তুমি রবে ৩৫
.
.
আঁচলটা দ্রুতই ছেড়ে দিলো আশফি। মাহি তার দিকে প্রশ্নবিধ চোখে তাকালে আশফি শুধু বলল,
– “কাপলদের মাঝে যাওয়াটা কি শোভা পায়?”
মুখটা নিচু করে বসে রইল মাহি। আশফি ল্যাপটপটা সাইড করে রেখে উঠে এসে মাহির পাশে বসে বলল,
– “একটা হেল্প করতে পারবেন?”
– “কী হেল্প না জেনে কীভাবে বলি?”
– “ডেকরেশনের জন্য একটা কালার সিলেক্ট করতে হবে। ব্লু আর লাইট কালারের মাঝে যে কোনো একটা।”
আশফি হাতের ফোনটা মেলে ধরল মাহির সামনে। আশফি স্ক্রল করে ডেকোরেশন লাইট কালারের ব্যাকগ্রাউন্ডগুলো দেখালো মাহিকে। মাহি প্রথম ব্যাকগ্রাউন্ড কালারটাই পছন্দ করে বলল,
– “লাইট কালারটাই সুন্দর।”
– “হ্যাঁ আমারও শুরু থেকেই এটাই পছন্দ হচ্ছিল। এটাই পারফেক্ট লাগবে।”
কথাটা বলে ফোনের স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে মাহির দিকে তাকাল আশফি। আগের মুহূর্তের ব্যাপারগুলো থেকে মাহি এখনো সরে আসতে পারিনি৷ তাই দু সেকেন্ডের মাথাতেই মাহি তার দৃষ্টি ঝুঁকিয়ে নিলো আশফির দৃষ্টি থেকে। আশফি এবার বলল,
– “আচ্ছা ওই ব্যাপারটাতে কিন্তু একটু বুঝতে ভুল হয়েছে দিশানের। ওটা রাত থেকে ভোর ছিল না। আকাশে মেঘ জমে কালো অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল চারপাশটা। আর তারপর বৃষ্টি পড়তে শুরু করে। বৃষ্টি থামলে আবার রোদে ঝলমল করে ওঠে।”
মাহি স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে আশফির কথাগুলো শুনল। এর কিছুক্ষণ পর দুজনই এক সঙ্গে শব্দ করে হেসে উঠল।
.
.
হাতে মাত্র আর একদিন সময় বাকি। অফিসের কাজ শেষ করে আশফি সন্ধ্যার পর শপিংয়ের উদ্দেশে বের হলো। নিজের জন্য কিছু কেনার কোনো আগ্রহ নেই তার। তবে তার বিশেষ মানুষটার জন্য অবশ্যই ইউনিক কিছু প্রয়োজন। শপিং শেষ করে বেরিয়ে আচমকা ঐন্দ্রীর মুখোমুখি হলো সে। ঐন্দ্রীও আশা করেনি এখানেই দেখা হয়ে যাবে তাদের।
– “শপিংয়ে এসেছিলে না কি তুমি?”
আশফি বলল,
– “তেমন কিছুই। তো তোমার শপিং শেষ?”
– “হ্যাঁ এখনি বের হচ্ছিলাম।”
– “তো চলো তোমাকে নামিয়ে দিই। যেতে যেতে কথা বলা যাবে।”
ঐন্দ্রী হেসে সম্মতি প্রকাশ করল। গাড়িতে উঠে দুজনের মাঝে ঐন্দ্রীই কথা শুরু করল।
– “বাইরে গিয়ে কি বছর বছর ফিটনেস ক্যারি করে আসো না কি?”
আশফি হেসে জিজ্ঞেস করল,
– “এটা কেমন প্রশ্ন?”
– “বয়সটা যে থার্টি আপ সেটা তো ধরার উপায়ই নেই বরং ধীরে ধীরে বয়সটা চুলের নিচে ঢাকা পড়ছে যেন তোমার।”
– “চুলের প্রতি আসক্ত আমি নিজেই।”
– “সিরিয়াসলি! বিয়ের পর দেখা গেল তুমি থার্টিতেই আটকে রইলে আর আমি…”
আশফির আঁড়চাহনি দেখে ঐন্দ্রী একটু লজ্জাবোধ করে থেমে গেল। কিছুটা সামনে এসে আশফি সাইড করে গাড়ি থামিয়ে রাখল।
– “কোথাও নামবে না কি?”
আশফি শূন্য দৃষ্টিতে তাকাল ঐন্দ্রীর দিকে। অনেকটা গম্ভীর সুরে সে বলল,
– “কিছু কথা বলতে চাইছিলাম তোমার সঙ্গে।”
ঐন্দ্রী বুঝতে পারল খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় এখন সে শুনবে আশফির থেকে৷ আশফির দৃষ্টিতে দৃষ্টি স্থাপন করল ঐন্দ্রী।
– “ঐন্দ্রী তোমার আমার মাঝে যে পরিচয়টা শুরুতে হয়েছে তা তোমার বাবা আর আমার দাদার মাধ্যমে। আর আমাদের মাঝে যে একটা স্থায়ী সম্পর্ক গড়বে সেটাও তাদের অভিমত। এটা আমার তোমার ছিল না। আমি কখনো সেইভাবে ভাবতেও বসিনি। কখনো এমন কিছু উপলব্ধিও করিনি আমি তোমাকে আমার স্ত্রী হিসেবে ভাবতে পারি। এখনো করি না সেটা।”
এটুকু বলে আশফি একটু থামল। ঐন্দ্রী কাঁপা কণ্ঠে বলল,
– “তার মানে আমার অপেক্ষাটা বৃথা হচ্ছে রাইট?”
– “এই অপেক্ষার সিদ্ধান্তটা কিন্তু তোমার ছিল।”
– “আমি তোমাকে কোনো ব্লেম দিচ্ছি না তো। আমি এখন বুঝতে পারছি তুমি কতটা উদারনৈতিকতার মানুষ। তাই ডিরেক্টলি আমাকে ‘না’ শব্দটা শোনাতে পারোনি।”
– “আমি সত্যিই ভেবেছিলাম তুমি বুঝতে পারবে।”
– “হয়তো সত্যিই বুঝতাম যদি তোমার মাঝে ডুবে না যেতাম।”
.
ঐন্দ্রী আর কথা না বাড়িয়ে চোখের পানিটুকু আটকে রেখে গাড়ি থেকে নেমে গেল। এত দ্রুত তাদের মাঝে ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে আশফি ভাবেনি। তবে আশফি সত্যিই ঐন্দ্রীর ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ। তার জায়গাতে অন্য কোনো মেয়ে হলে হয়তো এই ব্যাপারটা এত সহজভাবে নিতো না। কিন্তু এই প্রথম আশফি তার অনিচ্ছাকৃত কাউকে এত বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলল। আজ খুব অভিমান হচ্ছে তার দাদার প্রতি। সবসময় তিনি নিজের মতামতগুলো চাপিয়ে দিয়ে বাদ বাকি মানুষ দুটোর মনের দিকটা কখনোই বিচার করে দেখেন না। ঠিক যেমন তার নিজের বড় ছেলের সঙ্গে তিনি করেছিলেন। আর তার জন্যই আজ তার পরিবারটা এমন ছন্নছাড়া।
রাতে খাবার টেবিলে এসে মাহি জানতে পারল সোমের বোন সামিরা গতকাল রাতে বাসা ছেড়ে চলে গেছে। সামিরার বন্ধুমহল থেকে জানা গেছে চট্টগ্রাম ভার্সিটিতে পড়ুয়া এক ছেলের সাথে দুই বছর যাবৎ সম্পর্ক ছিল। তার হাত ধরেই সে পালিয়েছে। সে খবর জানতে পেরেই সোম তার বোনের খোঁজে গেছে চট্টগ্রাম। এদিকে সোমের মা অসম্ভবভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে৷ তাকে দেখার মতো কেউ নেই। তাই মুমু ভাবছে কাল একবার মাহিকে নিয়ে তাকে দেখে আসবে। তার ওপর সোমের নতুন কার বিজনেস শুরু হয়েছে৷ সেই বিজনেস ছেড়েই বা ছেলেটা কতদিন মাকে দেখে রাখবে আর বোনের ঝামেলা সামলাবে? সবকিছু শুনে মাহি বলল,
– “সোম ভাইয়ের যা মাথা গরম তাতে ছেলের অবস্থা কী করবে কে জানে?”
এর মাঝে আশা বলল মাহিকে,
– “এই মেয়ে আর কতকাল ভাই ভাই করবি? এবার নাম ধরে ডাকার অভ্যাস কর।”
লিমন তার বউয়ের কথা শুনে বলল,
– “নীলা তুমি যেন কবে থেকে আমায় ভাই ডাকা বন্ধ করেছিলে?”
– “ওহ্ তুমি আবার আমার দোষ ধরছো? আমি তো তোমার নাম ধরে ডাকতে লজ্জা পেতাম তাই ভাই বলতাম।”
সবাই খাওয়ার মাঝে হেসে উঠল। কিন্তু মাহির মুখে হঠাৎ এমন একটা কথা শুনল যেন সবাই মুহূর্তেই বোবা বনে গেল। মাহি তাদের সরাসরি বলে দিয়েছে। সোমকে সে বিয়ে করতে চায় না। মমিন মেয়ের চেহারা দেখল কতক্ষণ। তারপর জিজ্ঞেস করল,
– “কোনো সমস্যা হয়েছে না কি রে?”
– “না বাবা। সমস্যা হবে কেন? আমি সোম ভাইকে কখনোই ওই চোখে দেখিনি। আমার ভাইয়ের মতো…! মানে লিমন ভাইয়ের মতো আমি তাকেও সবসময় ভাই বলেই ভেবেছি। মজার ছলে নানান কথা হলেও আমি সেভাবে আমাদের সম্পর্কে ভাবিনি।”
মাহির চাচি শিখা তাকে বলল,
– “আরে পাগল এসব কোনো ব্যাপার না। এক ছাদের নিচে থাকতে থাকতে সব সহজ হয়ে যায় এক সময়।”
মুমুও বলল,
– “তোরা দুজনই দুজনের সম্পর্কে সব জানিস আর নিজেদেরও চিনিস। তাই সব থেকে মিষ্টি সম্পর্ক তোদেরই হবে। আর সোম তোকে ঠিক আমাদের মতোই খেয়াল রাখে। দেখা গেল আমাদের থেকেও বেশি। ওর কাছে তুই থাকলে আমাদের সারাজীবনের দুশ্চিন্তা কেটে যাবে।”
সবার এত কথার ভীড়ে মাহি তেমন করেই কিছুই বলার সুযোগ পেলো না। খাবারটা অর্ধেক রেখেই সে উঠে চলে এলো। তার এমন আচরণে কারো কিছু বুঝতে বাকি রইল না। তাদের মেয়েটা এ বিয়েতে একেবারেই নারাজ। লিমন মিমিকে জিজ্ঞেস করল,
– “ও কি কাউকে পছন্দ করে না কি মিমি?”
– “অনেক কথায় তো হয়। কখনো এমন কিছু শুনিনি ওর থেকে।”
– “তাও খোঁজ নিয়ে জানতে হবে একবার। কাকু তোমরা এত দ্রুত আগেই কিছু করো না। আমার মনে হয় ওর সাথে তোমাদের ভালো করে কথা বলা দরকার।”
পরের দিনটাতে ঐন্দ্রী আর অফিস এলো না। অর্ধেক বেলা অবধি অফিস করে মাহি ছুটি নিয়ে চলে এলো। বিকালে সোমের বাসায় যেতে হবে তার জন্য। সারা বেলার মাঝে আশফির সাথে কথা বলার সুযোগ হয়নি মাহির। সেই দিনটা কীভাবে কাটল মাহির তা সে বুঝতে পারল না। রাত নামলে আলহাজ তাকে ডেকে পাঠাল নিজের ঘরে। বেশ কিছু কথাবার্তায় হলো তাদের মাঝে। সেই রাতটা মাহি আর ঘুমাতে পারল না। মানুষটা এত বেশি কষ্ট নিয়ে এখনো জীবিত আছেন কী করে সেটাই তাকে ভাবিয়ে অস্থির করছে। যদি তার ক্ষমতা থাকতো তবে কয়েকশত মাইল দূরে থাকা ওই মানুষটিকেও ফিরিয়ে নিয়ে আসতো তার দাদুর জীবনে। তার ভাইটাও কত বড় একটা আঘাত দিয়ে পড়ে আছে কত দূরে। সত্যিই তো! মানুষটা যাকেই বেশি ভালোবেসেছে সেই মানুষটাই কোনো না কোনোভাবে তাকে ফেলে চলে গেছে।
.
সকাল সাতটার মধ্যে প্রত্যেকে অফিসের সামনে এসে উপস্থিত হয়ে গেল। আশফি নিজের গাড়িটা সহ আরও দুটো গাড়ি নিয়েছে সঙ্গে। তাদের সংখ্যা পনেরো থেকে বিশজন। তাই কোনো বাসের প্রয়োজন পড়েনি। একে একে অফিসের প্রতিটা এমপ্লয়ি আসার পর হিমু আর অনিকও এসে হাজির। এর কিছুক্ষণ পর ধ্রুবও এসে পড়ল। দিশানের কথা ছিল দিয়াকে সে নিজে গিয়ে রিসিভ করবে। কিন্তু তার দেরি দেখে দিয়া নিজেই চলে এসেছে। বাকি এখনো আশফি, দিশান, মাহি আর ঐন্দ্রী। আশফি আর দিশানও এক সঙ্গে তাদের গাড়ি নিয়ে চলে এসেছে। সব কিছু প্রস্তুত। এখন শুধু সবার উপস্থিতির অপেক্ষা। গাড়ির হুডের ওপর বসে আশফি আর দিশান কী নিয়ে যেন নিজেদের মাঝে আলোচনা করছে। এর মাঝে একটা গাড়ি এসে থামল তাদের পাশে। আশফির খেয়াল করার পূর্বেই দিশান তাকাল সেদিকে। সাদা রঙের কালো জমিনে একটা সুন্দর শাড়ি পড়ে ঐন্দ্রী গাড়ি থেকে নামল। গায়ে সাদা কালো একটা শালও সে জড়িয়ে নিয়েছে। আশফির পরনেও তখন ওয়াশের সাদা টি শার্ট আর কালো প্যান্ট। দুজনের ড্রেসের রং একই হওয়ার জন্য এমপ্লয়িদের মাঝে ঐন্দ্রী আর আশফিকে নিয়ে রীতিমতো কানাকানি শুরু হয়ে গেছে। বলা জরুরি, আজ ঐন্দ্রী উপস্থিত সকল মেয়েদের মাঝে নজরকাড়া রূপে সেজেছে। আশফি নিজেও একবারের জায়গাতে দুবার চোখ তুলে তাকিয়ে দেখেছে তাকে। ঐন্দ্রী সরাসরি দিশানের কাছে এসে দাঁড়াল। আশফি হুডের ওপর থেকে নেমে এসে ঐন্দ্রীকে ‘সুপ্রভাত’ জানিয়ে বলল,
– “আমি সত্যিই চমকে গেছি তোমাকে দেখে। ভেবেছিলাম…”
আশফির মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলল,
– “আমি আসব না?”
আশফি কিছু বলল না। ঐন্দ্রী বলল,
– “টিনেজারের আবেগটা ক্লাস এইট নাইনে ফেলে এসেছি।”
দিশান কালই শুনেছে সব আশফির থেকে। সে পরিবেশটা হালকা রাখার জন্য বলল,
– “আমি তো আজ কাকে রেখে কার জালে আটকাবো সেটাই ভাবছি। তবে মরব যে এই আঁচলেই তা নিশ্চিত।”
ঐন্দ্রী আর দিশান হেসে ফেলল। ওদিকে দিয়া ধ্রুবর সঙ্গে রেডিওর মতো গল্প করেই চলেছে। দিশান আঁড়চোখে তাও দেখে নিলো। সময় সাতটা বেজে উনত্রিশ। সব কিছু প্রস্তুত আর সবাই চলেও এসেছে শুধু বিশেষ একজন বাদ। আশফি বিরতিহীন কল করে যাচ্ছে মাহিকে। দিয়া আর হিমুও থেমে নেই। ফোনে টেক্সট, কল সবই করে যাচ্ছে। আশফি গাড়ির ডোর আলগা রেখেই সামনের সিটে পা বের করে বসলো। দিশান জিজ্ঞেস করল দিয়াকে,
– “কাল কি মাহির সাথে কথা হয়েছিল তোমার?”
– “হ্যাঁ বিকালে হয়েছিল। মানে কী পরে যাব আমরা এসব নিয়ে কথা বলার জন্য। আমরা আলোচনাও করেছিলাম এ বিষয়ে।”
আশফি হঠাৎ উঠে এসে বলল,
– “সবাইকে আর একটু ওয়েট করতে বল। আমি আসছি।”
আশফি গাড়িতে উঠে বসার আগেই হিমু বলল,
– “ভাইয়া এখনই যাওয়াটা ঠিক হবে বলে মনে হচ্ছে না। অন্যরকম দেখায়। আর একটু ওয়েট করি। তারপর না হয় আমি আর দিয়া যাব।”
আরও বিশ মিনিট ওভার হলো। আশফির অস্থিরতা থেকে এবার রাগ হতে শুরু করল। ওর ধারণা নিশ্চয় সোম এর মাঝে এসে কোনো ব্যাগ্রা দিয়েছে। সবার কথা উপেক্ষা করেই আশফি গায়ে স্যুটটা ঢুকিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো মাহির বাসায় যাওয়ার জন্য। আর ঠিক তখনই একটা ট্যাক্সি এসে থামল তার গাড়ির সামনে। আশফি ড্রাইভিং সিটে বসেই দেখল আকাশী রঙের শাড়ি পরে তার সেই বিশেষ মানুষটি গাড়ি থেকে নামছে। দিশান এগিয়ে এসে তার লাগেজটা দ্রুত নামিয়ে নিলো। আশফি যখন গাড়ি থেকে নামল তখন মাহি তার দিকে বিমুগ্ধ ভরা চোখে তাকিয়ে ছিল বহুক্ষণ। কিন্তু আশফি দেখতে পেয়েছে সেই চোখজোড়া আরও অনেক কিছু বলছে। মুখটা তার ভার। মাহি তার সঙ্গে কোনো কথা বলল না। তবে দিয়া আর হিমুর পিঞ্চ করা কথাতে মাহিকে লজ্জা পেতেই হলো। ‘তার শাড়ির রঙের সঙ্গে মিলিয়েই হয়তো আশফিও আকাশী রঙের স্যুটটা পরে এসেছে! নিশ্চয় তারা গতরাতে দুজনে এক সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এ বিষয়ে!’ এমন আরও বহু কথা বলে মাহিকে তারা খোঁচা দিতে থাকল। আশফির বড় গাড়িটাতে মাহি, হিমু, দিয়া, ঐন্দ্রী, আশফি, অনিক, দিশান আর ধ্রুব থাকবে। আর সঙ্গে আশফির ড্রাইভার আরিফ। বাদ বাকি দুটো গাড়িতে বেশ আরাম করে বাকি মানুষগুলো যাবে। দিয়া আর হিমুর ইচ্ছা ছিল তারা চারজন মেয়ে বান্ধবীগুলো এক সঙ্গে বসবে। কিন্তু তাদের পরিকল্পনায় পানি ঢেলে দিশান গাড়িতে সামনের সিটে উঠেই দিয়া আর ঐন্দ্রীর মাঝে বসে পড়ল। দিয়া চেঁচিয়ে উঠে বলল,
– “তুমি কেন এখানে? তুমি হয় পিছে যাও না হয় ড্রাইভার ভাইয়ের পাশে গিয়ে বসো।”
– “না আমি তো ঐন্দ্রীকে ছাড়া চোখে দেখছি না কিছু। আমি ওর পাশেই বসব।”
ঐন্দ্রী হেসে বলল,
– “দিশান! কেন বেচারিকে রাগিয়ে দিচ্ছো?”
– “সে রাগতে যাবে কেন? আমি কি তাকে বারণ করেছিলাম তার জিগারের দোস্তের সঙ্গে হেলেদুলে গল্প করতে?”
দিয়া আর একটা কথাও বাড়াল না। দিশানের রাগের ব্যাপারটা সে ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে। আর এখন যদি আবার তাকে পাশ থেকে উঠিয়ে দেওয়া হয় তবে সব ঝাল বেচারা ধ্রুবর ওপরে যাবে। তাই চুপ থাকাই শ্রেয়। পাশে রইল শুধু একজনের সিট। অনিকও তাই সিদ্ধান্ত নিলো সে তার বউকে ছাড়া বসবে না। পেছনের সিটে সে তার বউকে নিয়ে বসে পড়ল। তাদের পাশে দুজনের বসার মতো জায়গা আর একদম পেছনের সিটও পুরোই ফাঁকা। দিশান একবার ধ্রুবকে দেখে বলতে চাইল সে হয় ড্রাইভারের পাশে বসুক বা একদম পেছনে গিয়ে বসুক। কিন্তু সেটা খুবই দৃষ্টিকটু দেখাবে। এই ভাবনার মাঝেই ধ্রুব এসে ঐন্দ্রীর পাশে বসে পড়ল। মাহি তার কলিগ মিলির সাথে কথা শেষ করে গাড়ির কাছে এসে ভেতরে তাদের বসার সিস্টেম দেখে নিশ্চুপ। বাধ্য হয়ে অনিকের পাশে বসলো সে। আশফিও তার কাজ শেষ করে ড্রাইভারের পাশের সিটে এসে বসে পড়ল। পেছন থেকে ব্যাপারটা নিয়ে দিয়া দিশানের সঙ্গে আর হিমু অনিকের সঙ্গে আলোচনা করল। জোড়া হয়েই যেহেতু বসেছে তারা তাহলে আশফি আর মাহিই বা কেন আলাদা থাকবে? দিশান বলল,
– “তুমি যদি সামনে বসবেই তাহলে অন্য গাড়িতে গিয়ে বসো।”
আশফি সামনে তাকিয়েই জবাব দিলো,
– “সমস্যা নেই।”
অনিক বলল,
– “সমস্যা আছে ভাই। আসেন আমি আর আপনি পেছনে বসি।”
অনিকের কথাতে হিমু উত্তর দিলো,
– “চুমু থেকে বঞ্চিত হয়েছো বলে কি গে টাইপ চিন্তাভাবনা করছো?”
অনিক পুরো থতমত খেয়ে তাকাল হিমুর দিকে। হাসির মুহূর্ত শুরু হলোই এখান থেকে। হিমু বলল,
– “ভাইয়া প্লিজ আপনি আমাদের পাশে এসে বসুন। না হলে জমছে না ব্যাপারটা।”
এবার মাহি বলল,
– “একা সামনে না বসে এখানে এসে বসুন।”
আশফি হ্যাঁ, না কিছু না বলে গাড়ি থেকে নেমে নীরবে এসে বসলো মাহির পাশে। পেছনে তাকিয়ে দিশান একবার তাদের দুজনকে দেখে দুষ্টুমি ভরা হাসি হাসলো। তখন থেকে মাহির নিস্তব্ধতা আশফির বুকের মাঝে এক অজানা ভয় গ্রাস করে বসেছে। সবার কথার মাঝে আশফি খুব নিচু স্বরে মাহিকে জিজ্ঞেস করল,
– “শরীর ঠিক আছে?”
মাহি স্মিত হেসে ইশারায় হ্যাঁ জানালো।
– “চোখদুটো এমন লাগছে কেন? খুব ক্লান্ত যেন।”
– “রাতে ঘুম হয়নি বোধহয় এর জন্য।”
আশফি শুধু নীরবে চেয়ে রইল মাহির চোখের দিকে। মাহি একবার তার দিকে তাকিয়ে আবার দৃষ্টি নিচু করল। জানালার কাছে বসেছে আশফি। সিটে হেলে বসে বাহিরের পানে তাকিয়ে বলল,
– “যাক, ওয়েদার দারুণ আছে।”
– “এ সময় তো ওয়েদার খারাপ থাকে না। তবে এ বছরের যা বৃষ্টি তাতে ভরা শীতেও বৃষ্টি নামার আশঙ্কা আছে।”
অনিকের কথার পর সামনে থেকে দিশান বলল,
– “লাউড সাউন্ডে কারো প্রবলেম আছে? কেউ কি প্রেগনেন্ট? না মানে উচ্চ আওয়াজে যদি আবার হবু মায়ের প্রবলেম হয়?”
দিশানের কথা শুনে ঐন্দ্রী হেসে তার গায়ে একটা চাপড় মেরে বসলো।
– “কথাটা শুধু আমাকে মেনশন করলেও হতো? কিন্তু সবাইকে মেনশন যেহেতু করলে তবে নিশ্চয় আমাদের ড্রাইভার ভাইয়ের কিছু হয়েছে।”
– “কী যে কন আফা!”
হিমুর কথা শুনে আরফি এক গাল হেসে ফেলল।
– “তাহলে ভাই মিউজিক অন না করে বসে আছেন কেন? চালু করুন।”
গাড়ির মধ্যে গান চালিয়ে সিটে বসে নাচার অভ্যাস মোটামোটি সবারই আছে। তবে আশফির প্রচন্ড চিন্তাগ্রস্ত মুখ দেখে মাহি জিজ্ঞেস করল,
– “কী হয়েছে আপনার?”
– “আরও কিছু জিজ্ঞেস করুন। একটা উত্তর দিতে ভালো লাগবে না।”
– “কী!”
– “মানে জিজ্ঞেস করুন আপনাকে কেমন লাগছে দেখতে?”
মাহি তার লাজুক হাসি হেসে মাথা ঝুঁকাল।
– “সত্যি বলতে মনে হচ্ছে এক টুকরো আকাশ।”
– “তাহলে আপনাকে কী বলব?”
হতাশ সুরে কপট মন খারাপ করে আশফি বলল,
– “কেউ তো কিছুই বলল না।”
– “বলবে আর কী? দেখেই তো শেষ হয় না।”
আশফি আঁড়চোখে তাকিয়ে দেখল মাহি মৃদু হাসছে। এরপর আবার সে চুপ। বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারছে আশফি। প্রচন্ড মন খারাপ নিয়ে মেয়েটা তার পাশে বসে আছে। আশফি পেছন থেকে চেঁচিয়ে দিশানকে বলল,
– “নিজের গলায় গান ধর তো। তিন তিনটা শালী বসিয়ে রেখে কী করছিস?”
– “ভাই আমি শালীদের গান জানি না।”
হিমু তখন পেছন থেকে বলল,
– “বেয়াইনদের গান জানেন তো?”
– “হ্যাঁ সেটা জানি।”
– “তবে শুরু করুন।”
দিশান হাসতে হাসতে একবার মাহি আর আশফির দিকে তাকাল। আশফিও মুচকি হেসে আঁড়চোখে মাহিকে দেখছে তখন। দিশান গলাটা পরিষ্কার করে নিয়ে সবাইকে বলল,
– “বর্তমান গানই গাই। সবাই তাল দিও অবশ্যই।”
দিশান গাইতে আরম্ভ করল-
“এই যে বিয়াইনসাব, ভাব নিয়েন না
এতো গুলা বিয়াই যেনো দেইখাও দেখেন না
আরে এই যে বিয়াইনসাব, মাইন্ড খাইয়েন না
কালা চশমা পরলে কিন্তু বেইল পাবেন না।”
গানের চারটা লাইন গেয়ে উঠলো সবাই। পুরো জার্নিটা ভালোভাবে এনজয় হলো তাদের। বান্দরবন রিসোর্টে এসে পৌঁছানোর পর রিসোর্টের সৌন্দর্য নিয়ে আপাতত কেউ কোনো কথা বলল না। যা কথা হবে রাতে। সবাইকে যে যার রুমের চাবি দিয়ে দেওয়া হলো। একটা রুম দুজন করে শেয়ার করে নেবে সবাই। মাহি আর দিয়া একই রুমে থাকবে। রিসোর্টে আসার পরই দিশান দিয়াকে কী যেন দেখানোর জন্য কোথাও একটা নিয়ে গেল। মাহির প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। চাবিটা নিয়ে সে দ্রুত নিজের রুমে চলে এলো। সন্ধ্যা নেমেছে সবে। বেশ ভালোই ঠান্ডা লাগছে এখানে আসার পর। তাও চট করে একটা শাওয়ার নিয়ে ব্ল্যাঙ্কেট গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়ল সে। রাত প্রায় আটটা, মুখে পানির ছিটা পেয়ে ঘুম ভাঙল তার। ঘুমন্ত চোখদুটো হালকা খুলে তাকিয়ে দেখল আশফি ঝুঁকে পড়ে তার ভেজা চুল মাহির মুখের সামনে হাত দিয়ে ঝেরে মজা করছে৷ ঠোঁটে তার দুষ্টু হাসি। উন্মুক্ত শরীরে আর পরনে একটি কালো প্যান্ট পরে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছে সে। মাহি ঘুমু ঘুমু কণ্ঠে বলল,
– “কী করছেন বলুন তো? আর আমার রুমে কেন আপনি?”
আশফি শুধু মুচকি হাসতে থাকল। মাহি কেমন প্রমত্ত দৃষ্টি মেলে ভেজা চুল আর উন্মুক্ত শরীরের মানুষটাকে দেখছে। প্রত্যক্ষ নজর তার আশফির বুকের নিচের লাল তিলটার দিকে। আশফি তার নজর খেয়াল করে বলল,
– “আপনি কী দেখছেন এভাবে?”
– “ওটা এত মিষ্টি কেন?”
– “কোনটা?”
মাহি ঘুম জড়ানো কেমন ভাঙা সুরে বলল,
– “ওই যে আপনার বুকের নিচে ওই লাল তিলটা।”
– “ওটা খুব মিষ্টি আপনি কী করে বুঝলেন?”
– “দেখতেই তো প্রচুর রাঙা। তাই জানি খুব মিষ্টি ওটা।”
আশফি মাহির মাথার কাছে বসলো। তারপর বলল,
– “ঘুম থেকে উঠুন এবার। চোখদুটো ভালো করে খুলে দেখুন একবার চারপাশটা।”
মাহি ব্ল্যাঙ্কেটটা সরিয়ে আশফির পাশে উঠে বসলো। উপরটা মৃদু আভা দেওয়া ছোট ছোট মরিচ বাতি। আর রুমের চারপাশটা মোমবাতির আলোতে মুখরিত। অবচেতন মনে আশফির কাঁধে মাথা এলিয়ে দিলো মাহি।
– “এত সুন্দর কেন সব?”
– “আমার পাশের মানুষটা যে অনন্য তাই।”
মাহি মাথা উঠিয়ে আশফির দিকে তাকিয়ে বলল,
– “এই আপনি বাসরঘর সাজিয়েছেন না কি?”
আশফি হেসে উঠে দাঁড়িয়ে শার্টটা হাতে নিয়ে বলল,
– “আমার বাসরঘর তো এর থেকেও চমকপ্রদ হবে।”
মাহি আশফির ফর্সা বুকটার দিকে নিষ্পলক কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ধমকের সুরে তাকে বলে উঠল,
– “একদম শার্ট পরবেন না?”
আশফি কিছুটা ভড়কে গিয়ে তাকাল মাহির দিকে।
– “কেন পছন্দ হয়নি শার্টটা?”
– “পছন্দ হোক বা না হোক আপনি শার্ট পরবেন না।”
আশফি ঠোঁট চেপে হেসে বলল,
– “কেউ যদি আমার মানহানি করার চেষ্টা করে?”
মাহি তার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে বেহায়ার মতো চেয়ে রইল আশফির খালি দেহটার দিকে। শার্টটা এক পাশে রেখে আশফি নিচে এক পা ভেঙে মাহির মুখোমুখি বসলো।
– “আপনি কি জানেন আজকের রাতটা কত বিশেষ আমাদের জন্য?”
– “ইচ্ছা নেই জানার।”
– “তো কিসের ইচ্ছা আছে ঘুম নগরীর শেহজাদীর?”
– “এই খোলা বুকটা দেখব শুধু।”
– “এটা কী করে হয়? আজ আমি কাউকে একদম নিজের করে নেওয়ার আর্জি জানাবো। এভাবে খালি গায়ে কেউ কাউকে প্রপোজ করে?”
– “আপনি করবেন। সবাই সুন্দর করে সাজুগুজু করে একগাদা ফুল নিয়ে প্রপোজ করে আর আপনি খালি গায়ে একগাদা মিষ্টি নিয়ে প্রপোজ করবেন।”
আশফি হাসতে থাকল মাহির কথা শুনে। মাহি কপাল কুঁচকে ফেলল হঠাৎ।
– “আচ্ছা প্রপোজটা কাকে করবেন আপনি?”
আশফি মাহির নাকের ডগায় টোকা দিয়ে বলল,
– “এই যে আমার সামনে বসে থাকা এই সাদা নাইটি পরা মেয়েটাকে।”
এটুকু বলে আশফি গায়ে শার্ট ঢুকাতে গেলেই মাহি চেঁচিয়ে অস্থির করে ফেলল। সে কোনোভাবেই আশফিকে শার্ট পরতে দেবে না। আশফি হতাশ হয়ে বলল,
– “এত সুন্দর একটা মোমেন্টে আমি খালি গায়ে থাকব?”
মাহি জিদ্দি সুরে বলল,
– “হ্যাঁ থাকবেন। প্রয়োজনে আমিও থাকছি।”
মাহি তার নাইটির বুকের লম্বা ফালি অংশ এক টানে খুলে ফেলল। আশফি বিস্ময়ে যেন পুরো নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। সে দ্রুত মাহিকে থামিয়ে বলল,
– “বুদ্ধু একটা। কী করছেন?”
মাহি আচমকা আশফির খোচা দাড়িযুক্ত গালে হাতটা দিয়ে বলল,
– “আপনার সবকিছু এত সুন্দর কেন?”
আশফি মৃদু হেসে তার গালটা মাহির গালের সঙ্গে হালকাভাবে ঘষে দিলো। মাহি এমনভাবে চমকে উঠল যেন সে এত সময় পর সম্বিৎ ফিরে পেয়েছে। আশফি হেসে বলল,
– “শেহজাদির চৈতন্য ফিরেছে?”
মাহি চমকিত দৃষ্টিতে চেয়ে থাকল আশফির দিকে। ঘুমের রেশটা এত সময় বাদে দূর হয়েছে তার। দ্রুত ব্ল্যাঙ্কেটের ভেতর ঢুকে নিজের নাইটি পরা শরীরটা আড়াল করে আশফিকে বলল,
– “আপনি আমার রুমে কী করছেন আজব!”
– “আপনার নয় এটা আমার রুম।”
– “কী বলছেন? আমাকে এই রুমের চাবি দিয়েছে দিশান।”
– “ভুলবশত।”
– “তাই? তাহলে আমাকে আগে বলবেন না?”
আশফি হেসে মাহির দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
– “এদিকে আসুন।”
মাহি তার হাতটা ধরে বিছানা থেকে নামতেই এক ঝটকায় আশফি তাকে নিজের বুকের কাছে নিয়ে এলো।
– “বলার জন্যই তো রেখেছি এখানে।”
আশফির কণ্ঠস্বর ধীরে ধীরে গাঢ় হয়ে উঠছে। মাহি দৃষ্টি মেলে তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার জোরটুকু যেনো পেলো না। ঝকঝকে পান্না পাথরের একটি আংটি বের করে আশফি তার গাঢ় কণ্ঠে মৃদু আওয়াজে বলল,
– “এই যে একটা রুমে দুজনে দাঁড়িয়ে থাকতেও কত সংকোচ কত জড়তা আমাদের। এই সংকোচ এই জড়তা কাটিয়ে একটি রুমে একটি ছাদের নিচে এক সঙ্গে চিরটাকাল থাকতে চাই। একটি বালিশে দুজন দুজনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে চাই। ব্যালকনিতে বসে একটি মগে দুজনে এক সঙ্গে কফি খেতে চাই। আমি ভালোবাসি তোমাকে মাহি। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।”
প্রতিটা কথা যেন মাহির কানে বারবার প্রতিধ্বনি হচ্ছে। তার নিঃশ্বাসও ঘন ঘন পড়ছে। শরীরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যেতে গেলেই আশফি দ্রুত মাহিকে জাপটে ধরল। আশফি মুচকি হেসে বলল,
– “কিছু তো বলো।”
ঠোঁটদুটো চেপে বেশ কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে রইল মাহি। তারপর আলতোভাবে আশফির বুকে মাথা এলিয়ে বলল,
– “বুকের মধ্যখানটা আমার আজীবন চাই।”
মাহি তার বুকে মাথা এলিয়ে দিয়ে রইল কতক্ষণ। মাথাটা উঁচু করলে আশফি তার কপালে একটি চুমু খেয়ে ধীরে ধীরে তার ওষ্ঠের তপ্ত স্পর্শে জড়িয়ে ধরল মাহির অধর। এরপর আংটিটা পরিয়ে দেওয়ার জন্য আশফি মাহির হাতটা নিজের হাতে তুলে নিতেই এক বিকট আওয়াজে চমকে উঠল দুজন। মাহির ফোনটা ভাইব্রেট হচ্ছে অনেকক্ষণ। ফোনের স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে সোমের নাম। মাহি আশফির চোখের দিকে তাকাতে আশফি তাকে ইশারায় ফোনটা রিসিভ করতে বলল। ফোনটা কানে নিতেই সোম খুব উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলল,
– “দাদুর শরীরটা খুব খারাপ করেছে রে মাহি। তোকে দেখার জন্য খুব উতলা হয়ে আছেন৷ আজ কিংবা কালকের মধ্যেই আমাদের বিয়েটা দেখতে চান উনি।”
ফোনের সাউন্ড লাউড ছিল। আশফি নিশ্চুপ হয়ে চেয়ে রইল মাহির দিকে। মাহি কাঁদতে কাঁদতে সোমকে বলল,
– “আমি এখনি আসছি। আমার দাদুর যেন কিচ্ছু না হয়। আমি আসছি এখনি।”
ফোনটা কাটতেই আশফি বলল,
– “আমি যেতে চাই তোমার সঙ্গে।”
– “আর সম্ভব নয়।”
– “আমি নিজে বলব দাদুকে।”
– “উনি কষ্ট পাবেন আশফি। আমার ভাইটাও যে একই কষ্ট দিয়েছিল ওনাকে। আমি পারব না।”
মাহি গায়ে চাদরটা জড়িয়ে নিয়ে লাগেজ তুলে বেরিয়ে আসার মুহূর্তে আশফি তার হাতটা টেনে ধরে বলল,
– “আমিও পারব না তোমাকে ছাড়তে। আমি এখনি আমার দাদাকে বলছি তোমার দাদুর সঙ্গে কথা বলতে।”
– “এমন কিছুই করবেন না আপনি। আমি আপনাকে গ্রহণ করলে আমার দাদুকে হারাবো।”
মাহি চলে গেল দৌঁড়ে। আর আশফি পেছন থেকে চেঁচিয়ে তাকে বলল,
– “আমি তোমাকে কোনোদিনও মাফ করব না মাহি।”
মাহি থেমে গিয়ে কান্না ধরে রাখা কণ্ঠে বলল,
– “আমি সুখে থাকব না আশফি।”
…………………………..
(চলবে)
– Israt Jahan Sobrin
পরবর্তী ধাক্কাগুলো সামলাতে প্রস্তুত তো?
We use cookies on our website to give you the most relevant experience by remembering your preferences and repeat visits. By clicking “Accept All”, you consent to the use of ALL the cookies. However, you may visit "Cookie Settings" to provide a controlled consent.
This website uses cookies to improve your experience while you navigate through the website. Out of these, the cookies that are categorized as necessary are stored on your browser as they are essential for the working of basic functionalities of the website. We also use third-party cookies that help us analyze and understand how you use this website. These cookies will be stored in your browser only with your consent. You also have the option to opt-out of these cookies. But opting out of some of these cookies may affect your browsing experience.
Necessary cookies are absolutely essential for the website to function properly. These cookies ensure basic functionalities and security features of the website, anonymously.
Cookie
Duration
Description
cookielawinfo-checkbox-analytics
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Analytics".
cookielawinfo-checkbox-functional
11 months
The cookie is set by GDPR cookie consent to record the user consent for the cookies in the category "Functional".
cookielawinfo-checkbox-necessary
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookies is used to store the user consent for the cookies in the category "Necessary".
cookielawinfo-checkbox-others
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Other.
cookielawinfo-checkbox-performance
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Performance".
viewed_cookie_policy
11 months
The cookie is set by the GDPR Cookie Consent plugin and is used to store whether or not user has consented to the use of cookies. It does not store any personal data.
Functional cookies help to perform certain functionalities like sharing the content of the website on social media platforms, collect feedbacks, and other third-party features.
Performance cookies are used to understand and analyze the key performance indexes of the website which helps in delivering a better user experience for the visitors.
Analytical cookies are used to understand how visitors interact with the website. These cookies help provide information on metrics the number of visitors, bounce rate, traffic source, etc.
Advertisement cookies are used to provide visitors with relevant ads and marketing campaigns. These cookies track visitors across websites and collect information to provide customized ads.
Lame?