একগুচ্ছ ফুল নিয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছেন আমি দাঁতে দাঁত চিবিয়ে উনার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছি,,,, কলগুলো তো রিসিভ করতে পারতো অন্তত ,,,উনি পৈশাচিক হাসি দিয়ে বলতে শুরু করলেন,,
-কাজের অনেক চাপ ছিল,,,,, sorry জান
আমি উনার কাছে এসে ফুলগুলোর উপর টর্নেডো চালিয়ে,, রেগে বলতে লাগলাম,,
-টেনশনে মাথাটা ফেটে যাচ্ছিলো আর এখানে ফুল নিয়ে আসছে সরি বলতে,,,চাই না আমার কিছু।। ভালোবাসলে এমন করতেন না ,, (চোখের পানি ফেলে)
-আর কিছু,,,,,, রাগলে তোমাকে হেব্বি লাগে জান,,
আমি কাদছি আর উনি হাসছেন।। আমি বলেই যাচ্ছি।। । উনি আমাকে শান্ত করতে খুব জোরে জড়িয়ে ধরে আছেন আর আমি উনাকে সরাতে চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না,,, কিছুক্ষন পর কিছুটা শান্ত হলে উনি আমার মুখটা উপর করে চুলগুলো মুখ থেকে সরিয়ে বললেন,,,
-sorry আর এমন হবে না,
-এমন আর কখনই করবেন না প্লিজ আমি অনেক কষ্ট পাই,,
-হুম,,
তারপর উনি আমার ঠোঁটগুলোতে বেশ কয়েকটা চুমু খেলেন।। হালকা মৃদু বাতাসে এমন অনুভূতি নিজেকে উনার মাঝেই খুজে পাচ্ছি এমন সময় কোথা থেকে যেন একটা হাসির আওয়াজ বেসে আসছে ,,, আমি আর রেহান আতকে উঠে তাকিয়ে দেখি,,, নিচের ফ্লেটের সেই ভাবীর বোন বারান্দা থেকে আমাদের দেখে হাসছে হাতে একটা আইস্ক্রিমের বাটি,,,, আজব এত্ত বড় একটা মেয়ে এমন আচরন ,,, রুম থেকে ওকে কেউ ডাকলো,,,
-টুশি খেতে আয়,,
-আসছি আপু,,
তারপর মিটমিটিয়ে হেসে দৌড়ে চলে গেলো।। আমি আর রেহান দুজন দুজনার দিকে তাকিয়ে ভেবাচেকা খেয়ে আছি,,
চলবে
#তোমাকে_চাই (Season_3)
#আরবি_আরভী
#Part_8
তারপর মিটমিটিয়ে হেসে দৌড়ে চলে গেলো।। আমি আর রেহান দুজন দুজনার দিকে তাকিয়ে ভেবাচেকা খেয়ে আছি,,।।
সকালে ছাদে কাপড় শুকাতে দিতে গিয়ে দেখি টুশি আপু ছাদে দাড়িয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছেন।।। আমি উনাকে না দেখার ভান করে চলে আসছিলাম কিন্তু তার ডাকে আবার দাড়িয়ে যাই,,
-এই দাঁড়াও,,
-জ্বি বলেন,
-আচ্ছা কালকে যে ছেলেটার সাথে কথা বলছিলে উনি কি তোমার বফ,,
-হ্যা (বিরক্তি ভাব নিয়ে)
তারপর বাসায় চলে আসি।।তার কি রেহান আমার কি হয় তা জানার।। আজব মানুষ সব।।
রাতে সাব্বির ভাইয়ার এনগেজমেন্টে আমাকে আর রেহানকে বিশেষভাবে ইনভাইট করা হয়।।। আমি একদম যেতে চাচ্ছিলাম না কিন্তু রেহান জোর করে নিয়ে গেলো,,,।।আমি নীল একটা শাড়ি সাথে হাতে লাল চুড়ি পরেছি আর ডেভিলটা নীল পাঞ্জাবি আর চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করা।। খুব সুন্দর লাগছে উনাকে।। যতবার দেখছি ততবার নতুন করে ফিদা হচ্ছি।।যেকোনো মেয়েই হবে আল্লাহ নিজ হাতে উনাকে বানিয়েছেন।। আমি মুগ্ধ হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি উনি তা বুঝতে পেরে এক তুড়িতে আমাকে কল্পনার জগৎ থেকে ফিরিয়ে এনে বলতে লাগলেন,,
-এমন করে কি দেছ জান,,
-আপনাকে কতটা বাজে লাগছে তাই দেখছি জান,,,
-What,,
-হুমম
-ওকে তাহলে পাল্টে আসি,,
-আরে না না এটাই ঠিক আছে,,, না মানে দেরি হয়ে যাবে তো,,,,,,(লুকিয়ে মুচকি হেসে)
সাব্বিরের বাড়ি গিয়ে কনের সাথে বসে আছি মানুষের হৈচৈ।। ডেভিলটা নিমিষে কোথা যেন চলে গেলো।।আমার সাথে তো কোনো কথাই বলছেন না।। সাব্বির কিন্তু আমাকে ঠিকই নজরে নজরে রাখছেন সুযোগ পেলেই আড়চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছেন।। উউফফফ অসহ্য লাগছে।।এক পর্যায়ে সবাই মিলে ডিনার শেষে করে এনগেজিংটাও সেরে ফেললো,,, য়ারপর ডেভিলটা বাড়ি ফিরার জন্য তাড়া শুরু করলে আন্টি আমাকে কিছুতেই ছাড়ছেন না।। তাই উনাকে আমার জন্য নিচে একটু অপেক্ষা করতে বললাম।। আসলে আমারও ভালো লাগছিলো না কিন্তু মুরুব্বি মানুষ কি আর করার।।
গল্প শেষে চলেই আসছিলাম হঠাৎ একটা বৃদ্ধ এসে আমাকে বলল রেহান নাকি আমার জন্য ছাদে অপেক্ষা করছেন , আমি এখানের ছাদ চিনি না তাই উনি আমাকে নিয়ে গেলেন,।। ছাদে গিয়ে দেখি একটা লোক পেছন ফিরে আছেন,,,,, কোনো এংগেলে রেহানের মতো লাগছে না।। তবুও নিশ্চিত হতে হবে।। তাই আমি কাছে গিয়ে বলে উঠলাম,,
-কে,,
হাসতে হাসতে সাব্বির ভাই পাশ ফিরলেন,,,,
-নিসা তোমাকে খুব হট লাগছে নীল শাড়িতে,,,
-আপনার কি লজ্জা নেই রেহান কোথায়,,
-রেহান এখানে নেই তুমি আমাকে না বলে চলে যাচ্ছিলে তাই ডেকে আনলাম,,,
-ছ্বি আপনে এতটা নিচ রেহানকে বললে সে আপনাকে আলোর ভর্তা বানিয়ে ফেলবে,,,,
কথাটা বলে দৌড়ে চলে এসে দেখি রেহান গাড়ির কাছে আমার জন্য অপেক্ষা করছে।। আমি উনার কাছে এসে বলে উঠলাম
-তাড়াতাড়ি চলেন,,,
-নিসা,,
-হুম,(থেমে গিয়ে)
-আজকে তোকে খুব হট লাগছে,,, আচ্ছা এতক্ষন কোথায় ছিলি বলতো,,
-আপনারা এগুলো ছাড়া আর কিছু বলতে পারেন না,,,
-মানে
-জাহান্নামের চৌরাস্তায় ছিলাম,,,
রেহান কিছুই বুঝতে পারছেন না।। আমি বা কি করবো রাগটা কন্ট্রোল করতে পারিনি।। শয়তান সাব্বিরটার জন্য এমন হয়েছে,,
গাড়িতে সারা পথ উনার দিকে তাকিয়ে আছি ।। কিন্তু উনি একবারো দেখেননি।। গম্ভীর হয়ে বসে আছেন,,, রেগে আছেন হয়তো।। ।।। খুব রাত হয়ে গিয়েছিল রাস্তায় দু একটা দোকান খোলা হঠাৎ নজরে পরলো ফুচকা দোকান।। আমি রেহানের হাত ধরে চেচিয়ে বলতে থাকলাম,,,,
-প্লিজ প্লিজ প্লিজ চলেন খাবো,,,
-কি,,
-ফুচকা,,
-ইয়াক নেভার এভার,,
-আমি কিন্তু কান্না করবো প্লিজ রফিক ভাই (ড্রাইভার) একটু থামান,,
-এই না তুমি চল,, এত রাতে ফুচকা খাবে মাথা খারাপ,,
-আআআআআআহাহাহা,,,, (কান্নার ভাবন করছি)
শেষমেষ রেহান বাধ্য হয়ে বিরক্ত লুক নিয়ে মাঝ রাতে আমার সাথে ফুচকা দোকানে,,,,।।উনার সামনে ফুচকার প্লেট নেয়া যাচ্ছে না।। ঢং।। আমি খাচ্ছি আর উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।। আমি রীতিমতো ৩প্লেট শেষ করে ফেলেছি।। আরেকটা নিবো এমন সময় উনি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,,
-আর খেও না শরীরর খারাপ করবে,,,
– আর এক প্লেট প্লিজ,,
-না আর এক প্লেটও না,,
-প্লিজ,,
-আমার কাছে টাকা নেই,,
-বিশ্বাস করি না,,
-ধ্যাৎ
এই বলে রেহান দোকানদারকে ৫শত টাকা দিলেন,, সে বলল,,
-খুচরা দেন স্যার,,,
-পুরোটা রেখে দাও,,,,,।।
তারপর আমার হাত ধরে সেখান থেকে নিয়ে এলো।।
হঠাৎ আমার প্রচন্ড পেট ব্যাথা আর বমি পেলে ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে দেন,,,,,অনেক ঝাল ছিলো ফুচকাগুলো আর একটু বেশি খেয়ে ফেলেছিলাম তাই এমনটা হয়েছে।। কিন্তু রেহানের কোনো পড়ুয়া নেই।। উনি গাড়ির সাথে এলিয়ে দিব্বি সিগারেট খেয়ে যাচ্ছেন আর আমি রাস্তার এক কোনায় পড়ে আছি।।।
কিছুক্ষণ পর উনার কাছে গিয়ে উনার হাত থেকে সিগারেটটা ফেলে বলালাম
-সিগারেট স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না,,,
-তোর ন্যাকামি কি শেষ হয়েছে,,,,(রেগে)
-বাচ্চা হলে তো বমি করবো তখনও কি আপনে এটাকে ন্যাকামি বলবেন,,
উনি এক মায়াবী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন কিন্তু কিছু বলেন নি।।শরীরটা বড্ড খারাপ লাগছে তাই গাড়িতেই ঘুমিয়ে গেছি।। কিন্তু জেগে নিজেকে উনার কাধে আবিষ্কার করলাম,,,।।
বাসায় এসে দুজনই চুপচাপ।। একবার তাকাচ্ছি তো আরেকবার চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছি।।
(চলবে)