তুমি সন্ধ্যার মেঘ পর্ব-২১+২২

0
8

#তুমি_সন্ধ্যার_মেঘ
#হুমায়রা
#পর্বঃ২১

বৃষ্টিতে ভিজে উষিরের সর্দি ভাব এসেছে। মাথা চোখ ভার হয়ে আছে৷ সারাটা রাস্তা রাশার কাঁধে মাথা দিয়ে রেখেছিলো। রাশা বিরক্ত হয়েছে আবার উষিরের অসুস্থ মুখ দেখে মায়াও হয়েছে। সেইজন্যই বোধহয় টু শব্দটিও করেনি। তবে বেশি বিরক্ত হয়েছে দীর্ঘ জ্যামে বসে থেকে৷ দুই তিন ঘন্টার রাস্তা জ্যামের কারণে চার পাঁচ ঘন্টা লেগে গেলো। গাড়ি বাড়ির সামনে দাঁড়াতেই পরিচিত দুই তিনটা গাড়ি তার নজরে পরলো। বাইরে কালো পোশাকধারী অনেক গার্ড দাঁড়িয়ে আছে। তারাও পরিচিত। ভীত হলো রাশা। তটস্থ হয়ে দুরুদুরু বুকে বাড়ির ভেতর ঢুকলো। যা ভেবেছিলো ঠিক তাই। লিভিংরুমের সোফায় তার বড় বাবা, বাবা আর ছোট কাকা বসে আছে। আবসার সাহেব অতি দ্রুত বিদেশ যাত্রা রেখে চলে এসেছেন। তিনিও তাদের সাথে বসে আছেন। উজান আর শাহিদা আরেকটা দিকে বসে আছে। শাহিদার মুখ থমথমে, রাগত ভাব। মাহফুজাকে আশেপাশে দেখা গেলো না।

রাশা আর উষিরকে দেখে হাসান চৌধুরী গদগদ হয়ে এগিয়ে আসলেন। নতুন জামাইয়ের সাথে মোলাকাত করে রাশার ভালোমন্দ শুনলেন। রাশা উপরে উপরে যতই হম্বিতম্বি করুক না কেনো, সে তার বাবা কাকাদের সাংঘাতিক ভয় পায়। তাই বেশ বিনয়ের সাথেই কথাবার্তা বললো। বাবা আর ছোট কাকা ও কথা বললো। যদিও রাশার বাবা শুধু মেয়ের জামাইয়ের সাথেই কথাবার্তা বলেছিলো। মেয়ের দিকে মুখ ফিরিয়েও তাকায়নি। জামাইয়ের সাথে কথা বলার সময় তার মুখ থেকে হাসি সরছিলো না। রাশা বাবার থেকে একটুও ভালো ব্যবহারের আশা করেছিলো না তবুও মনের কোনে একটু আশার প্রদীপ জ্বলজ্বল করে জ্বলছিলো। মুখ ফিরিয়ে আবার যখন তারা নিজেদের জায়গায় গিয়ে বসলো তখন আর সে এক মূহুর্তের জন্যেও সেখানে দাঁড়ায়নি। সোজা ঘরে চলে গিয়েছিলো। শাহিদা আর উষির ছাড়া পুরো ঘটনাটা আর কেউ খেয়াল করলো না।

নিচের লিভিংরুমে তখন উষির রাশাকে নিয়ে জমজমাট কাহিনী। ময়না ডাইনিংরুমের দেয়ালের আড়ালে দাঁড়িয়ে সবটা রেকর্ড করতে লাগলো। ইচ্ছা, নিজে আরো একবার এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শুনবে আর রাশাকে শুনাবে। রাশা নিজেই তাকে ফোন দিয়ে এমনটা করতে বলেছে।

হাসান চৌধুরীর হাতে চায়ের কাপ। কাঁচের এই কাপগুলো বেশ সুন্দর দেখা যায়। তবে সেই সৌন্দর্য একমাত্র ঘরোয়া মেয়েদের চোখেই পরে। তিনি বাইরের জগতে দাপিয়ে বেরানো পুরুষ। ঘরোয়া সৌন্দর্য তার চোখে আটকায় না। তার চোখ আটকায়, সেখানে তার লাভ আছে সেখানে। গলায় মধু ঢেলে কারো কানে বিষ ঢুকানো তার অতি প্রিয় একটা কাজ। এখনও তিনি সেটাই করতে চাচ্ছেন। গলার স্বর যথাসম্ভব বিনয়ী রেখে বললেন,

–দেখুন, বাচ্চারা একটা ভুল করে ফেলেছে। ওদের বয়সটাই ভুল করার।

শাহিদা এর প্রতিবাদ করে উঠলো। তীব্র প্রতিবাদী গলায় বললো,

–ওরা কোন ভুল করেনি। ভুল বুঝেছিলেন আপনারা। নিজের সন্তানের উপর এইটুকু বিশ্বাস থাকা উচিৎ।

হাসান চৌধুরী অপমানিত হলেন। তার সামনে কেউ এইভাবে কথা বলে না। মহিলার সাহস আছে বলতে হবে। আর মহিলাদের এই অতিরিক্ত সাহস তার একদম পছন্দ না। আবার যে বাড়িতে বাড়ির মেয়ের বিয়ে দিয়েছে সেই বাড়িতে গলা তুলে কথা বলা ভালো দেখায় না। নিজেকে সবসময় নরম রাখতে হয়। চিন্তাভাবনা জোড়ালো করলেন তিনি। গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন,

–তা ঠিকই বলেছেন বেয়াইন। ওই পরিস্থিতিতে আসলে কারোরই মাথা ঠিক থাকে না। আমরাও রাগের মাথায় কাজ করে ফেলেছি। এখন সবটা শোধরানোর সময় এসেছে।

উষির জোরে হাঁচি দিলো। হাতের টিস্যু দিয়ে নাক মুছে সামনে তাকিয়ে দেখলো, সবার দৃষ্টি তার দিকে। একটু অপ্রস্তুত হেসে বললো,

–সরি, একটু ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে।

হাসান চৌধুরী মাথা নেড়ে অল্প হেসে বললেন,

–ঔষধ খেয়ে নিও বাবা।

উষির মাথা নেড়ে উত্তর দিলো,

–জ্বি।

আদোতে তার এখানে থাকার এক ফোটা ইচ্ছাও নেই। কোন কথায় কানও নেই৷ নেহায়েতই বসে না থাকলেই নয় তাই বসে আছে। মন তো পরে আছে, দোতলার মাঝের রুমের মধ্যে থাকা তার বউয়ের কাছে। বউটা একা একা কি করছে কে জানে! সারাক্ষণ তো শয়তানি বুদ্ধি গিজগিজ করে। এখনও বোধহয় তাই-ই করছে।

হাসান চৌধুরী মুখ ঘুরিয়ে রাশার বাবার দিকে তাকিয়ে ধীর গলায় বললেন,

–হামিদ, তুমি মেয়ের বাবা। তুমিই বাকি কথা বলো?

–জ্বি ভাই।

হামিদ চৌধুরী বিনয়ের সাথে ঘাড় নাড়লেন। তারপর আবসার সাহেবের দিকে তাকিয়ে বেশ ভরাট গলায় বললেন,

–আমরা বিয়ের পরবর্তী অনুষ্ঠান ধুমধাম করে করতে চাচ্ছি। আপনারা সময়মতো একটা ডেট দিন।

–তার আগে আমার একটা প্রশ্ন ছিলো? বিয়ের কথা এইভাবে পাবলিক না হলে কি আপনারা অনুষ্ঠান করার কথা বলতেন?

শাহিদা হামিদ চৌধুরীর কথার মাঝে ফোড়ন কেটে বললেন। রাশার বাড়ি থেকে আসা সবাই থতমত খেয়ে গেলো। সাথে অপ্রস্তুতও হলো। রগচটা খলিল চৌধুরী বিরক্ত গলায় বললো,

–কিছু মনে করবেন না বেয়াইন, আমরা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা বাড়ির ছেলেরা মিলে করি। মেয়েরা কিছু বোঝে না সোঝে না। তাই এরমধ্যে তাদের না আসাই ভালো।

শাহিদার মুখ থমথমে হয়ে গেলো। উষির রেগে কিছু বলতে চাইছিলো। উজান বাঁধা দিয়ে গলা উঁচিয়ে বললো,

–কিছু মনে করবেন না আংকেল, আমাদের বাড়ির নিয়মটা আপনাদের বাড়ি থেকে একটু আলাদা। আমরা ছোট বড় সব ধরনের কাজেই বাড়ির সবার পরামর্শ নেই, মতামত নেই৷ ছেলে, মেয়ে, বাচ্চা বিভেদ করি না।

সকলের মুখ আবার থমথমে হয়ে গেলো৷ পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নিচ্ছে। চারিদিকে ঝামেলার এক গন্ধ ছেয়ে গেলো। মনে হলো, কারো হাতে একটা দা থাকলে কা’টাকা’টি, খু’নোখু’নি হয়ে যেতো। এই গুমোট পরিস্থিতি থেকে তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন হাসান চৌধুরী উদ্ধার করলেন। মোলায়েম স্বরে বললেন,

–আপনারা একটা সময় দেন? আমরা মেয়ে মেয়ের জামাইকে ধুমধাম আয়োজনের সাথে স্ব-সম্মানে আমাদের বাড়ি নিতে চাই।

আবসার কায়সার কেশে গলা পরিষ্কার করলেন,

–এক সপ্তাহ পরের কোন একটা ডেট বেশ ভালো বলে মনে হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর এর মতে, তখন বৃষ্টি থাকবে না। শুক্রবার করে দিন করে নিলেই ভালো হয়। বাচ্চাদের ছুটিছাটাও দরকারী।

–জ্বি, জ্বি। তাহলে দ্বিতীয় শুক্রবার অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। আমরা হল বুকিং দিয়ে আপনাদের সব ডিটেইলস জানিয়ে দেবো।

রাশার পরিবার থেকে আসা এই মানুষগুলোকে শাহিদার একটুও পছন্দ হচ্ছে না। সব কথাবার্তা, ব্যবহারে একটা মেকি মেকি ভাব আছে। দেখে মনে হয়, যা করে সব লোক দেখানো। এখন আবার টাকার গরম দেখাচ্ছে। শাহিদা বেশ রেগেই বললো,

–আল্লাহর দয়ায় আমাদের আপনাদের মতো অতো না থাকলেও কিছু আছে। আমাদের ছেলের রিসেপশনের দ্বায়িত্ব আমরাই নিতে পারবো।

আবসার কায়সার সচকিত হয়ে শাহিদার দিকে তাকালেন। তার কাছে এটা একটু অপমানসূচক কথা হয়ে গেলো। পরিস্থিতি সামাল দিতে তড়িঘড়ি করে বলে উঠলেন,

–আপনারা রাশার বাড়ির মানুষ। আপনারা আয়োজন করলে ভালো দেখাবে না।

হাসান চৌধুরী নিরবে সায় দিলেন। দুই সপ্তাহ পর রিসেপশনের ডেট হলো। নিজেদের কাজ শেষে চলে যেতে চাইলেন। খাওয়ার কথা বলতেই বললেন, তাদের বাড়ির একটা নিয়ম আছে। মেয়ের বাড়ি গিয়ে তারা কিছুই খান না। কথাটা শুনে ময়না ভীষণ চটে গেলো। রান্নাঘরে চপ ভাজতে থাকা মাহফুজার কাছে গিয়ে বললো,

–আর রান্দার দরকার নাই ম্যাডাম। এনারা খাবি না। বলে নাকি, মাইয়্যার বাড়ি খাওয়া লাগে না। এইযে তিন কাপ চা খাইলো, এগুলা কি এগোর ভুত আইসা খাইলো?

রাগে ফুশতে লাগলো সে। মাহফুজা সব শুনে অসহায় চোখে তার রান্নাকরা বাহারি সব খাবার দাবারের দিকে তাকালো।
যাওয়ার সময় হাসান চৌধুরী দোয়া দিতে রাশার মাথায় হাত রাখলেন। রাশার মনে হলো, এক বিশাল বোঝা তার মাথায় চেপে বসেছে। স্থির চোখে বড় বাবার দিকে তাকালো। তিনি মুচকি হাসলেন। রাশা এই হাসি চেনে। যুদ্ধ জয়ের হাসি। তারা চলে যেতেই সে দ্রুত ঘরে গেলো। যাওয়ার সময়ও তার বাবা একটা কথা বলা তো দূর, ফিরেও তাকালো না। কিন্তু তার বড় বাবা কথা বলেছে। দোয়াও করেছে। ঘৃণা হলো রাশার। এতো জঘন্য পরিবারে তার জন্ম!

***
সন্ধ্যা থেকেই আকাশে মেঘ করেছিলো খুব। পলক ফেলতে না ফেলতেই বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা মাটিতে আছড়ে পরলো। মূহুর্তকাল পরেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। বৃষ্টির তেজ বাড়তেই হুলোকে ঘরে নিয়ে এসে জানালার পর্দা সরিয়ে সেখানে রাখা হলো। কাঁচ ঘেরা জানালার বাইরে পরা বৃষ্টি খুব মনোযোগ দিয়ে দেখলে লাগলো সে।

নোঙরের ঘরে তখন ভাই বোনদের গোল মিটিং বসেছিলো৷ সাথে ছিলো বড় বাটির এক বাটি মুড়ি মাখা আর লম্বা লম্বা করে কাঁটা নারকেল। তাদের গোল মিটিং এর চুম্বক অংশ ছিলো অফিসে নোঙরের দেখা সেই ছোট ড্রেস পরা মেয়েটা। কিছুক্ষণ আগে তাএ ফোনে মেসেজ এসেছিলো। দেখতে ইচ্ছা হয়নি। আবার মেসেজ আসায় ফোন চেক করলো। অমি মেসেজ দিয়েছে।

“কেমন আছো নোঙর?”

“বাইরে খুব বৃষ্টি পরছে। চা খাচ্ছি। তুমি খাবে?”

“তোমার সাথে এই ওয়েদারে একসাথে বসে চা খেতে ইচ্ছে হচ্ছে।”

পরপর তিনটে মেসেজ দেখে খিঁচে থাকা মেজাজ আরো বিগড়ে গেলো৷ দ্রুত হাতে টাইপ করলো,
“আমি চা খাই না। চা খেলে ঘুম হবে না। আর ঘুম না হলে ডার্কসার্কেল পরে যাবে।”

অমি রিপ্লাই করলো, “তুমি না অফিসে দুই কাপ চা খেলে?”

নোঙরের মনে মনে ভয়ানক কিছু গালি দিয়ে ফোন সাইলেন্ট করে রেখে দিলো। তারপর সবার দিকে তাকিয়ে বললো,

–রাস্তায়, গাড়িতে, বাড়িতে যেখানেই দেখা হবে, জোরে দুলাভাই বলে চিৎকার দিবি। যাতে আশেপাশের সবাই টের পায় উনি তোদের দুলাভাই।’

নিহান মুড়ি চিবুতে চিবুতে মাথা চুলকে বললো,

–কিন্তু তুই তো আমার থেকে ছোট। ছোট বোনের বরকে কি দুলাভাই বলে ডাকে?

নোঙর বাঁকা চোখে তাকিয়ে বললো,

–ও তো তোমার থেকে বড় নাকি?

নিহান মাথা নাড়লো। তারপর ভাবুক দৃষ্টিতে পাখির খাঁচার দিকে তাকালো। নোঙর আশ্বাস দিয়ে বললো,

–আমার বেতনের টাকা দিয়ে আর দুটো মুরগী কিনে দেবো। সাতটা মুরগী দিয়ে তোর ফার্ম রমরমা চলবে।

অন্তু ফোঁড়ন কেঁটে বললো,

–অর্ডার দেওয়া মুরগী দুটো তো এখনও আসেনি। ওদুটোর কি হবে?

–ওদুটোর আশা বাদ দে। তিনমাস হলো অর্ডার দেওয়া হয়েছে। এতোদিনে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়ে আবার ডিম দেওয়ার অবস্থা হয়ে যেতো।

নিহান রেগে কিছু বলছিলো কিন্তু তার আগেই অপলা ভাবুক দৃষ্টিতে নোঙরের দিকে তাকিয়ে বললো,

–দুলাভাই তো দুলাভাই বলে ডাকা পছন্দই করে না। ডাকলে যদি কিছু বলে? আর তুমি তো দুলাভাইয়ের সাথে থাকবা না বলছিলা। তাইলে?

নিহান অপলার মাথায় চাটি মেরে বললো,

–আরে গাধী, সম্পর্ক কি একটা নাকি? থাকতে না চাইলে আবার ভাই বোনে ফিরে যাবে। এতো চিন্তা কিসের?

নোঙর অগ্নী দৃষ্টিতে নিহানের দিকে তাকিয়ে বালিশ হাতে তুলে নিলো। মেজাজ দেখিয়ে বললো,

–বোনের বিয়ে ভেঙে দিতে চাচ্ছিস? কেমন বড় ভাই তুই? ভাই নামে কলঙ্ক।

নিহান আকাশ থেকে পড়লো এমন ভঙ্গিতে বললো,

–তুই-ই তো সবসময় বলিস, থাকবো না আমি। কিছুতেই থাকবো না। এই দুই দিনে হাজারবার এই একটা কথা শোনা হয়ে গেছে।

নোঙর মেজাজ দেখিয়ে বললো,

–তুই বলবি কেন? বলার হলে শুধু আমি বলবো।’

নিহান মাথা নেড়ে বললো,

–আচ্ছা যা আর বলবো না।

–হ্যাঁ বলবি না। এইযে একবার বলছিস, এরজন্য একটা মুরগী ক্যান্সেল। আর একবার কিছু বললে আরেকটাও ক্যান্সেল করে দেবো।

অন্তু দাঁত বের করে হেসে বললো,

–আপু, আমি কিন্তু কিছু বলি নাই৷ বেতন পেলে কিন্তু আমাকে একটা আইফোন কিনে দেবে।

অপলা বিষ্ময়ে বললো, ‘ত্রিশ হাজারে আইফোন!’

নোঙর অপলার কানে ফিসফিস করে বললো,

–আরে পাওয়া যায় না, খেলনার দোকানে। ওখান থেকেই কিনে দেবো।’

অন্তু বড় বড় চুলগুলো হাত দিয়ে কপাল থেকে সরিয়ে কপাল কুঁচকে বললো,

–কানে কানে কারা কথা বলে জানো তো? কিপটার বউ।’

নিহান পা ছড়িয়ে বসে মুড়ি হাতে নিয়েছিলো। অন্তুর কথায় চোখ উলটে কিছু ভেবে বললো,

–কান্টুর বউ না?

অন্তু সজোরে মাথা নেড়ে বললো, ‘উহু, দুলাভাই তো কিপটা। আইফোন ইউজ করে না। তাই কিপটার বউ।’

নিহান মাথা নাড়লো। উজান সত্যিই কিপটা। বিয়ের দিন থেকে তার সাথে দুইবার দেখা হলো। এই দুইবারে অন্তত একটা মুরগী দেওয়ার অফার তো করতেই পারতো। তাহলে তার ফার্মে আটটা মুরগী হয়ে যেতো। না সাতটা। একটা তো নোঙর ক্যান্সেল করে দিলো। নিহান আফসোস করে বললো,

–সত্যি রে। আমাকে একটা মুরগী দিতে চাইলে আমি নিতে চাইতাম নাকি? নেবো না জন্য কি একটু অফারও দেবে না! হয়তো প্রথমে একটু না না করতামই। জোর করে ধরিয়ে দিলে কি মানা করা যেতো নাকি!

অপলা সজোরে মাথা উপর নিচ করে ঝাঁকালো। আফসোসের সুরে বললো,

–গেট ধরলে ভালো হতো ভাইয়া। টাকা আদায় করা যেতো। এখন যা পরিস্থিতি দেখতিছি, আমাদের খন্দকারদের ভবিষ্যৎ খারাপ। ভালো হয়েছে আপু থাকবে না। সেকেন্ড টাইমে আমরা গেট ধরবো।

অন্তুও অপলাকে সমর্থন করে বললো,

–আইফোন ইউজারকে বিয়ে করবা আপু। আমরা গেটে অনেক টাকা পাবো।

অপলা উৎসাহের সাথে বললো,

–হাত ধোঁয়ানো আর শরবত খাওয়ানোতেও।

নিহান নারকেল মুখে পুরতে পুরতে বললো,

–হু, আব্বুর লাচ্চি নষ্ট করে ফেলছিলো। এমন ছেলের সাথে থাকাও উচিৎ না। সামান্য একটা মুরগী অফার করার সাহসও দেখাতে পারে না।

নোঙর অবাক হয়ে দেখলো, সব ভাই বোনরা মিলে তার দ্বিতীয় বিয়ের সব প্ল্যান রেডি করে ফেলছে। এখন শুধু একজন আইফোন ইউজারকে খুঁজে পেলেই হলো!

***
রাতে ফ্রী হতেই উজান আবসার কায়সারকে খুঁজতে লাগলো৷ তিনি স্টাডি রুমে এক গাদা ফাইল আর বইয়ের ভেতর বসে ল্যাপটপে নাটক দেখছিলেন। উজানের হাক-ডাকে বিরক্ত হলেন খুব। উঁচু গলায় ধমকে উঠলেন,

–এমন করে চেঁচাচ্ছিস কেনো? কেউ মরেছে নাকি?

উজান স্টাডি রুমে আসলো। একটা চেয়ার টেনে বসে বললো,

–যে অবস্থা দেখছি তাতে খুন শীগ্রই আমাদের কোম্পানির ডেথ সার্টিফিকেট বানাতে হবে।

আবসার সাহেব এবারে ল্যাপটপে নাটক পজ করে উজানের দিকে মনোযোগ দিলেন। আর যাই হোক, ব্যবসায়ী মানুষদের ব্যবসার দিকে নজর দিতেই হবে। চিন্তিত স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন,

–কি হয়েছে? বড় কোন প্রজেক্ট হাত থেকে ছুটে গেছে? লস খেয়েছিস নাকি? অফিসে কেউ বিট্রে করছে?

উজান হাঁপ নিশ্বাস ছাড়লো৷ বিরক্ত গলায় বললো,

–অফিসে তোমাদের নোঙর বৌমাকে ঠিক কি কাজে রেখেছো? কি কাজ করাবো তাকে দিয়ে? আমাদের তো প্রেস কোম্পানি না যে কথা বললাম আর কাজ হয়ে গেলো৷ কথা বলা ছাড়া তো আর কিছুই সে পারে না।’

আবসার সাহেব ভারি বিরক্ত হলেন। তবে মাথা ঠান্ডা রেখে বুঝানোর ভঙ্গিতে বললেন,

–ডিয়ার সান, আমাদের বাঙালীদের খেলার একটা নিয়ম আছে। খেলায় যদি কেউ অংশগ্রহণ করতে চায় কিন্তু যদি তাকে দলে নেওয়ার মতো না হয় তাহলে তাকে দুধভাত রাখা হয়। দুধভাত কখনই কাজে আসে না কিন্তু সে খেলতে পেরেই খুশি৷ তাকে খুশি করাই সবার কাজ৷ এবার তুই ভেবে দেখ বুঝিস নাকি?

–হুম, বুঝতে পেরেছি৷ তোমাদের বৌমাকে খুশি করাই আমাদের একমাত্র কাজ।

–গাধা, যা এখান থেকে।

ধমকে উঠলেন তিনি৷ উষিরের থেকে উজানের সাথে তার সম্পর্ক বেশি গভীর, বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ। উজান হাসলো, বড় বাবার গাল টিপে শিঁষ বাজাতে বাজাতে ঘরে গেলো৷ নোঙর খন্দকারের নোঙর করা জাহাজ ফুঁটো করার দারুন দারুন সব বুদ্ধি মাথায় কিলবিল করছে।

***
রাতে উষিরের জ্বর আসলো। টেম্পারেচার একশো দুইয়ের কাছাকাছি আসলেও রোগীর হালচাল দেখে দেখে মনে হলো একশো পাঁচ ছাড়িয়ে গেছে। রাশা রেগে বিড়বিড়ও করলো,

–ননীর পুতুল! হুহ!

উষির অনেক কষ্টে চোখ খুললো। রাশার ধরে রাখা হাত আরো শক্ত করে ধরে আবেগী স্বরে বললো,

–তোমাকে কালো ড্রেসে কি সুন্দর দেখাচ্ছে! একেবারে কালো পরী। আরেকটু একটু কাছে এসে বসো তো। বরের সেবা করো একটু৷ বরের সেবা করলে সুন্দরীদের সৌন্দর্য বেড়ে আরো যায়।

রাশা মুখ লুকিয়ে হাসলো,

–পাগল! এখন কি পেট কেঁটে পেটের মধ্যে ঢুকে যাবো?

উষির শুনলো না বোধহয়। উত্তপ্ত মুখ রাশার হাতে গুজে আবার চোখ বুজে আহা উহু করতে লাগলো৷ রাশা এবারে বিরক্ত হলো না। উজানের এলোমেলো চুলে হাত বুলিয়ে দিলো। মুখে অকারণ লাজুক হাসি।

চলবে…

#তুমি_সন্ধ্যার_মেঘ
#হুমায়রা
#পর্বঃ২২

ঘুম থেকে উঠেই নোঙরের ডিউটি শুরু হয়ে যায়। ডিউটির প্রথম এবং প্রধান দ্বায়িত্ব হচ্ছে, আজ কি দিয়ে রুপচর্চা করবে সেটার লিস্ট তৈরি করে প্রয়োজনী উপকরণ গোছানো৷ সব কিছু মোটামুটি বাড়িতেই থাকে৷ তাই খুব একটা ঝামেলা হয় না৷ কিন্তু আজকে ঝামেলা হয়ে গেলো৷ বাড়িতে দুধ নেই৷ অথচ আজকে দুধ আর হলুদের প্যাকটা লাগাতেই হবে। নিজেকে সুন্দর করে তবেই আজ অফিসে যাবে। মনে মনে পন করেছে, উজান যদি দ্বিতীয়বার তার দিকে ঘুরে না তাকায় তবে সেও নোঙর খন্দকার না!

অনেক কষ্টে দুধের ব্যবস্থা তো হয়ে গেলো। কিন্তু জামা নিয়ে সমস্যায় পরে গেলো। বেছে বেছে পছন্দের সি গ্রীন কালারের সালোয়ার সুট বের করেছিলো, কিন্তু ম্যাচিং জুতা আর কানেরদুল খুঁজে পাচ্ছে না। কানেরদুল তাও কোনমতে চলানো গেলেও জুতা! গোলাপি, লাল, এসব জুতা তো কিছুতেই মানাবে না। নজর তো পরে আছে অপলার কালো রঙের হিলের উপর। উপরে ছোট ছোট পাথরের চিকন ফিতা দেওয়া হিলটার দিকে এমন নজরে পরেছে যে তার কাছে থাকা কালো রঙের জুতাগুলোর দিকে ফিরেও তাকাতে ইচ্ছে হচ্ছে না। অনেক বলে কয়ে যখন জুতার জোগাড়ও হয়ে গেলো, তখন ঘড়িতে নয়টা বেজে গেছে। অথচ তার অফিস যেতে দের ঘন্টার মতো সময় লাগে। মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। দেরি হলে হোক! ফুপি বলেছে, নিজেদের অফিসে যখন খুশি যাওয়া যায়। তাকে কিছু বলতে আসলে সেও ফুপির সাথে কথা বলিয়ে দেবে। হিসাব বরাবর!

নোঙর এসে পৌঁছালো এগারোটায়। অফিস তখন রমরমা চলছে৷ এসি জায়গামতো চলে এসেছে। সবাই খুশি, নোঙরও খুশি। খুশির খবরটা দিতেই শামীম টেবিলের উপর দিয়ে তার ডেস্কে উঁকি দিলো। দাঁড়ানো অবস্থায় ডেস্কের উচ্চতা বুক সমান। নোঙর মাথা উঁচু করে ভ্রু কুঁচকে বললো,

–কিছু বলবেন?

শামীম দাঁত বের করে হাসলো। তারপর আঙুল উঁচিয়ে এসির দিকে নির্দেশ করলো৷ ওপাশ থেকে মমো আর অমিও নিজেদের ডেস্ক ছেড়ে নোঙরের ডেস্কে উঁকি দিয়েছে। নোঙর অনেকটা হতভম্ব হয়েছে বলা চলে। মমো ডেস্কের কাঠের দেয়ালে হাত রেখে গালে হাত দিয়ে বললো,

–তোমারই তো সময় গো! কি সুন্দর দেরি করে আসছো৷ আবার এতো সুন্দর সেজেগুজে এসেছো। কেউ কিচ্ছু বলবে না৷ কি ভালো, তাই না? ইসস! আমার যদি এমন আত্মীয় থাকতো!

নোঙর ইতস্তত করে বলার মতো করে কিছু খুঁজলো৷ কিন্তু কি বলবে ভেবে পেলো না। ওপাশ থেকে অমি মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে বললো,

–তোমাকে আজকে অনেক বিউটিফুল লাগছে নোঙর। চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে।’

নোঙর গম্ভীর গলায় কিছু বলতে চাইলো, মনে মনে কথা সাজিয়েও ফেললো। কিন্তু বলতে পারলো না। মুখ খোলার আগেই তাহের এসে হুংকার দিয়ে উঠলো,

–অফিসে কাজ বাদ দিয়ে এতো কিসের গল্প? স্যারকে ডাক দেবো?

বলেই নোঙরের দিকে কড়া চোখে তাকালো৷ তারপর বললো,

–আপনাকে স্যার ডাকে।

নোঙরের চোখ কপালে উঠে গেলো। যদি রুমে নিয়ে একা বকে তাহলে ঠিক আছে৷ কিন্তু যদি এই তাহেরের সামনে বকে তাহলে নোঙর খন্দকারের মানসম্মান সব ধুলিসাৎ হয়ে যাবে! ঢোক গিললো সে। ভয় পেলেও নিজের অ্যাটিটিউড ঠিক রাখলো৷ নাক চুলকে হাসলো। উঠে দাঁড়িয়ে তাহেরকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো,

–স্যারের তো আবার আমাকে অনেক প্রয়োজন। আমাকে ছাড়া এক মূহুর্ত চলতে পারে না। আত্মীয়তা কি করছি, ফেঁসেই তো গেছি। শুনুন তাহের মিয়া, কোনদিন এমন আত্মীয়র অফিসে চাকরি করবেন না৷ আমার মতো বারবার বসের রুমে যাতায়াত করতে করতে পা ছিলে যাবে।

বলেই তাহেরের অগ্নি দৃষ্টি উপেক্ষা করে হিলের গটগট আওয়াজ তুলে উজানের রুমে গেলো।

উজান ল্যাপটপে নিজের কাজ করছিলো। নোঙরের হিলের খটখট আওয়াজ শুনেই ফোঁস করে শ্বাস ফেললো। গলার টাই ঢিলা করে চেয়ারর হেলান দিয়ে তার দিকে তাকালো। ততক্ষণে সে চেয়ার টেনে বসে পরেছে৷ উজান মুখভঙ্গি গম্ভীর করে বললো,

–অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করা শিখবে কবে?

–যেদিন থেকে তুমি আমাকে নিজের মনে করবে।

বলতে বলতেই টেবিলে দুই হাত রেখে মুখ হাতের উপর রাখলো। চোখ পিটপিট করে রোম্যান্টিক দৃষ্টিতে উজানের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসতে লাগলো। গতরাতে দেখা রোম্যান্টিক মুভিটা তার উপর ভালোমতো প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু উজান তো সেটা দেখেনি। তাই চোখ গরম করে ল্যাপটপের পাশে থাকা ফাইলের স্তুপ নোঙরের দিকে ঠেলে দিয়ে বললো,

–নিচের তিনটা ফাইল সেকেন্ড ফ্লোরে আকিব সাহেবকে দেবে। আকিব সাহেব সাইন করে অ্যাপ্রুভ করলে ফাইলগুলো কমপ্লিট করবে। আর বাকি দুটো ফাইল ফোর্থ ফ্লোরের মিসেস ফ্লোরাকে দেবে৷ উনি এটা নিয়ে আরো দুইটা ফাইল দেবেন৷ ওদুটো ফাইল আমার কাছ থেকে সাইন করে নিয়ে কমপ্লিট করবে৷ মানে টোটাল পাঁচটা ফাইল তোমাকে কমপ্লিট করতে হবে। কালকের মধ্যেই কমপ্লিট করে জমা দিতে হবে। আর লাঞ্চের পর মিস পাখিকে তার কস্টিউমগুলো দিতে হবে। ছয়টার দিকে ফটোশুট হবে। শুট শেষ না হওয়া পর্যন্ত তোমার ছুটি নেই।

নোঙরের মুখ বিষ্ময়ে হা হয়ে গেলো৷ এতো কথা আর এতো কাজ হজম করতে সমস্যা হচ্ছে খুব। বড় বড় চোখ দুটো গোল গোল হয়ে আছে৷ তার অবস্থা দেখে উজান ফাইল শব্দ করে টেবিলের উপর রাখলো। নোঙর একপলক ফাইলের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে উজানের দিকে তাকিয়ে আমতা-আমতা করে বললো,

–এতো..এতো কাজ আমি করবো?

–ইয়েস। তোমার যেহেতু কাজের নিজস্ব সেক্টর নেই তাই সব সেক্টরেই তুমি কাজ করবে। আর হ্যাঁ, এটা টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি, নট শ্বশুরবাড়ির অফিস। গট ইট?’

নোঙর ঠোঁট উলটে কাঁদোকাঁদো স্বরে বললো,

–সেইটা তো নোঙর বুঝলো। কিন্তু এতো কাজ ও কিভাবে করবে সেটা তো বুঝতে পারছে না।’

–এই সিমপল কাজটা যদি করতে না পারো তাহলে করো না। এখান থেকে বেড়িয়ে সোজা বাইরের রাস্তা দেখবে। তারপর ওখান দিয়ে বাইরে গিয়ে একটা গাড়ি খুঁজে বাড়ি চলে যাবে।

–কিন্তু এতো কাজ!

নোঙরের কাজের কথা পাত্তা না দিয়ে উজান সতর্ক করে বললো,

–কাল যদি দশটার দশ সেকেন্ড পরেও আসো তো অফিসের দরজা তোমার জন্য বন্ধ। এবারে যাও।

নোঙর দাঁতে ঠোঁট কাঁটলো। এতো অপমান আর টর্চারের পর কিছু না বলে মুখ বুজে চলে গেলে খন্দকারদের অপমান হবে। এই অপমান নোঙর খন্দকার কিছুতেই সহ্য করবে না!

টেবিলে রাখা ফাইলগুলো গোছাতে গোছাতে বললো,

–আচ্ছা যাচ্ছি। কিন্তু তার আগে কিছু বলে যাই। ভালো কথাই বলবো। তোমার মতো জঘন্য কথা আমি বলতে পারি না।

এরপর একপলক উজানের শক্ত হওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,

–শোনো, বারবার এভাবে আমাকে ডাকবে না। আমার ডিস্টার্ব হয়। আর তাহের মিয়াও বাঁকা চোখে তাকায়। শুধু তাহের মিয়া না, অফিসের সবাই-ই বাঁকা চোখে তাকায়। ভাবে, তোমার আমাকে খুব প্রয়োজন। আর আমার পরামর্শ ছাড়া তুমি এক পাও চলতে পারো না। এসব কানাঘুষা হয় তো, শুনি সব৷ সবই কানে আসে।’

–কথা শেষ হলে বিদায় হও।

উজান দায়সারা ভাবে বলে হাতের ইশারায় দরজা দেখিয়ে বললো৷ নোঙর তেঁতে উঠলো,

–তুমি কি আমাকে বিদায় হও বলার জন্য ডাকো নাকি? কথা শুরুর আগেই বিদায় হও। ভদ্র মেয়ে জন্য ভদ্র ভাবে কথা বলছি। তোমার মতো অভদ্র হলে দেখাতাম মজা। হুহ!

বলেই ফাইল রেখেই চলে যেতে চাইলো। উজান পিছন থেকে ডেকে বললো,

–ফাইল রেখে যাচ্ছো কেনো? আবার আত্মীয়র ঘরে আসার ইচ্ছা আছে নাকি?

নোঙর তেড়ে এসে টেবিলে শব্দ করে দুই হাত রেখে উজানের দিকে ঝুঁকে দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললো,

–একদিন বৃষ্টি পরবে আর আমি সেইদিন এই সবগুলা ফাইল পানিতে ছুড়ে ফেলবক আর তারপর শান্তি পাবো।

বলেই ফাইল তুলে চেয়ারে লাথি দিয়ে দরজা সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে বন্ধ করলো। বলা চলে এক প্রকার প্রল’য়ংকরী ঘূ’র্ণিঝ’ড় তুলে তারপর গেলো।

*****
নিজের ডেস্কে বসে ফাইলের দিকে তাকিয়েই মাথা ঘুরে উঠলো নোঙরের। আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারলো না। গুগোলে সার্চ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো কিন্তু গুগোল কি উল্টাপাল্টা দেখিয়ে দিলো, মাথা আরো ঘুরে উঠলো৷ মাথা ঘোরানোর মাঝেই সাইন করার কথা মনে আসলো।

দোতলার আকিব সাহেব! তার কাছে কোন কোন ফাইল নিতে হবে ভুলে বসে আছে৷ তবে নোঙর খন্দকার বোকা না। সবগুলো ফাইল তুলেই দোতলা দোতলা জপতে জপতে নিচে না নেমে উপরের সিঁড়ি দিয়ে চারতলা চলে গেলো। চার তলা অনেকটা বুটিক হাউজের মতো দেখতে। চারিদিকে জামা কাপড় সুন্দর করে ঝুলিয়ে রেখেছে। আশেপাশে ছড়ানো ছিটানো কয়েকটা টেবিলে অনেকগুলো কাগজ, পেন্সিল, কালার পেন্সিল নিয়ে কয়েকজন বসে কাজ করছে। আবার অনেকে সুই সুতা কিংবা টুকরো কাপড় নিয়েও কাজ করছে। এগুলোর কিছুটা সে বুঝলো আর কিছুটা বুঝলো না। চোখ পিটপিট করে যখন চারিদিকে তাকিয়ে দেখছিলো তখন সামনে ভীষণ সুন্দরী একজন মহিলা এসে দাঁড়ালো। লম্বায় নোঙরের থেকে একটু বড়। হাঁটু পর্যন্ত লম্বা টপস পরে আছে। চুলগুলো স্টাইল করে বাধা। পরনে নোঙরের থেকেও উঁচু হিল। নোঙরকে আপাদমস্তক দেখে সুন্দরী মহিলাটা বললো,

–ড্রেস কালার প্রিটি। বাট ডিজাইনটা অল্ড। এটা দিয়ে স্লিভলেস ফ্রক বানালে আর এর সাথে জিন্স আর একটু উঁচু সাদা হিল পরলে ভালো মানাতো। চুলগুলো অনেক বড় বাট সুন্দর আছে। ওগুলো বেঁধে না রেখে খুলে রাখলে আরো ভালো দেখাতো।’

নোঙর ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে নিজের চুলে হাত দিলো৷ বিনুনি করা লম্বা চুলগুলো একটু নেড়ে চেড়ে বললো,

–আকিব সাহেব আছেন?

–নো। হি’জ অন দ্য সেকেন্ড ফ্লোর। দিস ইজ ফোর্থ ফ্লোর। অ্যান্ড আই অ্যাম মিসেস ফ্লোরা জেসমিন। নট ফ্লাওয়ার জেসমিন। ইট’স মি, হিউম্যান জেসমিন। খুশবুদার জেসমিন ফ্লাওয়ার দেখেছো কখনও?

ভ্রু উঁচিয়ে জানতে চাইলেন তিনি। নোঙর মাথা নেড়ে না বুঝিয়ে বললো,

–আপনার জন্যেও ফাইল আছে৷ আজলান স্যার পাঠিয়েছেন, সাইন নেওয়ার জন্য। কাইন্ডলি একটু দেখে দেবেন, কোনটা আপনার। আমি ভুলে গেছি।

–কোন ফাইলে সাইন নিতে এসেছো, সেটা কি আমার জানার কথা?

নোঙর হাঁপ নিঃশ্বাস ছেড়ে বিদায় নিলো। তারপর সিঁড়ি পেরিয়ে পুনরায় উজানের রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো৷ তাহের মিয়ার বাঁধায় ভেতরে যেতে পারলো না। নোঙর বড় বড় চোখে কড়া ভাবে তাকিয়ে বললো,

–দেখুন তাহের মিয়া, মাথা কিন্তু গরম আছে। আপনার স্যারকে ফাইলগুলো দিয়ে বলুন আলাদা করে দিতে।

তাহের ভ্রু কুঁচকে নোঙরকে দেখে ফাইল নিয়ে ভেতরে গেলো৷ কিছুসময় পরে দুই হাতে ফাইল আলাদা করে নিয়ে এসে তাকে ফেরত দিলো৷ সেগুলো নিয়ে সে আবার সফরে বের হলো।
ফাইল সাইন করিয়ে আসতে আসতেই লাঞ্চের ব্রেক পরে গেলো। এগুলো আবার উজানকে দিয়ে সাইন করাতে হবে৷ কিন্তু নোঙর ব্রেকটাইম নষ্ট করতে চাইলো না৷ ফাইল টেবিলে গুছিয়ে রেখে যখন অফিস ক্যান্টিন গেলো তখন অফিস স্টাফদের আড্ডা জমে উঠেছে। বিষয়বস্তু, মডেল পাখি ও উজান।

–উজান স্যার তো বোধহয় মডেল পাখিকে বিয়ে করবে৷ কালকেও কতক্ষণ একসাথে সময় কাঁটালো৷ আবার তাকে ব্র‍্যান্ড অ্যাম্বাসেডরও বানিয়েছে। এসব কি কেউ এমনি এমনি করে নাকি?’

আজকের দুপুরের খাবার ড্রাইভার দিয়ে মাহফুজা পাঠিয়েছিলো নোঙরকে। একটা টেবিলে বসে সেটাই আনপ্যাক করছিলো আর সাথে সাথেই গরম সীসার মতো কথাটা কানে ঢুকে পরলো। টিফিন বক্সের ঢাকনাটা আর খোলা হলো না। টেবিলে কয়েকবার আঙুল দিয়ে খুটখুট আওয়াজ তুলে গলা উঁচিয়ে বললো,

–স্যার তো বিয়ে করেছে।

কথাটা বোমার মতো বি’স্ফো’রিত হলো৷ মূহুর্তেই নোঙরের টেবিল ভরে উঠলো৷ সিনহা নামের মেয়েটি চেয়ার টেনে বসে নোঙরের দিকে ঝুঁকে বললো,

–বিয়ে করেছে! কাকে? কবে? তুমি জানলে কিভাবে?

নোঙর কাঁধ নাচিয়ে টিফিন বক্সের ঢাকনা খুলতে খুলতে বললো,

–বিয়ে করেছে তিনমাসের মতো হয়েছে। আর বিয়ে করেছে একটা মেয়েকে। আর আমি জেনেছি কারন আমি নিজেই বিয়েতে উপস্থিত ছিলাম।

শামীম অবাক হয়ে বললো,

–তুমি ছিলে?

টিফিনে ভাত, চিংড়ির মালাইকারী আর ফিশ কাটলেট ছিলো। পছন্দের খাবার দেখে জিভে জল চলে আসলো তার। কিন্তু এতো মানুষের মধ্যে খাওয়া যাবে না। পুনরায় ঢাকনা বন্ধ করে গালে হাত দিয়ে বললো,

–হ্যাঁ! আমি না থাকলে বিয়ে হবে নাকি?

মমো প্রায় নোঙরের গায়ের উপর পরে উত্তেজিত স্বরে বললো,

–তুমি না থাকলে বিয়ে হবে না কেন?

–আরে বাবা, আমি আত্মীয় হই তো৷ ঘনিষ্ঠ আত্মীয়৷ আর বিয়েটা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের নিয়েই হয়েছে।

অমি কপাল কুঁচকে ভাবুক গলায় বললো,

–তুমি কেমন আত্মীয়?’

–স্যার আমার ফুপুর ছেলে।

থেমে থেমে উত্তর দিলো নোঙর৷ এতোক্ষণ ইঞ্জয় করলেও এখন কেমন অস্বস্তি হচ্ছে৷ মমো তাকে অস্বস্তি থেকে বের করলো। কিছুটা মন মরা হয়ে বললো,

–স্যারের ওয়াইফকে কেমন দেখা যায়?’

নোঙর বেশ উচ্ছ্বাস নিয়ে বললো,

–অন্নেক কিউট। মানে এতো সুন্দর আর এতো ভালো বিহেভিয়ার! দেখলে পুরা পা’গল হয়ে যাবা।

অমি দ্বিধান্বিত আর খানিকটা কৌতুহলী স্বরে বললো,

–তুমিও কি বিয়ে করেছো? মানে ম্যারেড তুমি? বা কমিটেড?

নোঙর সজোরে মাথা নাড়লো,

–আমি পিওর সিঙ্গেল। কোন সন্দেহ নেই এতে।

উজানের বিয়ের কথায় শামীমের ভারী মন খারাপ হলো। স্যার তাদের নিজের মানুষ ভাবে না ভেবেই কষ্ট হচ্ছে খুব! বললো,

–আমাদের কেন বললো না বিয়ের কথা।

–ভাবি তো এখনও পড়াশোনা করছে। পড়াশোনা শেষে ভাবিকে শ্বশুরবাড়ি আনবে। এখনও বাবার বাড়িতেই আছে। জানো, জবও করে। সুন্দর না?

–চোখ পিটপিট করে সবার উদ্দেশ্যে বললো। মমো মুখ ভেঙচে চেয়ার টেনে বসে বললো,

–ছাই সুন্দর। এমন বর পেলে আমি এক মূহুর্তও বাবার বাড়ি থাকতাম না। পড়াশোনা, জব সব বাদ দিয়ে বরের দিকে নজর রাখতাম। আর বরের দিকে নজর দেওয়া সব ডাই’নিদের চো’খ উপরে ফেলতাম।’

নোঙর কেশে উঠলো। সেও তো আড়ালে আবডালে উজানের দিকে নজর রাখছে!

আলোচনা আরো কিছুক্ষণ চলতো কিন্তু পিছন থেকে ভারী গলায় বলায় উজান বলে উঠলো,

–এখানে কি বানর খেলা দেখানো হচ্ছে?

কথাটাতে ম্যাজিক ছিলো। মূহুর্তেই ভিড় ভেঙে গেলো। উজানকে দেখে চোখ পিটপিট করে নিরীহ চোখে তাকালো নোঙর। কতটা কি শুনেছে, সে জানে না। তবে উজান তার দিকেই কড়া চোখে তাকিয়ে আছে৷ ওভাবেই বললো,

–নিজের ডেস্কে আসুন, দ্রুত।

নোঙর ঠোঁট কামড়ে উঠে পরলো৷ উজান শুনলে পেলে শুনেছে। শোনাটা কোন বড় ব্যাপার না। শুধু বিয়ের সময়টা একটু বেশি বাড়িয়ে বলেছে। এটাও কোন বড় ব্যাপার না। বিয়ে তো হয়েছে। কবে হয়েছে সেটা কে দেখতে যাবে! আর তাছাড়া সে তো তার কথা রেখেছে। তার আর উজানের বিয়ের কথা মোটেও কাউকে জানায়নি। শুধু উজানের বিয়ের কথা জানিয়েছে। সে তো সিঙ্গেল। পিওর সিঙ্গেল!

উজান নোঙরের ডেস্কের সামনে এসে আঙুল উঁচিয়ে ডেস্ক দেখিয়ে বললো,

–এগুলো কি?

নোঙর উঁকি দিয়ে দেখলো, ডেস্কে লিপস্টিক, ফেস পাউডার, কাজল, রাবার ব্যান্ড সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাও আবার ফাইলের উপরে৷ উজান শ্বাস ফেলে বললো,

–এটা কি বিউটি পার্লার নাকি অফিস?

–যে যেটা বানায়, সেটাই।

নোঙর ঠোঁট উলটে কাঁধ নাচিয়ে বলল। উজান গরম করে তাকাতেই নোঙর নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে বললো,

–এখানে অফিস না বানালে এটা বিউটি পার্লারও তো হতে পারতো। হওয়াটা খুব একটা কঠিন ছিলো না।

–এসব আমার অফিসে চলবে না। দ্রুত এগুলো সরাও।

নোঙর গজগজ করতে করতে সেগুলো সরিয়ে ফেললো। সব সরিয়ে ক্লিন করার আগ পর্যন্ত উজান ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলো। গোছানো শেষ হতেই হাত ঘড়িতে সময় দেখে বললো,

–চলো লাঞ্চ করে আসি। সময় বেশি নেই।

–আমি তো বাড়ির খাবার খাবো। শাশুড়িমা নিজের হাতে লাঞ্চবক্স রেডি করে আমাকে পাঠিয়েছেন। কারন তিনি জানেন, তার বৌমা বাইরের খাবার খায় না।

–বাইরের খাবার খায় না বলছো কেন? বলো পেটে সয় না। বদহজম হয়।

নোঙর ক্ষোভে ফেঁটে পরলো। আঙুল তুলে রাগী গলায় বললো,

–তুমি জানো কিছু?

–জানতে হয় না। এমনিতেই বোঝা যায়। যাও গিয়ে দেখো খাবার আছে নাকি। থাকলে খেতে পারবে।

বলেই বাঁকা হেসে চলে গেলো উজান। খাবার উজানের জন্যেও এসেছে। কিন্তু সেটা সে কিছুতেই শেয়ার করবে না। নোঙর ভ্রু কুঁচকে কথার কূলকিনারা না পেয়ে ক্যান্টিনে ফিরে গেলো। সত্যি সত্যি তার টিফিনবক্স খালি! নোঙরকে দেখে শামীম হাত চাটতে চাটতে বললো,

–তোমার খাবার অনেকটা স্যারের মা ম্যাডামের মতো। অনেক টেস্টি।

নোঙর উত্তর দিলো না৷ রাগ প্রকাশ না করায় মুখ থমথমে হয়ে গেলো৷ আর এভাবেই তার আর উজানের প্রথম ডেট আর তার দুপুরের খাবার বাতিল হয়ে গেলো। সেই রাগেই কি না কে জানে, সে আর দুপুরে খেলোই না। খালি পেটেই তাহেরের হাত দিয়ে উজানের থেকে ফাইলগুলো সাইন করিয়ে ব্যাগে রেখে মিস পাখির আসার অপেক্ষায় রইলো।

মিস পাখি আসলো তিনটার পরে। আসার পরপরই হম্বিতম্বি শুরু করে দিলো। তার আরেকটা শ্যুট আছে৷ দ্রুত কাজ করতে হবে। নোঙর দেখলো এই মেয়েটাই হলো কালকের সেই মেয়েটা। এখন এই মেয়েটার পিছে পিছে ড্রেস নিয়ে ঘুরতে হবে ভেবেই মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে৷ ক্ষিদে পেটে আর কত সহ্য করা যায়! সেও পারছে না। একবার দোতলা, একবার তিনতলা, একবার চারতলা করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছে। ইচ্ছে হচ্ছে আজই রিজাইন করে চলে যাক। কিন্তু নোঙর খন্দকারের সম্মান আছে। সে হারবে না কিছুতেই।

মিসেস ফ্লোরা ফ্যাশন ডিজাইনার। মিস পাখিকে তিনিই ইন্সট্রাকশন দিয়ে সাজিয়ে দিচ্ছিলেন। সাজানো শেষ হলেও জুতা নিয়ে সমস্যায় পরে গেছেন। কোন জুতাই পাখির পায়ে সুট করছে না। তারপর যখন তার নোঙরের পায়ের দিকে নজর পরে মুখে হাসি ফুটে উঠলো তখন নোঙরের আত্মা কেঁপে উঠলো। হিলের কিছু হলে অপলা ওকে যে কি করবে তার ইয়াত্তা নেই! ভয় থাকলেও জুতা ধরে রাখতে পারলো না। পাখির পায়ে অপলার শখের হিল দেখে রাগে শরীর জ্বলে উঠলো তার। মুখ বুজে দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে গেলো।

শ্যুটিং হবে আউটডোরে। অফিস থেকে মাইলখানেক দূরে একটা নদী আছে। ওই নদীর পাড়েই হবে কাঙ্খিত শ্যুটিং৷ জায়গাটা বেশ উঁচুনিচু৷ জুতা পরে ওই মডেল হাঁটতে পারবে নাকি এই ভয়েই নোঙরের অবস্থা খারাপ। অন্যদিকে প্রতিশোধও নিতে ইচ্ছা হচ্ছে৷ এই মিস পাখি গতকাল আর আজ কম জ্বালায়নি! একবার ভেবেছিলো ল্যাং মেরে ফেলে দিক৷ কিন্তু ফেলানো যাবে না। জুতা ম্যাটার করে। যত যাই হোক, অপলার হিলের কিছুই করা যাবে না। আবার প্রতিশোধ না নিলে শান্তিও পাবে না। তারপর নোঙরে বুদ্ধি বের হলো। শ্যুটিংস্পটে মডেলের খাওয়ার জন্য গ্রিলড হট ডগ আর দুই রকমের সস ছিলো টেবিলের উপর। বেছে বেছে টমেটো সস হাতে তুলে নিলো। পাশেই ছিলো মডেল পাখির ব্যাগ। এদিক ওদিক তাকিয়ে ব্যাগের চেইন খুলে ভেতরে সস ঢালতে নিয়েছিলো। তার আগেই উজান হাত চেপে ধরলো। রাগী গলায় বললো,

–আমি অনেকক্ষণ হলোই তোমার চোরা চোখ খেয়াল করছিলাম। জানতাম এমন কিছুই হবে। এতো বদ বুদ্ধি পাও কোথা থেকে?

ধরা পরেও নোঙরের বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই। উলটে তেঁতে উঠে বললো,

–তোমার পাখি তো খুব ভালো। তা এতো ভালো পাখি ফুঁশ করে উড়ে যাবে না তো?

উজান বিরক্ত হলো খুব,

–কিসের মধ্যে কি বলছো?

হাত ঝাড়া দিয়ে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো নোঙর। তারপর ব্যাগের ভেতর সস ফেলে সসের বোতল উজানের হাতে তুলে দিয়ে কণ্ঠে অবাক হওয়ার সুর তুলে বললো,

–এমা স্যার! মিস পাখির ব্যাগে সস ফেললেন কেনো?’

পিছনেই পাখি ছিলো। নোঙরের কথা স্পষ্ট শুনলো।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে