তুমি রবে ৩৮

0
1931
তুমি রবে ৩৮ . – “এত স্পিডে গাড়ি বোধহয় আমিও চালাই না।” আশফি কোনো ভ্রুক্ষেপ করল না দিশানের কথায়। – “ভাইয়া কিছু কথা ছিল যদি গাড়িটা একটু স্লো করতে।” – “কান তো খোলাই আছে। গাড়ি স্লো করতে হবে কেন?” – “কারণ যা বলব তা গাড়ি স্লো না করে শুনতে পাবে না। আরও ভালো হয় যদি ড্রাইভ করার সুযোগটা আমাকে দাও।” আশফি স্পিড কমাতেই দিশান বলতে আরম্ভ করল। – “রাগের মাথায় যে ভুলটা করেছো তা শুধরানোর কথা কিছু ভেবেছো কি?” – “না। শুধরানোর কোনো সুযোগ নেই।” – “ভাইয়া তুমি তাকে ভালোবাসো না।” – “সংসার করার জন্য ভালোবাসা লাগে না। দায়িত্ব, কর্তব্য আর অর্থ থাকলেই হয়।” – “এটা কেমন জালিমদের মতো কথা বললে? মানে বিয়ে করে শুধু বিবাহিত পদবী গ্রহণ করবে?” – “এমন বহু সংসার আছে আমাদের সমাজে। তাই তোর এই উদার আর নীতিমূলক কথা শুধু এক জায়গায় ঢেলে লাভ নেই। আর ভালোবাসা, মায়া এমন জিনিস যা বিধাতা দান করে৷ যদি আল্লাহ পাক চান তো সেটাও হয়ে যেতে আর কতক্ষণ?” ভাইয়ের যুক্তির কাছে দিশান বরাবরই বাচ্চা। এখানে ভাইকে আর বলার মতো বা বোঝানোর মতো আর কিছুই পেলো না সে। . মাহির আজ কাল অফিস করতে আর ভালো লাগে না। একটা মানুষের কাছে বারবার তেঁতো কথা শুনতে কারই বা ভালো লাগে! আর গতকাল যে আচরণ করেছে আশফি! এরপর তো মাহির রীতিমতো ভয় হতে শুরু করেছে তার মুখোমুখি হতে। প্রচন্ড ক্লান্ত শরীরে ধীরে ধীরে হেঁটে এসে মাহি লিফ্টে ঢুকল। লিফ্ট বন্ধ হওয়ার পূর্বে মাহি দেখল আশফি তার অ্যাসিসটেন্ট আনোয়ারের সঙ্গে কথা বলতে বলতে এদিকেই আসছে। প্রায় লিফ্টে ঢুকে পড়া মুহূর্তে মাহি দ্রুত লিফ্ট বন্ধ করে দিলো। পুরো স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল আশফি। আনোয়ারও ব্যাপারটাতে হতবাক ছাড়া কিছু হতে পারলো না। দুজন দুজনের দিকে কেমন ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া চোখে দৃষ্টি বিনিময় করলো। কোরিডোরে হেঁটে যাওয়ার মুহূর্তে একবার মাহির দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আশফি কেবিনে ঢুকে গেল। আর সে মুহূর্তে ফাইল দিয়ে মাহি তার মুখ ঢেকে বসে ছিল। তবে দিনের মধ্যে কোনো না কোনো প্রয়োজনে একবার হলেও তাকে বসের কেবিনে যেতেই হয়। তাই আর কতক্ষণই বা সে মুখ লুকিয়ে বসে থাকতে পারবে? বেলা এগারোটার সময় মাহিকে একবার আশফির কেবিনে আসতে হলো। তবে কেবিনে ঢুকেই এক অস্বাভাবিক দৃশ্য তার চোখে পড়ল। অফিসের মধ্যে সারা জায়গায় যেখানে বড় বড় মার্কার পেনে ‘স্মোক করা বারণ’ বলে ওয়ার্নিং দেওয়া সেখানে অফিসের বস আশফি মাহবুব বসে বসে সিগারেট ফুঁকছে আর কাজ করছে। মাহি একবার নক করে ভেতরে আসলো। বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত কথা বলার জন্য মাহি অনুমতি নিয়ে তার সামনে চেয়ারে বসলো। কিন্তু আশ্চর্যকর ব্যাপার হলো আশফি হাতের সিগারেটটা শেষ হতেই আর একটা ধরিয়ে নিলো। মাহি সেদিকে দৃষ্টিপাত না করে তার কাজের কথায় এলো। – “মার্কেটিংয়ের জন্য যে বিজ্ঞাপন…” কথা শেষ করতে পারল না। সে মুহূর্তে মাহি কেশে উঠল। ধোঁয়া বরাবর মাহির দিকে উড়ে আসছে। এরপরও আশফি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করল না। কিন্তু মাহিও এবার চুপ থাকতে পারল না। – “ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, যদি এটা একটু দেরিতে করতেন!” আশফি মাহির হাতের কাগজগুলোতে চোখ বুলিয়ে নিতে নিতে এবার সে সরাসরি মাহির মুখের দিকে ধোঁয়া ছাড়ল। মাহি তার গোঁয়ারর্তুমি বুঝে গেল। তাই আর কথা বাড়ালো না। এর মাঝে ঐন্দ্রী এসে পড়ল রুমে। – “একটু আর্জেন্ট ছিল।” এটুকু বলার জন্য ঐন্দ্রী প্রায় পঞ্চাশ সেকেন্ড সময় নিলো। সে নিজেও হতবাক আশফিকে এভাবে দেখে। কিন্তু কোনো প্রশ্ন করার সাহস তারও নেই। আশফি সিগারেটটা হাতে ধরে ঐন্দ্রীকে অপেক্ষা করতে বলল। ঐন্দ্রী মাহির পাশের চেয়ারে বসে তাদের কাজগুলো লক্ষ্য করছিল। আশফির ধোঁয়ার চোটে মাহি কাশতে কাশতে হয়রান। পুরো ধোঁয়ার জাল যেন মাহিকেই গ্রাস করে নিচ্ছে। ঐন্দ্রীও তা খেয়াল করে আশফিকে বলল, – “আশফি ওর কষ্ট হচ্ছে।” আশফি মাহির দিকে সেই সরু দৃষ্টি ফেলেই তাকে পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিলো। সিগারেটটা ছাইদানিতে ফেলে আশফি মাহির সঙ্গে কথা বলতে আরম্ভ করল। কাশতে কাশতে মাহির চোখ থেকে পানি বেরিয়ে এসেছে। এর মাঝে আশফি তা যে ক’বার খেয়াল করল মাহির দিকে চেয়ে ঐন্দ্রীও তা সে ক’বারই লক্ষ্য করল। মাহির কাজ শেষে সে উঠে যেতেই পেছন থেকে আশফি তাকে বলে উঠল, – “হৃদয়ের সঙ্গেই আপনিই যাবেন। প্রয়োজন হলে পরে আমি বা দিশান একজন যাব।” মাহি বলল, – “আমার তো শ্যুটের ওখানে যাওয়ার কথা ছিল।” – “শ্যুট আজ ক্যান্সেল।” – “আচ্ছা।”
হৃদয়ের সঙ্গে মাহিকে পাঠানোর উদ্দেশ্যটা মাহি ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে। তার সঙ্গে সম্পর্কটা ইজি করতে মাহি নিজেও চাইছিল। আশফি সেটার সুযোগই প্রদান করল। একই সঙ্গে কাজ করতে গেলে এসব ছোটখাটো ব্যাপারগুলো মিটিয়েই চলা ভালো। যে ক্লায়েন্টের সঙ্গে মাহি আর হৃদয় দেখা করতে গেল রেস্টুরেন্ট তিনি একজন ইয়াং লেডি। কথার তেজই তার আলাদা। তার পরিচ্ছদ দেখে মাহি আন্দাজ করে নিলো ইনি অবশ্যই বিদেশ প্রবাসী। মাহি আশফির বলা কথাগুলোই তাকে বলেছে কিন্তু সে এখন আবার নতুন এক কন্ডিশন চাপিয়ে বসেছে। আর এখানে আশফি বা দিশান ছাড়া এই কন্ডিশন মেনে পেপাড় দেওয়া অসম্ভব। এর মাঝে আর এক বিপত্তি ঘটলো। হৃদয়ের কাছে তার বউয়ের আর্জেন্ট ফোন কল আসতেই সে আশফিকে ফোন করে ছুটি চেয়ে চলে গেল। এখন মাহি এই মেয়েটির সামনে একা একা বসে তার লেকচারগুলো হজম করছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আশফি এসে হাজির হলো। এসে বসলো মাহির পাশে। মেয়েটি যেন আশফিকে দেখে প্রচন্ড সন্তুষ্ট হলো। আরও দু’কাপ কফি অর্ডার করল সে। আশ্চর্য হলো মাহি! তিনজন ব্যক্তি থাকতে সে চোখের সামনে মাহিকে নেই করে দিয়ে কফি অর্ডার করল দুটো। মাহি বিষয়টা এড়িয়ে চুপচাপ শুনতে থাকল তাদের কথপোকথন। যার মাঝে মাহি জানতে পারলো এই ভদ্র মহিলাটি একজন লন্ডন প্রবাসী। . কফিতে স্পুন ঘুরাতে ঘুরাতে রিধিমা মুচকি হাসছে আশফির দিকে চেয়ে আর তার লং শার্টের কখনো কলার বা কখনো বুকের কাছের শো বোতামের জায়গাতে হাত দিয়ে বারবার ড্রেস মেইনটেইন করছে। আশফি কাগজগুলোতে চোখ বুলাতে ব্যস্ত তখন। মাহি তার বিশেষ নজরে খেয়াল করতে থাকল রিধিমার দৃষ্টি। চোখদুটো উল্টিয়ে সে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। যার অর্থ এখানেও একজন ঐন্দ্রীর প্রতিদ্বন্দী! তবে রিধিমার এই মুচকি মুচকি হাসিটা ধপ করে নিভে যাওয়া আগুনের মতো নিভে গেল। যখন আশফি বলল, – “আমার কন্ট্রাক্ট পেপাড়ে সাইন করার প্রয়োজন নেই আপনার।” রিধিমা চকিতে প্রশ্ন ছুঁড়ল, – “কেন?” – “আপনি নতুন করে একটা নয় তিনটা কন্ডিশন যোগ করেছেন। যার একটাও আমি মানতে পারছি না। প্রচন্ড সুবিধাবাদী হয়ে যাচ্ছেন আপনারা এই কন্ডিশনের মাধ্যমে।” – “সুবিধাবাদী মানে? এখানে সমান সমান সু্বিধা দেওয়া হয়েছে আশফি মাহবু্ব! আপনি ভালো করে পড়ে দেখুন।” – “আমার বাংলা ভাষা, বাংলা লেখা, বাংলা ব্যাকরণ আর বাংলা সংস্কৃতি সবই জানা আছে। তাই আপনার ভালো করে পড়ে দেখা বলতে দ্বিতীয়বার পড়ে দেখার কোনো দরকার নেই আমার।” আশফি তার স্বভাবসুলতা বজায় রেখেই কথা বলছে। কিন্তু রিধিমার ক্রোধ এখন চৌঠা আসমানে। কাগজটা আশফির সামনে থেকে নিজের সামনে নিয়ে একবার তা পড়ে আশফিকে বেশ চড়া কণ্ঠে বলল, – “আমি তো কোনো সমস্যাই দেখছি না আশফি সাহবে।” – “তবে আপনার চোখের ডক্টর দেখানো উচিত।” রিধিমা ধমকানো কণ্ঠে বলল, – “ভদ্র আচরণ করুন মাহবুব সাহেব। আপনি যে ডিল করবেন না সেটা ডিরেক্ট বললেই এনাফ।” – “আমি তো ডিরেক্টিই বলছি। তবে না করার ইচ্ছাটা ওই তিনটি কন্ডিশনের জন্য।” – “আসলে আপনাদের মতো বড় বড় শিল্পপতি সুবিধা বেশি পেতে পেতে আপনাদের চাহিদায় বেড়ে গেছে।” আশফি এবারও তার স্বাভাবিকতা বজায় রেখে রিধিমাকে বলল, – “বেশ তো। আমরা তাহলে আসছি।” রিধিমা এবার আশফির দিকে কিছুটা এগিয়ে এসে বলল, – “আর একবার ভেবে দেখুন আশফি মাহবুব।” এ মুহূর্তে এক অপ্রীতিকর পরিস্থিতে পড়ল মাহি। লজ্জাতে তার বুকের ভেতরে ধুপধাপ করে উঠল। রিধিমা এত সময় তার বুকের ওপরের বোতামের জায়গাটা কথার ফাঁকে বারবার নিচে নামিয়ে নিচ্ছিল। এবার সে আশফির দিকে ঝুঁকে এগিয়ে আসতেই তার অর্ধ খোলা সাদা বুকের অনেকখানি বেরিয়ে পড়ল। আশফি কয়েক মুহূর্ত সেদিকে তাকিয়ে মাহির দিকে আঁড়চোখে তাকাল একবার। ব্যাপারটা মাহি, আশফি কারোরই বুঝতে বাকি রইল না। তবে আশফি এর চেয়েও ভয়ানক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। তাই রিধিমাকে জব্দ না করে এখান থেকে সে উঠবেও না। মাহি তার চেহারা দেখে তা বুঝে গেছে। আশফি সেই স্বাভাবিক সুরেই বলল, – “দুঃখিত এই মুহূর্তে যা ভাবতে বলছেন তা ভাবা সম্ভব নয়। আপনার নকল বক্ষ প্রর্দশন দ্বারা কেবল চোখের ক্ষুধা মিটবে। এরপর আর রুচি হবে না।” মাহির কান থেকে যেন ধোঁয়া ছুটছে। এই লোকটা এত বেশি ঠোঁটকাটা কী করে হতে পারে? এত পরিমাণ লজ্জা নিয়ে মাহির আর বসে থাকার ধৈর্য নেই। তবে রিধিমা এবার রাগের চোটে হাতের কাগজটা ছিঁড়ে ফেলার পরিকল্পনা করে কাগজটার দিকে হাত বাড়াতেই মাহি সেটা মুহূর্তের মাঝে তার হাত থেকে টেনে নিয়ে নিলো। রিধিমা যে এবার ডিলের ব্যাপারে ভাবতে নয় তার চোখের চাহনি আর ইচ্ছাপূর্বক বক্ষ প্রদর্শন দ্বারা আশফিকে বিশেষ কিছু ইঙ্গিত করে তার ব্যাপারে ভাবতে বলেছে। যা বুঝতে পেরেই আশফি তাকে মুখের ওপর তিক্তপূর্ণ সত্য কথা বলে দিয়েছে। রিধিমা মাহির দিকে একবার গরম চোখ করে তাকিয়ে তারপর আশফিকে বলল, – “অত্যন্ত অসামাজিক, অসভ্য, বেয়াদব একটা ছেলে আপনি।” এই বলেই সে উঠে গেল। আশফি উঠে দাঁড়িয়ে তাকে পেছন থেকে বলল, – “বিলটা পেমেন্ট করে যান। দু’টো কফির মূল্য।” রিধিমা দাঁড়িয়েছিল অন্য একজন কাস্টোমারের টেবিলের পাশে। রাগটা এবার সামলাতে না পেরে রিধিমা সেই টেবিল থেকে কোল্ড ড্রিংকসের গ্লাসটা হাতে নিয়ে পুরো ড্রিংকটাই আশফির গায়ে ছুঁড়ে মারল। . মাহি এবার হতবাক আশফির ধৈর্যশক্তি দেখে। তার ধারণা ছিল রিধিমার এমন আচরণের পর আশফি নিশ্চয় তার থেকে কড়া রকমের ক্ষতিপূরণ আদায় করে নেবে। একজন বিশিষ্ট শিল্পপতির সঙ্গে এত ক্রুদ্ধ আচরণ তাও আবার জনসম্মুখে! এ তো কখনোই মেনে নেওয়া অসম্ভব! তার বদলে আশফি রিধিমার চলে যাওয়ার পর বেশ কিছু মুহূর্ত মাহির মুখের দিকে শীতল দৃষ্টিতে চেয়ে ছিল। ওয়াশরুমের বাহিরে মাহিকে দাঁড় করিয়ে শার্ট ক্লিন করে আশফি বেরিয়ে এলো। মাহিকে তোয়াক্কা না করে আশফি গটগট করে হেঁটে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে সার্ভ বয় এসে বলল, – “স্যার আপনাদের বিলটা।” আশফি থেমে গিয়ে পিছু ফিরে মাহিকে চোখের ইশারায় দেখিয়ে তাকে বলল, – “উনি দেবেন।” আর অপেক্ষা করল না আশফি। তাকে বেরিয়ে যেতে দেখে মাহি স্তব্ধ বনে চেয়ে রইল তার যাওয়ার দিকে। এত বড় রেস্টুরেন্টের একটা কফির মূল্যে দেড় প্লেট বিরিয়ানিও হয়ে যায় বাইরের ছোট কোনো হোটেলে। বিলটা মিটিয়ে মাহি বেরিয়ে এসে দেখল আশফির গাড়িটা রাস্তার পাশে এখনো দাঁড়িয়ে। এই ব্যাপারটাও মাহির কাছে অভাবনীয় ছিল। কিন্তু সে ভেবে নিলো একদম তার গাড়িকে ক্রস করে সে ট্যাক্সি ধরে চলে যাবে অফিসে। তখন আশফি গাড়িতে বসে মিরোরে মাহিকে দেখে হর্ণ বাজিয়ে উঠল। মাহি সোজা এসে উঠে বসলো তার গাড়িতে। সারা পথ কেউ কোনো কথা বলল না। অফিসে লিফ্টে ঢোকার মুহূর্তে ঘটল আর এক কাহিনী। আশফির সঙ্গে লিফ্টে ঢোকার পর লিফ্ট চলতে আরম্ভ করলে আশফি আচমকা মাহির ওপর চেঁচিয়ে বলে উঠল, – “ওর সাহস হলো কী করে আমার গায়ে ড্রিংক ছোঁড়ার?” মাহি ক্ষণিকের জন্য ভড়কে গেলেও সেও চেঁচানো সুরে বলল, – “সেটা আমি কী করে জানবো?” আশফি আর একটা কথাও বলল না। তবে মাহির বিড়বিড়িয়ে বলা কথাগুলো তার কানে ঠিকই পৌঁছালো। মাহি বলছে, – “মুখের বেড়া না থাকলে যা হয়!” আশফির সরু দৃষ্টি দেখে মাহি একটু আঁৎকেই উঠল। আশফি তার দিকে এগিয়ে আসতেই মাহি পিছিয়ে এসে তার শাড়ির পাট করা অংশটুকু চেপে ধরল। কারণ কাল যা আশফি করেছে এরপর যে সে আবারও এমন কিছু করতে পারে তার নিশ্চয়তা শতভাগ। ভাগ্যিস কেবিনের মধ্যে কুঁচিগুলো টেনে খুলে দিয়েছিলো! অন্য কোথাও হলে লজ্জাতে সে নির্ঘাত মারা পড়তো। মুহূর্তের মধ্যে মাহির গতকালকের দৃশ্যটি মনে পড়ে গেছে। ঠিক চলে যাওয়ার মুহূর্তে আশফি তার দিকে এগিয়ে এসে এক টানে তার কুঁচিগুলো খুলে দিয়ে চলে গিয়েছিল সে। আশফি একটু থামল মাহির ভয় পাওয়া চেহারাটা দেখে। কপালে সুক্ষ্ম ভাঁজ ফেলে কিছু মুহূর্ত তার দিকে চেয়ে রইল। লিফ্ট ওপেন হতেই আশফি তাকে বলল, – “টয়লেট সরকারি করলে দোষ নেই। পাবলিক টুপি(প্রস্রাব) করলেই দোষ!” . . সময়গুলো খুব বাজেভাবে কাটছে দু’জনের। ঐন্দ্রী আর আশফির বিয়ের ডেট চলতি মাসেই ফিক্সড হয়ে গেছে। এরপর থেকে আশফি দিন দিন আরও বেশি রুক্ষভাষী হয়ে উঠেছে। প্রয়োজন ছাড়া সে ঐন্দ্রীর সঙ্গে কথাও বলে না। বিয়ের কেনাকাটার জন্য শুধু টাকা ছাড়া ঐন্দ্রীর সঙ্গে শপিংয়েও যায়নি। তবে অফিসে কাজের ফাঁকে ঐন্দ্রী খুব বিশেষ নজরে খেয়াল করেছে আশফি আর মাহির দৃষ্টি বিনিময়। মাঝে একদিন আশফি আর মাহি লিফ্টের মধ্যে কোনো একটা ব্যাপারে তর্কবিতর্কে লিপ্ত ছিল। লিফ্ট খুলতেই ঐন্দ্রী তাদের মুখোমুখি হলো। এবং তার দৃষ্টি পড়ল মাহির প্রতি। কারণ সে মুহূর্তে মাহি আশফির বুকের খুব কাছে দাঁড়িয়ে আশফির সঙ্গে ঝগড়াতে ব্যস্ত ছিল। এই ধরনের ব্যাপারগুলো বারবার ঐন্দ্রী চোখে পড়তে থাকে। আর একদিন মাহিকে শ্যুটের জন্য শ্যুটিং স্পটে প্রায় সারাদিন থাকতে হয়েছিল। সেদিন বিকালে আশফির সঙ্গে ঐন্দ্রীও এসেছিল সেখানে। শ্যুটটা ছিল বাচ্চাদের পোশাক নিয়ে। তাই সেখানে প্রায় দশটা বাচ্চাদের নিয়ে শ্যুট চলছিল। কাজের মধ্যে বারবার সোম কল করতে থাকে মাহিকে। মাহি প্রথমবার কেটে দিয়ে সে মেসেজ করে দেয় ‘ব্যস্ত আছি’। কিন্তু সোম সে মেসেজ ইগনোর করে একের পর এক কল করতেই থাকে। এক পর্যায়ে মাহি বিরক্ত হয়ে ফোন রিসিভ করে রেগে উঠে তাকে বলে, – “কী সমস্যা বলো তো? ফোন যেহেতু রিসিভ করছি না তাহলে বোঝা উচিত নিশ্চয় ব্যস্ত আছি! এই ম্যানারও কি এখন নতুন করে শেখাতে হবে তোমায়?” কথাগুলো বলেই মাহি ফোনটা কেটে দেয়। মাহি তখন খেয়াল করেনি আশফি তার পিছেই ছিল। মাহির হঠাৎ এই উগ্র আচরণ আশফি ঠিকই বুঝতে পারলো। চোখের সামনে তাকে দেখতে হচ্ছে আশফি আর ঐন্দ্রীকে হাসিখুশিভাবে। এখানে হিংসাবোধ না হলেও কষ্ট পাওয়া অনেক বেশি স্বাভাবিক। যেটা আশফি নিজেও পায় মাহি আর সোমকে এক সঙ্গে দেখে। আশফি একটু কাছে এসে অপ্রত্যক্ষভাবে মাহিকে শোনায়, – “প্রথমে চেয়ার তারপর টেবিল এরপর কাঁধে আর তারপর সরাসরি মাথায় চড়ালে বাঁদর তো কান মলবেই।” মাহি তার কথার ইঙ্গিত ধরতে পেরে রাগের মাথায় আশফিকে বলে ফেলল, – “অন্যের গতরে তেল দেওয়া কি বর্তমান স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে?” এত বেশি অপমানসূচক কথা আশফি আশা করেনি সেদিন মাহির থেকে৷ আবারও তাদের মাঝে বাকবিতণ্ডা চলতে থাকে। আর যা ঐন্দ্রী দূরে দাঁড়িয়েই দেখতে থাকে। একদিন অফিসে ঢুকতেই ঐন্দ্রীর কাছে একটা মেসেজ এলো। মেসেজটা ওপেন করে দেখা মাত্রই সে দৌঁড়ে আশফির কেবিনের সামনে এলো। দরজাটা হালকাভাবে খুলে সে দেখল মাহি টেবিলে দু’হাত ভর করে আশফির দিকে ঝুঁকে পড়ে তার সঙ্গে কথা বলছে। সেখানে সে মাহির বলা কথাগুলো না শুনতে পেলেও এক সস্তা মেন্টালিটির মেয়ে বলে সে মাহিকে বিচার করে নিলো। ট্যুর থেকেই ঐন্দ্রী খেয়াল করে আসছিল আশফির প্রতি মাহির দৃষ্টিভঙ্গি। সন্দেহটা খুব ভালোভাবেই তাকিয়ে ভাবিয়ে তোলে। কিন্তু তাও তেমন করে গুরুত্ব দেয়নি সে এই ভেবে, যে তার মানুষটা একদম সঠিক আছে। কিন্তু অচেনা কারো থেকে কতগুলো মেসেজ পাওয়ার পর সে পুরোপুরিভাবে মাহিকেই নোংরা ভেবে নেয়। . আগামী মাসেই মাহি আর সোমের বিয়ে সম্পন্ন হবে। অফিসের সবাই এ খবর মাহির থেকে শুনে তাকে ট্রিট দিতে বাধ্য করে। মাহি মিষ্টি কিনে এনে অফিসের সবাইকেই মিষ্টি খাইয়েছিল। আশফি সেদিন অফিসে ঢুকে সবার মিষ্টি খাওয়ার কারণ শুনে মাহি কেবিনে এলে সে নিজেও আবদার করে, – “আমি কী দোষ করলাম? আমি কেন মিষ্টি পাবো না?” এর উত্তরে মাহি কিছু না বলে চলে আসতে গেলে আশফি তাকে পেছন থেকে বলে উঠে, – “সমস্যা নেই। আমার বিয়েতে অবশ্যই ইনভাইট পাবে। সেদিন পেট ভরে মিষ্টি খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবো।” মাহি এবার সরাসরি আশফির চেয়ারের কাছে এসে দাঁড়ায়। তারপর বলে, – “পার্সোনালিটি দিন দিন খুইয়ে ফেলছেন তো।” আশফি সামান্য হেসে বলল, – “অসভ্য আর বেহায়া তো বহু আগেই হয়ে গিয়েছি। তাই আর নতুন করে পার্সোনালিটি দেখানোর সাধ নেই।” তাদের কথার মাঝেই ঐন্দ্রী ঢুকে পড়ে কেবিনে। তাতে দুজনেই কিছুটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যায়। মাহি দ্রুত আশফির কাছ থেকে সরে এসে দাঁড়ালে ঐন্দ্রী তাকে বলে, – “মাহি আমি তোকে প্রচন্ড ইনোসেন্ট বলে চিনতাম।” আশফি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে খুব সুক্ষ্ম চাহনিতে মাহির প্রতি ঐন্দ্রীর ক্ষিপ্র দৃষ্টি দেখতে থাকে। ঐন্দ্রীর এই এক বাক্যের অপমান মাহিকে ভেঙে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। সে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে এলো কেবিন থেকে। এবং সঙ্গে সঙ্গে সে সিদ্ধান্ত নিলো কাল থেকেই সে অফিস ছেড়ে দেবে। এভাবে উঠতে বসতে ওই মানুষটার মুখোমুখি হয়ে তার থেকে অপমান হতে হতে সে প্রায় ক্লান্ত ছিল। আর আজ সে সবথেকে বড় ধাক্কা পেয়েছে ঐন্দ্রীর করা অপমানে। কোথায় এনে দাঁড় করিয়েছে ঐন্দ্রী তাকে তা ভাবতেই তার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে যেন। . . – “আমি একটা প্রশ্ন করতে পারি আশফি? মানে কিছুটা ব্যক্তিগত।” আশফি গাড়ি স্টার্ট করে তারপর উত্তর দিলো, – “করো।” – “মাহি কি তোমাকে পছন্দ করে?” – “তেমনই ধরতে গেলে।” – “আমি তোমাকে দেখেছি তাকে প্রশ্রয় দিতে। তোমার তো উচিত ছিল ওকে ফায়ার করা।” – “আবরার সাহেবের রেফারেন্সে সে চাকরি করছে। আর তার এই ব্যাপারটা কাজ সংক্রান্ত নয়। কাজে সে খুবই পারফেক্ট। তাই এখানে ফায়ার করাটা সমীচীন নয়।” হঠাৎ ঐন্দ্রীর ফোনে মেসেজ টোন বেজে উঠল। কিছু ছবি এসেছে তার ফোনে। ছবিগুলো ছিল মাহি আর আশফির কথা বলার মুহূর্তে কিছু ক্লোজ মোমেন্ট। যেখানে বেশি হাইলাইট করা হয়েছে মাহিকে। যেন প্রচন্ড আগ্রহী সে আশফির প্রতি। ঐন্দ্রী বিনাবাক্যে ছবিগুলো মেলে ধরল আশফির সামনে। আশফি ভ্রুজোড়া কুঁচকে কিছু মুহূর্ত চেয়ে রইল ছবিগুলো দিকে। ঐন্দ্রী রাগান্বিত সুরে বলল, – “এরপর আমার কী করা উচিত আশফি?” – “ছবিগুলো কে সেন্ড করেছে?” – “জানি না। আর সেটা জানা এখন জরুরিও নয়।” – “আমাকে বিচার করতে চাইলে তুমি এ ব্যাপারে যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারো।” – “আমি তোমাকে অবিশ্বাস করছি না আশফি। আমি তোমাকে চিনি। তবে এখন আমি যেটা করব সেখানে তোমাকে সাপোর্ট করতেই হবে।” আশফি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। . সোমের চাচাতো ভাই ইরফানের সঙ্গে মিমির বিয়ের কথাবার্তা চলছে। আজ তারা দেখতে এসেছে মিমিকে। সোম, তার মা রুবিনা, ইরফান, ইরফানের বড় বোন, মা, বাবা সবাই উপস্থিত। মিমিকে সাজিয়ে গুছিয়ে মাহি তাকে সবার সামনে এনে দাঁড় করালো। রুবিনা মিমিকে নিজের পাশে বসিয়ে কথা বলতেই দরজাতে নক পড়ে। মাহি দাঁড়িয়েছিল বলে সে এসে দরজা খুলল। – “ঐন্দ্রী তুই! আয় ভেতরে আয়।” ঐন্দ্রী ভেতরে ঢোকার মতো অবস্থাতে ছিল না। রাগে তার হাত পা তখনো কাঁপছে। চেঁচিয়ে বলে উঠল সে, – “পারলে কয়েকটা থাপ্পড়ে তোর গাল লাল করে দিতাম আমি।” মুহূর্তেই ঘরের সবাই নিস্তব্ধ হয়ে গেল এমন কথা শুনে। মাহিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ঐন্দ্রী বলতে শুরু করল, – “শুনেছি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষদের নাকি আত্মসম্মান বেশি থাকে। কিন্তু তোকে দেখে বুঝতে পারলাম সেটা কতবড় ভুল ধারণা মানুষের। এত সস্তা টাইপ শুধু তোর মতো মেয়েরাই হতে পারিস। নিজে তো এঙ্গেজড। তাহলে এরপরও অন্য পুরুষের প্রতি চাহিদা জাগে কী করে? অফিসের বসকেও ইমপ্রেস করার চেষ্টা করিস বিভিন্নভাবে। লজ্জা করে না শাড়ির ফাঁকে কোমর দেখাতে?” মাহি তার মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। এত সময় পর মমিন আর সোম এগিয়ে এসে দাঁড়াল মাহির পাশে। মমিন ধমক দিয়ে বলল ঐন্দ্রীকে, – “ভদ্র আচরণ করো। দেখে তো মনে হচ্ছে ভদ্র পরিবারের মেয়ে। মুখের ভাষা এমন কেন? আর বাড়ি বয়ে এসে অপমান করার সাহস পাও কী করে?” – “রুঢ়ভাবে কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি আঙ্কেল। আজকে যদি মেয়ের ব্যাপারে খোঁজ খবর রাখতেন তো এতখানি মানহানি করতো না আপনাদের।” সোম বলল, – “আপনার এ আচরণের কারণ কী বলবেন?” ঐন্দ্রী নিজের ফোন থেকে ছবিগুলো দেখালো মমিন আর সোমকে। আলহাজও না এসে থাকতে পারল না। মমিন আর সোমকে চুপ থাকতে দেখে সে জিজ্ঞেস করল, – “সমস্যা কী আসলে?” মমিনের মাথা ঘুরে আসছে ছবিগুলো দেখার পর থেকে। তাকে এভাবে মিইয়ে যেতে দেখে আলহাজ নিজেও ছবিগুলো দেখল। ঐন্দ্রী ফোনটা নিয়ে বলল, – “আমি দুঃখিত আমার এই আচরণের জন্য। ঘরের মেয়েকে দেখেশুনে রাখার চেষ্টা করবেন। কারণ ও যাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছে সে আমার ফিওন্সি।” ঐন্দ্রীর চলে যাওয়ার পর মাহি তার ঝাপসা চোখে দেখতে পেলো আশফিকে। আশফির চোখের ভাষায় বুঝে নিলো তার খুশির আভাসটুকু। এটুকু দেখার পর মাহি ধপ করে নিচে বসে পড়ল। মমিন তার মেয়েকে টেনে তুলে দাঁড় করিয়ে কষে একটা থাপ্পড় বসালো মেয়ের গালে। . মাহির জীবনের মোড় পাল্টে যায় সেদিন থেকেই। নিজের বিয়ে ভেঙে যাওয়ার চেয়ে অধিক কষ্ট পেয়েছে মাহি মিমির বিয়ে ভেঙে যাওয়াতে। আর তার থেকেও বড় আঘাত পেয়েছে যখন তার বাবা খুব স্বাভাবিক সুরে বলেছে, – “ও যেন আর এক মুহূর্ত আমার বাড়ি না থাকে।” তাদের ধারণা হয়তো এ জন্যই সোমকে সে বিয়ে করতে নারাজ। আলহাজও আর একটি কথা বলেনি নাতির সাথে। শুধুমাত্র মিমি ছাড়া প্রত্যেকটা ব্যক্তিই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। নিজেকে নির্দোষ করার মতো জায়গাও যে রেখে যায়নি তারা। এত সুন্দর অ্যাঙ্গেল করে ছবিগুলো তুলেছে ফটোগ্রাফার যেন দেখেই মনে হচ্ছে বিদেশের বার রেস্টুরেন্টে ঘুরে বেড়ানো সস্তা সুন্দরীদের মতোই সেও একজন। এখানে সেই ফটোগ্রাফারকে প্রশংসা না করে মাহি পারলো না। সেদিন রাতেই মাহি সবকিছু ছেড়ে চলে এলো দিয়ার কাছে কিছুদিন আশ্রয়ের জন্য। যতদিন না সে একটা বাসা ম্যানেজ করতে পারে। হয়তো কিছুদিন পরই বাবা মায়ের রাগ পড়ে যাবে। ছুটে আসবে মেয়েকে ঘুরে তুলে নিতে। কিন্তু এই দিনগুলো আর এই ক্ষতগুলো তো আজীবন মস্তিষ্কে গেঁথে থাকবে। এসব তো সে আর তার পরিবার কোনোদিনও ভুলবে না। সমাজের থেকেও পরিবারের মানুষগুলো যখন ঘৃণার্হ চোখে দেখে তখন সেই মানুষের বেঁচে থাকার মতো হাজার পদ্ধতি থাকলেও সে বাঁচার প্রতি অনাগ্রহী হয়ে যায়। দিয়া মাহির থেকে এসব শোনার পর সেই রাতেই দিশানের সঙ্গে ফোনে তুলকালাম শুরু করে দেয়। দিশানের সঙ্গে ঝামেলা করা শেষে দিয়া মাহিকে বলল, – “আল্লাহর কসম আমি আগে ওই আশফি মাহবুবের অফিসে গিয়ে তার সম্মান মাটিতে টেনে নামাবো তারপর আমি তোর বাড়ি যাব। কে কাকে কতটা ইমপ্রেস করে আর কে কাকে কতটা পছন্দ করে সবটা বলব আমি।” ঐন্দ্রীকে রিং পরিয়ে দেওয়ার পর সেদিন আশফি মাহিকে একটা কথা বলেছিল। সেই কথাটাই মাহি রিপিট করে শোনালো দিয়াকে। এরপর দিয়া শান্ত হয়ে বসলো তার বন্ধুর পাশে। এরপরের দিন ছিল হলিডে। মাহি দিয়াকে সঙ্গে করে প্রথমে দিশানের সঙ্গে মিট করলো। কারণ দিয়া ক্ষেপে গিয়ে দিশানের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিল। তাদের ঝামেলা মিটিয়ে মাহি বাসা খুঁজতে বের হতে চাইলে দিয়া অনেক বকাবকি করে তাকে বাসা খুঁজতে বাঁধা দিলো। . ঐন্দ্রী যখন তার বিয়ের কার্ড অফিসে তার কলিগদের দিচ্ছিল তখন মাহি এসে তার ডেস্কে বসলো। একটু অবাক আর প্রচন্ড ঘৃণাবোধ হলো ঐন্দ্রীর তাকে দেখে। আশফি নিজেও চমকে উঠল মাহিকে দেখে। এতটা অপমানের পর কোনো সুস্থ ব্যক্তি যে এই অফিসে আর আসবে না এমনটাই ধারণা ছিল আশফির। এরপরই দিশান এসে এক অভাবনীয় কাজ করে বসলো। ভাইয়ের বিয়ের ইনভাইটেশন কার্ড সে মাহির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, – “আমার মিঠাইকে সঙ্গে করে অবশ্যই আসবে ডিয়ার।” মাহি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে থাকল দিশানের দিকে। এতে ঐন্দ্রীর থেকে বেশি অসন্তুষ্ট আর কেউ হতে পারেনি। …………………………… (চলবে) – Israt Jahan Sobrin কিছুই বলব না। শুধু বলব ধৈর্য রাখুন। সামনে বড় কিছু চমক আসবে। ১৭ তারিখ থেকে পরীক্ষা তাই এখন প্রতিদিন প্রেজেন্ট দিচ্ছি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে