তুমি_প্রেম_হলে_আমি_প্রেমিক পর্ব-০৩

0
16

#তুমি_প্রেম_হলে_আমি_প্রেমিক

পর্ব:৩

পা টিপে টিপে ছাদে আসে প্রিয়তা। ঘুটঘুটে অন্ধকারে নিজের হাতটাও দেখা যায়না। অন্যদিন হলে সে ভয় ছাদের সিঁড়ির কাছেও আসতো না। অন্ধকার ভীষণ ভয় পায় সে। কিন্তু আজ সে জানে, তার ভয় নেই। এক জোড়া বলিষ্ট হাত তাকে আগলে রাখবে।
ছাদে উঠে দক্ষিণের দিকে তাকাতেই মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে প্রিয়তার। দূর থেকে এক বিন্দু আগুন দেখতে পারছে সে। মানুষটা ধূমপানেই নিজের ভালো থাকা খুঁজে নিয়েছে। ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রিয়তা সেদিকে তাকিয়ে।

বেশ কিছুক্ষণ উচ্ছ্বাসের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকে সে। ইচ্ছা করেই সাড়াশব্দ করেনা। উচ্ছ্বাস জানতে পারলেই আবার কঠোর গলায় গাদা গাদা কথা শোনাবে তাকে। তারচেয়ে যতক্ষণ দূর থেকে দেখতে পাওয়া যায়, ক্ষতি কি?
উচ্ছ্বাস হাতের আধখাওয়া সিগারেটটা কি মনে করে টান দিয়ে দূরে ফেলে দেয়। কেমন যেনো তেতে আছে মুখটা। কিছুই ভালো লাগছে না তার। সবকিছু বিবর্ণ লাগে।
পাশে থাকা গীটারটা তুলে নেয় সে। টুংটাং করে আওয়াজ তোলে। কিছুতেই তার মনমতো হয়না। ইচ্ছা করে টান দিয়ে তারগুলো ছিঁড়ে ফেলতে।
অল্পতেই মেজাজ হারিয়ে ফেলে উচ্ছ্বাস ইদানীং। খুব কষ্টে নিজেকে সংবরণ করে সে নিজেকে।

‘কবিতা
তুমি স্বপ্নচারিনী হয়ে খবর নিও না।
কবিতা
এই নিশাচর আমায় ভেবো না সুখের মোহনা।’

প্রিয়তা স্থাণুর মতো জমে যায় উচ্ছ্বাসের গান শুনে। কতোটা আবেগ দিয়ে একটা মানুষ এতো সুন্দর গান করতে পারে? সে ভেবে পায়না। চোখ জোড়া কেমন জ্বালা করতে থাকে তার। সে কষ্ট পেতে চায়না, তবুও বার বার বেহায়া মনটা কেনো জোর করে তাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে?

গান থামিয়ে উচ্ছ্বাস গীটারটার উপর মাথা রেখে বসে থাকে কিছুক্ষণ। প্রিয়তা অনিচ্ছাসত্ত্বেও পিছন ঘুরে তাকায়। এখন এই মানুষটাকে বিরক্ত করতে ইচ্ছা করছে না তার।

“কেনো এসেছো এখানে?”
প্রিয়তার শরীরে বিদ্যুত খেলে যায়। তার মানে উনি জানতেন যে ও এখানে? এখন কি খুব রাগ করবে ওকে লুকিয়ে গান শোনার অপরাধে? পিছনে ঘুরে তাকাতে ভয় করে প্রিয়তার।
উচ্ছ্বাস ততক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে তার পিছনে। প্রিয়তা সেদিকে না তাকিয়েই বুঝতে পারছে এক জোড়া রাগী লাল চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে। প্রিয়তার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়।
“এদিকে ঘুরে তাকাও।”
প্রিয়তা ভয়ে ভয়ে উচ্ছ্বাসের দিকে ঘোরে। চোখ বন্ধ করে একদমে বলতে থাকে সে।
“বিশ্বাস করুন, আপনাকে বিরক্ত করতে আসিনি আমি। আপনার গান শুনতেও আসিনি। দয়া করে আমাকে বকা দিবেন না।”
উচ্ছ্বাস ভ্রু কুঁচকে বললো,”তুমি চোখ বন্ধ করে আছো কেনো? রাতকানা নাকি তুমি?”
প্রিয়তা অবাক হয়ে উচ্ছ্বাসের দিকে তাকায়। সে কি মজা করলো তার সাথে? কিন্তু তার চেহারা দেখে তো মনে হচ্ছে না মজা করেছে। শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে প্রিয়তার দিকে। চোখজোড়া একটু বেশিই শান্ত লাগছে।
“এইতো চোখ খুলেছো। এবার বলো এখানে কেনো এসেছিলে?”
প্রিয়তা কিছুটা ইতস্তত করে আস্তে আস্তে বললো,”আপনাকে ধন্যবাদ দিতে।”
উচ্ছ্বাস ঝট করে তাকায় প্রিয়তার দিকে।
“ধন্যবাদ দিতে মানে? আমাকে কেনো ধন্যবাদ দিবে তুমি?”
প্রিয়তা মাথা নিচু করে লাজুক সুরে বললো,”আমাকে বিরক্ত করে দেখে আপনি ওই বদমাশগুলোকে মেরেছেন। আজ আমি অনেক অনেক খুশি। পৃথিবীর সকল শব্দ দিয়ে ধন্যবাদ জানালেও কম হয়ে যাবে।”
উচ্ছ্বাসের মুখটা হঠাৎ অন্ধকার হয়ে যায়। প্রিয়তার দিক থেকে চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকায় সে।
“এসব কথা কে বলেছে তোমাকে? আমি কেনো এসব করতে যাবো? অদ্ভুত তো, নিজেকে ভাবো কি তুমি? তোমাকে কে বিরক্ত করলো না করলো তাতে আমার কি?”
প্রিয়তা কিছুটা ঘাবড়ে যায়। এরপর তার হঠাৎ মনে হয় নিশ্চয়ই ধরা দিতে চাইছে না বলে এসব বলছে মানুষটা।
প্রিয়তা মুখ টিপে হেসে বললো,”সে আপনি যাই বলেন, আমি জানি এসব আপনিই করেছেন। সকালে বখাটে গুলো যখন আমাকে বাজে কথাগুলো বলছিলো, তখনই আপনার মাথা গরম হয়ে গেছে। আর তারপরই আপনি প্রতিশোধ নিতে খুব মেরেছেন ওদের।”
উচ্ছ্বাস হঠাৎ প্রিয়তার চোখের দিকে তাকায়। তার চোখ কিছুটা লাল হয়ে আছে, অন্ধকারের মধ্যেও দেখতে ভয়ানক লাগে।
“একদম চুপ। এটা কোনো সিনেমা চলছে না। আমি কোনো প্রতিশোধ নিইনি বুঝেছো? আমার কোনো দায় পড়েনি তোমার জন্য মারামারি করার। এটা নিয়ে আর একটা কথাও তুমি আমার সামনে বলবে না।”
হতভম্ব অবস্থায় প্রিয়তাকে রেখে রাগে লাল হয়ে উচ্ছ্বাস নেমে যায় নিচে। মুখ কালো হয়ে প্রিয়তা দাঁড়িয়ে থাকে অন্ধকারের মধ্যে। তার মন বলছে এই কাজ উনিই করেছেন। কিন্তু এভাবে অস্বীকার কেনো করলেন উনি?

পাশে তাকাতেই প্রিয়তা দেখে উচ্ছ্বাস ভুলে তার গীটারটা ফেলে চলে গেছে। ধরবে না ধরবে না করেও কি মনে করে গীটারটা তুলে ধরে সে। গীটারের তারের জায়গাটায় নাক ডুবিয়ে দেয় কিছু না ভেবেই। এখনো তো মানুষটার আঙ্গুলের ঘ্রাণ লেগে আছে ওখানে। হয়তো কখনো ভাগ্য হবে না কাছ থেকে উনার ঘ্রাণ নেওয়ার। এটুকুতে ক্ষতি কি? প্রিয়তার বুকটা কেমন করে ওঠে। ও নিজেই বুঝতে পারে না ও কেনো এমন পাগলামি করছে? এটা কি তার কাঁচা বয়সের আবেগ নাকি সত্যিই সে মনে প্রাণে উচ্ছ্বাস নামক এক আজব যুবকের প্রেমে পড়ে গেছে? যদি তাই হয় কি হবে এই ভালোবাসার পরিণতি? এই রহস্যময় পৃথিবীতে কাকতালীয় কিছুই কি ঘটে না? যদি ঘটে যায়? যদি সে চিরজীবনের জন্য আপন করে পায় ওই পাগল করা দৃষ্টির সুদর্শন যুবকটাকে? এটা কি তার জীবনে পাওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার হবে না?
প্রিয়তা আকাশের দিকে তাকায়। গুমোট গরম পড়েছে। অনেকদিন বৃষ্টি নেই, প্রকৃতি উত্তপ্ত হয়ে আছে। সেই সাথে উত্তপ্ত হয়ে আছে তার মনটাও। প্রকৃতি আর তার মন দুই জায়গাতেই এখন প্রবল বর্ষণ দরকার। সেই বর্ষণে সব খরা কেটে শীতল হয়ে যাবে সব, প্রশান্তি নামবে হৃদয়জুড়ে।

প্রিয়তা ঘরে ঢুকতেই পেখম হুড়মুড় করে ছুটে এসে ঘরে দরজা লাগিয়ে দেয় ভিতর থেকে। গোল গোল চোখে তাকিয়ে থাকে প্রিয়তার দিকে।
প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
“কি হয়েছে পেখম? এভাবে দরজা বন্ধ করে দিলি যে?”
পেখম কিছু বলতে যাবে তার আগেই দেখে তার আপার হাতে গীটার। খুব বেশি ভুল না হলে গীটারটা উচ্ছ্বাস ভাইয়ের। ওই গীটার তার আপার হাতে কেনো?
“তুই এই গীটার কোথায় পেয়েছিস?”
“কোথাও পাইনি। দয়া করে এখন একটু চুপ থাক। আমার খুব মাথা যন্ত্রণা করছে, আমি ঘুমাবো।”
প্রিয়তা গীটারটা তার মাথার কাছে রাখে। পেখম কিছু বলতে যেয়েও বলেনা।

কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে পেখম মুখ ভোঁতা করে বললো,”আপা বাবা মায়ের মধ্যে বেশ বড় একটা যুদ্ধ বেঁধে গেলো কিছুক্ষণ আগে। তুই ছিলি না বলে কিছুই জানতে পারলি না। বাবা খুব রেগে গিয়েছিলো মায়ের উপর। মা ও কম যায়না। দুইজন মিলে খুব ঝগড়া করলো অনেকক্ষণ। এখন দেখছিস না পরিবেশ কেমন শান্ত। দুইজনই ঝগড়া করে হাঁপিয়ে উঠেছে। এখন বিশ্রাম করছে। বিশ্রাম নেওয়া শেষ হলে হয়তো আবার দ্বিতীয় অধিবেশন বসবে ঝগড়ার।”
প্রিয়তা ধড়ফড় করে উঠে বসে। বাবা মায়ের ঝগড়া তাদের বাড়িতে নতুন কিছু না,প্রায়ই হয়। তবে বেশিরভাগ সময় মা একাই বলে যায় সবকিছু, বাবা চুপ করে থাকে। আর মুচকি মুচকি হাসে। তবে বাবা রেগে যাওয়া মানে মোটেই সাধারণ কিছু হতে পারেনা।
“কথাটা একটু কম বল পেখম। তুই অতিরিক্ত কথা বলিস যেটা আমার পছন্দ না। মূল কথাটা বল। কি নিয়ে ঝগড়া হয়েছে বাবা মায়ের?”
পেখম ঢোক চেপে ফিসফিস করে বললো,”তোর বিয়ে নিয়ে।”
চমকে ওঠে প্রিয়তা।
“কি বললি তুই? কার বিয়ে?”
“তোর বিয়ে রে আপা। বড় খালা কোন বড়লোক ব্যবসায়ী ছেলের সম্বন্ধ এনেছে তোর জন্য। আগামীকালই নাকি ছেলেপক্ষ তোকে দেখতে আসতে চায়। কিন্তু বাবা কোনোভাবেই তোকে এখন বিয়ে দিতে রাজি নয়। এসব নিয়েই ঝামেলা বেঁধেছে দুইজনের মধ্যে।”
প্রিয়তার সামনে পুরো দুনিয়া কেমন দুলে ওঠে। অন্ধকার হয়ে আসে সবকিছু।
“জানিস আপা, বড় খালা নাকি এটাও বলেছে যে পছন্দ হয়ে গেলে খুব বেশি দেরি করবে না। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ের ব্যবস্থা করবে তারা।”
প্রিয়তার চোখমুখ ফ্যাকাশে হয়ে আসে। মেরুদণ্ড বেয়ে একটা শীতল স্রোত নেমে যায়। এই দুর্যোগের জন্য সে প্রস্তুত ছিলো না কোনোভাবেই। এটা কি শুনলো সে?
পেখম প্রিয়তার বাহুতে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো,”এই আপা, শুনছিস আমি বলছি?”
প্রিয়তা যন্ত্রের মতো বললো,”শেষ পর্যন্ত কি সিদ্ধান্ত হলো?”
পেখম ইতস্তত করে বললো,”মায়ের জিদের কাছে বাবা আপাতত হার মেনেছে। আগামীকাল পাত্রপক্ষ আসবে তোকে দেখতে। তবে বাবা বলেছে যে, বাবা ওদের সাথে কথা বলবে। তোর পড়াশোনা শেষ হওয়া পর্যন্ত সময় চাইবে। যদিও মা আর বড় খালা চায় এখনই সেরে ফেলতে বিয়ের কাজ। তবে তুই একদম চিন্তা করিস না। বাবা যখন বলেছে পড়াশোনা শেষ না হলে তোর বিয়ে হবে না, তাহলে কোনোভাবেই হবে না। তুই দেখিস….”
পেখমের কোনো কথা কানে যাচ্ছে না প্রিয়তার। কান দিয়ে গরম ঝাঁঝ বের হচ্ছে শুধু। মায়ের জিদ ভয়ানক। মা একবার জিদ করলে বাবা কিছুই করতে পারবে না। যদি সত্যিই আর কিছু করার না থাকে? সত্যি সত্যিই অন্য একজনকে বিয়ে করে নিতে হবে তাকে? কি হবে তার স্বপ্নের? কি করবে এখন সে? পালিয়ে যাবে দূরে কোথাও? কিন্তু কোথায় পালাবে? আর পালালেও কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? তার বাবা একজন সম্মানিত শিক্ষক। অর্থের অভাব থাকলেও এলাকা জুড়ে তার সম্মান কম নয়। মানুষ যদি শোনে কবির স্যারের বড় মেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে, তার বাবা তো বাইরে মুখ দেখাতে পারবে না। মেয়ে হয়ে বাবার এতো বড় ক্ষতি কীভাবে করবে? এসব একগাদা ছাঁইপাশ চিন্তা ঘুরপাক খেতে থাকে তার মাথায়।
পেখম প্রিয়তার কোল ঘেঁষে বসে।
“আপা কি ভাবছিস?”
প্রিয়তা পেখমের দিকে তাকিয়ে বললো,”ঘুমিয়ে পড়, অনেক রাত হয়েছে।”
প্রিয়তার কণ্ঠের উত্তাপ টের পায় পেখম। কষ্ট হচ্ছে তার আপার জন্য। কিন্তু সে কি করবে? বড় খালা তাদের পরিবারের মাথা বলা যায়। সেই ছোট থেকেই ওরা দেখছে, জোর করে কিছু টাকা দিয়ে সাহায্য করে বড় খালা তাদের সবকিছুতে খবরদারি করে। আজ পর্যন্ত ওরা দুইবোন নিজেদের পছন্দ মতো কিছুই করতে পারেনা। বড় খালা সব ঠিক করবে। অষ্টম শ্রেণি পাশের পর কোন বিভাগে তারা পড়াশোনা করবে, এটা থেকে শুরু করে ঈদে কোন রঙের জামা তারা পরবে সব সিদ্ধান্ত নিবে বড় খালা। তার বাবা প্রতিবাদ করতে চায়। সে চায়, তার মেয়েরা অল্প পাক, কিন্তু নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিক। তার মায়ের তাতে খুব আপত্তি। তার কাছে তার বড় বোন পীর, আর সে সেই পীরের মুরিদ। তাকে যা বোঝানো হয়, সে তাই বোঝে। কোনো কিছুই চিন্তাভাবনা না করে বোনের কথামতো তার স্বামীর সাথে ঝগড়া করে, চিৎকার চেচামেচি করে। কবির শাহ শান্তিপ্রিয় মানুষ। অনেকটা চাপে পড়েই, সংসারের শান্তি বজায় রাখতে অনিচ্ছাসত্ত্বেও স্ত্রীর কথা মেনে নেয় সে। যেমন আজও নিতে হলো। পেখমের ভীষণ কান্না পায় তার আপাটার জন্য। সে তো ভালো করেই বুঝতে পেরেছে তার আপা উচ্ছ্বাস ভাইয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। কিন্তু এ যে অসম্ভব। একটা এতীম, বাউন্ডুলে ছেলের কাছে তার মা জীবনেও মেয়েকে বিয়ে দিবে না। একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পেখম পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে।

শুধু ঘুম নেই প্রিয়তার চোখে। বালিশে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে বসে থাকে সে সারাটা রাত। দুই চোখ বেয়ে অঝোরে পানি পড়তে থাকে টপটপ করে। যন্ত্রণায় মাথা ফেটে যাওয়ার যোগাড়। সেদিকে খেয়াল নেই প্রিয়তার। গীটারটা ছুঁয়ে দেখে মাঝে মাঝে। তখনই চাপা কষ্ট বাড়তে থাকে। এভাবেই একটা নির্ঘুম রাত কেটে যায় তার প্রচন্ড অস্থিরতার সাথে।

ভোরের দিকে একটু চোখ লেগে আসে প্রিয়তার। সকালের সূর্যের আলো জানালা গলে মুখে এসে পড়ে। সাথে সাথে হুড়মুড় করে উঠে বসে সে। কাঁদতে কাঁদতে চোখ বেশ ফুলে গেছে তার। তাকাতে কষ্ট হচ্ছে। সারারাত ঘুম না হওয়ায় মাথা ঝিমঝিম করছে, বুকে ব্যথা করছে।
পাশে তাকাতেই দেখে পেখম নেই। ঘড়ির দিকে তাকাতেই চমকে ওঠে। নয়টা বেজে গেছে অথচ কেউ তাকে ডাকেনি। একটু পরেই যে তার কলেজের ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।
তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়ায় প্রিয়তা। শরীরটা ভীষণ দূর্বল লাগছে তার।

“এ কি রে মা, তুই উঠে গেলি?”
প্রিয়তা কিছুটা অবাক হয়ে তাকাতেই দেখে তার মা দাঁড়িয়ে আছে তার দিকে মিষ্টি করে হেসে। সকালের এই সময় তো তার মেজাজ তুঙ্গে থাকে। আজ হঠাৎ কি ব্যাপার?
“মা তুমি?”
মার্জিয়া বেগম কিছুটা উদ্বেগ নিয়ে ছুটে এসে মেয়ের কপালে হাত দেয়।
“তোকে এমন লাগছে কেনো? তোর শরীরটা কি খারাপ? রাতে ঘুম হয়নি?”
প্রিয়তা মুচকি হাসে, উত্তর দেয়না।
মার্জিয়া বেগম কি মনে করে মেয়ের হাত ধরে তাকে খাটে বসায়।
“মা তুমি কি কিছু বলবে? কলেজ থেকে এসে তোমার কথা শুনি? দেরি হয়ে গেছে একদম।”
“আজ তোকে কলেজে যেতে হবে না। আজ তুই বাড়িতেই থাকবি। সারাদিন রূপচর্চা করবি। কাঁচা হলুদ বাটা মুখে লাগিয়ে গোসল করবি। বিকালের দিকে তোর সেতারা আপা আসবে। সে তোকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিবে। আমার গাঢ় নীল জমিনের কাতান শাড়িটা তোর খুব পছন্দ না? ওটা পরলেও তোকে দারুণ লাগে। ওটা পরতে দিবো আজ তোকে। একদম পুতুলের মতো লাগবে আমার মেয়েটাকে আজ।”
মার্জিয়া বেগম মুখ টিপে হাসে।
প্রিয়তা হতভম্ব হয়ে মায়ের দিকে তাকায়। একদমে কথাগুলো বলে গেলো তার মা। প্রিয়তা কিছু বলার সুযোগই পেলো না।
“মা আমার কথাটা শোনো….”
“এই রে, রান্না বসিয়ে এসেছি চুলায়। পুড়ে যাবে তো। বুঝিস তো, এতোগুলো মেহমান আসবে। সব আমাকেই করতে হবে। তোর বড় খালার মতো দশটা কাজের লোক তো নেই আমার। তুই উঠে পড়, আমি আসছি।”
প্রিয়তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মার্জিয়া বেগম চলে যায়। প্রিয়তা স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে খাটের উপর।

প্রিয়তাকে বেশ মনোযোগ দিয়ে সাজাচ্ছে সেতারা। সেতারা মর্জিনা বেগমের বড় মেয়ে। তারও বিয়ে হয়েছে খুব বড় বনেদি ঘরে, ছেলের বেশ কয়েকটা ব্যবসা। অল্প বয়সে বিবাহিত সেতারার আগের রূপ নেই। এককালের ডাকসাইটে সুন্দরী দুই বাচ্চার মা হয়েই কেমন যেনো বুড়িয়ে গেছে। পড়াশোনাটাও শেষ করেনি সে।
“প্রিয়তা এভাবে মূর্তির মতো বসে আছিস কেনো বল তো তুই? মুখটা এমন ভোঁতা করে রাখলে যতোই সাজাই দেখতে ভালো লাগবে না।”
প্রিয়তার ইচ্ছা হলো চিৎকার করে বলে,’ভালো না লাগুক তাই তো চাই।’
কিন্তু মুখে বলতে পারেনা। ম্লান হাসে শুধু।
সেতারা কি মনে করে প্রিয়তার দুই বাহু ধরে তাকে নিজের দিকে ফেরায়।
“এই সত্যি করে একটা কথা বল তো, তোর কোনো প্রেমিক আছে নাকি আবার?”
প্রিয়তা চমকে তাকায় সেতারার দিকে। তার গলা কেঁপে ওঠে।
“দেখ বোন, ওসব চিন্তা মাথাতেও আনিস না। যদি কেউ থাকেও, তাকে ভুলে যা। এই আমাকেই দেখ না, কলেজে থাকতে একটা ছেলে আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসতো। বয়সের আবেগে আমিও গা ভাসালাম। এক অজানা সুখে ভাসছি তখন আমি। হঠাৎ মা বিয়ে ঠিক করে ফেললো তোর দুলাভাইয়ের সাথে। না বলার সুযোগ পেলাম না। কোটি কোটি টাকা রয়েছে, আর কি চাই? বিয়েটা হয়ে গেলো। এখন ভাবি, ভাগ্যিস মায়ের কথাটা শুনেছিলাম। এখনও আমার সেই পূর্ব প্রেমিক একরকম বেকার ঘুরে বেড়ায়। মাঝে মাঝে বিভিন্ন পত্রিকায় ছদ্মনামে প্রেমের কবিতা লেখে। এখন যদি আমি তাকে বিয়ে করতাম আমি কি সুখী হতে পারতাম?”
প্রিয়তা স্মিত হেসে বললো,”তুমি কি এখনো সুখী সেতারা আপা?”
সেতারা থতমত খেয়ে বললো,”সুখী হবো না কেনো? আমি অনেক সুখী। আমার বর দুই হাতে টাকা কামায়। আমি যা চাই তাই এনে দেয়। চোখে হারায় আমাকে। একটা মেয়ে সুখী হওয়ার জন্য আর কি দরকার?”
প্রিয়তা আবারও ছোট্ট করে হাসে।
“তাহলে তোমার চোখের নিচে কালি কেনো সেতারা আপা? এই বয়সেই কেমন ম্লান হয়ে গেছে তোমার সৌন্দর্য। এতো প্রাচুর্যতা তোমাকে সুন্দর রাখতে পারেনি? খুব বেশি বয়স তো তোমার হয়নি।”
সেতারা একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে অতি সাবধানে। ভিতরের বোবা কান্নাগুলো ঠেলে বেরিয়ে আসতে চায়। কিন্তু অনেক কষ্টে নিজেকে সামলায় সে।
“সোনা বোন আমার, এখন বুঝবি না পরে বুঝবি। সুখী হতে গেলে টাকার প্রয়োজন আছে। অভাব ঘরে ঢুকলে, ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালায়। তখন বুঝবি কাজলে চোখ কালো করার চেয়ে, নির্ঘুম রাত কাটিয়ে চোখের নিচে কালি ফেলানো ভালো।”
প্রিয়তা কিছু বলতে যাবে তার আগেই দরজা ধাক্কানোর শব্দে সেদিকে তাকায় ওরা দুইজন।

“কে?”
উত্তর আসেনা ওপাশ থেকে। প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
মিনিট দুই পরেই পেখম কাকে যেনো টানতে টানতে ঘরে ঢোকানোর চেষ্টা করে। প্রিয়তা ঘোর লাগা চোখে সেদিকে তাকায়।
“আরে আসুন না উচ্ছ্বাস ভাই, ভিতরে আসুন।”
উচ্ছ্বাস কঠিন গলায় বললো,”এ কি তুমি এভাবে হাত ধরে টানছো কেনো? আমি ভিতরে যাবো না বললাম তো। আমার গীটারটা এনে দাও।”
“আরে আসুন তো। নিজের গীটার নিজেই নিয়ে যান।”
জোরপূর্বক উচ্ছ্বাসকে নিয়ে ঘরে ঢোকে পেখম। সেতারা অবাক হয়ে সেদিকে তাকায়।
প্রিয়তা কাঁপা কাঁপা চোখে তাকায় উচ্ছ্বাসের দিকে। কলিজাটা ছিঁড়ে যাচ্ছে যেনো তার। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে। দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে শক্ত করে বসিয়ে রাখে সে।

প্রিয়তার দিকে হঠাৎ চোখ পড়তেই অদ্ভুত একটা নেশা তৈরি হয় উচ্ছ্বাসের বুকের মধ্যে। গাড় নীল রঙা শাড়িতে মেয়েটাকে একটা পরীর মতো লাগছে। চোখে টেনে কাজল দিয়েছে, যেটা তাকে আরো শতগুণে মোহনীয় করে তুলেছে। কোমর ছাঁড়ানো লম্বা চুলগুলো মেলে রেখেছে। কানে একটা ছোট্ট সাদা ফুল গোঁজা। সামান্য এতোটুকু সাজে প্রজাপতির মতো স্নিগ্ধ সুন্দর লাগছে অষ্টাদশী কিশোরীটাকে। উচ্ছ্বাস উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। মেয়েটা এতো আবেদনময়ী সুন্দরী, আগে বুঝতে পারেনি কেনো সে কখনো?
সেতারা কিছু বুঝতে না পেরে পেখমের দিকে তাকিয়ে বললো,”কি রে পেখম, তোর কি কোনোদিন আক্কেল হবে না? দেখছিস ওকে সাজাচ্ছি আমি। এরমধ্যে বাইরের একটা ছেলেকে কোন বিবেকে ঘরে ঢুকিয়ে নিয়ে এলি?”
প্রিয়তার ইচ্ছা করছে বলতে,’সেতারা আপা উনি বাইরের কেউ না। আমার কাছের, আমার অনেক কাছের।’
সেতারার কথায় ধাতস্থ হয় উচ্ছ্বাস। ছি ছি, এ কি করছে সে? এ যে অন্যায়। যে মানুষটা তাকে আশ্রয় দিয়েছে, তার ক্ষতি সে কোনোদিন করতে পারবে না। সে শুনেছে আজ মেয়েটাকে দেখতে আসবে, সব ঠিক থাকলে খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে। এই সময় অন্য কোনো চিন্তা করা শুধু অন্যায় নয়, পাপ।

উচ্ছ্বাস মাথা নিচু করে স্বভাবত কঠিন গলায় বললো,”আমার গীটারটা কোথায়? ওটা ফিরিয়ে দাও।”
প্রিয়তার গীটার ফিরিয়ে দেওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিলোনা। সারাজীবন ওটা তার কাছে রাখতে চায় সে। কিন্তু যার জিনিস তাকে ফেরত তো দিতেই হবে।
কাঁপা কাঁপা হাতে গীটারটা তুলে উচ্ছ্বাসের দিকে বাড়িয়ে ধরে। উচ্ছ্বাস এখনো অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। গীটারটা নিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যায় সে। প্রিয়তা একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। তার মন বলছিলো উনি আর একবার ফিরে তাকাবে তার দিকে। কিন্তু তাকে ভুল প্রমাণ করে উচ্ছ্বাস ওভাবেই বেরিয়ে যায়। প্রিয়তা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সন্তোর্পণে।

বসার ঘরে তিনজন মহিলা আর চারজন পুরুষ বসে আছে। তাদের চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে পরিবেশ পছন্দ হচ্ছে না তাদের। শুধুমাত্র মর্জিনা বেগমের জন্য তারা চুপ করে আছে।
কবির শাহ এক কোণায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেকে একটুও পছন্দ হয়নি তার। বয়স কম করে হলেও আটত্রিশ থেকে চল্লিশ হবে। মাথার সামনের দিকে হালকা টাক পড়েছে। উচ্চতাও বেশি নয়। তার এতো কম বয়সী মেয়ের সাথে একেবারেই বেমানান। কবির শাহ চুপ করে থাকে। এখনই কিছু বলার সময় নয়।
মর্জিনা বেগম খুশিতে ঝলমল করছে। এক এক করে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে কবির শাহ আর মার্জিয়া বেগমকে।
“উনি হলো ছেলের বাবা, আর তার পাশে ছেলের চাচা আর ফুপা। মাঝে যে বসে আছে সে পাত্র। আর উনি ছেলের মা, ছেলের ফুপু আর তার পাশেই ছেলের চাচী।”
ছেলের মা রুমাল দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে বললো,”আপা মেয়েকে আনুন। বেশিক্ষণ বসতে পারবো না। ছোট ঘরে বড্ড গরম।”
কবির শাহের কান গরম হয়ে যায়। স্ত্রীর দিকে তাকাতেই দেখে সে খুশিতে ডগমগ করছে। কোনো কথাই কানে যাচ্ছে না তার। খুশি হবে না কেনো? সে যা চায় তাই তো পাচ্ছে। দুই গাড়ি ভর্তি করে ছেলেরা এসেছে। এতো দামী গাড়ি দেখে এলাকার লোক ভীড় করেছে বাড়ির চারপাশে। মার্জিয়া বেগমের এতেই শান্তি।

মর্জিনা বেগম রাগী চোখে তাকিয়ে আছে প্রিয়তার দিকে। প্রিয়তা ভাবলেশহীন ভাবে বসে আছে।
“কোন আক্কেলে এমন নীল শাড়ি পরলি তুই? তোর গায়ের রঙের সাথে এই রঙের শাড়ি যায়?”
সেতারা পাংশু মুখে দাঁড়িয়ে আছে পাশে।
“তোর যা গায়ের রঙ, তাতে গোলাপী বা কমলা পরলেই ভালো হতো। এখন তো তোকে আরো কালো লাগছে।”
প্রিয়তা স্থির চোখে মর্জিনা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো,”আমি তো কালোই খালাম্মা। তারা যদি এভাবে আমাকে দেখে পছন্দ না করে, না করবে। আমি তো পানিতে পড়ে যাইনি।”
“শোনো মেয়ের কথা। খুব তো মুখে মুখে কথা শিখেছিস। একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ, উনাদের সামনে কোনো বেয়াদবি করবি না।”
প্রিয়তা ছোট্ট করে হেসে বললো,”নিশ্চিন্তে থাকুন খালাম্মা, আমার বাবা আমাদের বেয়াদবির শিক্ষা দেয়নি। কোনোদিন যখন করিনি, আজও করবো না।”
মর্জিনা বেগম মুখ বাঁকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

বিশাল ব্যবসায়ী নিয়াজ মোর্শেদ। প্রিয়তার সাথে একান্তে কথা বলার অনুমতি চেয়েছে। কবির শাহ কিছু বলার আগেই মর্জিনা বেগম জোর করে তাকে নিয়ে এসেছে প্রিয়তার ঘরে। প্রচন্ড অনিচ্ছাসত্ত্বেও প্রিয়তা এসেছে পিছু পিছু।
নিয়াজ টেবিলে সাজানো প্রিয়তার গল্পের বইগুলো দেখছে গম্ভীর মুখে। প্রচুর গল্পের বই প্রিয়তার, বলতে গেলে সে গল্পের বইয়ের পোকা।

প্রিয়তা এক কোণায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
নীরবতা ভঙ্গ করলো নিয়াজ।
“এই বইগুলো কার?”
প্রিয়তা ক্ষীণ গলায় বললো,”জ্বি আমার।”
“খুব গল্পের বই পড়ো বুঝি।”
প্রিয়তা উত্তর দেয়না। কেমন যেনো খুব বিরক্ত লাগছে তার।
নিয়াজ হঠাৎ বইগুলো টেবিলে রেখে প্রিয়তার দিকে তাকায়। তার মুখ হাসি হাসি।
“গল্পের বই পড়ার অভ্যাস বাদ দাও।”
প্রিয়তা ভীষণভাবে চমকে উঠে নিয়াজের দিকে তাকায়। হজম করতে পারেনি সে কথাটা।
“এসব বাজে অভ্যাস আমার পছন্দ নয়। বাড়ির বউ সারাদিন বইতে মুখ গুঁজে গল্পের বই পড়বে এই দৃশ্য অত্যন্ত বিরক্তিকর। আমাদের বাড়িতে অনেকগুলো কাজের লোক থাকা সত্ত্বেও রান্নাঘরের কাজ বাড়ির বউরাই করে, আর এটাই নিয়ম আমাদের বাড়ির। তাই তোমাকেও তাই করতে হবে। তখন এসব আজেবাজে অভ্যাস চাইলেও ধরে রাখতে পারবে না। স্ত্রী যতো কম জ্ঞানী, ততই পরিবারে শান্তি।”
রাগে কাঁপতে থাকে প্রিয়তা। উত্তর দেওয়ার মতো ভাষাও যেনো নেই তার। ভদ্রতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা এই লোকটা একটা বদমাশ, সে খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে।
“যে সংসারের ঘরনী কম বোঝে, সেই সংসারে শান্তি বেশি। বেশি বুঝলেই শান্তি নষ্ট।”
প্রিয়তা দাঁতে দাঁত চেপে বললো,”আপনি ধরেই নিয়েছেন যে এই বিয়েটা হবে?”
নিয়াজ হাসে, এতো কুৎসিত হাসি আগে দেখেনি প্রিয়তা। রাগে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলতে থাকে সে।

নিয়াজ প্রিয়তার অনেকটা কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,”প্রচুর টাকা আর বিত্ততার মধ্যে বড় হয়েছি আমি। ছোট থেকে যা চেয়েছি সব পেয়েছি। তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে। তাই তোমাকেই বিয়ে করবো আমি। সে তুমি চাও বা না চাও।”
প্রিয়তা ঝট করে তাকায় নিয়াজের দিকে। এখনো হেসে তাকিয়ে আছে সে। প্রিয়তার কঠিন রক্তিম দৃষ্টি উপেক্ষা করে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় নিয়াজ।

(চলবে……)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে