#তোমাকে_চাই💖
#কলমে_অনন্যা(অনু)
#পর্ব_০১
(০১)
“এই ব্যা’টা চোখে দেখিস না?চোখটা কি পকেটে ভরে রেখেছিস?যখন দেখতে পাস না তখন রাস্তায় বাইক নিয়ে বেরিয়েছিস কেন?”,তরু খুব রেগে চেঁচিয়ে বলল কথাটা।
তরু বিকেলে সাইকেল নিয়ে ওর এক বান্ধবীর বাড়ি থেকে নিজের বাড়ি ফিরছিল ঠিক তখনই একটা ছেলে বাইক নিয়ে একেবারে তরুর গা ঘেঁষে চলে যায়।আর তরু সাইকেল সহ নীচে পড়ে হাতে চোট পায়।
“সরি সরি আসলে ফোনটা রিসিভ করতে গিয়ে বাইকের ব্যালেন্সটা ঠিক রাখতে পারিনি!”,একটা পঁচিশ বা ছাব্বিশ বছরের ছেলে হেলমেট খুলে বাইক থেকে নেমে তরুর কাছে আসে সাহায্য করতে।
“কিই?আপনি বাইক চালাছেন ফোনে কথা বলতে বলতে?”,তরু আবার চেঁচিয়ে উঠলো।ও এতোটাই রেগে গেছে যে ওর হাত থেকে রক্ত ঝরছে তাতে ওর কোন ভ্রূক্ষেপ নেই আর ও তখনো নীচেই বসে আছে।
“দেখুন আমি তো সরি বলছি আর ফোনটা রিসিভ করিনি শুধু দেখছিলাম কে ফোন করেছে।এবার আপনি উঠুন তো আপনার হাত কেটে গেছে।চলুন ডাক্তারের কাছে,”ছেলেটি এক হাত বাড়িয়ে দিল তরুকে উঠতে সাহায্য করার জন্য।
“দরকার নেই আপনার সাহায্য আমি নিজেই উঠতে পারব”,তরু ছেলেটির হাতে মেরে সরিয়ে দিল আর নিজেই উঠে সাইকেল ওঠানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ডান হাত কেটে যাওয়ায় বাম হাত দিয়ে সাইকেল ওঠাতে পারছে না।
“আপনি কিন্তু শুধু শুধু আমার ওপর রাগ করছেন।আমি তো ইচ্ছে করে করিনি কিছু”,কথাটা বলেই ছেলেটি তরুর সাইকেল উঠিয়ে দেয়।
তরু একবার ছেলেটির দিকে তাকালো তারপর সাইকেল নিয়ে চলে গেল।ছেলেটিও তরুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।তারপর বাইক নিয়ে চললো নিজের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।
[ তরু হল আমাদের তরী বসু।দেখতে খুব মিষ্টি তবে রাগ বেশি আর খুব জেদি।যা বলে তাই করে।তবে মনটা খুব ভালো।সবাইকে খুব সহজেই আপন করে নেয়।তরু ওর বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান।তরুর বাবা অনিমেশ বসু একজন প্রফেসর আর মা অঞ্জলি বসু গানের স্কুলের টিচার।তরু ওর মায়ের কাছ থেকে গান শেখে আর খুব ভালো গান করে ]
তরু বাড়ি ফিরছে আর মনে মনে ছেলেটিকে হাজারো গালি দিচ্ছে,”কা’না কোথাকার দেখে বাইক চালাতে পারে না।আমার হাতটা কতটা কেটে গেছে!খুব ব্যাথা করছে।যদি আমার বাড়ি ফেরার তাড়া না থাকতো না তবে দেখিয়ে দিতাম এই তরু কি জিনিস হুম। না না তাড়াতাড়ি বাড়ি যাই নাহলে মা আমার কপালে শ’নি চড়াবে।কে না কে আসবে তার জন্য আমাকে সং সাজতে হবে যতসব ঢং।”
আজকে তরুকে দেখতে আসছে ছেলের বাড়ি থেকে।গেট খুলে বাড়িতে ঢোকার সময়,
“তোর এতক্ষনে আসার সময় হলো?ওরা সেই কখন চলে এসেছে।আজকে চল তুই তোর হচ্ছে”,অঞ্জলি দেবী তরুকে ঢুকতে দেখে তরুর সামনে এসে কোমরে হাত রেখে ঝাঁঝালো গলায় বললো।
“আমার কি দোষ?আমি তো ঠিক সময়ই চলে আসতাম কিন্তু ওই বাইক চালকটার জন্যই তো দেরি হলো”,তরু সাইকেল রেখে অঞ্জলি দেবীর কাছে এসে বললো।
“এই তোর হাত কাটলো কি করে?কি হয়েছে”,অঞ্জলি দেবী তরুর হাত ধরে বলল আর তার রাগ নিমেষেই উধাও হয়ে গেল।তরুকে নিয়ে ভেতরে গেল।
“আসলে একটা বাইক চালক….”,আর বলতে পারলো না তরু ড্রয়িংরুমে অনেক লোক বসে আছে আর ওর বাবার পাশে বসে থাকা ছেলেটিকে দেখে তরু খুব অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
(0২)
“কি হয়েছে ওর?হাত কাটলো কি করে?”,অনিমেশ বাবু বসা থেকে উঠে তরুর কাছে এলেন।
“কি জানি কি করে হয়েছে এসব?ও তো খালি বললো একটা বাইক চালকের জন্য এসব হয়েছে”,অঞ্জলি দেবী তরু কিছু বলার আগেই বলে উঠলেন।
“বাইক!মানে অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে?”,অনিমেশ বাবু উত্তেজিত হয়ে বললেন।
“তরু কতবার বলেছি সাবধানে চলা ফেরা করবি কিন্তু তুই কোন কথাই শুনিস না কেন বলতো?কাল থেকে একদম বাড়ির বাইরে যাবি না”,অঞ্জলি দেবী অনিমেশ বাবুর কথা শুনে রেগে তরুর দিকে তাকিয়ে বললো।
“আপনারা কিছু মনে করবেন না প্লিজ আসলে আমার মেয়েটা খুব খামখেয়ালি”,অনিমেশ বাবু ছেলের বাড়ির লোকদের সামনে হাত জোড় করে বললেন।
“প্লিজ আঙ্কেল এভাবে বলবেন না। সব দোষ তো আমার!”,তন্ময় অনিমেশ বাবুর হাত ধরে বললেন কাউকে কিছু বলতে না দিয়ে।
“তোমার দোষ?”,অনিমেশ বাবু অবাক হয়ে তন্ময় এর দিকে তাকিয়ে বললো।
“হ্যাঁ আঙ্কেল আমার দোষ।তরুর যেই বাইক চালকের সাথে অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে সেই বাইক চালক আমি!”,তন্ময় তরুর দিকে তাকিয়ে বললো।
“আচ্ছা এসব কথা পরে হবে আগে তরুর হাতে ওষুধ লাগিয়ে দিন”,তন্ময়ের বাবা বললেন।
“হ্যাঁ হ্যাঁ আমি ওকে নিয়ে ঘরে যাচ্ছি”,অঞ্জলি দেবী তরুকে নিয়ে তরুর ঘরে গেলেন।
[ তন্ময় চৌধুরি বয়স ছাব্বিশ একজন বড়ো বিসনেসম্যান।একবছরেই ব্যবসাকে অনেকটা বড়ো করে তুলেছে। বাবা পরেশ চৌধুরি উনিও বিসনেসম্যান একবছর হলো সমস্ত ব্যবসা ছেলের হাতে দিয়ে অবসর নেন।মা রেখা চৌধুরি গৃহবধূ।তন্ময়ের একটা বোন আছে তন্নী সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট ]
“তন্ময় তোর সাথে তরীর কি করে অ্যাক্সিডেন্ট হলো?”,রেখা দেবী তন্ময়ের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললেন।
“আসলে মা তখন বাবা ফোন করেছিল আর আমি ফোনটা কে করেছে দেখতে গিয়ে বাইকের ব্যালেন্স ঠিক রাখতে পারিনি আর অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে গেছে!”,তন্ময় অপরাধীর মতো মাথা নীচু করে বললো।
“তোর একটু সাবধান হওয়া উচিত ছিল তন্ময় তরীর তো হাতে লেগেছে যদি মাথায় লাগতো তখন কি হতো?”,পরেশ বাবু গম্ভীর সরে বললেন।
“সরি বাবা সরি আঙ্কেল আমি বুঝতে পারিনি এরকম কিছু হবে তখন রাস্তা ফাঁকা ছিল”,তন্ময় মাথা নীচু করেই বললো।
“আচ্ছা ঠিক আছে যা হবার হয়ে গেছে।তোমাকে এতো গিল্টি ফিল করতে হবে না তন্ময়।আমি জানি তুমি ইচ্ছে করে করোনি”,অনিমেশ বাবু মুচকি হেসে বললেন।
“আঙ্কেল আপনি কিন্তু আর তরীকে কিছু বলবেন না ওর কোন দোষ নেই এতে আর আন্টিকেও বলবেন…”,তন্ময়কে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই অনিমেশ বাবু বললেন
“বুঝেছি কারোর কোন দোষ নেই”,কথাটা বলেই অনিমেশ বাবু হেসে দিলেন।
“বলছি কি তরীর ঘরটা কোন দিকে?আমি একটু তরীর কাছে যাব”,রেখা দেবী বললে উঠলেন।
“হ্যাঁ যান না ওপরে গিয়ে প্রথম ঘরটাই তরুর”,অনিমেশ বাবু বললেন।
“মা আমিও যাব”,তন্নী উঠে দাঁড়িয়ে বলল।
“আয়”,মুচকি হেসে বললেন অঞ্জলি দেবী।
*
তরু ঘরে গিয়ে ভাবছে এই লোকটা আমাকে দেখতে এসেছে?তরু ওর মায়ের কথায় ভাবনার জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরলো,
“তরু তন্ময়ের সাথে তোর অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে”,অঞ্জলি দেবী তরুর হাতে ওষুধ লাগাতে লাগাতে বললেন।
“তন্ময়!এই তন্ময়টা কে মা?”,তরুর অবাক হয়ে বললো।
“তন্ময় মানে যে তোকে দেখতে এসেছে।কেন তোকে না আগেই বলেছিলাম!”,অঞ্জলি দেবী ভ্রু কুঁচকে বললেন।
“আমার মনে ছিল না।সবার নাম কি আমি মনে রেখে বসে আছি নাকি!”,তরু মিনমিন করে বলল।
“মানেটা কি সবাই আর তন্ময় এক হলো নাকি?”,অঞ্জলি দেবী রাগ দেখি বললেন।
“উনি কি কোন স্প্যাশাল মানুষ নাকি যে ওনাকে মনে রাখতে হবে?আর ওনার জন্যই তো আমার হাত কেটেছে।কানা একটা!”,তরু হাল্কা রাগ দেখিয়ে বলল।
“খবরদার তরু ভদ্র ভাবে কথা বল বলছি।ও কিন্তু তোকে দেখতে এসেছে।ওদের সবার তোকে পছন্দ আর আমাদেরও তন্ময়কে পছন্দ।,”অঞ্জলি দেবী ঝাঁঝালো গলায় বললেন।
“তাতে কি আমার তো আর পছন্দ হয়নি!”,তরু ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো।
“তোর পছন্দ হবেও না!ভালো করে শুনে রাখ সবাই যদি চায় তবে এখানেই তোর বিয়ে হবে।কোনরকম অশান্তি করবি না।এর আগেও অনেক সমন্ধ ভেঙেছে তোর জন্য। এটাও যদি ভেঙে যায় তবে আমার থেকে খারাপ তোর জন্য আর কেউ হবে না।,”অঞ্জলি দেবী রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন।
“কি সব বলছো মা!এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে কেন?সবেই তো তেইশ বছর বয়স আমার।আর মাস্টার্স টাও কমপ্লিট হয়নি।এখনি বিয়ে!”,তরু খানিকটা চেঁচিয়ে বললো।
“আস্তে তরু নীচে সবাই আছে শুনতে পাবে।আর ওনারা বলেছেন বিয়ের পর তুই পরতে চাইলি তারা কোনরকম আপত্তি করবে না।,”অঞ্জলি দেবী তরুর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন।
“প্রথম প্রথম সবাই এরকম বলে মা কিন্তু বিয়ের পর সব বদলে যায়,”তরু করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।
“আচ্ছা তুই আগে তন্ময় এর সাথে কথা বল।ওর বাড়ির লোকদের দেখ তারপর যদি তোর মনে হয় তুই ওকে বিয়ে করতে পারবি না তখন না হয় বিয়ে হবে না।কিন্তু এমন কিছু করিস না যাতে তোর বাবাকে ওদের কাছে নীচু হতে হয়,”অঞ্জলি দেবী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন।
“মা আমি কখন এমন কোন কাজ করেছি নাকি যার জন্য বাবাকে সবার কাছে নীচু হতে হয়েছে?”,তরু খানিকটা অভিমানী হয়ে বললো।
“আরে আমি তা কখন বললাম? তুই এর আগেও সমন্ধ ভাঙার জন্য অনেক কিছু করেছিস তাই বলছি এবার এরকম কিছু করিস না।তোর ওপর আমরা কোন কিছু চাপিয়ে দেবো না।”, তরুর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন অঞ্জলি দেবী।
“আসতে পারি?”রেখা দেবী ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললেন।
“আরে আসুন আসুন”,অঞ্জলি দেবী খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে বললেন।
“হাতে খুব লেগেছে তাই না তরী ম”,রেখা দেবী তরুর পাশে বসে বললেন।
“আরে তন্নী তুমি দাড়িয়ে আছো কেন বসো”,অঞ্জলি দেবী তন্নীকে বললেন।
“না না আন্টি ঠিক আছে।আমি বরং বউমনির ঘরটা দেখি”,তন্নী সারা ঘরে চোখ বোলাতে বোলাতে বললো।
“বউমনি!”,তরু অবাক হয়ে মনে মনে বলল।
“আচ্ছা তরী মা তুমি আমার ছেলেটার ওপর রেগে আছো তাই না?”,রেখা দেবী করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন।
“না না আন্টি আমি কেন ওনার ওপর রেগে থাকবো?উনি তো ইচ্ছে করে কিছু করেনি।আমি ওনার ওপর রেগে নেই”, তরু হাল্কা হেসে বলল।
“তাই তবে তো ভালো।জানতো আমার ছেলেটা খুব ভালো।নিজের ছেলে বলে বলছি না।তুমি ওর সাথে কথা বলে দেখো বুঝতে পারবে বাকি ছেলেদের থেকে ও অনেক আলাদা”,রেখা দেবী মুচকি হেসে বললেন।
“জানো বউমণি দাদা কিন্তু তোমাকে আগে থেকেই চেনে”,তন্নী রুমটা দেখতে দেখতেই বলল।
“হ্যাঁ তরী মা তন্নী ঠিক বলেছে।তন্ময় প্রথম কিন্তু তোমার কথা বাড়িতে বলেছে।আমরা তো ওর কথাতেই এখানে এসেছি”,রেখা দেবী মুচকি হেসে বললেন।
“কিন্তু উনি আমাকে কিভাবে চেনে?আমি তো ওনাকে চিনি না!”,তরু অবাক হয়ে বললো।
“তা তুমি দাদাভাই এর কাছ থেকে জেনে নিও”,তন্নী তরুর সামনে এসে বলল।
“হ্যাঁ ওকেই জিজ্ঞেস করিস।চল আমরা নীচে যাই”,রেখা দেবী তন্নীকে উদ্দেশ্য করে বললেন।
“বৌমনিও তো যাবে!”,তন্নী তরুর পাশে বসে বলল।
“বলছিলাম কি দিদি তরুকে একটা শাড়ি পড়িয়ে তারপর নিচে নিয়ে যেতাম”,অঞ্জলি দেবী ইতস্তত করে বললেন।
“না না তার আর দরকার নেই।তরীকে আমাদের এমনিতেই খুব পছন্দ হয়েছে। এবার তন্ময়কে তরীর পছন্দ হলেই ওদের চার হাত এক করে দেব”,রেখা দেবী হেসে বললেন।
“দাদাভাইকে অবশ্যই বউমণি পছন্দ করবে।আমার দাদাভাইকে পছন্দ করবে না এমন হতেই পারে না”,তন্নী বেশ কনফিডেন্স সহকারে বলল।
“এটা ওদের ব্যাপার।সবাইকে সবার পছন্দ হবে এমন কোন কথা নেই তন্নী।চলো আমরা নীচে যাই”,রেখা দেবী গম্ভীর হয়ে বললেন।
ওরা সবাই নীচে গেল।
“ভালোই হল তোমরা নীচে এসে পরলে।আমাদের একটু পরেই বেরতে হবে।তন্ময়ের মিটিং আছে।পরেশ বাবু ওনাদের আসতে দেখে বললেন।
“আজকেও মিটিং!একটা দিন ছুটি নিলে কি হতো?ওরা দুজন তো কথাই বলতে পারলো না”,রেখা দেবী কিছুটা রেগে বললেন।
“এখনই তো বের হচ্ছে না।কথা বলুক এখন।তারপর বের হবো”,পরেশ বাবু ওনার স্ত্রীর রাগ বুঝতে পেরে শুকনো ঢক গিলে বললেন।
“হ্যাঁ হ্যাঁ তরু তুই তন্ময়কে নিয়ে ছাদে যা।তোরা একটু আলাদা কথা বলে নে”,অনিমেশ বাবু সঙ্গে সঙ্গে বললে উঠলেন।
“চলুন”,তরু খুব আস্তে বলল।
ওরা দুজনে ছাদে গেল।অনেকক্ষন দুজনেই চুপ করে রইল।
নিরবতা ভেঙে প্রথমে তন্ময় বলল,”আচ্ছা আপনি কি আমার ওপর রেগে আছেন?”
“কেন আপনার ওপর আমি রেগে থাকতে যাবো?”,তরু অন্যদিকে তাকিয়ে বলল।
“না মানে আমার জন্যই তো আপনার হাত কেটে গেছে তাই আরকি!”,তন্ময় অপরাধীর মতো বলল।
“না আমি আপনার ওপর রেগে নেই।আপনি তো ইচ্ছে করে কিছু করেননি”,তরু তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল। ও বুঝতে পারছে তন্ময় নিজেকে অপরাধী ভাবছে।
“যাক বাঁচা গেল আমি ভাবছিলাম আপনি আমার ওপর রেগে আছেন!”, তন্ময় একটা বড়ো নিশ্বাস ফেলে বলল।
“একটা কথা বলবেন?”,তরু কিছুটা ইতস্তত করে বলল।
“কি কথা?বলুন”,তন্ময় জিজ্ঞেস করল।
“আপনি কি আমাকে আগে থেকেই চেনেন?”,তরু কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল।
“হ্যাঁ!”,তন্ময় স্বাভাবিক ভাবে বলল।
“কিন্তু কিভাবে?আমি তো আপনাকে চিনি না”,তরু অবাক হয়ে বলল।
হঠাৎ তন্ময় এর ফোন বেজে উঠলো।তন্ময় ফোন কেটে দিল।
“সে অনেক কথা যদি জানতে হয় তো কাল দেখা করুন”,তন্ময় ফোন পকেটে ঢুকিয়ে বলল।
“কেন? এখন এখানেই বলুন”,তরু ভ্রু কুঁচকে বলল।
“আজকে সম্ভব নয়!আমাকে এখুনি বেরতে হবে অফিস থেকে ফোন আসছে”, তন্ময় কিছুটা ব্যস্ত ভাব নিয়ে বলল।
“আমি আপনার সাথে দেখা করতে পারবো না”,তরু চোখ মুখ শক্ত করে বলল।
“আমি আঙ্কেল আর আন্টিকে সব বলে রাখবো চিন্তা নেই।চলি কাল কোথায় কখন দেখা করতে হবে পরে জানিয়ে দেব”,তন্ময় বাঁকা হেসে বলল।
আবার তন্ময় এর ফোন বেজে উঠল।
তরুকে কিছু বলতে না দিয়েই তন্ময় ফোনে কথা বলতে বলতে নীচে চলে গেল। আর তরু তন্ময়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,”আশ্চর্য তো আমাকে দেখা করতে বলে চলে গেল?চিনি না জানি না দেখা করবো?যাবোই না আমি।সব মিথ্যে কথা!আমাকেই চেনেই না।”
কিছু একটা ভেবে তৎক্ষণাৎ তরু বলল,”না না যেতে হবে আমিও তো বিয়ে করতে চাই না আর মা যেভাবে বললো মনে তো হচ্ছে একেই বিয়ে করতে হবে।তার থেকে ভালো দেখা করে বলে দেব আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না।তাহলেই সমস্যা নেই কোন।মা বাবা কিছু বললে বলবো ওনাকে আমার পছন্দ হয়নি!”
#চলবে……?