তোকে চাই❤
(সিজন-২)part: 73
#writer: নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
?
সাহেলের সাথে জেনি আর হ্যারিও স্টলে ঢুকলো। একটি বড় টেবিল ঘিরে বসে আছে সবাই। জেনী বারবারই কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। ডায়েরির বর্ননা অনুযায়ী প্রত্যেকটি মানুষকে চেনার চেষ্টা করছে সে। স্টলে ঢুকতেই প্রথমে দুটো বাচ্চার উপর নজর পড়লো জেনির। বাচ্চাদুটো ফিসফিস করে কিছু একটা বলছে আর হুটহাট হেসে উঠছে। জেনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। বাচ্চাদুটোর চেহারা এক কিন্তু কোথাও যেন সামান্য একটু পরিবর্তন আছে। কিন্তু পরিবর্তনটা ধরতে পারছে না জেনি। তাদের পাশেই বসে আছে লাল পাঞ্জাবী পড়নে আরেকটি ছোট্ট ছেলে। এতো বাচ্চা বয়সেই চোখে-মুখে দারুন গাম্ভীর্যতা। জেনি আর হ্যারি চেয়ার টেনে বসতেই সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো সাহেল,
— গাইস? আজকের জন্য ওরা আমাদের গেষ্ট। ওর নাম লুইস হ্যারিসন আমার ফ্রেন্ড পিটারের ছোট ভাই। আর উনি হচ্ছেন, জেনিফা কিংস্টোন —– হ্যারির উডবি।
হ্যারি-জেনিকে একগুচ্ছ মিষ্টিহাসি উপহার দিয়ে ওয়েলকাম জানালো সবাই। সাহেল বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বললো,
— হ্যারি এন্ড জেনি? আমাদের বাচ্চাপার্টির সাথে পরিচিত হও। সেইম ডিজাইনের যে দুইটা বাচ্চা বসে আছে ওদের নাম আদ্র এন্ড রোদ্র। দু’জনেই প্রচুর দুষ্ট। ওদের চেনার উপায় হলো চুল আর টোল। একজনের চুল হালকা কুকরানো আর অন্যজনের গালে টোল। বাচ্চারা? আন্টিকে হাই বলো।
আদ্র- রোদ্র চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। হ্যারির মতো বাদামি চুলের শুভ্রমানব হয়তো এর আগে দেখে নি তারা। তবে পরমুহূর্তেই বিনা কারনেই হেসে উঠে দু’জনে একসাথেই বললো,
— হাই আন্টি এন্ড আংকেল।
জেনি মিষ্টি করে হাসলো। সাহেল এবার পাশে বসে থাকা বাচ্চা ছেলেটার চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বললো,
— এটা হলো আমার ছেলে যদিও স্বভাবগুলো একদমই আমার মতো নয়। বাচ্চাদের মধ্যে সবচেয়ে গম্ভীর এবং টিপটাপ। সবকিছুই পার্ফেক্ট চায় তার। উনিশ থেকে বিশ হলেই রাগে বাড়ি মাথায় তুলে নেন ইনি।
ছেলেটা বাবার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দেওয়ায় বাবার প্রতি চরম বিরক্ত সে। সাহেল ছেলের দিকে তাকিয়ে বললো,
— বাবা? আন্টি আংকেলকে নিজের নাম বলো।
ছেলেটির কুঁচকানো ভ্রু আরো খানিকটা কুঁচকে গেলো। গম্ভীর মুখে বললো,
— হাই, মাই নেইম ইজ সাদাফ। নাবিল আল সাদাফ।
জেনি- হ্যারি দু’জনেই চমকে উঠলো। আড়াই বছরের পিচ্চি এতোটা স্পষ্ট করে কথা বলতে পারে! কিভাবে? সাহেল এবার শুভ্রতাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
— আর ইনি হচ্ছেন আমাদের প্রিন্সেস, শুভ্রতা।
শুভ্র খুব মনোযোগ দিয়ে পাউরুটি খাচ্ছিলো। নিজের নাম শুনে চোখ তুলে তাকালো সে। কথায় কোনো উৎসাহ না পেয়ে আবারও পাউরুটিতে মনোযোগ দিলো সে। পাশের চেয়ারে বসা শুভ্র মেয়ের দিকে ঝুঁকে এসে বললো,
— আম্মু? আন্টিকে সালাম দাও।
শুভ্রতা আবারও মুখ তুলে তাকালো। জেনিকে খুব মনোযোগ দিয়ে দেখে নিয়ে দু’একবার চোখ পিটপিট করে মিষ্টি হেসে বলে উঠলো,
— আছছামুয়াইকুম।
সাথে সাথেই পাশ থেকে প্রতিবাদী কন্ঠে বলে উঠলো আদ্র-রোদ্রের একজন,
— বোন? আছছামুয়াইকুম নয় আসসালামু আলাইকুম। তুই সবসময় ভুল করিস। সুন্দর করে বল।
শুভ্রতা এবার ভাইদের দিকে তাকালো। চোখ ঘুরিয়ে কিছুক্ষণ জেনির দিকে তাকিয়ে থেকে চোখের ভারি পল্লব কাঁপিয়ে আবারও বলে উঠলো,
— আছছামুয়াইকুম।
পাশে বসে থাকে ওই লাল পাড়ের সাদা শাড়ির মেয়েটা এবার মিষ্টি হেসে পরম আদরে মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে বললো,
— আমার মা টা….
মায়ের আদর পেয়ে মায়ের দিকে তাকালো শুভ্রতা। চুল টেনে মায়ের মুখটা নিচু করে এনে সে-ও কপালে চুমু দিয়ে বলে,
— আমাল মা তা!
সবাই হেসে উঠে এবার। জেনিরও শুভ্রতা নামের মেয়েটার কপাল,গাল সব জায়গা চুমুতে ভরিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু বাচ্চারা অপরিচিত ব্যক্তির অহেতুক আদর সহজভাবে নেয় না। তাই নিজের ইচ্ছেটাকে প্রশ্রয় না দিয়ে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে পরিষ্কার বাংলায় বললো,
— ওয়ালাইকুম সালাম। কেমন আছো শুভ্রতা?
শুভ্রতা তাকায়। মুখ টিপে হেসে বলে,
— আমি ভায়ো আচি। তুমি কেমন আচো?
জেনি জানালো সে ভালো আছে। শুভ্রতা আবারও পাউরুটি খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। কেউ ভালো থাকলে তার বিপরিতে কিছু বলতে শেখানো হয় নি তাকে। অতএব, এখন অযথা কথা বলার কোনো প্রয়োজন নেই তার। আবারও কথা শুরুর আগেই খাবার চলে এলো টেবিলে। প্লেটে মচমচে ইলিশ মাছ ভাজা দেখে সেদিকে হাত ইশারা করে বললো সে,
— আম্মু? ওতা খাবো।
— ওটা ঝাল মা। ওটা খেলে তোমার জিভ জ্বলবে। ওটা খাওয়া যাবে না৷
শুভ্রতা একবার চোখ বড় বড় করে মায়ের দিকে তাকিয়ে আবারও প্লেটটির দিকে তাকালো। কিন্তু কিছু বললো না। তাকে দেখে মনে হচ্ছে মায়ের কথা বিশ্বাস করে নিতেই অভ্যস্ত সে। মা যেহেতু বলেছে এটা ঝাল তারমানে এটা ভয়ানক ঝাল। সাহেল আর কারো সাথে পরিচয় না করিয়ে দেওয়ায় আশাহত হলো জেনি। সে কি সরাসরি রোদের কথা জিগ্যেস করবে? নাকি চুপ থাকবে? জেনির দ্বিধাদ্বন্দের মাঝেই একটা মেয়ে টেবিলের কাছে এসে দাঁড়ালো। শাড়ির আঁচল দিয়ে ঘাম মুছছে সে। গায়ে বাঙালীদের মতো করে পড়া লাল-সাদা শাড়ি। পেটটা অস্বাভাবিক বড়। জেনি বুঝতে পারছে মেয়েটি প্রেগনেন্ট। তার পেছনেই দাঁড়িয়ে আছে একজন সুদর্শন পুরুষ। মেয়েটি সবার দিকে তাকিয়ে অভিমানী কন্ঠে বলে উঠলো,
— আমাকে রেখেই খাওয়া শুরু করে দিয়েছেন আপনারা? কি স্বার্থপর!
কথাটা বলে মুখ কালো করে পেছনে দাঁড়ানো মানুষটির দিকে তাকালো সে। রাগী গলায় বললো,
— শেষমেষ তো আনলেই মেলায় তাহলে এতো ঢং করলে কেন? আমি কতোকিছু মিস করে ফেলেছি। ধেৎ! ভালো লাগে না।
শুভ্র হেসে বললো,
— কিছুই মিস করো নি চিত্রা। খাবার তো একদমই না। তবে আমি কিন্তু শিশির ভাইকে সাপোর্ট করবো। এই অবস্থায় খাওয়ার লোভে দৌড়ে আসাটা একদমই উচিত হয় নি তোমার।
সবাই মুখ টিপে হাসলো। সাহেল বললো,
— সত্যিই। এতো খাই খাই করলে কি চলে চিত্রা? কন্ট্রোল!
চিত্রা এবার রাগে লাল। এদের সবাইকে খুব কঠিন কিছু কথা শুনাতে ইচ্ছে করছে তার। কিন্তু তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই হুট করেই প্রশ্ন করলো জেনি,
— রোদ কোথায়?
“রোদ কোথায়?” কথাটা যেন বিস্ফোরণ ঘটালো। সবার হাসি হাসি মুখটা বিলীন হয়ে তাতে জমা হলো রাজ্যের বিস্ময়। সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। শুভ্রর মুখটাও গম্ভীর।লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পড়া মেয়েটাও অবাক চোখে একবার শুভ্র তো একবার জেনির দিকে তাকাচ্ছে। সবার এমন রিয়েকশনে জেনি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। একটা ঢোক গিলে আবারও প্রশ্ন করলো,
— রোদ কোথায়?
বিস্ময় কাটিয়ে জেনির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে উঠলো সাহেল,
— রোদের নাম কি করে জানেন আপনি?
জেনি নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বললো,
— আমি রোদের সাথে দেখা করতে চাই৷ উনার সাথে দেখা করতেই এতোটা দূর এসেছি আমি। ও কি বেঁচে আছে?
বিস্ময় ভাবটা যেন কয়েকগুণ বেড়ে গেলো সবার। একটা মেয়ে ইউএস থেকে শুধুমাত্র রোদের সাথে দেখা করতে আসবে বিষয়টা বড্ড গোলমেলে লাগছে তাদের। সাদা শাড়ি পড়া মেয়েটা মৃদু গলায় বলে উঠলো,
— আমিই রোদ। কিন্তু আপনাকে তো চিনলাম না। কোথাও দেখেছি বলেও মনে হচ্ছে না।
” আমিই রোদ ” এই একটি কথাতেই যেন শ্বাস বন্ধ হয়ে এলো জেনির। নিজের চোখকে যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না সে।হ্যারি চুপচাপ বসে আছে। পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পেরেও কোনো ভাবাবেগ নেই তার। অন্য একটা কথা বেশ ভাবাচ্ছে তাকে। কথাটা শুনলে জেনি কেমন রিয়েক্ট করবে তাই ভেবে পাচ্ছে না সে। জেনি অবিশ্বাসী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো,
— আপনি রোদ? সত্যিই রোদ?
রোদ খানিকটা থতমত খেয়ে বললো,
— হ্যাঁ।কিন্তু কেন?
জেনি কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে রোদ-শুভ্রকে দেখে নিলো। ব্যাগ থেকে ডায়েরিটা বের করে রোদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
— এটা আপনার?
রোদ বেশ অবাক হলো। ডায়েরিটার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। নিজের ব্যাগ থেকে সেইম একটা ডায়েরী বের করে টেবিলে রাখলো সে। জেনি বিস্ফারিত চোখে দুটি ডায়েরিতে চোখ বুলিয়ে বিস্মিত কন্ঠে বললো,
— সেইম ডায়েরি! তাহলে এটা কি আপনার নয়?
#চলবে…
( এক্সট্রা পার্ট দিবে বিকেলে বা রাতে। লেখার মতো মন নেই এখন। অপেক্ষা করানোর জন্য দুঃখিত।)