তুমি রবে ৩৪
.
.
– “আরে বললেই হলো নাকি! ওর নিজস্ব একটা মতামত বলে ব্যাপার আছে তো। দাদু এখন অসুস্থ। ভাবছেন হয়তো আর ক’দিনই বা বাঁচবেন। মানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের আগে নাতনির বিবাহিত জীবন দেখে যেতে চাচ্ছেন।”
দিয়া কিছুটা চিন্তিত মুখ করে সোফায় বসলো। তারপর বলল,
– “দাদুকে যতটা চিনি উনি শুধু এমনটা ভেবেই সিদ্ধান্ত জানানোর মানুষ নন।”
দিয়ার কথাতে হিমু জবাব দিলো,
– “শোন, দাদু এমন একজন চিন্তাধারার মানুষ। যার চিন্তাধারা এত বেশি উন্নত যা আমাদের বাবা-মায়েরও হয় না। এসব ব্যাপারে উনি মাহির সিদ্ধান্ত না জানতে চেয়েই ঠিক করবে? কখনোই না। তোরা শুধু শুধু বাড়তি চাপ নিচ্ছিস।”
মাহি দু’পায়ের হাঁটুর ওপর হাত রেখে তাতে থুঁতনি ভর করে বসে আছে। দিয়া বা হিমু কারো কথায় তার কানে পৌঁছাচ্ছে না। উদ্দেশ্যহীন দৃষ্টি মেলে চেয়ে আছে জানালার বাহিরে। দিয়া, হিমু দুজনে যত যাই বলুক না কেন, ওদেরও যে এ ব্যাপারে চিন্তা হচ্ছে না তা নয়৷ কিন্তু কেউই তা মাহির সামনে প্রকাশ করতে চাইছে না। হিমু এসে মাহির পাশে বসে বলল,
– “আচ্ছা এ কথা তো ঠিক যে তুই সোম ভাইকে বিয়ে করতে চাস না। তো এটা তাদের জানালেই তো সব সমাধান।”
দিয়া পাশ থেকে বলে উঠল,
– “এত ইজিলি কীভাবে বললি কথাটা? ওকে প্রশ্ন করবে না ও কেন তাকে বিয়ে করতে চায় না? অন্য কাউকে পছন্দ আছে কি না? এগুলোর উত্তর ও কী দেবে? সোম ভাই এখন ওর পরিবার আর ওর প্রতি খুবই কেয়ারফুল। আর এরপর আসে ওর পছন্দ থাকার প্রশ্ন। ওর তো কোনো পছন্দও নেই যে তার বাহানায় ও কিছু বলবে। তাহলে তারা কী যুক্তি দেখে এই বিয়েতে অমত দেবে?”
দিয়ার কথাগুলো কানে বাজতেই হঠাৎ মাহির চোখটা ঝাপসা হয়ে উঠল। সেদিন শেষবার যখন সে আশফিকে দেখেছিল, ঠিক সেই মুহূর্তটিই তার মনে পড়ছে বারবার। হিমু একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছে। সোমকে বিয়ে করতে না চাওয়ার কারণ যে সে সোমকে পছন্দ করে না শুধু তাই নয়। সোমকে বিয়ে করতে না চাওয়ার পেছনে আরও বিশেষ কিছু কারণ অবশ্যই আছে। আর হিমু এটাও নিশ্চিত যে তার শৈশবের এই চাপা স্বভাবের বন্ধুটি কারো প্রতি খুব দৃঢ়ভাবে আসক্ত হয়ে পড়েছে। যা এখন তার চোখের নোনাপানিই বলে দিচ্ছে।
হিমু বলল,
– “আমি জানি তুই এই বিয়ে কখনোই করতে পারবি না। কিন্তু একটা ব্যাপার বল তো। তুই কি প্রস্তুত?”
দিয়া কপাল কুচকে প্রশ্ন করল,
– “অদ্ভুত! ও আবার কী ব্যাপারে প্রস্তুত থাকবে?”
হিমু কিছুক্ষণ দিয়ার দিকে শান্ত চাহনি মেলে থেকে তারপর জোর গলায় তাকে বলল,
– “তোর বান্ধবী রীতিমতো আহত কারো প্রেমে পড়ে। আর তা খুব বাজেভাবে। সবসময় এক সঙ্গে থাকিস। একটাবারও সেটা বুঝতে পারিসনি?”
দিয়া স্তম্ভিত হয়ে কিছুক্ষণের জন্য চেয়ে থাকল হিমুর দিকে। তারপর হঠাৎ খিক করে হেসে ফেলে বলল,
– “যাহ্! কী সব বলিস! ও প্রেমে পড়বে আর আমি জানব না?”
হিমু পুরো মেজাজ খারাপ করে তাকাতেই দিয়া ক্ষেপে গিয়ে চেঁচিয়ে বলল,
– “মানে কী? মানে এটা কী করে সম্ভব!”
মাহিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দিয়া কিছু বলতে যাবে তাকে কিন্তু আষাঢ়ে ভরা নদী দেখে সে একটা ধাক্কা খেলো যেন। দিয়া মাহির মাথাটা নিজের কাঁধে নিয়ে বলল,
– “এত বেশি চেপে রাখা শিখেছিস তুই? ভেতরে ভেতরে ক্ষয় হবি তাও মুখ ফুটে কিছু বলবি না। আমাকেও বলতে এত দ্বিধা ছিল তোর?”
মাহি নীরবে এবার চোখের পানিটুকু ছেড়ে দিলো। হিমু এসে মাহির হাতটা নিজের হাতের মাঝে নিয়ে বলল,
– “কীরে তুই? আমরা কেউ কি কখনো নিজেদের এমন কোনো কথা আছে যা কাউকে জানায়নি? তাহলে তুই কি আমাদের কখনো একটাবার বলতে পারতি না? না কি আমাদের আপনই ভাবিস না?”
দিয়ার কাঁধে মাথা রেখে হিমুর হাতটা চেপে ধরে মাহি জবাব দিলো,
– “এভাবে বলিস না। তোরা দুজন আমার কতটা কাছের তা কি নতুন করে বলতে হবে?”
কান্না মিশ্রিত কণ্ঠ মাহির। দিয়া প্রশ্ন করল,
– “তাহলে এত বড় একটা ব্যাপার আমাদের বললি না কেন?”
– “কী করে বলতাম? নিজেই তো কনফিউজড ছিলাম।”
দিয়া ঠেঁলে মাহিকে সোজা করে বসালো।
– “একদম কান্নাকাটি বন্ধ। কনফিউজড ছিলি মানে কী?”
টুংটাং আওয়াজে পাশে থাকা ফোনটা বেজে উঠল মাহির। স্ক্রিনে সবাই দেখতে পেলো আশফি মাহবুব। হিমুর মুখে মুচকি হাসি। মাঝে প্রায় দুটো দিন আশফির সাথে কোনো যোগাযোগ হয়নি মাহির। আশফি যা খবর সব দিশানের থেকেই নিয়েছে। মাহির দাদু অসুস্থ সে খবরটাও আশফি দিশানের থেকে শুনেছে। গত পরশু রাতে আশফি কল করলেও মাহি রিসিভ করার সুযোগ পায়নি। এরপর আর তাদের কোনো কথাও হয়নি। তড়িঘড়ি করেই মাহি ফোনটা হাতে নিলো। ওপাশের মানুষটি কল রিসিভ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাকুলতা ভরা কণ্ঠে সে প্রশ্ন ছুড়ল,
– “আপনি ঠিক আছেন তো মাহি?”
মাহির ঠোঁটে তৃপ্তিকর হাসি।
– “কেমন আছেন আপনি?”
– “কী অদ্ভুত না! আমাকে কি সেদিন একটাবার বলা যেতো না?”
এটুকু বলে আশফি থামলো। কণ্ঠে তার কিছু অভিমানের সুর। এরপর আবার বলল,
– “এখন কেমন আছেন দাদু?”
– “সুস্থ অনেকটাই।”
– “আর আপনি?”
– “আমি তো সুস্থই।”
– “কণ্ঠ শুনে মনে হচ্ছে না।”
মাহি নীরব।
– “মেসেজের রিপ্লাই কেন করেননি, ফোন রিসিভ কেন করেননি এসব কিছুই জিজ্ঞেস করব না। শুধু জানতে চাইব একবার দেখা করতে পারবেন?”
– “আমি তো এখন হিমুর বাসাতে। মানে…?”
– “হিমুর বাসায়? ও আচ্ছা সমস্যা নেই।”
– “সমস্যা আছে। হিমুর বাসাতে তো কী হয়েছে? তিনজনই তৈরি থাকো আমি নিতে আসছি তোমাদের।”
দিশানের দিকে আশফি ভ্রূকুটি করে তাকাতেই দিশান ফোনটা আশফির হাত থেকে নিয়ে নিলো।
– “দিশান!”
– “আমাকে কথা বলতে দাও ভাইয়া।”
আশফি চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে রইল। এদিকে দিশান মাহিকে ফোনে বলল,
– “কেমন আছো ডিয়ার?”
– “ভালো। তুমি কেমন আছো?”
– “আমি সবসময়ই ভালো থাকি। তো পাশে আমার মিঠাইও আছে না?”
মাহি হেসে ফেলে দিয়ার দিকে তাকাল। দিয়া কিছুটা আন্দাজ করে নিয়েছে ফোনের ওপাশের ব্যক্তির ব্যাপারে। মাহির হাত থেকে ফোন নিয়ে দিয়া সাউন্ড লাউড করল।
– “থাকলে বলো তার মিঠাইওয়ালা আসছে। আর সাথে তোমরা দুজনও তৈরি থেকো।”
– “কোথায় যাব আমরা?”
– “কোথায় আবার? আমার ভাইয়ের নতুন সংসারে। কোনো আপত্তি শুনছি না। ট্যুরের ব্যাপারে কিছু প্ল্যানিং বাকি আছে। তোমাদের প্রয়োজন। তাই সবাইকেই আসতে হবে।”
হিমু বলল,
– “অনিক কিছুক্ষণ পরই বাসায় আসবে। তোরা যা ঘুরে আয়।”
– “আরে গেলে আমরা সবাই যাব। না হলে কেউ না।”
দিয়া আর হিমুর কথা শুনে দিশান বলল,
– “হ্যালো মিসেস অনিক। কেমন আছেন?”
– “আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া।”
– “আরও ভালো হয়ে যাবেন। জলদি মিস্টারকে ফোন দিয়ে বলে ফেলুন আমার ভাইয়ের নতুন সংসারে তাকে আজকের মধ্যাহ্নভোজের নিমন্ত্রণ দেওয়া হয়েছে।”
– “আরে বাহ্! বৃটিশ সাহেবের মুখে খাস বাংলা! কী করে সম্ভব?”
– “সম্ভব নয় কেন? আমার ভাই সাহেব তো একজন দারুণ বাঙালি আবার চমৎকার বৃটিশ সাহেবও বলতে পারেন। তার থেকেই আমি বাকি হাতেখড়িটা নিয়েছি। আরও অনেক কিছু জানতে পারবেন। এখন তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিন। আসছি আমি। কোনো এক্সকিউজ শুনব না কিন্তু।”
কথা শেষ করে দিশান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে একটা প্রশস্ত হাসি দিলো। আশফি নির্বিকারভাবে পিসিতে হাত চালালেও তার চোখে মুখে খুশির ঝিলিক।
.
হিমুকে মিটিমিটি হাসতে দেখে মাহি বলল,
– “যা বলার সরাসরি বল। এভাবে হাসছিস কেন?”
– “ভুল যদি না হয় তাহলে আমি যা আন্দাজ করেছিলাম সেটাই সত্য?”
মাহি লাজুক হাসি হেসে বলল,
– “কী আন্দাজ করেছিস তুই?”
হিমু খুশিতে মাহিকে চেপে ধরে বলল,
– “ওহো! শেষ পর্যন্ত ওই কাজপাগল, গাম্ভীর্যপূর্ণ মানুষটাই বাগে ফেলল আমার বান্ধবীটাকে!”
মাহি লাজুক মুখে কপট অভিমানের ছায়া এনে বলল,
– “সে মোটেও গম্ভীর টাইপ নয়।”
– “এই এক মিনিট। আমাকেও কিছু খাওয়ার সুযোগ দে। কী বলছিস বল তো তোরা?”
হিমু দিয়ার মাথায় একটা গাট্টা মেরে বলল,
– “গাধী নিজেরটা নিজে বুঝে নিয়েছো তো। তাই অন্যজনেরটা আর চোখে বাঁধে না। আরে আমি তো সেদিনই বুঝে গিয়েছিলাম। যেদিন উনি এসে চট করেই মাহির পাশে এসে বসলো। এরপর কোনো বাঁধা বা সংকোচ ছাড়াই আমাদের সামনে কী সুন্দর হাতটা মাহির দিকে বাড়িয়ে ওকে নিয়ে চলে গেল।”
দিয়া অবিশ্বাসের সুরে বলল,
– “অসম্ভব! ওই লোকটা শুধু কাজ ছাড়া আর কিছু বোঝে না। সে যতই আমার বয়ফ্রেন্ডের ভাই হোক। আমি চাই না ওই রকম একটা অসহ্য লোক আমার এই ইনোসেন্ট বন্ধুটার লাইফ হেল করুক।”
হিমু তাকিয়ে দেখল মাহির মুখটা অপ্রসন্ন। দিয়ার হাঁটুতে একটা চাপড় দিয়ে হিমু বলল,
– “শোন, গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি। তোর মিঠাইওয়ালার থেকেও ওয়ার্ল্ড বেস্ট মিঠাইওয়ালা সে। আমি সেদিন তার মধ্যে যে পজেসিভনেস দেখেছি মাহির প্রতি তাতে আমি শিওর, দুনিয়া এপাশ থেকে ওপাশে চলে গেলেও মাহির প্রতি সে অন্য কারো অধিকারবোধ সহ্য করবে না। সেই সুযোগই সে কাউকে দেবে না। যদি একবার মাহি তার অনুভূতিকে সম্মতি জানায় তো।”
দিয়া জিজ্ঞেস করল মাহিকে,
– “তো তুই সম্মতি দিয়ে দিয়েছিস?”
মাহি ঘাড় নেড়ে না জানাল। বলল,
– “আমাকে তো সে কিছুই বলেনি।”
হিমু হাসতে হাসতে বলল,
– “আমার তো মনে হচ্ছে খুব তাড়াতাড়িই বলবে।”
.
.
ঘন্টা দুই বাদে দিশান এসে ওদের তিনজনকে নিয়ে চলে এলো আশফির নতুন বাড়িতে। তিন-চারদিন হলো আশফি সেখানে শিফ্ট করে গেছে। সময় তখন বেলা সাড়ে বারোটা। লিভিংরুমে এসে সবাই বসতেই কিচেন থেকে বেরিয়ে এলো আশফি। সবার সঙ্গে কুশলাদি বিনিময়ের পর হিমুকে সে জিজ্ঞেস করল,
– “অনিক এলো না?”
– “আসছে ভাইয়া। আমাকে বলল চলে আসতে। ওর একটু দেরি হবে তাই।”
– “ও আচ্ছা। সমস্যা নেই। রান্নাটাও শেষ হতে দেরি আছে।”
– “তো আপনারাই রান্নার কাজ করেন না কি?”
দিশান বলল,
– “আমার ভাই সার্ভেন্টদের হাতের রান্না কখনোই পছন্দ করে না। তাই রান্নার দায়িত্ব সে নিজেই বহন করে। একদিক থেকে আমার ভাবিসাহেবার জন্য ভালোই হয়েছে। সে রান্না না জানলেও ক্ষতি নেই। আমার ভাই তো দারুণ রান্না জানে।”
কথাটা বলেই দিশান আঁড়চোখে আশফির দিকে তাকিয়ে ইশারা করল মাহির দিকে তাকাতে। মাহির লাজুক হাসি দেখা না গেলেও তার লাজকুতা বেশ ভালোভাবেই ফুটে উঠেছে চেহারাতে। আর যা সেটা সবাই-ই খেয়াল করল। আশফি বিস্তৃত হাসি হেসে দিশানকে বলল,
– “লেমনেড তৈরি করে ফ্রিজে রাখো দ্রুত।”
– “এটা আমি কখনোই ভালো বানাতে পারি না ভাই।”
– “ওকে। আজকে খাবার সার্ভের দায়িত্ব তোমার। প্রত্যেকের গ্লাসে পানি ঢেলে দেওয়া থেকে শেষ অবধি। তারপর তুমি খেতে বসতে পারবে।”
– “এটা কী রকম পানিশমেন্ট! প্রচন্ড কষ্ট পেলাম ভাই।”
আশফি হাসতে হাসতে কিচেনে গেল। আর সেখান থেকেই গলা উঁচিয়ে বলল,
– “যেটা বললাম সেটাই করতে হবে।”
সবার হাসি দেখে দিশান খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে বলল,
– “কী দারুণ না আমার ভাইটা? একদম স্টেপ ব্রাদার।”
মাহি উঠে দাঁড়িয়ে হেসে বলল,
– “তুমি বসে গল্প করো। আমি ওনাকে হেল্প করছি।”
দিশানও হেসে উত্তর দিলো,
– “প্লিজ ডিয়ার।”
.
ফ্রিজ থেকে লেবু বের করে কেবিনেটের ওপর রেখে ছুরিটা হাতে নিতেই মাহি এসে দাঁড়াল কিচেনে। আশফি কিছু মুহূর্ত তাকে দেখে লেবু কাটতে কাটতে বলল,
– “দু’দিনেই একদম শুকিয়ে গেছেন।”
– “কী জানি!”
আশফির পাশে এসে দাঁড়াল মাহি। আশফি লেবু কাটা থামিয়ে এবার মাহির মুখোমুখি দাঁড়াল। ক্যাবিনেটে এক হাত ভর করে আর কোমরে এক হাত রেখে মাহির দিকে তাকিয়ে বলল,
– “কী জানি অর্থ কী? দুদিনের মধ্যে নিজের শরীরের খোঁজ রাখার মতো অবস্থায়ও ছিলেন না? দাদুর শরীর খারাপ হয়েছে আরও চারদিন আগে। তিনি মোটামোটি সুস্থ দুদিনের মধ্যেই। আর তার পরের দু’দিনের মধ্যেই আপনার এই হাল। সমস্যাটা একান্তই ব্যক্তিগত হলে জিজ্ঞেস করব না। তবুও এটুকু জানতে চাই। কী হয়েছিল?”
মানুষটা তাকে নিয়ে কত ভাবে। তা তার গভীর চাউনিতেই প্রমাণ। কী মায়া সেই চোখে! এই মানুষটার এই মায়াপূর্ণ চাহনি, এত কেয়ারনেস, এত পজেসিভনেস এত কিছু অবজ্ঞা করার সামর্থ্যটুকু যে তার নেই। ইচ্ছা তো হয় তার বুকের মাঝে মুখ লুকিয়ে ভেতরের কান্নাটা প্রকাশ করে দিতে। তার বলতে ইচ্ছা হয় “আমি পারব না অন্য কারো হাতের মুঠোয় নিজের হাতটা রাখতে। আমার শুধু আপনার হাতটা চায়, আপনার এই বুকটা চায়। শুধুই আপনার।”
– “মাহি?”
মাথাটা নিচু করে দাঁড়িয়েছিল মাহি। মুখ তুলে তাকাতেই দেখতে পেলো সেই মানুষটা এখন তার পুরোপুরি কাছে। মাহির নিশ্চল চোখদুটো দেখে আশফি বলল,
– “ক্ষত সারা দেহে ছড়িয়ে যাওয়ার আগেই তার ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন। আর ট্রিটমেন্টের জন্য অবশ্যই ডক্টর প্রয়োজন। এখন ডক্টরের কাছে না গেলে তো ট্রিটমেন্টও নেওয়া সম্ভব নয় তাই না? এভাবে ভেতরে ক্ষতটা পুষে না রেখে তার ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করুন।”
– “কীভাবে করব? সাহসই তো নেই।”
মাহির নির্বিকারভাবে বলা উত্তরটা আশফির কানে না পৌঁছালেও আশফি বলল,
– “যতটা সামর্থ্য আছে সাহায্য করব। তবুও এভাবে অবিকারত্ব হয়ে থাকবেন না। ভালো লাগছে না দেখতে।”
কথা শেষ করে আশফি লেবু কাটার জন্য ছুরি নিতেই মাহি বলল,
– “আপনার রান্নাটা দেখুন। আমি করছি।”
– “পাগল নাকি! যার শরীরের খোঁজই সে জানে না। সে লেবু কাটতে এসে যে হাত কাটবে না তার নিশ্চয়তা কী?”
আশফির হাত থেকে মাহি ছুরিটা নিয়ে খুব দর্প করে তাকে বলল,
– “এটা খুব ভালোই বানাতে জানি আমি।”
– “আচ্ছা! ঠোঁটে লেগে থাকবে তো?”
– “ড্রিংক জিনিস কখনো আবার ঠোঁটে লেগে থাকে না কি?”
আশফি মিটিমিটি হাসতে হাসতে চুলার ওপর বসিয়ে রাখা চিংড়ির মালাইকারিটা নামিয়ে নিলো। প্রশ্নটা করার দু সেকেন্ডের মাথায় মাহি আশফির কথার ইঙ্গিত বুঝতে পেরে লজ্জাতে আর আশফির দিকে তাকাল না।
.
লেবু চিপতে গিয়ে তার অর্ধেক রসটুকুই মাহির চোখে মুখে লেগে একাকার। আশফি ওভেন থেকে ফ্রাইড চিকেন বের করে দ্রুত ন্যাপকিন নিয়ে মাহির কাছে আসতেই তাকে দেখে হেসে ফেলল।
– “এত চমৎকার লেমনেড করলে তো সমস্যা।”
মাহি চোখ মুছতে মুছতে বলল,
– “মজা করবেন না তো৷ চোখ জ্বলে যাচ্ছে একদম।”
মাহিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে তার শাড়ির আঁচল তুলে আশফি নিজেই ভাপ দিলো কিছুক্ষণ তার চোখে। তারপর তার মুখ আর কপাল ন্যাপকিন দিয়ে পরিষ্কার করতে করতে বলল,
– “ভাগ্যিস শাড়িতে অভ্যাস করেছেন।”
মাহির স্থিরদৃষ্টি আর তার ওষ্ঠকোণে স্মিত হাসি দেখে আশফি নীরব হাসি হেসে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ তার দিকে। মাহি মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করল,
– “শাড়িতে কী সুবিধা হলো?”
আশফিও তারই মতো করে বলল,
– “আমার আর হলো কই?”
.
অনিক আসার পরই সবাই এক সঙ্গে দুপুরের খাবার খেতে বসলো৷ তবে আশফির কথামতো দিশানকে প্রথমে খাবার সার্ভ করতে হয়েছে তারপর সে খেতে বসেছে। এরপর সবাই এক সঙ্গে ট্যারেসে এসে বসলো। শীতটা প্রায় নেমে গেছে বলে দুপুরের রোদ তেমন আর কারো গায়ে লাগল না। আশফি দিশানকে ল্যাপটপে কিছু থিম দেখিয়ে আলোচনা করছিল তার সঙ্গে। মাহি এসে বসতেই আশফিকে দ্রুত ল্যাপটপ অফ করতে দেখে সে বলল,
– “আমি বোধহয় ডিস্টার্ব করলাম। স্যরি।”
সে উঠতে যেতেই দিশান বলল,
– “আরে বলে কী! যাকে নিয়ে করব…”
– “দিশান!”
আশফির ধমকানি শুনে দিশান চুপ হয়ে গেল। মাহি বলল,
– “বুঝলাম না। কী হলো?”
দিশান বলল,
– “কিছু না ডিয়ার। তুমি একটু হেল্প করবে আমায়?”
– “হ্যাঁ বলো।”
– “নিচে আমার সানগ্লাসটা রেখে এসেছি। ওটার খুব প্রয়োজন।”
– “আচ্ছা আমি নিয়ে আসছি।”
দিয়া তখন বলল,
– “আরে আমি যাচ্ছি। তুই বস।”
দিশান তাকে বাধ সেধে বলল,
– “না তোমাকে প্রয়োজন সোনা। তুমি বসো।”
সবাই মুচকি হেসে উঠল। মাহি যেতেই দিশান নিচুস্বরে সবাইকে বলল,
– “আপনারা তো সবাই মাহির জিগারের দোস্ত, রাইট?”
হিমু বলল,
– “রাইট।”
– “তো আপনারা কি কোনো খোঁজ জানেন তার শহরে কী ঘটছে?”
দিয়া আর হিমু হেসে ফেলল দিশানের কথাতে। অনিক হিমুকে বলল,
– “আমরা যা ভেবেছিলাম সেদিন তা কি সত্যি হিমু?”
– “খু্ব সত্যি গো। আমাদের বান্ধবীটাও কাঁঠালের আঠায় আটকে গেছে।”
আশফি ল্যাপটপের দিকে চেয়ে মৃদু হাসছে। দিয়া বলল,
– “কষ্টের ব্যাপার এই যে আমি জানলাম এবং বুঝলাম আজই। মানতে কষ্ট হচ্ছিল খুব।”
– “আমি বিধাতার কাছে শোকর আদায় করি যে তিনি আমার ব্যাপারটা জলদি আপনাকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। না হলে কে জানে আপনি বুঝতে বুঝতে আমার ঘরে নাতিপুতি এসে যেতো।”
দিশানের কথা শুনে দিয়া ক্ষেপে গেলেও বাকি সবাই হেসে উঠল। দিশান বলল,
– “তো সে আসার আগে কাজের কথাটা বলে নিই। সে কিন্তু অনেক বিশেষ কিছু আমার ভাইয়ের কাছে। আর তাই খুব বিশেষভাবেই ভাইয়া তাকে ডিরেক্ট রিং পরিয়ে প্রপোজ করবে।”
– “ও মাই গড! তাহলে এটাই কি ট্যুরে যাওয়ার বিশেষ কারণ?”
– “হ্যাঁ এটাই বিশেষ কারণ। তার অ্যারেঞ্জমেন্টও চলছে। সেদিন প্রত্যেকে জানবে।”
দিয়া বলল,
– “পরিবারের অনুমতি ছাড়া রিং পরানো কি ঠিক হবে?”
এবার আশফি জবাব দিলো,
– “আমি মূলত ওকে গার্লফ্রেন্ড হিসেবে নয়, পূর্ণ জীবনসঙ্গিনী রূপে চাই। রিলেশনশিপ ব্যাপারটাতে আমি বরাবরই খুঁতখুঁতে। চাইলেও আগাতে পারিনি। কিন্তু আপনাদের বান্ধবীই একটি মাত্র নারী যাকে সরাসরি অর্ধাঙ্গীরূপে পেতে চাই আমি। আর পরিবার তো আসে দ্বিতীয় ধাপে। আগে তার থেকে সম্মতি পেয়ে তবেই পরিবারের সম্মতি গ্রহণ করব।”
দিয়া চকিতে প্রশ্ন ছুড়ল,
– “আর যদি পরিবার সম্মতি না দেয় তো?”
আশফি কিছুক্ষণ নীরবে চেয়ে থাকল নিচের দিকে। এরপর স্বাভাবিকতা বজায় রেখে দিয়াকে সে জবাব দিলো,
– “ওর থেকে সম্মতি পেলে আমি কখনোই পারব না ওকে ছাড়তে। ওর পরিবার থেকে সম্মতি পেতে যতটুকু করতে হয় আর যা করতে হয় সবই করব।”
আশফির এমন উত্তরে দিয়া খুব প্রসন্ন হলো। তার আর হিমুর মনের ওপর থেকে একটা ভার সরে গেল যেন। এরপর হয়তো আলহাজ সোমের থেকেও এমন যোগ্য সুপুত্র পেয়ে খুশি ছাড়া নারাজ হবেন না। অনায়াসে তার প্রিয় নাতনিকে এই সুপুত্রের হাতে তুলে দিতে দ্বিধাবোধ করবেন না নিশ্চয়। হিমু হেসে দিয়াকে জিজ্ঞেস করল,
– “তো তোমার পরীক্ষায় আমাদের ভাইয়া উত্তীর্ণ হয়েছেন কি?”
– “উত্তীর্ণ মানে? আমার ভাইকে কি পরীক্ষা দিয়ে জয় করতে হবে মাহিকে?”
দিয়া বেশ দৃঢ়কণ্ঠে বলল,
– “অবশ্যই। আমাদের বন্ধু ফেলনা না কি?”
– “তো আমার ভাই ফেলনা না কি?”
তাদের তর্ক বিতর্কের মাঝে আশফি এক কোণে বসে কেমন চিন্তাগ্রস্ত মুখ করে চেয়ে রইল নিচের দিকে চেয়ে। মাহি এসে দিশানের পাশে বসে হতাশ সুরে বলল,
– “লিভিংরুমে কোথাও পেলাম না দিশান।”
দিশান হেসে বলল,
– “ব্যাপার না।”
দিশান আশফির থেকে ল্যাপটপটা নিয়ে বলল,
– “দু ঘন্টার একটা রোমান্টিক মুভি দেখলে কেমন হয় বলো।”
অনিক বলল,
– “মুভি দেখার ধৈর্য বর্তমান নেই ভাই।”
– “এর জন্যই দিন দিন শরীর থেকে প্রেম উবে যাচ্ছে।”
হিমুর রাগ রাগ মুখ দেখে অনিক হেসে বলল,
– “তবে দুর্দান্ত রোমান্টিক মুভি দাও ভাই। শরীরের প্রেম নাকি উবে যাচ্ছে আমার!”
‘রাজা হিন্দুস্তানি’ মুভি প্লে করে সবাই সবার সঙ্গে গল্পে মশগুল। দু ঘন্টা যাবৎ মুভি দেখার মতো ধৈর্যশক্তি যে কারোরই নেই তারই নমুনা। তবে মাঝের দুর্দান্ত একটি সিন দেখে সবাই আপনাআপনি থমকে গেল। কয়েক মুহূর্ত সিনটা দেখার পর দিশান বলে উঠল,
– “এটা কীভাবে সম্ভব ভাই? মানে কিস করতে করতে রাত পার করে ভোর? আদৌ সম্ভব? আমার জীবনেও এমন রেকর্ড নেই।”
দিয়া দিশানের গায়ে চাপর মেরে বসলো। দিশানের বিষ্মিতভাব তখনো কাটেনি। আশফি মুখে চেপে হাসছে আর মাহি লজ্জাতে অন্যদিকে চেয়ে বসে আছে। হিমু আর অনিক বিবাহিত হওয়ার দরুন তারা হেসে একে অপরের গায়ে ঢলে পড়ছে।
– “আরে তোমরা আমাকে বোঝাও। ডিরেক্টর এটা কীভাবে করল? মানে একটা অ্যানার্জির ব্যাপার স্যাপার আছে না কি? আমি এখন খোলোখুলি বললে তো আবার চাপড় খেতে হবে। আমি এটা মানতেই পারছি না।”
প্রচন্ড অসন্তুষ্টির গলায় বলল দিশান। আশফি বলল,
– “রাতে কিস করল, ঠোঁটও কেটে গেল। এরপর সকালে সে ভুলেও গেল। এটা মানা যায়?”
অনিক উত্তর দিলো,
– “এটা কীভাবে মানা যায়? কিস করতে করতে ঠোঁট কেটে দিলাম। তারপর ভুলে গেলাম!”
লজ্জাতে মাহির ইচ্ছা করছে সাত হাত মাটি খুঁড়ে তার মাঝে ঢুকে যেতে। লোকটার মুখ এত বেসামাল কেন? যেখানে সেখানে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ে সে! আশফি খেয়াল করল মাহির চিপের কোণ বেঁয়ে নোনাপনি ঝরছে। অসম্ভবরকম লজ্জা পেয়েছে সে। দিশান খ্যাক দিয়ে বলে উঠল,
– “অ্যাঁহ্! কী সব আজগুবি স্টাইলের চুমু কাহিনী এসব? এই কোনোদিন হয়? কিস করে সকালেই ভুলে গেলাম! ঘুমের ঘোরে কিস করলেও তো পরে মনে পড়ে।”
আশফি ডিভানে হেলে শুয়ে পড়ে বলল,
– “অবিশ্বাসের কী আছে? মানবজাতি সবসময়ই বিচিত্র।”
দিয়া প্রশ্ন করল,
– “এই সিনটা কোন মুভিতে আছে ভাইয়া?”
আশফি এবার হালকা কেশে উঠল। তারপর বলল,
– “মনে নেই বোন।”
তখনো আশফি ঠোঁটের কোণে হাসি। মাহির দিকে আঁড়নজরে তাকাতেও সে ভুলল না। ইস! গালদুটো লজ্জায় টকটকে হয়ে উঠেছে তার। কিন্তু তার কান থেকে যে ধোঁয়া ছুটছে তা কি আর বুঝবে আশফি?
এত সময় বাদে হিমু বেশ জ্ঞানীদের মতো করে বলল,
– “আমি সেদিন ফোনে দেখেছি। অধরচুম্বন দ্বারা প্রায় তিন লক্ষ ব্যাকটেরিয়া আদান প্রদান হয়।”
অনিক বিস্ময়ের চোখে চেয়ে হিমুকে বলল,
– “ও আচ্ছা! আজ কাল এর জন্যই আমাকে এই স্বর্গীয় অনুভূতি থেকে তুমি বঞ্চিত রাখছো! এবার বুঝলাম।”
দিশান হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে। আর আশফি তার আভিজাত্যের মৃদু হাসিতে ব্যস্ত। মাহি এত লজ্জার মাঝেও অনিকের কথা শুনে না হেসে পারল না। কিন্তু এর মাঝে যে দিয়া নাক শিটকোচ্ছে সেটা আর কারো চোখে পড়ল না। যখন দিয়া উঠে দাঁড়াল দিশান তখন খেয়াল করল দিয়াকে। দিয়ার নাক কুঁচকানোটাও তার চোখে পড়ল। দিশানের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকাতেই দিশানের আর বুঝতে বাকি রইল না আজ থেকে সারাজীবনের জন্য তার কপাল থেকেও এই স্বর্গীয় অনুভূতি উবে গেল। দিয়া ট্যারেস ছেড়ে চলে যেতেই দিশান উঠে দাঁড়িয়ে হিমুকে বলল,
– “এ কেমন অবিচার করলেন আপু? নিজের স্বামীকে তো বঞ্চিত করলেনই সাথে আমার কপালও পোড়ালেন।”
দিশান ছুটল দিয়ার পিছু পিছু। অনিক বলল,
– “তোমার ফোন কই?”
– “কেন?”
– “তোমার আজ থেকে ফোন ইউজ করা বারণ।”
এই বলে অনিক নিচে যাওয়ার উদ্দেশে উঠে গেল দিয়ার ফোন খোঁজার জন্য। আর হিমু ছুটল অনিকের পিছে তার ফোন রক্ষার জন্য। এবার যেন সব থেকে বেশি লজ্জাজনক পরিস্থিতির মাঝে পড়ল মাহি। এত সময় সবার মাঝে থাকার কারণে লজ্জাতে মাহির বুকের কাঁপুনিটা কম হচ্ছিল। কিন্তু এবার তা বৃদ্ধি পেয়ে তিনগুণ হলো। আশফি তার ওষ্ঠে হাসি রেখেই কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল মাহির দিকে। মাহি তার দিকে সরাসরি না দেখলেও সে বুঝতে পারল বেসামাল মুখের মানুষটা তার দিকে চেয়েই হাসছে।
– “আমি দেখে আসি ওরা কী করছে?”
এই বলে মাহি উঠে দাঁড়াতে আশফি তার শাড়ির আঁচলটুকু হাতের কাছে পেয়ে আঁচলটাই টেনে ধরল।
…………………………….
(চলবে)
– Israt Jahan Sobrin
We use cookies on our website to give you the most relevant experience by remembering your preferences and repeat visits. By clicking “Accept All”, you consent to the use of ALL the cookies. However, you may visit "Cookie Settings" to provide a controlled consent.
This website uses cookies to improve your experience while you navigate through the website. Out of these, the cookies that are categorized as necessary are stored on your browser as they are essential for the working of basic functionalities of the website. We also use third-party cookies that help us analyze and understand how you use this website. These cookies will be stored in your browser only with your consent. You also have the option to opt-out of these cookies. But opting out of some of these cookies may affect your browsing experience.
Necessary cookies are absolutely essential for the website to function properly. These cookies ensure basic functionalities and security features of the website, anonymously.
Cookie
Duration
Description
cookielawinfo-checkbox-analytics
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Analytics".
cookielawinfo-checkbox-functional
11 months
The cookie is set by GDPR cookie consent to record the user consent for the cookies in the category "Functional".
cookielawinfo-checkbox-necessary
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookies is used to store the user consent for the cookies in the category "Necessary".
cookielawinfo-checkbox-others
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Other.
cookielawinfo-checkbox-performance
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Performance".
viewed_cookie_policy
11 months
The cookie is set by the GDPR Cookie Consent plugin and is used to store whether or not user has consented to the use of cookies. It does not store any personal data.
Functional cookies help to perform certain functionalities like sharing the content of the website on social media platforms, collect feedbacks, and other third-party features.
Performance cookies are used to understand and analyze the key performance indexes of the website which helps in delivering a better user experience for the visitors.
Analytical cookies are used to understand how visitors interact with the website. These cookies help provide information on metrics the number of visitors, bounce rate, traffic source, etc.
Advertisement cookies are used to provide visitors with relevant ads and marketing campaigns. These cookies track visitors across websites and collect information to provide customized ads.