তোমাকে চাই পর্ব-০৮

0
1734

#তোমাকে_চাই💖
#কলমে_অনন্যা(অনু)
#পর্ব_০৮

(১২)

“আমার না খুব ভয় করছে রে!”,তরু নখ কামড়াতে কামড়াতে বলল।

“ভয় করছে মানে কি হ্যাঁ?জিজুর সাথে খারাপ ব্যবহার করার সময় মনে ছিল না এসব?”,সুকন্যা রেগে বলল।

“আজে বাজে সব কথাই তো বলে দিয়েছিলি সেদিন!তখন একবারো মনে হয়নি তোর কাকে কি বলছিস? কথা গুলো ঠিক কিনা?একবার সবটা যাচাই করে নেওয়া উচিত কিনা?”, বিবেকও রেগে বলল।

“সরি বলছি তো আর বার বার এক কথা কেন বলছিস?আমি কি কিছু বুঝে করেছি নাকি!তখন মাথা ঠিক ছিল না আমার”,তরু মাথা নীচু করে বলল।

“হুম যা হবার হয়েছে এখন সব ঠিক তোকেই করতে হবে”,সুকন্যা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল।

“সব দোষ তোর যখন তখন তুই ক্ষমা চাইবি জিজুর কাছে”,শক্ত গলায় বলল বিবেক।

“আচ্ছা আচ্ছা আমিই ক্ষমা চাইবো।কিন্তু আমাকে দেখে যদি আবার থাপ্পড় মারে তখন!”,তরু কিছুটা ভয় নিয়ে বলল।

“হজম করে নিবি”,সুকন্যা মজার সুরে বলল।

“একটা থাপ্পড় তো আর বেশি কিছু না দিলে দিবে”,বিবেক ঠোঁট টিপে হেসে বলল।

“এই তোরা আমার বন্ধু না শত্রু?আমাকে সাহস দেওয়ার বদলে আরো ভয় দেখাছিস!”,তরু রেগে বলল।

“আমরা হলাম তোর বন্ধু নামের শত্রু!”,হেসে বলল বিবেক।

“তোরা মজা করছিস?আমি টেনশনে মরছি আর তোদের মজাই শেষ হচ্ছে না!কি যে হবে ওখানে কে জানে?”,তরু কাঁদো কাঁদো মুখে বলল।

“যা হবে ভালোই হবে ।যা এবার এখানে দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই”,তরুর কাধেঁ হাত রেখে বলল সুকন্যা।

“তোরাও যাবি আমার সাথে ভেতরে”,তরু সুকন্যার হাত ধরে বলল।

“পাগল নাকি আমরা গিয়ে কি করব?আমি আর সুকু সামনের কফি শপে আছি তুই যা ভেতরে”,বিবেক বাঁধা দিয়ে বলল।

“কিন্তু!”,তরু ভীত গলায় বলল।

“কোন কিন্তু না যা এবার”,সুকন্যার হাত ছাড়িয়ে বলল বিবেক।

“আর হ্যাঁ যাই হয়ে যাক না কেন জিজু যাই বলুক না কেন তুই জিজুকে সবটা বলবি তারপরেই আসবি”,শক্ত গলায় বলল সুকন্যা।

“হুম”,ছোট করে জবাব দিল তরু।

“অল the best”, বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বলল বিবেক।

বিবেক আর সুকন্যা চলে গেল কফি শপে আর তরু গেল তন্ময়ের অফিসে।

*

তরু সেদিনের সব ঘটনা বিবেক আর সুকন্যাকে সেদিন রাতের বেলায় বলায় ওরা খুব রেগে যায় তরুর ওপর।তারপর প্ল্যান করে দিয়ার কাছ থেকে সব সত্যি জানতে পারে। দিয়া অনেক ভাবে তন্ময় এর ক্ষতি করতে চায়।

সেদিনের পর থেকে তন্ময় আর তরুকে ফোন করে না।তরুর সাথে একটাও কথা হয়নি।তরু ফোন করলেও ফোন রিসিভ করে না।সেদিনের ঘটনার পর আজকে দুদিন হলো তরু তন্ময় এর সাথে দেখা হয়না।তাই তরু আজকে দেখা করতে এসেছে। তরু নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে এবার তন্ময় এর কাছে ক্ষমা চেয়ে সব আবার আগের মতো করে নেবে।

আর এক সপ্তাহ পরেই বিয়ে সবাই বিয়ের কেনা কাটায় ব্যস্ত আর এদিকে তরু তন্ময় এর ভুল বোঝাবুঝির কথা কেউ জানে না।তন্ময় কাউকে কিছুই বলেনি। তাই তরু কেউ কিছুর জানার আগেই সব ঠিক করতে চায়।যেহেতু সব দোষ ওর।ওর উচিত ছিল তন্ময়কে বিশ্বাস করা কিন্তু ও করেনি! যা নয় তাই বলে অপমান করেছে।

তরু খুব নার্ভাস ভয়ে ভয়ে অফিসের ভেতরে ঢুকলো। রিসেপশনে থাকা মেয়েটি প্রিয়াকে কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই প্রিয়া বলল,”ম্যাম আপনি!আসুন আসুন।”

“বলছি কি মানে আপনাদের স্যার আছে?”,তরু একটু ঘাবড়ে গিয়ে বলল।

“হ্যাঁ স্যার তো ওনার কেবিনেই আছে”,হাল্কা হেসে বলল প্রিয়া।

“ব্যস্ত আছে কি?”,আমতা আমতা করে বলল তরু।

“না না ম্যাম অতো ব্যস্ত নেই।আপনি যান স্যারের কেবিনে”,প্রিয়া বলল।

“আচ্ছা”,তরু একটু মুচকি হেসে বলল।

তরু তন্ময় এর কেবিনের সামনে এসে নক করার সাথে সাথে ভেতর থেকে গম্ভীর গলায় আওয়াজ আসলো “কাম ইন”

তরু ধীরে ধীরে ভেতরে ঢুকলো খুব ভয় পাচ্ছে তন্ময় ওকে দেখে কি রিয়্যাকশন দেবে কে জানে?যদি ওর কথা না শুনেই ওকে অফিস থেকে বের করে দেয় তখন?এসব চিন্তা ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

তরু ভেতরে ঢুকতেই তন্ময় ওর দিকে তাকাল।তরুকে দেখে খুব অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে তন্ময়।তন্ময় ভাবতেও পারেনি তরু অফিসে আসবে। নিজের অজান্তেই তন্ময় চেয়ার ছেড়ে তরুর সামনে গিয়ে দাঁড়াল।তন্ময় নিজেকে সামলে নিয়ে তরুকে বলল,

“কি চাই?”,তন্ময় গম্ভীর গলায় বলল।

“আ….আ….আসলে মা…মানে “,তরু তোতলাতে তোতলাতে বলল।

“কি আসলে মানে করছো?যা বলার বলে যাও এখান থেকে বিরক্ত করো না”,তন্ময় আবার নিজের চেয়ারে গিয়ে বসল।

তন্ময় এর কথায় তরু খুব কষ্ট হচ্ছে তাও নিজেকে যথেষ্ট সামলে বলল,

“আমি জানি তুমি আমার ওপর রেগে আছো।আমি যা বলেছি যা করেছি তাতে আমার ওপর রেগে থাকাই স্বাভাবিক।কিন্তু বিশ্বাস করো আমি ইচ্ছে করে কিছুই করিনি।তখন আমার মাথা ঠিক ছিল না।সব খারাপ চিন্তাই আসছিল।প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও তন্ময়।আর একবার সুযোগ দাও।আমি প্রমিস করছি আর কখনও তোমাকে অবিশ্বাস করবো না।যাই হয়ে যাক আমি তোমার ওপর বিশ্বাস হারাব না।আর ওই দিয়াকে তো ছাড়বোই না।তন্ময় আর একটা সুযোগ দাও,প্লিজ!”,তরু তন্ময়ের চেয়ারের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল।

তন্ময় এতোক্ষন সব শুনছিল আর মনে মনে খুব খুশীও হয়েছে যে তরু নিজের ভুল বুঝতে পেরে ওর কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছে। তরুর ব্যবহারে ও খুব কষ্ট পেয়েছে যাকে ভালোবাসে তার ওপর বিশ্বাস রাখাটা কতোটা জরুরি সেটা তরুকে বোঝাতেই এই দুদিন তরুর থেকে দুরে দুরে থেকেছে।

“একবার একটা সম্পর্ক শেষ হয়ে গেলে তা আর ঠিক হয় না।ভালোবাসায় সব থেকে আগে বিশ্বাস আর ভরসা দরকার যা আমাদের মধ্যে ছিল না তাই এই সম্পর্ক এখানেই শেষ হয়ে যাওয়াই ভালো আমি আজকে বাড়িতে সবটা জানাব বলে ঠিক করেছি”,তন্ময় চেয়ার ছেড়ে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াল।

“ক….কি জানাবে?”,তরু ছল ছল চোখে বলল।

“এই বিয়ে হচ্ছে না!আমরা বিয়ে করবো না!”,শক্ত গলায় বলল তন্ময়।

তরুর চোখের জল যেনো আর বাঁধ মানছে না কি করবে এখন ও কি করে বোঝাবে তাহলে কি সব শেষ?

“প্লিজ তন্ময় এরকম বলো না আমি তো বলছি ভুল হয়ে গেছে আমার আর এমন হবে না আমাকে ছেড়ে চলে যেও না তুমি!সত্যি বলছি তন্ময় আমি তোমাকে খুব বেশি ভালোবাসি প্লিজ এমন করো না”,তরু কাঁদতে কাঁদতে নীচে বসে পরল।

তন্ময়েরও খুব কষ্ট হচ্ছে কিন্তু তরুকে বোঝানো দরকার সম্পর্কের মানেটা কি?

“আর কিছু করার নেই তরী যাও এখান থেকে”,মুখ ফিরিয়ে বলল তন্ময়।

বেশ কিছুক্ষণ তরুর কোন আওয়াজ না পেয়ে তন্ময় সামনের দিকে ঘুরলো।ঘুরে যা দেখল তাতে তন্ময় শক হয়ে গেছে।

তরু তন্ময় এর সামনে হাঁটু গেছে বসে আছে হাতে গোলাপ নিয়ে।গোলাপটা যদিও তন্ময় এর কেবিনেই রাখা ছিল।তরু ভেতরে ঢুকেই টেবিলে দেখতে পেয়েছে।আর তন্ময় যখন তরুর কথা বুঝতেই চাইছিল না তখন তরুর মাথায় এই অদ্ভুত আইডিয়া টাই এলো এমন এক পরিস্থিতিতে!

“এই তুমি এমন কেন বলোতো?সব জানো তাও আমাকে কষ্ট দাও!তুমি খুব পঁচা জানো?ডেভিল একটা!কিন্তু এই ডেভিল টাকেই আমি ভালোবাসি আর একেই বিয়ে করবো।যদি তুমি বিয়ে না করো না তাহলে তুলে নিয়ে যাবো! আই লাভ ইউ তন্ময়!প্লীজ জিভ মী এ চান্স এগেইন! প্লীজ!প্লীজ”,কাতর কন্ঠে বলল তরু।

তন্ময় তো শক হয়ে আছে তরু ওকে প্রোপোজ করলো!ওর যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না এটা তরু।যে মেয়েটা সব সময় দুরে দুরে থাকে সেই মেয়ে আজকে!এতোটাই বড়ো শক খেয়েছে যে কথা বলতেই ভুলে গেছে তন্ময় কিছুই বলছে না হা করে তরুর দিকে তাকিয়ে আছে।

তন্ময়কে চুপ করে থাকতে দেখে তরুর খুব বিরক্তিকর লাগছে।মনে মনে তন্ময় এর পুরো গুষ্টির মুণ্ডুপাত করছে।

“কি নির্দয় মানুষ রে বাবা!এতো করে বলছি তাও ক্ষমা করছেই না!মানছি ভুল করেছি তাই বলে কি ক্ষমা নেই?এই বাচ্চা মেয়েটার ওপর কি করে রেগে থাকে কে জানে?কেন বুঝতে পারছে না আমি সত্যি ভালোবাসি ওকে!আমি পারব না ওকে ছেড়ে থাকতে!না হাল ছাড়লে হবে না ওকে বোঝাতেই হঠে যে কারেই হোক “তরু মনে মনে বলল।

তন্ময়কে চুপ করে থাকতে দেখে তরু আর পারল না উঠে দাঁড়িয়ে তন্ময় শার্টের কলার ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল”,এত রাগ কোথা থেকে আসে হ্যাঁ? বলছি তো ভুল হয়ে গেছে তাও কেন এমন করছো?কেন বুঝতে চাইছ না?”
তরু আর পারল না কেঁদেই দিল।

তরুকে কাঁদতে দেখে তন্ময় এর হুঁশ ফিরলো। তন্ময় তরুকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল।তরুও তন্ময় এর বুকে মাথা রেখে নিঃশব্দে কাঁদতে থাকলো।তরু কেঁদে তন্ময় এর শার্ট ভিজিয়ে ফেলেছে।

“স্টপ ইট তরী!তুমি কাঁদছ কেন?”, শান্ত গলায় বলল তন্ময়।

“তো কি করব শুনি?এতো রাগ তোমার যে এই বাচ্চা মেয়েটাকে এতো কষ্ট দিলে!”,তরু মাথা উঠিয়ে মুখ ফুলিয়ে বলল।

তরুর কথা বলার ধরন দেখে তন্ময় হেসেই দিল।

“তুমি বাচ্চা!রিয়েলি?”,তন্ময় আবার হাসছে।

“না তো আমি বাচ্চা না আমি তো আশি বছরের থুরথুরে বুড়ি তাই না?এই দেখ আমার চুল পেকে গেছে”,তরু মুখ ঘুরিয়ে বলল।

তন্ময় এর হাসি যেন থামছেই না তরুর কথা শুনে যেন হাসি আরো বেড়ে যাচ্ছে।

“এই তোমার কি আমাকে জোকার মনে হয়?”,তরু রেগে বলল।

“ওকে ওকে আর হাসব না তুমি আর রাগ করো না।একটা কথা বলতো!”,তন্ময় হাসি থামিয়ে বলল।

“কি কথা?”,মুখ ফুলিয়ে বলল তরু।

“তুমি দিয়াকে ছাড়বে না কেন বললে?”,তন্ময় বলল।

“ওর জন্যই তো এসব হলো ওকে পেলে যে আমি কি করবো? তা নিজেও জানি না!”,তরু হাত মুট করে বলল।

“এতো রাগ কেন?”,ভ্রু কুঁচকে বলল তন্ময়।

“রাগ কেন মানে কি হ্যাঁ?ওর শুধুমাত্র আমাদের দুজনকে আলাদা করতে চেয়েছিল তাই নয় তোমার ক্ষতিও করতে চেয়েছে আর এর আগেও অনেক ভাবে তোমার ক্ষতিও করেছে”,রেগে চেঁচিয়ে বলল তরু।

“তুমি এতো কিছু জানলে কি করে?”,গম্ভীর গলায় বলল তন্ময়।

“বলবো সব বলবো তার আগে বল আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছো ?”,তরু ইনোসেন্ট ফেস করে বলল।

“আরে পাগলি তোমার ওপর আমি রাগ করিনি। আর ক্ষমা করার কোন কথাই আসে না।তুমি যা করেছ তোমার জায়গায় আমি থাকলেও তাই করতাম।তাই এসব কথা ছাড়তো”,তন্ময় তরুর গেল টেনে বলল।

“তাহলে দুদিন ফোন করোনি কেন?আমি ফোন করলে রিসিভ করোনি কেন?আর প্রথমে ওরকম কথা কেন বললে?”,তরু কাঁদো কাঁদো গলায় বলল।

“আমাদের সম্পর্ক টা কি এতোটা কম জোর নাকি যে অল্প আঘাতেই ভেঙে যাবে?তোমাকে বোঝানো দরকার ছিল সম্পর্কের মানেটা কি?কাছের মানুষ যখন দুরে চলে যায় তখন ঠিক কতোটা কষ্ট হয়!এখন নিশ্চয়ই বুজতে পেরেছ?”,তন্ময় তরুর গালে হাত রেখে বলল।

“হুম আর হবে না এমন।দিয়া টিয়া যেই আসুক আর আমাদের আদালা করতে পারবে না”,তরু তন্ময়কে জড়িয়ে ধরে বলল।

তন্ময়ও তরুকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। আজ দুদিন পর ওরা একে অপরকে দেখল। তরু কখন নিজে থেকে তন্ময়ের এতোটা কাছে আসেনি আজ প্রথম তরু নিজে থেকে তন্ময় এর কাছে এসেছে।

#চলবে……..?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে