তোমাকে ঠিক চেয়ে নিবো পর্ব ০১
লেখা আশিকা জামান
” তোর ছোট ফুফুর ননদের মেয়ে স্নিগ্ধাকে তোর কেমন লাগে রে? ” জিহ্বা দিয়ে ঠোট ভিজাতে ভিজাতে রাহেলা বেগম ছেলেকে প্রশ্ন করলেন।
মায়েই প্রশ্ন শুনে ফোনের ওপাশ থেকেই চমকে উঠলো প্রহর। হেড মিস্ট্রেস রাহেলা বেগমতো এমনি এমনি কোন মেয়ের প্রসংগ ওর সামনে আনার মত মানুষ নন।
নিশ্চয়ই আবার আমাকে বিয়ে দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে । ইশ মাকে কি করে বুঝাই আমার এখন বিয়ে করার কোনই ইচ্ছে নেই। ইউনিভার্সিটিতে নেহাৎ ভালো রিজাল্ট করেছিলাম তাই লেকচারার হিসেবে জয়েন করতে পেরেছি। তাই বলে কি আমার এখনি বিয়ে করতে হবে? ভেবে পাইনা আমি! আমার বাকি ফ্রেন্ডগুলোতো এখনো হন্যে হয়ে চাকরী খুজছে ওরাতো আরো লেট করে বিয়ে করবে। কই ওদের মায়েরা তো আমার মায়ের মত প্রতিদিন ঘ্যানঘ্যান প্যানপ্যান করেনা বিয়ের জন্য। ইশ কেন যে এতোদিনেও কারো প্রেমে পড়তে পারলাম না কে জানে।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/
আমার ব্যাচের অরিন নামের মেয়েটাতো আমার প্রেমে পুরো হাবুডুবো ছিলো। দেখতেও সুন্দরি ছিলো কিন্তু কেন যে ওর প্রতি কোন ফিলিংস খুজে পেলাম না কে জানে? আমিতো মনে প্রাণে চাইছিলাম ওর প্রেমে পড়তে কিন্তু আফসোস আই হ্যাভ নো ইমোশন। বুকের ভেতর প্রেমের ঘন্টাটা কেন যে বাজলো না কে জানে?
আমার ব্যাচের সব ছেলেরাই একাধিকবার প্রেমে পড়েছে শুধু আমি ব্যাতিতো। আমি হয়তো একটু অন্যরকম। অন্য সবার মত ঘটা করে আমার কিছু হয়না।
“প্রহর, আমি একটা সাধারণ প্রশ্ন করেছি এর জন্য ৫ মিনিট ধরে কি এতো ভেবে যাচ্ছো?
তোমাদের দুই ভাই বোনের মাঝে এত মনযোগের অভাব আমাকে খুবই আহত করে। ”
কিছুটা উচ্চস্বরে কথাটা বলেই রাহেলা বেগম থেমে গেলেন।
” আসলে আম্মু সরি আমি একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলাম। একটা স্টুডেন্ট এসেছেতো কি এক ব্যাপারে যেন কথা বলবে। আমি তোমাকে পরে কল দেই?”
কেমন বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে বলে দিলো প্রহর। খারাপ না সবার সাথে মিশতে মিশতে এই বিদ্যে খুব ভালোই শিখেছে।
রাহেলা বেগম ও হয়তো বা কম যায় না।
” নো চান্স বেটা! তুমি কি কোণভাবে বিষয়টাকে এড়িয়ে যেতে চাইছো? ”
প্রহর নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
” আম্মু তুমি কি ওই স্নিগ্ধার কথা বলছো ছোটবেলায় যার নাক দিয়ে সবসময় পানি পড়তো”
রাহেলা বেগম বেশ উচ্চস্বরে ছেলেকে ধমক দিলেন,
” ছিঃ এটা কি ধরণের কথা হলো?
আর স্নিগ্ধাতো এখন আগের মত ছোট্টটি নেই সে এখন বড় হয়েছে। মোটামুটি সুন্দরি বলা চলে আর বেশ লম্বা। তারউপর আবাএআবার মেডিকেলে পড়ছে কম কিসে?”
প্রহর জানে তার মায়ের কাছে সুন্দরের ডেফিনিশন মানে লম্বা। এ মেয়েটা নিশ্চয়ই তালগাছের মত লম্বু ওই আগের বারের মেয়ের মত। উফ নো চান্স। তাছাড়া স্নিগ্ধাকে সেই ছোটবেলায় দেখা হয়েছিল এখন অবশ্য মনে থাকার কথা নয়।
” কি হলো কিছুতো বলো?
আর আমি জানিতো তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। এতোদিনে মেয়েদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটাও শিখলে না। এইরকম করলে তোমাকে কোন মেয়ে বিয়ে করতে আসবে শুনি?
শোন যেটা বলছিলাম, স্নিগ্ধার বাবা মায়ের তোমাকে প্রছন্দ হয়েছে। তাছাড়া মেয়েটাও তোমাকে প্রছন্দ করে।”
প্রহর মায়ের কথা শুনে টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেয়ে ফেললো। বড্ড গলা শুকিয়ে আসছিলো,
” আচ্ছা আম্মু তোমাকে কে বললো? মেয়েটা আমাকে প্রছন্দ করে? কই আমিতো কিছু জানিনা”
রাহেলা বেগম কলকল করে বললো,
” জানবে কি করে বুদ্ধু, তুমিতো এক মাস যাবৎ মেয়েটার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট ঝুলিয়ে রেখেছো?
শোন আমার মান সম্মান কিছু রাখো মেয়েটার সাথে কথা বলে বুঝাপড়া করে নাও কেমন। সব কিছু যদি এখনো আমাকেই শিখিয়ে দিতে হয় তাহলে কেমনে কি?
আচ্ছা আমি এখন রাখছি তোমার আব্বু আসছে অফিস থেকে । ভালো থেকো।”
প্রহর মায়ের সাথে কথাবলা শেষ করেই ফোনে ডাটা অন করলো। ফেবুতে একটু ঢুঁ মারতে ইচ্ছে হচ্ছে। আচ্ছা কোনভাবে কি ওর স্নিগ্ধার প্রোফাইল ঘুরে আসার ইচ্ছে হচ্ছে? হলে হচ্ছে তাতে কি ও মেয়েটার প্রেমে পড়ে গেছে নাকি?
অনেকদিন ধরেই ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট চেক করা হয়না অনেক গুলো রিকুয়েস্ট জমা হয়ে আছে।
স্ক্রল করতে করতে একটা নীল শাড়ী পড়া, কপালে নিল টিপ, নীল এক গাছি চুড়ি পড়া মেয়ের প্রোফাইল পিকে চোখ আটকে যায়। বেশ সাবলীল মুখশ্রী, চওড়া লম্বা নাকটা গোলগাল মুখে ভালোই মানিয়েছে। নাম টায় চোখ বুলিয়ে নেয় স্নিগ্ধা মেহজাবিন!
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, হসপিটাল।
ওহ এই তাহলে সেই নাকে পানি পড়া স্নিগ্ধা। নিজের মনে নিজেই হেসে উঠে।
শরীর আর মন এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। শরীর ভালো না থাকলে মনও ভালো থাকেনা। তিনদিন যাবৎ জ্বরে পড়ে থেকে এই আধ্যাত্মিক বিষয়টাকে ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারছে প্রতিক্ষা।
বিছানায় বসে দুই পা আনমনে দুলাতে দুলাতে তিথির ডাকে পিছনে ফিরে তাকায় প্রতিক্ষা।
” প্রতিক্ষা দেখ কে এসেছে।”
তারপর দরজার দিকে তাকিয়ে আবার কাকে যেন ইশারা করে তিথি।
জ্বরের ঘোরে ও কিছু বুঝতে পারছেনা। ওর দুই চোখ দরজার দিকে তখনো আটকে রয়েছে।
ব্ল্যাক জিন্স আর অফ হুয়াইট টি শার্ট পড়া রিজভী স্যারকে দেখে ও বিছানা থেকে দাঁড়িয়ে পড়ে।
রিজভী রায়মান প্রতীক্ষাদের জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট এর নিউ লেকচারার হিসেবে জয়েন করেছে এইতো এক মাস হবে।
এই এক মাসে প্রতিক্ষার প্রতি স্যারের এই এক্সট্রা কেয়ার প্রতিক্ষার চোখ এড়ালেও বাকী সবার চোখ এড়ায়নি। সবাই ভালোভাবে নয় বেশ আড়চোখেই ব্যাপারটা দেখছে।
” প্রতিক্ষা, বসো দাঁড়িয়ে কেন”
বেশ সাবলীলভাবেই কথাটা বলেই চেয়ার টেনে বসে
পড়লো।
তারপর তিথির দিকে ঘুরে তাকালো,
” তিথি এই ফলগুলো ভালো করে ধুয়ে কেটে নিয়াসোতো।”
তিথি স্যারের হাত থেকে ফলগুলো নিয়ে সেখান থেকে চলে গেল।
তারপর প্রতিক্ষার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো।
প্রতিক্ষাই প্রথমে বললো,
” স্যার আপনি এই এতগুলো ফল কেন আনতে গেলেন হঠাৎ”
স্যার বোধহয় প্রতিক্ষার কথায় কিছুটা আহত হলো। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
” আচ্ছা আমি কিন্তু এখন তোমার কথায় খুব একটা খুশি হইনি। আর তুমি কিন্তু কাজটা একদম ঠিক করোনি?”
প্রতিক্ষা বুঝতে পারে না স্যার কোন কাজের কথা বলছে,
” আচ্ছা স্যার আমি কি কোন ভুল করেছি?”
” অবশ্যই করেছো। তুমি তিনদিন যাবৎ জ্বরে পড়ে আছো এইটা একবারের জন্যেও আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না। আমাকে অন্যকারো কাছ থেকে তোমার খবর জানতে হলো!”
রিজভী কথাটা বলেই
কেমন গম্ভীর হয়ে গেল।
প্রতিক্ষা বুঝতে পারেনা স্যার তার প্রতি এত কিছু কেন আশা করে। তবুও অবুঝের মত ও অস্ফুট স্বরে বলে,
“আমিতো এখন ঠিকি আছি স্যার। অনেকটা সুস্থ!”
” তা কেমন সুস্থ্য তাতো নিজের চোখেই দেখতে পারছি। চেহারার কি হাল বানিয়েছো আয়নায় দেখেছো একবারো?” অভিমানি সুরে কথাটা বলেই রিজভী চুপ করে গেল।
প্রতিক্ষাও এই পর্যায়ে চুপ করে যায়। ও বুঝতে পারে না ওর কি রিএক্ট করা উচিৎ।
হঠাৎ রিজভী দাঁড়িয়ে পড়ে চোখ তুলে প্রতিক্ষার দিকে তাকায়,
” রেডি হও চলো। ”
প্রতিক্ষা কৌতোহেলি হয়ে জিজ্ঞাস করে,
” কোথায়?”
রিজভী শান্ত গলায় বলে,
” কোথায় আবার ডক্টর এর কাছে।”
প্রতিক্ষা বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়ে। অসম্ভব ও কিছুতে যাবেনা। করুণভাবে পিছনে তাকাতেই দেখে তিথি একটা প্লেট হাতে ওদের দিকেই আসছে। মূহুর্তেই প্রতিক্ষা বলে উঠে,
” আমিতো ডক্টরের কাছে গিয়েছিলাম তিথির সাথে। আর মেডিসিন নিচ্ছিতো। ইনশাল্লাহ ভালো হয়ে যাবো।”
রিজভী অগ্নিচোখে প্রতিক্ষার দিকে তাকায়,
” কোন চুলোর ডক্টরের কাছে গিয়েছো? যেমন জ্বর তেমনিতো আছে কমারতো কোন লক্ষনই দেখিনা। যেতে চাওনা যাবে না স্পষ্ট ভাবে বলো। ভণিতা করার কি আছে।”
রাগে গজগজ করতে করতে রিজভী সেখান থেকে চলে গেল।
তিথি আর প্রতিক্ষা স্যারের পথের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো।
(চলবে)
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/