তোমাকে চাই পর্ব-০৭

0
1555

#তোমাকে_চাই💖
#কলমে_অনন্যা(অনু)
#পর্ব_০৭

(১০)

“ডোন্ট টাচ মি!”,তন্ময় দিয়াকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে চিৎকার করে বলল।

“তোমার সাহস তো কম না!আমার অফিসে এসে পারমিশান না নিয়ে আমার কেবিনে ঢুকলে!আবার আমাকে জরিয়ে ধরছ!”,তন্ময় রেগে চিৎকার করে বলল।

“তন্ময় কেন এমন করছো তুমি?তুমি কেন বোঝো না আমি তোমায় সত্যিই খুব ভালোবাসি!”,দিয়া তন্ময় এর দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল।

“ব্যাস!আর একটাও কথা না।এখনি এখান থেকে চলে যাও।নাহলে আমি তোমাকে কি করবো তা নিজেও জানি না”,তন্ময় চিৎকার বলল।

“তন্ময় …..”,দিয়াকে কথা শেষ করতে দিল না তন্ময়।

“গেট আউট দিয়া। আই ক্যান্ট টলারেট ইউ অনিমোরে!এতো দিন তোমাকে বন্ধু ভেবে সহ্য করে গেছি কিন্তু আর না।তুমি সব সহ্যের সীমা অতিক্রম করে গেছো”,তন্ময় দিয়ার চোখে চোখ রেখে বলল।

“আমার……. “,দিয়া আবারও কথা শেষ করতে পারলো না।

“মে আই কাম ইন, স্যার?”,তন্ময় এর পি এ সোম দরজা নক করে বলল।

“কাম ইন”,তন্ময় গম্ভীর গলায় বলল।

“স্যার ফাইল গুলো”,সোম ভেতরে ঢুকে বলল।

“রেখে যাও।আচ্ছা ওকে কে এখানে আসার পারমিশান দিয়েছে?”,তন্ময় দিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল।

এতক্ষণ সোম দিয়ার দিকে তাকায়নি ভেবেছিল তরু হয়তো এটা কিন্তু তন্ময় এর কথা শুনে যখন তাকাল তখন খুব অবাক সোম।

“এর পর থেকে কেউ যদি দেখা করতে আসে তো আগে আমাকে বলবে তারপরেই ঢুকতে দেবে।তা সে নিজের যাই পরিচয় দিক না কেন কিংবা এই অফিসের সাথে যেভাবেই কানেকশন থাকুক না কেন!”,তন্ময় শক্ত গলায় বলল।

“ওকে স্যার কিন্তু একটা কথা বলার ছিল”,সোম আমতা আমতা করে বলল।

“যা বলবে বলে ফেল”,তন্ময় কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল।

“আসলে স্যার মানে ম্যাডাম তো এসেছিল তা এখানে তো ম্যাডামকে দেখছি না!”,সোম এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল।

“ম্যাডাম!কোন ম্যাডাম?”,তন্ময় ভ্রু কুঁচকে বলল।

“তরী ম্যাডাম!”,সোম বলল।

“কিই! তরী এখানে এসেছিল?”,তন্ময় অবাক হয়ে বলল।

“হ্যাঁ স্যার এসেছিল তো আধঘন্টা আগে দেখেছিলাম অফিসে”,সোম মাথা নাড়িয়ে বলল।

“কি সব বলছো সোম?তরী তো আমার কেবিনে আসেই নি!”,তন্ময় চিন্তিত হয়ে বলল।

“এটা কি করে হয় স্যার? প্রিয়া তো নিজে ম্যামকে আপনার কেবিনে নিয়ে এসেছিল”,অবাক সুরে বলল সোম।

“কিই তরী কোথায় এখন?”,তন্ময় উত্তেজিত হয়ে বলল।

“সেটা তো বলতে পারলাম না স্যার”,সোম মিন মিন করে বলল।

তন্ময় সোমকে কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু দিয়ার দিকে চোখ যেতে দিয়াকে উদ্দেশ্যে করে বলল,”আর কোন দিনো যদি এখানে এসেছো তো সেদিন আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না!”

“ওকে আর ওদের অফিসের কাউকে যেন এই অফিসে না দেখি”,তন্ময় সোমকে উদ্দেশ্যে করে বলল।

তন্ময় আর এক মিনিটও না দাঁড়িয়ে তাড়াতাড়ি রিসেপশনে গেল।

রিসেপশনে গিয়ে প্রিয়ার কথা শুনে তন্ময় দিশেহারা হয়ে যায়।

প্রিয়া বলে যে তরু অনেক আগেই অফিস থেকে দৌড়ে বেরিয়ে গেছে।

তন্ময় তরুকে ফোন করেই যাচ্ছে কিন্তু ফোন অফ।তন্নীকে ফোন করলে তন্নীও ফোন তুলছে না হয়তো ক্লাস করছে তাই।তন্ময় আর দেরি না তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বেরিয়ে যায় তরুর দের বাড়ি যাওয়ার জন্য।

তন্ময় চলে যেতেই দিয়া চোখের জল মুছে বলল,”তুমি আর কি করবে তন্ময় যা করার তা তো আমি করেই দিয়েছি।আজকে তরীর সাথে কলেজে দেখা করতে গিয়েই তো এই প্ল্যানটা মাথায় এল।তা এবার দেখি কি করে তরীকে নিজের করো!”
দিয়া কথাটা বলেই শয়তানি হাসি দিল।

দিয়া আজকে তরুর সাথে কথা বলতে কলেজে যায় তখন তরু তন্নীকে তন্ময় এর অফিসে যাবার কথা বলছিল।এটা শুনেই দিয়া প্ল্যান করে যে ও তরুর আগে তন্ময় এর অফিসে যাবে আর তরুর থেকে যেভাবেই হোক না কেন তন্ময়কে দূরে সরিয়ে দেবে।

দিয়া প্ল্যান মতো তরুর আগেই তন্ময় এর অফিসে যায় আর তরুর আসার অপেক্ষা করে।যখন তরু অফিসের গেটের সামনে আসে তখনই দিয়া অফিসে ঢুকে তন্ময়ের কেবিনে চলে যায় যেহেতু তন্ময় আর দিয়ার বাবা বিসনেস পার্টনার তাই দিয়াকে কেউ আটকায় নি। দিয়া তন্ময় এর কেবিনে গিয়েই তন্ময়কে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে। তন্ময় কিছু বোঝার আগেই তরু তন্ময় আর দিয়াকে এক সঙ্গে দেখে তন্ময়কে ভুল বোঝে।

(১১)

তরু নিজের ভাবনায় ব্যস্ত হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজে তরু ব্যালকনি থেকে ওয়াশরুমে যায় চোখে মুখে জল দিতে।তারপর নীচে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।তবে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিকে দেকে তরুর রাগ যেন মুহুর্তেই বেড়ে যায়।

তরু ভেবেছিল ওর মা বাবা এসেছে তাই যতোটা সম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে।তরু এখন কাউকে কিছু বলতে চায় না আগে দিয়ার সাথে কথা বলবে তারপর বাড়িতে জানাবে। কিন্তু দরজার বাইরে তন্ময়কে ও মোটেও আশা করেনি।

“তুমি কলেজ থেকে কখন এলে?”,তন্ময় ভেতরে ডুকে বলল।

“অনেকক্ষণ আগে”,তরু গম্ভীর গলায় বলল।

“আমাকে জানাওনি কেন?”,তন্ময় সোফায় বসে বলল।

“প্রয়োজন মনে করিনি তাই!”,তরু অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল.

“প্রয়োজন মনে করোনি!কেন?”,তন্ময় একটু হেসে বলল।

“সব কথার উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই।বাড়িতে কেউ নেই আপনি এখন আসতে পারেন!”,শক্ত গলায় বলল তরু।

“বাড়িতে কেউ নেই বলেই তো এসেছি!”,তন্ময় সোফায় হেলান দিয়ে বসে বলল।

“মানে?”,তরু কিছু জোরে বলল।

“মানে আবার কি?তোমার সাথে টাইম স্পেন্ট করতে এসেছি”,তন্ময় মুচকি হেসে বলল।

“দেখুন আপনি যান এখান থেকে আমার আপনার সাথে কোন কথা নেই”,তরো মুখ ঘুরিয়ে বলল।

“এই তুমি আমাকে আপনি কেন বলছো?”,তন্ময় সোফা থেকে উঠে তরুর সামনে এসে বলল।

“আমার ইচ্ছে আমি কাকে কি বলবো”,তরু অন্যদিকে তাকিয়ে বলল।

“কি হয়েছে বল তো তোমার?ফোন অফ কলেজ থেকে চলে এসেছো আমাকে জানাও নি ব্যাপার কি?”,বেশ শান্ত গলায় বলল তন্ময়।

“দেখুন আপনাকে আমি চলে যেতে বলছি তাও আপনি যাচ্ছেন না কেন বলুন তো আর আপনাকে কোন কথা বলবো না বলছি তো!”,বিরক্ত হয়ে বলল তরু।

“তুমি বলতে বাধ্য!”, জোর গলায় বলল তন্ময়।

“আমি বলতে বাধ্য নই।আপনার মতো একটা ঠকবাজ লোকের সাথে কথা বলতেও আমার নিজের প্রতি ঘৃণা করে!”,রাগ সামলাতে পারলো না তরু।রেগে বলল কথাটা।

“তরু!”,তন্ময় চিৎকার করে বলল।

“প্লিজ আপনার মুখে আমার নাম নেবেন না।আপনার মতো মানুষকে আমি বিয়েও করব না।বিয়ে কেনসেল!”,তরু বলল।

“কি করেছি কি আমি তরী যে এসব কিছু বলছো!”,তন্ময় কাতর কন্ঠে বলল।

“কি করেছেন তাও আবার জিজ্ঞেস করছেন? আপনি জানেন না আপনি কি করেছেন?”,তরু রেগে তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল।

“না জানি না তাই তো জানতে চাইছি”,তন্ময় গম্ভীর গলায় বলল।

“আজকে আমি আপনার অফিসে গিয়েছি আর সেখানে আপনার আসল রুপটা দেখেছি!আপনি ঠিক কত টা খারাপ কতোটা নীচ মনের মানুষ!”,তরু চিৎকার করে বলল।

“কি দেখছো তুমি?”,তন্ময় ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর গলায় বলল।নিজের রাগটা যথেষ্ট কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।

“আপনার আর দিয়ার প্রেমলীলা দেখে এসেছি!আপনি আপনি একটা কেরেক্টারলেস!”,তরু আবারও চিৎকারে করে বলল

তরু আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই তন্ময় একটা থাপ্পড় মেরে দেয় তরুকে।

“অনেকক্ষণ থেকে যা নয় তাই বলেছো তরী কিন্তু আর নয়!তোমাকে ভালোবাসি বলে সব কথা মেনে নেব না।আমায চরিত্র সম্পর্কে আর একটা কথাও বলবে না।সব সময় আমরা যা চোখে দেখি তা ঠিক হয় না।চোখের দেখার আড়ালেও অনেক সত্য থাকে।আর দিয়াকে না আমি ভালোবাসি আর না পছন্দ করি তাই এসব কথার কোন মানে নেই।তোমার উচিত ছিল অফিসেই আমার সাথে কথা বলার কিন্তু তুমি তা না করে নিজে যা দেখেছো তাই নিজের মতো বিশ্বাস করে নিয়েছো।যাকে ভালোবাসো তাকে যদি বিশ্বাসই না করতে পারো তাহলে কিসের ভালোবাসা?”,প্রথম কথাগুলো তন্ময় চেঁচিয়ে বলেও শেষের কথাটা শান্ত হয়ে তরুর দিকে তাকিয়ে বলল।

তরু গালে হাত দিয়ে চুপ করে সব শুনছে নীচে দিকে তাকিয়ে আর চোখের জল ফেলছে।

“হেরে গেছি!নিজের কাছে নিজেই হেরে গেছি আজ!সরি তরী আমার তোমার গায়ে হাত তোলা উচিত হয়নি।ভালো থেকো আসছি আমি আর বিরক্ত করবো না কোনদিন”,তন্ময় কথাটা বলেই বেরিয়ে গেল।

তরু এখন চুপ করে নীচে দিকে তাকিয়ে আছে আর তন্ময় চলে গেল গাড়ি নিয়ে।কিছুক্ষণ পরে তরুও দরজা লাগিয়ে চলে গেল নিজের ঘরে।

#চলবে…….?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে