তুমি রবে ৪৮

0
1870
তুমি রবে ৪৮ . . ভাবনাগুলো খুব এলোমেলো ছিল, সময়গুলোও খুব জটিল ছিল। বিচ্ছিন্ন ছিল অন্তরের যোগাযোগ। দৃষ্টি বন্ধনও হয়নি এ ক’টা দিনে। হয়নি ফোনালাপে দুটো বাক্য বিনিময়। আর প্রেম বিনিময় তো দূরে সরে থাকল। ঘরে প্রবেশের পরই কেবল একটাই বাক্য প্রতিধ্বনি রূপে অন্তরে বাজছে তার। ‘এ আমার স্বামীর ঘর।’ এক অদৃশ্য আধিপত্য বিরাজ করছে যেন এই ঘরটার প্রতি। কিন্তু কই? এ বাড়িতে আসার পূর্বে তো এমন কিছুই মনে হয়নি! মনে হয়নি তাকে ফিরতে হবে তার স্বামীর কাছে, তার ঘরটাকে এবং সেই মানুষটাকে সামলে রাখতে হবে। এই যে তাকে সামলে রাখার কথাটি মনে হতেই তার মনে হলো এই মানুষটার দেখভালের দায়িত্ব তার, তাকে যত্ন করা, খেয়াল রাখাও তার দায়িত্ব। এ সবকিছুই তার কাছে তার স্বামীর পাওনা। ইচ্ছা করল না তার ঘরের টিউবলাইট জ্বালাতে। এই তো বেশ লাগছে। সারা ঘরে মৃদু আলোর মেকি মুক্তোদানার ছোট ছোট বাতিগুলো জ্বলজ্বল করছে। ঘরের পর্দাগুলোতেও বাতিগুলো ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেদিনের মতো আজও সারা বিছানা ভর্তি গোলাপের পাপড়ি। আর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঘরের কোণে প্রতিটা দানিতে টিউলিপের স্তবক। মাথার ওপর ফ্যানটা মৃদু গতিতে ঘুরছে। ব্যালকনিতে যাওয়ার থাই গ্লাসের দরজার ওপর পর্দাটা একটুখানি উড়তেই মাহির চোখে পড়ল আজ রাতের চমকপ্রদ স্থানটি শুধু ঘরটা নয়, ব্যালকনিও। দরজা ঠেলে ব্যালকনিতে পা বাড়াতেই চোখে পড়ল সেখানে সান্ধ্যভোজের আয়োজন করে রাখা হয়েছে। এবার মাহির কিছুটা সন্দেহ হলো। আশফি খুব ভালোভাবেই জানে মাহি কখনোই সুরা পান করে না। তবে এখানে দামী সুরার বোতলসহ অন্যান্য খাবারও সাজানো। তার অর্থ আশফির অজানা আজকের এই আয়োজনটি। কেমন যেন বুকের বাঁ পাশটাই এক তীব্র যাতনা বোধ হলো। এ যাতনার অনুভূতি খুব মিষ্টি। কতগুলো ঘন্টা পর আজ সেই মানুষটাকে সে দেখবে। সেও দেখবে তাকে। তার কি একটু সাজগোজের প্রয়োজন? নাহ্! কী দরকার? যেমন আছে সে ঠিক তেমনই দেখবে তাকে। যদি এ সাধারণের মাঝেই তার মাঝে বিশেষ কিছু খুঁজে পায় সে, তবেই তো প্রমাণ হবে সে ছলনাশূন্য এক খাঁটি প্রেমী। . হাত ঘড়িতে সময়টা দেখে নিয়ে প্রচন্ড চিন্তাগ্রস্ত হয়ে ঘরের দিকে পা বাড়াল আশফি। ঘরে ঢুকেই সে মাহিকে দেখতে পাবে তা সে নিশ্চিত। কিন্তু এতগুলো সময় পর সেই বিক্ষিপ্ত মাহিকে দেখতে পাওয়াটা তার জন্য যেন অত্যন্ত বিদীর্যমাণ এক শোক। আকাশ ছুঁই চিন্তা নিয়ে ঘরে ঢুকে মাহির মতো সেও আশ্চর্য হলো। তবে ঘরের সাজসোজ্জা দেখে নয়। আশ্চর্য হলো সে তার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী মাহিকে দেখে। ঘরের মাঝখানটাতে সে দাঁড়িয়ে আছে হাতে লাল গোলাপের স্তবক নিয়ে। প্রিয় তার টিউলিপ হলেও আশফির প্রিয় লাল গোলাপ। যা ছিল ব্যালকিনতে কাউচের ওপর। আশফি আজও সেই একই ঘ্রাণ অনুভব করছে। তবে আজ সে মদোন্মত্ত নয়, আজ সে অপ্রমত্ত। এগিয়ে এলো মাহি। তার কাছে এসে তার হাত থেকে স্যুটটা নিয়ে বিছানার ওপর রেখে দিলো। তবে তার মোহগ্রস্ত দৃষ্টি তার স্বামীতেই। পুষ্পস্তবকটি তার দিকে এগিয়ে কেবল মৃদু আওয়াজে বলল, – “গ্রিটিংস টু ইয়্যোর প্যারাডাইজ।” কতক্ষণ মাহির স্থির চাউনিতে চেয়ে থেকে আশফি ঈষৎ হেসে স্তবকটি গ্রহণ করে বলল, – “এক হাঁড়ি দুধে খানিক বাদেই এক ফোঁটা লেবুর রস। এ তো সহ্য হবে না বিবিজান।” মাহির কপালের মাঝভাগ কুচকে গেল। তার কথার অর্থ ধরতে পারল না সে। প্রশ্ন করল, – “সেটা কী?” আশফি তার প্রশ্নে টাইটা খুলতে খুলতে এক উপেক্ষাপূর্ণ হাসি হাসলো। টাই খোলা শেষে মাহির খুব কাছে এগিয়ে আসতেই মাহি দ্রুত পিছুপা হলো। এবার আশফি সেই পূর্বের হাসি ধরে রেখেই তাকে বলল, – “এই যে পিছিয়ে যাওয়াটাকেই বুঝিয়েছি।” মাহি কিছু বলল না। ঘরের চারপাশে চোখ বুলিয়ে আশফি বিড়বিড় করে বলতে থাকল, – “হাহ্ কী কপাল আমার! রোজ রোজ বাসরশয্যা অথচ…” – “অথচ?” আশফি চকিতে ফিরে তাকাল মাহির দিকে। – “শুনে নিয়েছো?” – “যা বলার সরাসরি বলবেন। আড়েপিঠে কথা আমার পছন্দ না।” – “বিয়ে করেও চির কুমার-ই থাকব বোধহয়। এটাই বলছিলাম।” মুখটা গম্ভীর করে মাহি তাকে আদেশের সুরে বলল, – “ফ্রেশ হয়ে আসুন। আপনার ভাইয়েরা নৈশভোজের আয়োজন করেছে ব্যালকনিতে।” – “তো তুমি খেয়ে নাওনি?” প্রশ্নটা শোনা মাত্রই মাহি কটমট করে তাকাল আশফির দিকে। একদম মুহূর্তেই তেজি সুরে বলল, – “হ্যাঁ। বসে থাকব কার জন্য?” আশফির হাসিও পেলো আবার দুঃখও লাগল। মজা নিতে গিয়ে আরও ক্ষেপিয়ে তুলল যেন। বাথরুমে ঢুকে গোসল নিয়ে বের হতেই দেখল মাহি শুয়ে পড়েছে। জোর করে আর যা-ই হোক, কাউকে খাওয়ানো তার পক্ষে সম্ভব না। এর মাঝে ফোন বেজে উঠল তার। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে উঠল, – “কতদূর এগুলো ভাই?” – “জিজ্ঞেস কর কতদূর পেছালো।” – “জানতাম। এত মেহনতী সব পানিতে যাবে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে বেরিয়ে পড়ো ওকে নিয়ে।” – “কোথায়?” – “তোমার বাড়িতে।” – “আরে না। দাদাকে না বলে এভাবে চলে গেলে কেমন দেখায়?” – “তুমি কি থাকবে? থাকলেও শুধু আজকের রাত। না থাকলেও আমরা আবার ফিরে আসব।” – “আমরা মানে কী? আর কী কী করছিস তোরা?” – “আসলে সত্যি বলতে তোমাদের দুজনের অসিলায় আমার মিঠাই খাওয়ারও সুযোগ হবে এই আর কী!” দিশানের কথা শুনে আশফি একটু হাসলো। – “সে তো বুঝতেই পারছি। এক তরফা সু্বিধা যে এখানে নেই তা কি আর বুঝছি না?” দিশানও হেসে বলল, – “দ্রুত এসে পড়ো। আমি ফোন করছি মাহিকে।” আশফির সঙ্গে কথা বলা শেষ করেই দিশান মাহিকে কল করল। ফোনটা হাতেই ছিল মাহির। সে শুয়ে থেকে আশফির কথা শুনছিল। দিশানের কল আসতে একবার আশফির দিকে তাকাল সে। আশফি তখন ক্লোজেট থেকে জামা কাপড় বের করতে ব্যস্ত। ফোনটা রিসিভ করার পর দিশান তাকে হ্যালো বলার সুযোগও দিলো না। বলতে আরম্ভ করল, – “যুদ্ধ জয় করে এলাম বুঝেছো। দিয়ার মা আর বাবা তো তাঁদের মেয়ের সামনেও যেতে দেবে না আমায়।” – “এরপর?” – “এরপর আর কী? উঠিয়ে নিয়ে এসেছি।” – “কী!” মাহি লাফ দিয়ে উঠে বসলো। এরপর জিজ্ঞেস করল, – “ফাজলামো করছো দিশান?” – “ফাজলামো করব কেন? তোমার বন্ধু হিমুকে জিজ্ঞেস করতে পারো ফোনে। তার সহায়তায় সব হয়েছে।” দিশান শায়খের পাশে বসে হাসছে। শায়খ তখন ড্রাইভ করছে। আর ব্যাক সিটে দিয়া, হিমু, অনিক। রাত নয়টার সময় দিশান গিয়ে হাজির হয় দিয়ার বাসার নিচে। এরপর হিমুকে পাঠায় সে। হিমুর মারফতে দিয়া এত রাতে বাসা থেকে বের হতে পেরেছে। কিন্তু মাহির কাছে দিশান একটু বাড়িয়েই বলল। মাহি চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করল, – “দিয়ার কাছে ফোনটা দাও দিশান।” দিশান মুচকি হেসে ফোনটা দিয়ার হাতে ধরিয়ে দিলো। গাড়িতে সবার মুখেই এখন হাসি। দিয়া হ্যালো বলতেই মাহি বলল, – “তুই সত্যি ওর কাছে?” – “হ্যাঁ রে।” – “মানে সিরিয়াসলি তোরা ভেগেছিস?” – “সব বলব। জলদি চলে আয় ভাইয়ার সঙ্গে।” কথাটা বলেই দিয়া ফোন কাটল। নয়তো মাহির হাজার প্রশ্নে বেফাঁস কথাও বলে দিতে পারে সে। মাহি দেখল আশফি টি শার্ট পরে জ্যাকেট হাতে নিয়েছে গায়ে ঢোকাবে বলে। সে দ্রুত বিছানা থেকে নেমে আশফির কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, – “ওরা কি সত্যিই এমন কিছু করেছে?” – “কেমন কিছু?” – “আপনি জানেন না?” – “মানে আমি যা জানি তুমিও কি তাই জানো?” মাহি বুঝতে পারল এই লোকের থেকে সরাসরি জবাব সে পাবে না। আর কোনো কথা না বলে ফোনটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল, – “আপনার সাজগোজ শেষ হলে দ্রুত আসুন।” একদম হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল আশফি মাহির কথা শুনে। সামান্য জামা কাপড় পরাকেও এই মেয়ে সাজগোজ বলে উল্লেখ করে চলে গেল! ফোন আর গাড়ির চাবি পকেটে পুরে বেরিয়ে এলো সে। মাহি ফোন হাতে নিয়ে অনবরত কল করে যাচ্ছে দিয়াকে। কিন্তু সে ধরছে না। গাড়ি বের করে আশফি তাকে হর্ণ বাজিয়ে ডাকল। . . দিশান, শায়খ বাকি সবাই আশফি আর মাহির আগেই পৌঁছে গেছে। শায়খ গান প্লে করে ট্যারেসে এসে সবার সাথে বসলো। কিছু সময় নিজেদের মাঝে গল্প গুজব হতেই আশফি আর মাহি এসে নামল লন সাইডে। আশফি স্পষ্টভাবে শুনতে পেলো ওপর থেকে হিন্দি গানের সুর ভেসে আসছে। Tera mukhda chand da tukda Ni tere ainak, tere shoe Kya baat ay! Kya baat ay! মাহির এবার প্রচন্ড সন্দেহ হতে লাগল আশফি আর দিশানকে। ট্যারেসে পৌঁছাতেই চমকের ওপর চমক। সে দাঁড়াতেই হিমু এসে জড়িয়ে ধরল তাকে। গত একটা সপ্তাহ হিমু তার মায়ের অসুস্থতার জন্য তার সঙ্গে ইন্ডিয়া ছিল। দেশে ফেরার পর আর একটা দিনও দেরি করেনি সে। ছুটে চলে এসেছে ঢাকা। তারপরই এত কিছুর প্ল্যান। মাহি স্তব্ধ হয়ে দেখছে দিশান আর দিয়ার কাপল ড্যান্স ওই গানটিতে। নাচের ফাঁকে আশফি আর মাহির ওপর চোখ পড়তেই দিশান এগিয়ে এসে মাহির সামনে হাতটা বাড়িয়ে দিলো। বিস্ময়ের ঘোর থেকে সে তখনো বের হতে পারেনি। দিশান তার হাতটা নিজেই তুলে নিয়ে দু’মিনিট সময়ের মতো তার নাচের তালে মাহিকে তাল মেলাতে হলো। নাচের শেষ ধাপটিতে দিশান ইচ্ছাপূর্বক আশফির হাতে তুলে দিলো মাহিকে। চারপাশ থেকে দিয়া আর হিমু খুশিতে চিল্লিয়ে উঠল আর শায়খ, অনিক সিটি বাজিয়ে উঠল। তবে সেখানে প্রত্যেকেই নিরাশ হতে হলো। আশফি তার হাতের মাঝে মাহিকে ধরে নিলেও নাচটা আর তাদের মাঝে হলো না। মাহির হাতটা ধরে তাকে নিয়ে সবার সামনে কাউচে গিয়ে বসলো। মাহি এবার দিয়ার দিকে প্রশ্ন ছুড়ল, – “এমন মজা করা কি ঠিক?” – “খু্ব ঠিক।” হিমু হাসতে হাসতে বলল, – “আরে বুঝতে পারছিস না ব্যাঘাত ঘটালাম তো। ইস! কত নাম্বার স্টেপে ছিলি রে?” মাহি চোখ মুখ শক্ত করে তাকাল হিমুর দিকে। শায়খ বলল, – “কত কষ্ট করে রুমের ডেকোরেশনটা করলাম! আগে যদি জানতাম কাজের কাজ কিছুই হবে না তাহলে তোমাদের আর ঘরে ঢুকতে দিতাম না, বিশ্বাস করো ভাই।” – “তো কী করতি?” আশফি প্রশ্ন করল। শায়খ এবার মিটিমিটি হেসে বলল, – “নিজেই বিয়ে করে ঢুকতাম। কিন্তু আফসোস!” – “আহারে! আগে আমার বিয়ে হবে। তারপর নিজের চিন্তা করবি।” বেশ ধমকের সুরে বলল দিশান। শায়খ এবার জবাব দিলো, – “তারপর কী? একজন তো বিয়ে করে হুদাই ম্যারিড সার্টিফিকেট নিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছে। তোমাদের বিয়ে করা না করা দুটোই সমান।” প্রচন্ড বিব্রত হলো মাহি। পারলে হয়তো জায়গাটা ছেড়ে চলে যেত সে। সবাই কী পরিমাণ বেহায়ার মতো কথা বলছে। দিশান গিটারটা হাতে নিয়ে টুংটাং আওয়াজ করছিল। অনিক বলল, – “আরে তুমি কারো জন্য ওয়েট করো না তো ভাই। এসব ব্যাপারে ওয়েট করা লস। দিশান একটা গান ধরো। এমন গান যেন অন্তরে কম্পন তোলে আর শরীরে…!” অনিক কথাটা আর সম্পূর্ণ করল না। সঙ্গে সঙ্গে একটা গান ধরল দিশান। “তুমি যেখানে আমি সেখানে সে কি জানো না একি বাঁধনে বাঁধা দুজনে ছেড়ে যাব না-২ তুমি বৃষ্টির মেঘ আমি রঙধনু তুমি গন্ধের ফুল আমি তার রেণু-২ আমার ছায়া তুমি তোমার ছায়া আমি একি সাথে চলি আমার আশা তুমি তোমার ভাষা আমি একি কথা বলি তুমি পৃথিবীর চোখ আমি তারা তুমি ঝরনার সুর আমি তার ধারা যেমন আছি পাশে এমন ভালবেসে কাছে যদি থাকি জীবন থেকে দূরে মরণ রবে সরে সুখে হব সুখী তুমি জঙ্গির মন থেকে নাও কথা”
দিশানের গান শেষ হতেই আশফি নিজের রুমে চলে গেল। আশফি ছাড়াই বাকিদের মাঝে দারুণ আড্ডা চলল। তবে মনের মাঝে মাহির ছটফট চলল খুব। এত দারুণ আড্ডামহলের মাঝেও মাহির বেশি সময় মন টিকল না সেখানে। দোনোমনা করে আসর ছেড়ে উঠে এলো সে। কিন্তু রুমে ঢুকতে প্রচন্ড জড়তা কাজ করছে তার ভেতরে। এদিকে রুমের মাঝে অন্ধকার। তাহলে কি লোকটা আড্ডাখানা ছেড়ে ঘুমানোর জন্য চলে এলো? যদি এমন কিছুই হয় তবে মাহি কিছুতেই তাকে ঘুমাতে দেবে না। ফাজলামো না কি? বেশ তো কম্বলের নিচে শুয়ে ছিল সে। শুধু শুধু নাটক করে নিয়ে এসে এখন আবার নিজে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে! এমনটা ভেবেই মাহি ঘরে ঢুকল। ঘরের ঢোকার পর বুঝতে পারল ট্যারেসের আলো ঘরটাকে বেশ ভালোই মৃদু আলোতে পরিপূর্ণ করে রেখেছে। ট্যারেসে তখন মিউজিক চলছে, I love it when you call me señorita I wish I could pretend I didn’t need ya But every touch is ooh la la la It’s true, la la la Ooh, I should be running Ooh, you keep me coming for you গানটাতে চমৎকারভাবে নাচ করছে দিশান আর দিয়া। মাহি ঘাড় ঘুরিয়ে একবার তাদের দেখে মৃদু হেসে উঠল। দুটোই দু’ধরনের পাগল যেন। আশফি ভেতরের দরজা খুলে তখন রুমে এসে মাহিকে দেখে তার পিছে এসে দাঁড়িয়ে তার দৃষ্টিও লক্ষ্য করল। পিছে না চেয়েই খুব দৃঢ়ভাবে মাহি উপলব্ধি করল আশফির উপস্থিতি। কিন্তু সাহস পেলো না তার দিকে ঘুরে দাঁড়ানোর। আচমকা একটি হাত তার কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো সে। আশফির বুকের খুব কাছে মাহি। তার খালি পায়ের পাতার ওপর মাহিকে টেনে নিয়ে দাঁড় করাল সে। এক জোড়া উষ্ণ পায়ের পাতার ওপর তার শীতল পা পড়তেই কেমন যেন সারা শরীরে এক অদ্ভুত কাঁপন ধরল মাহির। যা শুধু সে নিজেই উপলব্ধি করতে পারছে। মাহির কানের কাছে এসে খাদে নামানো কণ্ঠে আশফি তাকে জিজ্ঞেস করল, – “আফসোস কি মেটাবে?” মাহি তার প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না। তবে তার ওষ্ঠকোণের দু পাশে এক চিলতে মিষ্টি হাসি। আশফি পেয়ে গেল তার প্রশ্নের জবাব। এক মোহাবিষ্ট চাহনিতে আটকা পড়ল মাহি। তার চাহনি এতখানি মোহাবিষ্ট যে মাহি কয়েক মুহূর্তের জন্য ভুলে গেল তার ভেতরের গাঢ় কষ্টের ছবিগুলো! আশফি তাকে পায়ের ওপর থেকে নামিয়ে তার কোমর জড়িয়ে ধরে গানটার সঙ্গে মাত্র এক মিনিট সময় কাটাল নেচে। কারণ বেশি সময় সে পেলো না বিপরীত মানুষটার থেকে। আশফির হাত জোড়া যখন তার পেটের ওপর পড়ল তখনই সে থেমে গেল। পিঠটা ঠেকিয়ে দিলো সে আশফির বুকের সঙ্গে। তার শরীরের সম্পূর্ণ ভরটাই আশফিকে গ্রহণ করতে হলো ক্লোজেটের সঙ্গে হেলান দিয়ে। দীর্ঘ, ঘন চুলগুলোর মাঝে আশফি নাক ডুবিয়ে কতক সময় ঘ্রাণটা অনুভব করে ঘাড়ের পিছ থেকে চুল সরিয়ে নিলো। পিঠের মাঝটাও উন্মুক্ত করে নিলো শাড়ির আঁচলটা নামিয়ে। ঘাড়ের পাশটাতে নাক ডোবাতেই তার পেটের ওপর থাকা আশফির হাতজোড়া শক্ত করে চেপে ধরল মাহি। কম্পিত, মৃদুস্বরে মাহি অস্ফুটে কিছু একটা বলল আশফিকে। কিন্তু আশফি তা বুঝতে পারল না। আর বুঝতে চাইলও না। তার স্পর্শ যত বেশি গাঢ় হলো মাহি ততবেশি নেতিয়ে পড়তে থাকল তার বুকে। তার দিকে ঘুরে ফিরতেই আর এক মুহূর্ত সময় মাহি ব্যয় করল না। আচমকা আশফির অধর তার ওষ্ঠে বন্দি করে নিলো। ক্যাবিনেটের ওপর হাত ভর করে মাহির শরীরের ভর সামলাতে হলো আশফিকে। …………………………… (চলবে) – Israt Jahan Sobrin প্রচন্ড এলোমেলো মাথায় পর্বগুলো সাজাচ্ছি। হয়তো অনেকেই পড়ে তৃপ্তি পাচ্ছেন না। তার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। ভুলগুলো কষ্ট করে বুঝে নেবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে