তুমি রবে ৭

0
2339
তুমি রবে ৭ . . অফিসে মাহি আসার পর থেকে সেদিনের ঘটনা যারা স্ব-চোক্ষে দেখেছিল তারা অফিস এসে প্রত্যেকের কাছে ঘটনাগুলো শেয়ার করছে। রীতিমতো কানাকানি চলছে ব্যাপারটা নিয়ে। ঐন্দ্রীর কানেও আসতে সেটা বেশি সময় লাগল না। তবে ঐন্দ্রী চুপ রইল শুধু লাঞ্চ টাইমের জন্য। তখনই সে খোলাখোলিভাবে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করবে আশফিকে। এদিকে মাহিকে অপমানসূচক কথা বলার পর থেকে আশফি নিজের আচরণে নিজেই স্তব্ধ। মাহির তখনকার মলিন মুখটা বারবার ভেসে উঠতে থাকল তার চোখের পর্দায়। মাহি তার কাছে একজন অজানা ব্যক্তিই ধরতে গেলে। মাত্র কিছুদিন হলো সে তাকে শুধু তার নামে আর কোয়ালিফিকেশনে চিনে। এর বাহিরে তাকে না চেনারই কথা। তাহলে সে কার বাইকে উঠল, কে তার চুল কপাল থেকে সরিয়ে দিলো এসব নিয়ে আশফির মাথা ব্যাথা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তবুও সে ভাবছে ব্যাপারগুলো। না চাইতেও তার ভাবনাতে বারবার ঘটনাগুলো রিপিট হচ্ছে। এর কারণ আশফি কোনোভাবেই খুঁজে পাচ্ছে না। আর মাহির অ্যাটিটিউড দেখে যতটা তাকে সরল আর শান্তশিষ্ট মনে হয় সে ততটাও নয়। সে প্রচন্ড ইগো আর ইললজিক্যাল রাগ সেন্টিমেন্ট নিয়ে চলে। এমন ধরনের মানুষকে আশফি সবসময়ই এড়িয়ে যায়। আর এখানে মাহির ক্ষেত্রে তার সম্পূর্ণটাই বিপরীত হচ্ছে। একটা ভারী শ্বাস ছাড়ল সে। যে নিঃশ্বাসটা ত্যাগ করার অর্থ ভেতরের বিক্ষিপ্ত ভাবনাগুলো নিজের মধ্য থেকে বাহির করার প্রচেষ্টা। আশফি গলার টাইটা লুস করে তারপর মনে মনে ভাবল, – “সে আমার একজন এমপ্লয়ি শুধু। এর বাহিরে আমি তাকে চিনি না আর চিনতে চাইও না। আর ভাবনা তো দূরে থাক। এই ব্যাপার এখানেই ক্লোজড।” . . আশফির কেবিন থেকে বেরিয়ে আসার পর থেকে মাহির খুশি মাখা মুখের রংটা উবে মলিন রূপ ধারণ করেছে। ডেস্কে বসে সে কোনো কাজেই মনোনিবেশ করতে সক্ষম হলো না। এদিকে খুশি এসে তাকে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে দেখে এক গাদা ফাউল প্যাচাল করে তার ডাবল এক গাদা কাজ ধরিয়ে চলে গেল। মাহির যেন কান্না করতে ইচ্ছে করল খুব। অফিসে জয়েন করার পর থেকে কোনো না কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সে খুব আপসেট হয়ে পড়ছে। এমনটা তার আগে কখনো হয়নি। আশফি তার অফিসের বস। আর বসেরা সাধারণত এমপ্লয়িদের সঙ্গে এমনটাই করে থাকে। কিন্তু তাও যেন মাহি তার এমন আচরণ স্বাভাবিকভাবে হজম করতে পারছে না। আর তারপর হঠাৎ করে সকাল থেকে ঐন্দ্রীও মাহিকে কেমন এড়িয়ে চলছে। কেন এড়িয়ে চলছে সে বিষয়ে মাহি কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে। কারণ অফিসে এসে সেদিনের ঘটনা নিয়ে কয়েকজনের বিভিন্নরকম আজগুবি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। লাঞ্চ অবধি তার এভাবেই সময়টা কেটে গেল। পূর্বের দিনের মতো দিশান আজও এলো মাহির সঙ্গে লাঞ্চ করার জন্য। মাহি মুখটা ভার করে বলল, – “আজ তুমি যাও দিশান। অন্যদিন যাব আবার।” – “দেখো মাহি, আমি জানি তুমি কেমন ধরনের। তাই নো টেনশন, আমি তোমার থেকে কোনো অ্যাডভান্টেজ নেওয়ার ট্রাই করব না। শুধু ফ্রেন্ড হয়ে সময় কাটাব একটু। কারণ তোমার সাথে গল্প করতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। তুমি অন্য সব মেয়েদের থেকে একটু ভিন্ন, তাই। সো কোনো না আর কোনো অজুহাত আমি শুনব না। ওঠো ওঠো।” মাহির হাত ধরে টেনে উঠিয়ে তাকে দাঁড় করাল দিশান। সে সময় আশফি এলো সেখানে। মাহি আশফির দিকে তাকাতে দিশান তার দৃষ্টি লক্ষ্য করে পেছনে তাকাল। আশফি তখন বলল, – “তুমি কি আমার সঙ্গে লাঞ্চ করাটা বরাবরের মতো স্কিপ করতে চাইছো?” দিশান হেসে বলল, – “নো ভাই, আমি তো জাস্ট স্পেস দিতে চেয়েছি তোমাদের।” – “তোমাদের মানে?” – “তুমি আর ঐন্দ্রী।” আশফি কোনো জবাব দিলো না। এর মাঝে ঐন্দ্রীকেও এদিকে আসতে দেখল দিশান। ঐন্দ্রীকে দেখিয়ে আশফিকে সে বলল, – “এইতো চলে এসেছে। তাহলে চলো আজ আমরা এক সঙ্গে লাঞ্চটা করি। আর মাহিকে ছাড়া আমার অফিসে লাঞ্চ করার ব্যাপারটা কেমন যেন পানসে পানসে লাগে। শী ইজ অ্যা গুড গাই অ্যাস অ্যা ফ্রেন্ড।” আশফি বলল, – “ঠিক আছে, যাওয়া যাক।”
চারজন এক সঙ্গে একটি রেস্টুরেন্ট ঢুকল। এক টেবিলে চারজন বসে আশফি খাবারের মেন্যুকার্ডটা মাহি আর ঐন্দ্রীর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, – “তোমরা অর্ডারটা করো।” ঐন্দ্রী নিজে কিছু অর্ডার করে মাহিকে বলল, – “তুই কী নিবি মাহি?” মাহি মৃদু হেসে বলল, – “বোরহানিটা বাদে সেম।” দিশান তখন বলল, – “তুমি বোরহানি পছন্দ করো না?” মাহি ঘাড় নাড়িয়ে না জানাল। দিশান তখন হেসে আশফিকে বলল, – “তোমার দল ভারী হলো ভাই।” খেতে বসে আশফি লক্ষ্য করল মাহিকে। সেদিন দিশানের সঙ্গে বসে যতটা ইজিলি তাকে কথা বলতে আর খেতে দেখেছিল আজ তেমনটা দেখল না তাকে। মনে হচ্ছে বড্ড অস্বস্তির সঙ্গে সে বসে আছে খাবারগুলো সামনে নিয়ে। তারা তিনজন তখন থেকে নানান বিষয়ে গল্প করলেও মাহি চুপচাপ। আশফি ভেবে নিলো হয়তো তার উপস্থিতির জন্যই মাহি আনইজি ফিল করছে। লাচ্চি চুমুক দিতে দিতে আশফি দিশানকে বলল, – “খাওয়া ব্যাপারটা শান্তির বিষয়। সেখানে অস্বস্তি নিয়ে খাওয়াটা কখনোই পসিবল নয়। আমার মনে হয় দিশান তুমি আর তোমার ফ্রেন্ড আলাদা খেতে বসলে বেশি এনজয় করতে তোমাদের লাঞ্চটা।” মাহি তখন আশফির দিকে তাকাল। আর দিশান মাহির দিকে তাকাল। তারপর দিশান বলল, – “ভাইয়া আমার এই ফ্রেন্ডটা একটু ইন্ট্রোভার্ট ধরনের। তুমি যদি ওর সাথে মিশতে পারো তবে তুমি বুঝতে পারবে সে কতটা চমৎকার একটি মানুষ। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি নেক্সট টাইম তুমি আমার ফ্রেন্ডের কম্পানি মিস করবে।” আশফি দাম্ভীকতার হাসি হেসে বলল, – “তাই! একদিন মিশেই চিনে গেলে তুমি?” – “অবশ্যই, কারণ সে কোনো পাথর নয় যে তাকে খোলা যাবে না। আমি যতটুকু মাহিকে চিনেছি, সে হলো একটি বই। যেটা খোলার পর ধৈর্য নিয়ে পড়লে তাকে পুরোটাই জানতে পারবে আর চিনতে পারবে। আমি ঠিক বলছি কি না ঐন্দ্রী?” ঐন্দ্রী মাহির দিকে তাকিয়ে বলল, – “কলেজে ওকে যখন ফার্স্ট দেখি তখন ওকে দেখে মনে হতো ও খুব অহংকারী টাইপের মানুষ। যার জন্য খুব বিশেষ পরিচিত কেউ ছাড়া ও কারো সঙ্গে কথা বলে না। কিন্তু ওর সঙ্গে যখন আমার ফ্রেন্ডশীপ হলো তখন ওকে বুঝলাম আর জানলামও। ও আসলে নিজে থেকে কখনো কারো সঙ্গে মিশতে পারে না। কেউ যদি ওর সঙ্গে মিশে তবে সে ওকে সত্যিই ভালো বন্ধু হিসেবে চিনবে। খুব সহজে ও তাকে আপন বানিয়ে নিতে পারে। আর এ কারণেই কলেজে ওর কমন তিনজন ফ্রেন্ড ছাড়া কোনো ফ্রেন্ড ছিল না। আর ছেলে ফ্রেন্ড তো ছিলই না।” – “দারুণ! দারুণ ব্যক্তিত্ব। তবে তোমরা হয়তো কিছু স্কিপ করে গেছো।” মাহি ভ্রু কুচকে তাকাল আশফির দিকে। আশফিও তার দিকে তাকিয়ে বলল, – “তোমরা যেটাকে অহংকার ভেবেছো আসলে সেটা তার ইগো।” এতক্ষণে মাহির থেকে জবাব এলো, – “হ্যাঁ, ডাবল ইগোওয়ালা মানুষ তো আর অন্য কারো ইগো সহ্য করতে পারে না।” কথাটা বলে শোধ দেওয়ার খুশিতে মুচকি হাসল মাহি। আশফি তখন বলল, – “ইগো অবশ্যই একজন মানুষের পার্সোনালিটি। তাই বলে মিনিংলেস আর ইললজিক্যাল ইগো কারো পার্সোনালিটি হতে পারে না। ওটাকে বলে ফালতু ইগো।” মাহির জবাবের পূর্বে দিশান ওদের মাঝে কথা বলল। – “ওহ ওয়েট, থামো তোমরা। কী সব ইগো টিগো নিয়ে কথা বলছো তোমরা। এসব বাদ দাও, আমার একটা দারুণ প্রস্তাব আছে। এ প্রস্তাবে সবাইকেই রাজি হতে হবে।” আশফি খাওয়াতে মনোযোগ দিলো আর মাহি, ঐন্দ্রী জিজ্ঞাসু চোখে তাকাল দিশানের দিকে। দিশান বলল, – “আজ আমরা ফ্যান্টাসিতে যাব। সেখানে আজ সারা বিকাল কাটিয়ে সন্ধ্যায় ফিরব।” মাহি তখন বলল, – “আমি যেতে পারব না। অফিস আওয়ার শেষে আমার বাহিরে থাকার পারমিশন নেই।” – “পারমিশন নেই মানে? তুমি এখন অ্যাডাল্ট পার্সোন। সমস্যা কোথায়?” – “আমার দাদু পছন্দ করেন না।” আশফি বলল, – “অফিস টাইমের পর আমার কোথাও যাওয়ার মুড থাকে না। এটা তুমি জানোই।” দিশান বিরক্তি প্রকাশ করে ঐন্দ্রীকে বলল, – “আর তোমার প্রবলেমটাও বলো শুনি।” – “আমার প্রবলেম নেই দিশান। প্রবলেমগুলো যেখানে সেখানে কথা বলো।” দিশান খাওয়া ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, – “আমি কোনো কথা শুনছি না। এখানে যারা আছ সবাইকেই যেতে হবে। আর মাহি, প্রয়োজনে তোমার বাসায় আমি কথা বলব।” মাহি চোখদুটো বড় বড় করে বলল, – “এটা প্লিজ ভুলেও করো না।” – “তাহলে তোমার অফিসের বস কথা বলবে। তাতে তো সমস্যা হওয়ার কথা না।” আশফির দিকে তাকিয়ে দিশান বলল, – “ভাইয়া তুমি ফোন করে ওর দাদুকে জানিয়ে দেবে অফিসের কাজের জন্য একটু লেট হবে ওর যেতে।” – “আমি কোনো মিথ্যা বলতে পারব না।” – “ও আচ্ছা, তুমি পারবে না আমি তো পারব।” সবাই ওর দিকে ভ্রু কুচকে তাকাল। দিশান ফোনটা বের করে মাহির থেকে মাহির বাসার নাম্বার নিলো প্রথমে। তারপর ওর দাদুর সঙ্গে আশফির পরিচয়ে কথা বলে তাকে ম্যানেজ করে নিলো। আশফি তখন রেগে বলল, – “এটা কী দিশান? তুমি আমার পরিচয় ব্যবহার করে মিথ্যা বললে কেন?” – “মাঝেমাঝে বলতে হয় ভাই। বাই দ্যা ওয়ে, মাহির দাদু তো তোমার প্রতি খুব ভরসা করে মনে হলো।” – “কী করে?” – “তো তো আর আমি জানি না। আমি এখন শুধু জানি প্রচন্ড এনজয় করব, সুন্দরী রমণীদের নিয়ে সাঁতার কাটব। ওয়াও! ভাবতেই তো ভালো লাগছে আমার।” – “আমি ওখানে পাবলিক সুইমিং এ নামতে পারব না।” – “তুমি ছাড়া আমার সাঁতার জমবে কী করে? তাহলে প্লেস চেঞ্জ করি। চলো আমরা আমাদের নতুন বাংলোটাতে বাড়িটাতে যাই। যেটা এখনো তৈরি হচ্ছে। ওখানের পরিবেশটাও চমৎকার। খুব নির্জন।” – “অনেক দূর হয়ে যায়।” – “তো কী? আজ তো বৃহস্পতিবার। অফিস দ্রুত ছুটি হবে। যেতে ঘন্টাখানেক লাগবে আর আসতে ঘন্টাখানে। মাঝে আমরা দু ঘন্টা টাইম স্পেন্ড করব। যদিও কময় সময় তাও খুব মজা হবে।” – “ঠিক আছে।” – “তবে ওই কথাই রইল। অফিস শেষে সবার দেখা হচ্ছে এক সঙ্গে।” . . সোম শত ব্যস্ততা ফেলে বাইকটা নিয়ে ছুটে এলো মাহির অফিসের সামনে। পাঁচ মিনিটের জায়গায় দশ মিনিট ওভার হতে সোম মাহিকে কল করল। কিন্তু ফোনটা রিসিভ হলো না। অফিসের সিকিউরিটি অনেক্ষণ সোমকে অফিসের সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে তার কাছে এগিয়ে এলো। – “আপনি কাউকে খুঁজছেন?” – “হ্যাঁ, এখানে জব করে সে। মানে প্যারোটে।” – “নাম কী তার? প্রায় পনের মিনিট আগে অফিস ছুটি হয়ে গেছে। অফিসে তো আর কেউ নেই।” সোম খানিকটা কপাল কুচকাল। তারপর বলল, – “নুসরাত মাহি। সে নেই ভেতরে?” – “উনি বোধহয় নতুন এমপ্লয়ি। কিন্তু অফিসে কেউই নেই এখন। সবাই বেরিয়ে গেছে।” সিকিউরিটির কথা শেষ হতেই রাগে সোমের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল। তারপর ফের বার কয়েক কল করল মাহিকে। কিন্তু এবারও রিসিভ হলো না। বাইকটা ঘুরিয়ে মাহির বাসার উদ্দেশে গেল সে। এদিকে গাড়িতে ওঠার পর থেকে দিশান অনেক স্পীডে মিউজিক অন করে সিটে বসেই নাচতে আরম্ভ করেছে। তাকে মনে হচ্ছে ফ্রেন্ডস নিয়ে মাস্তিতে আছে সে। আশফি ড্রাইভ করছে আর দিশানের নাচ দেখছে। তার ভাই দিশান গুড ড্যান্সার। বাট জোকার ড্যান্সার হিসেবেও সে কম যায় না। আশফি তাকে বলে উঠল, – “ব্যাস হয়েছে, পেছনে দুজন বসে আছে। তোমার নাচ দেখে হাসতে হাসতে তাদের পেটের দুর্ভোগ হবে কিছুক্ষণ পর।” দিশান চেঁচিয়ে বলল, – “কিছু বললে তুমি?” আশফি চোখদুটো ছোট ছোট করে তাকাল ওর দিকে। কারণ তখনো সে নেচেই যাচ্ছিল। ওদিকে পেছন সিটে মাহি আর ঐন্দ্রী বসে হাসতে হাসতে একজন আর একজনের গায়ের ওপর পড়ছে। প্রায় আধা ঘন্টা চলল দিশানের নাচ। তারপর হাঁপিয়ে উঠে নিজেই মিউজিক অফ করল। পেছনের দুজনকে উদ্দেশ্য করে সে বলল, – “এত ভালো ড্যান্স পার্টনার দুজন পেছনে, অথচ একা একা ড্যান্স করতে হলো আমায়।” ঐন্দ্রী বলল, – “নাচব কী! তোমার নাচ দেখতে দেখতেই তো বেহুঁশ হওয়ার পথে।” – “ওহ তাই বুঝি। ওকে আর নাচলাম না তাহলে। কাউকে বেহুঁশ করার ইচ্ছা নাই আমার। পরে দেখা যাবে আমাদের দু ভাইকে কল্লাকাটা ভেবে…” এটুকু বলেই থামল দিশান। মাহি আর ঐন্দ্রী তখনো হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে। মাহিকে এত বেশি হাসতে এই প্রথম দেখল আশফি। গাড়ির সামনের গ্লাসে তাকিয়ে মাহির হাসি কয়েকবার দেখা হয়ে গেছে তার। কিন্তু তাও যেন দেখার সাধ মিটছে না তার। যত সময় তাকিয়ে থাকা যায় ঠিক তত সময় অবধিই আশফির নজর গেঁথে থাকছে মাহির হাসিতে। এবার যখন আশফি মাহিকে দেখছিল তখন আচমকা মাহির দৃষ্টিও সেখানে আটকে যায়, যেখানে আশফি মাহিকে দেখছে। মাহি লক্ষ্য করল আশফি গাড়ি ড্রাইভে খুবই দক্ষ। না হলে নজর তার দিকে রেখে খুবই পারফেক্টলি সে ড্রাইভও করে যাচ্ছে। মাহি খুব বেশি সময় সেদিকে তাকিয়ে থাকতে পারল না। কারণ আশফির চাহিন তার কাছে এমন যেন সেই চাহনি তাকে গ্রাস করে নিচ্ছে। যাকে বলে মারাত্বক চাহনি। এমনিতেই মাহির মাঝে প্রচন্ড লজ্জা। সে বেশি সময় কোনো ছেলের চোখের দিকেই তাকাতে পারে না। প্রচন্ড অস্বস্তি বোধ হয় তার ছেলেদের চাহনি। কিন্তু আশফির চাহনি তাকে অস্বস্তি দেয় না ঠিক, কিন্তু হৃদপিন্ডের গতি বাড়িয়ে দেয়। যা মাহি বেশি সময় নিতে পারে না। আবার সেই চাহনির দিকে না তাকিয়েও থাকতে পারে না। গাড়িতে এবার বেশ নীরব সবাই। দিশান নাচতে নাচতে হয়রান আর ঐন্দ্রী হাসতে হাসতে হয়রান। শুধু দুটো মানুষের দৃষ্টিই যেন হয়রান নেই। মনে হচ্ছে ওই দুটো দৃষ্টি একে অপরের সঙ্গে কথা বলার জন্য ভেতরে ভেতরে ছটফট করছে খুব কিন্তু মুখ ফুটে কিছুই বলতে পারছে না। আশফির স্থির দৃষ্টি মাহির দিকে আর মাহির অস্থির দৃষ্টি তার চাহনিতে। আশফির মতো তার দৃষ্টি যেন দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখতে পারছে না। তার ধারণা তাহলে হয়তো তার হার্ট কয়েকবার মিস হয়ে সে মারাই পড়বে। খুব সুক্ষ্মভাবে ওদের দুজনের দৃষ্টি বিচরণ ঐন্দ্রীর চোখে পড়ল। ঐন্দ্রী খেয়াল করল মাহি তার দৃষ্টি সংযত রাখলেও আশফির দৃষ্টি আর সংযত নেই। প্রচন্ড জ্বলতে শুরু করল তার বুকের ভেতরে। কারণ আশফি এখন মাহির দিকে যেভাবে তাকিয়ে আছে এমনটা ঐন্দ্রীর দিকে সে কখনোই দেখেনি। নিঃসন্দেহে সে মাহির থেকে কম সুন্দরী নয়। তাও আশফি কখনো তার দিকে প্রয়োজন ছাড়া ফিরেও তাকায় না। ঐন্দ্রী মাহিকে ডেকে উঠল। – “এই মাহি? কলেজে থাকতে তোর না একটা বয়ফ্রেন্ড ছিল? কী নাম যেন তার?” মাহি বিস্ময় চোখে তাকাল ওর দিকে। – “আমার বয়ফ্রেন্ড?” – “বয়ফ্রেন্ড বলতে সেরকম কিছুই তো বোধহয় ছিল। মানে তোকে খুব কেয়ার করতো সবসময়, কলেজে তোকে পৌঁছে দিতো আবার ছুটির পর নিয়েও যেতো। তোর সঙ্গে কোনো ছেলে মিশলে তাকে সে ধরে মারতও। তুই তাকে ভাই বলে ডাকতি।” – “সোম ভাইয়ার কথা বলছিস?” – “হ্যাঁ সোম। ওর কথাই বলছি। কলেজে তো সবাই জানতো তুই নাকি ওর বউ। মানে তোরা রিলেশপনশীপে আছিস। ও নিজেই সবার কাছে বলতো ও তোর বউ। তাই যেন কেউ তোর দিকে না তাকায়। এখনো কি ছেলেটার সঙ্গে তোর সম্পর্ক আছে?” – “একটু ভুল বলেছিস, আমাদের সম্পর্ক ছিল না কখনোই।” – “আরে ওইতো, মানে ছেলেটা তোকে খুব ভালোবাসতো। এখনো কি আছে তোর পিছে নাকি বিয়ে টিয়ে করে নিয়েছে?” ঐন্দ্রীর কথাগুলো আশফির কানে যেতে তার চেহারার ভাবটা নিমিষেই পরিবর্তন হয়ে গেল। প্রচন্ড গম্ভীর বনে ওদের কথাগুলো কানে নিচ্ছে সে। মাহি তখন বলল, – “সোম ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে আমাদের পরিবারের অনেক আগে থেকেই খুব ভালো সম্পর্ক। হ্যাঁ, তার সঙ্গে আমার বিয়ের কথাবার্তা চলছে কেবল। মানে এখন অবধি পাকা কথাতে আসেনি।” মাহির কথা শেষ হতেই আশফি খুব জোরে গাড়ির ব্রেক কষল। সবাই যে যার সিটে বসে একটা ছোট খাটো ধাক্কা খেল তাতে। দিশান আঁতকে উঠে বলল, – “কী হয়েছে ভাইয়া?” আশফি চোখ মুখ শক্ত করে রইল। তার কিছুক্ষণ পর বলল, – “জ্যাম সামনে। – “ওহ তাই তো। মাহি আর ঐন্দ্রীর গল্পে মশগুল হয়ে সামনেই খেয়াল করিনি।” জ্যামের মাঝে পড়ে হঠাৎ আশফি প্রচন্ড ঘামতে শুরু করল। কিন্তু বাহিরের আবহাওয়া বৃষ্টির কারণে ভালোই শীতল। সেখানে বাকিরা বাদে তাকেই ঘামতে দেখা গেল শুধু। গায়ের স্যুটটা খুলে পাশে রাখল সে। এর কিছুক্ষণ পর টাইটাও সে এক হাত দিয়ে টেনে খুলে নিলো। দিশান তা লক্ষ্য করে বলল, – “তুমি ঠিক আছ ভাইয়া? এত ঘামছো কেন হঠাৎ?” – “গরম লাগছে খুব তাই।” পেছন থেকে ঐন্দ্রী বলল, – “ওয়েদার তো আজ গরম নয়!” আশফি উত্তর দিলো না। এর মাঝে মাহির ফোনে রিং বেজে উঠল। স্ক্রিনে দিয়ার নাম্বার দেখে ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সে বলে উঠল, – “তুই কোথায় রে? যদি বাসায় না গিয়ে থাকিস তো এখনি আমার এখানে চলে আয়।” – “হঠাৎ? কী হয়েছে?” – “হিমু আর অনিক এসেছে আমাদের এখানে। আজই ওরা চট্টগ্রাম চলে যাবে। যাওয়ার আগে তোর সাথে আর আমার সাথে মিট করতে এসেছে ওরা। তুই অফিস করে ফিরিস তাই ওদের বললাম এখানেই থাকতে। তারপর তুই সোজা এখানে চলে এলে আমরা চারজন বাহিরে বের হয়ে কিছুক্ষণ ঘোরাঘোরি করে তারপর ওদের বিদায় জানাব।” – “উফ্ঃ আর একটু আগে বললি না কেন?” – “আগে কি ওরা এসেছিল নাকি? কেন তুই কোথায় এখন?” – “আমি তো এখন…” মাহির মুখটা বিরস হতে দেখে দিশান বলল, – “কোনো সমস্যা?” মাহি ফোনটা একটু সাইড করে বলল, – “আমার তিনটা ফ্রেন্ড আমার সঙ্গে মিট করতে চাচ্ছে। তার মধ্যে একটা কাপল আছে, ওরা আজ চলে যাবে। একটু ঘুরতে চাইছিল আমার সঙ্গে।” – “যদি ঘোরার বিষয় হয় তবে চলে আসতে বলো আমি যে ঠিকানা দিচ্ছি সেই ঠিকানাতে।” – “না না, কী বলছো? দরকার নেই। আমি ওদের না করে দিচ্ছি।” – “একদমই নয়। বন্ধুদের সঙ্গে কাটনো সময় জীবনের সেরা সময়। এগুলো কখনো মিস দিতে নেই। আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তুমি চলে আসতে বলো ওদের।” মাহি প্রচন্ড খুশি হলো দিশানের কথাতে। তারপর দিশানের পাঠানো অ্যাড্রেসে ওদের চলে আসতে বলল। সারা পথ আশফি নীরব রইল। তবে গল্প চলল ওদের তিনজনের মাঝে। বাংলোতে পৌঁছাল ওরা। সেখানে এসে মাহির চোখ ছানাবড়া। একদম বিদেশি ধাচে এই বাংলোটা তৈরি হচ্ছে। আসলে এটাকে বাংলো বললে ভুলই হবে। আবার না বললেও ভুল হবে। এটা দোতলা স্টাইলের বাড়ি। দোতলায় ওঠার সিড়িটা বাহিরের দিকে। সিড়ি বেয়ে প্রথমে দোতলার বেলকনি পড়বে। তারপর রুমে ঢোকার মেইন ডোর। বেলকনিটা অনেক বড় আর পুরো ফাঁকা, যার ছাদ নেই। মোটকথা, এই বাড়িটার কোনো ছাদ নেই। বেলকনিটাকেই ছাদ, বেলকনি, ট্যারেস মোটামোটি তিনটাই বলা চলে। দোতলার বেলকনির দিকে প্রাচীরটা কাচের। রুমে বসেই বাহিরের সৌন্দর্য দেখা যাবে। আর নিচতলা, যেটা সামনের দিকে কাচের দেয়াল। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতে আগে সুবিশাল লিভিংরুম পড়বে। তার পাশে ডাইনিং প্লেস আর কিচেন। ডাইনিং প্লেসের পাশেই একটি রুম। লিভিংরুমে ঢোকার পর মাহির ধারণা বদলে গেল। দোতলা সে বাহির থেকে দেখেই আন্দাজ করেছিল। তবে ভেতরেও সিড়ি আছে দোতলায় পৌঁছানোর জন্য। পুরো বাড়িটার রং ক্লারিফাইড বাটার কালার। বাড়িটার পুরো প্রাচীরের গা জুড়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফাঁক রেখে লাইট সেট করা। গেট খুলে বাড়িটাতে ঢুকলে বাঁ পাশে পার্কিং সাইড আগে পড়বে তারপর সামনে এগিয়ে গেলে খোলা বাগান। আর বাড়িটার ডান পাশে অর্থ্যাৎ বাগানের উল্টো পাশে পুল সাইড। একদমই চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার মতো বাড়ি। কাউচে বসে পড়ে ঐন্দ্রী বলল, – “আশফিকে কতবার বলেছি একটাবার এখানে নিয়ে আসতে। আজ দিশানের অসিলাতে দেখা হলো বাড়িটা।” দিশান বলল, – “এটা এখনো ইনকমপ্লিট।” – “কমপ্লিট হলে না জানি আরও কত দারুণ লাগবে।” – “তবে এটা শুধু আমার ভাই আর তার বউয়ের জন্য। আমার জায়গা হবে না। আবরার সাহেব আমাকে কোথায় শিফ্ট করবেন আল্লাহ পাক জানেন।” আশফি তখন বলল, – “একদমই ফালতু কথা বলবি না। দাদা কখনোই বলেননি তোমার জায়গা হবে না এখানে।” – “আমি তো মজা করলাম ভাইয়া। তুমি রেগে যাচ্ছো কেন?” মাহি কাউচে বসে চুপচাপ শুধু বাড়ির ভেতরটা দেখছে মুগ্ধ চোখে। এর মাঝে হঠাৎ আশফি আর তার চোখাচোখি হলো। কিন্তু আশফি খুব দ্রুত তার নজর ঘুরিয়ে নিলেও মাহি এবার অনেক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে রইল। কলিংবেল বেজে উঠতেই দিশান গিয়ে ডোর খুলে দিয়ার মুখোমুখি হলো। দিশান মৃদু হেসে বিস্মিত হলেও দিয়া তাকে দেখে একশো একশো জ্বলে উঠল। ভেতরে আসার পর সবাই সবার সঙ্গে পরিচিত হলো। তবে মাহি, দিয়া, হিমু, ঐন্দ্রী আর অনিক, এরা কলেজ থেকেই একে অপরকে আগে থেকে চেনে। শুধু বন্ধুত্বটা কম ছিল এদের মাঝে এই আর কী। সবাই এবার সরাসরি পুল সাইডে চলে এলো। আশফি বাড়ির কেয়ারটেকারকে বিকালের নাস্তা রেডি করতে বলল দ্রুত। দিশান ভাইকে বলল, – “ভাইয়া বেশিরভাগ ফ্রাই আইটেম আনতে বলো। বিকালটাতে ফ্রাই আইটেমে বেশ ভালো জমবে। ভাগ্যিস আজ রাতে বৃষ্টি হবে। না হলে আজ আর বিকালটা উপভোগ করতে পারতাম না।” দিশানের কথা শুনে আশফি খাবারের মেন্যু চেঞ্জ করতে গেল। দিশান তখন দিয়ার কানের কাছে এসে বলল, – “আজ তো চশমাও নেই আর চুলও বাঁধা। তাহলে ইমপ্রেস করবেন কোন বাহানাতে?” দিয়া হেসে বলল, – “দেখবেন?” – “কেন নয়? আমাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করলে আমি খুব খুশি হই।” দিয়া ঠোঁটে চওড়া একটা হাসি টেনে দিশানকে ধাক্কা দিয়ে পুলের মধ্যে ফেলে দিলো। ব্যাপারটাতে সবাই আকস্মিক নজরে তাকালেও দিশান নিজেই সেটা সামলে নিলো। বলল, – “আমি সত্যিই খুব ইমপ্রেসড।” মাহিকে উদ্দেশ্য করে বলল, – “মাহি তোমার বন্ধু কিন্তু ছেলে মানুষকে দারুণ ইমপ্রেস করতে পারে।” সবাই এক সঙ্গে হেসে উঠল। আর দিশান তখন সাঁতরাতে ব্যস্ত। – “অসভ্য ছেলে একটা!” মাহি হাসতে হাসতে বলল, – “ও প্রচন্ড ফ্রি দিয়া। একদমই অসভ্য নয়। তুই ওর সাথে মিশতে পারলি বুঝবি।” – “কোনো প্রয়োজন নেই। দুই ভাই-ই এক এক ধাচের অসভ্য।” মাহি শুধু হাসলো। কিছু বলল না। এর মাঝে আশফি এসে দিশানকে ফুল ড্রেসআপে সুইমিং করতে দেখে তাকে বলল, – “এ কী হাল তোর? এভাবেই নেমে পড়েছিস?” – “পড়ে গিয়েছি ভাইয়া ইমপ্রেস হতে গিয়ে। টেনে তুলো।” দিশান আশফির দিকে হাত বাড়িয়ে দিলে আশফি তাকে টেনে ওঠাতে গেল। আর তখন দিশান তাকেও টেনে পুলে নামাল। সবার মাঝে তো হাসির রোল পড়ে গেল। আশফি রাগ করতে গিয়ে রাগতে পারল না। কারণ তার ভেতর বাহির প্রচন্ড জ্বলছিল। এই মুহূর্তে পানিতে নেমে খুব আরাম বোধ করছে সে। তারপর দুজন এক সঙ্গে উঠে এলো। দিশান গা থেকে শার্ট খুলতে নিলে আশফি তখন মাহিকে শুনিয়ে বলল, – “কী করছো দিশান? কেউ লজ্জা পাবে তো!” – “আমাকে দেখে আবার কে লজ্জা পাবে? আমি কি প্যান্ট খুলছি?” মাহি বাদে সবাই আবার হেসে উঠল। আশফি তখন শার্ট খুলতে খুলতে বলল, – “পুরুষের শরীরেও এমন কিছু আছে যা কারো নজরে ভীষণ লজ্জাজনক।” এ কথা বলে আশফি মাহির দিকে বাঁকা চোখে তাকাল। মাহি তখন চোখ মুখ খিচে তাকিয়ে আছে আশফির দিকে। সে কোনো জবাব দিলো না। কারণ ততক্ষণে তার নজর আটকে গেছে আশফির ভেজা শরীরে। শরীরে পানির বিন্দুগুলো যেন চুম্বকের মতো আকর্ষণ করছে মাহিকে। বিশেষ করে আশফির বুকের নিচে বাঁ পাশের লাল তিলটা। যা প্রথমবার দেখেও মাহির চোখ বারবার সেখানে গিয়েছিল আর আজও তাই ঘটল। আশফি তার চাহনি এবারও লক্ষ্য করল। মাহির দিকে তাকিয়ে দিশানকে সে বলল, – “পুলে তো ভিজলাম কিন্তু তোয়ালে তো আনোনি দিশান।” – “তাই তো। এখন তো ভেজা গায়ে ভেতরে যেতে পারব না।” দিশান আশেপাশে কেয়ারটেকারকে দেখতে পেল না। ঐন্দ্রী তখন দিয়া হিমু ওদের সঙ্গে গল্পে মশগুল। শুধু মাহিই একা দাঁড়িয়ে। মাহি ওদের পরিস্থিতি বুঝতে পেরে বলল, – “কিছু না মনে না করলে আমি যেতে পারি। কোথায় আছে আমাকে বলো।” আশফি গিয়ে চেয়ারে বসল। দিশান হেসে তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে দোতলার প্রথম রুমটাতে যেতে বলল। মাহি দোতলায় এসে রুমে ঢুকে একদম থ হয়ে গেল। অনেক বিলাসবহুল রুম যাকে বলে। ঘুরে ঘুরে রুমটা দেখতে থাকল সে। প্রায় দশ মিনিট পার হওয়ার পর আশফি বলল, – “সে বোধহয় খুঁজে পাচ্ছে না। তুই বস, আমিই যাচ্ছি।” – “আচ্ছা যাও।” আশফি রুমে আসার পর দেখল মাহি তোয়ালে হাতে করে কাচের দেয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে বাহিরটা দেখছে। আশফি হালকা হেসে হাসিটা চেপে রেখে মাহির পিছে এসে দাঁড়াল। তারপর তার কানের কাছে আস্তে স্বরে বলল, – “তোয়ালে খুঁজতে এসে নিজেই হারিয়ে গেছেন নাকি?” আশফির আকস্মিক আগমনে মাহি চমকে তার দিকে ঘুরে দাঁড়াল। আশফি তখন মাহির খুব কাছে। খুব কাছে অর্থ এক ইঞ্চি পরিমাণ ফাঁক থাকবে হয়তো তাদের মাঝে। দুরু দুরু বুকে আর নির্বিঘ্ন চোখে মাহি আশফির চাহনির দিকে তাকিয়ে আছে। আর আশফির নজর তখন মাহির চোখ আর তার ওষ্ঠ দুটিতে। প্রচন্ড নিঁখুত ছাঁচে এই দুটি অংশ তৈরি যেন। এত কাছ থেকে আশফি আজ তাকে দ্বিতীয়বার দেখল। প্রথম দেখা ট্রায়ালরুমে হলেও সেদিন সে এতকিছু লক্ষ্য করেনি। দ্বিতীয়বার তার নিজের কিচেনে সে দেখেছিল। আর সেদিনই এই দুটো অংশের মোহে সে আটকে গিয়েছিল কিছু সময়ের জন্য। আর আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। ……………………………… (চলবে) – Israt Jahan Sobrin

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে