#তৃষ্ণার্থ_প্রেয়সী(কপি নিষেধ)
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব ০৪ ||
এডমিশনের সকল ফর্মালিটি করার পর ফারিশ সানামকে নিয়ে বেরিয়ে আসলো। এদিকে সানাম টাকার চিন্তা করতে করতে ফারিশের থেকে কিছুটা পিছে আসছে যার ফলে কারো সাথে সানাম ধাক্কা খেলো। পিটপিট করে সামনে তাকিয়ে দেখলো অচেনা কয়েকটা ছেলে। ছেলেটা ক্রোধ দেখিয়ে বললো,
-“সমস্যা কী! চোখে দেখে চলতে পারো না?”
সানাম সরি বললো কিন্তু তাতেও কাজ হলো না। বারংবার ছেলেটি তাকে আজেবাজে কথা শুনিয়েই চলেছে, ছেলেটি একা নয় তার বন্ধুরাও তার সাথে তাল মিলিয়েছে। ফারিশ কি ভেবে পাশে তাকাতেই দেখলো সানাম নেই। অতি দ্রুত পিছে ফিরে দেখলো কয়েকটা ছেলে সানামকে ঘিরে ধরেছে। ফারিশ চোখ থেকে সানগ্লাসটা খুলে আবার পরলো। অতঃপর সেও এগিয়ে গেলো। ছেলেগুলোর অতিমাত্রায় বকবকানিতে সানামের এবার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। তার ভেতর কতো বড় তুফান চলছে সেটা একমাত্র সে-ই জানে। তাও যে সরি বলেছে এতেই তো ব্যাপারটা মিটমাট হয়ে যায়। কিন্তু না, তিল কে তাল তাদের বানাতেই হবে। সানাম নিজেকে দমাতে না পেরে রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠলো,
-“এই মিস্টার, আপনার কোনো রাইট নেই আমার সম্পর্কে এতকিছু বলার। আমি নাহয় দেখতে পাইনি, কিন্তু আপনি কী? আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলেন? আমার পাশ কেটে চলে যেতে পারলেন না? দোষ আমার না আপনার। তাও আমি সরি বলেছি বাট আপনি আজাইরা পকপক করেই চলেছেন! নিজেকে আগে আয়নায় দেখেন অতঃপর অন্যজনের প্রতিচ্ছবি খুঁজে নিয়েন! যত্তোসব!”
বলেই সানাম পাশ কেটে চলে আসলো। ফারিশের আর সেদিকে যাওয়া লাগলো না, তার আগেই সানাম তার কাছে চলে এসেছে। ফারিশকে দেখলে সানাম বলে উঠে,
-“আপনি কী আমার সাথে আসবেন, নাকি এই কাঠফাটা রোদে শুঁটকি করবেন?”
-“তুমি তো এমনিতেই শুঁটকি। আর কতো শুঁটকি হবা? বাই দ্যা ওয়ে, ওখানে কি হচ্ছিলো? কিছু বলেছে?”
-“আমি শুঁটকি হলে আপনার কী? আর ওরা আমাকে আর কি বলবে, প্রেমপত্র দিচ্ছিলো!” অনেকটা রেগেই বললো সানাম। সানামের রাগের৷ কারণ ফারিশ ধরতে পারলো না। বলা যায় কারণ জানার ইচ্ছাও তার নেই। তাই ফারিশ সানামকে নিয়ে গ্যারেজের দিকে গেলো। গ্যারেজ থেকে বাইক নিয়ে চলে আসলো বাড়িতে। ফারিশকে দেখে ছেলেগুলা চিনতে পারলো। তাদের মধ্যে সিনিয়র সন্ধি ভ্রু কুচকে বলে উঠলো,
-“ফারিশ ভাই না?”
-“হ মাম্মা! কিন্তু ওর সাথে এই মেয়ে কি করে? আজকাল মেয়েবাজি শুরু করসে নাকি?”
-“সে জেনে আমার কোনো কাজ নাই। মেয়েটার এতো বড় সাহস এই সন্ধিরে কথা শুনিয়ে দিয়ে গেছে! নতুন হয়ে এতো সাহস কই পায়, সিনিয়রদের সাথে এভাবে কথা বলার!”
-“আরে সমস্যা না ব্রো! তুমিও ফর্মালিন দিয়ে দিও, যাকে বলে ঠিকসময়ে কোপ। এখন চলো ওদিকে আমাদের র্যাগিংও বাকি।”
-“ঠিক আছে চল।”
সানামকে বাসায় দিয়ে ফারিশ বাইক নিয়ে কোথায় যেন চলে গেলো। এদিকে সানামের এখন আরেক ভয়, লিফটে সে এখনো অভ্যস্ত নয়, ফারিশও নাই যে তার হেল্প নিবে। এখন কিভাবে লিফটে উঠবে? দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে লিফটের সামনে এসে দাঁড়ালো সানাম। বামপাশে নজর দিতেই দেখলো সিঁড়ি। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গেলে তো সানাম ভর্তা হয়ে যাবে। সানাম একবার সিঁড়ির দিকে তাকাচ্ছে তো আবার লিফটের দিকে। ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না কীভাবে যাবে। অতঃপর সিঁড়ির দিকেই পা বাড়ালো।
.
ফারিশের বাইক নিয়ে গলি থেকে বের হতেই মনে পরলো সানাম তো লিফটে চড়তে পারে না। “শিট” বলে জোরে বাইকের ব্রেক কষলো। মিনমিন করে আবারো বললো, “সামি, সেজান। তোদের হাতের নাগালে পাই, তখন ঠ্যালা তোদের বুঝায় দিবো। নিজে বাঁচি না এক জ্বালায় এখন আবার আরেকটা জ্বালা গলায় ঝুলায় দিছে! ধ্যাত!”
বলেই এক চাপড় মারলো বাইকে। অতঃপর বাইক স্টার্ট দিয়ে বাইক ঘুরিয়ে বাসার দিকে চলে গেলো। বাড়িতে এসে দেখে লিফট অফ, ফারিশের কিছুটা চিন্তা হলো। তখনই দারোয়ান ফারিশকে পিছু ডাকলো।
-“আরে ফারিশ বাবা যে। কোথাও কী গেছিলা?”
দারোয়ান চাচার কথায় ফারিশের ধ্যান ভাঙলো। ফারিশ পিছে ফিরে ঠোঁটে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে বললো,
-“হ্যাঁ চাচা। তা কেমন আছেন?”
-“এইতো বাবা, তোমাদের দোয়ায় ভালো আছি।”
-“আচ্ছা চাচা, এখানে কী কিছুক্ষণ আগে কোনো মেয়েকে দেখেছিলেন?”
-“না বাবা। আমি তো মাত্রই টঙ হয়ে চা খেয়ে আসলাম। কেন বাবা কিছু কি করেছে?”
ফারিশ যেন আরও চিন্তায় পরলো। ফারিশকে চিন্তিত দেখে দারোয়ান চাচা বলে উঠে,
-“তুমি চাইলে সিসিটিভি ক্যামেরা দেখতে পারো!”
ফারিশ যেন আশার আলো পেলো। মুহূর্তের জন্য সিসিটিভি ফুটেজের কথা তার মাথা থেকেই বেরিয়ে গেছিলো। ভাগ্যিস দারোয়ান চাচা বললো। ফারিশ দারোয়ানের সাথে দারোয়ানের ঘরে চলে গেলো। সেখানেই ফুটেজ দেখতে পারবে। ফারিশ সময় সেট করে ফুটেজ দেখে নিলো। সানাম সিঁড়ির দিকে গেছে দ্যাট মিন, সে সিঁড়ি দিয়ে উপরে যাচ্ছে। ফারিশ দারোয়ানকে “ধন্যবাদ” দিয়ে জলদি করে লিফটের দিকে ছুটলো। একটা অনুমান করে সে ৬ ফ্লোরের বাটন চাপলো। সশব্দে লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে গেলো। ৬ ফ্লোরে আসতেই দরজা খুলতেই দেখলো সানাম সিঁড়িতে বসে হাঁপাচ্ছে এবং কিছুক্ষণ পরপর ওড়না দিয়ে কপাল এবং গলার ঘাম মুছছে। সানামের অবস্থা দেখে ফারিশের রাগ উধাও হয়ে গেলো এবং ফিক করে হেসে দিলো। অট্টহাসির শব্দে সানাম পিছে ফিরে দেখে ফারিশ বুকে হাত দিয়ে হেসেই চলেছে। ফারিশকে দেখে সানাম সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেলো। ফারিশ ব্যঙ্গ করে বললো,
-“কী সখ মিটেছে তো সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠার? ৬ ফ্লোর উঠেই তোমার জোর ফুস হয়ে গেছে! কথার বেলায় তো দুনিয়া উল্টায় ফেলো, এখন ওইসব এনার্জি কই পালালো?”
-“দেখেন একদম খোচা দিয়ে কথা বলবেন না! আমি আপনার দোষে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে বাধ্য হইসি!”
-“আমি কী করলাম যে আমাকে দোষারোপ করছো? যত দোষ নন্দঘোষ, বাহ!”
-“আপনারই দোষ। আপনি জানেন না আমি লিফটে চড়তে পারি না, তাও আপনি আমাকে ফেলে উধাও হয়ে গেছেন।”
-“আমি ভুলে গেছি বুঝলাম, তোমার কী জরুরি ছিলো না আমাকে মনে করিয়ে দেয়ার?”
সানাম প্রতিত্তরে কিছুই বললো না।সে নিজেও জানে সে ভুল করেছে ফারিশকে না জানিয়ে। সানামকে এমন থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফারিশ কথা ঘুরিয়ে বললো,
-“এখন লিফটে আসবা নাকি এখানেই খাম্বার মতো দাঁড়ায় থাকবা?”
সানাম ভেঙচি কেটে ফারিশের সাথে লিফটে উঠে আসলো। এবার সানামের তেমন খারাপ লাগলো না। সানামকে ৮ম ফ্লোরে দিয়ে ফারিশ আবার নিচে চলে গেলো। সানাম ফাইলগুলা নিয়ে বাসায় চলে আসলো। বাসায় এসে দেখলো ইকরাম ফরিদ চা খাচ্ছে আর টিভিতে নিউজ দেখছে। ইকরাম ফরিদ ব্যাংকে কাজ করতো, গত ১০মাস আগেই তিনি রিটায়ার হয়েছেন। সেই থেকেই উনি ঘরে বসা। এদিকে বুয়া রান্নাঘরে কাজ করছে। নানী নিজের ঘরে কি করছে, না করছে সে-ই জানে। সানাম দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালো। একটা বেজে ছয় মিনিট। ইকরাম ফরিদ সানামকে দেখে মুচকি হেসে বলে,
-“এডমিশনের সব ফর্মালিটি সব হয়েছে তো মা?”
-“জ্বী আঙ্কেল। আগামী পরশু মানে শনিবার থেকে
ক্লাস শুরু হবে।”
-“যাক তাহলে তো ভালোই। এখন গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো, ভালো থাকবে।”
উত্তরে সানাম মুচকি হেসে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। যেতে যেতে মিনমিন করে বললো,
-“ওই ফানুস থুক্কু ফারিশটার কথা জিজ্ঞেস করলো না কেন? যাক গে, জিজ্ঞেস করেনি ভালোই হয়েছে।”
বলেই সানাম হাতের ফাইলগুলো জায়গামতো রেখে বোরকা হিজাব খুলে ওয়াশরুমের দিকে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে সানাম ভাবছে অন্তু আন্টি লাঞ্চ ব্রেকে বাসায় ফেরে কিনা! এদিকে খুদাও পেয়েছে প্রচন্ড! কীভাবে লিভিংরুমে যাবে আর খাবার চাইবে ঠিক বুঝতে পারছে না। অস্বস্তিবোধ যেন তাকে চেপে ধরেছে। খুদার জ্বালা ভুলতে সানাম তার ব্যাগ থেকে জামাকাপড় বের করে রেকে গুছাতে ব্যস্ত হয়ে পরলো। দুপুর দু’টায় অন্তু ফিরলেন ফারিশের সাথে। ফারিশই তার মাকে পিক করতে গিয়েছিলো। অন্তু বাইক আগে ভয় পেলেও, ছেলের সাথে আসতে আসতে সেই ভয় আর নেই, রীতিমতো অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অন্তু ফারিশকে ফ্রেশ হতে বলে নিজের ঘরে চলে গেলো। অতঃপর সানামকে ডেকে খেয়ে নেয় সবার সাথে। অন্তু আন্টিকে পেয়ে সানাম যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। দুপুরে সকলেই যে যার মতো ঘুমাতে চলে যায়। খাওয়ার পর সানামেরও বেশ ঘুম পাচ্ছে কারণ সে গতরাতে এক মিনিটের জন্যেও ঘুমাতে পারেনি। তাই সে দেরী না করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। অতঃপর ঘুমিয়ে গেলো।
~চলবে।