#তুমি_সন্ধ্যার_মেঘ
#হুমায়রা
#পর্বঃ৩৫
উষিরকে সেইদিনই হসপিটাল থেকে ডিসচার্জ করে দিয়েছিলো। সাথে পেয়েছিলো অফিস থেকে সাত দিনের ছুটি। সে তার সাতদিনের পুরো ছুটিটা স্ত্রী আর পরিবারের সাথে কাঁটাবে বলে আহ্লাদে আটখানা হয়ে পরেছিলো৷ কিন্তু বাড়ি ফেরার পর থেকে রাশা তার ধারের কাছেও ঘেঁষেনি৷ সকালে কোর্টে যায় আর সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফেরে। তখন উষির ঘরে থাকলে সে লিভিংরুমে থাকে আর উষির লিভিংরুমে থাকলে সে চলে যায় বৃষ্টি বন্যার রুমে। সেখানে অন্তত উষিরের পক্ষে বউকে আনতে যাওয়া সম্ভব না। এভাবেই দুই তিনদিন যাওয়ার পর অবশেষে তার স্ত্রী তার কাছে আসলো৷ তাও একা না। সাথে করে একটা কাগজ এনেছে। সেখানে উষিরের সাইন লাগবে। সেটা তার সামনে ধরতেই তার কপালে চিন্তার ছাপ আসলো। রাশা নিজে থেকে আসাতে মন উৎফুল্ল হয়েছিলো তো বটে কিন্তু বর্তমানে তার চিন্তাভাবনা পড়তে পারলো না। তাই প্রশ্ন করলো,
–এটা কিসের পেপার?
–আগে সাইন করো তারপর বলছি।
রাশা স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিলো। উষির তার এই স্বাভাবিক কথাবার্তায় হেসে ফেলে সাইন করে দিলো। রাশা সেটা মনোযোগ দিয়ে দেখলো আগে। তারপর তার দিকে তাকালো। সে বেশ মুগ্ধ চোখে তার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছে। রাশা আড়চোখে সেদিকে তাকিয়ে চাপা শ্বাস ফেলে বললো,
–এটা আমাদের ডিভোর্স অ্যাপ্লিকেশনের পেপার। আমি কাল জমা দিয়ে দেবো।
রাশা ভেবেছিলো, এটা শুনে উষির সাংঘাতিক রেগে কিছু একটা করে বসবে। হয়তো পেপারটাই ছিড়ে ফেলবে। কিন্তু এমন কিছুই না হওয়ায় খানিক অবাক হলো। উষিরের হাতে পাকোড়ার প্লেট ছিলো। সেখান থেকে একটা পাকোড়া মুখে পুরে শুনতে পায়নি এমন ভাবে আবার প্রশ্ন করলো,
–কিসের পেপার বললে?
রাশা কাগজটা শক্ত করে চেপে ধরে শ্বাস চেপে দম বন্ধ করে বললো,
–ডিভোর্সের অ্যাপ্লিকেশন। কোর্ট এটা অ্যাপ্রুভ করলে ডিভোর্স পেপার তৈরি করবে। চিন্তার কোন কারন নেই। আমার পরিচিত খুব ভালো একজন উকিল আছে। কোন ঝামেলা ছাড়াই তাড়াতাড়ি ডিভোর্স করিয়ে দেবে। কথা বলেছি আমি।
বলেই মনটা কেমন উদাস হয়ে গেলো। কয়েকদিন আগেই এই উকিলের কথাই তার বোনকে বলেছিলো। বোনের ডিভোর্স করিয়ে দিতে চেয়েছিলো সে। আর আজ সেই উকিলের থেকেই সে ডিভোর্স নিচ্ছে! ভাগ্যের কি করুন পরিণতি!
এরসাথে তার বুকটা দুরুদুরু করে কাঁপছে৷ শুধু মনে হচ্ছে, উষিরকে এটার ব্যাপারে না বললেই ভালো হতো। এই কাগজ একবার নষ্ট হলে সাইন আর পাওয়া যাবে না।
উষির শান্ত, স্বাভাবিক ভাবে পাকোড়া চিবোতে চিবোতে রাশার কথা শুনছিলো। কথা শেষ হলে মাথা নেড়ে হাত টি-শার্টে মুছতে মুছতে বললো,
–আচ্ছা! ভেরি গুড। আমিও এই সম্পর্কে থাকতে থাকতে হাপিয়ে উঠেছি। খুব এক ঘেয়েমি এসে গেছে৷ দেখি পেপারটা? কোন কিছু ভুল হলে তো আমাকে আবার কষ্ট করে সাইন করতে হবে।
হাত বাড়িয়ে দিলো সে। রাশা কাগজটা আরো শক্ত করে ধরে আর্ত স্বরে বললো,
–কোন দরকার নেই। আমি ভালোভাবেই দেখেছি। সব ঠিক আছে।
–আরে দাও না দেখি?
বলেই কাগজটার এক কোনা খামচে ধরলো। রাশার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। উষির যেভাবে ধরেছে তাতে না দিলে নির্ঘাত ছিড়ে যাবে। আর দিলে এটা আর পাওয়া সম্ভব না। এখন তুমি যেদিকে যাও সেদিকেই বিপদ!
একসময় রাশার আশঙ্কা সত্যি করে বিপদ একটা ঘটে গেলো। এই টানাটানিতে উষিরের সাইন করা অংশটুকু তার হাতে চলে গেলো আর রাশার হাতে বাকি অংশটুকু রয়ে গেলো। মূহুর্তেই আর্তনাদ করে উঠলো সে,
–এমনটা কেনো করলে?
–কি করেছি? তুমিই তো দিতে চাইলে না। এখানে আমার কি দোষ৷ উলটে আমার আরো খাটনি করতে হবে। সাইন করা কতো কষ্টের জানো?
উষির কাঁধ নাচিয়ে ঠোঁট উলটে অবুঝের মতো বললো। রাশা ক্ষিপ্ত স্বরে বললো,
–একটা ছিড়েছো তো কি হয়েছে? আমি খুব ভালো সাইন নকল করি। তোমারটাও করে দেবো।
–আমার কোন সমস্যা নেই৷ আমার কষ্ট একটু কমবে আর তোমার একটু বাড়বে।
রাশা বুঝতে না পেরে রাগী ভাবে প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকালে উষির ব্যাপারটা খোলসা করলো,
–আমার সাইন নকল করে আমার ব্যাংক থেকে মোটা অংকের টাকা উঠানোর জন্য তোমার নামে কেস করবো। সিমপল! ওইযে বলে না, ভালোবাসা না দাও প্রিয়, অন্তত একটা মামলা দিও। তারিখে তারিখে আমাদের দেখা তো হবে।
উষির বেশ নাটকীয় ঢঙে নিজের মতো সাজিয়ে হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসের উক্তি বলে গেলো। রাশার রাগী মুখ মুহূর্তের মধ্যে বিষন্নতায় ছেয়ে গেলো৷ সে তারিখে তারিখে আসতে পারবে না। সম্ভব না সেটা। হয়তো তাদের আর কখনও দেখাই হবে না। কখনোই না!
চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্ল্যান বি-তে কনভার্ট হলো রাশা। ক্লোজেট থেকে পুরোনো একটা অ্যাগ্রিমেন্ট পেপার বের করে উষিরের হাতে ধরিয়ে দিলো। তার পাকোড়া খাওয়াতে এবারেও বাঁধা আসায় বিরক্ত নিয়ে বললো,
–আবার এটা কি?
রাশা নিজের বিষন্নতা আড়ালে রেখে কোমরে হাত রেখে শক্ত গলায় বললো,
–আমাদের অ্যাগ্রিমেন্ট পেপার। পয়েন্টগুলো ভুলে গেছিলে না? মনে করে নাও ভালো করে।
উষির কপাল কুঁচকে কাগজটা হাতে নিয়ে পড়লো মনোযোগ দিয়ে৷ বিয়ের পর পর তাদের মধ্যে একটা অ্যাগ্রিমেন্ট হয়েছিলো। এটা সেটাই। যেখানে পয়েন্ট আকারে লেখা আছে,
১. অনুমতি ব্যতীত ঘরে প্রবেশ নিষেধ।
২. কেউ কারো কোন জিনিসে হাত দেবে না। এমনকি কেউ কারো ব্যাপারে কথাও বলবে না।
৩. ক্লোজেটের ডান পাশ রাশার এবং বাম পাশ উষিরের। এবং বেডের বাম পাশ রাশার এবং ডান পাশ উষিরের। এবং বাকি তৈজসপত্রও এভাবেই দুটি অংশে ভাগ করা থাকবে। এবং কেউ কারো অংশে দখলদারি করবে না।
৪. অ্যালকোহল সেবন করে ঘরে আসা যাবে না। এবং ঘরে স্মোক করা যাবে না।
তখনকার এই বাচ্চা বাচ্চা শর্ত পড়এ মনে মনে ভীষণ হাসলো উষির৷ তবে মুখোভঙ্গী শান্ত রাখলো। পড়ে বুঝলো, শেষের শর্তটা বাদে বাকি সবগুলো শর্তই তারা খুব সফলভাবে ভেঙেছে। আর তা এতোই স্বাভাবিক ছিলো যে, এই নিয়ে দুইজনের কেউ-ই একটা শব্দও উচ্চারণ করেনি। মনেই ছিলো না বলা চলে।
উষির সবটা পড়া শেষে কাগজটা এমন ভাবে রাশার হাতে দিলো, দেখে মনে হলো নোংরা কিছু ছুঁয়ে ফেলেছে। তারপর সেই হাত আবার টি-শার্টে মুছতে মুছতে বললো,
–আমি এক বক্তৃতার কাগজ দ্বিতীয়বার ছুঁই না আর তুমি আমাকে এইসব দেখাচ্ছো? ছিহ! আমার সম্মানটা আর ঠিক থাকতে দিলে না । আর তার থেকেও বড় কথা, আমার মতো রাজনীতিবিদকে তুমি নীতি শিখাচ্ছো! নীতি!
উষির যে অবাকের শীর্ষে পৌঁছে গেছে, সেটা তার শেষ কথায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। রাশা বড় বড় করে শ্বাস ফেলে হাত মুঠো করে ক্ষিপ্ত পায়ে চলে যেতে লাগলো৷ পেছন থেকে উষির চেঁচিয়ে উঠলো,
—রাশায়ায়া, একটু সস এনে দাও প্লিজ। সস শেষ। আর সস ছাড়া পাকোড়া ভালো লাগে না।
রাশা পেছন ফিরে দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললো,
–র’ক্ত খাবে? র’ক্ত এনে দেবো? ওটাও তো লালই।
উষির লাজুক স্বরে বললো,
–তুমিও তো লাল। লজ্জায়, রাগে লালে লাল হয়ে যাও। চাইলে তুমি এসে পাশে বসতে পারো। লাল টুকটুকে বউয়ের উষ্ম আলিঙ্গনে সস ছাড়াই পাকোড়া খেয়ে ফেলতে পারবো। আর যদি একটু রোম্যান্টিক হতে চাও তাহলে…
রাশা এদিক ওদিক তাকিয়ে উষিরের দিকে ঢিল দেওয়ার জন্য কিছু খুঁজলো৷ কিছু না পেয়ে হাতে থাকা অ্যাগ্রিমেন্ট পেপার মুড়ে তার দিকে ছুড়ে মারলো। উষির দক্ষ হাতে সেটা ধরেও ফেললো। রাশার ঢিল ছোড়া দেখে মুগ্ধ হয়ে প্রশংসা করতেও ভুললো না,
–তোমার নিশানা তো দারুন! আ’ম ইম্প্রেস! এতো ইম্প্রেস করলে কি চলে বলো?
শেষ কথাটা বেশ নাটকীয় ঢঙে করুন করে বললো। রাশা দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
–আই সয়্যার উষির! আগে আমি সৌরভকে খু’ন করবো তারপর তোমাকে।
এই প্রথমবার সৌরভের কথা ওঠায় তার খারাপ লাগলো না, রাগও উঠলো না। বরং আরো ভালো লাগলো। আর তারপর স্ত্রীকে আরো রাগিয়ে দিতে চোখ টিপে বললো,
–সৌরভকেই মে’রো শুধু। আমাকে মা’রলে তো অকালে বিধবা হবে। আর উষিরের বউকে কেউ বিয়েও করতে চাইবে না। নিজের ভালো তো পাগলেও বোঝে।
রাশা উষিরের দিকে জলন্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলে গেলো। উষির হোহো করে হাসতে লাগলো।
ঠিক ওই সময়ই লিভিংরুমে উজানের সাথে তার মা আর বড় মায়ের গোল মিটিং চলছে৷ মাহফুজা কেঁদে কেটে এক-সার! নাক টেনে টেনে ছেলের নামে তার অভিযোগ শুনাচ্ছে,
–নোঙরের তিনদিন হলো জ্বর। তুই একটুও মেয়েটার খোঁজ নিলি না? এতো পাশান তুই!
উজান বিরক্তিকর শ্বাস ফেলে বললো,
–ওসব কিছুই না। সব অফিস না যাওয়ার বাহানা।
–হ্যাঁ আর সেইজন্যই ওকে স্যালাইন দিয়ে রাখতে হয়েছিলো। আর সেইজন্যই কাল রাতে শ্বাসকষ্ট ওঠায় অক্সিজেনও দিতে হয়েছিলো। তাই না?
কাঁদোকাঁদো গকায় চেঁচিয়ে উঠে বললো মাহফুজা। উজান চমকে উঠলো। এই খবব তার কাছে নতুন। শাহিদা বিচলিত হয়ে মাহফুজার মাথায় হাত রেখে বললো,
–মাহফুজা, শান্ত হও। ঠান্ডা মাথায় কথা বলো।
–কি করে শান্ত হবো ভাবি? শুধুমাত্র আমাদের পছন্দে বিয়ে করেছে জন্য মেয়েটাকে এতো অবহেলা করছে। এই এক মাসেই কি এমন করেছে যে নোঙর আর ওর সাথে থাকতেই চাচ্ছে না। ভাবির হাতে মার পর্যন্ত খেয়েছে, তাও বলছে ওর সাথে থাকবে না। কিজন্য থাকবে না সেটাও বলছে না। অফিসের সময়টুকুতেই শুধু ওরা দুইজন সামনাসামনি থাকে। এই সময়ে ও কি এমন করলো?
উজান রেগে বললো,
–আমি কিছুই করিনি। আমি তো থাকবো না বলিনি। তোমার ভাতিজিই বলেছে। এখানে আমার দোষ কোথায়? আর আমি অবহেলা করেছি? তোমার আদরের ভাতিজি আমার সাথে কবে ভালো ব্যবহার করলো যে ওর সাথে ভালো ব্যবহার করবো? অফিসের কোন নলেজ ওর নেই। কাজ শিখাতে চাইলেও শিখবে না। এটা নিয়ে কি কিছুই বলা যাবে না?
শাহিদা মা ছেলের মাঝে ঢুকে তাদের শান্ত করতে উজানকে বুঝানোর জন্য বললেন,
–উজান! বাবা, তুই তো অবুঝ না। কতো বুঝদার তুই। এটা তো বুঝিস, মানিয়ে নিয়ে চললে তবেই সংসার টেকে। তোরা দুইজন দুইভাবে মানুষ হয়েছিস। দুইজনের মতের মিল হবে না, সেটাই তো স্বাভাবিক। তার জন্য কেউ এমন করে? সব অপছন্দের দিক বাইরে রেখে একটু পছন্দ করার চেষ্টা তো করতে পারিস। মায়ের মুখের দিকে তাকিয়েই অন্তত কর। বিয়ের কত বছর পরিবার থেকে দূরে থেকেছে৷ এখন যখন পরিবার ফিরে পেয়েছে তখন এই সম্পর্কের জের ধরে আবার হারাবে। একটু স্যাক্রিফাইস করলে সম্পর্ক নষ্ট হয় না বাবা।
উজান ক্লান্ত স্বরে বললো,
–আর একজন যদি সবসময় স্যাক্রিফাইস-ই করে যায়, তাহলে সম্পর্ক সুন্দর কিভাবে হয় বড় মা? এটা তো অন্যায়।
–স্যাক্রিফাইসের অনেক ধরন আছে বাবা। নিজের পছন্দ অপছন্দ অপরের জন্য বদলে ফেলাটা স্যাক্রিফাইস না। এমন করলে নিজের সাথে অন্যায় করা হবে। এটাতে সম্পর্ক সুন্দরের বদলে আরো খারাপ হয়ে যায়। তবে সেই পছন্দ অপছন্দ যদি খারাপ হয় তাহলে ব্যাপারটা চিন্তার৷ এর সমাধান আমার জানা নেই।
–তুমি সবসময় কনফিউজড করে দাও বড় মা। এটা ঠিক না।
উজান হেসে ফেলে বললো। শাহিদাও হেসে ফেলে আড় চোখে মাহফুজার দিকে তাকালো। মাহফুজা ক্ষোভ মেশানো চাহনিতে ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে। শাহিদা গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,
–একশো পার্সেন্ট ঠিক৷ কারন আমি ওই স্যাক্রিফাইসের কথা বলছি না। নিজের অপছন্দের জিনিস সামনের মানুষটার মধ্যে দেখেও সেটা অ্যাকসেপ্ট করে সামনের মানুষটার সাথে থাকাটাই হলো ভালোবাসার স্যাক্রিফাইস। এমন করলে তবেই সম্পর্ক সুন্দর হয়।
কথাটা উজানের উদ্দেশ্যে ছিলো কিন্তু মনে শুধু তার লাগলো না৷ একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা রাশার মনেও বাড়ি খেলো কথাটা। আর সাথে সাথেই বিবেক বিদ্রোহ করে উঠলো। বলে উঠলো, “তার পক্ষে আর সম্ভব না। ও তো কখনও চেষ্টাই করতে চায়নি। তাহলে এখন কেনো স্যাক্রিফাইস করার কথা মাথায় আনছে? এটা তো তার সাথে অন্যায় করা হবে।” এবং এরপর মন হেরে গেলো আর বিবেক জিতে গেলো।
চলবে…
#তুমি_সন্ধ্যার_মেঘ
#হুমায়রা
#পর্বঃ৩৬
উজান শাহিদার কথামতো তৃতীয়বারের মতো শ্বশুরবাড়িতে পদার্পন করলো। আর তারপরেই তাকে তীব্র অস্বস্তি পেয়ে বসলো। বড় বড় বিজনেস ওনারদের সাথে লম্বা চওড়া মিটিংও আজকের নার্ভাসনেসকে ফেইল করিয়ে দিচ্ছে। সবার অলক্ষ্যে কপালের ঘাম মুছে বাইরের ঘরের সোফায় গিয়ে বসলো সে। ছোটবেলা থেকে যাতায়াত থাকলে হয়তো এই ফরমালিটির কোন জায়গাই থাকতো না। এসে সবার সাথে সরাসরি কথাবার্তা বলা যেতো, যেমন উষির নানাবাড়ি গেলে করে। তার ক্ষেত্রে নানাবাড়ি দেরিতে আসলেও আরেকটা সম্পর্কজুড়ে কেমন একটা উদ্ভট হয়ে পরেছে। কেমন অদ্ভুত আর অস্বস্তিকর।
সবার সাথে আলাপচারিতার পর উজানকে ফ্রেশ হওয়ার জন্য নোঙরের ঘরে পাঠানো হলো৷ নোঙর তার আসার খবর জানে না। দ্রুত জানানোর মানুষগুলোর কেউ বাড়ি নেই৷ আর যারা আছে তারা সবাই জামাইকে আপ্যায়ন করতেই ব্যস্ত।
নোঙর দিনের বেলাতেও ঘরের পর্দা ফেলে ঘর অন্ধকার করে হাঁটুতে মুখ গুজে বসে ছিলো। জ্বরের দুর্বল, ক্লান্তি ভাব এখনও যায়নি। উজান যখন তার ঘরে আসলো তখন বাইরের আবছা আলোয় নোঙরকে কালো ছায়ার মতো লাগছিলো। আবছা আলোকে সঙ্গী করে জানালার ভারি পর্দা সরিয়ে দিতেই ঘর আলোয় আলোকিত হয়ে গেলো৷ উদাস আর আনমনে বসে থাকা নোঙর চমকে উঠে সামনে তাকাতেই হকচকিয়ে সোজা হয়ে বসলো৷ তারপর দ্রুত হাত মুঠো করলো। এই হাত কিছুতেই খোলা যাবে না। মন ভালো করতে গতরাতে অপলা তার হাতে মেহেদি দিয়ে দিয়েছে। সাথে লিখেছিলো উজানের নাম।
উজান তার হকচকানো ভাব দেখে নক করে না আসার জন্য আফসোস করলো। তারপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কেশে গলা পরিষ্কার করে মৃদু স্বরে বললো,
–জ্বর সেরেছে?
নোঙর অভিমানি চোখে উজানকে দেখে মাথা ঘুরিয়ে নিলো। তারপর ঠোঁট ফুলিয়ে নাক টেনে বললো,
–জানি না।
উজান দীর্ঘশ্বাস ফেললো। বোধহয় ঠিকঠাক উত্তর দিলেই সে অবাক হতো৷ এটা তো তার কাছে নরমাল ব্যাপার।
শার্টের হাতা ফোল্ড করে নোঙরের কাছাকাছি গিয়ে হুট করে তার কপালে হাত ছোয়ালো। তারপর কিছুক্ষণ কপাল কুঁচকে তার শরীরের তাপমাত্রা বোঝার চেষ্টা করলো। যখন বুঝতে পারলো জ্বর নেই তখন গম্ভীর গলায় বললো,
–জ্বর তো নেই৷ তাহলে অফিসে যাও না কেনো?
উজানের আচমকা ছোঁয়াতে নোঙর হকচকিয়ে তো গিয়েছিলো কিন্তু পরের কথায় রেগে গেলো। সে ম’রে গেলেও সামনের মানুষটার কিছু যায় আসে না। তখন তার কবরের কাছে গিয়ে বলতো,
–কি? কাজের ভয়ে ম’রে গেলে নাকি ভিতু নোঙর?
কথাটা চিন্তা করেই তার চোখ ফেঁটে কান্না আসলো৷ ঠোঁট নাক ফুলিয়ে গলার কাছে আসা কান্না অনেক কষ্টে আটকিয়ে বললো,
–যাবো না।
উজান মৃদু হেসে টিটকারি দিয়ে বললো,
–কেনো? কাজ দেখে ভয় পাচ্ছো নাকি?
নোঙর জানতো! সে ঠিক জানতো, উজান এমনটাই বলবে! এইতো বউয়ের প্রতি ভালোবাসা! ভালোবাসা কেনো বলছে? থোরাই না ভালোবাসে। নাহলে কেউ অসুস্থ মানুষকে কাজের কথা বলে! আরে বাবা, বউ হিসেবে না হোক মামার মেয়ে হিসেবে তো একটু চিন্তা করতো! একটু চিন্তা করলে তো আর তার ক্ষতি টতি হতো না।
–রিজাইন করবো। লেটার টাইপ করে প্রিন্ট আউটও করেছি৷ যাওয়ার সময় নিয়ে যেও।
নোঙরের সিরিয়াসনেসে উজান চমকে উঠলেও নিজের স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে অটল থেকে বললো,
–রিজাইন লেটার নিজে গিয়ে দিতে হয়। আর তার আগে দুই মাস আগে অফিসিয়ালি ম্যানেজারকে জানিয়ে দিতে হয়।
–মানে?
নোঙর হতবাক হয়ে গেলো। চাকরিতে জয়েন করেছে সবে এক মাস হয়েছে আর সেখানে নাকি দুই মাস আগে তাদের জানাতে হবে। পাগল টাগল হয়ে গেলো নাকি! আয় হায়! এখন তার কি হবে! পাগল মানুষ ডিভোর্স দিলে কি সেটা অ্যাপ্রুভ হয়? যদি না হয় তাহলে তো সারাটা জীবন তাকে পাগলের সাথে থাকতে হবে! সর্বনাশ! ভয়ে নোঙরের পিলে চমকে উঠলো। পাড়ার এক পাগল ছোটবেলায় ওকে কামড়ে দিয়েছিলো। সেই থেকে পাগল মানুষকে তার ভয়। এখন এই পাগলের সাথে সে কিছুতেই থাকতে পারবে না।
উজান নোঙরের ভয়ার্ত মুখ দেখে হাসি আটকে পাশে বসে বললো,
–মানে জব থেকে রিজাইন করার অন্তত দুই মাস আগে থেকে জানিয়ে রাখতে হয়। সাইন করার আগে অ্যাগ্রিমেন্টগুলো পড়োনি?
–আমি আর ওখানে যাবো না৷ কিছুতেই না। করবো না আমি চাকরি।
নোঙর ঠোঁট উলটে ভ্যা ভ্যা করে কান্না করে দিলো। উজান হতবাক হয়ে গেলো,
–এতে কান্না করার কি আছে? করতে না চাইলে করবে না। কেউ জোর তো করেনি।
নোঙর বলতে চাইলো, কেনো জোর করবে না? কিন্তু পরিস্থিতি এখন অন্যরকম। তাই কথাটা গিলে ফেলে চুপ করে মুখ ঘুরিয়ে চোখের কোনে আসা পানি হাত দিয়ে বারবার মুছতে লাগলো আর নাক টানতে লাগলো। উজান তার অভিমানি চোখের পানি দেখে অজান্তেই হাসলো৷ তারপর হাতের মেহেদীর দিকে নজর পরতেই হাসি চওড়া হলো। এই হাসির কোন কারন নেই। নোঙর তার এই হাসি না দেখতে পারলো আর না জানতে পারলো।
উজান কিছুক্ষণ চুপচাপ তাকে দেখে বুঝলো, তার একটু প্রেম প্রেম পাচ্ছে। প্রজাপতিওয়ালা প্রেম। যাকে ইংরেজিতে বাটারফ্লাই ইন স্টমাক বলা হয়।
উজান নিজের অনুভূতিকে প্রশ্রয় দিয়ে প্রেমময় দৃষ্টিতে নোঙরের দিকে তাকিয়ে হাত টেনে কাছে টেনে নিলো। কপালের চুল সরিয়ে চুমু দিতে যাবে, এমন সময় হুলো জানালার পাশ থেকে বলে উঠলো,
–উজান মঞ্জু, উজান মঞ্জু, উজান মঞ্জু।
ভাঙা রেকর্ডের মতো এটা চলতেই থাকলো। উজান আসার পর থেকে তার নাম শুনে যাচ্ছে৷ সেইজন্যই বোধহয় পুরোনো পড়া মনে পরে মুখস্ত বলা শুরু করেছে। একসময় নোঙর খুব পরিশ্রম করেছিলো, আজ তার ফল পেলো। সাংঘাতিক, ভয়ংকর ফল। বেশ হকচকিয়ে গিয়ে উজানের দিকে আর্ত চোখে তাকালো। উজান কথার উৎস খুঁজে না পেয়ে কৌতূহলী গলায় প্রশ্ন করলো,
–এটা কে বলছে? আর মঞ্জুটা কে?
–এটা হুলো মানে আমার কাকাতুয়া পাখির গলা৷
–আর মঞ্জু?
নোঙর আমতা-আমতা করলো। বলাটা ঠিক হবে না করতে করতে ইতস্তত গলায় বললো,
–এই পাড়ায় একটা পাগল ছিলো। যাকে সামনে পেতো তাকেই কামড় দিতো।
–আর তার নাম মঞ্জু ছিলো?
উজান দাঁতে দাঁত চেপে চিড়বিড়িয়ে প্রশ্ন করেছিলো। নোঙর উত্তরে বেশ অস্বস্তিতে মাথা নাড়লো। আহাম্মক বনে বসে রইলো উজান। তারপর শক্ত গলায় আবার প্রশ্ন করলো,
–আমার নামের সাথে এই নামটা ওই বেয়াদবকে তুমি শিখিয়েছো?
এবারেও নোঙর নীরব রইলো। মনে মনে হুলোকে বেয়াদব বলায় রাগ তো হলো কিন্তু পরিস্থিতি বুঝে চুপ করে রইলো। উজান যা বোঝার বুঝে ভয়ংকর রেগে গেলো। চট করে উঠে দাঁড়িয়ে ঝাঁজালো স্বরে বললো,
–অফিসে রিজাইন লেটার জমা দিয়ে চাকরি না ছাড়লে প্রতিদিনের অনুপস্থিতিতে জরিমানা হবে। পার ডে, ওয়ান থাউজেন্ট।
এরপর ক্ষিপ্ত পায়ে বেড়িয়ে গেলো। আর মিনিট দশেকের মধ্যে কাজের বাহানায় বাড়ি থেকেও চলে গেলো৷ নোঙর আবার উদাস হয়ে গেলো। মন খারাপ করে হুলোর উদ্দেশ্যে বললো,
–কাজটা কি ঠিক করলি হুলো? কোথায় কি বলতে হয় তা এখনও শিখলি না।
হুলো কিছুই শুনতে পারলো না৷ সে তারস্বরে চেঁচাতে ব্যস্ত। নোঙর বিরক্ত হয়ে টলমল পায়ে পর্দা টেনে দরজা আটকে শুয়ে পরলো।
****
পরেরদিন উজান অফিসে ঢুকতেই দেখলো নোঙর কমলা আর সবুজ রঙের মিশেলে তৈরি তাতের শাড়ি পরে বেশ সেজেগুজে অফিসে এসেছে। গতকালের এমন ভয়াবহ ঘটনার পর এভাবে সাজগোছ দেখে তার মেজাজ আবার চটে গেল। কোথায় হাসবেন্ডকে মানাবে তা না উলটো সেজেগুজে এসে সবার সাথে আড্ডা দিচ্ছে! সেই আড্ডাটা আবার দিচ্ছে কাদের সাথে? মোটাকাটা অমি আর মাথামোটা শামিমের সাথে। সাথে আরো লোকজন থাকলেও উজানের নজরে ওই দুইজনই পরেছিলো কারন তাদের নজর নোঙরের দিক থেকে সরছিলোই না। বলা চলে, চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে একদম। এখন উজানের মেজাজ পারদ স্কেলে মাপলে থার্মোমিটার ফেঁটে যেতো। রাগে অগ্নিশর্মা হওয়া তার রাগ গিয়ে পরলো সবার উপর৷ বেশ হুংকার দিয়ে জটলা ভেঙে দিলো। একদম দুই বিড়াল ঝগড়া করলে মাঝে পানি দিলে তাদের যেমন হাল হয়, অমি আর শামিমেরও সেই হাল হয়েছে।
উজান রুমে বসে সর্বপ্রথম সেক্রেটারিকে ফোন দিয়ে ইমার্জেন্সিলি তার বাড়ি থেকে নিজের ব্লু পাঞ্চাবি আনতে পাঠালো। কারন ব্লু স্যুট তার নেই। থাকলে সেটাই পরতো। এর প্রধান কারণ, নোঙরের নীল রঙ একদম পছন্দ না। উজান জানে সেটা। আর তাই নিজের ড্রেসকোড নীল করার পাশাপাশি সিদ্ধান্ত নিলো, আগামী সাতদিন সে ব্লু উইক ঘোষণা করবে। অফিসের সবাই এই সাতদিন ব্লু উইক পালন করতে ব্লু ড্রেস পরে আসবে। অফিসের প্রতিটা ফার্নিচারের রঙ হবে ব্লু। দেয়ালগুলোও ব্লু কালার করা হবে। এরমাঝে ভুলেই গেলো, আজই নোঙরের অফিসে শেষদিন।
উজান এগুলো শুধু ভেবেই ক্ষান্ত হলো না। নিজের ব্লু পাঞ্জাবি পরে নিজেই সব ব্যবস্থা করে ফেলতে লাগলো। নিজের সব মিটিং ক্যান্সেল করে দিলো। সেক্রেটারী শুকনো মুখে দুই একবার বললো,
–স্যার, মিটিংটা খুব ইমার্জেন্সি ছিলো।
তারপর উজানের বাজখাই গলার ধমকে মিইয়ে গেলো।
সব কাজের ফাঁকে উজান নোঙরের দিকে আড়চোখে তাকাতে লাগলো। নোঙর চোখ মুখ শক্ত করে কম্পিউটার স্কিনের দিকে বেহুদা তাকিয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে সাংঘাতিক রেগে আছে। কাজ তো সে এমনিতেও করে না। অথচ আজ দেখে মনে হচ্ছে তার থেকে বড় ব্যস্ত আর কেউ নেই। অথচ তার এখন নোঙরককে সামনে বসিয়ে অপলক তাকিয়ে থাকতে খুব ইচ্ছে করছে। বউকে কেউ এভাবে আড়চোখে দেখে নাকি! উজানের তো একটা মানসম্মান আছে। ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়ে হুংকার দিয়ে নোঙরকে তার কেবিনে আসতে বললো। তারপর নিজের কেবিনে যেতে যেতে ভাবলো ব্লু উইকের মতো উইস ডে পালন করতে হবে। আজকেই সেই ডে পালন করার উপযুক্ত দিন। আজকের সব কাজ ক্যান্সেল। আজকে সবার ইচ্ছা পূরণ করতে হবে। তাকে দিয়েই শুরু হলো এই উইস ডে। এই ব্যাপারে সেক্রেটারির সাথে গভীর আলোচনা করতে হবে। অন্যদিকে সেক্রেটারী মিস্ত্রিদের রঙ করা দেখছে আর মাথা নাড়িয়ে বারবার বলছে,
–এতো টাকার গচ্চা গেলো! ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের টাকা ফেরত পেলে শান্তি পেতাম। কতো টাকা ঢেলে ডিজাইন করে দিয়েছিলো। আহা আহা!
নোঙর তার কেবিনে নক করলে উজান নিজের চুল, পাঞ্চাবির কলার ঠিকঠাক করে হাতা ফোল্ড করে ফিটফাট হয়ে তবেই তাকে আসার অনুমতি দিলো। নোঙর ধীর পায়ে হেঁটে তার টেবিলের সামনে এসে মুখ নিচু করে রিজাইন লেটার বাড়িয়ে দিলো। উজান সেদিকে ফিরেও দেখলো না। তার দৃষ্টি নোঙরের আনত মুখের দিকে৷ তার এখন অন্য কিছু করতে মন চাইছে৷ একদম অন্যকিছু, যেটা নিজের বিবাহিতা স্ত্রীর সাথে করলে একদম অন্যায় হবে না। একদমই না। কলার ঝেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে পায়ে পায়ে হেঁটে একদম নোঙরের কাছাকাছি দাঁড়ালো৷ তারপর কোমড়ে হাত দিয়ে এক ঝটকায় নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। নোঙরের মুখ নিচুই ছিলো। চোখে পানি টলমল করছে। সেটা সে উজানকে দেখাতে চায় না। কিন্তু তার এমন ব্যবহারে মাথা তুলেতাকাতে বাধ্য হলো। ফলস্বরূপ, টপ করে এক চোখ দিয়ে পানি গাড়িয়ে পরলো। উজান এক হাত দিয়ে সেটা মুছে গাল শক্ত করে ধরে ঠোঁটে এক গম্ভীর চুম্বন করে কালকের অসমাপ্ত কাজটা সমাপ্ত করলো। উজানের এমন বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডে নোঙরের হাত পা অসার হয়ে আসল। তাকে ছাড়তেই পা ভেঙে বসে পরে জোরে কান্না করে দিলো। উজান নোঙরের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে গালে হাত ছুঁইয়ে বিচলিত গলায় বললো,
–কি হয়েছে? কানা করছো কেনো? মারিনি তো।
নোঙর ফোঁপাতে ফোপাঁতে বললো,
–আমি থাকবো না এখানে। তোমার চাকরি আর কিছুতেই করবো না। খুব বাজে তুমি।
উজান হেসে ফেলে নোঙরের চোখের পানি মুছে দিয়ে কপালে আলতো চুমু দিলো। তারপর অনেক কষ্টে কান্না থামিয়ে হাত চেপে কেবিনের বাইরে এসে দাঁড়ালো। আঙুলে আঙুল ছুঁইয়ে শক্ত করে হাত চেপে ধরে উঁচু গলায় বলে উঠলো,
—হ্যালো এভ্রিওয়ান, অ্যাটেনশন প্লিজ৷ লেট মি অ্যানাউন্স সামথিং।
বলেই সবার দিকে নজর ঘুরালো। সবার নজর কাড়তে সামর্থ হয়েছে দেখে আবারও বলতে শুরু করলো।
–মিট মাই আনাদার আইডেন্টিটি৷ আই’ম হাজবেন্ড অফ মিসেস নোঙর খন্দকার৷
একটু থেমে মাথা ঘুরিয়ে পেছনে থাকা নোঙরকে দেখে মৃদু হেস দৃষ্টি সামনের দিকে রেখে প্রফুল্ল গলায় বললো,
–ইয়েস! উই আর কাপল৷ অ্যান্ড ইউ অল আর ইনভাইটেড টু আওয়ার রিসেপশন পার্টি৷ খুব শীগ্রই আপনাদের ইনভিটেশন কার্ড দেওয়া হবে।
লজ্জায় মিইয়ে গেলো নোঙর। উজানের পাঞ্চাবির কোনা চেপে ধরে তার পেছনে গিয়ে লুকালো। রিসেপশনের কথাটা সে কাল রাতেই শুনেছে। এই ব্যাপারে উজানের সাথে ফেস টু ফেস কথা বলতে চেয়েছিলো কিন্তু তার আগেই কিসব ঘটনা ঘটে গেলো! যাক গে সব! এখন ভালোয় ভালোয় এখান থেকে বের হতে পারলে বাঁচে!
অফিসের সবার মাথার উপর বজ্রপাত হলো বলে মনে হলেও স্যারের সামনে একটা কথাও জিজ্ঞাসা করতে পারলো না। শুধু হাত তালি দিয়ে অভিনন্দন জানালো। নোঙর এক মূহুর্তের জন্যেও উজানের পেছন থেকে বের হলো না। আর না সেখানে থাকলো। কোনমতে উজানকে টেনে সাথে নিয়ে অফিস থেকে বের হলো। তাহের মিয়া, অমি আর শামিমের কালো হওয়া মুখ পেছনে পরে রইলো।
চলবে…