তোমাকে বলার ছিল….
উনবিংশ পর্ব
তৃণার টাকা-পয়সার খুব টানাটানি চলছে I মাসের 5 তারিখ হয়ে গেছে অথচ আন্টি এখনো টিউশনির টাকাটা বিকাশ করেন নি I মোটামুটি এই টাকা দিয়েই চলতে হয় ওকে I দুদিন হয়ে গেছে ফ্লেক্সিলোড করিয়েছে ক্যান্টিন থেকে অথচ এখনও সেই টাকাটা শোধ করা হয়নি I বলেছিল পরদিনই দিয়ে দেবে I ভীষণ লজ্জা করছে এখন I তপতীর কাছ থেকে 200 টাকা ধার নিয়ে তৃণা ডিপার্টমেন্টের উদ্দেশ্যে রওনা হলো I
– আরে তৃণা I ডিপার্টমেন্টে যাচ্ছ নাকি ? রিক্সায় উঠে এসো I
সকাল সকাল ইরাজ কে দেখে তৃণার মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল I ও বলল
– না আমি হেঁটে যাবো I আপনি চলে যান I
রিকশাভাড়া মিটিয়ে দিয়ে ইরাজ তৃণার পাশাপাশি হাঁটতে লাগলো I তৃণা পাশ ফিরে তাকিয়ে বলল
– সমস্যা কি আপনার ?
– সমস্যা আমার না সমস্যা তোমার I তোমার উপকার করতে গেলে তুমি অযথা ভাব দেখাও
– আমি আপনাকে বলেছি আমার উপকার করতে ?
-ইরাজ এমনি মানুষের উপকার করে কাউকে বলা লাগে না I
তৃণা জবাব দিল না I লম্বা লম্বা পা ফেলে হাঁটতে লাগলো I ইরাজ কাছাকাছি এসে বলল
– দৌড়াচ্ছ কেন ? যাই হোক ঢাকা থেকে তোমার এক্স এসেছিল I তোমার খোঁজ করছিল
– কে এসেছিল ?!!!
– তোমার এক্স-বয়ফ্রেন্ড I আমার কাছে তোমার ফোন নাম্বার চাইছিল I আমি বলেছি যে তুমি আর হলে থাকো না I তোমার কেমন উপকার করলাম বল I এজন্য অন্তত একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য আমার I
তৃণার মাথা কাজ করছে না I এই ছেলে কি বলছে এসব উল্টাপাল্টা I কে এসেছিল ? সুজন ? তারমানে ও জেনে গেছে তৃণা এখনো আছে I
– কি হতো ভাবছো ?
– কে এসেছিল বললেন ?
– তোমার এক্স-বয়ফ্রেন্ড I দাড়িটাড়ি রেখে তো একেবারে দেবদাস হয়ে গেছে
– ও আমার এক্স-বয়ফ্রেন্ড না
– তাহলে কি ?
– ও……
তৃণা হঠাৎ করে থেমে গেল I ওর মনে হলো এই ছেলেটা ইচ্ছা করে এসব বলে ওর কাছ থেকে কথা বার করতে চাইছে I
– আপনি ওকে বলছেন আমি আর হলে থাকি না ? আপনাকে মাতব্বরি করে এসব বলতে কে বলেছে ? নিজের কাজে কাজ রাখতে পারেন না আপনি ? শুধু অন্যের ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামানো ? যত্তসব I
– আরে ! তোমার উপকার করলাম আর তুমি …
– অসংখ্য ধন্যবাদ I দয়া করে আর আমার উপকার করার চেষ্টা করবেন না I
তৃণা রাগে গজগজ করতে করতে এগিয়ে গেল I একবার ও পিছন ফিরে তাকালো না I
ক্যান্টিনে ঢুকে তৃণা একটু অস্বস্তি নিয়ে কাউন্টারে গিয়ে বলল
– মামা আপনার টাকাটা I সরি একটু দেরি হয়ে গেল
– আপনার টাকা তো দেওয়া হয়ে গেছে
– কে দিয়েছে ? তৃণা অবাক হয়ে জানতে চাইল
– ঢাকা থেকে আপনার একজন আত্মীয় এসেছিল I উনি নিয়ে গেছে I বাকি টাকা ফেরত ও নেয় নি I এই নেন বাকি 300 টাকা I
তৃণা টাকা হাতে বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইল I সুজন এখান পর্যন্ত এসেছিল I অথচ ওর সঙ্গে দেখা হলো না ওই ফালতু ছেলের জন্য I না জানি আর ও কি উল্টাপাল্টা বলেছে I ইচ্ছা করছে থাপ্পর মেরে ছেলেটার সবগুলো দাঁত ফেলে দিতে I তৃণা ডিপার্টমেন্টে না গিয়ে পুকুর পাড়ে চলে গেল I ক্লাস করতে ইচ্ছা করছে না I প্রচন্ড মন খারাপ লাগছে I এত কাছে এল অথচ একবার দেখা হলো না I খুব ইচ্ছা করছিল একবার ওকে দেখতে I হিয়া বলছিল ওর অবস্থা ভালো না I অনেক শুকিয়ে গেছে I এমনিতে আগেই খেতে ভুলে যেত আর এখন জানি কি করছে I বাসা ও নাকি ছেড়ে দিয়েছে I কিচ্ছু ভালো লাগছেনা I ইচ্ছা করছে খুব দূরে কোথাও চলে যেতে I কেমন দম বন্ধ হয়ে আসছে I বিয়ের দিন সুজন বলেছিল
– চল আমরা কোথাও থেকে বেরিয়ে আসি I তোমার কি পছন্দ সমুদ্র না পাহাড় ?
– পাহাড়
– আশ্চর্য আমি ভেবেছিলাম তোমার সমুদ্র পছন্দ
– তোমার কি পছন্দ ? তৃণা জানতে চেয়েছিল
– আমার দুটোই ভালো লাগে I তুমি বলো কোথায় কোথায় যেতে চাও
– কোথাও না আমার এখানেই ভালো লাগছে
কেমন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগে এখন সেই দিনটা I মনে হয় না সত্যি সত্যি এমন কিছু হয়েছিল I
সুজনের সঙ্গে একবার কথা বলা দরকার I ও যখন একবার এসেছে তখন আবারো আসতে পারে I সবচেয়ে বড় কথা ও এখান থেকে তৃণার ফোন নাম্বার নিয়ে গেছে I আশ্চর্য ফোন নাম্বার নিয়ে গেছে অথচ একবারও ফোন করলো না I
সারাদিন পুকুর ঘাটে বসে রইল তৃণা I বিকেল গড়িয়ে গেলে হাঁটতে-হাঁটতে হলে ফিরল I ততক্ষনে ডাইনিং বন্ধ হয়ে গেছে I খেতে ইচ্ছে ও করছিল না I তৃণা দীর্ঘ সময় নিয়ে গোসল করলো I অনেকক্ষণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে রইল I রাত হয়ে গেছে I কয়টা বাজে দেখার জন্য ফোনটা বের করতেই তৃণা হতভম্ব হয়ে গেল I সুজন আজ ইমেইল করেনি ফোনে মেসেজ পাঠিয়েছে I এমনিতেই মনটা খারাপ ছিল সুজনের কবিতাটা পড়ে মনটা আরও খারাপ হয়ে গেলো I ও লিখেছে
বহুদিন ভালোবাসাহীন,
বহুদিন উথালপাথাল
বহুদিন কারো হাত পড়েনি কপালে
বহুদিন দুচোখের অশ্রু কেউ মোছায়নি আর;
বহুদিন দূর দ্বীপে বহুদিন একা নির্বাসনে
বহুদিন ভালোবাসাহীন, বহুদিন এলোমেলো।
বহুদিন বুকের ভেতরে এই খাঁ খাঁ গ্রীষ্মকাল
দীর্ঘ গুমোট
একবিন্দু জল কেউ দেয়নি সস্নেহে
বহুদিন কোনো হাত এই হাতে স্পর্শ করেনি,
বহুদিন শুষ্ক পড়ে আছে এই বুক।
বহুদিন ভালোবাসাহীন,
বহুদিন উথালপাথাল
তৃণা অনেকক্ষণ মন খারাপ করে বারান্দায় দাঁড়িয়ে রইল I তারপর ফোনটা বের করে সুজনকে ফোন দিল I সুজন ফোন রিসিভ করে খুব স্বাভাবিক গলায় বলল
– কেমন আছো তৃণা ?
তৃণা একটু কেঁপে উঠলো I শীতে না অনেকদিন পর ওর কণ্ঠস্বর শুনলো সেজন্য ঠিক বুঝলো না ও I হঠাৎ করে খুব কান্না পেল I সুজনকে ছেড়ে আসার পর থেকে এতদিনে একবারের জন্য কাদেনি ও I কিন্তু আজ আর পারল না
– তুমি কাঁদছো তৃণা ?
তৃণা নিজেকে সামলে নিয়ে বললো
– না
– তাইতো I আমার মত অপদার্থ লোকের জন্য কেন কাঁদবে তুমি ?
– চুপ করো I তুমি এখানে এসেছিল ?
– হ্যাঁ I তুমি কি সত্যি হল ছেড়ে দিয়েছো ?
– এখনো দেইনি I তবে তুমি যদি এভাবে এখানে আসো তাহলে ছেড়ে দিতে হবে
– হল ছেড়ে কোথায় উঠবে ?
– জানিনা I হয়তো ঢাকায় চলে যেতে হবে
– ঢাকায় থাকলে ক্লাস করবে কি করে ?
– এত কিছু ভাবি নি I করব যেভাবে সবাই করে
– না তুমি ওখানেই থাকো আমি আর আসব না I এখান থেকে বাসে যাতায়াত করো অনেক রিস্কি I এক্সিডেন্ট হতে পারে I
– তোমাকে কয়েকটা কথা বলব I রাখবে ?
– বল
– তুমি তোমার বাবা মায়ের কাছে ফিরে যাও I এভাবে নিজের জীবনটা নষ্ট করো না I আমি জানি তুমি ভালো নেই I
– আমার সঙ্গে একবার দেখা করবে তৃণা ?
– কেন ?
– একবার তোমাকে দেখতে চাই
– না
– প্লিজ I শুধু একবার দেখতে চাই , একবার বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরতে চাই
– একবার ধরলে ছাড়তে পারবে ?
– না পারবো না
– আমিও পারবো না I তাই দেখা না করাই ভালো I
********
সোনিয়া রহমান দেশে ফিরেছেন I তার শরীর এবং মন দুটোই খারাপ I দুমাসের উপর হয়ে গেছে ছেলেটা একদিনের জন্যও তার সাথে কথা বলেনি I ফোন করলে ধরে না I মেসেজের আনসার ও দেয় না I অগত্যা দেশে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন I দেশে ফিরে সুজনের বাড়িতেই উঠেছেন তিনি I উত্তরার বাড়িটা ভাড়া দেয়া I সুজনের ফ্ল্যাটটা খালি পড়ে আছে I সোনিয়া তিনতলাটা ভালো করে ঘুরে দেখলেন I মজিদ বেশ কাজের লোক I সব খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রেখেছে I খুব কৌতুহল নিয়ে সোনিয়া ছাদটা দেখল I এত সুন্দর করে রেনোভেশন করিয়েছে তার ছেলে I ওই মেয়েটার জন্য I মেয়েটার এলেম আছে বলতে হবে I ঐরকম সাদাসিধে একটা ছেলেকে এমন পটিয়ে ফেলল I সোনিয়া ঠিক করলেন এবার একটা হেস্তনেস্ত করেন ফিরবেন I এভাবে ছেলেটার জীবন নষ্ট করা যাবে না I দেখে শুনে একটা ভালো বিয়ে দিয়ে দিতে হবে I ওই মেয়ে যখন চলে গেছে তখন আর সম্পর্ক রেখে কি লাভ I
সোনিয়া একা এসেছেন I সুজনের বাবা আসতে পারেনি I নিচে নেমে এসে কফি বানাতে গিয়ে দেখলেন চিনি ফুরিয়ে গেছে I কাবার্ড খুলে দেখলেন আরো অনেক টুকিটাকি জিনিস লাগবে I সুজনের গাড়িটা এখানেই আছে I ফোন করে ড্রাইভারকে আসতে বলেছিলেন I কিছু টুকটাক কেনাকাটা কর দরকার I সবকিছু একসঙ্গে পাওয়া যাবে ভেবে নিউমার্কেটে চলে গেলেন I অনেক বছর পর এখানে এসে খুব ভালো লাগছে I পুরনো দিনের কথা মনে পড়ছে I কলেজে পড়ার সময় প্রতিদিন আসতেন এখানে I আজিমপুরে কলেজ ছিল তার I কেনাকাটা করতে করতে হঠাৎ পুরনো বান্ধবী তানিয়ার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল I তানিয়ার এসেছে ছেলের বিয়ের শপিং করতে I বহু বছর পর দেখা হওয়ায় দুজন একটা কফিশপে বসলেন I তানিয়ার এক ছেলে I ছেলের বিয়ের গল্প শুনতে শুনতে হঠাৎই মনটা খারাপ হয়ে গেল সোনিয়ার I এক কথা দুকথায় কি করে যেন নিজের ছেলের কথাটা বলে ফেললেন I তানিয়া অবাক হয়ে বললেন
– তোর ছেলে সুজন I সুজন মানে যার তৃণার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে ?
– তুই ওই মেয়েকে চিনিস ?
– চিনবো না কেন ? ও তো আমার ছেলের বউ হিয়ার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী I আমার ছেলে রাতিন আর হিয়া ওদের বিয়ের সাক্ষী ছিল I
– কি বলছিস ? ঐরকম একটা মেয়ে তোর ছেলের বৌয়ের বান্ধবী ?
– কারো ব্যাপারে না জেনে কথা বলা ঠিক না সোনিয়া I আমি মেয়েটার ব্যাপারে যতদূর শুনেছি মেয়েটা অসম্ভব ভালো I তুই চাইলে সুলতানার সঙ্গে কথা বলতে পারিস
– সুলতানা কে ?
– হিয়ার মা I তুই চাইলে আমি এখনি ফোন দিতে পারি
সোনিয়ার একটু কৌতূহল হল I তাই দেখা করতে উনি রাজি হয়ে গেলেন I ফোন করে জানা গেল সুলতানা কাছাকাছি আছেন I সুজনের মা আছে শুনে সুলতানা আর দেরি করলেন না I সব কাজ ফেলে চলে এলেন I
সুলতানা ভেবেছিলেন সুজনের মা কে এক চোট ধুয়ে দেবেন I কিন্তু ভদ্রমহিলার সঙ্গে কথা বলে খুব ভালো লেগে গেল তার I বোঝা গেল ইচ্ছে করেই তাদেরকে ভুল বোঝানো হয়েছে I তানিয়া এবং সুলতানা দুজনই অসম্ভব মিশুক এবং পরিষ্কার মনের I সুলতানের সঙ্গে কথা বলে সোনিয়ার মনে হলো সত্যিইতো এভাবে তো আগে ভেবে দেখা হয়নি কেন তাদেরকে ফোন করা হলো I কারাই বা ফোন করলো I সুলতানের কাছ থেকেই জানতে পারলেন I তৃণার বাবা-মায়ের বিয়েটা বেশিদিন টেকেনি I তৃণার জন্মের আগেই তার বাবা বাইরে চলে গেছেন I ওখানে বিয়ে করেছেন বলে হয়তো দেশের বিয়ের কথাটা চেপে গেছেন I সবচাইতে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে তৃণা বড় হয়েছে তার দাদী এবং চাচার কাছে I তার মায়ের অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেছে I তার মানে ওর বাবার পরিচয় নেই কথাটা সম্পূর্ণ মিথ্যা I যার সঙ্গে বিয়ে ভেঙেছে তারাই ইচ্ছা করে এই কাজটা করেছে I হঠাৎ ভীষণ অপরাধী মনে হলো নিজেকে সোনিয়ার I মেয়েটা ছোটবেলা থেকে এত কষ্ট করেছে তারপর উনারাও ওকে ভুল বুঝল I কী জানি কোথায় আছে I সোনিয়ার চোখে পানি এসে গেল I সুলতানা ওর হাত ধরে বলল
– যা হবার হয়ে গেছে চলেন এখন দুজনকে মিলিয়ে দেই
– কিন্তু ওকে কোথায় খুজে পাব I আর আমার ছেলেও তো আমার সঙ্গে কথা বলে না
– অত চিন্তা করবেন না একটা ব্যবস্থা ঠিক হয়ে যাবে
হিয়া আর রাতিনের বিয়েটা পিছিয়ে গেছে I ওর বাবা-মা এই মাসেই ফিরে যাবেন বলে 11 তারিখে বিয়ের ডেট ফিক্স হয়েছিল I শপিং ও চলছিল পুরোদমে I শপিং শেষে ফেরার সময় রাতিনের বাবা-মায়ের গাড়ির এক্সিডেন্ট হয় I ওর মা অক্ষত থাকলেও ওর বাবা পা ভেঙ্গে বসে আছেন I খুব গুরুতর কিছু না কিন্তু সারতে সময় লাগবে কয়েক মাস I বিয়ে তাই তিন মাস পিছিয়ে দেয়া হয়েছে I রাতিনের সেমিস্টার শুরু হতে যেহেতু আরো চার মাস বাকি তাই কথা ছিল বিয়ের পর বাবা-মা ফিরে যাবে আর তিন মাস পর সেমিস্টার শুরুর আগে রাতিন যাবে I
হিয়া এবং রাতিন দুজনেই খুব মন খারাপ করেছে I বিয়ের পর কোথায় কোথায় যাবে সেসব নিয়ে অনেক প্ল্যান ছিলো দুজনেরই I এভাবে বিয়েটা পিছিয়ে যাবে কেউ ভাবেনি I বিকেলের দিকে মন খারাপ করেই তৃণাকে ফোন দিল হিয়া I খবর শুনে তৃণা ও খুব মন খারাপ করলো I হিয়া বলল
– সামনে তো ছুটি তুই কদিন এখানে এসে থেকে যা না
তৃণা একটু দ্বিধা করছিল বলে ওকে আশ্বস্ত করে বলল
– আমিতো কথা রেখেছি কাউকে তোর কথা জানাইনি I মাকে ও বলিনি I মা জানলে তোর হলে গিয়ে হাজির হতো
– আচ্ছা ঠিক আছে সামনের সপ্তাহ থেকে তো ছুটি শুরু হচ্ছে সোমবার চলে আসবো
– ইয়াহু
হিয়ার উল্লাস দেখে তৃণা হেসে ফেললো I বলল
– তুই আর বদলালিনা
– একেবারেই না I আমি আর রাতিন এমন প্ল্যান করেছি যে বিয়ে পিছিয়ে ওরা যাবে কোথায় ?
সোমবার দুপুরের আগেই তৃণা পৌঁছে গেল হিয়াদের বাসায় I সুলতানা অসম্ভব খুশি হলেন ওকে দেখে I নিজ হাতে নানান পদ রান্না করে সামনে বসিয়ে খাওয়ালেন I সন্ধ্যার পর সুলতানা একটু কাজে বেরিয়ে গেলে হিয়া বলল
– চলো ছাদে যাই I আজ সারারাত গল্প করবো
হিয়াদের ছাদটা বেশ বড় তবে একটু অন্ধকার I তৃণাকে বসতে বলে হিয়া নিচে গেল চা আনতে I তৃণা রেলিং ধরে দাঁড়াল I রাতের ঢাকা শহর অনেকদিন পর দেখল এভাবে I হঠাৎই মনে হল কেউ পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে I তৃণা চমকে পেছনে ফিরে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে গেল I কোনমতে বলল
– এ কি অবস্থা হয়েছে তোমার ?
তোমাকে বলার ছিল….
উনবিংশ পর্ব
লেখনীতে
অনিমা হাসান